নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

রোমেল রহমান এর ব্লগ

রোমেল রহমান

রোমেল রহমান › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাবরের সমরকন্দ

২৩ শে নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১০:২৬

ভারত বর্ষের ইতিহাসে জহিরুদ্দিন মুহাম্মদ বাবর একটি অতি পরিচিত নাম। তিনি এ দেশে সর্ব প্রথম মোঘল রাজবংশ স্থাপন করেন।পাঠান বাদশা ইব্রহিম লোদীকে পরাজিত করে। বাবর নিজে ছিলেন তুর্কী তবুও তাঁর বংশধরগণ এদেশে মোঘল নামেই পরিচিত। অবশ্য তিনি মাতৃকুলের দিক থেকে মোঘল বীর চেঙ্গিস খানের বংশধর ছিলেন। বাবরের জীবন খুবই আশ্চর্য জনক। তিনি মাত্র চৌদ্দ বছর বয়সে ফরগনার সিংহাসনে আরোহণ করেন, তাঁর পিতা ওমর শেখ মির্জার মৃত্যুর পর। কিন্তু তৈমুর গুরিগানের এই অধস্তন পুরুষ নতুন রাজ্য জয়ের অভিযানে বা যুদ্ধে কোন অবস্থাতেই স্বীয় বংশীয় ঐতিহ্যকে খাট হতে দেন নাই। রাজ্য লাভের পর বাবর স্বীয় বংশীয় স্বভাব অনুযায়ী আশেপাশের সম্পদশালী রাজ্য জয়ের প্রতি মনোনিবেশ করেন।তিনি প্রথমেই নজর দেন সমরকন্দের উপর। কারণ এটি ছিল তাঁর পূর্বপুরুষ তৈমুর গুরিগানের রাজ্যের অন্তর্গত । সেই উদ্দেশ্যে তিনি মাত্র সতের বছর বয়সে সমরকন্দের উদ্দেশ্যে রওনা হন।

শহরের কাছে উপস্থিত হয়ে কুলব নামক স্থানের সমতল ভূমিতে তিনি শিবির স্থাপন করেন। কিন্তু বাবরের উপস্থিতি টের পেয়েই সমরকন্দের সৈন্য ও নাগরিকগণ দলে দলে নগর তোরন দিয়ে বেরিয়ে এসে তাঁর বাহিনীর উপর হামলা চালায় এবং তাঁর একজন সহচর সুলতান আলীকে বন্দী করে শহরে নিয়ে গেল। এখানে দুই তিন দিন থাকার পর বাবর কোহিক পাহাড়ে শিবির স্থানান্তরিত করলেন। এ দিকে বাবরকে শিবির সরাতে দেখে সমরকন্দবাসী ভাবলো যে বাবর বুঝি পালিয়ে যাচ্ছে। তাই তারা বাবরের বেয়াদবীর শাস্তি দেবার জন্য সর্বশক্তি দিয়ে বাবরকে আক্রমণ করলো। বাবরের বাহিনী আগে থেকেই প্রস্তুত ছিল। তাদের সাঁড়াশী আক্রমণের ফলে সমরকন্দবাসীরা শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়ে নগরে ফিরে যায়। তাদের অনেক রসদ ও সৈন্য বাবরের হাতে বন্দী হয়। এতে বাবরের উৎসাহ অনেক বেড়ে গেলো। সুবিধাজনক মনে করে খাজা দিদার দূর্গে বাবর শিবির পূনঃস্থানান্তরিত করলেন। শীত ক্রমশ অসহ্য হয়ে উঠলো । অত্যন্ত দূরবস্থায় পড়লো সমরকন্দবাসী। সাত মাস অবরুদ্ধ থাকার পর সমরকন্দের মালিক বাইসনঘর মির্জা দূরাবস্থা থেকে উদ্ধার পাবার উপায় না দেখে পলায়ন করলেন। প্রতিবেশী কোন এক বন্ধু রাজার কাছে আশ্রয় লাভের জন্য। সঙ্গে ছিল তার তিন শতাধিক ক্ষুধার্ত ও নগ্ন হতভাগ্য সঙ্গী। এরপর সমরকন্দ দখলে বাবরের বাধা রইলো না।বাবর অবিলম্বে শহর দখল করলেন। শহরের প্রধান প্রধান নাগরিকগণ বাবরকে জানালো প্রাণঢালা সম্বর্ধনা।

বাবর সমরকন্দকে বিশ্বের অতি সুন্দর নগরী সমূহের মধ্যে অন্যতম বলে বর্ণনা করেছেন। এই শহরে তৈমুর অনেক প্রাসাদ আর উদ্যান তৈরী করেছিলেন। ‘গক সরাই’ এইরূপ একটি বিরাট প্রাসাদ। নগর তোরনের কাছে একটি রমনীয় মসজিদ। হিন্দুস্তানী কারিগরেরা এটি তৈরী করে পাথর দিয়ে। মসজিদের বারান্দার উপরের দিকে এমনভাবে কোর-আন শরীফের কয়েকটি আয়াত খোদিত আছে যা দুই মাইল দূর থেকেও পড়া যায়। এই শহরেই রয়েছে একটি মান-মন্দির । তৈমুর পৌত্র উলুঘ বেগ এখানেই জ্যোতির্বিদ্যার অনুশীলন করতেন। উলুঘ বেগ এই সময় যে ‘এষ্ট্রোনমিক্যাল টেবল’ তৈরী করেছিলেন তা বহুদিন যাবৎ ব্যবহৃত হয়েছে।

