![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
প্রশ্নপত্র ফাঁস হবার খবরে সারাদেশের অভিভাবকগণ আজ উৎকন্ঠিত। ক্ষুব্ধ ছাত্র-ছাত্রীগণ নেমে এসেছে রাজপথে, পড়ার টেবিল ছেড়ে। তাদের হাতে ব্যানার, ফেস্টুন। দাবী একটাই ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্রের ভিত্তিতে গৃহীত পরীক্ষা বাতিল করে নতুন ভাবে পরীক্ষা নিতে হবে। অভিভাবক মহল চান মেধার যথার্থ মূল্যায়ন করা হোক। এসব দাবীর সাথে নাগরিক সমাজ একাত্ম। কিন্তু সরকার এ দাবী মানতে নারাজ। সরকারের মতে প্রশ্নপত্র ফাঁসের মতো কোন ঘটনা ঘটে নাই। অভিযোগ রয়েছে দুর্নীতিবাজেরা এই অপ-কর্মের মধ্য দিয়ে অনেক টাকা হাতিয়ে নিয়েছে, শুধু তাই নয় এই টাকা বহু স্থানে বন্টিত হয়েছে। জনগণের ধারণা এটাই।
একটি জাতির মস্তিষ্ক হচ্ছে শিক্ষা। ‘একটি জনগোষ্ঠির উন্নয়ন ও বিবর্তনে , একটি জাতির সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও মানবিক উন্নতিসাধনে শিক্ষার কোন বিকল্প নাই।’ ভাষা আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা এবং প্রথম শহীদ মিনারের অন্যতম নকশাকার ডাঃ সাঈদ হায়দারের এই উক্তির সূত্র ধরে বলতে হয় শিক্ষাক্ষেত্রে যে কোন ধরণের ত্রুটি বিচ্যুতি জাতিকে পিছিয়ে দেয় অনেক দূর। আজ বাস্তবতার নিরিখে মনে হয় আমরা পিছনের পথেই হাঁটছি। পাবলিক পরীক্ষায় পাশের হার বেশী দেখাতে হবে, পরীক্ষার নম্বর বাড়িয়ে দিতে হবে পরীক্ষকদের কাছে এই সব রাজনৈতিক নির্দেশনা সেই বার্তাই দিচ্ছে। খবরের কাগজে প্রকাশ পরীক্ষা না দিয়েও কোন কোন ছাত্র-ছাত্রী উত্তীর্ণ হয়েছে মর্মে ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। ‘কম্পিউটারে’র ভুল বলে উড়িয়ে দিলেও এই বিপত্তি থেকে আমরা মুক্তি পেতে পারি না। প্রয়োজন ত্রুটি দূর করে ফলাফল তালিকার শুদ্ধতা নিশ্চিত করা। সেই সাথে দায়িত্বপালনে অসতর্ক ব্যক্তিদের দায়িত্ব থেকে অব্যহতি দেওয়া । সে উদ্যোগ দৃষ্টিগোচর নয়। এভাবে বিদ্যা অর্জনের প্রতি শিক্ষার্থীদের অনীহার সৃষ্টি হচ্ছে।
শিক্ষা এখন হয়ে গেছে পণ্য। ব্যবসায়িক দিক হিসাব করেই প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ছাত্র-ছাত্রীদেরকে বিভিন্ন আশ^াস দিয়ে এসব প্রতিষ্ঠানে ভর্তির জন্য আহ্বান করা হয়। বে-সরকারী কিছু বিশ^বিদ্যালয় সম্পর্কে রটনা রয়েছে তারা ভর্তির জন্য ছাত্র-ছাত্রী ও অভিভাবকদেরকে আকৃষ্ট করতে কমিশনভিত্তিক ‘লবিষ্ট’ রাখে। পরীক্ষার সময়ও ছাত্র-ছাত্রীদেরকে ‘বিশেষ সুবিধা’ দেয়। এসব বিশ^বিদ্যালয়ের কোন কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয় এসব ‘লবিষ্ট’ ও স্থানীয় ‘গুন্ডা প্রকৃতির’ লোকজনের