![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বেলাল, বিপেন আর বাসুদার আদরের ছোট বোন আদুরী। সবার ভালবাসার মধ্যমণি হয়ে আদরে আহ্লাদে বড় হওয়া সবুজ শ্যামলীমার দুরন্ত সরলা কুমারী তরুণী আদুরী। হায়েনার হিংস্র লোলুপতায় সেই আদুরীর প্রথম সবুজ সকাল ছিল গগণ বিদারী চিৎকারের, সে চিৎকারে মিশে একাকার সম্ভ্রমের তাজা রক্তের লাল সূর্য। সেদিন হাজারো আদুরীর সতীত্ব হরণ হয়নি, সেদিন অস্তিত্ব হরণ হয়েছিল পুরো বাঙ্গালী জাতির।
নিজের মা এবং দুই ছেলে সন্তানের সামনে পাকিস্তানি খানসেনা দ্বারা যিনি নির্মমভাবে ধর্ষণ হয়েছিলেন তিনি আমাদের রমা চৌধুরী। ১৯৬১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যে মাস্টার্স করা রমা চৌধুরী পেশায় ছিলেন স্কুল শিক্ষিকা যিনি আজ ফুটপাতের বইয়ের দোকানের ফেরিওয়ালা। তিনি আজ সদা সর্বদা খালি পায়েই থাকেন, কেউ তাকে জুতা পড়াতে পারেনি । রমা চৌধুরী'র মত অসংখ্য মায়েদের মহান আত্মত্যাগেই একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বরে আমাদের মহান স্বাধীনতা এসেছিল। স্বাধীনতার ৪২ বছর পরেও রমা চৌধুরীদের পথে পথে ভিক্ষাবৃত্তি করে বেড়াতে হয়, অবহেলিত হতে হয়, শুনতে হয় কটু কথা। আজ বাংলার মাটিতে খালি পায়েই পথ চলছেন রমা চৌধুরীরা। তবুও তারা রাষ্ট্রীয় ভাবে সুযোগ সুবিধা ভোগী স্বীকৃত মুক্তিযোদ্ধা নন।
বীরাঙ্গনাদের উপরে নির্যাতনের পদ্ধতি ছিল লোমহর্ষক। পাশবিক ধর্ষন শেষে বাংলার মা বোনদের চুল বেধে উলঙ্গ করে ক্যাম্পে ঝুলিয়ে রাখা হতো, সেখানে চলতো সীমাহীন বর্বরতা। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, বিরামহীন প্রহার আর অত্যাচারে মেয়েদের দেহ থেকে রক্ত ঝরছিল, কারো কারো মুখের দাঁত ছিল না, ঠোটের দু'দিকের মাংস সহ শরীরের বিভিন্ন অংশ কামড়ে, টেনে ছিড়ে ফেলা হয়েছিল, আঘাতে আঘাতে হাতের আঙ্গুল, তালু ছিল থেতলানো। প্রসাব পায়খানার জন্যও তাদের হাত ও চুলের বাধন খুলে দেয়া হতো না। জীবন হয়ে উঠেছিল দুর্বিষহ । এমন নির্যাতনের ঘটনা যেখানে পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল সেখানে আমরা স্বাধীনতার জন্য অসিম ভূমিকা পালনকারী মাতৃতুল্য বীরাঙ্গনাদের পুর্নাঙ্গ তালিকা আজ পর্যন্ত প্রকাশ করতে পারলাম না।
জেনে অবাক হবেন যে, ছয় বছর ব্যাপী দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে 'গোটা ইউরোপে' নাৎসি ও ফ্যাস্টিট বাহিনীও সম্মিলিতভাবে এত বেশি নারীকে ধর্ষন বা নির্যাতন করেনি' (ড:এম এ হাসান, ২০০২, পৃ-৫)।
যুদ্ধকালীন সময়ে সারা দেশের ৪৮০ টি থানা থেকে গড়ে প্রতিদিন ২ জন করে নির্যাতিত মহিলার সংখ্যা অনুসারে ২৭০ দিনে ধর্ষিতা নারীদের সংখ্যা দাড়ায় ২ লক্ষ। আন্তর্জাতিক প্লানড ফাদারহুড প্রতিষ্ঠানের ড. জিওফ্রে ডেভিস যুদ্ধের পরপরই এসব মা ও তাদের শিশুদের সহায়তা করার জন্য বাংলাদেশে এসেছিলেন। তাঁর মতে এই সংখ্যা আরও বেশি এবং সেটা ৪ লক্ষ।
