নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

রোমেল রহমান এর ব্লগ

রোমেল রহমান

রোমেল রহমান › বিস্তারিত পোস্টঃ

গোরস্তানই কি তাহলে নিরাপদ আশ্রয়

১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ৮:৫১

মহাগ্রন্থ আল-কোরআন এ বলা হয়েছে ‘সকল সৃষ্টিকেই মৃত্যুবরণ করতে হবে’। মৃত্যু ও রূপান্তর এই সৃষ্টি জগতের অমোঘ বিধান। আমরা ইচ্ছা করলেই তা খন্ডাতে পারি না। মহাগ্রন্থে আরো বলা হয়েছে ‘... যদি এক জন অন্য জনকে হত্যা করে অথবা ভ’-মন্ডলে অশান্তি সৃষ্টি করে , তবে সে যেন সমস্ত লোককে হত্যা করিল ; এবং যে কাহারো জীবন-রক্ষা করে , তবে সে যেন সমস্ত লোকের জীবন-রক্ষা করিলো; এবং নিশ্চয়ই আমার রসুলগণ তাহাদের নিকট নিদর্শনাবলীসহ আগমন করিয়াছিল; বস্তুত ইহার পরেও তাহাদের মধ্যে অনেকে পৃথিবীতে সীমাতিক্রম করিতেছিল। যাহারা আল্লাহ ও তদীয় রসুলের সহিত সংগ্রাম করে এবং পৃথিবীতে অশান্তি-সৃষ্টি করিয়া বেড়ায়, নিশ্চয় তাহাদের শাস্তি এই যে, তাহাদিগকে হত্যা কর কিংবা তাহাদিগকে শূল-বিদ্ধ কর অথবা তাহাদের হস্ত-সমূহ ও তাহাদের পদ-সমূহ বিপরীত দিক হইতে কর্তন কর কিংবা তাহাদিগকে দেশ হইতে বহিষ্কার কর; ইহাই তাহাদের পার্থিব প্রতিফল এবং পরকালে তাহাদের জন্য বিষম শাস্তি রহিয়াছে। কিন্তু তুমি তাহাদের উপর শক্তিসম্পন্ন হইবার পূর্বে যাহারা ক্ষমা প্রার্থনা করে , তবে জান যে আল্লাহ ক্ষমাশীল ও করুণাময়’ ( সুরা মায়েদাঃ আয়াত ৩২ ও ৩৩)। গভীর দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে এর অন্তর্নিহিত মর্ম উপলব্ধি করতে হবে। বুদ্ধদেব বলেছেন প্রাণী হত্যা মহাপাপ। সকল দেশে মানুষের জীবন রক্ষার জন্য সুস্পষ্ট ও সুনির্দিষ্ট আইন প্রনীত ও প্রবর্তিত হয়েছে। মাতৃ গর্ভের শিশুকেও নিরাপত্তা দিয়েছে আইন। ভ্রুণের আকার ধারণ করার সাথে সাথেই আইন তার নিরাপত্তা বিধান করে। জন্ম গ্রহণের সাথে সাথে সে অর্জন করে অধিকার। বাংলাদেশের সংবিধান, দন্ডবিধিসহ প্রচলিত সকল আইনে মানুষের এই অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকে নিরাপদ রাখার দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে রাষ্ট্রের উপর। এটা বাস্তবায়ন করে সরকার। বাস্তবায়নে কোন ত্রুটি বা বরখেলাপ করলে আদালত উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করে। এই ধরণের ত্রুটি বা বরখেলাপ যারা করে তারা ‘অপরাধী’ বলে চিহ্নিত হয় এবং সাথে সাথে তাদেরকে পেতে হয় শাস্তি। প্রশাসন ও বিচার বিভাগের এই কার্যক্রমের ফলে মানুষের জীবন হয় শান্তিপূর্ণ এবং উপভোগ্য। যখন কেউ অপরাধ করে তখন তাকে খুজে বের করার জন্য রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন সংস্থা তৎপর হয়ে পরে। তাকে খুঁেজ বের করে চিহ্নিত করার সাথে সাথে তার সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ সমূহ সংগ্রহ করা হয়। এই সকল সাক্ষ্য প্রমাণাদি আদালতে উপস্থাপিত হলে অপরাধী আর শাস্তি এড়াতে পারে না। এসব দেখে শুনে সকলেই অপরাধ কর্ম থেকে দূরে থাকে। কিন্তু তারপরেও অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। সাক্ষ্য প্রমাণে বিঘœ ঘটিয়ে কোন কোন ক্ষেত্রে অপরাধীরা শাস্তি এড়িয়ে যেতে সক্ষম হচ্ছে। উপযুক্ত ও অকাট্য সাক্ষ্য প্রমাণ উপস্থাপিত না হলে আদালতের কিছুই করার থাকে না। অপরাধ ও অপরাধী সম্পর্কে উপযুক্ত তথ্য সাক্ষ্য প্রমাণ সমূহ সংগ্রহ করে তা বিচারকের কাছে উপস্থাপন করার দায়িত্ব রাষ্ট্রের । আগেই বলা হয়েছে রাষ্ট্রের উপর সাংবিধানিকভাবে অর্পিত এই সব দায়িত্ব পালন ও বাস্তবায়নের জন্য রয়েছে সরকার। ‘সরকার জনগণের দ্বারা , জনগণের জন্য , জনগণের মধ্য থেকে’ নির্বাচিত হয়। সরকারের নির্দেশিত কার্যক্রম সমূহ বাস্তবায়ন করে ‘প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীবৃন্দ’ । প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে মেধা যাচাই করে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের নিয়োগ দেওয়া হয়। তারা আইন অনুসারে কাজ করেন। জনজীবনের শান্তি শৃংখলা বজায় রেখে নাগরিকদের অধিকার সমূহ যথাযথভাবে ভোগ করার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করা তাদেরই দায়িত্ব। এ দায়িত্ব দক্ষতা ও সফলতার সাথে পালন করার মধ্যেই নিহিত রয়েছে সুশাসনের বীজ। প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের পরিচালনা করে সরকার। সরকারের নির্দেশনার বাইরে ‘প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের’ কিছুই করার থাকে না। দলীয় ব্যক্তি বা স্বজনদের ব্যাপারে আইনের প্রয়োগের ক্ষেত্রে শৈথিল্য প্রদর্শণের জন্য সরকার যখন কোন আচরণ করতে ব্যক্তভাবে বা ইংগিতে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের নির্দেশনা দেয় তখনই ঘটে বিপত্তি। শুরু হয় দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি। অবনতি ঘটে শান্তি-শৃংখলা পরিস্থিতির। জনজীবন হয়ে পড়ে বিপন্ন। নীতি ও নৈতিকতার প্রশ্নে প্রজাতন্ত্রের যে সকল কর্মচারী দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে এরূপ আচরণ করতে অপারগ হন তারা হয়ে যান একঘরে। মেধা দক্ষতা ও যোগ্যতা যতই থাক না কেন গুরুত্বপূর্ণ পদ ও দায়িত্ব থেকে তাদেরকে বিদায় নিতে হয়। তাদের চাকুরীতে ভবিষ্যতের উন্নতির পথ হয় ব্যহত। প্রজাতন্ত্রের সৎ ও বিবেকবোধ সম্পন্ন কর্মচারীগণ এরূপ পরিস্থিতিতে নিদারুণ মনোকষ্টে ভুগেন। তারা পারিবারিক ও সামাজিক ক্ষেত্রেও হয়ে যান করুণার পাত্র। অহরহ তাঁরা গঞ্জনা শুনতে থাকেন। কেউ সামনা-সামনি ব্যঙ্গ করে, কেউ আড়ালে। এই সব কর্মচারীদের নি¤œমানের মেধাসম্পন্ন, অপটু , দক্ষতায় অনুত্তম কর্মচারীগণের যারা গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসিয়ে দেয়, বিসর্জন দেয় বিবেকবোধ ও নৈতিকতা ; তারা তরতরিয়ে পদোন্নতির পর পদোন্নতি পেয়ে উচ্চ পদে আসীন হয়। এর কারণে জনজীবনে নেমে আসে অশান্তি, বিশৃঙ্খলা, শাসনহীনতা , নৈরাজ্য। প্রতিকার পাবার আইনসঙ্গত অধিকার থেকে বঞ্চিত হয় জনগণ।

আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকলে অপরাধ প্রবণ লোকেরা খামোশ থাকে। অপরাধ প্রবণ লোকদের কর্মকান্ডের প্রতি সরকার নির্বিকার থাকলে পরিস্থিতি হয় ভিন্নতর। তিনস্তরের নিরাপত্তা বলয় ভেদ করে যখন খুনীরা খুন করে নিরাপদে সটকে পড়ে এবং তাদের চিহ্নিত করতে ‘শৃঙ্খলা বাহিনী’ অপারগ হয় তখন মানুষ হতাশ হয়ে যায়। নাগরিকদেরকে নিরাপত্তা দেবার কেউ থাকেনা। অরাজক পরিস্থিতি জনজীবনকে গ্রাস করে। দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীগণ যতই আশার কথা শুনান না কেন, তাতে জনগণ স্বস্থিবোধ করে না। রাজধানীসহ সারাদেশে আমরা দুঃখ ও মর্মবেদনার সাথে লক্ষ্য করেছি রহস্যজনক অপরাধ সংঘটিত হতে। অপরাধীরা চিহ্নিত হচ্ছেনা, তাই ধরাও পড়ছে না। জনগণ তাদের জান-মাল-ইজ্জতের নিরাপত্তা নিয়ে শংকিত। তাদের মাঝে ‘প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী’দের প্রতি আস্থার সংকট দেখা যাচ্ছে। এই পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে জনজীবনে নেমে আসবে নিকষ অন্ধকার। তার আলামতই আমরা দেখতে পাচ্ছি। আমাদের ‘শৃঙ্খলা বাহিনী’র দক্ষতা ও কর্তব্যপরায়ণতা সারা দুনিয়ায় উচ্চ প্রশংসিত, তারা যখন দেশে দায়িত্ব পালন করেন তখন তাদের কর্মকান্ড দেখে জনগণ নিরব হয়ে যায়। এর কারণ কি ? তাদের কর্মতৎপরতা যখন অদৃশ্য হাতের ইংগিতে নিয়ন্ত্রিত হয় তখন তারা আর সামনে এগুতে পারে না। এভাবেই অপরাধীরা আড়ালে চলে যায়। সুষ্ঠু তদন্তের অভাবে আদালতে উপযুক্ত সাক্ষ্য প্রমাণ উপস্থাপিত হয় না। বিচার-কর্ম হয় ব্যহত। মানুষ এসব দেখে শুনে আস্থা হারিয়ে ফেলে সবকিছুর উপর। তাই আমরা দেখি পুত্র হত্যার বিচার চাইতে অনীহা প্রকাশ করেন ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের প্রথিতযশা অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক। সন্তানহারা এই পিতা নিঃসীম বেদনা নিয়ে , ক্ষোভে দুঃখে বলেন, ‘আমি বিচার চাই না।’ স্বাভাবিক অনুভ’তি সম্পন্ন মানুষ ব্যথিত মানুষের দুঃখে সমবেদনা প্রকাশ করে। সান্ত¡না দেয়। আমরা অবাক বিস্ময়ে দেখলাম ব্যথিত এই শিক্ষাবিদকে লক্ষ্য করে টিটকারী মূলক কথা বলা হলো। এরা রাজণ্যবর্গের লোক, প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীরা এদের দেখে থরথরিয়ে কাঁপে।

