নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

এক ফোটা শিশিরে প্রানের স্পন্দন

রিক্তম আভা

আমি পুলক, কবিতার প্রতি অনুরক্ত!

রিক্তম আভা › বিস্তারিত পোস্টঃ

কত সত্য এ প্রণয়---

১৭ ই জুন, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৫৩

খুব সহজ করে প্রেমের গল্প লিখবে বলে ল্যাপটপটা খোলে মিশুক । আজকাল আর কাগজ কলমে লেখা হয়ে ওঠে না। তার চেয়ে কীবোর্ডেই স্বাচ্ছন্দ বোধ করে । অভ্র ফোনেটিকের কল্যাণে বাংলা টাইপিং অনেক সহজ বলেই হয়ত। কিন্তু কি লিখবে? সহজ সমাধানে স্মৃতি হাতরে বেড়ায়। একটু আলাদা কেউ যাকে নিয়ে গভীর কিছু ভাবা যায়। ভাবতে ভাবতেই মেসেঞ্জারে কল্যানীর বাঁদরামী ভেসে ওঠে।

কল্যানীঃ কি কবি? আজকে কার দাঁত ভাঙ্গার ব্রত নিয়ে কাব্য চর্চা শুরু শুনি?
মিশুকঃ মেজাজ খারাপ করিস না তো। তোদের জন্য একটু ভালো করে কবিতাও লিখতে পারবো না। বাংলা ভাষা শরবত বানিয়ে না গিলিয়ে দিলে তো তোদের মন ভরবে না। জীবনানন্দ মরে গিয়ে বেঁচে গেছে। তুই বরং ছড়া পর- হাট্টিমা টিম টিম টিম - - - সহজ লাগবে। যত্তসব।
কল্যানীঃ চেতিস ক্যান?
মিশুকঃ ধুর- ভাবছিলাম একটা গল্প লিখব। দিলি তো মুড টা নষ্ট করে।
কল্যানীঃ লে হালুয়া- তুই কঠিন কবিতা লিখে মানুষের দাঁত ভাঙবি আর আমরা একটু বলতেও পারব না।
মিশুকঃ দূরে গিয়ে মর।
কল্যানীঃ সেই মরার খবর দিতেই তো ফোন দিচ্ছি। ফোন ধরিস না কেন?
মিশুকঃ ও তাই নাকি? ফোন দিয়েছিলি? দেখিনি তো। যা হোক বল। কোথায় মরতে যাচ্ছিস?
কল্যানীঃ এতবড় বিদূষী তীরোধানে যাবে আর তার খবর এত সহজে পেয়ে যাবি তা তো হবে না।
মিশুকঃ আরে সেই অবস্থা দেখি। আমার সাহচর্যে ভালোই উন্নতি হয়েছে। ব্যাপক শব্দ চর্চা । তা বিদূষীর তীরোধান বার্তা কিভাবে জানা যাবে?
কল্যানীঃ কালকে একটু উত্তরা আসবি? হাংরি ডাক এ তোর গলা কাটব। তুই অবশ্য বড়লোক মানুষ। একদিন খাওয়াইলে তোর গরম পকেটের তাপমাত্রা কিছুই কমবে না।
মিশুকঃ হুম আমার পকেট তো আইসোথার্মাল। বাংলায় সমোষ্ণো পকেট। কিছুতেই তাপমাত্রা কমে না।
কল্যানীঃ নেহ আর ইঞ্জিনিয়ারিং কপচাইতে হবে না। কালকে চলে আসিস। ঠিক সন্ধ্যার মধ্যে। বেশি রাত করতে পারব না।
মিশুকঃ তোর সাথে রাত গভীর করতে চাইছে কে? আমারে খসাইয়া খাইতে আসবি তো। খাবি। বেশি তাড়া থাকলে খাবার একসাথে মুখের মধ্যে জমা করে বাসায় গিয়ে ধীরে ধীরে চিবিয়ে চিবিয়ে খাবি।
কল্যানীঃ ঐ আমি কি উঁট নাকি? যে একবারে সব খাবার জমা করে ধীরে ধীরে চাবাবো।
মিশুকঃ নাহ তুই ত জলহস্তি।
কল্যানীঃ কি বললি?? সবাই তোর মত জিবন্ত স্কেলেটন হবে নাকি। চলতে ফিরতে দেখিয়ে দেয়া যাবে- টিবিয়া, ফিবুলা, টার্সাল, মেটাটার্সাল, ফেলাঞ্জেস।
মিশুকঃ ওফ – আবার ডাক্তারী শুরু। এইসব শব্দও আমার কানে আনবি না। বিভৎস বায়োলজীর কথা মনে পরে যায়। ওয়াক এইসব মানুষ পরে।
কল্যানীঃ নাহ সবাই তো তোর মত হাতুর-বাটাল নিয়ে মিস্ত্রি হবার জন্য জন্মেছে।
মিশুকঃ ঠিক আছে বাবা- মহান পেশার ডাক্তারনী এবার থামেন। কালকে আপনার তীরোধান উপাখ্যান শুনতে ও আমার পকেটের বারোটা বাজাইতে পৌছে যাবো। ওকে??
কল্যানীঃ ওকে
মিশুকঃ ও হ্যা। ভাব দেখাইয়া বেশি দেরী করে আসবি না তো?? একা একা রেস্টুরেন্টে অসহ্য রকমের বিরক্ত লাগে।
কল্যানীঃ ফোনে কন্টাক্ট করে রওনা দিস-
মিশুকঃ ওকে।