নির্যাতনের উপর চলেছে আবার নির্যাতন। স্বাধীনতা পরবর্তীতে অনিবার্য ও অবাঞ্চিত পরিস্থিতির চাপে অমানবিক প্রক্রিয়ায় আনুমানিক ১ লক্ষ ৭০ হাজার মহিলার গর্ভপাত করা হয়েছে গ্রামীন ধাত্রী বা হাতুরে ডাক্তারদের সাহায্যে। সেবা কেন্দ্র গুলোতে ৫ হাজার জনের গর্ভপাত ঘটানো হয়েছিল সরকারিভাবে, তবে বেশির ভাগ নির্যাতিতারাই ক্লিনিকে আসতে পারেননি। (বাংলার বানী, ১৯৭২)।
সমসাময়িক পত্রিকা, বিচারপতি কে এম সোবহান, সিস্টার মার্গারেট মেরির ভাষ্য মতে ঢাকার বিভিন্ন ক্লিনিকে ১৩০০ গর্ভপাত করানো হয়েছে। আবার অনেকেরই গর্ভপাত সম্ভব হয়নি ফলে সেই সব শিশুরা জন্মগ্রহণ করে 'যুদ্ধ শিশু' হিসেবে। কানাডিয়ান ইউনিসেফের চেয়ারম্যান যুদ্ধ চলাকালিন এবং যুদ্ধোত্তর সময়ে দু'বার বাংলাদেশে আসার পরে তার রিপোর্টে ১০,০০০ ‘যুদ্ধ শিশু’র কথা উল্লেখ করেছেন। সুসান ব্রাউনমিলারের মতে সন্তান জন্ম দিয়েছিল এমন বীরাঙ্গনার সংখ্যা পঁচিশ হাজার। সেসব শিশু সন্তান আজ কোথায় কেমন আছে তা নিয়ে অন্য দিন লিখবো।
এত অমানবিক কষ্ট যেই বীরাঙ্গনারা সহ্য করেছেন তাদের সন্মান আমরা কতটা দিচ্ছি ? আমাদের রক্ত আর ইজ্জতের বিনিময়ে অর্জন করা স্বাধীনতা যেন আজ বাজারের পণ্য। মুক্তির সংগ্রামে অংশগ্রহণের স্বীকৃতি সরূপ দেওয়া হয়েছে ‘মুক্তিযোদ্ধা সনদ’। যা অবশ্য অবশ্যই তাদের প্রাপ্য। তবে তা নিয়ে যদি হয় ব্যাবসা তখন কেমন লাগবে ? তখনই শহীদের আত্মা ডুকরে কেঁদে ওঠে, জীবিত মুক্তিযোদ্ধারা মুখ লুকানোর জায়গা খুজে পায়না, আর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি না পাওয়া বীরাঙ্গনার সতীত্বে চলে অনবরত রক্তক্ষরণ।
মুক্তিযোদ্ধা সনদ নিয়ে স্বাধীনতার পর থেকেই চলেছে নানা ফন্দি ফিকির আর রাজনৈতিক ধান্দা। আমরা গত পাঁচ বছরের চিত্র যদি দেখি তাহলে দেখতে পাবো গত পাঁচ বছরে সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন পেশার মোট ১১ হাজার ১৫০ জন মুক্তিযোদ্ধা সনদ নিয়েছেন। আবেদন করেছিলেন ১৭ হাজারেরও বেশি। আর এই বিষয় নিয়ে সরকারের দায়িত্বশীল মন্ত্রীর বক্তব্য যেন চোরের সহজ স্বীকারোক্তি । মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক স্বীকার করেছেন, ‘ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে আমাদের কাছে প্রতিদিন সরকারি ও বেসরকারিভাবে বিভিন্ন অভিযোগ আসছে। এ ছাড়া পত্রপত্রিকায়ও বিষয়টি এসেছে। আমরা নিজেরাও খবর নিয়ে জানতে পেরেছি, অনেক ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদ নিয়েছেন’।
