![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আবারো ফিরে তোমাতে - ভালবাসার ছবি একেছে - জীবনের মাঝপথে আজ আমি বসে, জীবন এর আলো আজ অনেকটা বদলে গেছে - হারিয়ে নিজেকে।
[img|https://s3.amazonaws.com/somewherein/assets/images/thumbs/rohanstar2007_1395221297_1-sun0615b-d-wave-2.jpg
বাণিজ্যিকভাবে চালু হয়ে গেছে কোয়ান্টাম কম্পিউটার; যা মানবজাতির জটিলতম সমস্যাবলীর সমাধান দেয়ার অঙ্গীকার বহন করছে। এটি চলবে কোয়ান্টাম ফিজিক্সের সূত্রে। ইতোমধ্যে গুগল কিনে নিয়েছে এমন এক কম্পিউটার যার ক্ষমতা প্রচলিত কম্পিউটারের ৩৬০০ গুণ। ‘টাইম’ পত্রিকায় নিবন্ধ অবলম্বনে এখানে সেই কম্পিউটারের স্বরূপ তুলে ধরার চেষ্টা করা হলো-
এক অপার সম্ভাবনা নিয়ে হাজির হয়েছে নতুন প্রজন্মের কম্পিউটার ‘ডি-ওয়েভ টু’। এমন কম্পিউটার সভ্যতার গতিপথ বদলে দেয়ার ক্ষমতা ও সম্ভাবনা ধারণ করে আছে মানবজাতির জটিলতম সমস্যাবলীর সমাধান দিতে যেখানে প্রচলতি কম্পিউটারের কয়েক শতাব্দী লেগে যাওয়ার কথা সেখানে কোয়ান্টাম কম্পিউটার অতি অল্পসময়ে সমাধান দিতে পারবে। এমন কম্পিউটার মহাকাশ অভিযান থেকে শুরু করে রোগ নিরাময়, ক্রিপটোগ্রাফি থেকে ন্যানো প্রযুক্তি, ওষুধ শিল্প থেকে কৃত্রিম বুদ্ধিবৃত্তি পর্যন্ত সর্বক্ষেত্রে বৈপ্লাবিক পরিবর্তন নিয়ে আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কিন্তু সেই কম্পিউটার সত্যিই কিভাবে কাজ করে, কেউ জানে না। সমালোচকদের ভাষায়, এই কম্পিউটার সম্পর্কে যত যাই বলা হোক না কেন, সবটাই সত্য নয়।
‘ডি-ওয়েভ টু’ কম্পিউটারের নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ‘ডি-ওয়েভ’। প্রতিষ্ঠানটির সদর দফতর কানাডার ভ্যাঙ্কুভারের পূর্বদিকে বার্নাবি নামে ছোট্ট এক শহরে। ডি-ওয়েভ টু কম্পিউটার এ মুহূর্তে আছে ৫টি। কম্পিউটারটি রাখা আছে ৬ মিটার উঁচু একটি কালো রংয়ের বাক্সে। এই বাক্সের ভেতর আছে সিলিন্ডারের মতো একটি হিমায়ন যন্ত্র যার মধ্যে রাখা আছে নিওবিয়ামের কম্পিউটার চিপ। চিপটি প্রায় ২০ মিলিকেলভিন বা মাইনাস ২৭৩ দশমিক ১ ডিগ্রী সেলসিয়াসে রক্ষিত। জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের ধারণা, মহাবিশ্বের শীতলতম স্থানটি হচ্ছে পৃথিবী থেকে ৫ হাজার আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত বুমেরাং নেবুলা নামে গ্যাসের এক বিশাল মেঘমালা। সেখানকার তাপমাত্রা প্রায় মাইনাস ২৭২ ডিগ্রী সেলসিয়াস। অর্থাৎ পরম শূন্যের ঠিক উপরে। তার মানে নিওবিয়ামের চিপটি যত ঠা-ায় রাখা হয়েছে তা মহাবিশ্বের শীতলতম স্থানটির চেয়েও ১ডিগ্রী বেশি শীতল। এই কম্পিউটারের দামও কম নয়। এক কোটি থেকে দেড় কোটি ডলারে বিক্রি হয়।
