![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ইসলামী ব্যাংক ব্যবস্থায় বিনিয়োগ পদ্ধতি
by এন.এম. শহীদ উল্লাহ
আশির দশকের শুরুতে বাংলাদেশে ইসলামী শরীয়াহ্ মোতাবেক ব্যাংক ব্যবস্থা কার্যক্রম শুরু করে। ব্যাংকিং লেনদেনের সকল স্তরে সুদ ও হারাম বিষয়কে বর্জন করে মুনাফা ভিত্তিক ব্যবস্থা প্রবর্তন ছিল মূল লক্ষ্য। প্রচলিত ব্যাংকিং আইনের মধ্যেই তাদের কার্যক্রম হলেও সময়ের উল্টো স্রোতে চলা কত কঠিন বিগত ২৫ বছরে তা নিশ্চয়ই বুঝে ওঠা সম্ভব হয়েছে। বর্তমানে ঐ মিছিলে বেশ ক'টি ব্যাংক যুক্ত হয়েছে এবং অনেকগুলো প্রচলিত ধারার ব্যাংক কিছু শাখা খুলেছে। পরিপূর্ণভাবে ইসলামী শরীয়াহ মোতাবেক পরিচালনার দাবীদার ব্যাংকসমূহ হচ্ছে-
১. ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড
২. আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক লিমিটেড (সাবেক আল বারাকা/ওরিয়েন্টাল ব্যাংক)
৩. আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক লিঃ
৪. সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক লিঃ
৫. শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক লিঃ
৬. এক্সিম ব্যাংক লিঃ
৭. ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক লিঃ
৮. ব্যাংক আলফালাহ লিঃ (বিদেশী ব্যাংক)
প্রশ্ন হচ্ছে এসব ব্যাংক কতটুকু শরীয়াহ পন্থায় বিনিয়োগ করে কিংবা জনমানুষের নিকট দেয়া প্রতিশ্র“তি কিভাবে তারা পূরণ করে। অর্থাৎ পরিপূর্ণ শরয়ী পদ্ধতিতে ব্যবসা করে কিনা? সাধারণ মানুষ যারা শুধুমাত্র সুদের গুনাহ থেকে বাঁচার জন্য এসব ব্যাংকে টাকা জমা রাখে তারাই বা কতটুকু লাভবান হচ্ছে? এ প্রশ্নটি সাধারণ জনগণ, আলেম সমাজ, বুদ্ধিজীবীসহ প্রচলিত সুদভিত্তিক ব্যাংকে কর্মরত প্রথিতযশা ব্যাংকারগণও করে থাকেন। তাত্ত্বিকভাবে এটি অতীতে যথেষ্ট পরিমাণে আলোচিত হলেও দেশীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে শত শত ব্যাংক সফলভাবে ব্যবসা পরিচালনা করার ফলে বিষয়টির বাস্তবায়ন পন্থা নিয়ে আলোচনাই যুক্তিযুক্ত বলে মনে হয়। তবে এটি বাস্তবসম্মত যে, বাংলাদেশে ইসলামী শরীয়াহ মোতাবেক ব্যবসা পরিচালনার বয়স ২৫ বছর অতিক্রান্ত হলেও অদ্যাবদি এর জন্য কোন পৃথক আইন বা বিধি চালু করা সম্ভব হয়নি। এটি দেশের আলেম সমাজ, বুদ্ধিজীবী, চিন্তাবিদ, পেশাজীবীসহ আইন প্রণেতা, অর্থনীতিবিদ সর্বোপরি এ পেশায় নিয়োজিতদের সম্মিলিত ব্যর্থতা। শুধুমাত্র যথাযথ আইনের অভাবে একটি মহৎ উদ্যোগ পুরোপুরি সফল হবে না, এটা ভাবতেও খারাপ লাগে। তবে আশার কথা এই যে, ২০০৯ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশ ব্যাংক, এঁরফবষরহবং ভড়ৎ ওংষধসরপ ইধহশরহম অনুমোদন করে।
আলোচনার জন্য আমরা ব্যবসা বাণিজ্য সংক্রান্ত কিছু নিয়ম পদ্ধতি আলোচনা করবো।
প্রথমতঃ বৈধ ব্যবসার শর্তাবলী হচ্ছেঃ
ক. হালাল জিনিসের ব্যবসা হতে হবে, হারাম দ্রব্যের ব্যবসা হতে পারবেনা।
খ. জনহিতকর দ্রব্যের ব্যবসা হতে হবে।
গ. মজুদদারী, মুনাফাখোরী, মানুষকে ঠকানো, ভেজাল মিশ্রণ করা যাবে না।
ঘ. পণ্যের গুণাগুণ ভোক্তা/ক্রেতাকে জানাতে হবে।
ঙ. পণ্যের দখল বিক্রেতার নিকট থাকতে হবে এবং ক্রেতাকে বুঝিয়ে দিতে হবে।
চ. ক্রয়-বিক্রয়ে ইজাব-কবুল অর্থাৎ প্রস্তাব ও সম্মতি থাকতে হবে।
ছ. অশ্লীলতা বেহায়াপনা বৃদ্ধি পায় এমন দ্রব্য, মাদকজাতীয় দ্রব্য ক্রয়বিক্রয় বৈধ নয়।
জ. সুদ-ঘুষের আদান প্রদান নিষিদ্ধ
ঝ. মূল্যবৃদ্ধি বা কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির উদ্দেশ্যে সিন্ডিকেট করা যাবে না।
ঞ. বিনিময় ও সমঝোতা ছাড়া মাল হস্তগত করা যাবে না।
ট. ওজন ও পরিমাণে কমবেশী করা যাবে না।
ঠ. ওভার ইনভয়েসিং/আন্ডার ইনভয়েসিং এর মাধ্যমে অর্থ পাচার অবৈধ।
ড. মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে ট্যাক্স ও ভ্যাট ফাঁকি দেয়া যাবে না।
ঢ. মিথ্যা ও প্রতারণা পূর্ণ বিজ্ঞাপন দিয়ে ফায়দা হাসিল নিষিদ্ধ।
ণ. অনিশ্চিত পণ্য (আল গারার) ক্রয়-বিক্রয় নিষিদ্ধ।