একাত্তরে এ দেশের বীর সন্তানেরা পাকিস্তানি বাহিনী এবং তাদের এদেশীয় দোসরদের বিরুদ্ধে যে যেভাবে পারে সেভাবেই লড়াই করেছেন, অনেকে শহীদ হয়েছেন, অনেকে পঙ্গু হয়ে পড়ে আছেন। এই সব মানুষের ইজ্জত আর রক্তের নাম করে এমন জালিয়াতি শুধু আইনের চোখেই অন্যায় নয়, রাষ্ট্রদ্রোহেরও শামিল। এই অপরাধীরা মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধ উভয়কে অপমান করেছেন, অপমান করে চলেছেন আমাদের। আর কতদিন চলবে এমন আমরা হয়তো কেউ জানিনা। তবে রাষ্ট্র পরিচালকদের বোধোদয় হোক এমনটায় প্রত্যাশা সাধারন মানুষের।
সম্প্রতি, বীরাঙ্গনাদের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি এবং তাদের প্রাপ্য সুযোগ সুবিধা কেন দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখায় রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতিপ্রাপ্ত অবহেলিত বীরাঙ্গনাদের তালিকা ২৬ মার্চের আগে কেন প্রকাশ করা হবে না, সেটি আদালত জানতে চেয়েছেন নির্বাহী বিভাগের কাছে। রুলটি আমাদের আশান্বিত করে তোলে। জানিনা এটিও কতটা স্বচ্ছ হবে।গত ৪৩ বছরে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাধারী কিংবা প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার দল একাধিকবার ক্ষমতায় এসেছে।সতীত্বে চলে অনবরত রক্তক্ষরণ
আহসান হাবীব (দিনার)
আহসান হাবীব (দিনার)
বেলাল, বিপেন আর বাসুদার আদরের ছোট বোন আদুরী। সবার ভালবাসার মধ্যমণি হয়ে আদরে আহ্লাদে বড় হওয়া সবুজ শ্যামলীমার দুরন্ত সরলা কুমারী তরুণী আদুরী। হায়েনার হিংস্র লোলুপতায় সেই আদুরীর প্রথম সবুজ সকাল ছিল গগণ বিদারী চিৎকারের, সে চিৎকারে মিশে একাকার সম্ভ্রমের তাজা রক্তের লাল সূর্য। সেদিন হাজারো আদুরীর সতীত্ব হরণ হয়নি, সেদিন অস্তিত্ব হরণ হয়েছিল পুরো বাঙ্গালী জাতির।
নিজের মা এবং দুই ছেলে সন্তানের সামনে পাকিস্তানি খানসেনা দ্বারা যিনি নির্মমভাবে ধর্ষণ হয়েছিলেন তিনি আমাদের রমা চৌধুরী। ১৯৬১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যে মাস্টার্স করা রমা চৌধুরী পেশায় ছিলেন স্কুল শিক্ষিকা যিনি আজ ফুটপাতের বইয়ের দোকানের ফেরিওয়ালা। তিনি আজ সদা সর্বদা খালি পায়েই থাকেন, কেউ তাকে জুতা পড়াতে পারেনি । রমা চৌধুরী'র মত অসংখ্য মায়েদের মহান আত্মত্যাগেই একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বরে আমাদের মহান স্বাধীনতা এসেছিল। স্বাধীনতার ৪২ বছর পরেও রমা চৌধুরীদের পথে পথে ভিক্ষাবৃত্তি করে বেড়াতে হয়, অবহেলিত হতে হয়, শুনতে হয় কটু কথা। আজ বাংলার মাটিতে খালি পায়েই পথ চলছেন রমা চৌধুরীরা। তবুও তারা রাষ্ট্রীয় ভাবে সুযোগ সুবিধা ভোগী স্বীকৃত মুক্তিযোদ্ধা নন।
