![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মানুষের স্বাভাবিক জীবন যাত্রা ব্যহত। রাস্তাঘাট বন্ধ । দোকানপাট বন্ধ। বিনিয়োগ বন্ধ। অর্থনৈতিক জীবন যাত্রা প্রায় অচল । শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ না থাকলেও ছাত্রছাত্রীরা ক্লাসে যাচ্ছে না। শিক্ষাঙ্গণে উপস্থিত থাকলেও তারা শ্রেণী কক্ষে পাঠ গ্রহণ করতে অনীহ। অসহনীয় জীবন যাপন করছে জনগণ। রাজধানী ঢাকার অবস্থা পৃথক বলে জানা যায়। রাজধানী ঢাকা কার্যত সারাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন। সরকার অসহায়। করজোরে ক্ষমা চাচ্ছেন শিক্ষা মন্ত্রী। জনগণের জান মালের নিরাপত্তা বিধানে যা যা করার দরকার তাই করা হবে বলে প্রধানমন্ত্রী দৃঢ় কন্ঠে ঘোষণা দিলেও তিনি আবার জনগণের কাছেই সহযোগিতা চাচ্ছেন। পুলিশ র্যাব বিজিবি প্রধানেরাও রাজনীতিবিদদের মতো হাত উঁচিয়ে বত্তৃতা করে ‘দুবৃত্ত’দের দমন করার হুংকার দিচ্ছেন। ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের আগে জাতীয় নির্বাচন হবে না বলেও তারা হুংকার দিয়ে বলছেন। এসব কথা বলার আগে তারা সংবিধান, আইন, বাংলাদেশ পুলিশ প্রবিধানমালা (PRB), শৃংখলাবিধি বিবেচনার নেবার প্রয়োজন মনে করছেন না। তার পরেও কিন্তু পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি। প্রতিটি নাগরিকের মনে প্রশ্ন এই অচলাবস্থার শেষ কবে। কবে তারা ফিরে পাবে স্বাভাবিক জীবন। দেশের শান্তি শৃংখলা রক্ষার দায়িত্ব সরকারের । তা কোন কারণে বিপন্ন হলে সরকারেই দায়িত্ব সেটার পূনঃপ্রতিষ্ঠা করা। সরকার তা না করে অন্যের উপর দোষারোপ করেই যাচ্ছেন। এভাবে অন্যের উপর দায় চাপিয়ে সরকার দায়মুক্তি পেতে পারে না।
ইতিহাসের পৃষ্ঠা উল্টালে আমরা দেখি যারা জনগণের জন্য কল্যাণমূলক শাসন ব্যবস্থা কায়েম করেছেন তাদের কথা লিখিত হয়েছে গৌবর গাঁথা হিসাবে। ভারতবর্ষের স¤্রাট শিহাব উদ্দিন মুহম্মদ শাহজাহানের শাসন আমলে একজন দক্ষ উজির ছিলেন সা’দুআল্লাহ খান আল্লামায়ী। তিনি ছিলেন সর্বগুণে গুনান্বিত একজন রাজনীতিবিদ। তাকে ‘জামলাত-উল-মুলক’ খেতাব দেওয়া হয়। পান্ডিত্যের জন্য তাকে আল্লামা বলা হতো। আল্লামা অর্থ পন্ডিত বা আচার্য। রাজ-দরবারে আমির উমরাহদের উপস্থিতিতে তাকে উদ্দেশ্য করে সম্রাট বলেন,‘ সাম্রাজ্য ও সম্পদের সমন্বয় সাধন ও পরিচালনার ব্যাপারটা ন্যায়পরায়নতা ও তীক্ষ্ণ বুদ্ধির উপর নির্ভরশীল। অযোগ্য অমাত্য ও পারিষদবর্গ নিয়ে রাজ্য পরিচালনাকারী অযোগ্য শাসক কখনোই সাম্রাজ্যের নিয়ম ও শৃংখলা কোন ভাবেই রক্ষা করতে পারে না। এরূপ শাসকের হাতে রাজ্য পরিচালনার দায়িত্ব পড়লে প্রজাগণ দারিদ্র ও দুর্দশার কবলে পড়ে , রাজ কোষাগারের আয় কমে যায়। এর অমোঘ পরিণামে রাজ্য হয় ধ্বংসোন্মুখ। আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য ধার্মিক ও সৎ লোকদের সাথে উঠা বসা করবে। আমাদের বর্তমান গৌরব অব্যাহত ও নিন্দার উর্ধে রাখার জন্য প্রতি ওয়াক্ত নামাজের পর আল্লাহর কাছে মুনাজাত করবে।’
