নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

রোমেল রহমান এর ব্লগ

রোমেল রহমান

রোমেল রহমান › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমাদের সন্তানেরা রাজপথে কেন ???

১১ ই জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ৯:১৯

যে সময়ে ওদের শ্রেণী কক্ষে পাঠ গ্রহণ করার কথা সেই সময়ে ওরা রাজপথে আন্দোলন করছে। পুলিশ ওদের পিটাচ্ছে। নির্দয়ভাবে, নিষ্ঠুরভাবে। ছাত্র না ছাত্রী এই প্রশ্নে কোন ভেদ বিচার নাই। এই ছাত্রছাত্রীরা কোন রাজনৈতিক দাবী নিয়ে আন্দোলন করছে না। সরকার উৎখাতের কোন কর্মসূচীও তাদের নাই। তাদের হাতে কোন অস্ত্র শস্ত্র গোলা বারুদও নাই। কোন লাঠিও তাদের কাছে নাই। তারা আন্দোলন করতে এসে গাড়ি,দোকান ভাংচুর করছে না । তারা বোমা নিক্ষেপ করে সন্ত্রাস সৃষ্টি করছে না। টায়ার পুড়িয়ে আগুনও জ্বালাচ্ছে না। তারপরও পুলিশ তাদের দমনে বে-পরোয়া। এই দৃশ্য প্রচার মাধ্যমে আমরা সবাই দেখছি। এসব দেখে ভ্রম হয় আমরা আমরা কি কোন স্বাধীন গলতান্ত্রিক দেশে বাস করছি ? পাকিস্তান আমলে আন্দোলনের সময় পুলিশ পারতপক্ষে মিছিলের মেয়েদের গায়ে এভাবে হাত দেয় নাই। ছাত্রদেরকেও ঢালাওভাবে এভাবে লাঠি পেটা করে নাই। ওদের দুর্ভাগ্য যে স্বাধীন দেশে জন্ম গ্রহণ করে ঔপনিবেশিক আমলের পুলিশের চেয়েও নিষ্ঠুর আচরণ পেতে হচ্ছে।

ওদের কন্ঠে উচ্চারিত শ্লোগান থেকে জানা যায় যে ওরা চায় উচ্চশিক্ষার অধিকার। ওদের মেধা আছে,উচ্চ শিক্ষার জন্য ভর্তি হবার শিক্ষাগত যোগ্যতাও আছে শুধু নাই ‘পাবলিক’ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রয়োজনীয় সংখ্যক আসন। যুগের পরিবর্তনের সাথে আসন সংখ্যাবৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তা বিবেচনায় এনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ কর্তৃপক্ষ গ্রহণ করে নাই। সে কারণেই আজ াশক্ষার দাবী তে ছাত্রছাত্রীদেরকে নামতে হচেছ রাজপথে , আর খেতে হচ্ছে পুলিশের লাঠি ও লাথির গুঁতো।