‘ডি-ওয়েভ টু’ যেমন ব্যতিক্রমী ধরনের কম্পিউটার তেমনি ‘ডি-ওয়েভ’ও একটি ব্যতিক্রমী ধরনের কোম্পানি। কোম্পানিটি আকারে ছোট। মাত্র ১১৪ জন কর্মচারী। তবে এর বিনিয়োগকারীদের মধ্যে রয়েছে ক্যালিফোর্নিয়ার মেনলো পার্ক, স্কাইপ ও টেলসা মোটর্সের অর্থলগ্নী প্রতিষ্ঠান ড্র্যাপার ফিশার জুরভেস্টন। তাছাড়া এ্যামাজনের প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোস এবং সিআইএ’র হাইটেক বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ‘ইন-কিউ-টেল’ এর সাহায্য-সহায়তা আছে। তেমনি সাহায্য আছে নাসার।
ডি-ওয়েভের খদ্দেরের তালিকা ছোট। তবে সবাই স্বনামধন্য। এর মধ্যে আছে গুগল, নাসা, ইউনিভার্সিটিজ স্পেস রিসার্চ এ্যাসোসিয়েশন (ইউএসআরএ), আমেরিকার প্রতিরক্ষা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান লকহিড মার্টিন এবং একটি অজ্ঞাতনামা মার্কিন গোয়েন্দা প্রতিষ্ঠান। ডি-ওয়েভ টু’র খদ্দের এত কম হবার কারণÑএই কম্পিউটার সম্পূর্ণ নতুন ধরনের; যার নাম কোয়ান্টাম কম্পিউটার। এটি এমনই অদ্ভুত ও নতুন ধরনের যে, লোকে এখনও বুঝে ওঠার চেষ্টা করছে: এই কম্পিউটারের কি কাজ এবং কিভাবেই বা এটা চালাতে হয়। বলা হয়ে থাকে, এই কম্পিউটারটি কম্পিউটিং শক্তির সুবিশাল নতুন উৎস। তাই যদি হয় তাহলে মাইক্রোপ্রসেসর উদ্ভাবিত হবার পর থেকে এটা হবে সবচেয়ে বড় অগ্রগতি।
কোয়ান্টায় কম্পিউটিং কি?
তাহলে আসল কথায় যাওয়া যাক। কোয়ান্টাম কম্পিউটিং জিনিসটা আসলে কি? সেটা বলতে গেলে আরও কিছু কথা বলে নেয়া ভাল। কোয়ান্টাম কম্পিউটিং হলো বিংশ শতাব্দীর দুই অসাধারণ বৈজ্ঞানিক কর্মকা-; কোয়ান্টাম ফিজিক্স ও ডিজিটাল কম্পিউটিংয়ের মিলন। ধ্রুপদী বা চিরায়ত পদার্থবিজ্ঞানের ঘাটতি বা সীমাবদ্ধতা থেকে কোয়ান্টাম ফিজিক্সের আবির্ভাব। ক্ল্যাসিকাল ফিজিক্স শত শত বছর ধরে নির্ভুল বলে গণ্য হয়ে আসছিল। বিংশ শতাব্দীর শুরু থেকে বেদনাদায়কভাবে দেখা যায় যে, এমন কিছু প্রাকৃতিক ঘটনা আছে যেগুলোর ব্যাখ্যা দিতে ধ্রুপদী পদার্থ বিজ্ঞান শোচনীয় ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। তাই ম্যাক্স প্লাংক ও এলবার্ট আইনস্টাইনের মতো প্রতিভাধর বিজ্ঞানীরা সেই ঘটনা বা বিষয়গুলোর ব্যাখ্যা দিতে নতুন নতুন সূত্র নির্ধারণ করতে শুরু করেন। বিশেষ করে ফোটন ও ইলেকট্রনের মতো সাব-এ্যাটমিক বা অতি পারমাণবিক বস্তুকণাগুলোর কাজের ব্যাখ্যা দেয়ার ব্যাপারে। কিন্তু সূত্রগুলো এসবের ব্যাখ্যা দেয়ার ব্যাপারে ব্যর্থ হয়েছিল। পরে সেই ব্যাখ্যা পাওয়া গিয়েছিল কোয়ান্টাম ফিজিক্সে।