জনকল্যাণমূলক শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য রাষ্ট্র বিজ্ঞানীগণ যুগে যুগে তাঁদের সুচিন্তিত মতামত ব্যক্ত করেছেন। এসব মতামত কালের গন্ডি পেরিয়ে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে সুশাসন প্রতিষ্ঠার নির্দেশনা দিয়ে চলেছে। এরিষ্টটলের মতে , ‘শাসনতন্ত্র এমন একটি জীবন পদ্ধতি , যা রাষ্ট্র নিজের জন্য বেছে নিয়েছে।’ প্রাচীন কাল থেকে আজ অবধি বরেন্য মণীষীদের মতামত সমন্বিত করে বলা যায় যে শাসনতন্ত্র হচ্ছে রাষ্ট্রের মৌলিক বিধিমালা ও রীতি নীতি। এই সকল বিধিমালা ও রীতি নীতিই জনগণের উপর সরকারের কর্তৃত্ব নির্ধারণ করে, ক্ষমতা চর্চার পদ্ধতি নির্দেশ করে এবং সরকারের বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে সরকারী ক্ষমতা বন্টন করে। শাসনতন্ত্রে সরকারের মৌলিক বিষয়াদির সাথে সংশ্লিষ্ট বিধি বিধান অর্ন্তভুক্ত থাকে। শাসক ও শাসিতের মধ্যেকার সম্পর্ক শাসনতন্ত্রের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। নাগরিকদের স্বাধীনতা রক্ষা করে সরকারের ক্ষমতার উপর কার্যকর বাধা নিষেধ আরোপ করাই শাসনতন্ত্রের উদ্দেশ্য।
ইমাম গাজ্জালী বলেন , আল্লাহর বিধান ও ন্যায়নীতি অনুসারে রাষ্ট্র শাসিত হলে নাগরিকগণ উন্নত জীবন যাপন করতে পারে। রাষ্ট্রীয় সত্ত্বাকে একটি জীবদেহ এবং এই জীবদেহের বিভিন্ন অংগ প্রত্যঙ্গের সাথে রাষ্ট্রে বসবাসকারী বিভিন্ন পেশাজীবী জন সমাজকে তুলনা করা যেতে পারে। মানব দেহে হৃদপিন্ডের মতো রাষ্ট্রীয় কাঠামোতে শাসকের স্থান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রাষ্ট্রীয় কাঠামোতে সর্বোচ্চ মানের ব্যক্তিত্বের অধিকারী হচ্ছে শাসক। ন্যায়নিষ্ঠা ও পক্ষপাতহীনভাবে তাকে শাসন কার্য পরিচালনা করতে হবে। আল্লাহর প্রতিনিধিরূপে ন্যায়বান শাসককে বিবেচনা করা হয়। পক্ষান্তরে অন্যায়কারী শাসক বিবেচিত হবে শয়তানের প্রতিনিধিরূপে। রাষ্ট্রের শ্রেষ্ঠ নেতা হিসাবে শাসক পরম নিষ্ঠা ও শৃংখলার সাথে আল্লাহর নির্দেশ সমূহ বাস্তবায়িত করবেন। অযোগ্য শাসকের কারণে রাষ্ট্রে নিরবিচ্ছিন্ন বিশৃংখলার সৃষ্টি হয়, দুর্ভিক্ষ ও মহামারীর প্রাদুর্ভাব ঘটে , বিরামহীন অস্ত্রের ঝনঝনানি ও যুদ্ধ প্রস্তুতি রাষ্ট্রকে করে তোলে ক্ষত-বিক্ষত। উন্নত সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য দরকার সুশাসন , একমাত্র যোগ্য শাসকের দ্বারাই তা সম্ভব। তাই বলে শাসকের ক্ষমতা কোন ক্রমেই সীমাহীন হওয়া চলবে না , তার ক্ষমতা হবে সীমিত। আল্লাহর বিধান , শরিয়তের আইন ও সমাজ জীবনের