নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সময় যেখানে যেমন, তেমনি হতে চাই...

রোহান খান

আবারো ফিরে তোমাতে - ভালবাসার ছবি একেছে - জীবনের মাঝপথে আজ আমি বসে, জীবন এর আলো আজ অনেকটা বদলে গেছে - হারিয়ে নিজেকে।

রোহান খান › বিস্তারিত পোস্টঃ

না–খাইতেও দেবেন না? চা বিক্রেতা আরমানের একার লড়াই

১১ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ সকাল ১০:৫৪



রাজধানীর পুরানা পল্টনের চা বিক্রেতা আরমান হোসেন দুদিন ধরে চা বিক্রি করছেন না। গতকাল বুধবার সকাল থেকে তিনি জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনের ফুটপাতে অনশন করছেন। ২৬ বছর বয়সী আরমানের পেছনে টাঙানো একটি ব্যানার। ব্যানারে বড় বড় অক্ষরে লেখা ‘প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ বাণিজ্যমন্ত্রীর অপসারণের দাবিতে অনশন’।

দুই সন্তানের বাবা আরমান হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রতিদিনের ভোগান্তি সহ্য করতে না পেরেই এখানে অনশনে বসেছি।’ দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে জীবনযাপনে যে ভারসাম্যহীনতা তৈরি হচ্ছে, তা অমানবিক বলে জানান তিনি।

চা বিক্রেতা এই যুবক আরও বলেন, ‘শুধু পেঁয়াজের দাম বাড়েনি; অব্যবস্থাপনার কারণে অন্যান্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দামও ঊর্ধ্বগতি। ভোগ্যপণ্য এখন গণভোগান্তিতে পরিণত হয়েছে। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা নাকি বৃদ্ধি পেয়েছে, কিন্তু যারা আসলে ভুক্তভোগী, তারাই জানে আসলে তা হয়েছে কি না।’

স্ত্রী, সন্তান ও পরিবারের অন্যদের নিয়ে গাজীপুরের চৌরাস্তা এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় থাকেন আরমান। তাঁর ভাষ্যমতে, তিনি গাজীপুর থেকে প্রতিদিন পুরানা পল্টনে আসেন। যাতায়াত ভাড়াসহ প্রতিদিন তাঁর খরচ ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা। কিন্তু তাঁর দৈনিক আয় ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা। তাঁর প্রশ্ন, ‘এই আয় দিয়ে আমি ও আমার পরিবার কীভাবে বাঁচাব?’


আরমানের জন্ম খুলনায়। সাত ভাইবোনের মধ্যে তিনি তৃতীয়। ২০০৮ সালে গাজীপুর পাবলিক স্কুল থেকে এসএসসি পাস করেছেন তিনি। আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে আর পড়াশোনা চালাতে পারেননি। চার বছর আগে পুরানা পল্টনের সড়কের পাশে একটি চায়ের দোকান দেন। তিনি বলেন, ‘সংসারের মৌলিক চাহিদা পূরণে হিমশিম খেতে হচ্ছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি আমাকে নিঃস্ব করে দিচ্ছে।’

আরমান বলেন, ‘পেঁয়াজের দাম কবে কমবে, সে বিষয়ে নাকি বাণিজ্যমন্ত্রীর ধারণা নেই, তিনি জানেন না। একজন দায়িত্বপ্রাপ্ত লোক যদি এ রকম বক্তব্য দিতে পারেন, তাহলে আমরা তাঁর পদত্যাগ দাবি করতেই পারি। আমরা দেশের নাগরিক, কথা বলার সাংবিধানিক অধিকার আমাদের রয়েছে।’

গতকাল রাতে পুলিশের কয়েকজন সদস্য তাঁকে সেখানে থেকে উঠে যেতে বলেছেন। আজ বৃহস্পতিবারও তাঁকে চলে যেতে বলা হয়েছে, না গেলে চায়ের দোকান বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেন আরমান হোসেন।