এসব শরয়ী বিধিবিধান মেনে চলে যে সমস্ত ব্যবসা করা হয় তা বৈধ ব্যবসা বলে স্বীকৃত। এবার আসা যাক, দেশে প্রচলিত ব্যবসা পদ্ধতি বা ব্যবসায়ীগণ সচরাচর করে থাকেন, প্রযুক্তিগত পরিবর্তনের ফলে যাতে কিছু ধারণাগত পরিবর্তন সাধিত হয়েছে।
১. সরাসরিঃ (ক) ক্রেতা ব্যবসায়ী চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় গিয়ে মাল ক্রয় করে আনেন। দোকানে সাজিয়ে রাখেন। পরিবহন জনিত ঝুঁকি, বিক্রি না হবার ঝুঁকি, পুড়ে যাওয়া নষ্ট হওয়া কিংবা লোকসানের ঝুঁকি বহন করেন। এর মধ্যেই ব্যবসা পরিচালনা করেন।
খ. ক্রেতা চট্টগ্রামে, বিক্রেতা সিরাজগঞ্জে, কেউ কাউকে দেখেন না বা জানেনও না। টেলিফোনে পণ্যের গুণাগুণ জেনে দর দাম ঠিক করে টাকা প্রেরণ করে দিচ্ছেন। পণ্য ক্রেতার নিকট পৌঁছে যাচ্ছে। এ বিষয়টি আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের েেত্রও সমভাবে প্রযোজ্য।
২. মধ্যস্থতাকারীর মাধ্যমেঃ চাঁদপুরে প্রসিদ্ধ চালের আড়ৎ, ক্রেতা চট্টগ্রামে। একজন মধ্যস্থতাকারী ক্রেতার নিকট এসে চালের নমুনা প্রদর্শন করে দর দাম ঠিক করেন, তার সাথে নিজের কমিশনও ঠিক করে নেন। পণ্য ক্রেতার নিকট পৌঁছে গেল। মধ্যস্থতাকারী টাকা নিয়ে বিক্রেতাকে পৌঁছে দিলো। ক্রেতা বিক্রেতার পারস্পরিক কোন যোগাযোগ নেই। মধ্যস্থতাকারী বা উকিলের সাহায্যে ইজাব কবুল সম্পন্ন হলো।
৩. প্রতিনিধির মাধ্যমেঃ একজন ব্যক্তির একটি ঔষধ দরকার যা ঢাকায় পাওয়া যাবে। কিন্তু তিনি ঢাকায় গেলে যে পরিমাণ খরচ হবে তা দিয়ে ঔষধের মূল্য বা এর কার্যকারিতা থেকে বেশি হবে। ফলত তিনি খুঁজছেন একজন লোক যিনি নিজস্ব প্রয়োজনে ঢাকা যাবেন। তারই এক প্রতিবেশী ঢাকা যাচ্ছেন যার কাছে টাকা দিলে কোন অতিরিক্ত যাতায়াত খরচ ব্যতীত ঐ ঔষধ কিনা সম্ভব। এক উক্ত প্রতিবেশী মূল ক্রেতার প্রতিনিধি হিসাবে কাজ করবেন। বিক্রয়ের ক্ষেত্রে ও প্রতিনিধি নিয়োগ করা যায়।
৪. ক্রেতা বাংলাদেশী বিক্রেতা চীনে, পণ্য তাইওয়ান বা থাইল্যান্ডে রয়েছে। চুক্তি মোতাবেক বাংলাদেশী ক্রেতা পণ্য কিনতে সম্মত হলে চীনা বিক্রেতা তাইওয়ান/থাইল্যান্ড কারখানায়/গুদামে অর্ডার পাঠালো, পণ্য বাংলাদেশে প্রেরণের জন্য। পণ্য বাংলাদেশে এলো। ক্রেতা চট্টগ্রামে থাকলেও ক্রেতা বন্দরে অর্ডার দিলো পণ্য সিলেট পৌঁছিয়ে দেয়ার জন্য। পণ্য সিলেট পৌঁছে গেল। এক্ষেত্রে সশরীরে কেউ কারো সাাৎ পাননি কিংবা পণ্য নিজ হাতে কেউ দখল নেয়নি। তথাপি পণ্য যার আদেশে একস্থান থেকে অন্যস্থানে স্থানান্তরিত হয়েছে মালিকানা তারই। তাই স্বহস্তে দখল না থাকলেও মালিকানা অর্জিত হয়েছে বিধায় বিক্রি বৈধ এবং হালাল। তাহলে কেনা বেচার যে পদ্ধতিগুলি বর্ণিত হলো তাতে বুঝা যাচ্ছে যে, ক্রয় বিক্রয় হালাল হারাম শর্তাবলী হচ্ছেঃ
১. বিক্রয়ের জন্য মালের মালিক হতে হবে।
২. ক্রয়ের ক্ষেত্রে বিনিময় মূল্য দিতে হবে।
৩. ইজাব কবুল বা প্রস্তাব সম্মতি থাকতে হবে।
৪. পণ্যের গুণাগুণ, পরিমাণ, মূল্য সম্পর্কে জ্ঞান থাকতে হবে।
৫. বিক্রির জন্য পণ্যের দখল অধিকার (ঞরঃষব) থাকতে হবে।
এছাড়া ব্যবসা শুধুমাত্র কেনা-বেচা ছাড়া অন্যভাবেও হতে পারে যেমনঃ
ক. একজন ব্যক্তি গাড়ি কিনলেন এবং ভাড়ায় চালালেন। ভাড়া পেলেন। পুনরায় ভাড়া দিলেন। পুনঃপুনঃ ব্যবহার করে ভাড়া আয় করলেন। যা বৈধ এবং হালাল।
খ. কিংবা ড্রাইভারের নিকট দৈনিক ভিত্তিতে ভাড়া নির্ধারণ করে দিলেন। ড্রাইভার মালিকের ভাড়ার অতিরিক্ত যা পাবেন তা তার। তবে এক্ষেত্রে শর্ত হচ্ছে গাড়ি নষ্ট হলে মেরামত খরচ মালিক বহন করবেন।
গ. একজন বাড়ি তৈরি করলেন, মাসিক নির্ধারিত ভাড়ায় খাটালেন। ভাড়া বাবদ যা আয় হলো তা বৈধ। এ থেকে এটি বুঝা গেল যা পুনঃ পুনঃ ব্যবহারযোগ্য (ঘড়হ-ঋঁহমরনষব) তা ভাড়ায় খাটানো বৈধ অর্থাৎ তা পুনঃ পুনঃ লাভ করা যায়। কিন্তু যে সমস্ত দ্রব্য একবার ব্যবহারে নিঃশেষ হয়ে যায় (ঋঁহমরনষব) বা নিঃশেষ না করে সেবা পাওয়া যায় না তা থেকে পর পর ব্যবসা করা যায় না। যেমন- কাউকে এক কেজি চাল দিয়ে বলা যায় না যে, একবার খেয়ে আবার রেখে দিবে এবং আবার খাবে। অর্থাৎ ঃ