নাহ আজকের মত আর লেখা হলো না। মুডটাই নষ্ট করে দিলো কল্যানী। ওর খেয়ে দেয়ে কোনো কাজ নেই এমনটা ভাবতে ভাবতেই মিশুক চিন্তা করে আচ্ছা কালকে কি এমন বিশেষ কথা বলবে কল্যানী যা ফোনে বলা যায় না। ওর কি দূরে কোথাও পোস্টিং হবে নাকি? ডাক্তারদের এই এক মহা ঝামেলা। কই কোন গ্রামে গঞ্জে পোস্টিং দিয়ে দিবে। কিন্তু এই খবর তো ফোনেও দেয়া যেত। ধুর। যা বলে বলবে। এই নিয়ে চিন্তার কি আছে। এমনটা ভাবতে ভাবতে একটা সিগারেট ধরায় মিশুক। আজকাল সিগারেটেও সেই টান টা আর নেই। মাঝে মাঝে খুব ক্যাম্পাসে ফিরে যেতে ইচ্ছে করে। আহ- সেই জীবন। সারাদিন বরকতের টং এ বসে থাকলেও বিরক্ত লাগত না।

যদিও ক্যাম্পাসের কথা মনে এলেই পৃথা’র কথা মনে পরে যায় মিশুকের। আর পৃথা মানেই দুঃসহ স্মৃতি। ভাবলে অবশ্য এখন হাঁসিই পায় মিশুকের । কতটা ছাগল হলে একটা মানুষ মিশুকের মত হতে পারে। ওহ আজব ব্যাপার তো- যখন প্রেমের গল্প লেখার জন্য উপমা খুঁজছিলো তখন একবারও তো পৃথার কথা মাথায়ই আসে নাই। মানুষ কত সহজে বদলায়। এই কয়েক বছরেই পৃথা- পৃথা অনুভুতিটা এতটাই নাই হয়ে যাবে মিশুক কল্পনাও করে নি কখনও। এরই নাম বোধ হয় জীবন। পৃথার প্রতি এত পাগলামীর অনেকটাই এখন কম বয়সের ইমম্যাচুউরিটি মনে হয়। যাক সেসব কথা।

টিভির রুমে যাবার জন্য উঠতেই দুর থেকে ভেসে আসা কোনো সিরিয়ালের সূচনা সঙ্গীত শুনতে পেয়ে থেমে গেলো মিশুক। নাহ রুবির অত্যাচারে টিভির রুমের ধারে কাছেও যাওয়া যাবে না। রুবি ওর একমাত্র বোন। মাত্র ১ বছরের ছোটো ও মিশুকের থেকে। বাঁদরনীটাকে শশুরবাড়ি না পাঠালে অন্তত টিভি দেখার চিন্তাও মাথায় আনা যাবে না।

কি করবে ভেবে না পেয়ে পুরাতন ডায়রীগুলো খুলে দেখতে থাকে মিশুক। স্মৃতি সংরক্ষনে ছাত্রজীবনে নিয়মিতই ডায়রী লিখত মিশুক। এক একটি পাতা উল্টাচ্ছে আর অজস্র মূহুর্ত চোখের মাঝে ভেসে আসছে। যেমন- ৪ বছর আগের লেখা -“আজকে পৃথার সাথে অনেকক্ষন ঝগড়া হলো।