প্রতিবৎসর ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা বাড়ছে, সে তুলনায় ‘পাবলিক’ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে তাদের জন্য আসন সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয় নাই। ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে বাছাই করে সীমিত আসনে ছাত্রছাত্রীদের ভর্তি করা হচ্ছে। মেধা ও পরীক্ষার ফলাফলে সমমানের হলেও ভর্তি পরীক্ষায় কম নম্বর পাবার অজুহাতে আসন সংখ্যার অতিরিক্ত ছাত্রছাত্রীগণ ভর্তির সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। যারা এই বাছাই প্রক্রিয়ায় বাদ পড়ছে তাদের অনেকেই পরবর্তী বৎসরে ভর্তির জন্য প্রস্তুতি নিতে থাকে। এই প্রস্তুতি তারা নেয় মূল পরীক্ষায় পাসের জন্য প্রস্তুতির চেয়েও বেশী গুরুত্ব সহকারে। এভাবে অনেকেই শিক্ষা জীবনের এক বৎসর ‘লস’ দিয়ে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করছে। কিন্তু প্রতিবৎসরই ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা বাড়তে থাকায় নিয়মিত ছাত্রছাত্রীদের সাথে আগের বৎসরে ভর্তি হতে না পারা ছাত্রছাত্রীগণ ঐ সীমিত সংখ্যক আসনে ভর্তির জন্য ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে। এভাবে দেখা যাচ্ছে দ্বিতীয় বৎসরে ভর্তি পরীক্ষায় অবতীর্ণ ছাত্রছাত্রীদের অনেকেই ভর্তির সুযোগ পাচ্ছে কিন্তু নিয়মিত ছাত্রছাত্রীদের কেউ কেউ ভর্তির জন্য যোগ্য বিবেচিত হচ্ছে না। এর্ওা আবার পরবর্তী বৎসরে ভর্তির সুযোগ লাভের জন্য নতুন করে প্রস্তুতি নিচ্ছে অগ্রজদের মতো। এই প্রক্রিয়া উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে বিপর্যয়কর অবস্থার সৃষ্টি করছে। যখন কোন সমস্যার সৃষ্টি হয় তখন তার নিরসনের জন্য মূল কারণ নির্ধারণ করতে হয়। তা না করে অন্য পথে হাঁটলে সমস্যার সমাধান তো হয়ই না , বরঞ্চ তা আরো নতুন নতুন সমস্যার জন্ম দেয় । ফলে পরিস্থিতি জটিল থেকে আরো জটিল হয়ে পড়ে। সমাধানে পৌঁছা হয়ে যায় সুদূর পরাহত। আমাদের শিক্ষাঙ্গনে উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে ছাত্রছাত্রীদের ভর্তির ক্ষেত্রেও এভাবে মূল সমস্যা ও আনুষঙ্গিক সমস্যা একাকার হয়ে জটিলতর পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটিয়েছে। ছাত্রছাত্রীদের ভর্তি সংক্রান্ত বিষয়ে নীতি নির্ধারক কর্তৃপক্ষ ভাবছেন এভাবে পুলিশ দিয়ে পিটিয়ে দিলেই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। বুদ্ধিবৃত্তিক দৈন্যতা ও নাগরিকদের সাংবিধানিত অধিকারের প্রতি অবজ্ঞামূলক মনোভাবই এরূপ ভাবনার জন্ম দিয়েছে বলেই মনে হয়।

দেশের সর্বোচ্চ আইন হচ্ছে সংবিধান। শিক্ষা সম্পর্কে সংবিধানে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় সুস্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে দেশের শিক্ষা হবে গণমুখী ও সার্বজনীন। এ প্রসঙ্গে সংবিধানের দ্বিতীয় ভাগে ‘রাষ্ট্রপরিচালনার মূলনীতি’ শীর্ষক বিধানাবলীর প্রাসঙ্গিক অংশ প্রণিধান যোগ্য। এতে বলা হয়েছে: ‘ ১৭। রাষ্ট্র (ক) একই পদ্ধতির গণমুখী ও সার্বজনীন শিক্ষা ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য এবং আইনের দ্বারা নির্ধারিত স্তর পর্যন্ত সকল বালক-বালিকাকে অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক শিক্ষাদানের জন্য , (খ) সমাজের প্রয়োজনের সহিত শিক্ষাকে সঙ্গতিপূর্ণ করিবার জন্য এবং সেই প্রয়োজন সিদ্ধ করিবার উদ্দেশ্যে যথাযথ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও সদিচ্ছাপ্রণোদিত নাগরিক সৃষ্টির জন্য , (গ) আইনের দ্বারা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নিরক্ষরতা দূর করিবার জন্য
কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করিবেন। ’
সংবিধানের এই বিধান রাষ্ট্র পরিচালনার মূলসূত্র। এতদসংক্রান্ত দ্বিতীয় ভাগে বলা হয়েছে ‘ ৮। (২) এই ভাগে বর্ণিত নীতিসমূহ বাংলাদেশ পরিচালনার মূলসূত্র হইবে, আইন-প্রণয়নকালে রাষ্ট্র তাহা প্রয়োগ করিবেন, এই সংবিধান ও বাংলাদেশের অন্যান্য আইনের ব্যাখ্যাদানের ক্ষেত্রে তাহা নির্দেশক হইবে এবং তাহা রাষ্ট্র ও নাগরিকদের কার্যের ভিত্তি হইবে, তবে এই সকল নীতি আদালতের মাধ্যমে বলবৎযোগ্য হইবে না।’