একটা যুবক প্রেসক্লাবের সামনে একা বসে অনশন করছেন। দ্রব্যমূল্যের দামের চাবুক তিনি সহ্য করতে পারেননি বা চাননি। কিন্তু নিজের জন্য নয়, দেশের মানুষের কষ্টেই নিজেকে কষ্ট দেওয়ার এই অনশন। বাজারে লাগাম টেনে ধরতে ব্যর্থ বাণিজ্যমন্ত্রীর হাতে কেন অর্থনীতির একটা লাগাম থাকবে, সেটা তিনি জানতে চান, তিনি বাণিজ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ চান। স্বাভাবিক দেশে এমন প্রশ্ন তোলা খুবই স্বাভাবিক। ক্ষুধাপেটে ক্ষুধার বিরুদ্ধে আরমান তবু কেন একা? ঠিক এটাই কি আমাদের অন্যতম জাতীয় সমস্যা না?

এই দেশে কত মানুষই তো না খেয়ে থাকে। খিদেপেটে রিকশা চালায়, মাটি কাটে। না খাওয়া, আধা পেটা খাওয়া তাদের জীবনের ঘেয়ো বাস্তব। তাতে কারও কখনো ভ্রু কুচকায় না। তাদের খিদে কখনো সংবাদ হয় না। তাদের পেটের মোচড়ে কারও বুকে মোচড় দেয় না। কারণ, মানুষ বলেই হয়তো অথবা নাগরিক বলেই হয়তো আমাদের সয়ে যায় অনেক বেদনা। অনেক কাঠামোগত খিদেই আমাদের কাছে মরাবাস্তব।


এই খিদের পতাকা যেহেতু নেই, যেহেতু এদের যূথবদ্ধ করে ‘হাংরি হাংরি’ ধ্বনিতে পিলার জড়িয়ে নাড়ানোর কেউ নেই, আর যেহেতু এদের নিজেদের নড়াচড়ার অগ্ন্যুৎপাত আমরা সহজেই বর্বরতা, অন্ধতা বলে খারিজ করে দিতে শিখি, সেহেতু এই খিদের কোনো ভাষা নেই। এই আহাজারির ক্ষোভমাখা দাবি কেবল কর্কশ চিৎকার বলে ধুলায় গড়ায়।

খিদের কথা শুনতে পেতে তাই পেট পর্যন্ত শমন আসতে হয়। বাজারের দাম চড়চড়াতে হয়। ভাষাভাষীরা তখন কলকলিয়ে ওঠে। হুট করে তারা নিজেদের নাগরিকতার ধ্বজ বের করে বলে, বাজারে বাজার লাগামে আনো। বাজারের নাটাই সুতা কাটার কথা আসে। বাজারের নাটাই ছিনানোর কথা আসে। তখন অতিনাগরিকদের দিকে তোপ পড়ে।

সংবাদ হয় তখন৷ যখন সংবাদ যার লেখা, আর যার জন্য লেখা, তার হালতে দোলাচল দোলা দেয়। তখন প্রশ্ন ওঠে, এই খিদে তো অন্যায়। কারা করে এই খিদের চাষাবাদ? কারা তাতে সার দেয়, বীজ দেয়? প্রশ্ন করা হয়।

খিদেই যেন অপরাধী। সরকারের সঙ্গী ছিল এমন দলের এক নেত্রী প্রশ্ন তোলেন। খিদে যখন হুমকি হয়ে ওঠে, তখন প্রথম প্রচেষ্টা হয় ক্ষুধার্ত মানুষের জোটকে টুকরা করার। দামের আঘাত কার গায়ে লাগে আর কার গায়ে লাগে না, এমন প্রশ্ন ওঠে। প্রশ্ন করেন ডবল দামে বার্গার খেতে পারলে, পেঁয়াজ খেতে পারব না কেন? মহাত্মনের জানা নেই, পেঁয়াজসেবী জনতার বড় অংশটাই কদাচিৎ বার্গার খায়।