সাথে ঘনিষ্ট যোগাযোগ রাখার জন্য। এভাবে ছাত্র-ছাত্রীদের ভর্তি করা হয় এবং বিশ^বিদ্যালয়ে কোন বিক্ষোভ দেখা দিলে এসব ‘গুন্ডা প্রকৃতির’ লোকদের কাজে লাগিয়ে তা দমন করা হয়। শিক্ষা ক্ষেত্রে কোন অনিয়ম, অনৈতিকতা ও ত্রুটি দৃশ্যমান হলে তা দূর করার জন্য ছাত্র-ছাত্রী বা অভিভাবক মহল কর্তৃপক্ষকে উদ্যোগ নিতে বললে তাদের বিরুদ্ধে এসব ‘গুন্ডা প্রকৃতির’ লোকদের লাগিয়ে দেওয়া হয়। ফলে ঐসব ছাত্র-ছাত্রীদেরকে অকালে ঐ বিশ^বিদ্যালয় থেকে বিদায় নিতে হয়, না হয় মুখ বুজে ঐ সকল অনিয়ম, অনৈতিকতা ও ত্রুটি মেনে নিয়ে তা সহ্য করতে হয়। স্থানীয় ‘গুন্ডা প্রকৃতির’ লোকদের সন্তুষ্ট করার জন্য তাদের মধ্য থেকে মোটামুটি শিক্ষাগত যোগ্যতা সম্পন্নদেরকে শিক্ষক পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। কাউকে কাউকে কাজের সময়ে নগদ নারায়ণের মাধ্যমে খুশী করা হয়। এদেরই প্রভাবে স্থানীয় বিবেচনায় ছাত্র হিসাবে ভর্তি করা হয়। পরীক্ষার সময় এদেরকে প্রশ্ন সরবরাহ করা হয় ‘পরীক্ষা সমূহের নিয়ন্ত্রক’ দফতর থেকে। একজন প্রবীণ শিক্ষাবিদ সম্পর্কে জানা গেছে কর্মজীবনে তিনি শিক্ষকতার পাশাপাশি পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ সংশ্লিষ্ট পদে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। একাজ করে তিনি অত্যন্ত সুনামের অধিকারী হয়েছেন। সরকারী চাকুরী থেকে অবসর গ্রহণের পর তিনি একটি বে-সরকারী বিশ^বিদ্যালয়ে ‘ভারপ্রাপ্ত পরীক্ষা সমূহের নিয়ন্ত্রক’ পদে বরিত হলেন। নীতিবান এই শিক্ষাবিদ বুঝতে পারলেন তাঁর দফতর থেকেই গোপনে প্রশ্নপত্র ফাঁস হচ্ছে। তাঁর অধীনস্থ কর্মকর্তা এবং একজন শিক্ষক পরস্পর যোগসাজসে প্রশ্নপত্র ফাঁস করছে। এই শিক্ষক স্থানীয় ‘গুন্ডা প্রকৃতি’র লোকদের সহচর। কোথায়ও চাকুরীর দরখাস্ত দাখিল করার যোগ্যতা তার নাই তবে এই বিশ^বিদ্যালয় থেকেই সে ¯œাতকোত্তর ডিগ্রি পেয়েছে, সেটাও ঐ গুন্ডা প্রকৃতির লোকদের সাথে সংশ্লিষ্টতার বদৌলতে। এই ডিগ্রির বলে কোথাও চাকুরীর দরখাস্ত দিলেও তাতে কোন কাজ হয় নাই। অগত্যা যে বিশ^বিদ্যালয়ের ডিগ্রি সেই বিশ^বিদ্যালয়েই একই প্রভাবে চাকুরী লাভ। প্রবীণ শিক্ষাবিদ প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা জানতে পেরে যারপরনাই দুঃখিত ও ক্ষুব্ধ হলেন। তিনি বিশ^বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানালেন। কিন্তু নীতিবাগীশ কর্তৃপক্ষ এই প্রসঙ্গে সব নীতিকথা ভুলে গেলেন। স্পষ্ট হয়ে গেলো এই গুন্ডা প্রকৃতির স্থানীয় লোকদের প্রতিভ’দের কাছে কর্তৃপক্ষ ‘অসহায়’। এই অবস্থায় ‘ভারপ্রাপ্ত পরীক্ষা সমূহের নিয়ন্ত্রক’ কোন পদক্ষেপ নিতে পারলেন না। তিনি প্রতিনিয়ত বিবেকের তাড়নায় দংশিত হতে থাকলেন।