আইন বলতে আমরা কি বুঝবো সে সম্পর্কে সংবিধানে বলা হয়েছে ঃ ১৫২। (১)...“ আইন অর্থ কোন আইন , অধ্যাদেশ, আদেশ, বিধি, প্রবিধান, উপ-আইন, বিজ্ঞপ্তি ও অন্যান্য আইনগত দলিল এবং বাংলাদেশে আইনের ক্ষমতা সম্পন্ন যে কোন প্রথা বা রীতি;

বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি সংক্রান্ত যে বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে তা রাষ্ট্র পরিচালনার মূলসূত্রের পরিপন্থি।সে কারণেই এই সিদ্ধান্ত অকার্যকর ও ফলবলহীন। এই সিদ্ধান্ত কোন অবস্থাতেই ভর্তিচ্ছু ছাত্রছাত্রীদের ক্ষেত্রে বৈধভাবে বলবৎযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে না। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এরূপ সিদ্ধান্ত গ্রহণের মধ্য দিয়ে নিজেদের গণমুখী পরিচয় প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন। এর পাশাপাশি ‘কেন্দ্র ফি’ (ঈবহঃবৎ ঋবব) আদায় ও বন্টন নিয়ে সাম্প্রতিক কালে সৃষ্ট বিতর্ক এবং মন্ত্রী মহোদয়ের বক্তব্য জনগণ অনেক গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করছে। ইনাদের অনেকে আবার নিজেদের পোষ্যদের শিক্ষা ও ভর্তির ক্ষেত্রেও বিশেষ ‘কোটা’ সুবিধা ভোগ করেন , তাই তারা পোষ্যদের ভর্তি সংক্রান্ত বিষয়ে নিরাপদ অবস্থানে রয়েছেন, এটাও এখন সাধারণ মানুষ ব্যথিত হৃদয়ে বিবেচনায় নিয়েছেন। ফলে উক্ত কর্তৃপক্ষের প্রতি জনগণের এতোদিনের শ্রদ্ধামূলক চেতনায় চির ধরেছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এতদঞ্চলে শিক্ষার বিস্তারের জন্য। বাঙালী জনগণের জাতিসত্বার বিকাশ, ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠা, শিক্ষা সংকোচন নীতি প্রতিরোধ, স্বাধীকার প্রতিষ্ঠা ও স্বাধীনতার সংগ্রামসহ সকল আন্দোলন সংগ্রামে ছাত্রছাত্রীদের সাথে সাথে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কর্মকর্তা কর্মচারীদের রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ভ’মিকা। তাই জনগণ সকল জাতীয় সংকটে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকেই তাকিয়ে থেকেছে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অঙ্গন থেকে ঘোষিত সিদ্ধান্ত ও কর্মসূচী সারা দেশের জনগণ শ্রদ্ধাভরে মেনে নিয়েছে এবং বাস্তবায়ন করেছে। তা করেছে প্রাণবাজী রেখে। শিক্ষা ও গবেষণা ক্ষেত্রেও এই বিশ্ববিদ্যালয় অর্জন করেছে আন্তর্জাতিক সম্মান। প্রাচ্যের অক্সফোর্ড বলে খ্যাত হয় ্এই বিশ্ববিদ্যায়। আর আজ ? আমরা যখন দেখি এই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রছাত্রীদের ভর্তির সুযোগ সীমিত করে দিচ্ছে, ভর্তির সুযোগ লাভের অধিকার পুনরুদ্ধারের জন্য শান্তিপূর্ণ পথে দাবী জানাতে এসে ছাত্রছাত্রীরা পুলিশের হাতে লাঞ্ছিত হচ্ছে তখন বর্তমানের সাথে অতিতের কোন মিল খুঁজে পাওয়া দুষ্কর হয়ে পড়ে।

