নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
একদিন যখন আমি ছোট ছিলাম, তখন আমার দিগন্তব্যাপী বড় বড় স্বপ্ন ছিলো। এরপর কিভাবে কিভাবে যেন একদিন আমি বড় হতে শিখলাম, ব্যস্তানুপাতিক হারে আমার স্বপ্নরা শিখলো সংকীর্ণ হতে। আজ অণুবীক্ষণ হাতে মস্তিষ্কের আনাচে-কানাচে স্বপ্নদের খুঁজে বেড়াই। ঝাঁকঝাঁক নিউরন আবর্জনার ফাঁকে স্বপ্নরা কোথায় যেন বিলীন হয়ে গেছে!
ঢাকার যাত্রীরাই সবচেয়ে ভালো জানেন―যানজট আসলে কী, কোন কোন উপায়ে এটা পয়দা হয়। ব্যাপারটা অনেকটা গা-সওয়া হয়ে গেছে অনেকেরই।
মাঝে-মধ্যে আমরা শরীরচর্চা+টাকা সেভ করার জন্য শাহবাগ থেকে কারওয়ান বাজার পর্যন্ত হেঁটে যাই। বাসার উদ্দেশে কারওয়ান বাজার থেকে বাসে উঠি। গত রবিবারও যথারীতি যাচ্ছিলাম। শাহবাগের পরের ওভার ব্রিজটার মুখে পুলিশ মামা দাঁড়িয়ে, কাউকে উঠতে দিচ্ছেন না। অবাকই লাগলো, জায়গাটা হিজড়া এবং পতিতাদের দখলে থাকে এই সময়টায়, রাত ৮-৯টার পর থেকে। সেখানে আবার 'উপদ্রব' কেন...। বোঝার জন্য আশপাশে তাকালাম, অনেক পুলিশ দাঁড়িয়ে আছেন রাস্তার পাশে। সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। রাস্তা পুরো ফাঁকা। কোনো পথচারীকেই রাস্তার এই পাশ থেকে ওই পাশ, ওই পাশ থেকে এই পাশে আসতে দেয়া হচ্ছে না। পুলিশ মামাকে জিজ্ঞেস করে জানলাম, কোনো এক ভিআইপি আসবেন, তাই এই নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা।
যেদিকেই হাঁটি পুলিশ আর পুলিশ; কেউ কেউ কটমট করে তাকাতেও ভুলছেন না! একেই বলে বোধহয় নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা!
ডগ স্কোয়াডের খান্দানি কুত্তাকে দেখা গেলো, অনুসন্ধান চালাতে। নানান রকম খেইল দেখতে দেখতে, ভিআইপি মানে নেতাদের সম্মান বাংলাদেশে কতটা বেশি―ভাবতে ভাবতে সামনের দিকে অগ্রসর হচ্ছি। এসময় পেছন থেকে কোনো এক পথচারী বলে উঠলেন, 'এতো গ্যাঞ্জাম না কইরা বোরকা পইরা চলাচল কইরলেই তো অয়!'
মনে ধরলো কথাটা। সত্যিই, হাজার হাজার মানুষকে ভোগান্তিতে না ফেলে বুদ্ধি করে নিজেরাই নিজেদের সমস্যার সমাধান করে ফেলা যায়। (অবশ্য আদতে এটা কোনো 'সমস্যা'ই না)। যদি সেই সদিচ্ছাটুকু থাকে আর কি!
বাংলা সিনেমার নায়িকা মৌসুমী, সাহারাসহ আরো কেউ কেউ বোরকা পরে শপিং করেন। এতে তারা যেমন অকারণ ঝক্কি-ঝামেলা থেকে রক্ষা পান, সাধারণ মানুষের ওপরও কোনো প্রভাব পড়ে না।
হাঁটতে হাঁটতে কারওয়ান বাজারের কাছে চলে এলাম। এখনো রাস্তা ব্লক, মানে ভিআইপি পার হননি। সুতরাং বাস আসছে না। দাঁড়িয়ে থেকে কী লাভ, হাঁটা শুরু করলাম ফার্মগেটমুখো। পূর্ণিমা সিনেমা হলের পরে কয়েকজন পুলিশ সদস্য দাঁড়িয়ে। তারা নিজেরা নিজেদের মধ্যে বলাবলি করছেন, 'ওদের ক্ষমতা আছে, ওরা এভাবেই রাস্তা পার হবে। এসব নিয়ে চিন্তা করে আমাদের লাভ কী!'
আসলেই তাই। বাংলাদেশে ভিআইপিদের সম্মান কত উঁচুতে―এই তত্ত্ব জেনে আমিই বা কী করবো?
পরদিন সোমবার। বাসা থেকে আসার পথে বিজয় সরণির মোড়ে বাস জ্যামে আটকালো। একজন যাত্রী ড্রাইভারকে গালি দিয়ে বললেন, 'হারামির বাচ্চাটা ইচ্ছা করেই সিগন্যালে গাড়িটা আটকে দিয়েছে!'
তার কথার উত্তরে আরেকজন যাত্রী বললেন, 'ড্রাইভারকে গালি দিয়ে কী লাভ? যা করার বড় হারামিটা করে দিয়ে গেছে।'
জানা গেলো, এই রাস্তা দিয়ে কিছুক্ষণ আগে কোনো ভিআইপি গেছেন।
অন্য এক যাত্রী গজগজ করে বললেন, 'সব জ্যাম এই ফার্মগেট এলাকাতেই...!'
শুনে জনৈক রসিক যাত্রী বলে উঠলেন, 'হবে না! আপনার খালাদের অফিস তো এদিকটাতেই!'
এভাবেই প্রতিদিন যানজট নানাভাবে বিনোদন দিয়ে যায়! চাই বা না চাই! আনুমানিক ২০+২০=৪০ মিনিটের পথ পার হই কমবেশি ৩+৩=৬ ঘণ্টায়!
এটাও নিশ্চয়ই গিনেস বুকে ওঠার মতো ঘটনা! বাংলাদেশিদের এই বিরল রেকর্ড বিশ্ববাসীদের জানাতে কেউ একজন উদ্যোগ নিলেই হয়...!
|ব্লগের দুনিয়ায় আমি একদমই শিশু। আমার জন্য দোয়া রাখবেন।|
আমাকে পাবেন
©somewhere in net ltd.