কিন্তু কোন খাদ্য কার চাহিদা? কার খাদ্য বদলের স্বাধীনতা আছে, কার নেই, এই প্রশ্ন উহ্য থেকে যায়। বন্ধুদের সঙ্গে আলাপে আমরা শুনি, কেন আমাদের পেঁয়াজ এতটা জরুরি। মাছ, মাংস ভোগে বিশ্ব সূচকে বহু ধাপ পিছিয়ে থাকা বাংগাল কেন বিশ্বের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পেঁয়াজ খায়? ঊননাগরিকদের পাতে ঝোলের ঘনত্ব দেখলে উত্তর পাওয়া যায়। জোলো তরকারিতে ঝাঁজ আনতে গেলে পেঁয়াজ হয়ে পড়ে মৌলিক চাহিদা।

এই ঝাঁজের চুরিতে যখন বাঙালি ঝাঁজিয়ে উঠে ফুঁসতে থাকে, বিশেষত যখন নাগরিকেরও নাভিশ্বাস ওঠে, তখন অতিনাগরিক তার উর্দি খুলে কাতারে দাঁড়ায়। ঐক্যবদ্ধ হও, তারা বলে। রুখে দাঁড়াও, তারা বলে। কাকে রোখা হবে আর কে সেই রোখার দ্বারবান, সেই প্রশ্ন লুকিয়ে দায় ঠেলে দেওয়া হয় নাগরিকদের হাতে। তাদের বঞ্চনাকে ফুঁসলিয়ে ফানুস বানানো হয়। না খেয়ে ব্যবসায়ীদের শিক্ষা দিন, বলা হয়। প্রয়োজনে তাঁদের গণপিটুনি দিন। তৈরি করা হয় আইনি বেআইন।

সবাই কি এই উপহাসটি ধরতে পারে? এই ঝামটাটি, এই বসন্ত গুমের কি কোনো সংবাদ হয়? হয় কোনো খতিয়ান? হয় না। কেউ হাততালি দেয়, কেউবা হাসে। কেউ ভাবে, আসলেই তো, পেঁয়াজ ছাড়া রান্নার রেসিপি তো লিফলেট হয়ে ঝরছে অলিম্পিয়া থেকে। নাহয় মান্য করি।

এদিকে আরমানেরা জেদ করে, খাইতে দেবে না তারা দামের চাপড়ে, যাক, নাহলে নাইবা খেলাম। খাবার না খেয়ে আমি এই ঘেয়ো ক্ষমতাকে খাব। মন্ত্রী সরাও, নয়তো আর আমি খাব না কিছুই।
সেই ঝাঁজালো দাবি নিয়ে অনশনে বসে আরমান। ক্ষমতাকে দায়ী করে না—খাবার অক্ষমতাটা দেখায়। হাংরি সমাজটাকে হঠাৎ সে ভাষা দিয়ে ফেলে।

তখনই চেতে যায় মসনদ। না না, এ তো করা যাবে না। তোমার দুর্ভাগ্যে তুমি কাঁদো, বুক চাপড়াও...মুঠো তুলবে কেন, অর্বাচীন? ভাই হারানোর শোকে তুমি ওপরওয়ালার কাছে বিচার চাইতে পারো, ওপরতলার বিচার চাইবে কেন বেয়াদব? হ্যাঁ, তোমার শোকে তো শোকার্ত আমিও, কিন্তু শোকে আহাজারি করে ক্ষমতাকে ডিস্টার্ব দাও কেন? বরং নীরবে কাঁদো, এমন উপায়ে কাঁদো যেন অশ্রুও তার কড়া নোনা স্বাদ টের না পায়।

তাই তাকে পুলিশ খেদায়। না খাবি না খা না বাপ, আমাদের খেতে চাস কেন? তাই তোর না খাওয়ার ক্ষমতাকে আমি আজ খাব। না খাইতে দোষ নেই, তবে সেটা বোবা হওয়া চাই। সেই না খাওয়া যখন ভাষা পেয়ে যায়, দাবিগুলো খিদেতে ফোটায়, তখন তাকে তো ঠিক বোবা–খোঁড়া করে দিতে হয়।

তবু কি থামানো যায় তাকে? আরমান ওঠে না। হুমকি–ধমকি, চাপ আরমানকে ওঠাতে পারে না। সে ঠিক কত দিন বসে থাকবে? ঠিক কত দিন মশার কামড় খাবে মধ্যরাতে? সে ঠিক কতটা ক্ষুধার্ত হলে যন্ত্রণাটা অশরীরী হবে? কতটা কাতর হলে কাতর হবে ক্ষমতা? তার খিদের কী ভাষা দেব আমরা? তার কথা শোনার মতো কান কি আমাদের আছে?