এটা স্বীকার্য যে সারাদেশের সব ছাত্রছাত্রীকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ দেওয়া সম্ভব নয়। সে কারণেই দেশে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়সহ আরো ‘পাবলিক’ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। আরো আছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ সমূহ ¯œাতকোত্তর শ্রেণীতে পাঠ দান কার্যক্রম সফলতার সাথে চালিয়ে যাচ্ছে। তা সত্বেও উচ্চ শিক্ষা গ্রহনেচ্ছু ছাত্রছাত্রীদের ক্রমবর্ধমান সংখ্যার তুলনায় এই বিশ্ববিদ্যালয় সমূহের সমন্বিত আসন সংখ্যা অত্যন্ত অপ্রতুল। এই দিকটা বিবেচনায় নিয়ে দেশে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ‘বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়’। এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো মূলত ঢাকা এবং এর উপকন্ঠ কেন্দ্রীক। যে ছাত্র ছাত্রী উচ্চ শিক্ষার জন্য ঢাকায় আসে সে স্বাভাবিকভাবেই চিন্তা করে ঢাকাতেই যদি পড়া শুনা করবো তাহলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েই পড়বো। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তির ভিড়ের এটাও একটা কারণ। এছাড়াও এককেন্দ্রিক শাসন ব্যবস্থার কারণে সকল নাগরিক সুবিধা ঢাকায় সুলভ। কিন্তু ঢাকার বাইরে এই সুবিধা বাস্তব অর্থে সহজ লভ্য নয়। জাতীয় বাজেটের ৬৫% খরচ হয় ঢাকা মহানগরে। তাই জীবিকার প্রয়োজনে অধিকাংশ নাগরিক ঢাকামুখি। এই নাগরিকেরা তাদের সন্তানদের নিজ গৃহে রেখেই উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করতে চায়। এখানে সীমিত আয় ও অর্থনৈতিক বিষয়ও রয়েছে। এই সব বহুবিধ কারণেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য শিক্ষার্থীদের আগ্রহ রয়েছে। যাদের মেধার সাথে অর্থ / প্রতিপত্তি আছে তারা ভর্তির জন্য আরো বেশী সচেষ্ট থাকে। এভাবে ভর্তি সংক্রান্ত পরিবেশটাও অনেক সময় কলুষিত হবার পর্যায়ে চলে যাবার আশংকা দেখা দেয়। উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে ‘বে-সরকারী’ বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তো দূরের কথা অন্যান্য ‘পাবলিক’ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমতুল্য হতে পারে নাই। অভিযোগ উঠেছে কোন কোন ‘বে-সরকারী’ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষাদানের চাইতে বাণিজ্যিক বিষয়কেই অধিক গুরুত্ব দিচ্ছে। শিক্ষার মান অর্জন করার দিকে তাদের কোন খেয়াল বা লক্ষ্য নাই ; তাদের মূল লক্ষ্য ছাত্র সংখ্যা বৃদ্ধি। এই অভিযোগগুলো অমূলক নয়। এ্যাডভোকেট ইলতুৎমিশ তাঁর মেধাবী পুত্রকে এরূপ একটি বে-সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবিএ কোর্সে ভর্তি করলেন। কিছুদিন পরেই ছেলে এই বিশ্ববিদ্যালয় ত্যাগ করতে চাইলো। কারণ এই কোর্সে যারা শিক্ষকতা করছেন তারা সকলেই সদ্য পাস করা ছাত্রী , এরা এখানে শিক্ষকতা করার সুযোগ পেয়েছেন কিন্তু তারা কেউই নিজের শিক্ষা জীবনে প্রথম বিভাগ/ শ্রেনীর মুখ দেখেন নি। ইলতুৎমিশ সাহেব ভর্তির সময় অনেক টাকা দিয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সে টাকা ফেরত দিতে নারাজ। তখন তিনি কর্তৃপক্ষীয় ব্যক্তিগণ এবং এদের সাথে যোগাযোগ আছে এরূপ সকলের কাছেই কাকুতি মিনতি করতে থাকেন ‘উপযুক্ত যোগ্যতা সম্পন্ন অভিজ্ঞ শিক্ষক’ নিয়োগ দেবার জন্য। সময় বয়ে গেছে তিনি আশ্বাস পেয়েছেন , কিন্তু তাঁর আশা পূরণ হয়নি। অন্যান্য বিভাগের অবস্থা একই। ধনাঢ্য প্রকৌশলী তাঁর মেধাবী মেয়েকে ‘বে-সরকারী’ বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে ভর্তি করেছেন। তাঁর ইচ্ছা ¯েœহের কন্যা বিদেশে আইন বিষয়ে আরো উচ্ছ শিক্ষা লাভ করবে। আগে থেকেই তিনি যোগাযোগ স্থাপন করতে শুরু