এধরণের মানুষের দাপটের উৎস কোথায়। ১৯৮৩ সালে গাজিপুরে বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ ময়েজ উদ্দিন নিহত হন। তিনি ছিলেন বাংলাদেশ রেডক্রসের চেয়ারম্যান। সারাদেশে দাবী উঠলো এই হত্যাকান্ডে বিচার করার। পুলিশ তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করলো। বিচার শুরু হলো। জনগণের মাঝে উৎকন্ঠা প্রকৃত খুনী চিহ্নিত হবে কিনা, উপযুক্ত সাক্ষ্য প্রমাণ আদালতে উপস্থাপিত হবে কিনা, আসল খুনী সাজা পাবে কিনা! এই যখন পরিস্থিতি তখন আকস্মিকভাবে ঢাকার দায়রা জজ আনিসুল হক চৌধুরী ইন্তেকাল করলেন। হয়তো এটা স্বাভাবিকভাবেই ঘটেছে, কিন্তু জনগণ ভেবেছে অন্য কিছু। জনান্তিকে এই মৃত্যু নিয়ে সংগোপনে অনেক আলাপ হয়েছে। কোন সুরাহা হয় নাই। আবার ১৯৯১ সালে খুলনায় খুন হলেন কমিউনিষ্ট নেতা রতন সেন। এই হত্যাকান্ডের বিচার চাইলো জনগণ। অনেক আন্দোলন সংগ্রাম দাবী দাওয়া পেশ হলো। তদন্তকারী কর্মকর্তা বাস করতেন বয়রাস্থ সরকারী কোয়ার্টারে। এই মামলার তদন্তের দায়িত্ব পাবার কিছু দিন পর থেকে তাঁকে দুশ্চিন্তাগ্রস্থ ও বিমর্ষ অবস্থায় তাঁর স্বজন , সহকর্মী ও প্রতিবেশীরা দেখেছে। সুস্থ এই মানুষটি একদিন আকস্মিকভাবেই ইন্তেকাল করলেন। এই মৃত্যু নিয়েও একই কথা বলতে হয়, মৃত্যু হয়তো স্বাভাবিকভাবেই হয়েছে কিন্তু জনগণ তা বিশ^াস করে নাই। উভয় মৃত্যুর গুরুত্বপূর্ণ কারণ হতে পারে নিদারুন মানসিক চাপ ও দুশ্চিন্তা। তাঁরা কি কারণে এই মানসিক চাপে পড়েছিলেন এবং দুঃশ্চিন্তাগ্রস্থ হয়েছিলেন তা আজো জানা যায় নাই। বীর মুক্তিযোদ্ধা জেনারেল আবুল মঞ্জুর ১৯৮১ সালে নিহত হন। দায়ের হয় হত্যা মামলা। বিচার শুরু হয়েছে দীর্ঘ দিন থেকে। এরই মধ্যে চৌত্রিশ বৎসর কেটে গেছে। বিচার এখনও শেষ হয় নাই। জনগণের মাঝে এ নিয়েও অনেক প্রশ্ন, অনেক কানাঘুষা। মুক্তিযুদ্ধের সময়ে মেজর ( পরবর্তীকালে জেনারেল) আবুল মঞ্জুর পাকিস্তান সেনা বাহিনীতে কর্মরত ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণের জন্য তিনি এবং কর্নেল আবু তাহের চলে আসেন ভারতে। সপরিবারে। জীবনের ঝুঁকি নিতে হয়েছিল তাঁদেরকে। তাঁরা এই বিপদের পরোয়া করেন নাই। তারা উভয়েই যোগদান করেন মুক্তিযুদ্ধে । দুজনেই সেকটর কমান্ডারের দায়িত্বপালন করেন সাফল্যের সাথে। তাঁদের বীরত্ব