আরমান তো ঠিক সেটাই করেছে, যেটা তাকে করতে বলা হয়েছে। তাকে বলা হয়েছে পেঁয়াজ না খেতে, খাচ্ছে না তো সে। তাকে বলা হয়েছে ঐক্যবদ্ধ হয়ে অসাধুদের রুখে দাঁড়াতে, সে দাঁড়িয়েছে, বাকিদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার ডাক দিচ্ছে। কিন্তু ঠিক যে আলুভাতে প্রতিকার তাকে গছানো হয়েছিল, সেটাকে শাসকের নিজের ভাষাতেই সে ঝাঁজালো পেঁয়াজ করে তুলেছে।

এবার তাকে ক্ষমতা জোর করে খাওয়াতে আসে নাকি সেটাই দেখার বিষয়। ঠিক কেমন করে তার ভাষা কেড়ে নেওয়া হয়, সেটাই দেখার বিষয়। পেঁয়াজের মতো তীব্র আরমানের এই প্রতিবাদ কি আমাদের চোখে জল আনে কি না, আর তার জোয়ারে কি ক্ষমতার চোখে জল আসে কি না—সেটা দেখার কথা।

আমার শিক্ষক একসময় বলতেন যে ঊননাগরিকদের কোনো ভাষা নেই, তারা কথা বলতে পারে না। দেখা যাক, এই আরমান তাদের ভাষা দিতে পারে কি না। দেখা যাক, খেতে না পাওয়ার অবস্থা তৈরি করা দায়ী ব্যক্তিরা তাকে না খেতে দেয় কি না।একটা যুবক প্রেসক্লাবের সামনে একা বসে অনশন করছেন। দ্রব্যমূল্যের দামের চাবুক তিনি সহ্য করতে পারেননি বা চাননি। কিন্তু নিজের জন্য নয়, দেশের মানুষের কষ্টেই নিজেকে কষ্ট দেওয়ার এই অনশন। বাজারে লাগাম টেনে ধরতে ব্যর্থ বাণিজ্যমন্ত্রীর হাতে কেন অর্থনীতির একটা লাগাম থাকবে, সেটা তিনি জানতে চান, তিনি বাণিজ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ চান। স্বাভাবিক দেশে এমন প্রশ্ন তোলা খুবই স্বাভাবিক। ক্ষুধাপেটে ক্ষুধার বিরুদ্ধে আরমান তবু কেন একা? ঠিক এটাই কি আমাদের অন্যতম জাতীয় সমস্যা না?

এই দেশে কত মানুষই তো না খেয়ে থাকে। খিদেপেটে রিকশা চালায়, মাটি কাটে। না খাওয়া, আধা পেটা খাওয়া তাদের জীবনের ঘেয়ো বাস্তব। তাতে কারও কখনো ভ্রু কুচকায় না। তাদের খিদে কখনো সংবাদ হয় না। তাদের পেটের মোচড়ে কারও বুকে মোচড় দেয় না। কারণ, মানুষ বলেই হয়তো অথবা নাগরিক বলেই হয়তো আমাদের সয়ে যায় অনেক বেদনা। অনেক কাঠামোগত খিদেই আমাদের কাছে মরাবাস্তব।


এই খিদের পতাকা যেহেতু নেই, যেহেতু এদের যূথবদ্ধ করে ‘হাংরি হাংরি’ ধ্বনিতে পিলার জড়িয়ে নাড়ানোর কেউ নেই, আর যেহেতু এদের নিজেদের নড়াচড়ার অগ্ন্যুৎপাত আমরা সহজেই বর্বরতা, অন্ধতা বলে খারিজ করে দিতে শিখি, সেহেতু এই খিদের কোনো ভাষা নেই। এই আহাজারির ক্ষোভমাখা দাবি কেবল কর্কশ চিৎকার বলে ধুলায় গড়ায়।

