![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
গন্তব্যে পৌছে রিকশাওয়ালাকে জিজ্ঞাসা করলাম তাকে কত ভাড়া দিতে হবে। সে জানালো আমি যা দিব তাই সে নেবে। তাকে ৩০/০০টাকা দিয়ে জানতে চাইলাম , এই ভাড়ায় তার কোন আপত্তি আছে কি না। রিকশাওয়ালা এবার কেঁদে ফেললো। পশ্চিম দিকে মুখ করে টাকাসহ হাত তুলে আল্লাহর কাছে শোকর গুজার করলো। আমাকে বললো : হুজুর অনেক দান খয়রাত করলেন, আমি এত আশা করি নাই। আল্লাহ আপনার মঙ্গল করবেন। এরপর সে জানতে চাইলো এই দুঃশাসনের অবসান কবে হবে। সে জানালো কাজ নাই, খাবার নাই, জীবনে চলাই এখন তার জন্য দায় হয়ে উঠেছে। সে আরও জানালো তৃতীয় শক্তি না আশা পর্যন্ত মানুষকে এভাবেই দুঃখ কষ্টের মধ্যে দিন কাটাতে হবে। তার প্রশ্নের উত্তর আমি দিতে পারি নাই। সে আমাকে অনেক দোয়া করতে করতে রিকশা নিয়ে রওনা হলো।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক মখদুম খান এখন একটি বে-সরকারী ক্লিনিকে রোগী দেখেন। শিক্ষা জীবনে তাঁর ছিল কৃতিত্বময় ফলাফল। অত্যন্ত সফলতার সাথে তিনি চিকিৎসা অংগনে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। চিকিৎসকদের কোন দলের সাথে তিনি যুক্ত নন। পদায়ন ও বিদেশ ভ্রমণের বিষয়ে তিনি তেমন সুযোগ পাননি। চিকিৎসা ক্ষেত্রে নির্ভুলভাবে রোগ-নির্ণয়ে তার দক্ষতা তাকে সুনামের অধিকারী করে দেয়। এই সুনামের ভিত্তিতে জনগণের ভালবাসা নিয়েই তিনি কাজ করে যাচ্ছিলেন। বিপত্তি ঘটলো যখন তাঁর নিয়ন্ত্রণকারী কর্মকর্তার পদে নিয়োগ পেলেন তাঁর একজন ছাত্র। মেধা, শিক্ষাজীবনের ফলাফল, কর্মে দক্ষতা ও সুনাম এর কোন ক্ষেত্রেই তার এই ছাত্র কোন ভাবেই তার চেয়ে শ্রেষ্ঠ তো নয়ই সমকক্ষ বিবেচিত হতে পারে না। তারপরও দলীয় বিবেচনায় এই নিয়োগ দেয়া হয়। এতে স্বাভাবিকভাবেই ডাঃ মখদুম খান আত্মগ্লানীতে ভুগতে থাকেন। সহকর্মীসহ সবাই এই পরিবেশ সম্মানজনক বলে মেনে নিতে পারে নাই। সব কিছু বিবেচনা করে তিনি দেখলেন প্রতিকার দেবার মতো কেউ নাই। অতএব নিরবে চাকুরী থেকে তিনি বিদায় নিলেন। তিনিও আশা করেন এই অনাচার বন্ধ করতে তৃতীয় শক্তির প্রয়োজন।
বাজারের কাছে ফুটপাতে তরিতরকারী বিক্রয় করে রোমান প্রামানিক। সে বলে গরিবের জন্য সবাই আন্দোলন করে। রাস্তায় মিছিল আসলে সে প্রায়ই পুলিশের তারা খায়। ফুটপাতে তার পণ্য পড়ে থাকে। অনেক সময় তা হয়ে যায় লাপাত্তা। রোমান বলে আন্দোলনকারীরা বিজয়ী হয়ে ক্ষমতায় যায়। তারা অনেক অর্থ বিত্তের মালিক হয়, তাদের সন্তানেরা বিদেশ যায় পড়াশুনা করতে। দামী গাড়িতে চড়ে, দামী পোষাক পরিধান করে কিন্তু রোমানের সন্তানেরা পড়াশুনা করার কোন সুযোগই পায় না। এক অফিসে ঝাড়–দারের চাকুরীর জন্য গিয়েছিল কিন্তু টাকা না দিলে চাকুরী হবে না শুনে সে হতাশ হয়ে ফিরে এসেছে। গরিবের কথা বলে রাজা আসে রাজা যায় কিন্তু গরিবের ভাগ্যের বদল হয় না । সেও শুনেছে তৃতীয় শক্তি আসলে পরিস্থিতির আমূল পরিবর্তন হবে।
নগর মহানগর গ্রাম গঞ্জে হাটে বাজারে সর্বত্রই একই আশা একই প্রতীক্ষা কখন আসবে তৃতীয় শক্তি। যার আগমনে অবসান হবে দুঃশাসনের, শোষণ বঞ্চনা থেকে মুক্তি পাবে মানুষ। দূর হবে ক্ষুধা দারিদ্র বেকারত্ব। এই আশার বাণী শুনিয়ে দেশে অনেক রাজনৈতিক দল গোষ্ঠি জোট আত্মপ্রকাশ করছে। তারা দাবী করছে তারাই প্রকৃত পক্ষে তৃতীয় শক্তি। আসলে কি তাই ?