১. ভোগ্যপণ্যের উপর বিক্রেতা একবারই লাভ করতে পারেন।
২. বিনিময় মূল্য দিতে হবে।
৩. পুনঃ ব্যবহার যোগ্য পণ্য ভাড়ায় খাটিয়ে পুনঃ পুনঃ ভাড়া নেয়া যাবে কিন্তু মালিকানা হস্তান্তরের পর ভাড়া নেয়া যাবে না।
৪. বিনিময় মূল্য অবশ্যই প্রচলিত/গ্রহণযোগ্য মুদ্রায় হতে হবে।
সুদ কখন হবেঃ
যখন ঋণের েেত্র চারটি বৈশিষ্ট্য পাওয়া যাবে তখনই সেখানে সুদের উদ্ভব হবে।
১. সুদের উদ্ভব হয় ঋণের েেত্র ঋণ নগদ অর্থ বা পণ্য সামগ্রী যাই হোক না কেন।
২. ঋণের শর্ত হিসাবে আসলের উপর অতিরিক্ত ধার্য করা।
৩. অতিরিক্ত অংশের কোন বিনিময় না দেয়া।
৪. কারবার বা লেনদেনের ফলাফলের সাথে অতিরিক্ত ধার্যের সম্পৃক্ততা না থাকা।
ঋণ বা কর্জ
সুদের উৎস ঋণ যার আরবী কর্জ। সূরা বাকারার ২৭৭ নং আয়াতে বলা হচ্ছে “সুদ বাবদ যা পাওনা রয়েছে তা ছেড়ে দাও।” ২৭৯ নং আয়াতে বলা হচ্ছে “যদি তোমরা মেনে নাও তাহলে আসল ফেরত নিতে পারে।” অর্থাৎ উক্ত আয়াতের প্রেেিত আসল ফেরত নিলেও অতিরিক্ত ধার্য যা রয়েছে তা ছেড়ে দিতে হবে। হাদীসে রাসূল (সঃ) বলেছেন, “ঋণ ছাড়া আর কোথাও সুদ নেই।”
ঋণের মাঝে নিুোক্ত বৈশিষ্ট্য পাওয়া যায়
১. ফানজিবল দ্রব্য হওয়া
২. ঋণগ্রহীতাকে পণ্য ব্যবহার করতে দেয়া
৩. অনুরূপ পণ্য সমপরিমাণ ফেরতের শর্ত থাকা
৪. ঋণদাতা কর্তৃক প্রদত্ত ঋণের কোন ঝুঁকি বহন না করা
৫. সময় বা অবকাশ থাকা।
ফানজিবল দ্রব্য
নিুোক্ত বৈশিষ্ট্য থাকলে তাকে ফানজিবল দ্রব্য বলে
১. একবার ব্যবহার করলে নিঃশেষ হয়ে যায়
২. এসব পণ্যের সেবা প্রবাহ বা ঋষড়ি ড়ভ ঝবৎারপব নেই।
৩. এসব পণ্যের সেবাকে পণ্য থেকে আলাদা করা যায় না।
ব্যবসা কাকে বলে?
লাভের আশায় লোকসানের ঝুঁকি নিয়ে উপযুক্ত মূল্যের মালের ক্রয় বিক্রয় করাকেই ব্যবসা বলে। সুতরাং পণ্য ক্রয় বিক্রয় ব্যতীত ব্যবসা হবে না এবং লোকসানের ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও লাভের আশায় মানুষ ব্যবসা করে।
সুদ কাকে বলে?
ঋণের আসলের উপর ঋণের শর্ত হিসেবে পূর্ব নির্ধারিত যে কোন অতিরিক্ত অংশ যার কোন বিনিময় দেয়া হয় না। এবং যা ঋণের ব্যবহার ও ফলাফলের সাথে সংযুক্ত নয় তাই সুদ। উদাহরণ স্বরূপ- ঋণদাতা ‘ক' গ্রহীতা ‘খ' কে ১০০০ টাকা এ শর্তে এক বছরের জন্য ঋণ দিলেন গ্রহীত ১ বছর পর উক্ত ১০০০ টাকার সাথে আরও অতিরিক্ত ১০০ টাকা যোগ করে ১১০০ টাকা ফেরত দিবে। এেেত্র উক্ত ১০০ টাকা ১০০০ টাকার এক বছরের সুদ। অনুরূপ ১০০০ টাকা না হয়ে ১০০০ কেজি চালের েেত্র ১০০ কেজি চাল অপোর মূল্য বা সুদ যা হারাম। কিংবা ৫ কেজি চালের সাথে ৬ কেজি খারাপ চাল হাতে হাতে বিনিময় করলো। এক্ষেত্রে ১ কেজি অতিরিক্ত চাল রিবা বা সুদ।
ভাড়া কাকে বলে?
ভাড়াকে আরবীতে বলা হয় “আজর” যার অর্থ বিনিময়। এটি আসলে ‘সেবা' এর মূল্য। সংজ্ঞায় বলা যায় “ভাড়া হচ্ছে ফানজিবল নয় এমন দ্রব্যের/সম্পদের সেবার মূল্য বিশেষ।” যেমন- মানুষ তার শ্রম বিক্রি করে যা পায় তাকে বলা হয় “মজুরী- বা আজুরাহ” যা আজর থেকে এসেছে। অর্থাৎ ব্যবহারের মূল্য নিয়ে অন্যকে কোন নন-ফানজিবল পণ্য ব্যবহার করতে দিলে তাকে বলা হয় “ইজারা: আর ব্যবহারের মূল্যকে বলে আজর বা ভাড়া। এখানে সমমূল্যের দুটি পণ্যের অর্থাৎ সেবা ও তার মূল্য বিনিময় হয়। ইজারায় পণ্য নয় বরং সেবা বিক্রি হয়। এখানে বিক্রিত সেবার বিনিময় মূল্য হচ্ছে ভাড়া বা (জবহঃ) এতে কোন পরে ঠকা জেতা নেই- তাই এটা হালাল।
বাই বা ক্রয় বিক্রয়
আরবী বাই অর্থ ক্রয়-বিক্রয়। পর্যায়ক্রমিক পদ্ধতি। ক্রয়ে বিক্রয় এবং বিক্রয়ে ক্রয়। আমি কিনলাম অন্যজন বিক্রি করলেন। উভয়টি বুঝাতেই বাই- ব্যবহৃত হয়। বিক্রয় না থাকলে ক্রয় নেই এবং ক্রয় না থাকলে বিক্রয়ও নেই। বাই- হচ্ছে-
ক. দু'টি জিনিসের মালিকানা বিনিময়। দ্রব্য একজনের মালিকানা থেকে অন্যের মালিকানায় এবং মূল্য বিপরীতমুখী মালিকানায় হস্তান্তর।
খ. বিকল্প গ্রহণের বিনিময়ে মালিকানা হস্তান্তর।
গ. তিপূরণ প্রদান করে কোন জিনিসের মালিকানা অর্জন।
