![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
যখন যে দল ক্ষমতায় থাকে , আমি ও সেই দলের সমর্থক হয়ে যাই ।
যুথিকে এ সাজে যে এ সময় দেখবো তা কল্পনা করিনি। এ কি! যুথি এখানে কেন? যুথির গায়ে কনের সাজ। তাহলে আমি বর সেজে নিই?
দুই চোখ যেন ঝাপসা হয়ে আসছিল আমার। শরীরের রক্ত চলাচল যেন বন্ধ হয়ে আসছিল।
যেভাবে এ অবস্থার মুখোমুখি হয়েছিলাম তার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বলছি।
ফার্স্ট ইয়ারে ভর্তি হওয়ার সময় তার সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। প্রথমেই বুঝেছিলাম, সে খুব উচ্ছল স্বভাবের মিশুক মেয়ে। প্রথম ক্লাসেই তার এই স্বভাবের পরিচয় পেয়েছিলাম।
ওই দিনই ফোন নাম্বার নেয়ার কথা বলে যুথি আমার মোবাইল ফোনটি চেয়ে নেয়। এমন সময় যুথি আমার মোবাইলটি নিয়ে দেখতে থাকে।
তারপর যখন মোবাইল ফোন চাইলাম তখন সে বললো, আগে একটি পার্টির আয়োজন করো, তারপর মোবাইল ফোন নাম্বার পাবে।
কি দুষ্ট মেয়ে!
যাক, তার শর্ত মেনে নিযে মোবাইল ফোন নাম্বারটি নিলাম।
এভাবেই শুরু।
আস্তে আস্তে আমাদের বন্ধুত্ব গভীর হতে লাগলো।
সৌভাগ্য কি দুর্ভাগ্যক্রমে তার এবং আমার বাসা ছিল মোটামুটি একই এলাকায়। আবার আমাদের গ্রামের বাড়িও ছিল একই জেলার একই উপজেলায়। ফলে দুজন এক সঙ্গেই কলেজে আসা-যাওয়া করতাম।
একদিন যুথি আমাকে প্রশ্ন করলো, কখনো প্রেম করেছ? কাউকে ভালো লাগে কি?
বললাম, আসলে কখনো সেভাবে চিন্তা করিনি। কিছুক্ষণ পর দুষ্টিমি করে বললাম, তোমাকে নিয়ে ভাবলে কেমন হয়?
সে তখন কিছু না বলে চুপ থাকলো।
একদিন আমরা ফয়ে’স লেকে বেড়াতে গেলাম। ওই দিন যুথি আমাকে জিজ্ঞাসা করলো, আমি যদি তোমাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখি তাহলে তোমার কি আপত্তি থাকবে?
বললাম, বুঝলাম না। বুঝিয়ে বলো।
সে সরাসরি বললো, আমি যে তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি! তোমাকে আমার করে পেতে চাই। বলো তুমি কি বলবে।
তাকেও যে আমার ভালো লাগতো। তাই না করতে পারলাম না।
ক্রমেই যুথির কাছে খুবই প্রিয় হয়ে উঠলাম।
সে প্রায়ই বলতো, তোমাকে অনেক ভালোবাসি। তোমাকে হারাতে চাই না।
আমিও তাকে স্বপ্ন দেখাতাম, আমরা বিয়ে করবো, ছোট একটি সংসার হবে। সেটি ভালোবাসায় পরিপূর্ণ থাকবে ইত্যাদি।
সব কিছু ভালোভাবেই এগোচ্ছিল। এর মধ্যে তার আচরণের পরিবর্তন হতে লাগলো। প্রায় সময় ফোন রিসিভ করে না। আবার রিসিভ করলেও কাজ আছে, কথা বলতে সমস্যা হচ্ছে ইত্যাদি বলে ফোন রেখে দেয় বা আমার ফোন কারার সময়গুলোতে ফোন বন্ধ রাখে।
তারপরও সামনে মেজ বোনের বিয়ের জন্য ব্যস্ত থাকায় তেমন গুরুত্ব দিলাম না।
১৩, ১৪ ও ১৫ ফেব্রুয়ারি বোনের বিয়ের দিন ঠিক হলো। ১৩ তারিখ হলুদ অনুষ্ঠান। ১৪ তারিখ বরভাত ও ১৫ তারিখ বৌভাত অনুষ্ঠান।
যুথিকে বিয়েতে নিমন্ত্রণ করলে সে বলে, আমি খুব দুঃখিত যে, ওই দিনগুলোতে আমার কাজিনের বিয়ে।
তার সমবয়সী এক কাজিন ছিল এবং তারও বিয়ের কথা চলছে জানতাম। তাই শুধু বললাম, তবুও একটু চেষ্টা করো। কে জানতো এই কাজিন যে, সে নিজেই?
অবশেষে এলো সেই ১৪ ফেব্রুয়ারি। আমার আপুকে সাজানোর জন্য বিউটি পার্লারে নিয়ে গেলাম।
পার্লারের ভেতরে পুরুষ প্রবেশ নিষেধ। তাই বাইরেই দাড়িয়ে থাকলাম।
আপুকে যখন সাজরুম থেকে বের করে আনা হচ্ছিল তখন দেখলাম, সঙ্গে আরো একটি মেয়েকে সাজিয়ে আনা হয়েছে। দেখতে পরিচিত লাগছিল। ভালোভাবে যখন দেখলাম তখন মনে হচ্ছিল, সারা পৃথিবীর সব দেশের প্রস'ত করা ক্ষেপণাস্ত্রগুলো দিয়ে যেন আমার বুকে আঘাত করছে। মনে হচ্ছিল, চারপাশ যেন কালো গুহাতে পরিণত হয়েছে। আমি যেন অন্ধ হয়ে যাচ্ছি, হারিয়ে যাচ্ছি অন্ধকার কোনো গ্রহে। কারণ সেই মেয়েটি ছিল আমার ভারোবাসার মানুষ যুথি।
তারপরও শত কষ্ট বুকের ভেতর পাথরে চেপে একটু আড়াল হয়ে গেলাম।
পরে আপুকে নিয়ে চলে এলাম। আসার সময় সব পরিষ্কার হচ্ছিল কেন সে আমার নিমন্ত্রণ গ্রহণ করলো না, কেনই বা গত এক সপ্তাহ ধরে তার ফোন বন্ধ ছিল, কেন সে আমার কাছ থেকে অনেকটা দূরে সরে গিয়েছিল।
এ ভালোবাসা দিবসে আমি ছ্যাকা খেলাম।
এখন প্রতি বছর ১৪ ফেব্রুয়ারি হয়ে আসে আমার বোন এবং যুথির বিয়েবার্ষিকী আর আমার জীবনের ছ্যাকা খাওয়ার বার্ষিকী।
©somewhere in net ltd.