পৃথাঃ ঐ কল্যানীর সাথে এত কিসের কথা তোমার মিশুক। মেডিক্যেলে না কত পড়া থাকে ? আজাইরা তোমার সাথে এত গেঁজায় কেনো?
মিশুকঃ ও এমনিতেই। কোন রোগীর এটেন্ডেন্ট নাকি ওর দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে ছিলো তাই বলছিলো।
পৃথাঃ তাতে তোমার সাথে কি?
মিশুকঃ আশ্চর্য। কল্যানী আমার ছোটোবেলার ফ্রেন্ড। ও আমার সাথে গল্প করতে পারে না??
পৃথাঃ নাহ পারে । তাইলে আমার সাথে এত পেচাল পারার দরকার কি? ওর সাথেই গল্প কর। পারলে রুগী হয়ে মেডিকেলে চলে যাও।
মিশুকঃ রাগ করছ কেনো?
পৃথাঃ রাগ করব কেন? তোমার সাথে আমার কি এমন সম্পর্ক যে রাগ করতে যাবো। we are just friend না?
মিশুকঃ কি জানি- আমরা কি তা তুমিই ভালো জানো। ফোন রাখি।
ওপাশ থেকে কোনো কথা না বলেই পৃথা ফোনটা কেটে দিলো।

ফোনটা রাখতেই দেখি কল্যানির ফোন।

কল্যানীঃ কিরে কি অবস্থা?
মিশুকঃ অবস্থা ভালো না। পৃথা আবার রাগ করছে। তখন তোর সাথে গল্প করছিলাম। ও ওয়েটিং পেয়েছে।
কল্যানীঃ ও এই কথা।
মিশুকঃ জ্বি । এই কথা।
কল্যানীঃ রাগ কি গুরুতর।
মিশুকঃ হুম।
কল্যানীঃ ঠিক আছে কালকে ক্লাসে যাবার আগে আমার হোস্টেল থেকে দেখা করে যাস।
মিশুকঃ কেনো?
কল্যানীঃ দরকার আছে।

কিছুক্ষণ পরে পৃথার ফোন।

মিশুকঃ হ্যালো।
পৃথাঃ তুমি আমার জন্য স্টোনের মালা কিনছ। সেটা আগে বলনি কেনো??
মিশুকঃ (আকাশ থেকে পরার মত অবস্থা)। মানে- না মানে--
পৃথাঃ কল্যানী আমাকে ফোন দিয়েছিলো। ও সব বলে দিয়েছে। তুমি আজকে ওর সাথে করে আমার জন্য মালা কিনতে গেছিলা। সারপ্রাইজ দিতে চাইছিলা। কিন্তু কল্যানি ফাঁস করে দিয়েছে। হা হা হা…
মিশুকঃ (অবাক হয়েও না হবার ভান করে ) ধুর এইডা কিছু হইলো।

পরদিন কল্যানী নিজেই হলের গেটে এসে ফোন দিয়েছে। নে নিজের জন্য একটা মালা কিনছিলাম। তোর প্রেম ভাঙ্গার দায় নিতে পারব না বলে দিয়ে গেলাম। আর মদু মদু ভাব নিয়ে কৃতজ্ঞতা দেখাতে হবে না। পরে পারলে আমাকেও কিনে দিস।

এভাবে যে আরো কত দিন পৃথার অভিমান ভাঙ্গাতে কল্যানী আজব আজব সব আইডিয়া নিয়ে এসেছে। অবশেষে পৃথা ঠিকই চলে গিয়েছে। বিনা অভিমানে। অযাচিত অকারনে। ভাবতে ভাবতে আবার হারিয়ে যায় মিশুক। কত নির্যাতনই না নিজের উপর করেছে মিশুক পৃথা চলে যাবার পর। কল্যানীর অত্যাচারে একটু একা একা কষ্ট যাপনও করতে পারে নি যদিও। পৃথা চলে যাওয়ার পর থেকে যেন আঠার মত লেগেছিলো।

বারবার কল্যানী একটা কথাই বলত। ভাবিস না সিমপ্যাথি দেখাচ্ছি। আবার এও ভাবিস না চান্স পে ড্যান্স মেরে তোর প্রেমে পরে যাচ্ছি। শুধু এতদিনের বন্ধু তুই গোল্লায় যাচ্ছিস। তাই ঠেকাচ্ছি।