করলেন বিদেশী নাম করা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাথে। তিনি বিফল মনোরথ হলেন। মেয়ের মেধা বা তাঁর আর্থিক সামর্থ ্এখানে সমস্যা নয়, সমস্যা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মানের। এখানে আইনের কোন অনুষদ নাই। একজন উপদেষ্টার নিয়ন্ত্রণে চলে আইন শিক্ষা। এই উপদেষ্টার আইন বিষয়ে কোন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নাই। এখানে আইন সংক্রান্ত অনেক বিষয়ই পড়ানো হয় না। ‘পারিবারিক আদালত আইন ১৯৮৫’, ‘১৯৬১ সালের মুসলমান পারিবারিক আইন সমূহ অধ্যাদেশ’ ‘দেওয়ানী আদালত আইন’, ‘জেলা আইন’ ‘পুলিশ আইন’, ‘জুডিশিয়াল অফিসার প্রটেকশন আইন’ সহ প্রাত্যহিক জীবনে প্রয়োজনীয় আইন সমূহ পড়ানো হয় না। পুলিশের কার্যক্রম সমূহ যথাযথভাবে তদারকি করতে হলে ‘বাংলাদেশ পুলিশ রেগুলেশন( চ জ ই )’ অনুসরন করা প্রয়োজন, এটাও পড়ানো হয় না। আদালতের কার্যক্রম পরিচালনায় ‘সিভিল স্যুট ইনস্ট্রাকশন ম্যানুয়াল’, ‘দেওয়ানী বিধিসমূহ ও আদেশ সমূহ’(Civil Rules and Orders)’; ‘ফৌজদারী বিধিসমূহ ও আদেশ সমূহ’ (Criminal Rules and Orders)’; ‘লিগ্যাল রিমেমবারেন্স ম্যানুয়াল’ (L R Manual) সহ বেশ কিছু বিধান আইনী কার্যক্রমে অনুসরণ অপরিহার্য হলেও তা এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানো হয় না। আমাদের দেশে দেওয়ানী মামলার অধিকাংশই ভ’মি সংক্রান্ত। খাস জমি, সায়রাত মহল, হাট-বাজার, ফেরী ঘাট, লঞ্চঘাট ইত্যাদি সংক্রান্ত মামলাও এর মধ্যে আছে। এসব বিষয়ে সরকারের রাজস্ব বিভাগকে যে সকল বিধি বিধান অনুসরণ করতে হয় তা গ্রন্থিত আছে ‘ভ’মি সংস্কার ম্যানুয়েলে’। এই ‘ম্যানুয়েল’টি ভ’মি সংক্রান্ত বিরোধ নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ।এটাও পড়ানো হয় না। এসব বিষয়ে ছাত্রছাত্রীদেরকে পড়ানো বা ধারণা দেবার যোগ্যতা সম্পন্ন শিক্ষকও এসব ‘বেসরকারী’ বিশ্ববিদ্যালয়ে নাই। কিন্তু আইনের ছাত্রছাত্রীদের পাঠ্যসূচীতে রাখা হয়েছে ১) বাংলা, ২) ইংরাজী, ৩) রাজনীতির মৌলিক ধারণা (Basic concepts of political thought ), ৪) পাশ্চাত্যের রাজনৈতিক চিন্তাধারা (Western political thought), ৫) লৈঙ্গিক পাঠ(Gender Studies )সহ বিভিন্ন বিষয়। আইনের পাঠ্যসূচীতে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের বিষয় অন্তভর্’ক্ত করার কোন যুক্তি নাই। ভাষা ও লিঙ্গ সংক্রান্ত বিষয় পড়ানোর যুক্তি থাকলেও তা বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে পড়ানোর উপযুক্ত প্রাজ্ঞ শিক্ষাবিদ অনেক বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে নাই। এসব কারণে এর কোন কোন বিষয়ে নিয়মিত ক্লাস হয় না। তবে হাজিরা খাতা ঠিক রাখা হয়। পরীক্ষার আগে দুএকদিন ‘রিডিং’ পড়িয়ে তারপর প্রশ্ন দেওয়া হয়। এসব পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ‘মডারেশন’ করা হয় না। উত্তরপত্র দ্বিতীয় পরীক্ষককে দিয়ে পরীক্ষা করানো হয় না। এসব বাস্তবানুগ কারণে ‘বে-সরকারী’ বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সনদ’ চাকুরী দাতা কর্তৃপক্ষের কাছে অনেক সময়ই গ্রহণযোগ্য হয় না। এই সব দিক বিবেচনা করে ছাত্রছাত্রী ও অভিভাবকেরা বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় এড়িয়ে চলেন। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ না পেয়ে ‘শিক্ষা বর্ষে’র ধারাবাহিকতা অক্ষুন্ন রাখার জন্যই অনেকে বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়, পরবর্তী বৎসরে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেলে সেখানে ভর্তি হয়। যারা সেরূপ সুযোগ পায় না, তারা মনোবেদনা নিয়েই বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে থেকে যায়।