শর্ত হচ্ছে
১. ক্রয়, বিক্রয়ে মাল হালাল বা কমপে মুবাহ হওয়া।
২. মালের অস্তিত্ব থাকা।
৩. মালের মালিকানা ও দখল থাকা।
৪. মাল সম্পর্কে যথাযথ জ্ঞান থাকা।
৫. স্বাধীন মতামতের ভিত্তিতে দাম নির্ধারণ।
৬. স্বেচ্ছায় বিনিময় করা।
উপরোক্ত আলোচনার প্রেেিত এ বিষয়টি পরিষ্কার যে, ইসলামী শরীয়ায় ক্রয় বিক্রয়ের মাধ্যমে অর্জিত লাভ বৈধ কিন্তু ঋণ প্রদানের মাধ্যমে যে অতিরিক্ত আদায় করা হয় তা সুদ এবং অবৈধ ও হারাম। এবারে আসা যাক ইসলামী ব্যাংকগুলো কি পদ্ধতিতে ব্যবসা করে তার পর্যালোচনায়।
ইসলামী ব্যাংকসমূহ বাংলাদেশে তিন ধরনের পদ্ধতিতে তাদের বিনিয়োগ কার্যক্রম পরিচালিত করে
১. ক্রয় বিক্রয় পদ্ধতি-
- বাই ই-মুরাবাহা
- বাই-ই-মুয়াজ্জাল
- বাই-ই-সালাম
- বাই ইসতিসনা
২. অংশীদারিত্ব পদ্ধতি
- মুদারাবা
- মুশারাকা
৩. ভাড়া পদ্ধতি-
- লিজিং বা ইজারা
- হায়ার পার্চেজ বা ভাড়া ক্রয়
- হায়ার পার্চেজ আন্ডার শিরকাতুল মিল্ক
বাই মুরাবাহা (সম্মত লাভে বিক্রয়)
বাই' মুরাবাহা শব্দ দু'টি আরবী বাইয়ুন এবং রিবহুন শব্দদ্বয় থেকে এসেছে। বাইয়ুন শব্দটির অর্থ ক্রয়-বিক্রয় এবং রিবহুন শব্দের অর্থ হল সম্মত মুনাফা। কাজেই বাই' মুরাবাহার অর্থ সম্মত মুনাফায় বিক্রয়।
সংজ্ঞাঃ নগদে অথবা ভবিষ্যতে নির্ধারিত কোনো সময়ে একসাথে অথবা নির্ধারিত কিস্তিতে মূল্য পরিশোধের শর্তে বিক্রেতা ও ক্রেতা উভয়ের সম্মতিক্রমে ক্রয়মূল্যের উপর নির্ধারিত মুনাফা ধার্য করে নির্দিষ্ট পরিমাণ শরীয়াহ্ অনুমোদিত পণ্যসামগ্রী বিক্রয় করাকেই বাই' মুরাবাহা বলে।
বৈশিষ্ট্য
০ ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ের সম্মত নির্ধারিত লাভে বিক্রয়।
০ ক্রয়মূল্য ও মুনাফা ক্রেতাকে আলাদাভাবে জানাতে হয়।
০ মাল ক্রয় ও পরে বিক্রি করা শর্ত।
০ মালের অস্তিত্ব থাকতে হবে এবং ক্রয়যোগ্য হতে হবে।
০ রূপান্তরের সুযোগ ও ঝুঁকি থাকার কারণেই এ পদ্ধতি শরীয়াহসম্মত।
০ লাভ শতকরা হিসাবে নির্ধারিত করা হলেও শরীয়াতে নিষেধাজ্ঞা নেই।
০ চুক্তির পর নির্ধারিত মূল্য বৃদ্ধি করা যায় না।
বাই মুয়াজ্জাল (বাকিতে বিক্রয়)
বাই'মুয়াজ্জাল শব্দ দু'টি আরবী বাই' এবং ‘আজল' শব্দদ্বয় থেকে এসেছে। বাই শব্দটির অর্থ ক্রয়-বিক্রয় এবং আজল শব্দটির অর্থ নির্ধারিত সময়। কাজেই বাই' মুয়াজ্জাল শব্দদ্বয়ের অর্থ ভবিষ্যতে কোনো নির্ধারিত তারিখে অথবা ভবিষ্যতে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পরিশোধের শর্তে বাকি মূল্যে বিক্রি।
সংজ্ঞাঃ ভবিষ্যতে নির্ধারিত কোনো সময়ে একসাথে অথবা নির্ধারিত কিস্তিতে সম্মতমূল্য পরিশোধের শর্তে নির্দিষ্ট পরিমাণ শরীয়াহ্ অনুমোদিত পণ্যসামগ্রী বিক্রয় করাকে বাই' মুয়াজ্জাল বলে।
বৈশিষ্ট্য
০ ভবিষ্যতে নির্ধারিত কোন সময়ে নির্ধারিত দাম পরিশোধের শর্তে বাকিতে বিক্রি।
০ এড়ড়ফং ফবষরাবৎবফ, চৎরপব ফবভবৎৎবফ.
০ মাল ক্রয় করে মালিকানা লাভ করার পর বিক্রয় করতে হবে।
০ মাল ক্রয় করে অর্থকে মালে রূপান্তর এবং মাল বিক্রি করে মালকে অর্থে রূপান্তর করতে হবে।
০ বাই' মুয়াজ্জালের চুক্তি সম্পাদনের সময় মালের অস্তিত্ব থাকতে হবে এবং ক্রয়যোগ্য হতে হবে।
০ বাই' মুয়াজ্জালে ব্যাংক ক্রয়মূল্য ও লাভ বিনিয়োগ গ্রাহকের নিকট পেশ করা জরুরী নয়।
০ মাল ক্রয়ের পর ক্রেতার/গ্রাহকের কাছে বিক্রি ও হস্তান্তর করার পূর্ব পর্যন্ত ব্যাংককে মালের ঝুঁকি বহন করতে হবে।
০ রূপান্তরের সুযোগ ও ঝুঁকি থাকার কারণেই এ পদ্ধতি বৈধ।
বাই'সালাম (অগ্রিম ক্রয়)
বাই' সালাম শব্দ দুটি আরবী বাই এবং ‘সিলমুন' শব্দদ্বয় থেকে এসেছে। বাই' শব্দটির অর্থ ক্রয়-বিক্রয় এবং ‘সিলমুন' শব্দটির অর্থ ‘অগ্রিম'। কাজেই বাই'সালাম শব্দটির অর্থ অগ্রিম ক্রয়-বিক্রয়।
সংজ্ঞাঃ ভবিষ্যতে নির্ধারিত কোনো সময়ে সরবরাহের শর্তে এবং তাৎণিক সম্মতমূল্য পরিশোধ সাপেে নির্দিষ্ট পরিমাণ শরীয়াহ অনুমোদিত পণ্য সামগ্রী অগ্রিম বিক্রয় করাকে বাই'সালাম বলে।
বৈশিষ্ট্য
০ অগ্রিম ক্রয়, চৎরপব ঢ়ধরফ রহ ধফাধহপব, মড়ড়ফং ফবভবৎৎবফ.
