নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
স্বপ্নময় পথিক। দেখা, শোনা ও জানাগুলিকে ব্লগের পাতায় রেখে যেতে চাই।
বর্তমান সময়ে পত্রিকার পাতা খুললেই আইন ও বিচার অঙ্গনের যে বিষয়টি বার বার চোখে পড়ে তা হচ্ছে- রিট। রিট করা হচ্ছে ব্যক্তির পক্ষ হতে, প্রতিষ্ঠানের পক্ষ হতে, কখনও কোন বিষয়ের উপর নিষেধাজ্ঞা চেয়ে, কখনো বা কোন সিদ্ধান্তের কার্যকারিতা নিয়ে। সাধারনত রিট বলতে এমন এক অধিকারকে বুঝায় যা নাগরিকদের প্রশাসনের হাত হতে রক্ষা করে। বস্তুত রিট এক প্রকার মৌলিক অধিকার। সাধারনত নাগরিকগন তাদের অধিকারে প্রশাসনের অন্যায়, অযথা ও অবৈধ হস্তক্ষেপের প্রতিকার স্বরূপ আদালত রিট আবেদন করেন। এটা বিশেষ অধিকার রিট নামে পরিচিত। আমাদের সংবিধানের ১০২ অনুচ্ছেদে রিট সম্পর্কে উল্লেখ রয়েছে এবং হাইকোর্ট বিভাগকে এ সংক্রান্ত বিষয়ে ব্যাপক ক্ষমতার অধিকার দেয়া হয়েছে।
রিট- এর উৎপত্তি ব্রিটিশ আইন ব্যবস্থায়। প্রাথমিক অবস্থায় রিট সংক্রান্ত এখতিয়ার ছিল শুধু তৎকালীন রাজা অথবা রানীর নিকট। রাজা এই দুই কোর্ট অব কিংস বেঞ্চ অথবা কোর্ট অব চ্যাঁনসেরীর মাধ্যমে তার অধিনস্ত অফিসারদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালনে বাধ্য করতে পারতেন, একই ভাবে তাদের ক্ষমতার অপব্যবহার রোধ করতে পারতেন। ক্রমান্বয়ে সরকারি এখতিয়ার বৃদ্ধি এবং আইনের শাসনের উন্নতির সাথে সাথে তৎকালীন কোর্ট গুলি অধিকতর স্বাধীন হতে থাকে। ফলশ্রুতিতে এই রিট ক্ষমতা কোর্টের বিশেষ ক্ষমতার বদলে জনগনের বিশেষ ক্ষমতায় পরিনত হয়। তারপর থেকে রিট এখন বিভিন্ন দেশের সংবিধানে জনগনের স্বার্থ সুরক্ষার জন্য সংযুক্ত করা হয়েছে।
আমাদের উপমহাদেশে রিটের প্রচলন হয় তৎকালীন ব্রিটিশ শাসনকালীন সময়ে। ১৯৪৭ এর ভারত বিভাগের পর স্বাধীন ভারতের সংবিধানে ১৯৪৯ সালে সুপ্রিম কোর্ট ও হাইকোর্ট উভয়কে রিটের অধিকার দেয়া হয়, যা ভারতের সংবিধানের ৩২ অনুচ্ছেদ (সুপ্রিম কোর্টের জন্য) এবং ২২৬ (হাইকোর্টের জন্য) অনুচ্ছেদে সন্নিবেশিত রয়েছে। একইভাবে পাকিস্তানের ১৯৫৬ সালে প্রণীত সংবিধানেও রিট অধিকারকে স্বীকৃতি দেয়া হয়। আমাদের সংবিধানেরও ১০২- অনুচ্ছেদে রিটের স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে।বাংলাদেশের সংবিধানের ১০২ অনুচ্ছেদের প্রথম দফায় বলা হয়েছে নিষেধমূলক রিট সম্পর্কে। এই দফা অনুযায়ী যদি হাইকোর্ট বিভাগ মনে করেন যে অন্য কোন আইনে প্রতিকার দেবার বিধান নেই, তবে কোন সংক্ষুব্ধ ব্যক্তির আবেদনক্রমে প্রজাতন্ত্রের বা স্থানীয় কর্তৃপক্ষের অধীনস্ত কোন ব্যক্তি আইন বহির্ভূত কাজ করলে হাইকোর্ট বিভাগ তেমন কাজ হতে উক্ত ব্যক্তিকে বিরত থাকার নির্দেশ দিতে পারেন। ১০২- অনুচ্ছেদের দ্বিতীয় দফায় বলা হয়েছে হেবিয়াস করপাস (Habeas Corpus) রিট সম্পর্কে। কোন ব্যক্তি আতক থাকলে সে ব্যক্তি বা তার পক্ষে অন্য কোন ব্যক্তি আতক থাকলে সে ব্যক্তি বা তার পক্ষে অন্য কোন ব্যক্তি হাইকোর্ট বিভাগে আবেদন করলে উক্ত বিভাগ উল্লেখিত ব্যক্তিকে আইন সংগত কর্তৃত্ব ব্যতিরেকে আতক রাখা হয়েছে কিনা কিংবা বেআইনি উপায়ে ঐ ব্যক্তিকে আটক রাখা হয়েছে কিনা তা দেখার জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে আদালতের সামনে হাজির করার নির্দেশ দিতে পারেন।
১০২- অনুচ্ছেদের প্রথম দফায় আরও এক প্রকার রিটের কথা বলা হয়েছে নির্দেশক রিট (Writ of Mandamus) নামে পরিচিত। এই রিট দ্বারা হাইকোর্ট বিভাগ যদি মনে করেন আইনের মাধ্যমে অন্য কোন ফলপ্রদ বিধান করা হয়নি, তবে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তির আবেদন ক্রমে সরকারি বা স্থানীয় কর্তৃপক্ষের কর্মচারীকে আইনের মাধ্যমে তার করনীয় কাজ করার জন্য আদেশ দিতে পারেন। সংবিধানের ১০২-অনুচ্ছেদের চতুর্থ দফায় বলা হয়েছে রিট অব কুয়ো- ওয়ারেন্টও (Writ of Quo-Warranto) সম্পর্কে। এই দফা অনুযায়ী কোন ব্যক্তি সরকারি পদে আসীন থাকলে অন্য কোন ব্যক্তির আবেদন ক্রমে হাইকোর্ট বিভাগ পদস্থ ব্যক্তিকে আদেশ দিতে পারেন যে, কোন কর্তৃত্ব বলে সে ঐ পদ মর্যাদার দাবি করছে তার যথাযথ ব্যাখ্যা দিতে। উল্লেখ্য যে, সরকারি পদ ব্যতিত অন্য কোন পদে আসীন থাকলে এই আদেশ প্রদত্ত হবে না।
হেবিয়াস করপাস- রিট এবং কুয়ো- ওয়ারেন্টও রিট যে কোন ব্যক্তি দায়ের করতে পারেন কিন্তু নিষেধমূলক রিট এবং ম্যান্ডামাস রিট দায়ের করার জন্য ব্যক্তিকে প্রমান দিতে হবে যে, এক্ষেত্রে সে ক্ষতিগ্রস্ত পক্ষ। প্রকৃতপক্ষে এই রিট করার ক্ষমতার দ্বারা আমাদের সংবিধান ব্যক্তির স্বার্থ রক্ষার জন্য সর্বোচচ ক্ষমতা দিয়েছে হাইকোর্ট বিভাগকে। আর আমাদের নিত্যদিনের নানা সমস্যার সমাধানে রিট কার্যকর ভূমিকা রাখছে।
©somewhere in net ltd.