গাঁথাই ইতিহাসের এই অধ্যায়কে গৌরবজ্জ্বল করেছে। দেশের এই বীর সন্তানের হত্যার বিচার কেন থেমে থাকবে এভাবে! সম্প্রতি আসমা কিবরিয়া পরলোক গমন করেছেন। তিনি ‘শান্তির জন্য নীলিমা’ আন্দোলন করেছেন। প্রতি বৃহস্পতিবার ঢাকায় নীল শাড়ি পরে মানববন্ধন করতেন, তাঁর দাবী ছিল তাঁর স্বামী সাবেক অর্থ মন্ত্রী কিবরিয়া সাহেবের খুনের বিচার। ২০০৫ সালের জানুয়ারী মাসে এই হত্যাকান্ড ঘটলেও বিচার আজও হয়নি। এরই মধ্যে বেশ কয়েকবার সরকারের রদ-বদল হয়েছে। তা সত্ত্বেও আসমা কিবরিয়া দেখে যেতে পারেন নাই স্বামী হত্যার বিচার। জেনে যেতে পারেন নাই কবে নাগাদ এই বিচার শেষ হবে। এরূপ এন্তার উদাহরণ দেওয়া যায়। কিন্তু সমাধানের উদাহরণ কোথায়! জনগণের মাঝে ব্যাপক সন্দেহ এসবের পিছনে ভ’মিকা রয়েছে কালো হাতের। সে কারণেই প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের কাছ থেকে জনগণ তাদের প্রাপ্য সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এই কালো হাতকে চিহ্নিত করে তার দৌরাত্ম খর্ব করার জন্য প্রয়োজন রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও ঐক্যমত্য। প্রবল জনমত গড়ে উঠার কারণেই রীমা ( শহীদ সাংবাদিক নিজাম উদ্দিনের কন্যা) হত্যা মামলার আসামী মুনির, খুলনার এরশাদ শিকদার এর বিচার হয়েছে। রাজন্য ও অমাত্যগণ প্রয়োজন মনে করেছিলেন এসব খুনের বিচার করার। কিন্তু ১৯৭২ সালে প্রকাশ্যে পাবনা শহরের প্রাণকেন্দ্রে সংঘটিত আবদুস সাত্তার লালু হত্যা, পাবনা পৌরসভার জনপ্রিয় চেয়ারম্যান শেখ শহীদুল্লাহ বাচ্চু হত্যা, স্বনামখ্যাত সাংবাদিক শামছুর রহমান (যশোর) হত্যা, বহুল আলোচিত সাগর-রুনি হত্যা মামলা বিষয়ে ব্যপক জনমত গড়ে উঠলেও তদন্ত ও বিচারের গতি স্থির হয়ে আছে। তাই জনমত প্রবলভাবে গঠিত হলেও সব সময়ই সব খুনের বিচার হতে পারেনা। এই রাষ্ট্রীয় দায়িত্বপালনে সদিচ্ছা ও দৃঢ় আগ্রহ নিয়ে এগিয়ে আসতে হয় সরকারকে। কারণ রাষ্ট্রের দায়িত্ব পালন ও বাস্তবায়ন করে সরকার। সরকার পরিচালনার দায়িত্ব পালন করে রাজনীতিবিদগণ। রাজনীতিবিদগণ নির্বাচিত হয়েই সরকার গঠন করেন। জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্যতা না থাকলে কোন রাজনীতিবিদই জনপ্রতিনিধি হতে পারেন না। এরজন্য প্রয়োজন প্রাপ্ত বয়স্কদের অবাধ ভোটাধিকারের ভিত্তিতে নির্বাচন। সে অধিকারট্ওা আমরা হারিয়ে ফেলেছি। এভাবে হারাতে হারাতে আমরা কোথায় এসে দাঁড়িয়েছি। ঘরে নিরাপত্তা নাই, বাইরেও নাই।