০ অগ্রিম গৃহীত অর্থের দ্বারা মাল তৈরি করে সরবরাহ করা হয় বিধায় দাম আগে নিয়ে মাল পরে দেয়া হয়।
০ মালামালের সম্পূর্ণ দাম চুক্তির সময়ই দিতে হয়।
০ দ্রব্য সামগ্রীর অস্তিত্ব ছাড়াই ক্রয়-বিক্রয় বৈধ।
০ দ্রব্য-সামগ্রীর অস্তিত্ব থাকলে বাই'সালাম হবে না। সেেেত্র বাই'মুয়াজ্জাল বা বাই' মুরাবাহা প্রযোজ্য।
০ পণ্যের দাম, বিবরণ, পরিমাণ, গুণাগুণ, আকার, এককপ্রতি দাম, মোট দাম ইত্যাদি সুস্পষ্টভাবে চুক্তিতে থাকতে হবে।
ইসতিসনা (আদেশের ভিত্তিতে ক্রয়)
ইসতিসনা' শব্দটি আরবী সানাআ শব্দ থেকে এসেছে। সানাআ শব্দের অর্থ শিল্প। সুতরাং ইসতিসনা শব্দের অর্থ কোনো উৎপাদনকারীর কাছে থেকে সুনির্দিষ্ট পণ্যসামগ্রী ক্রেতার ফরমায়েশ অনুযায়ী তৈরি করে বিক্রি করা।
সংজ্ঞাঃ অগ্রিম অথবা ভবিষ্যতে নির্ধারিত কোনো সময়ে নির্ধারিত কিস্তিতে সম্মতমূল্য পরিশোধের শর্তে ক্রেতার ফরমায়েশ অনুযায়ী শরীয়াহ, অনুমোদিত পণ্য সামগ্রী তৈরি করে বিক্রয় করাকে ইসতিসনা' বলে।
বৈশিষ্ট্য
০ মালের দাম অগ্রিম/এককালীন/কিস্তিতে পরিশোধযোগ্য।
০ ইড়ঃয ফবষরাবৎু ড়ভ মড়ড়ফং ্ ঢ়ধুসবহঃ ড়ভ ঢ়ৎরপব সধু নব ফবভবৎৎবফ.
০ ঙৎফবৎ দিয়ে মাল তৈরি করানো ও পরে দাম দেয়া বৈধ।
০ বাই'সালামের ন্যায় ইসতিসনা' পদ্ধতিতে মালের অস্তিত্ব ছাড়াই বেচা-কেনা সংঘটিত হওয়া শরীয়াহ সম্মত।
০ গধহঁভধপঃঁৎরহম ্ ঈড়হংঃৎঁপঃরড়হ শিল্পে প্রয়োগযোগ্য।
মুশারাকা (অংশীদারিত্ব ভিত্তিক বিনিয়োগ)
আরবী শব্দ ‘শিরকাত' অথবা ‘শরীকাত' (শিরক) থেকে মুশারাকা শব্দের উৎপত্তি। তাই শাব্দিক দিক দিয়ে মুশারাকা অর্থ অংশীদারিত্ব। সমসাময়িক অর্থনীতিবিদগণ ও ব্যাংকারদের মধ্যে মুশারাকা শব্দটি ব্যাপকভাবে পরিচিতি লাভ করেছে।
সংজ্ঞাঃ যে কারবারে দুই বা ততোধিক ব্যক্তি মুলধন যোগান দেয়, সকলে অথবা কেউ কেউ কারবার ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনায় অংশ নিয়ে চুক্তি অনুযায়ী লাভ নেয় এবং লোকসান হলে মুলধন অনুপাতে বহন করে তাকে মুশারাকা বলে।
বৈশিষ্ট্য
০ দুই বা ততোধিক ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে পুঁজি যোগান দেয়।
০ সকলেরই কারবার পরিচালনার অধিকার থাকে।
০ লাভ হলে সম্মত হারে ভাগ করে নেয়।
০ লোকসান হলে পুঁজির আনুপাতিক হারে সকলেই বহন করে।
০ পুঁজি রূপান্তরের ও ঝুঁকি সকলেই বহন করে।
মুদারাবা (উদ্যোক্তার মাধ্যমে বিনিয়োগ)
আরবী ‘দারবুন' শব্দ থেকে ‘মুদারাবা' শব্দের উৎপত্তি। মুদারাবা শব্দের অর্থসমূহের মধ্যে একটি হচ্ছে ভ্রমণ। তাই ইসলামী চিন্তাবিদগণ আল্লাহর অনুগ্রহ অনে¦ষণে ব্যবসার উদ্দেশ্যে ভ্রমণকে মুদারাবার মৌলিক বিষয় হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।
সংজ্ঞাঃ যে কারবার এক প মূলধন যোগান দেয় এবং দ্বিতীয় প শ্রম, মেধা ও সময় ব্যয় করে এবং চুক্তি অনুযায়ী লাভ নেয় অথবা দ্বিতীয় পরে অবহেলাজনিত কারণ ছাড়া সমুদয় আর্থিক মূলধন যোগানদাতা বহন করে তাকে মুদারাবা বলে।
বৈশিষ্ট্য
০ মুলধন যোগানদাতাকে ‘সাহিব-আলমাল' এবং উদ্যোক্তাকে ‘মুদারিব' বলা হয়।
০ এক পরে পুঁজি আর এক পরে শ্রম।
০ লাভ হলে চুক্তি সম্মত হারে ভাগ করে নেয়।
০ লোকসান পুঁজির মালিকের।
০ পুঁজির মালিক, অংশীদার হিসেবে পুঁজি দিয়ে বিনিয়োগ করে।
০ সাহিব-আল-মাল পুঁজির ঝুঁকি নেয়।
লিজিং বা ইজারা
ইজারা শব্দটি আরবী। এটি আজর বা উজরাত থেকে এসেছে। এর অর্থ প্রতিদান, আয়, মজুরি, ভাড়া ইত্যাদি। ইজারা এমন এক ধরনের চুক্তি, যেখানে ভাড়া গ্রহীতা নির্দিষ্ট ভাড়া প্রদানপূর্বক ভাড়া গ্রহীতার নিকট থেকে ভাড়াদাতার মালিকানাধীন সম্পদ থেকে সেবা/সুবিধা ভোগ করে।
সংজ্ঞাঃ যে বিনিয়োগ পদ্ধতিতে স্থায়ী প্রকৃতির সম্পদ ক্রয় অথবা তৈরি করে নির্ধারিত ভাড়ার বিনিময়ে অন্যকে ব্যবহার করতে দেয়া হয় তাকে ইজারা বলে।
বৈশিষ্ট্য
০ স্থায়ী সম্পদ কিনে ভাড়া দেয়া এবং মেয়াদ শেষে মাল ফেরত নেয়া।
০ রূপান্তর আছে।
০ ঝুঁকি আছে।
হায়ার পার্চেজ (ক্রয়ের চুক্তিতে ভাড়া/ইজারা বিল বাই')
যে বিনিয়োগ পদ্ধতিতে এক প সমুদয় যোগান দিয়ে কোনো স্থায়ী প্রকৃতির সম্পত্তির মালিকানা অর্জনপূর্বক তা নির্ধারিত ভাড়ায় ও আসল অর্থ নির্ধারিত কিস্তিতে পরিশোধের শর্তে অন্য পরে নিকট ভাড়া দেয় বা বিক্রি করে তাকে হায়ার পার্চেজ ও ইজারা বিল বাই' বলে।