বে-সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম অনেকাংশে দেখা শুনা করে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (UGC)। এ জন্য উক্ত কমিশন এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছ থেকে মোটা অংকের অর্থ নিয়ে থাকে। শিক্ষক নিয়োগ, পাঠক্রম নির্ধারণ সহ বহুবিধ ক্ষেত্রে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের উপর ‘ইউ জি সি’ এর কর্তৃত্ব রয়েছে। তারপরও প্রাগুক্ত ত্রুটিসহ বহুবিধ ত্রুটি রয়েছে, যা উচ্চ শিক্ষার পরিবেশ অর্জনে বাধার সৃষ্টি করছে। অনেক বে-সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে দেখা যায় উপাচার্যের চাইতে রেজিষ্টারের ক্ষমতা দাপট ও কর্তৃত্ব অনেক বেশী। এসব বে-সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নামমাত্র প্রধান। সকল কিছুই নিয়ন্ত্রণ করে রেজিষ্টার। কোন কোন ক্ষেত্রে অভিযোগ পাওয়া গেছে অবসরপ্রাপ্ত যুগ্ম সচিবের শেষ জীবনে মাথা গোঁজার ঠাইটুকুও জবর দখল করা হয়েছে। কোথায়ও আবার জবর দখল করা হয়েছে আল্লাহ ওয়াস্তে ওয়াকফ করা সম্পত্তি; এ নিয়ে বিরোধ হয়েছে জামে মসজিদ কমিটি ও মুসুল্লীদের সাথে। দাঙ্গা হয়েছে, ফৌজদারী মামলা হয়েছে রেজিষ্ট্রার সহ অন্যান্য কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে। ছাত্রীকে পাওনা টাকা ‘ইউ জি সি’এর সুপারিশ সত্বেও ফেরত না দেওয়ায় উপাচার্যসহ অন্যান্য কর্মকর্তার বিরুদ্ধে প্রতারনার অভিযোগে ফৌজদারী মোকদ্দমা হয়েছে। কোথায়ও আবার ‘বহি:ক্যাম্পাস’ খুলে মোহরার ও আদালতের কর্মচারীদের শিক্ষক হিসাবে নিয়োগ দিয়ে চালু করা হয়েছে শিক্ষা সংক্রান্ত কার্যক্রম। এ নিয়েও ফৌজদারী মামলা হয়েছে। ফৌজদারী মামলার আসামী হয়ে জামিনে মুক্তি পেয়ে এসব উপাচার্য ও কর্মকর্তাগণ স্বপদে বহাল আছেন। ট্রাস্টি বোর্ডও এ বিষয়ে কোন পদক্ষেপ নেয় নাই, ‘ইউ জি সি’কেও দেখা গেছে নি:রব ভ’মিকা পালন করতে। তাই শিক্ষা ক্ষেত্রে বে-সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কোন ফলপ্রসু অবদান রাখতে পারছে না। সেকারণেই ছাত্রছাত্রীগণ ‘পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে’ ভর্তি হতে এতো আগ্রহী। তাদের এই আগ্রহ অত্যন্ত যুক্তিসংগত ।