খোদার হাবিব বলে গেছেন আখেরী জামানায় মানুষ আল্লাহর কালাম ও রসুলের আদর্শ ভুলে যাবে। জনজীবন নিপতিত হবে কুশাসন দুর্ভিক্ষ ব্যভিচার ও অত্যাচার নির্যাতনে। শাসকেরা হবে নেশাগ্রস্থ, ইন্দ্রিয়লিপ্সু, মিথ্যাবাদী ও জালেম। জ্ঞানী ব্যক্তিগণ হবে লাঞ্ছিত, মূর্খরা হবে সম্মানিতের পদে আসীন। রুটি আর লবন পেলেই মানুষ সন্তুষ্ট হবে। মা মেয়ের সাথে প্রতারণা করবে। খুন খারাবি হবে অহরহ। অবলিলায় মানুষ লিপ্ত হবে জেনা ও ব্যভিচারে। ইয়াজুজ মাজুজ আসবে ,তারা মানুষের উপর করবে অত্যাচার নির্যাতন। খারে-দাজ্জাল আসবে ,সে অসম্ভবকে সম্ভব করে দেখাবে এবং তাকেই স্রষ্টা বলে স্বীকার করতে মানুষকে বাধ্য করবে। ঈমান আখলাক সম্পন্ন মানুষের সংখ্যা কমে যাবে। এই অবস্থায় আসবেন ঈমাম মেহেদী। তার আবির্ভাবে ঈমান ও আখলাক সম্পন্ন মানুষেরা বলিয়ান হবে। বিজয় শুরু হবে। ইয়াজুজ মাজুজ দমন হবে। খারে দজ্জালের পতন হবে। এই সময় বায়তুল মুকাদ্দাসে ঈমাম মেহেদী পৌছাবেন বিজয়ীর বেশে। চতুর্থ আসমান থেকে পৃথিবীতে নেমে আসবেন হযরত ঈসা (আঃ)। মুসলমানদের এই বিশ্বাসটাকে কাজে লাগায় বৃটিশ সরকার। তারা ‘লরেন্স’কে চোস্ত আরবি ভাষা শেখায়। কোর-আন, হাদিস, ফেকা শাস্ত্রেও তাকে পারদর্শি করে তোলে। এরপর তাকে পাঠিয়ে দেয় আরবদেশে। লরেন্স এর ওয়াজ শুনে মুগ্ধ হয় আরববাসী। তারা ভাবে ইনিই বুঝি ঈমাম মেহেদী। এই বিশ্বাস নিয়ে মন্ত্রমুগ্ধের মতো আরববাসী ‘লরেন্স অব আরব’ এর পিছনে সমবেত হয়। মোক্ষম সময়ে মোক্ষম চাল চালে এই বৃটিশ গোয়েন্দা। আরব জুড়ে জ্বলে উঠে বিদ্রোহের আগুন। ধ্বংস হয় খেলাফত।খন্ড বিখন্ড হয় আরবদেশ। যখন আরববাসী বুঝতে পারলো যে লরেন্স আসলে মুসলমানও নয়, ঈমাম মেহেদীও নয়, সে আসলে একজন বৃটিশ গোয়েন্দা । তখন তো আর আরববাসীর কিছুই করার নাই। সর্বনাশ যা হবার তা এর মধ্যেই হয়ে গেছে। একই ভাবে পাঞ্জাবের গোলাম আহমেদ কাদিয়ানীকেও তার কতিপয় অনুসারী ঈমাম মেহেদী বলে ভাবতে থাকে। তাকে রুখে দাড়ান হায়দারাবাদের (ভারত)এর নিজামের মসজিদের খতিব ও পেশ ঈমাম মওলানা আবুল আলা মওদুদী। ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাবের ঘোর বিরোধী এই মওলানা পাকিস্তান সৃষ্টির পর ভারতের হায়দারাবাদ ছেড়ে পাকিস্তানে আসেন। দাঙ্গা হয় কাদিয়ানীদের সাথে। বহু লোক হতাহত হয়। এই হত্যার অভিযোগে বিচার হয় মওলানা মওদুদীর। বিজ্ঞ আদালত বিচার শেষে রায় ঘোষণা করেন। মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত করা হয় মওলানা মওদুদীকে। পরে অবশ্য রাষ্ট্রপতি এই মৃত্যুদন্ড রদ করেন। জামাতে ইসলামীর নেতা কর্মীগণ তাদের দলের এই প্রতিষ্ঠাতাকে ঈমাম মেহেদী বলেই গণ্য করে। তাদের কন্ঠে ধ্বনিত হয় ‘শেষ জমানার মেহেদী, আবুল আলা মওদুদী।’ ইন্দোনেশিয়ায় ‘জোহরা ফোনা’ নামে এক মহিলা দাবী করেন যে তার গর্ভে ঈমাম মেহেদী জন্ম নিতে যাচ্ছে। জোহরার গর্ভস্থ ভ্রুণ ইমামতি করতে শুরু করে। ইন্দোনেশিয়ার তৎকালীন রাষ্ট্রপতি আহমেদ সুকর্ন এই ভ্রণের পিছনে জামাতে নামাজ আদায় করেছিলেন। এর ছবি তৎকালীন (ষাটের দশকের মাঝামাঝি) পত্রপত্রিকায় ছাপা হয়েছিল। তবে এটা সত্য যে প্রকৃত ঈমাম মেহেদী এখন পর্যন্ত দুনিয়ায় জন্ম গ্রহণ করেননি বলেই আমরা জানি।