বৈশিষ্ট্য
০ পুঁজি দ্বারা মাল ক্রয় বা তৈরি করে মালের মালিক হওয়া।
০ হস্তান্তর যোগ্য মালের ঝুঁকি বহন করা।
০ দাম সম্পূর্ণ পরিশোধ না হওয়া পর্যন্ত মালিক থাকা।
হায়ার পার্চেজ আন্ডার শিরকাতুল মিল্ক (মালিকানায় অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে ভাড়ায় ক্রয়)
হায়ার পার্চেজ আন্ডার শিরকাতুল মিল্ক একটি বিশেষ ধরনের চুক্তি। প্রকৃতপে এর মধ্যে শিরকাত, ইজারা এবং বিক্রয় এ তিনটি পদ্ধতির সমন¦য় ঘটেছে। শিরকাত শব্দের অর্থ অংশীদারিত্ব। শিরকাতুল মিল্ক এর অর্থ মালিকানায় অংশীদারিত্ব। যখন দুই বা ততোধিক ব্যক্তি চুক্তিবদ্ধ হয়ে যৌথ মালিকানা অর্জনের নিমিত্তে মূলধন বিনিয়োগ করে কোনো সম্পদ অর্জন করে তখন এ ধরনের কারবারে সম্পত্তি থেকে অর্জিত আয় পগণের মধ্যে চুক্তি অনুযায়ী বণ্টিত হয় এবং লোকসান হলে তা তারা মুলধন অনুপাতে বহন করে।
সংজ্ঞাঃ যে পদ্ধতিতে দুটি প সম অথবা অসম অনুপাতে মূলধন যোগান দিয়ে কোনো সম্পত্তির মালিকানা অর্জনপূর্বক পরস্পর সম্মতিক্রমে ভাড়া ও বিক্রয়মূল্য নির্ধারণ করে নির্ধারিত কিস্তিতে পরিশোধের শর্তে এক পরে অংশ অন্য পরে নিকট ভাড়া দেয় ও বিক্রয় করে তাকে হায়ার পার্চেজ আন্ডার শিরকাতুল মিল্ক বলে।
বৈশিষ্ট্য
০ ঝযরৎশধঃ সবধহং ঢ়ধৎঃহবৎংযরঢ়.
ঝযরৎশধঃঁষ সবষশ সবধহং ংযধৎব রহ ড়হিবৎংযরঢ়.
০ এটি একটি বিশেষ ধরনের চুক্তি। এতে শিরকাত, ইজারা এবং বিক্রয়- এই তিনটি পদ্ধতির সমন¦য় ঘটেছে।
০ পদ্বয় স্ব স্ব অনুপাতে সম্পদের ঝুঁকি বহন করে।
০ সম্পদের দখল হস্তান্তরের দিন থেকে ভাড়া গণনা করা হয়।
০ এবংঃধঃরড়হ চবৎরড়ফ এর ভাড়া নেয়া বৈধ নয়।
০ ভাড়ার উপর ভাড়া ধার্য হয় না।
০ কিস্তির টাকা পরিশোধের সাথে সাথে কিস্তির পরিমাণ মালিকানা হস্তান্তরিত হয়।
০ এৎধফঁধষব ঃৎধহংভবৎ ড়ভ ড়হিবৎংযরঢ় ড়হ ঢ়ধুসবহঃ ড়ভ বাবৎু রহংঃধষষসবহঃ.
বিভিন্ন বিনিয়োগ ম্যাকানিজমে শরীয়াহর ভিত্তি
ইসলামী ব্যাংক এক ভিন্ন প্রকৃতির ব্যাংক। আদর্শ, উদ্দেশ্য এবং বৈশিষ্ট্যের দিক দিয়ে ইসলামী ব্যাংক সাধারণ বাণিজ্যিক ব্যাংকের চেয়ে ভিন্ন। এ ব্যাংক ইসলামী অর্থ ব্যবস্থার অবিচ্ছেদ্য অংশ। ইসলামী শরীয়তের নীতিমালার উপর ইসলামী ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত, কুরআন ও হাদীসের আইনের মাধ্যমে এর যাবতীয় কার্যক্রম ও লেনদেন নিয়ন্ত্রিত এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (স)-এর অনুমোদিত কল্যাণধর্মী অর্থব্যবস্থা কায়েমে বদ্ধপরিকর। ইসলামী ব্যাংক তার বিনিয়োগ কার্যক্রম লাভ-লোকসান বাই' ইজারা ম্যাকানিজমের ভিত্তিতে করে থাকে।
মুদারাবা
মুদারাবা ফার্সি ভাষা থেকে উদগত ও আরবী ভাষায় বহুল ব্যবহৃত শব্দ। ‘মুদারাবা' মুকারাদা' বা কিরাদ নামেও পরিচিত। মুদরাবা এমন একটি অংশীদারী কারবার, যেখানে অর্থের মালিক অপর একজনকে অর্থ প্রদান করে আর যিনি অর্থ গ্রহণ করেন তিনি মেধা ও যোগ্যতা দিয়ে কারবার পরিচালনা করেন এবং নির্ধারিত আনুপাতিক হারে তারা লভ্যাংশ ভাগাভাগি করে নেন। এটি ঝষববঢ়রহম চধৎঃহবৎংযরঢ় (নিস্ক্রিয়/সুপ্ত অংশীদারিত্ব) বা ঞৎঁংঃ ঝযধৎরহম। অন্য কথায় এক পরে মূলধন অপর পরে দতা, প্রচেষ্টা, শ্রম, মেধা প্রয়োজনীয় ব্যবসায়িক প্রজ্ঞা দিয়ে মুদারাবা কারবার পরিচালিত হয়। কারবারে যিনি অর্থ বা মূলধন দিয়ে অংশগ্রহণ করেন তাকে সাহিব আল মাল (ঝধযরন-ধষ-সধষ) বলা হয়। যিনি মূলধন বিনিয়োগ করেন তাকে রাব্বুল মাল (জধন-ধষ-সধষ) বলা হয়। মূলধন ব্যবহারকারী মুদারিব (গঁফধৎরন) বা আমিল (অসরষ) বা মুকারিদ (গঁয়ধৎরফ) বা পরিচালক বা উদ্যোক্তা বা মুদারাবা কারবারের ব্যবস্থাপক হিসেবে পরিচিত হয়ে থাকেন।
মুদারাবা বিনিয়োগ পদ্ধতির বৈধতা কুরআন, সুন্নাহ ও ইজমা দ্বারা সম্পর্কিত