খিদের কথা শুনতে পেতে তাই পেট পর্যন্ত শমন আসতে হয়। বাজারের দাম চড়চড়াতে হয়। ভাষাভাষীরা তখন কলকলিয়ে ওঠে। হুট করে তারা নিজেদের নাগরিকতার ধ্বজ বের করে বলে, বাজারে বাজার লাগামে আনো। বাজারের নাটাই সুতা কাটার কথা আসে। বাজারের নাটাই ছিনানোর কথা আসে। তখন অতিনাগরিকদের দিকে তোপ পড়ে।

সংবাদ হয় তখন৷ যখন সংবাদ যার লেখা, আর যার জন্য লেখা, তার হালতে দোলাচল দোলা দেয়। তখন প্রশ্ন ওঠে, এই খিদে তো অন্যায়। কারা করে এই খিদের চাষাবাদ? কারা তাতে সার দেয়, বীজ দেয়? প্রশ্ন করা হয়।

খিদেই যেন অপরাধী। সরকারের সঙ্গী ছিল এমন দলের এক নেত্রী প্রশ্ন তোলেন। খিদে যখন হুমকি হয়ে ওঠে, তখন প্রথম প্রচেষ্টা হয় ক্ষুধার্ত মানুষের জোটকে টুকরা করার। দামের আঘাত কার গায়ে লাগে আর কার গায়ে লাগে না, এমন প্রশ্ন ওঠে। প্রশ্ন করেন ডবল দামে বার্গার খেতে পারলে, পেঁয়াজ খেতে পারব না কেন? মহাত্মনের জানা নেই, পেঁয়াজসেবী জনতার বড় অংশটাই কদাচিৎ বার্গার খায়।

কিন্তু কোন খাদ্য কার চাহিদা? কার খাদ্য বদলের স্বাধীনতা আছে, কার নেই, এই প্রশ্ন উহ্য থেকে যায়। বন্ধুদের সঙ্গে আলাপে আমরা শুনি, কেন আমাদের পেঁয়াজ এতটা জরুরি। মাছ, মাংস ভোগে বিশ্ব সূচকে বহু ধাপ পিছিয়ে থাকা বাংগাল কেন বিশ্বের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পেঁয়াজ খায়? ঊননাগরিকদের পাতে ঝোলের ঘনত্ব দেখলে উত্তর পাওয়া যায়। জোলো তরকারিতে ঝাঁজ আনতে গেলে পেঁয়াজ হয়ে পড়ে মৌলিক চাহিদা।

এই ঝাঁজের চুরিতে যখন বাঙালি ঝাঁজিয়ে উঠে ফুঁসতে থাকে, বিশেষত যখন নাগরিকেরও নাভিশ্বাস ওঠে, তখন অতিনাগরিক তার উর্দি খুলে কাতারে দাঁড়ায়। ঐক্যবদ্ধ হও, তারা বলে। রুখে দাঁড়াও, তারা বলে। কাকে রোখা হবে আর কে সেই রোখার দ্বারবান, সেই প্রশ্ন লুকিয়ে দায় ঠেলে দেওয়া হয় নাগরিকদের হাতে। তাদের বঞ্চনাকে ফুঁসলিয়ে ফানুস বানানো হয়। না খেয়ে ব্যবসায়ীদের শিক্ষা দিন, বলা হয়। প্রয়োজনে তাঁদের গণপিটুনি দিন। তৈরি করা হয় আইনি বেআইন।

সবাই কি এই উপহাসটি ধরতে পারে? এই ঝামটাটি, এই বসন্ত গুমের কি কোনো সংবাদ হয়? হয় কোনো খতিয়ান? হয় না। কেউ হাততালি দেয়, কেউবা হাসে। কেউ ভাবে, আসলেই তো, পেঁয়াজ ছাড়া রান্নার রেসিপি তো লিফলেট হয়ে ঝরছে অলিম্পিয়া থেকে। নাহয় মান্য করি।