কোয়ান্টাম ফিজিক্সের দু’টি কথা
কোয়ান্টাম ফিজিক্স অতি জটিতম ব্যাপার। তথাপি সাব-এ্যাটমিক বা অতিপারমাণবিক বস্তুকণার জগতকে ব্যাখ্যা করার ব্যাপারে এটাই হলো সর্বোত্তম হাতিয়ার। কোয়ান্টাম ফিজিক্সের একটি সূত্র হলো সুপার পজিশন (ংঁঢ়বৎ ঢ়ড়ংরঃরড়হ)। সুপার পজিশন মানে হলো কোন একটা কিছু একই সময় একাধিক অবস্থায় থাকতে পারে এমনকি একই সময় একাধিক স্থানেও থাকতে পারে। দৃষ্টান্ত ছাড়া মনে করুন, একটা বাক্সে মুখবন্ধ অবস্থায় একটা বিড়ালকে রাখা হয়েছে, সেখানে বিষভর্তি একটা ফ্ল্যাক্স আছে এবং তেজস্ক্রিয় বিকীরণের একটা উৎস আছে। সেই উৎস থেকে তেজস্ক্রিয় বস্তুকণা বিকীরিত হবার আধাআধি সম্ভাবনা আছে। বিকীরিত হলে ফ্ল্যাক্সটি ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যাবে, ভেতরের বিষ বেরিয়ে পড়বে এবং বিড়ালটি মারা যাবে। কোয়ান্টাম ফিজিক্সের ব্যাখ্যা অনুযায়ী যতক্ষণ পর্যন্ত দেখা না যাচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত সুপার পজিশনে থাকা এই বিড়ালটি একই সঙ্গে জীবিত ও মৃত। বাক্সটির মুখ খোলা হওয়া মাত্র সেই সুপার পজিশন আর থাকবে না। সেটি ভেঙ্গে যাবে এবং বিড়ালটি ক্লাসিক্যাল অবস্থায় ফিরে এসে হয় জীবিত নয়ত মৃত থাকবে। কোয়ান্টাম কম্পিউটারের সুপার পজিশনের মতো কোয়ান্টাম ইফেক্টকে কাজে লাগিয়ে হিসাবের কাজটা ত্বরান্বিত করার জন্য ডাটা প্রসেস করা হয়।
কোয়ান্টাম কম্পিউটার কিভাবে কাজ করবে
আধুনিক কম্পিউটিংয়ের যুগ অর্থাৎ ডিজিটাল কম্পিউটেশনের যুগ শুরু হয় ১৯৩০ এর দশকে। ১৯৮০’র দশকে প্রশ্ন উঠতে শুরু করে যে ক্লাসিক্যাল সূত্রের পরিবর্তে যদি কোয়ান্টাম সূত্রে পরিচালিত কম্পিউটার বানানো যায় তাহলে কি কোন লাভ আছে? অচিরেই উত্তর মেলে; অবশ্যই লাভ আছে।
প্রচলিত বা ক্লাসিক্যাল কম্পিউটারে ডাটা প্রসেস করা হয় বাইটের আকারে। বাইট হলো তথ্যের একক ইউনিট। প্রতিটি বাইট একই সময় হয় ১ হতে পারে নয়ত হতে পারে ০। ক্লাসিক্যাল বাইটের যে কোন বিশাল সংগ্রহের ক্ষেত্রেও একথা সত্য। এটাই হলো ডিজিটাল কম্পিউটেশনের ভিত্তি। কাজেই ক্লাসিক্যাল কম্পিউটারকে কোন প্রশ্ন করা হলে তাকে উত্তর খোঁজার জন্য সুশৃঙ্খলভাবে লাইনের আকারে অগ্রসর হতে হয়।
অন্যদিকে কোয়ান্টাম কম্পিউটার চলে কোয়ান্টাম বাইটে বা কিউবাইটে। সুপারপজিশনের সূত্রের বদৌলতে এর বাইটগুলো হতে পারে একই সঙ্গে ১ বা ০ এবং ১ ও ০। সুপারপোজড অবস্থায় একটা কোয়ান্টাম বাইট দুই সমান সম্ভাবনা হিসাবে অস্তিত্বমান। একটা নির্দিষ্ট মুহূর্তে এই কম্পিউটার একই সঙ্গে দুই সামান্য ভিন্ন বিশ্বজগতে কাজ কর– একটাতে ওটা হলো ১, আরেকটাতে ওটা হলো ০। কোয়ান্টাম