“কুরআন মাজীদে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘যারা জমিনে পরিভ্রমণ করে আল্লাহর দয়া/রিযক লাভের প্রত্যাশায়” এ আয়াতে ব্যবহৃত ‘দারাবা' (পরিভ্রমণ করা) শব্দ থেকেই মুদারাবা শব্দটি এসেছে। এ আয়াতের ব্যাখ্যায় ঐসব পরিভ্রমণকারীদের কথা বলা হয়েছে, যারা বৈধ পন্থায় ব্যবসা বা হালাল আয়ের উদ্দেশ্যে ঘর থেকে বের হয় এবং অর্জিত রিযক দ্বারা নিজের ও পরিবার-পরিজনের ভরণ-পোষণের ব্যবস্থা করে থাকে। হাদীসের একটি বর্ণনা মতে, হযরত আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিব (রা) মুদারাবা পদ্ধতিতে মূলধন বিনিয়োগ করতেন এবং মুদারিবের উপর নিুবর্ণিত শর্তাদি আরোপ করতেন, যেমন- মুদারিব সাগর পথে পরিভ্রমণ করবেন না, উপত্যকা পাড়ি দেবেন না এবং গবাদি পশু কেনা-বেচার ব্যবসা করবেন না। এসব শর্ত লঙ্ঘন করে কারবার করলে এবং তাতে তি হলে মুদারিব সেজন্য দায়ী হবেন। এ শর্তগুলো মহানবী (স) কে শোনানো হলে তিনি অনুমোদন দিয়েছেন। এ হাদীস থেকে বুঝা যায়, সাহিব আল-মাল শর্ত আরোপ করার অধিকার রাখেন।
আরেকটি হাদীস থেকে জানা যায়, হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব (রা) এক ইয়াতিমের টাকা জনৈক ব্যক্তিকে মুদারাবা পদ্ধতিতে ব্যবসায়ের উদ্দেশ্যে দিয়েছেন এবং তিনি ঐ মুদারাবা ফান্ড দিয়ে ইরাকে ব্যবসা পরিচালনা করেছেন। মহানবী (স) নিজেই হযরত খাদিজা (রা)-এর মূলধন দিয়ে মুদারাবা কারবার পরিচালনা করেছেন। এটি প্রাক-ইসলামী যুগের ঘটনা। ইসলামী সমাজে এ পদ্ধতিকেই গ্রহণ করা হয়। ইবনুল মুনযির উল্লেখ করেছেন, ফকীহদের মধ্যে মুদারাবা পদ্ধতির কারবারের ব্যাপারে ঐকমত্য রয়েছে।
মুদারাবা চুক্তি বৈধ হওয়ার জন্য যৌক্তিকতা
১. মুদারাবা চুক্তি বৈধ হয় যখন সাহিব আল-মাল নিজে বিনিয়োগ কারবার পরিচালনার সময় পান না এবং মুদারিবকে মূলধন সরবরাহ করেন আর মুদারিব শ্রম, মেধা ও সময় ব্যয় করে লাভ করার উদ্দেশ্যে কারবার পরিচালনা করেন। এ পরিস্থিতিতে মুদারাবা চুক্তির ভিত্তিতে উভয় পরে স্বার্থ সংরতি হয়।
২. যাদের মূলধন আছে কিন্তু ব্যবসায়িক যোগ্যতা নেই এবং যাদের ব্যবসায়িক যোগ্যতা দতা অভিজ্ঞতা আছে কিন্তু মূলধন নেই- এ পদ্ধতিতে এ দু পরে সমন¦য় হয়, যা অলস টাকা সচল এবং অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড গতিশীল করে এবং কল্যাণ নিশ্চিত করে।
৩. মুদারাবা ইসলামী আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহের জন্য অত্যাবশ্যকীয় ব্যবসায়িক পদ্ধতি। এ ম্যাকানিজম ইসলামী আর্থিক প্রতিষ্ঠান সমূহে বিভিন্ন কাতে ব্যাপক ব্যবহারের সুযোগ আছে।
মুশারাকা
মুশারাকা বা শিরকত ইসলামী ব্যাংকের একটি স্থায়ী ও সর্বজনস্বীকৃত শরীআত অনুমোদিত বিনিয়োগ পদ্ধতি। মুশারাকা হচ্ছে এমন অংশীদারী কারবার যেখানে দু বা ততোধিক ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান লাভ করার উদ্দেশ্যে পুঁজি যোগন দেয়, কারবার ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনা করে এবং কারবারের লাভ-তিতে অংশ নেয়। কারবারে লাভ হলে অংশীদারগণ পূর্বনির্ধারিত অনুপাতে তা ভাগ করে নেয়, আর লোকসান হলে অংশীদারগণ নিজ নিজ পুঁজির আনুপাতিক হারে তা বহন করে। প্রাক ইসলামী যুগে আরব উপদ্বীপে মুশারাকা বা শিরকতের ব্যাপক প্রচলন ছিল। শিরকত বর্তমান সময়ে অংশীদার কারবার (চধৎঃহবৎংযরঢ় ইঁংরহবংং) এর মতো। মহানবী (স) মদীনা রাষ্ট্রে এ বিনিয়োগ পদ্ধতিটি ইসলামী নীতিমালার আলোকে গ্রহণ ও এর ব্যাপক প্রচলন করেন।
মুশারাকা/শিরকত বিনিয়োগপদ্ধতির বৈধতা একাধারে কুরআন, সুন্নাহ ও ইজমা' দ্বারা সমর্থিত ও প্রতিষ্ঠিত। কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে, ‘তারা অংশীদার হবে এক তৃতীয়াংশের' (সূরা নিসা: ১২) পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে, ‘শরীকদের অনেকেই একে অপরের প্রতি জুলুম করে থাকে; (জুলুম) করে না কেবল সেসব লোকেরা, যারা আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ও সৎকর্ম সম্পাদনকারী। অবশ্য এমন লোকের সংখ্যা খুবই কম। (সূরা সোয়াদ: ২৪)
হযরত আবু হুরাইরা (রা.) মহানবী (স)-এর উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছেন, “আল্লাহ তাআলা বলেন, দু'জন অংশীদারের সাথে আমি তৃতীয় জন হয়ে থাকি; যতণ না তাদের একজন তার অপর সাথী (অংশীদার)-এর সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে। আর যখনই কেউ বিশ্বাসঘাতকতা করে তখন সেখান থেকে বের হয়ে আসি। দু'জন অংশীদারের উপর আল্লাহর হাত (সাহায্য) অব্যাহত থাকে, যতণ না তারা পরস্পর বিশ্বাসঘাতকতা করে।” (আবু দাউদ)