কোহিক পাহাড়ের পাদদেশে পশ্চিম দিকে ‘সমতল’ নামে একটি বাগান আছে। এই বাগানের মধ্যেই ‘চল্লিশ স্তম্ভ’ নামের দ্বিতল অট্টালিকা অবস্থিত। যার প্রতিটি অংশ বাঁকা , ছুঁচলো নানা ঢংয়ের বিচিত্র ধরনের পাথর দ্বারা তৈরী। এর উপরে চারদিকে খোলা বারান্দা । মাঝ খানে পাথরের গড়া বিরাট হল । কোহিক পাহাড়েরই আরেক পাশে আর একটি বাগান। এর মধ্যেও অনুরূপ একটি উন্মুক্ত হল ঘর। হল ঘরে রয়েছে একটি পাথরের তৈরী সিংহাসন। এর দৈর্ঘ ত্রিশ ফুট , প্রস্থ ষোল ফুট এবং উচ্তা দুই ফুট। বলা বাহুল্য একটি মাত্র পাথর কেটেই সিংহাসনটি তৈরী করা হয়েছে। একই বাগানে ‘চীন ভবন’ নামে পোর্সেলিনের আর একটি প্রাসাদ অবস্থিত।

সমরকন্দ দূর্গ এলাকার মধ্যে রয়েছে একটি পুরানা মসজিদ। তার নাম ‘প্রতিধ্বনী’ মসজিদ। এই মসজিদে পদক্ষেপ করলেই সেইপদক্ষেপের প্রতিধ্বনী শোনা যায়। তাই এর এই নামকরণ। অবশ্য প্রতিধ্বনী কেন হয় কেউ তার কারণ জানে না । সমরকন্দের বাগানগুলোতে পৃথক পৃথক ভূমি খন্ড একটার পর একটা সাজানো হয়েছে। এক একখন্ডে এক এক ধরণের ফুল গাছ। এই শহরে প্রত্যেক জিনিসের জন্য ভিন্ন ভিন্ন বাজার। তাই একস্থানে ভিন্ন ভিন্ন জিনিসের সওদাগরেরা ভীড় করে না।

তখনকার দিনে সমরকন্দেই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ কাগজ তৈরী হতো। এই কাগজের নাম ছিল ‘জুয়াজ’। এখানের আর একটি প্রসিদ্ধ জিনিস হচ্ছে লাল রংয়ের ভেলভেট, যা পৃথিবীর নানা স্থানে রপ্তানী হতো। সমরকন্দের চমৎকার জলবায়ু আর প্রাকৃতিক দৃশ্য বাবরকে মুগ্ধ করেছিল। সুমিষ্ট পানি আর খাদ্যের প্রাচুর্যের কথা বাবর গর্বের সাথে ঘোষণা করেছেন। বাবর তৎকালীন সিরিয়া এবং মিশর থেকেও সমরকন্দ শতগুণে উন্নত এবং মনোমুগ্ধকর শহর বলে দাবী করেছেন। এসব কথা ১৪১৭ সালের। কিন্তু এতো প্রিয় সমরকন্দ বাবর বেশীদিন স্বীয় দখলে রাখতে পারেন নাই। ক্রমে তাঁকে হারাতে হয়েছে সমস্ত রাজ্য। পথে পথে হণ্যে হয়ে ঘুরেছেন। উদ্ধার করেছেন রাজ্য , আবার হারিয়েছেন। এ সবই তাঁর তরুন বয়সে ঘটেছে।

[ পাবনা শহরের কাচারী পাড়ার বাসায় বসে ২৫/০৭/১৯৭০ খ্রিঃ তারিখে এই প্রবন্ধটি লেখা হয়, মাসিক ‘কচি ও কাঁচা’এর আশ্বিণ ১৩৭৭ বঙ্গাাব্দের সংখ্যায় এটা ছাপা হয়। আমি তখন পাবনা সরকারী এডওয়ার্ড মহাবিদ্যালয়ে একাদশ (বিজ্ঞান) শ্রেণীর ছাত্র ছিলাম।]

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৩ শে নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১০:৩২

লর্ড ক্লাইভ বলেছেন: ভালও লাগল :)

২৪ শে নভেম্বর, ২০১৪ ভোর ৬:৫০

রোমেল রহমান বলেছেন: শুকরিয়া

২| ২৩ শে নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১১:০৯

খেলাঘর বলেছেন:


২৫/০৭/২০৭০ সালে পড়বো, এখন কপি করে রাখলাম।

২৪ শে নভেম্বর, ২০১৪ ভোর ৬:৫০

রোমেল রহমান বলেছেন: আল্লাহ আপনাকে হায়াত দারাজ করুন। আমীন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.