এদিকে আরমানেরা জেদ করে, খাইতে দেবে না তারা দামের চাপড়ে, যাক, নাহলে নাইবা খেলাম। খাবার না খেয়ে আমি এই ঘেয়ো ক্ষমতাকে খাব। মন্ত্রী সরাও, নয়তো আর আমি খাব না কিছুই।
সেই ঝাঁজালো দাবি নিয়ে অনশনে বসে আরমান। ক্ষমতাকে দায়ী করে না—খাবার অক্ষমতাটা দেখায়। হাংরি সমাজটাকে হঠাৎ সে ভাষা দিয়ে ফেলে।

তখনই চেতে যায় মসনদ। না না, এ তো করা যাবে না। তোমার দুর্ভাগ্যে তুমি কাঁদো, বুক চাপড়াও...মুঠো তুলবে কেন, অর্বাচীন? ভাই হারানোর শোকে তুমি ওপরওয়ালার কাছে বিচার চাইতে পারো, ওপরতলার বিচার চাইবে কেন বেয়াদব? হ্যাঁ, তোমার শোকে তো শোকার্ত আমিও, কিন্তু শোকে আহাজারি করে ক্ষমতাকে ডিস্টার্ব দাও কেন? বরং নীরবে কাঁদো, এমন উপায়ে কাঁদো যেন অশ্রুও তার কড়া নোনা স্বাদ টের না পায়।

তাই তাকে পুলিশ খেদায়। না খাবি না খা না বাপ, আমাদের খেতে চাস কেন? তাই তোর না খাওয়ার ক্ষমতাকে আমি আজ খাব। না খাইতে দোষ নেই, তবে সেটা বোবা হওয়া চাই। সেই না খাওয়া যখন ভাষা পেয়ে যায়, দাবিগুলো খিদেতে ফোটায়, তখন তাকে তো ঠিক বোবা–খোঁড়া করে দিতে হয়।

তবু কি থামানো যায় তাকে? আরমান ওঠে না। হুমকি–ধমকি, চাপ আরমানকে ওঠাতে পারে না। সে ঠিক কত দিন বসে থাকবে? ঠিক কত দিন মশার কামড় খাবে মধ্যরাতে? সে ঠিক কতটা ক্ষুধার্ত হলে যন্ত্রণাটা অশরীরী হবে? কতটা কাতর হলে কাতর হবে ক্ষমতা? তার খিদের কী ভাষা দেব আমরা? তার কথা শোনার মতো কান কি আমাদের আছে?

আরমান তো ঠিক সেটাই করেছে, যেটা তাকে করতে বলা হয়েছে। তাকে বলা হয়েছে পেঁয়াজ না খেতে, খাচ্ছে না তো সে। তাকে বলা হয়েছে ঐক্যবদ্ধ হয়ে অসাধুদের রুখে দাঁড়াতে, সে দাঁড়িয়েছে, বাকিদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার ডাক দিচ্ছে। কিন্তু ঠিক যে আলুভাতে প্রতিকার তাকে গছানো হয়েছিল, সেটাকে শাসকের নিজের ভাষাতেই সে ঝাঁজালো পেঁয়াজ করে তুলেছে।

এবার তাকে ক্ষমতা জোর করে খাওয়াতে আসে নাকি সেটাই দেখার বিষয়। ঠিক কেমন করে তার ভাষা কেড়ে নেওয়া হয়, সেটাই দেখার বিষয়। পেঁয়াজের মতো তীব্র আরমানের এই প্রতিবাদ কি আমাদের চোখে জল আনে কি না, আর তার জোয়ারে কি ক্ষমতার চোখে জল আসে কি না—সেটা দেখার কথা।

আমার শিক্ষক একসময় বলতেন যে ঊননাগরিকদের কোনো ভাষা নেই, তারা কথা বলতে পারে না। দেখা যাক, এই আরমান তাদের ভাষা দিতে পারে কি না। দেখা যাক, খেতে না পাওয়ার অবস্থা তৈরি করা দায়ী ব্যক্তিরা তাকে না খেতে দেয় কি না
(সংগৃহীত)