বাংলাদেশে যারা তৃতীয় শক্তি বলে দাবী করছেন তারা কি আসলেই তৃতীয় শক্তি? তাদের ক্ষমতায় বসালেই কি দেশের দুর্যোগময় দুর্দশাগ্রস্থ এই হাল বদলে যাবে ? মনে রাখতে হবে ব্যক্তির পরিবর্তনের মাধ্যমে আপনা আপনি অলৌকিকভাবে কোন সমাজ ব্যবস্থার পরিবর্তন সাধিত হয় না। শাসন ব্যবস্থা এবং উৎপাদন ও বন্টন পদ্ধতির সাথেই মানুষের জীবন যাপন এবং পারস্পরিক সম্পর্ক নির্ভরশীল। যে শাসন ব্যবস্থা এবং উৎপাদন ও বন্টন পদ্ধতির কারণে নাগরিকগণ দুর্দশা কবলিত হচ্ছে ঐ ব্যবস্থা ও পদ্ধতি বহাল রেখে শাসক ও কর্তৃপক্ষ বদলিয়ে কোন সুফল কোন দিনও পাওয়া যাবে না। আমরা শোষণ বঞ্চনা একচেটিয়া পুজিঁর অভিশাপ থেকে মুক্তির লক্ষেই ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় কাঠামো থেকে বের হয়ে নতুন দেশ গঠন করেছিলাম। সেদিন এদেশের জনগণ দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতো যে গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্র কায়েম হলেই কৃষক তার ফসলের ন্যায্য দাম পাবে, শ্রমিক তার পাবে ন্যায্য মজুরী, অবসান হবে আঞ্চলিক বৈষম্যের, ঘুচে যাবে গ্রাম শহরের বৈষম্য। ২২জন পুঁিজপতির হাতে সারা পাকিস্তানের সমস্ত সম্পদ হয়েছিল পুঞ্জিভ’ত। সেই সুবাদে দেশের শাসন ব্যবস্থাও তারা নিয়ন্ত্রণ করতো। এই ২২ পরিবারের সকলেই ছিল পশ্চিম পাকিস্তান(র্তমানের পাকিস্তান )এর বাসিন্দা। স্বাধীনতা উত্তরকালে এদের সম্পদ প্রথমে জাতীয়করণ করা হলেও পরে তা আবার কোন কোন ক্ষেত্রে পুরনো মালিকদের ফিরিয়ে দেওয়া হয়। কোন কোন ক্ষেত্রে এসব কলকারখানা বিক্রয় করে দেওয়া হয়। নির্ধারিত মূল্য এবং প্রকৃত মূল্যের মধ্যে বিস্তর ফারাক রয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। যারা কিনেছে তাদের কেউ কেউ এসব কারখানা চালু করে নাই। যন্ত্রপাতি আসবাবপত্র বিক্রয় করে দিয়েছে, জায়গাজমি আবাসনের জন্য প্লট তৈরী করে বিক্রয় করেছে। তারপর এসব ক্রেতাদের কেউ কেউ দাপ্তরিকভাবে হয়ে গেছে লাপাত্তা। শ্রমজীবী কর্মজীবী পেশাজীবী মানুষ এতে লাভবান হয়নি বরঞ্চ তারা কাজ হারিয়ে বেকার হয়েছে। নব্য পুজিঁপতি, সুবিধাবাদী নেতা ও আমলা শ্রেণীর বিত্ত বৈভব বেড়েছে। তারা হয়েছে অগাধ সম্পদের অধিকারী। তাদের পরিবার পরিজনেরা বসবাস করে বিদেশে, দেশে আসলে কথা বলে ‘বাংরেজী’ ভাষায়। চালচলন রুচি পোষাক আষাকেও তারা বিদেশী। কারো কারো বৈবাহিক সম্পর্কও বিদেশীদের সাথে, এই সব বিদেশীদের কেউ কেউ বিধর্মী। মূলত অর্থনৈতিক সম্পর্ক তথা উৎপাদন ও বন্টননীতি রয়ে গেছে পাকিস্তান আমলের অনুরূপ। তবে এখানে একটা পার্থক্য আছে পাকিস্তান আমলে কল কারখানাগুলি চালু ছিল। বাংলাদেশ আমলে কল কারখানা বন্ধ হয়েছে, কারখানার সম্পত্তি ও যন্ত্রপাতি বিক্রয় করে দেওয়া হয়েছে। প্রসঙ্গক্রমে চিনি শিল্পের কথা বলা যায়। বাংলাদেশে এই শিল্প লাভজনক। ১৯৮৪ সালে ‘উত্তর বঙ্গ চিনি কল’ উৎপাদনের লক্ষমাত্রা ছাড়িয়ে গেল। মহাব্যবস্থাপক রেজাউর রহমান খান (আর আর খান) অত্যন্ত দক্ষতার সাথে