মৌলিক নীতি দ্বারা শাসকের ক্ষমতার সীমারেখা নির্ধারিত থাকবে। আদর্শ শাসক অবশ্যই প্রজাদের প্রতি থাকবেন সদয়। দূরদৃষ্টি বিচারবুদ্ধি ও ক’টনীতি সম্পন্ন ; ধর্ম পরায়ন , জ্ঞানী , সাহসী শাসকই আদর্শ শাসক। তাকে মনে রাখতে হবে পার্থিব জগতের সুখ ক্ষণস্থায়ী , তাই বিশ্বনবীর জীবনাদর্শ অনুসরণ করে ও তাঁর নির্দেশ মেনে শাসককে শাসনকার্য পরিচালনা করতে হবে। এটা করতে গিয়ে শাসক অবশ্যই জ্ঞানী জনের পরামর্শ গ্রহণ করবেন। শাসককে রাষ্ট্রীয় শাসন কার্য পরিচালনা করতে গিয়ে রাষ্ট্রীয় দর্শন ও ধর্মতত্ত্বের সমন্বয় সাধনে প্রয়াসী হতে হবে। শাসক কোন অবস্থাতেই স্বৈরাচরী হবে না। মানুষ আল্লাহর সৃষ্টি তাই তাদের মধ্যে কোন ভেদাভেদ নাই। ইসলাম অসাম্যকে অনুমোদন করে না ; উন্নত জীবন যাপনের জন্য আল্লাহর বিধান ও ন্যায়নীতি অনুসারে রাষ্ট্র শাসিত হওয়া উচিত।
রাজা রাম মোহন রায় (১৭৭৪খ্রিঃ-১৮৩৩ খ্রিঃ) এর মতে রাষ্ট্র হবে একটি জন-কল্যাণকামী প্রতিষ্ঠান এবং তা পরিচালিত হবে আইনের শাসনের দ্বারা। আইন প্রণয়ন , নির্বাহী ও বিচার বিভাগের দায়িত্ব ব্যক্তি বিশেষের হাতে নয় , তা ন্যস্ত থাকবে যথাক্রমে আইন সভা , শাসন বিভাগ ও আদালতের হাতে। এই বিভাগগুলো নিজ নিজ ক্ষেত্রে থাকবে স্বাধীন। তা না হলে একই ব্যক্তির হাতে সকল ক্ষমতা অর্পিত হলে অনিবার্যভাবে ঐ ব্যক্তি হয়ে উঠবে স্বৈরাচারী। দেশের কল্যাণ ও অগ্রগতির পথ সুগম করতে হলে বিচার বিভাগ ও শাসন বিভাগকে পৃথক করতে হবে এবং জুরি দ্বারা বিচার ব্যবস্থা চালু করতে হবে।
সুশাসন সব সময়ই জনগণের কাম্য। সুশাসনের সাথে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা ও যৌথ নেতৃত্ব কায়েম করা না হলে তা লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হয়। আমাদের দুর্ভাগ্য হচ্ছে আমরা তদ্ মোতাবেক শাসন ব্যবস্থা কায়েম করতে পারি নাই। সে কারণেই সংকটের পর সংকট আমাদের জনজীবন বিপন্ন করে তুলছে। ব্যাপক ক্ষমতাধরের শরণাপন্ন হয়ে প্রাচুর্য অর্জনের জন্য নৈতিকতাহীন বুদ্ধিজীবী/‘টকশোজীবীগণ’ আশ্রয় নিয়েছে নির্লজ্জ স্তাবকতার। এরা ক্ষমতাধর স্বৈর শাসককে তোয়াজ করতে গিয়ে উদ্ভট যুক্তি তর্কের অবতারণা করছে , আবার আন্দোলনকারীদের উপদেষ্ট সেজে আন্দোলনের ‘সঠিক পদ্ধতি ’ বাতলে দিতে চাচ্ছে। ব্যাপারটা ধূর্ত শিয়াল ও কুমির গল্পের মতো। কুমির তার সাতটি বাচ্চাকে শিয়াল পন্ডিতের পাঠশালায় ভর্তি করেছিল । ধূর্ত শিয়াল পড়াতে বসে বলতো ‘ কানা খানা গানা ঘানা, কেমন লাগে কুমির ছানা।’ তার পরেই সে কুমিরের ছানা ধরে খেয়ে ফেলতো। কুমির বাচ্চা দেখার জন্য আসলে এক বারে সব বাচ্চা না দেখিয়ে একাধিক বারে দেখিয়ে সাতটি বাচ্চা মিলিয়ে দিত। সরল কুমির ভাবতো তার সাতটি বাচ্চা পন্ডিতের কাছে শিক্ষালাভ করে বেড়ে উঠছে। ধূর্ত শিয়াল যখন কুমিরের ছয়টি বাচ্চাই খেয়ে ফেললো তখন কুমির বাচ্চা দেখতে এলো। শিয়ালের কাছে আছে মাত্র একটি বাচ্চা। ধূর্ত শিয়ালের তো দুষ্ট বুদ্ধির অভাব নাই। সে ঐ একটি বাচ্চাই কুমিরকে সাত বারে দেখালো। কুমির সন্তুষ্ট মনেই চলে গেলো। পরদিন কুমির আবার বাচ্চাদের দেখতে এসে দেখলো শিয়াল পন্ডিত বাড়িতে নেই। প্রথমে অনেক ডাকাডাকি করে না পেয়ে বাড়ির ভেতরে ঢুকে দেখতো পেলো বাচ্চাদের হাড় পড়ে আছে। সবই বুঝতে পারলো কুমির। আর কি করা নিজের বোকামীকে ধিক্কার দিতে দিতে ভারাক্রান্ত হৃদয়ে বাড়ি ফিরে গেলো। শোকাতুর কুমির হলফ করলো কোন দিন শিয়ালকে পেলে সন্তানহারার প্রতিশোধ সে নিবে। এভাবে বহুদিন পেরিয়ে গেলো। শিয়াল বার্ধক্যে উপনীত হলো, হাঁটতে শুরু করলো লাঠি ভর দিয়ে। এরূপ অবস্থায় তৃষ্ণার্ত হয়ে শিয়াল নদীতে গেলো। কুমির দেখলো এটাই সুযোগ। সে শিয়ালের একটি পা সজোরে কামড়ে ধরলো। আর যায় কোথায়। ধূর্ত শিয়াল এবার নতুন ফন্দি আঁটলো মুহূর্তের মধ্যে। সে কাঁদো কাঁদো স্বরে কুমিরের কাছে কৃত অপরাধের কঠোর শাস্তি কামনা করলো। কুমিরকে সে বললো শাস্তি দিতে হলে তার পা ধরে আঘাতের পর আঘাত করে টুকরো টুকরো করে মেরে ফেলাই একমাত্র শাস্তি। এর জন্য শিয়ালের পা কামড়ে ধরতে হবে। কিন্তু কুমির ধরেছে শিয়ালের লাঠি। আসলে কুমির ঠিকই ধরেছিল কিন্ত শিয়াল তার দুষ্ট কৌশল হিসাবে এটা বললো। সরল কুমির আবার শিয়ালের ধূর্তামির ফাঁদে পা দিল। শিয়াল লাঠি দেখিয়ে বললো এটাই তার পা । কুমির এবার শিয়ালের আসল পাটিকে লাঠি বলে বিশ্বাস করে ছেড়ে দিয়ে লাঠিটাকে আসল পা বলে বিশ্বাস( শিয়ালের কথায়) করে সেটা কামড়ে ধরলো। তখনই শিয়াল লাফ দিয়ে পাড়ি উঠে পালিয়ে গেলো। তখন কুমির তার নিজের বোকামী বুঝতে পারলো , কিন্তু আফসোস ছাড়া করার তো কিছু নাই।
আমাদের শাসন ব্যবস্থায় প্রাগুক্ত ত্রুটির কারণে ক্ষমতা পেলে তা ছাড়তে কেউই রাজি থাকে না। যে কোন ভাবেই হোক ক্ষমতা ধরে রাখতে চায়। সে জন্য চায় নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে। ১৯৭৩ সালে আমরা দেখেছি মেজর জলিল, শাহজাহান সিরাজ, এম এ আওয়াল, মমতাজ বেগম, রশিদ ইনজিনিয়ার , ডাঃ আজাহার হোসেন , ডঃ আলীম আল-রাজি, প্রফেসর মোজাফফর আহম্মদ, শাহজাহান মাস্টার, নূরে আলম জিকু, মুহম্মদ ইকবাল , বিধান কৃষ্ণ সেন, সুলতান উদ্দিন আহমেদ প্রমুখের নিশ্চিত বিজয় ছিনিয়ে নেবার অভিযোগ করতে। দাউদকান্দি থেকে হেলিকপ্টারে করে ব্যালট ঢাকায় এনে তা পূন গণনা করে আওয়ামী লীগ প্রার্থী খন্দকার মোশতাককে বিজয়ী ঘোষণা তো ঐতিহাসিক কলংকিত সত্য। এধারা অব্যাহত ছিল। ১৯৯৬ সালে মোটামুটি সর্ব সম্মত ভাবে একটি নির্বাচন পদ্ধতি বেছে নেওয়া হয়। এই পদ্ধতিতে ১৯৯৬, ২০০১, ২০০৮ সালে নির্বাচন হলে তা সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হয়। অভিযোগ উঠলেও জনগণের কাছে তা পাত্তা পায় নাই। এই পদ্ধতিকে একতরফাভাবে বদলানো হলে বিতর্ক উঠে। সেই বিতর্কের ঝড় আজ আমাদের জনজীবন পর্যুদস্ত করে দিচ্ছে। জনগণ দগ্ধ হচ্ছে, গুম হচ্ছে, ক্রস ফায়ারে নিহত হচ্ছে , কারাবরন করছে , আত্ম গোপন করতে বাধ্য হচ্ছে। মিছিল সভা সমাবেশের অধিকার থেকে জনগণ আজ বঞ্চিত। কেউ বলছে উন্নয়নের জন্য এই ত্যাগ স্বীকার করতে হবে। কিন্তু কতিপয় ভাগ্যবান ব্যতীত আর কারো জীবন জীবিকার ক্ষেত্রে তো উন্নয়ন নাই। অর্ধ শতাব্দীর অধিককাল আগে প্রতিষ্ঠিত সরকারী মেডিকেল কলেজে উন্নতমানের এক্স-রে মেশিন থাকলেও রোগীদের এক্স-রে করাতে হয় বে-সরকারী ক্লিনিক থেকে, অন্য সব পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যাপারেও দেখা যাবে একই চিত্র। ঢাকার বাইরে মান সম্মত প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়/ মহাবিদ্যালয় খুঁজে পাওয়া প্রায় দুষ্কর। পোষাক শ্রমিকেরা ন্যায্য মজুরী থেকে বঞ্চিত। জেলে তাঁতী কামার কুমার কৃষক কেউই শ্রমের ন্যায্য মজুরী পায় না বলে দীর্ঘ দিনের অভিযোগ আজও বহাল আছে। নারী ও পুরুষ শ্রমিকের মজুরীর বিভেদ দূর করা তো দূরের কথা তাতে সমন্বয় আনার উদ্যোগই নেওয়া হয় নাই। আকাশচুম্বী অট্টালিকার সাথে যেন পাল্লা দিয়ে গড়ে উঠছে বস্তি। এরপর উন্নয়নের আলামত কোথায়।
স্বাধীনতার চেতনাই যদি মূল লক্ষ্য হয় তাহলে স্বাধীনতার রূপকার সিরাজুল আলম খানসহ ‘নিউক্লিয়া’সের সংগঠকদের চিন্তা চেতনা কেন আজ আলোচনায় অনুপস্থিত। জাতীয় অনুষ্ঠানে , প্রচার মাধ্যমে , শিক্ষাসূচীতে তাঁদের কৃতিত্বের বিষয় কেন আড়াল করে রাখা হয় ? কারণ তা প্রকাশিত হলে স্বৈর শাসককে আর জনগণ গ্রহণ করবে না।
আজ সংকট থেকে উত্তরণে তাই আজ গ্রহণযোগ্য সরকারের মাধ্যমে সর্বস্তরের জনগণের মতামতের ভিত্তিতে শাসন ব্যবস্থা কায়েম করতেই হবে। ‘ব্যর্থ’ নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত সরকার দেশ চালাতে ব্যর্থ হয়েছে এটা আজ আন্তর্জাতিকভাবে সর্বসম্মত মতে স্বীকৃত। এর র্দীর্ঘায়ন যত হতে থাকবে জন দুর্ভোগ ততই দীর্ঘায়িত হবে। আজ কারো ইজ্জত রক্ষার প্রশ্ন নয়, প্রশ্ন জনগণের অধিকার ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার। সুগ্রীম কোর্ট প্রাঙ্গণে কুশ পুত্তলিকা দাহ ও পাদুকা মিছিল দেখেও যারা সুজন আর দুর্জনের ভেদ বুঝতে পারে নাই তাদের কৃতকর্মের ফল আজ পরিপক্ক হয়ে গেছে। আজ এদের শুধু করুণাই করা যায়।
লেখকঃ সাবেক জেলা ও দায়রা জজ। বর্তমানে এ্যাডভোকেট বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট , হাইকোর্ট বিভাগ, ঢাকা এবং বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে আইনের অধ্যাপক। [email protected]
©somewhere in net ltd.