পরিস্থিতি কিন্তু এখানেই থেমে থাকে নাই। তাকে হেনস্থা হতে হলো গুন্ডা প্রকৃতির ঐ সব শিক্ষক ও কর্মকর্ত্া পদধারীদের কাছে। তাঁর ধর্মীয় বিশ^াসের বিষয় টেনেও গালি শুনতে হলো। এসব বিষয়ে কর্তৃপক্ষ নির্বিকার। কথায় বলে, ‘ নিজের মান নিজে রাখ, কাটা কান চুল দিয়ে ঢাক।’ আত্মমর্যাদা সম্পন্ন শিক্ষাবিদ মর্মাহত হলেন। সিদ্ধান্ত নিলেন বিদায় নেবার। কর্তৃপক্ষের উদ্দেশ্য পূর্ণ হলো। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা যে দ্রুত গতিতে অধঃপতনের দিকে ধাবিত হচ্ছে এই সব ঘটনাবলী তার জ¦লন্ত উদাহরণ। কিন্তু প্রতিকার কোথায় ? ‘বিশ^বিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন’ এ সব বিষয়ে পদক্ষেপ নেবার এখতিয়ারসম্পন্ন হলেও, তারা এসব বিষয়ে নির্লিপ্ত।
যে কোন পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস হলে ঐ পরীক্ষার মাধ্যমে মেধা যাচাই হয় না। যার কারণে ঐ পরীক্ষার গ্রহণযোগ্যতা থাকে না। সে জন্য সংশ্লিষ্ট পরীক্ষা পুনরায় গ্রহণ করাই বাঞ্ছনীয়। এর আগে পরীক্ষার দায়িত্বপ্রাপ্তদেরকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দিয়ে পরীক্ষার গোপনীয়তা ও পবিত্রতা হেফাজত করতে সক্ষমদেরকে দায়িত্ব আরোপ করাই উচিত। এদেশে প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা শত বৎসর আগেও ঘটেছে, কিন্তু তা কখনো রাজনৈতিক আলোচনা বা বিতর্কের সৃষ্টি করে নাই। দায়িত্বপ্রাপ্ত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষই ঠিকমতো পদক্ষেপ নিয়ে সমাধান করেছেন। পরীক্ষার ফলাফলের অগ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ হয় নাই। প্রসঙ্গক্রমে ফিরে দেখি বৃটিশ আমলের দিকে। শিক্ষাবিদ সদরউদ্দীন আহমেদের জীবনকথায় তিনি প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়া সম্পর্কে বলেন, “ ১৯১৮ সালে ম্যাট্রিকের প্রশ্ন ফাঁস হওয়ার কারণে ছাত্রদের তিনবার পরীক্ষা দিতে হয়। এই অনভিপ্রেত ঘটনায় বিশ^বিদ্যালয় বিব্রত বোধ করে এবং বিস সাহেবকে ‘কন্ট্রোলার অব এক্সামিনেশন’ এর গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়ে আসে। শুনলাম প্রশ্নপত্র নাকি আন্দামান দ্বীপে ছাপা হয়েছিল বলে ঐ বিপত্তি। একই পরীক্ষা তৃতীয়বার অনুষ্ঠিত হয়। আমার স্ত্রীর ছোট ভাই মফু ( পরে মেজর ডা. এম. এম. হোসেন ) সেইবার ম্যাট্রিক পাশ করলো। ”