কম্পিউটিং হলো প্রথম প্রযুক্তি যেখানে দুই সমান্তরাল মহাবিশ্বের মধ্যে সহযোগিতার ভিত্তিতে কোন দরকারি কাজ সম্পাদন করা যায়। ব্যাপারটা অপার্থিব, অদ্ভুত ও ভৌতিক মনে হতে পারে তথাপি তা অবিশ্বাস্য রকমের কাজের। যদি কোন কোয়ান্টাম বাইট একই সঙ্গে বা সময়ে দুই অবস্থায় থাকতে পারে তাহলে একই সঙ্গে সেটি দুটি হিসাব সম্পাদন করতে পারে। দু’টি কোয়ান্টাম বাইট একই সঙ্গে চারটি হিসাব, তিনটি কোয়ান্টাম বাইট নয়টি হিসাব করতে পারে। এইভাবে কোয়ান্টাম বাইটের সংখ্যা যত বাড়ে এর হিসাব করার ক্ষমতা তত অবিশ্বাস্যভাবে বেড়ে যায়। কোয়ান্টাম কম্পিউটারের ডাটা যেহেতু একাধিক অবস্থায় থাকতে পারে তাই এটা একাধিক কাজ এক এক করে না করে একই সঙ্গে করতে পারে।
ডি-ওয়েভ টু’র কেন্দ্রস্থলে থাকা নিওবিয়াম চিপটির রয়েছে ৫১২ কিউবাইট এবং সেই কারণে এটি তত্ত্বগতভাবে একই সঙ্গে ‘টু টু দি পাওয়ার অব ফাইভ হানড্রেড টুয়েলভ’ শক্তিতে কাজ করতে পারবে। মহাবিশ্বে যত এ্যাটম রয়েছে এটা তারচেয়েও বেশি। কম্পিউটারের ক্ষমতার এই যে পরিবর্তন এটা শুধু সংখ্যাগত নয়, গুণগত পরিবর্তনও বটে। কোয়ান্টাম কম্পিউারের যে ধরনের ফিজিক্যাল ইফেক্ট সৃষ্টির ক্ষমতা আছে তা যত বড় আকারের সুপার কম্পিউটার হোক না কেন তারও নেই। কোয়ান্টাম কম্পিউটারে কম্পিউনিংয়ে সম্পূর্ণ এক নতুন পদ্ধতি সংযোজিত হয়েছে যার ফলে এ ধরনের কম্পিউটার আগে কখনও দেখা যায়নি। ডি-ওয়েভ কোম্পানির যুগ্ম প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা জর্ডি রোজ বলেন, এমন কিছু সমস্যা আছে সেগুলো এতই জটিল যে আজকের কম্পিউটার তা সেটা যতই বড় হোক ও যতই গতিসম্পন্ন হোক তা দিয়ে কখনই সমাধান করা সম্ভব নয়। কম্পিউটার তৈরিতে বিভিন্ন উপায় আছে। প্রচলিত কম্পিউটারে সে সমস্যা সমাধান সম্ভব নয় তা সমাধানের জন্য কম্পিউটেশনের সম্পূর্ণ নতুন ও অনাহরিত সম্পদ উন্মোচন ও ব্যবহারের চেষ্টা করা হচ্ছে যার ফসল আজকে ‘ডি-ওয়েভ টু’। লোকে জানে এবং শত শত বছর ধরে জেনে এসেছে প্রকৃতির এমন সব ধর্ম বা বৈশিষ্ট্য এখানে কাজে লাগানো হয়েছে। উদ্দেশ্য হলো সেই সব সমস্যার সমাধান করা যা প্রচলিত কম্পিউটারে কখনই সমাধান করা যেত না কিংবা গেলেও কয়েক শতাব্দী লেগে যেত। কম্পিউটিংয়ের সেই বিস্ময়কর শক্তিকে বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিপুল পরিমাণ ডাটার প্রসেসিংয়ে প্রয়োগ করা হলে মানবেতিহাসের গতিপথই বদলে যেতে পারে।