কারখানা পরিচালনা করছিলেন। সামরিক শাসনের যুগ। হঠাৎ মে মাসের একদিন একটি হেলিকপ্টার অবতরন করল। আমাদের দেশে হেলিকপ্টার দেখলে কৌতুহলী জনগণ এগিয়ে যায। সেভাবেই শ্রমিক কর্মকর্তা কর্মচারী জনগণ এগিয়ে গেল হেলিকপ্টারের কাছে। হেলিকপটার থেকে বেড়িয়ে এলেন একজন অতি উচ্চ পদস্থ সেনা কর্মকর্তা। কারখানা চালু আছে এবং উৎপাদনের লক্ষ্য মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে শুনে তিনি উষ্মা প্রকাশ করলেন। সমবেত শ্রমিক কর্মকর্তা কর্মচারী ও জনতা যারপরনাই হতভম্ভ ও হতাশ হলো। কারখানার এই গতিতে এই অঞ্চলের আখচারী ও সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা হয়েছিল সচ্ছল ও গতিশীল। কারখানা বন্ধ হলে আখচাষীরা তাদের উৎপাদিত ফসল নিয়ে বিপাকে পড়বে, তাই উক্ত সেনা কর্মকর্তার কথায় তারা হলো হতাশ ও হতভম্ব। সেনাশাসকের ‘নতুন বাংলাদেশ গড়বে’ মর্মে গান শুনে তাদের যে ধারনা হয়েছিল, তা মুহূর্তের মধ্যে পাল্টে গেলো। উৎপাদিত চিনিতে গুদাম ভরে গেলো, কিন্তু কর্তৃপক্ষ বিক্রয়ের অনুমতি না দেওয়ায় রাষ্ট্রায়ত্ত এই কারখানায় উৎপাদিত চিনি অবিক্রিত রয়ে গেলো। মেয়াদ শেষে তা গলে নষ্ট হয়ে গেলো। দেশে চিনি সংকট বলে ব্যাপক প্রচার হলো। বিদেশ থেকে আনা হলো চিনি। এই চিনি সংকটের কারণে একজন বামরাজনীতিবিদ সমালোচিত হলেন এবং তার নামের আগে চিনি শব্দটি যুক্ত করে তাকে সম্বোধন করা হতে থাকলো। আর ঐ সেনা কর্মকর্তাকে জনগণ অভিহিত করতে থাকলো ‘আরব্য রজনী’ উপন্যাসে বর্ণিত বাগদাদ শহরের এক দলনেতার পদবীতে। চাকুরী থেকে অবসর গ্রহণ এবং সেনা শাসনের অবসান হলে ঐ সেনা কর্মকর্তা রাজনীতিতে যোগ দিয়ে জনগণের সেবায় (!) আত্মনিয়োগ(!) করেছেন বলে জানা যায়। প্রায় সব শিল্প কারখানাকে এরূপ পরিণতিই বরণ করতে হয়। ফলে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে দেশ হয়েছে আমদানী নির্ভর। কৃষক ও শ্রমিকেরা বরণ করে বেকারত্ব। যে কারণে পাকিস্তানের বিরোধীতা করা হয়েছিল, সে কারণগুলো অপসারিত হওয়া তো দূরের কথা তা আরো নির্মমভাবে জেঁকে বসে শ্রমজীবী কর্মজীবী পেশাজীবী জনগণের ঘাড়ে। শাসন পদ্ধতিতেও পাকিস্তান আমলের সামরিক শাসক আইয়ুব খান প্রবর্তিত এক কক্ষ বিশিষ্ট আইন সভা এবং ‘সুপ্রীম জুডিশিয়াল কাউন্সিল’ বহাল রয়েছে। ১৯৬২ এর থেকে ১৯৭২ পর্যন্ত দশ বৎসরের ব্যবধান থাকলেও শাসন পদ্ধতিতে ফারাক খুবই কম। ‘মালিকানার নীতি’, ‘কৃষক ও শ্রমিকের মুক্তি’, ‘মৌলিক প্রয়োজনের ব্যবস্থা’, ‘গ্রামীণ উন্নয়ন ও কৃষি বিপ্লব’, ‘অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক শিক্ষা’, ‘জনস্বাস্থ্য ও নৈতিকতা’ সম্পর্কিত বিধান সংবিধানের দ্বিতীয় ভাগে ‘রাষ্ট্রপরিচালনার মূলনীতি’ শীর্ষক পরিচ্ছেদে বর্ণিত থাকলেও তা অনুসরণ ও বাস্তবায়নের জন্য কোন অনুশীলন নাই।