আজকে স্বাধীন দেশে আমরা কি করছি। মেধাবী সন্তানেরাই চিকিৎসা বিজ্ঞানে অধ্যয়নের সুযোগ পায়। অভিভাবকেরাও তাদের পোষ্যদেরকে চিকিৎসা মহাবিদ্যলয়ে ভর্তি করাতে পারলে আশ^স্ত ও নিশ্চিন্ত হন। এই ভর্তির বিষয়টা আগে সংশ্লিষ্ট ‘চিকিৎসা মহাবিদ্যালয়’ নিয়ন্ত্রণ করতো। তখন কিন্তু ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে কোন অভিযোগ কোন মহল থেকেই উত্থাপিত হয় নাই। কেন্দ্রীয়ভাবে এই পরীক্ষা নিয়ন্ত্রিত হওয়ায় রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের অভিযোগ এসে যাচ্ছে। বিত্তশালী ও প্রভাবশালীদের বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্তির অভিযোগও এসেছে। অভিযোগের সত্যাসত্য নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও জনগণের ধারণা কিন্তু অভিযোগের পক্ষে। এবার ব্যাপকভাবে অভিযোগ এসেছে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস সম্পর্কে। যারা অভিযোগ উত্থাপন করেছেন তারা প্রমাণপত্রও হাজির করেছেন। জনগণ বিশ^াস করেছে এই অভিযোগ সত্য বলে। দায়িত্বশীল এবং জনগণের কাছে সম্মানিত শিক্ষাবিদসহ সম্ভ্রান্ত নাগরিকগল এই অভিযোগের সত্যাসত্য যাচাই করার আহ্বান জানিয়েছেন। অভিভাবক মহল এবং পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী ছাত্র-ছাত্রীগণও একই দাবী জানিয়েছেন। এই দাবীর সাথে একাত্ম হয়েছে ‘চিকিৎসা মহাবিদ্যালয়ে’ বিভিন্ন বর্ষে অধ্যয়নরত ছাত্র-ছাত্রীগণও। যে ছেলে, যে মেয়ে কখনো কোন মিছিল বা সমাবেশে অংশ নেয় নাই তারাও নেমে এসেছে রাজপথে। পুলিশ এই মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে শোভন আচরণ করে নাই। তারা এই ছাত্র-ছাত্রীদেরকে মিছিল ও মানব-বন্ধন থেকে সরে যেতে বলেছে, নিষেধ করেছে ভবিষ্যতে এরূপ মিছিল ও মানব-বন্ধনে অংশ গ্রহণ করতে। সেই সাথে আরো বলেছে নিষেধ না মানলে মামলার আসামী করা হবে। মনে কষ্ট নিয়ে তারা ফিরে গেছে মায়ের আঁচলের তলে। তাদের দিন কাটছে দুঃসহ মনোবেদনা নিয়ে। তারা ভাবছে মেধাবী হওয়াটাই তাঁদের অপরাধ কি না। তাদের মনে প্রশ্ন এদেশে কি মেধাবীদের কদর হবে না। এসব ধারনা ও প্রশ্নের উদ্ভব বিনা কারণে হয় নাই। পরীক্ষার আগে এদের অনেকের কাছে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল নির্ধারিত অর্থের বিনিময়ে প্রশ্নপত্র সংগ্রহ করার। নীতি ও নৈতিকতার প্রতি আস্থাশীলতার কারণে তারা এসব প্রস্তাবে রাজি হয় নাই। পরীক্ষার পরে তারা ভাবছে প্রস্তাবদাতাদের কাছে প্রশ্নপত্র ছিল। অভিভাবদের অনেকেই বলছেন তাদের কাছেও একই রূপ প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। বলা হয়েছিল ‘মূল সনদ জমা রেখে নির্ধারিত অর্থ পরিশোধ করলে প্রশ্নপত্র পাওয়া যাবে’। অর্থ চেকের মাধ্যমে বা নগদ দিতে হবে। এভাবে লেনদেন করলে অনেক ঝুকি আছে বিবেচনায় কেউ কেউ রাজি হন নাই, আরও বিবেচনা করেছেন নৈতিক