এভাবে দেখতে দেখতে ৩ বছর চলে গেলো। প্রতিটা দিন এক কল্যানীর অত্যাচারে একটু বিরহ যাপনও করা হয় নাই। মেয়েটা পারেও। ও না থাকলে মিশুক সত্যিই আত্মনিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলত।

ভাবতে ভাবতে কখন ঘুমিয়ে গেছে মিশুক বুঝতেও পারে নি। শেষ রাত্রে স্বপ্নে দেখছে আবছা আলোয় একটা সমুদ্রপারে হাঁটছে কল্যানী। ঢেউয়ের গর্জন ছাপিয়ে ওর গলা থেকে ভেসে আসছে সুর-

“ঐ ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় আমার ইচ্ছে করে-
আমি মন ভেজাবো- ঢেউয়ের মেলায় তোমার হাতটি ধরে-”

শুনতে শুনতে সমুদ্রপারে কল্যানীর হাতটি ধরতে যাবে মিশুক এমন সময় বজ্রপাতের শব্দে ঘুম ভেঙে গেলো। ঘুম ভেঙ্গে ঝুম বৃষ্টির শব্দ শুনতে পেলো ও। হঠাত করে আধো ঘুমেই স্বপ্নটা আরো গভীরে নিয়ে যাচ্ছে মিশুককে। কখনও তো এতটা শান্ত কল্যানীকে ভেবে দেখে নি ও। একটা দিন যার অত্যাচার ছাড়া কাটে নি- তাকেই চেনা হয় নি হয়ত। ভাবতে ভাবতে সকাল হয়ে যায়।
অফিস শেষে বৃষ্টি ছাপিয়ে কল্যানীর সাথে দেখা করতে উত্তরা যায় মিশুক।
সারাদিন শুধু রাত্রের স্বপ্নটা ভাবাচ্ছিলো মিশুককে। কল্যানী- হ্যা কল্যানীকে নিয়ে তো এমনটা কখনও ভেবে দেখেনি ও। এত স্নিগ্ধ একটা মেয়ে। এতটা চপল অথচ ভেতরে খুব শান্ত। অনেক মেধাবীও। ঠিক যেমনটা মিশুক কল্পনায় আঁকে বরাবরই।

সন্ধ্যায় ক্লান্ত কল্যানী হুরমুরিয়ে আসে। যাহ- সেই দেরিই হয়ে গেলো। কি আর করা রোগীদের অসুখের তো আর শিডিউল নাই।

মিশুক ভাবতে থাকে সারাদিনের জমানো কথাগুলো। গতরাত্রের স্বপ্ন। নাকি অন্য কিছু বলবে কল্যানীর সাথে। কত সহজ সম্পর্ক- কত সহজ আলাপ- আড্ডা- মূহুর্তে সব জটিল হয়ে যাচ্ছে। বলবে বলবে করে কিছুই বলতে পারছে না। এমন অবস্থায় কল্যানীই বলা শুরু করল।


কল্যানীঃ আয় অর্ডার করে তীরোধান যাত্রার আলাপ শুরু করি।
মিশুকঃ হুম। কিন্তু অর্ডার দেয়া যখন তোর ই দায়িত্ব সুতরাং তুইই সেরে ফেল।
কল্যানীঃ আজকে অন্তত তুই কিছু বল।
মিশুকঃ না রে। তুই খুব ভালো করেই জানিস রেস্টুরেন্টের কোনো খাবারেই আমার কোনো আসক্তি নাই। রেস্টুরেন্টে আমি যাইই কাওকে না কাওকে সঙ্গ দিতে। খাওয়ার চিন্তা করে কখনও যাই নি।
কল্যানীঃ ঠিক আছে আমিই ঠিক করে দিচ্ছি।
বলে ওয়েটারকে ডেকে মেন্যু বুঝিয়ে দিলো।
মিশুকঃ বল এবার তোর কি এমন মহান বানী।
কল্যানীঃ আচ্ছা ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না। খুব কঠিন একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে ঝামেলায় আটকে আছি।
মিশুকঃ খুলে বল।
কল্যানীঃ বাবা একটা ছেলের ব্যাপারে খুব আগ্রহী। আমাদের ২ ব্যাচ সিনিয়র ডিএমসি থেকে বের হইছে। এখন পিজিতে আছে।
মিশুকঃ তো কি সমস্যা? রাজী হয়ে যা।
কল্যানীঃ আরে তা না। ঐ যে নিরবকে চিনতি না তুই ? আমার ব্যাচের। ওর বাসা থেকেও কালকে আমার বাসায় ফোন দিয়েছিলো বিয়ে-সাদির ব্যাপারে কথা বলতে চায়।
মিশুকঃ তো?
কল্যানীঃ তো বুঝতে পারছিস না??
মিশুকঃ বুঝলাম । কিন্তু তোর কি মনে হয় ? কে বেশি ভালো মনের?
কল্যানীঃ সেটা আগেই বুঝব কিভাবে? আর বুঝলে তোকে জিজ্ঞেসই বা করছি কেনো??
মিশুকঃ তাও তো একটা কথা। আসলে সত্যি কথা হলো- আমি ছাড়া এই জগতে আর কারো মনই বেশি একটা ভালো না। সুতরাং যাকেই বিয়ে করিস একই কথা। এক কাজ কর । লটারী করে একটা সিলেক্ট করে ফেল।
কল্যানীঃ তোরে মাইর না দিলে শান্তি পাবো না আজকে সত্যিই। আমি একটা সিরিয়াস বিষয় নিয়ে আলাপ করতে এলাম আর তুই?? যত্তসব ফাইজলামি।