ব্যক্তিগত পুজি বাড়চ্ছে অব্যাহত গতিতে, তা ব্যয়িত হচ্ছে বিলাসী জীবন যাপনের ক্ষেত্রে। গ্রামীণ জনগণের কর্মসংস্থান , শিক্ষা চিকিৎসার কোন উপযুক্ত সুযোগ নাই। সম্পন্ন কৃষক অভাবের তাড়নায় জমি জিরাত বিক্রয় করে ক্রমান্বয়ে পরিণত হচ্ছে ভ’মিহীন কৃষকে। মাদক ব্যবহার এবং গণিকাবৃত্তি প্রায়ই প্রকাশ্য রূপ নিয়েছে। এদের উপদ্রবে জনজীবন অতিষ্ট। পরিত্রাণের কোন পথ নাই। এদের দমনের দায়িত্বপ্রাপ্ত জনপ্রশাসন ও শৃংখলা বাহিনীর কার্যক্রমে জনগণ সন্তুষ্ট নয়। জনগণ হতাশ হয়ে নিরবে চোখ মুখ বন্ধ করে গা বাঁচিয়ে চলতেই বাধ্য হয়, আর ভাবে পার্থিবভাবে কোন প্রতিকার পাবার সুযোগ নাই। তারা আশা করে পরম করুণাময় আল্লাহই হয়ত এই পরিস্থিতি থেকে তাদের মুক্তি দেবেন অলৌকিকভাবে। তারা আশা করে সেই দিনের , যেদিন খোদায়ী গজব নামবে এই সব অপশাসনের হোতাদের। পরিবর্তনের পর পরিবর্তন আসে কিন্তু শ্রমজীবী পেশাজীবী জনগণের ভাগ্য থাকে পূর্ববৎ। গ্রামে গঞ্জে কোন মান সম্মত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নাই, হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসক ও যন্ত্র কুশলী নাই। নাগরিক সুবিধার কথা তো গ্রামে গঞ্জে বসে কল্পনাই করা যায় না । যা আছে সবই ঢাকায়। জাতীয় বাজেটের ৬৫% ব্যয় হয় এই মহানগরীতে। এখানে অর্থশালীদের বিলাসীতায় পূর্ণ নাগরিক সুযোগ সুবিধাসহ বসবাস করার সকল উপকরণ রয়েছে। শ্রমজীবী কর্মজীবী পেশাজীবী জনগণকে এই মহানগরে বাস করতে হয় দীনহীন মানবেতর পরিবেশে।এই কারণেই জনগণ এমন এক শাসক গোষ্ঠি চাচ্ছে যারা এদের মতো হবে না। এই কাঙ্খিত শাসকদেরই বলা হচ্ছে ‘তৃতীয় শক্তি’। কিন্তু তৃতীয় শক্তি বললেই কি তারা কাঙ্খিত শাসন ব্যবস্থা প্রণয়ন করতে পারবে ? কাঁঠাল গাছের পাতা ছেঁটে দিয়ে সেখানে নিয়মিত পানি-সিঞ্চন করলে কি তা আম গাছ হয়ে আম দেবে ? দেবে না। কথায় বলে ‘যে যায় লংকায় , সে হয় রাবন’। এটা বহুদিনের ভ’য়োদর্শন। লংকার রাজা রাক্ষসরাজ রাবনই হয়। তার কাছে খলিফা উমর (রাঃ), খলিফা হারুনর রশিদের মতো শাসন ব্যবস্থা পাবার আশা দুরাশামাত্র। রাবণ সে রাবনই সে অশোকও নয় , আকবরও নয়। তাই প্রচলিত এক কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা , এককেন্দ্রীক শাসন ও বিচার ব্যবস্থা বহাল রেখে যারা শাসন ব্যব্যস্থা নিজেদের হাতে নিতে চান তারা কখনোই জনগণের কাঙ্খিত তৃতীয় শক্তি হতে পারে না। সেকারণেই বড়দলগুলির বাইরে যে সমস্ত দল বা গোষ্ঠি নিজেদের তৃতীয় ধারার রাজনীতির ধারক ও বাহক বলে দাবী করছেন কিন্তু শাসন ব্যবস্থার পরিবর্তনের কোন সুস্পষ্ট ও সুনির্দিষ্ট কর্মসূচী দিচ্ছেন না তারা জনগণের আশা আকাংখা পূরণে অক্ষম। কিছু রাজনীতিবিদ আছেন যারা নিজেদেরকে জ্ঞানী এবং জনগণের অভিভাবক মনে করেন। দাবী করেন আইন প্রণয়নে দক্ষ এবং আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন। সময়ে সময়ে তাদের আবির্ভাব ঘটে। তাদের এই চমকদার আবির্ভাব জনগণের অধিকার আদায়ের লক্ষ্য অর্জনে কোন প্রভাব ফেলে না। কানসাটের আন্দোলনকালে জনগণের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করতে উড়ে গিয়েছিলেন অনেকে। জনগণের বিদ্যুৎ সংক্রান্ত সমস্যার সমাধান কি হয়েছে ? পল্লী বিদ্যুতের দফতর এখন কানসাট থেকে চাঁপাই নবাবগঞ্জে নিয়ে আসা হয়েছে। ক্ষতিপূরণ হিসেবে যে টাকা কর্তৃপক্ষের ব্যয় হয়েছিল তা ‘সারচার্জ’ আকারে জনগণের কাছ থেকে আদায় করা