জনজীবনের নিরাপত্তা বিধানের দায়িত্ব সরকারের। সরকারের সদিচ্ছা থাকলে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীগণ তাদের প্রজ্ঞা মেধা কর্মদক্ষতা দৃঢ়তা নিয়ে সকল রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে পারে। সুশাসনের সুবাতাস নাগরিক জীবনকে করে তোলে শান্তিময় স্বাচ্ছন্নময় স্ফ’র্তিময়। রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও দৃঢ়তার অভাব হলে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদেরকে করে দেয় নিষ্ক্রিয়। নাগরিক জীবনের আতংক ও হতাশার সৃষ্টি হয় এখান থেকেই। রাজন্য ও অমাত্যগণ যতই উচ্চকন্ঠে পরিস্থিতি স্বাভাবিক ও নিয়ন্ত্রণে আছে বলে জনগণকে আশ^স্ত করার চেষ্টা করুন না কেন বাস্তবতার আলোকে জনগণ তাতে আস্থা স্থাপন করতে পারে না। তারা শংকিত মনে জীবন যাপন করে। যে পরিবেশ সাংবাদিক নির্মল সেন ১৯৭৩ সালে বলেছিলেন ‘স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি চাই’ তার কোন হেরফের হয়নি আজও। ‘শৃঙ্খলা বাহিনী’র সদস্যদের হুংকার শুনে অপরাধপরায়নেরা তাদের অপরাধ-কর্ম থেকে নিবৃত্ত হয় না আবার জনগণও নিজেদেরকে নিরাপদ ভাবেনা। এই পরিস্থিতি যতক্ষণ বিরাজ করবে ততক্ষণ জনমনে উদ্বেগহীনতা রয়েই যাবে। রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও আন্তরিকতা প্রসূত নির্দেশনা পেলে ‘শৃঙ্খলা বাহিনী’ তাদের যথাযথ কর্মতৎপরতার মাধ্যমেই জনজীবনে আস্থার সৃষ্টি করতে পারবে। হুংকার দেবার দরকার হবে না। সে পরিস্থিতিতে অপরাধীরা সতর্ক হয়ে যাবে। জনগণকে গৃহে বা রাজপথে নিরাপত্তা দেবার জন্য কোন বাহিনীকে সতর্ক থাকতে হবে না। ‘শৃঙ্খলা বাহিনী’র সদস্যদের চাকুরী বদলী পদায়নের ক্ষেত্রে আইনানুগ কর্তৃপক্ষের বাইরে যদি কোন অদৃশ্য হাত সক্রিয় থাকে তাহলে তাদেরকে দিয়ে জনজীবনের নিরাপত্তা বিধান করা যাবে না। অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যাচ্ছে হত্যা মামলার আসামী দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছে, চাকুরী করছে। বিশেষ কোন আসামীর বিরুদ্ধে হত্যা মামলা প্রত্যাহারের জন্য সাংবিধানিক পদে অধিষ্ঠিত ব্যক্তি মানববন্ধনের আয়োজন করছেন। বিচার হতে বাধা কোথায় , নির্দোষ হলে তো সে বিচার প্রক্রিয়াতেই খালাস পাবে। রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার কারণে এরূপ ঘটনা ঘটে চলেছে। বিচারপ্রার্থী আতংকিত। নিরাপত্তার অভাব নাগরিক জীবনের পলে পলে। মাতৃগর্ভের নিষ্পাপ শিশুও ঘাতকের বুলেটের নিশানা থেকে নিরাপদ নয়। তা হলে নিরাপত্তা কোথায় ? গোরস্তানে ????
লেখক ঃ সাবেক জেলা ও দায়রা জজ । বর্তমানে সদস্য বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ঢাকা এবং বে-সরকারী সংস্থার কর্মকর্তা, রাজশাহী।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.