বীরাঙ্গনাদের উপরে নির্যাতনের পদ্ধতি ছিল লোমহর্ষক। পাশবিক ধর্ষন শেষে বাংলার মা বোনদের চুল বেধে উলঙ্গ করে ক্যাম্পে ঝুলিয়ে রাখা হতো, সেখানে চলতো সীমাহীন বর্বরতা। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, বিরামহীন প্রহার আর অত্যাচারে মেয়েদের দেহ থেকে রক্ত ঝরছিল, কারো কারো মুখের দাঁত ছিল না, ঠোটের দু'দিকের মাংস সহ শরীরের বিভিন্ন অংশ কামড়ে, টেনে ছিড়ে ফেলা হয়েছিল, আঘাতে আঘাতে হাতের আঙ্গুল, তালু ছিল থেতলানো। প্রসাব পায়খানার জন্যও তাদের হাত ও চুলের বাধন খুলে দেয়া হতো না। জীবন হয়ে উঠেছিল দুর্বিষহ । এমন নির্যাতনের ঘটনা যেখানে পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল সেখানে আমরা স্বাধীনতার জন্য অসিম ভূমিকা পালনকারী মাতৃতুল্য বীরাঙ্গনাদের পুর্নাঙ্গ তালিকা আজ পর্যন্ত প্রকাশ করতে পারলাম না।
জেনে অবাক হবেন যে, ছয় বছর ব্যাপী দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে 'গোটা ইউরোপে' নাৎসি ও ফ্যাস্টিট বাহিনীও সম্মিলিতভাবে এত বেশি নারীকে ধর্ষন বা নির্যাতন করেনি' (ড:এম এ হাসান, ২০০২, পৃ-৫)।
যুদ্ধকালীন সময়ে সারা দেশের ৪৮০ টি থানা থেকে গড়ে প্রতিদিন ২ জন করে নির্যাতিত মহিলার সংখ্যা অনুসারে ২৭০ দিনে ধর্ষিতা নারীদের সংখ্যা দাড়ায় ২ লক্ষ। আন্তর্জাতিক প্লানড ফাদারহুড প্রতিষ্ঠানের ড. জিওফ্রে ডেভিস যুদ্ধের পরপরই এসব মা ও তাদের শিশুদের সহায়তা করার জন্য বাংলাদেশে এসেছিলেন। তাঁর মতে এই সংখ্যা আরও বেশি এবং সেটা ৪ লক্ষ।
নির্যাতনের উপর চলেছে আবার নির্যাতন। স্বাধীনতা পরবর্তীতে অনিবার্য ও অবাঞ্চিত পরিস্থিতির চাপে অমানবিক প্রক্রিয়ায় আনুমানিক ১ লক্ষ ৭০ হাজার মহিলার গর্ভপাত করা হয়েছে গ্রামীন ধাত্রী বা হাতুরে ডাক্তারদের সাহায্যে। সেবা কেন্দ্র গুলোতে ৫ হাজার জনের গর্ভপাত ঘটানো হয়েছিল সরকারিভাবে, তবে বেশির ভাগ নির্যাতিতারাই ক্লিনিকে আসতে পারেননি। (বাংলার বানী, ১৯৭২)।
সমসাময়িক পত্রিকা, বিচারপতি কে এম সোবহান, সিস্টার মার্গারেট মেরির ভাষ্য মতে ঢাকার বিভিন্ন ক্লিনিকে ১৩০০ গর্ভপাত করানো হয়েছে। আবার অনেকেরই গর্ভপাত সম্ভব হয়নি ফলে সেই সব শিশুরা জন্মগ্রহণ করে 'যুদ্ধ শিশু' হিসেবে। কানাডিয়ান ইউনিসেফের চেয়ারম্যান যুদ্ধ চলাকালিন এবং যুদ্ধোত্তর সময়ে দু'বার বাংলাদেশে আসার পরে তার রিপোর্টে ১০,০০০ ‘যুদ্ধ শিশু’র কথা উল্লেখ করেছেন। সুসান ব্রাউনমিলারের মতে সন্তান জন্ম দিয়েছিল এমন বীরাঙ্গনার সংখ্যা পঁচিশ হাজার। সেসব শিশু সন্তান আজ কোথায় কেমন আছে তা নিয়ে অন্য দিন লিখবো।