হচ্ছে বলে স্থানীয়ভাবে জনশ্রুতির সৃষ্টি হয়েছে। লাভ হয়েছে একটি দলের। এ থেকে জনগণ ধারণা করছে যে বিশেষ একটি দল সংকটে পড়লে এই সব পন্ডিতম্মন্য অভিভাবকেরা গিয়ে জনগণের আন্দোলনে শরিক হন এবং আন্দোলনকে প্রশমিত করে তারপর কৌশলে ঐ বিশেষ দলের অনুক’লে নিয়ে আসেন। এসব তিক্ত অভিজ্ঞতার মধ্যেই শ্রমজীবী কর্মজীবী পেশাজীবী জনগণ এগিয়ে যাচ্ছে মুক্তির লক্ষ্যে। তাদের আকাংখা দ্বিতীয় ধারার রাজনীতি ও তৃতীয় শক্তির মাধ্যমেই তাদের রাজনৈতিক অর্থনৈতিক সাংস্কৃতিক মুক্তি অর্জিত হবে। স্বাধীনতার রূপকার সিরাজুল আলম খান ১৪ দফা কর্মসূচীর মাধ্যমে দেশের শাসন ও বিচার ব্যবস্থার মৌলিক পরিবর্তনের যে আহ্বান জানিয়েছেন তার মধ্যেই আমরা দেখতে পাই দ্বিতীয় ধারার রাজনীতি ও তৃতীয় শক্তির আবির্ভাবের উপাদান। এই কর্মসূচীর সমার্থক কর্মসূচী নিয়ে আত্মপ্রকাশ করে ‘জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট’ (এন ডি এফ)। স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলনকারী আ স ম আবদুর রবের নেতৃত্বাধীন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল ( জে এস ডি ), সাবেক মহামান্য রাষ্ট্রপতি ডাঃ বদরুদ্দোজা চেীধুরীর নেতৃত্বাধীন বিকল্পধারা বাংলাদেশ ও বঙ্গবীর আবদুল কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তমের নেতৃত্বাধীন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ নির্বাচন উপলক্ষ্যে এই জোট গঠন করে। গত ২৬ শে ডিসেম্বর ২০১৩ খ্রিঃ তারিখ বিকাল তিনটায় জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে আ স ম আবদুর রব বলেন :
১। জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট এর আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে আগত সবাইকে শুভেচ্ছা .../ ২। মঞ্চে সাবেক মহামান্য রাষ্ট্রপতি ডাঃ বি চৌধুরী-বঙ্গবীর আবদুল কাদের সিদ্দীকী বীর-উত্তম ... / ৩। আজ জাতির এক চরম দু:সময়। / ৪। সরকার ক্ষমতার জন্য রাষ্ট্রকে গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতা হুমকির মধ্যে ফেলা হচ্ছে। জনগণের ভোটাধিকারকে আইন করে হরণ করা হয়েছে । পঞ্চদশ সংশোধনী এর জন্য দায়ী। / ৫। অসংখ্য মানুষ হত্যা , ব্যবসা-বাণিজ্য ধ্বংস, সামাজিক নিরাপত্তা বিপর্যস্থ করে ক্ষমতা চিরস্থায়ী করার ভোটার বিহীন নির্বাচন করতে গিয়ে সরকার জনগণ ও আন্তর্জাতিক রাজনীতি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। / ৬। বিশ্বের অনেক দেশ বাংলাদেশের সাথে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ছিন্ন করতে যাচ্ছে । সমগ্র বিশ্বের সাথে শীতল সম্পর্ক বিরাজ করছে। / ৭। একটা সরকার এত একা, এত নিসংগ হতে পারে যা আমাদের রাজনীতির ইতিহাসে নেই। / ৮। সরকার ভোটার বিহীন নির্বাচন করে ‘গণতন্ত্র’ ও ‘সংবিধান’ দু’টোই ধ্বংস করেছে। / ৯। রাষ্ট্রকে খেলার পুতুল বানাবার জন্য মুক্তিযুদ্ধ করিনি। / ১০। বর্তমান সরকার জনগণের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে। সরকারের ভুল রাজনীতি মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে যুদ্ধাপরাধীদের হাতে বন্ধক দিতে চাচ্ছে। / ১১। আমরা যুদ্ধাপরাধীদের ১০০% বিচার চাই। / ১২। এই আত্মঘাতী রাজনীতি বর্জন করুন। জনগণের উপর আস্থা ও বিশ্বাস রাখুন। জনগণই মুক্তিযুদ্ধের পতাকা বহন করবে। / ১৩। এষনও সময় আছে নির্বাচন বাতিল করুন। জনগণের দাবী মেনে নিন। / ১৪। গণতন্ত্রকে হত্যা করে , জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে মুক্তিযুদ্ধেও চেতনা হয় না। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলে , জনগণের উপর যেভাবে গুলি ও নির্যাতন করা হচ্ছে তাতে মনে হয় আমরা এক আশ্রিত রাষ্ট্রের বাসিন্দা। এর জন্য মুক্তিযুদ্ধ করিনি। / ১৫। ... ক্ষমতার দ্বন্ধে লিপ্তদের বিরুদ্ধে জনগণকে জিম্মি করার বিরুদ্ধে স্বাধীনতার আকাংখা পূরণে গণতান্ত্রিক রাস্তা বিনির্মানে আমরা তিন দল যাত্রা শুরু করেছি । এটা মাত্র শুরু। আশা করি এই কাফেলা সংগ্রামী মানুষের কাফেলা হিসেবে সমগ্র জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করবে। স্বাধীনতার মর্মবাণী , সাম্য মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠায় সংগ্রাম এগিয়ে যাবে। / ১৬। চলুন সবাই মিলে দেশকে ধ্বংসের হাত থেকে উদ্ধার করি।
এই জোট আত্মপ্রকাশের সাথে সাথে নিম্ন রূপ নীতি ও কর্মসূচী ঘোষণা করে:
১। (ক) দেশে সুস্থ ও সৃজনশীল রাজনৈতিক সংস্কৃতির বিকাশ এবং এক ব্যক্তিকেন্দ্রীক নেতৃত্বের অবসান ঘটিয়ে যৌথ নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে রাজনীতিতে অর্থবহ ও গুণগত পরিবর্তন নিশ্চিত করা ।/ (খ) নাগরিকদের স্বাভাবিক জীবন যাত্রা ব্যহত হয় এমন কোন রাজনৈতিক কর্মসূচী গ্রহণ না করা।
/ ২। (ক) সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিল, ক্ষমতার কার্যকর বিকেন্দ্রীকরণ, দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্ট ও স্ব-শাসিত স্থানীয় সরকার গঠনের লক্ষ্যে সংবিধানের আমূল সংস্কার নিশ্চিত করা। / (খ) পার্লামেন্টের উচ্চ-কক্ষ থেকে নির্বাচনকালীন সময়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের বিধান করে নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা নিয়ে প্রতি পাঁচ বছর পর পর সৃষ্ট সংকটের স্থায়ী সমাধান করা।/ (গ) এক নাগাড়ে দুই বারের বেশী কেউই প্রধানমন্ত্রী পদে অধিষ্ঠিত হতে পারবেন না; কোন ব্যক্তি একই সাথে সরকার প্রধান ও দলীয় প্রধান থাকতে পারবেন না- এই মর্মে বিধান করা। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য নিশ্চিত করা। / (ঘ) স্বাধীন-শক্তিশালী-নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন এবং বর্তমান সংশোধিত আরপিও পরিবর্তন করা। / (ঙ) নির্বাচনী আইন সংশোধনের মাধ্যমে নির্বাচন ব্যবস্থাকে কালো টাকা ও পেশী শক্তি মুক্ত করে সৎ, যোগ্য ও মেধাবী ব্যক্তিদের নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করা। / (চ) স্বাধীন, শক্তিশালী বিচার ব্যবস্থার মাধ্যমে আইনের শাসন নিশ্চিত করা। দুর্নীতি দমন কমিশনকে কার্যকরভাবে স্বাধীন ও শক্তিশালী করা।