দিক। এভাবে প্রশ্নপত্র সংগ্রহ করলে সন্তান বা পোষ্য ভবিষ্যত জীবনে নৈতিকতার মূল্যবোধ থেকে বিচ্যূত হয়ে যাবে এটাও অভিভাবকদের বিবেচনায় এসেছে। তাই তারা এপথে পা বাড়ান নাই। সারা দেশ থেকেই এরূপ তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। সে কারণেই ভর্তি পরীক্ষা এখন জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য ও বিশ^াসযোগ্য বলে বিবেচিত হচ্ছেনা। তাই এই বিষয়টা গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা উচিত ছিল। ‘চিকিৎসা মহাবিদ্যালয়ে ছাত্র-ছাত্রী ভর্তির দায়িত্ব ও নিয়ন্ত্রণেরত কর্তৃপক্ষ’ এসব অভিযোগ আমলে নেয় নাই। বিষয়টা রাজনীতির মাঠে গড়িয়েছে। বলা হয়েছে প্রশ্নপত্র ফাঁস হয় নাই। বিক্ষোভ প্রতিবাদ দুপায়ে দলে চটজলদি ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। এটাতে অভিযোগ সম্পর্কে জনগণের ধারণা আরো প্রকট হয়েছে। প্রশ্নবিদ্ধ এই ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের মাঝেও সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে। তাদের কেউ কেউ সম্প্রতি আর্মড ফোর্স চিকিৎসা মহাবিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে বলে প্রকাশ। এই সন্দেহ ও অবিশ^াসের কারণে বাংলাদেশের সরকারী চিকিৎসা মহাবিদ্যালয়ের ডিগ্রির গ্রহণযোগ্যতা ভবিষ্যতে ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে। এসব ডিগ্রি নিয়ে যারা বিদেশে উচ্চ শিক্ষা বা চাকুরীর জন্য যাবে তাদেরকেও বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হতে পারে। এসব দিক বিবেচনা করেই অভিযোগগুলোর সত্যাসত্য যাচাই করার পর ভর্তি কার্যক্রম শুরু করা উচিত ছিল। কিন্তু তা হয় নাই।
মেধাবীরা অবশ্যই দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান। তাদের মেধা বিকাশের সুযোগ ও পরিবেশ দেবার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। এরাই সংকটে দেশকে তা থেকে উত্তরণের পথ দেখায়। এরাই দেশের জন্য বিদেশ থেকে সম্মানের জয় মক’ট বয়ে আনে। এদের কারণেই দেশের মানুষ উন্নত জীবন যাপন করার পন্থা ও উপকরণ পায়। মেধাবী সন্তানেরা কোন বিশেষ পরিবারে জন্মগ্রহণ করতেও পারে আবার নাও পারে। তাই শিক্ষা হবে সার্বজনীন। এটা মানুষের জন্মগত অধিকার। আমাদের সংবিধান এই অধিকার স্পষ্ট ভাষায় স্বীকার করেছে। ধনী নির্ধন নির্বিশেষে এই অধিকার ভোগ করবে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার ধারাবাহিতায় উচ্চ ও পেশাগত শিক্ষার দ্বার সকলের জন্য থাকবে অবারিত। এটাই সংবিধানে বর্ণিত হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা-প্রসূত এই অধিকার যাতে