![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি সামান্য একজন মানুষ। প্রতিদিন আমাদের চারপাশের অনেক কিছু নিয়েই আমার ভেতর বিভিন্ন ধরনের ভাবনা আসে। বিশেষ কিছু ঘটনা জীবনে অনেক দাগ কেটে যায় মনের ভেতর, সেগুলোই আমি এই ব্লগের মাধ্যমে লিখে রাখতে চাই আর সবার সাথে শেয়ার করতে চাই।
জার্মান বিশ্ববিদ্যালয় যখন আমার স্বামী মাস্টার্স করতে এসেছিলেন তার ৬ মাস পরে আমি তার সাথে এসে যোগ দিলাম হামর্বুগে । পুরা বিশ্ব বিদ্যালয়ে এক মাত্র বাঙালি ছিল আমার স্বামী। ইন্ডিয়া, পাকিস্থান, মিডলিস্ট থেকে অনেক ছাত্র এসেছিল। কেই তেমন আমাদেরকে চিনতো না। আমি সারা দিন হোস্টেলের রুমে কাটাতাম, জানালা দিয়ে মানুষ দেখতাম। মানুষ দেখা আমার বড় নেশা। কত বিচিত্র বর্নের মানুষ। আমার সময় কেটে যেতো । একদিন হঠাৎ মনে হল, আমাদের অস্তিত্ব সবাইকে জানাল দরকার যে আমরা বাংলাদেশী। কি করা যায় ভাবছিলাম ,তখনি মনে এলো, বিভিন্ন দেশের খাবার খেতে কে না পছন্দ করে? আমি আমার স্বামীকে বললাম তুমি যাদের সাথে গ্রুপ করে পড়াশুনা কর,আজ তাদেরকে নিয়ে আসবে, বলবে আমার স্ত্রী তোমাদের দাওয়াত করেছে।
প্রত্যেকটা ছাত্র- ছাত্রী আমাদের ফ্ল্যাটে এলে আমরা সবাই এক সাথে খাবার খেলাম। সবাই আমাদের চিনতে পারল, এর পর ওদের মুখ থেকেই সবার মাঝে ছড়িয়ে গেলে বাংলাদেশের ছাত্রের কথা। তারপর থেকে সবাই আমার সাথে কথা বলতো, বাংলাদেশি রান্না শিখতে চাইতো।ইন্টারন্যাশনাল ফুড ফাস্টিভেলে আমি ১০০ গোলাপজাম বানিয়ে দেওয়াই
ডিজার্ট ক্যাটাগরিতে এশিয়ান ফুড ফাস্ট প্রাইজ পেলো। এরপর থেকে পুরো বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছাত্রী বাংলাদেশকে চিনে গেল।
এরপর আমার স্বামী পড়া শেষ করে চাকরী নিয়ে দক্ষিণ জার্মানির ছোট একটা গ্রামে চলে আসে। যে গ্রামের কেই বাংলাদেশ তো অনেক পরের কথা, কাল চুলের মানুষ দেখলেই তারা অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকতো। আমার কোল জুড়ে তখন আমাদের একমাত্র ছেলে। আমার স্বামী যখন অফিসে চলে যাই তখন আমি আর আমার ছেলে হাটতে বের হই, ভ্যালির পর ভ্যালি আমি, আমার ছেলেকে নিয়ে হাটতাম, কেউ কথা বলত না, অবাক হয়ে আমাদের শুধু দেখত। এর মধ্যে রোযা শুরু হল, সামনে ঈদ, আমি চিন্তা করলাম এটাই ঠিক সময় নিজেদের অস্তিত্ব সম্পর্কে মানুষকে জানানোর । আবার সেই একি কাজ করলাম, আমি বাংলাদেশি কিছু পদ রান্না করে, আমার প্রতিবেশিদের বাসায় খাবার দিয়ে আমাদের পরিচয় জানালাম। ওরা সবাই আমাদের সম্পর্কে জানতে পারল, বাংলাদেশ সম্পর্কে জানতে পারল। তারপর থেকে যখনি কেই আমাদের দেখত, আমাদের সাথে কথা বলতে এগিয়ে আসত, বাংলাদেশ সম্পর্কে জানতে চাইতো।
এর পর যখনি আমি নতুন কোন জায়গাই গিয়েছি, দেশিও খাবার প্রতিবেশিদের মাঝে পরিবেশন করে আমি আমাদের অস্তিত্বকে জানিয়েছি।
আবার রমজান মাস এসেছে, আমরা যে যেখানেই থাকি না কেন, নিজের প্রতিবেশিদের সাথে যদি আমরা আমাদের খাবার শেয়ার করে খাই তাহলে সে ও আমাদের সম্পর্কে জানবে, আর আমাদের নিজেদেরও অনেক ভাল লাগবে।ভাল খাবার সবার সাথে ভাগ করে খাওয়ার মজাই অন্যরকম।সেটা বাংলাদেশেই হঊক আর বিদেশেই হঊক, নিজের অস্তিত্ব জানানোর এর চেয়ে ভাল পন্থা আর নেই।
©somewhere in net ltd.