রোজ অবশ্য স্বীকার করেছেন যে কোয়ান্টাম কম্পিউটার শিল্পটি এখনও শৈশবে আছ। পরিণত পর্যায়ে আসতে বহু সময় লাগবে। ইতিহাসগতভাবে দেখলে কোয়ান্টাম কম্পিউটারের আজকের স্তরটা মোটমোমুটিভাবে ইনটেল কোম্পানির প্রথম মাইক্রোপ্রসেসর ‘৪০০৪’ বের হওয়ার সময়কার মতো। তখন ওটা কিনতে আগ্রহী হয়েছিল তথাপি এটা কি কাজে লাগবে সে সম্পর্কে পরিষ্কার কোন ধারণা ছিল না। আজকের ‘ডি ওয়েভ টু’র ব্যাপারটাও তাই। ২০০৭ সালে ডি-ওয়েভ কোম্পানি ১৬ কিউবাইটের একটা কোয়ান্টাম কম্পিউটার জনসমক্ষে প্রদর্শন করে। ২০১১ সাল নাগাদ কোম্পানি ১২৮ কিউবাইট শক্তিসম্পন্ন ডি-ওয়েভ ওসান তৈরি করে লকহিড মার্টিনের কাছে বিক্রি করে। ২০১৩ সালে কোম্পানি ৫১২ কিউবাইটের ডি-ওয়েভ টু কম্পিউটার তৈরি করে। প্রতিবছর তারা এই কিউবাইট দ্বিগুণ বাড়িয়ে তোলার চেষ্টা করছে।
সুতরাং এমন ক্ষমতাসম্পন্ন কম্পিউটার যে অনেকেই পেতে চাইবে তাতে আর আশ্চর্য কি। এখন হলো তথ্যের যুগ। বিশাল বিশাল ডাটার যুগ। সেই ডাটাকে কত দ্রুত প্রসেস করা যায় সেটাই সবার ভাবনা। সুতরাং ভূতাত্ত্বিক জরিপ বলুন, সার্চ কোয়েটর বলুন, মানবজেনম বলুন, ক্রেডিটকার্ডে কেনাকাটা বলুন, সামাজিক মিডিয়া বলুন, জলবায়ু উপাত্ত বলুন- সর্বক্ষেত্রে এমন কম্পিউটার প্রয়োজন। এডওয়ার্ড স্নোডেনের প্রকাশিত তথ্যে জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরপত্তা সংস্থা এনএসএ একটি ৮ কোটি ডলারের কোয়ান্টাম কম্পিউটিং প্রকল্প আছে। কারণ অনলাইনে ব্যবহৃত সাংকেতিক ভাষায় বেশিরভাগই যে দুটি বড় মৌলিক সংখ্যার ফল সেই সংখ্যার উৎপাদককে খুঁজে বের করতে প্রচলিত কম্পিউটারের কয়েক বছর লেগে যেতে পারে। কোয়ান্টাম কম্পিউটার সে কাজটি এত দ্রুত করে নেবে যে অনেক সাংকেতিক ভাষা রাতারাতি বাতিল হয়ে যাবে। সেজন্যই এনএসএ’র এত বেশি আগ্রহ।
আগেই বলা হয়েছে ডি-ওয়েভ কম্পিউটার কিনেছে লকহিড মার্টিন। উদ্দেশ্য আরও নিরাপদ প্লেনের ডিজাইন করা। জেট বিমানের সফটওয়্যার পরীক্ষার কাজটা বর্তমানে প্রচলিত কম্পিউটারের পক্ষে অত্যন্ত জটিল আকার ধারণ করেছে। ডি-ওয়েভকে লকহিড সফটওয়্যার পরীক্ষায় ব্যবহার করবে।
গুগল এই প্রযুক্তিকে রোগব্যাধির নিরাময় উদ্ভাবনে, চালক বিহীন গাড়ির সফটওয়ার তৈরি, আবহাওয়া পরিবর্তনজনিত প্রভাব মোকাবিলায় এবং আরও উন্নত ধরনের রোবট তৈরির কাজে ব্যবহার করতে চায়; যে রোবট মানুষের ভাষা ভালভাবে বুঝতে পারবে।
জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা টেলিস্কোপের সাহায্যে সংগৃহীত সুবিপুল ডাটা এই কম্পিউটার দিয়ে আরও বহুগুণ ভালভাবে বিশ্লেষণ করতে এবং দূরের গ্রহগুলোকে আবিষ্কার করা ছাড়াও ভিনগ্রহে প্রাণের সন্ধান থাকলে তা বের করতে পারবেন।
চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা এই কম্পিউটারের সহায়তায় অধিক কার্যকর ওষুধ বের করতে পারবেন। যেমন, এ্যামাইনো এ্যাসিডগুলোর অনুপুঙ্খ চিত্র বের করে কিংবা ডিএনএ সিকোয়েন্সিং ডাটা বিশ্লেষণ করে তারা উন্নততর ওষুধভিত্তিক চিকিৎসা উদ্ভাবন বা তার পরিকল্পনা করতে পারবেন। কম্পিউটারের সাহায্যে নির্ণয় করা যাবে কিভাবে শরীরে রোগব্যাধির উদ্ভব হচ্ছে। তার ফলে বেশ আগে থেকে ক্যান্সার নির্ণয় করা সম্ভব হবে।
আবহাওয়া বিজ্ঞানীরা কোয়ান্টাম কম্পিউটারের সাহায্যে নিখুঁতভাবে আবহাওয়ার পূর্বাভাস দিয়ে ঘূর্ণিঝড়, টর্নেডো প্রভৃতি প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানির সংখ্যা বহুলাংশে কমিয়ে আনতে পারবেন।
সুতরাং তত্ত্বগতভাবে দেখা যাচ্ছে যে কোয়ান্টাম কম্পিউটার ক্লাসিক্যাল কম্পিউটারের তুলনায় অনেক দ্রুতগতিতে কাজ করতে বা সমস্যার সমাধান করতে পারবে। আবার ক্লাসিক্যাল এলগোরিদম ব্যবহার করে ক্লাসিক্যাল কম্পিউটারের মতোও কাজ করবে। এ্যাটম এনার্জির অবস্থাকে দ্রুত বদলে দেয়। এমনকি দ্রুততম কম্পিউটার প্রসেসরের চেয়েও অনেক দ্রুতগতিতে। প্রতিটি কিউবাইট একটা গোটা প্রসেসরের স্থান দখল করতে পারে। তার মানে, যেমন ধরুন- ব্যারিয়ামের এক হাজার আয়ন একটা এক হাজার প্রসেসর কম্পিউটারে স্থান দখল করতে পারে। গোপন তথ্যাবলীর এনকোড ও ডিকোড করা অনেকগণ সহজ হবে এবং কোনভাবেই সেগুলো ইন্টারসেপ্ট করা সম্ভব হবে না। আজকের কম্পিউটারের ইন্টারনেটের কোন সাংকেতিক ভাষাই নিরাপদ নয়। কারণ এনক্রিপশনের বর্তমান পদ্ধতি কোয়ান্টাম কম্পিউটারের অসম্ভব জটিল পদ্ধতির তুলনায় অতি সহজ। সেজন্যই তো মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এন এস এ ‘পেনিটেটিং হার্ড টার্গেটস’ নামে এক বিশাল কোয়ান্টাম কম্পিউটিং প্রকল্প নিয়েছে।
গুগল ও নাসা এবং ইউনিভার্সিটির স্পেস রিসার্চ এ্যাসোসিয়েশন যৌথভাবে একটি গবেষণাগার চালাচ্ছে; যার নাম কোয়ান্টাম আর্টিফিশিয়ান ইন্টেলিজেন্স ল্যাবরেটরি। নাসায় অবস্থিত এই ল্যাবরেটরিতে ব্যবহৃত হচ্ছে কোয়ান্টাম কম্পিউটার ডি-ওয়েভ টু। তবে ডি-ওয়েভ কোম্পানি কোয়ান্টাম কম্পিউটার নির্মাণের এই কৃতিত্ব চিরকাল ধরে রাখতে পারবে না। আইবিএম মাইক্রোসফট প্রভৃতি কোম্পানিও এগিয়ে আসছে। একদিন তারাও এ ধরনের কম্পিউটার বাজারে ছাড়বে। তখন এগুলো প্রতিযোগিতামূলক দামে পাওয়া যাবে। ঘরে ঘরে প্রচলিত কম্পিউটারের জায়গায় ঠাঁই হবে কোয়ান্টাম কম্পিউটার।
২| ২০ শে মার্চ, ২০১৪ সকাল ৯:১৫
ডট কম ০০৯ বলেছেন: দারুন পোষ্ট!! খুব ভাল লাগলো কোয়ান্টাম কম্পিউটার সম্পর্কে জেনে।
©somewhere in net ltd.
১|
২০ শে মার্চ, ২০১৪ সকাল ৮:৫৪
ঢাকাবাসী বলেছেন: উঁচুমানের পোষ্ট, ভাল লাগল। অবশ্য অনেক বাক্য মাথার উপ্রে দিয়া গেসে!