রাষ্ট্র পরিচালনার মূলসূত্র অনুসরণ করে উচ্চশিক্ষার অধিকার বাস্তবায়নের লক্ষ্যেই আজ পদক্ষেপ নিতে হবে। শিক্ষার অধিকার থেকে কাউকে বঞ্চিত করা যাবে না। এ জন্য কোন বিধি নিষেধও আরোপ করা যাবে না। উচ্চ শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টির জন্য আসন সংখ্যা পূনর্বিন্যাস করতে হবে, উপযুক্ত শিক্ষক জরুরী ভিত্তিতে নিয়োগ করতে হবে । প্রয়োজনীয় উপকরণ সরবরাহ করতে হবে। সরকার, ‘ইউ জি সি’ , পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকেই এ বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে তা দ্রুত কার্যকর করতে হবে। তারা কোন ভাবেই শিক্ষা সংকোচন নীতি গ্রহণ করতে পারেন না। শিক্ষা সংকোচন নির্দেশক সকল কালাকানুন বাতিল করতে হবে। সেই সাথে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ গ্রহণের অধিকার ক্ষুন্ন করে জারি করা সকল বিধি নিষেধ ও কালা কানুন বাতিল করতে হবে। মনে রাখতে হবে সরকার, ‘ইউ জি সি’ , পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কার্যক্রম পরিচালনার সকল ব্যয় নির্বাহ করা হয় রাষ্ট্রের ‘সংযুক্ত তহবিল’ থেকে। এই তহবিল গঠিত হয় জনগণের দেয়া অর্থে। জনগণের অর্থে বেতন ভাতা সম্মানী গ্রহণকারী কোন ব্যক্তিই জনস্বার্থের পরিপন্থি কোন সিদ্ধান্ত নিতে বা তা কার্যকরী করতে পারেন না। রাষ্ট্রপরিচালনার মূলসূত্রের সাথে সাংঘর্ষিক সিদ্ধান্ত নি:সন্দেহে জনস্বার্থ বিরোধী। তাই উচ্চ শিক্ষার সুযোগ লাভের জন্য ভর্তি পরীক্ষায় অংশ গ্রহণের জন্য আন্দোলনরত ছাত্রছাত্রীদের প্রতি নিষ্ঠুর আচরণ কোন যুক্তিতেই সমর্থণযোগ্য নয়। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সকল কর্তৃপক্ষ গণমুখী মানসিকতার আলোকে কার্যক্রম পরিচালনা করবেন এটাই জনগণ প্রত্যাশা করে।

লেখক : সাবেক জেলা ও দায়রা জজ। বর্তমানে এ্যাডভোকেট বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট , হাইকোর্ট বিভাগ, ঢাকা এবং বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে আইনের অধ্যাপক। [email protected]

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.