এবার কিছু বলতে গিয়ে আটকে যায় মিশুক।
সারাদিনের ভাবা কথাগুলো বলতে খুব ইচ্ছে হয় ওর। গতরাত্রের স্নিগ্ধ স্বপ্নের কথা। আরো অনেক অনেক কথা।
কিন্তু কিছু অসংলগ্ন চিন্তা মাথার মধ্যে কুঁড়ে কুঁরে খায় মিশুককে।
* পৃথার নিয়ে সমস্ত ঘটনায় হয়ত মিশুক যে আর কাওকে ভালোবাসতে পারে এই চিন্তাই হারিয়ে ফেলেছে কল্যানী-
* সত্যি করে সহজভাবে বলতে গেলে যদি কল্যানী বিষয়টা অন্যভাবে নেয়। এতদিনের বন্ধুত্ত্ব। কি হবে? ও কিই বা ভাববে।
* এখন ভালোলাগা- বা ভালোবাসার কথা বলা মানে সেটার দ্রুত বাস্তব একটা স্বীকৃতি দেয়ার চেষ্টা করা। কিন্তু বাসায় রুবির বিয়ে নিয়েই এখনও সবার যেখানে মাথা খারাপ সেখানে আমি কাওকে বিয়ের কথা বললে বাবা-মা’র মাথায় বজ্রপাত হবে হয়ত।
* বড় ভাইয়া একা একা বিয়ে করার ঘটনা আজও বাবা-মা মেনে নিতে পারে নি-
এসব ভাবতে ভাবতে কল্যানীর কোনো কথা আর কানে যায় না মিশুকের।
মাঝে মাঝে ওর খুব মেয়েদের মত রোগ দেখা দেয়। বিশ্রী চোখের পানি আটকে রাখতে পারে না। খুব তাড়াতাড়ি ওয়াসরুমে গিয়ে মুখ ধুয়ে আসে ও।
কোনো রকমে খাওয়া সেরে দুজনে বেড়িয়ে পরে।
রাস্তা পেড়িয়ে লেকের কাছে গিয়ে হাঁটছে মিশুক আর কল্যানী। দুজনের কারো মুখে কোনো কথা নেই।
ভেতরটা দুমরে মুচরে তলিয়ে যাচ্ছে মিশুক। হঠাৎ করে হাঁটা থামিয়ে কল্যানী বলে।
কিছু বলবি মিশুক??
মিশুকঃ নাহ
কল্যানীঃ বল
মিশুকঃ নাহ কিছু নাঃ
কল্যানীঃ আমি সাহস দিচ্ছি তুই বল।
মিশুকঃ আমাকে সারাটা জীবন পাশে থেকে সাহস দিতে পারবি?? বলতে বলতে আর চোখের পানি আটকিয়ে রাখতে পারে না মিশুক—সবকিছু ছাপিয়ে ঘোলা চোখেও ও কল্যানীর দিকে তাকানোর সাহস পাচ্ছে না।
তারপর লেকের ধারে- মিশুকের হাতটা ধরে কল্যানী-
চিকন গলায় গানটা ধরে-
“ঐ ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় আমার ইচ্ছে করে-
আমি মন ভেজাবো- ঢেউয়ের মেলায় তোমার হাতটি ধরে-”

মন্তব্য ০ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.