৩। গণতান্ত্রিক ও অসাম্প্রদায়িক চেতনায় উদ্বুদ্ধ সকল দেশপ্রেমিক দল , পেশাজীবী , নারী ও সকল ক্ষুদ্র জাতিসত্ত্বার সমন্বয়ে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলা।
৪। (ক) মুক্তিযোদ্ধাদের স্বচ্ছল জীবনের নিশ্চয়তাবিধান করা। সকল মুক্তিযোদ্ধার জন্য রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক মর্যাদা নিশ্চিত করা ।/ (খ) স্বৈরতন্ত্র, যুদ্ধাপরাধ, মানবতাবিরোধী অপরাধ , জঙ্গীবাদ , মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে সদা জাগ্রত থাকা।
৫। (ক) স্বৈরাচারী আচরণ ও সহিংসতায় জড়িত , চলমান নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য দায়ী সকল গোষ্ঠি থেকে দূরত্ব বজায় রাখা। / (খ) প্রতিটি মানুষের স্বাভাবিক জীবন ও মৃত্যু নিশ্চিত করা ।
৬। (ক) দেশের কৃষক , শ্রমিক সহ সকল শ্রেণী-পেশার জনগণের সার্বিক উন্নতি নিশ্চিত করার উপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণ করা। / (খ) দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা, শিল্প উৎপাদন ও বিদ্যুত ব্যবস্থা বৈপ্লবিক গতিতে এগিয়ে নেবার নীতি ও পদক্ষেপ গ্রহণ করা । / (গ) রাষ্ট্রব্যবস্থাপনার সকল স্তরে এবং বিভিন্ন সরকারী, আধা-সরকারী ও বে-সরকারী প্রতিষ্ঠানে নারীর অংশ গ্রহণ নিশ্চিত করা। প্রতিবন্ধীদের জীবনমান উন্নয়নে ব্যবস্থা গ্রহণ করা। / (ঘ) শিক্ষা ও কর্ম সংস্থানের ক্ষেত্রে সকল নাগরিকের জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করা।
৭।একতরফা নির্বাচনের তফসীল বাতিল এবং অবাধ , সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করা ।
সেই সাথে নেতৃবৃন্দ আরও ঘোষণা করেন :
আমরা তিনদল মিলে জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট (এন ডি এফ ) গঠন করলেও এর দরজা খোলা রেখেছি। যে কোন দেশপ্রেমিক , গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল পর্যায়ের দল বা সংগঠন এন ডি এফ এর ঘোষণা ও নীতিমালার সাথে একমত হলে এর সাথে যুক্ত হতে পারবে।
এই ঘোষণার মধ্যে দেশের প্রচলিত শাসন ব্যবস্থা বদলিয়ে গণমুখি শাসন ব্যবস্থা প্রণয়নের অঙ্গীকার ঘোষণা করা হয়েছে। বর্তমানে আমরা দেখছি অর্ধশতাব্দী আগের ঘটনাবলী নিয়ে নানা বিতর্কমূলক কথা বলা হচ্ছে। এসব নিয়ে সৃষ্টি করা হচ্ছে বিতর্ক। প্রয়াত নেতাদের নিয়ে অশ্লীল কথা বার্তা বলে রাজনীতির মাঠ গরম করা হচ্ছে। এভাবে জনগণের বর্তমানকালের সমস্যা ও তার সমাধানের আলোচনা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করা হচ্ছে। এতে লাভবান হচ্ছে এককেন্দ্রীক শাসন ব্যবস্থার সুফলভোগী কায়েমী স্বার্থবাদী গোষ্ঠি। শ্রমজীবী কর্মজীবী পেশাজীবী জনগণের সমস্যা ও তার সমাধানের পথ হয়ে যাচ্ছে রুদ্ধ। রাজনীতির এই পরিবেশ থেকে শ্রমজীবী কর্মজীবী পেশাজীবী জনগণকে মুক্ত করার জন্যই আজ প্রয়োজন দ্বিতীয় ধারার রাজনীতি ও তৃতীয় শক্তির। প্রাগুক্ত মতে শাসন ব্যবস্থার পরিবর্তন সাধনের মাধ্যমেই আমাদেরকে এগিয়ে যেতে হবে।
লেখকঃ সাবেক জেলা ও দায়রা জজ। বর্তমানে এ্যাডভোকেট বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট , হাইকোর্ট বিভাগ, ঢাকা ।
©somewhere in net ltd.