এদেশের সকল সন্তান ভোগ করতে পারে তার উপযুক্ত পরিবেশ তৈরীর দায়িত্ব রাষ্ট্রের । রাষ্ট্রীয় কার্যক্রম পরিচালনা করেন সাংবিধানিক পদে আসীন ব্যক্তিবর্গ এবং এতে সহায়তা করেন প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োজিত কর্মকর্তা কর্মচারীবৃন্দ। তাঁদের সকলেরই জবাবদিহিতা আছে জনগণের কাছে, এর ব্যত্যয় ঘটানোর কোন সুযোগ নাই। আজ এই পরিবেশের অনুপস্থিতি দুঃখজনকভাবে পরিলক্ষিত হচ্ছে। একারণেই মেধাবী সন্তানেরা দেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছে বিদেশে। কেউ পড়াশুনা করতে, কেউ চাকুরী করতে। সরকারী চিকিৎসা মহাবিদ্যালয়ে ভর্তি নিয়ে আজ যে রটনা জনগণকে ক্ষুব্ধ করেছে তার সমাধান না হলে দেশ হয়ে যাবে মেধাশূণ্য। তখন এর ক্ষতিকর প্রভাব সবার উপরই পড়বে। দুর্দশায় পড়বে আগামী প্রজন্ম। সবাইকে এ বিষয়টা গুরুত্ব সহকারে ভেবে দেখতে হবে। ‘চিকিৎসা মহাবিদ্যালয়ে ছাত্র-ছাত্রী ভর্তির দায়িত্ব ও নিয়ন্ত্রণেরত কর্তৃপক্ষ’ এই পরিস্থিতিতে তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য নির্ধারণের সময় নিজেদের নয়, জনগণের স্বার্থকেই অগ্রাধিকার দেবেন এটাই প্রত্যাশা। মেধাবীদের বিকশিত করার জন্য জনমতকে অবশ্যই প্রাধান্য দিতে হবে। পুলিশের লাঠির গুঁতো আর মামলার ভয় দেখিয়ে আন্দোলন সাময়িকভাবে থামানো গেলেও এদের সুদূর-প্রসারী প্রভাব আগামী প্রজন্মকে ক্ষতিগ্রস্থ করবে। সময় থাকতেই এই দৃশ্যমান ক্ষতি থেকে আগাম সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। মনে রাখতে হবে ব্যক্তি বা পরিবার নয় জনগণের কল্যাণই হচ্ছে রাষ্ট্রীয় কর্মকান্ডের নিয়ন্তা। এর বিচ্যূতি ঘটিয়ে কোন ব্যক্তি বা পরিবার সাময়িকভাবে কিছু সুবিধা বা স্বাচ্ছন্দ্য পেতে পারে কিন্তু অবকাশের সময় উত্তীর্ণ হলে এরা হারিয়ে যায় জনগণের স্মৃতি থেকে। ইতিহাস এদেরকে ছুড়ে ফেলে ঘৃণিতদের তালিকায়, এদের প্রজন্মকে যাপন করতে হয় গ্লানিকর জীবন।
মেধাবী সন্তানদের উপযুক্ত পরিবেশে লালন ও বিকশিত করার ক্ষেত্রে বর্তমানে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নির্লিপ্ততা ‘জাতির সামাজিক , অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও মানবিক উন্নতিসাধন’ এর ক্ষেত্রে মারাত্মক প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করেছে। এই প্রতিবন্ধকতা আমাদের সরাতেই হবে। আমাদের সন্তানদের জন্য বাসযোগ্য পৃথিবী গড়ার দায়িত্ব আমাদের।
লেখকঃ সাবেক জেলা ও দায়রা জজ । বর্তমানে সদস্য বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট আইনজীবী সমিতি
এবং বে-সরকারী সংস্থার কর্মকর্তা।
©somewhere in net ltd.