এত অমানবিক কষ্ট যেই বীরাঙ্গনারা সহ্য করেছেন তাদের সন্মান আমরা কতটা দিচ্ছি ? আমাদের রক্ত আর ইজ্জতের বিনিময়ে অর্জন করা স্বাধীনতা যেন আজ বাজারের পণ্য। মুক্তির সংগ্রামে অংশগ্রহণের স্বীকৃতি সরূপ দেওয়া হয়েছে ‘মুক্তিযোদ্ধা সনদ’। যা অবশ্য অবশ্যই তাদের প্রাপ্য। তবে তা নিয়ে যদি হয় ব্যাবসা তখন কেমন লাগবে ? তখনই শহীদের আত্মা ডুকরে কেঁদে ওঠে, জীবিত মুক্তিযোদ্ধারা মুখ লুকানোর জায়গা খুজে পায়না, আর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি না পাওয়া বীরাঙ্গনার সতীত্বে চলে অনবরত রক্তক্ষরণ।
মুক্তিযোদ্ধা সনদ নিয়ে স্বাধীনতার পর থেকেই চলেছে নানা ফন্দি ফিকির আর রাজনৈতিক ধান্দা। আমরা গত পাঁচ বছরের চিত্র যদি দেখি তাহলে দেখতে পাবো গত পাঁচ বছরে সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন পেশার মোট ১১ হাজার ১৫০ জন মুক্তিযোদ্ধা সনদ নিয়েছেন। আবেদন করেছিলেন ১৭ হাজারেরও বেশি। আর এই বিষয় নিয়ে সরকারের দায়িত্বশীল মন্ত্রীর বক্তব্য যেন চোরের সহজ স্বীকারোক্তি । মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক স্বীকার করেছেন, ‘ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে আমাদের কাছে প্রতিদিন সরকারি ও বেসরকারিভাবে বিভিন্ন অভিযোগ আসছে। এ ছাড়া পত্রপত্রিকায়ও বিষয়টি এসেছে। আমরা নিজেরাও খবর নিয়ে জানতে পেরেছি, অনেক ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদ নিয়েছেন’।
একাত্তরে এ দেশের বীর সন্তানেরা পাকিস্তানি বাহিনী এবং তাদের এদেশীয় দোসরদের বিরুদ্ধে যে যেভাবে পারে সেভাবেই লড়াই করেছেন, অনেকে শহীদ হয়েছেন, অনেকে পঙ্গু হয়ে পড়ে আছেন। এই সব মানুষের ইজ্জত আর রক্তের নাম করে এমন জালিয়াতি শুধু আইনের চোখেই অন্যায় নয়, রাষ্ট্রদ্রোহেরও শামিল। এই অপরাধীরা মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধ উভয়কে অপমান করেছেন, অপমান করে চলেছেন আমাদের। আর কতদিন চলবে এমন আমরা হয়তো কেউ জানিনা। তবে রাষ্ট্র পরিচালকদের বোধোদয় হোক এমনটায় প্রত্যাশা সাধারন মানুষের।
সম্প্রতি, বীরাঙ্গনাদের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি এবং তাদের প্রাপ্য সুযোগ সুবিধা কেন দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখায় রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতিপ্রাপ্ত অবহেলিত বীরাঙ্গনাদের তালিকা ২৬ মার্চের আগে কেন প্রকাশ করা হবে না, সেটি আদালত জানতে চেয়েছেন নির্বাহী বিভাগের কাছে। রুলটি আমাদের আশান্বিত করে তোলে। জানিনা এটিও কতটা স্বচ্ছ হবে।গত ৪৩ বছরে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাধারী কিংবা প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার দল একাধিকবার ক্ষমতায় এসেছে। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান ও মর্যাদা দিতে পারেনি কেউ। তবুও পরিবর্তনের আশায় বুক বেঁধে রইলো বাংলার আপামর জনসাধারণ।
©somewhere in net ltd.