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ১১ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ দুপুর ১২:১৩

প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন বলেছেন: এরাই প্রতিবাদী, আমি/ আমরাতো খালি শো-আপ করি ।

২| ১১ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ দুপুর ১২:১৯

খাঁজা বাবা বলেছেন: যথার্থ বলেছেন, কিন্তু লেখাটা অনেক বড়।

৩| ১১ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ দুপুর ১২:২৮

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: আমাদের নির্লপ্ততা
আমাদের ভয়
আমাদের স্বার্থপরতায়
একজন আরমান একটা বাংলা বসন্ত হয়ে উঠে না।

ক্ষমতার দম্ভে চাপিয়ে দেয় চেতনা!
যে জয় বাংলা ছিল হৃদয়ের উচ্চারণ
তাকে আইনের খড়গ দিয়ে বলানোর ব্যার্থতা টুকু কি অনুভব হয়! ক্ষমতান্ধদের!

৪| ১১ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ দুপুর ২:৫১

চাঁদগাজী বলেছেন:


আপনি লেখাটা সংগ্রহ করেছেন, কিন্ত সঠিভাবে পড়ে দেখেননি যে, লেখাটা টেনেটুনে অকারণে বড় করা হয়েছে!

আরমান, ১৮ কোটী মানুষের মাঝে, ১৭ কোটীর পক্ষ হয়ে প্রতিবাদ করছে; ওর সাথে বালছাল পুলিশও যোগ দিতে পারতো, এবং সেটাই সঠিক হতো।

৫| ১১ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৩:০৮

আসোয়াদ লোদি বলেছেন: বিচ্ছিন্ন প্রতিবাদে কিছু হয়না, তারপরও প্রতিবাদ এটাই যথেষ্ট।

৬| ১১ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৩:১৫

রাশিয়া বলেছেন: এটা যদি এয়ারটেলের বিজ্ঞাপন হত, তাহলে দেখা যেত, টিপু মুন্সি একটা রেঞ্জ রোভার থেকে নেমে সানগ্লাস চোখে সাঙ্গপাঙ্গ সহ আস্তে আস্তে হেঁটে আরমানের কলার ধরে রক্ত চোখে তাকিয়েছে - আর চারপাশ থেকে মুটে মজুর রিকশাওয়ালা ভ্যানওয়ালা, হকাররা এসে আরমানের পাশে দাঁড়িয়েছে। হাঁফ ধরা সংলাপ - ভাগ্যিস বন্ধুরা ছিল!

বাস্তবে টিপু মুন্সিরা হচ্ছে চেতনার ধ্বজা ধারী - এদের বিরুদ্ধে কথা বলা এক ধরণের রাষ্ট্রদ্রোহিতা। পুলিশ কেন পিটিয়ে তক্তা না বানিয়ে ভদ্রভাবে উঠে যেতে বলল - এটা ভাবতেই অবাক লাগছে।

৭| ১১ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৩:২৭

বিজন রয় বলেছেন: একজন আরমান রাজপথে থামল আর আমরা ব্লগে বসে আছি।

বাহ!!

৮| ১১ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৫:১৫

রাজীব নুর বলেছেন: বাজারে গেলে আমার মন খারাপ হয়ে যায়।
প্রচুর দাম । মাঝে মাঝে এমন হয় কোনো কিছু না কিনে বাসায় চলে আসি।

৯| ১১ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৫:৩৮

বাকপ্রবাস বলেছেন: বেশ বড় হবার দরুন শেষ পর্যন্ত পড়তে পারিনি, কিছু পড়ার পর বুঝলাম টেনে বড় করা হচ্ছে, বিষয়টা ঠিক ছিল কিন্তু অতি এর দরুণ বদ হজম হবার যোগাড়

১০| ২১ শে ডিসেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৪:০৯

কায়েস মাহমুদ! বলেছেন: মানুষের মুক্তি ঘটুক। নিত্ত্বপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম কমুক।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.