হযরত যায়েদ (রা) বলেন, “আমি ও বারা (রা) দু'জন শরীক।” (বুখারী) ইবনুল মুনযির (রা) বর্ণনা করেছেন, শিরকাত পদ্ধতির পে সকল যুগের আইনবেত্তাগণ ঐকমত্য পোষণ করেছেন।
বাই' ম্যাকানিজমসমূহের শরীয়াহ্র ভিত্তি
বাই' ম্যাকানিজসমূহের বৈধতা কুরআন, সুন্নাহ ও ইজমা' দ্বারা প্রমাণিত। কুরআন মাজীদে বলা হয়েছে, “আল্লাহ ক্রয়-বিক্রয়কে হালাল করেছেন।” (সূরা বাকারা: ২৭৫)” “হে মু'মিনগণ! তোমরা একে অন্যের সম্পত্তি অন্যায়ভাবে আÍসাৎ করো না; তবে তোমাদের পরস্পরের সম্মতিতে ব্যবসা করা বৈধ। (সূরা নিসা: ২৯)।
বাই' মুরাবাহা
বাই' যেহেতু বৈধ, তাই বাই' মুরাবাহাও বৈধ। কারণ, আল্লাহ তাআলা ক্রয়-বিক্রয়কে বৈধ করেছেন। কুরআনের ভাষ্য অনুযায়ী আল্লাহর করুণা প্রত্যাশা করা দোষের নয়।” মুফাসসিরীন কেরাম ‘করুণা' বলতে লাভ বুঝিয়েছেন। মুরাবাহা ‘তাওলিয়াহ' নামক একই ধরনের বেচা-কেনার অনুরূপ, যেখানে বিক্রেতা তার নিজের জন্য কোনো মুনাফা ধার্য না করে কেবল ক্রয়মূল্যে পণ্য বিক্রয় করে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, একবার মহানবী (স) হযরত আবু বকর (রা)-এর নিকট থেকে মাদি উট ক্রয় করেছেন, যাদ্বারা তিনি মদীনা গমন করেছেন। হযরত আবু বকর (রা) চেয়েছিলেন উটটিকে এমনি এমনি দিয়ে দিতে, কিন্তু মহানবী (স) এতে অসম্মত হলেন এবং বললেন “বরং আমি একটি নির্ধারিত মূল্যে নেব।” অধিকাংশ ফকীহ বাই' মুরাবাহার বৈধতা হিসেবে একেই নীতি হিসেবে গ্রহণ করেছেন। ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংক-এর আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক কার্যক্রমে ব্যাপকভাবে বাই' মুরাবাহা পদ্ধতি ব্যবহার করা হচ্ছে।
বাই-ই-সালাম
বাই' সালাম পদ্ধতির বৈধতা কুরআন, সুন্নাহ ও ইজমা' দ্বারা প্রমাণিত। কুরআন মাজীদে ইরশাদ করা হয়েছে, “হে ঈমানদারগণ! তোমরা যখন নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য লেনদেন কর তখন তা লিখে নাও।” (সূরা বাকারা: ২৮১)। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা) বলেন, উপরিউক্ত আয়াতে বাই, সালামকে অনুমোদন দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ দ্রব্যের মূল্য অগ্রিম পরিশোধের মাধ্যমে চুক্তিতে ক্রয় হচ্ছে বাই' সালাম। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, মহানবী (সঃ) বলেন, “যে বা যারা খেজুরের জন্য আগাম মূল্য পরিশোধ করবে তা তারা করবে নির্দিষ্ট আকার বা ওজনের ভিত্তিতে।” আরেক হাদীসে এসেছে, “নির্দিষ্ট আকার, ওজন ও সরবরাহের তারিখের ভিত্তিতে।”
ইমাম বুখারী ও মুসলিম (রহ.) বর্ণনা করেছেন, “মহানবী (সঃ) যখন হিজরত করে মদীনায় এসেছেন তখন সেখানকার অধিবাসীগণ ফলের জন্য এক বছর ও দু বছর মেয়াদের জন্য বাই' সালাম করছিল। মহানবী (সঃ) এরশাদ করলেন, “যে কেউ বাই' সালাম করবে সে যেন সুনির্দিষ্ট বাটখারা পরিমাপ করে নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য তা করে। সকল ফকীহ বাই' সালাম চুক্তির বৈধতার ব্যাপারে সর্বসম্মতভাবে একমত। ইবনুল মুনযির (রাঃ) বলেন, সকলের মতামতে সালাম চুক্তি এমন একটি চুক্তি, যেখানে একজন আরেক জনের কাছে কোনো বস্তু নির্দিষ্ট আকার, ওজন ও সরবরাহের তারিখের ভিত্তিতে বিক্রয় করে যা অনুমোদিত।
বাই' ইসতিসনা
মহানবী (সঃ)-এর একটি অনুরোধের ঘটনায় বাই' ইসতিসনা পদ্ধতি বৈধতা লাভ করেছে। একবার মহানবী (সঃ) একটি মিম্বার ও সীলমোহর (মোহরাঙ্কিত আংটি) তাঁর জন্য বানিয়ে দিতে কারিগরকে অনুরোধ করেছিলেন। অর্ডার দিয়ে মাল তৈরি করিয়ে বা বানিয়ে নিয়ে পরে দাম দেয়া বৈধ। ইসতিসনা একটি বাধ্যতামূলক চুক্তি। এটা শুধু প্রতিশ্র“তি নয় ওআইসি ফিকাহ্ একাডেমি বাই' ইসতিসনাকে বৈধ বিনিয়োগ পদ্ধতি হিসেবে গ্রহণ করেছেন।
ইজারা
কুরআন, সুন্নাহ ও ইজমা' দ্বারা ইজারার বৈধতা প্রমাণিত। কুরআন মাজীদে বলা হয়েছে, “তাদের একজন বললঃ হে পিতা! আপনি তাকে ভাড়ার শর্তে নিযুক্ত করুন। নিশ্চয়ই শক্তিশালী ও বিশ্বস্ত ব্যক্তিকেই ইজারায় খাটানো উত্তম।” (সূরা কাসাস: ২৬)
হাদীসে আছে, মহানবী (সঃ) বলেছেন, “যে বা যারা একজন শ্রমিক খাটাল, অবশ্যই তাকে তার মজুরী সম্পর্কে জানাতে হবে।” তিনি আরো বলেছেন, “শ্
©somewhere in net ltd.