নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভাবতে ভালবাসি, সেই ভাবনা যদি কোনো ঘটনায় মিলে যায় তবে তাকে লিখতে ভালবাসি! সেই লেখায় যদি কেউ বিন্দুমাত্র উপকৃত হয় তবে তাতেই আমার খুশি, আমি লেখাকে ভালবাসি।

দর্পণের প্রতিবিম্ব

প্রেমিকার চিরশত্রু

দর্পণের প্রতিবিম্ব › বিস্তারিত পোস্টঃ

পরস্পর | শেষ পর্ব - পরস্পর

৩১ শে ডিসেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩০



"আমরা খুব কাছাকাছি চলে এসেছি। আর অল্প দুরেই আমাদের গন্তব্য শেষ! হাল ছেড়ে দিও না। আরেকটু কষ্ট কর। এত সাহস আর এত ধৈর্য্য নিয়ে এত সময় নিয়ে কত দূর পেরিয়ে এলে আর এত কাছে এসেও থেমে যাবে? এটা হতে দেয়া যায় না! ওই দূরে তাকিয়ে দেখ, জমিনের আরও একটা ঢেউ আসছে তোমার দিকে!" অজানা আওয়াজ বারবার তাগাদা দিচ্ছে বেঁচে থাকার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার জন্য কিন্তু চিনতে পারছে না তাকে কারণ চেহারা কাপড়ে ঢাকা! দূরে তাকিয়ে দেখে বড় বড় গাছপালা জমিন উপড়ে টন টন মাটির ঢেউ হয়ে ধেয়ে আসছে! পাশ থেকে আওয়াজ ধীরে ধীরে অস্পষ্ট হচ্ছে৷ নিজেকে বাঁচাতে আপ্রাণ চেষ্টায় দৌড়াতে শুরু করল সে। মুহূর্তেই দৌড় হাটায় রুপ নিল এবং হাটতে গিয়ে পা আগাতেই পারছে না! যেন মনে হচ্ছে কিছু একটার প্রবল শক্তিতে পা দুটো মাটিকে আঁকড়ে ধরে আছে৷ সর্বশক্তি খাটাতে লাগলো কিন্তু মুহূর্তেই পা অবশ হয়ে এল! এমন সময় আওয়াজ এল, "আনিকা.... আনিকা.... ধৈর্য্য ধর, সবঠিক হয়ে যাবে..!" আবারও আওয়াজ অস্পষ্ট হয়ে গেল। অবশ পা নিয়ে আবারও উঠতে চেষ্টা করলো কিন্তু পারলো না। চিৎকার দিয়ে উঠলো, "এলাহি.....!"
ঘুম ভেঙে গেল আনিকার। পানির পিপাসায় গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে আছে তার। পাশে তাকাতেই দেখে এলাহি বিছানায় নেই! ভয়ে হাত পা কাপা শুরু করল তার৷ কিছুটা অশ্রু জমা হল চোখে! চাদর বালিশ এদিক ওদিক ছুড়ে বিছানা থেকে নামলো। ডাকতে ডাকতে বাথরুমের দিকে আগালো, পেল না এলাহিকে! আরেক রুমে এসেই দেখে এলাহি ডাইনিং এর সামনে দারিয়ে আছে৷ দ্রুত গিয়ে এলাহিকে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করলো আনিকা! অপ্রস্তুত এলাহির হাতে থাকা গ্লাস পরে গেল চেয়ারে। "আরে আনিকা! কি হয়েছে?" এলাহি তাকিয়ে দেখে কপালের আশেপাশে ঘাম জমেছে! লম্বা চাপা নিঃশ্বাস জানান দিল আনিকা কাঁদছে! এলাহিকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে আনিকা৷ এলাহি জিজ্ঞেস করলো, "কি হয়েছে, কাঁদছিস কেন?"
আনিকার কান্না এলাহির বুকের ভিতরটা দুমড়েমুচড়ে দিয়েছে। আনিকার চোখ, গাল মুছে দিল সে৷ধীরে ধীরে বিছানায় বসালো আনিকাকে, এলাহি ছোট টুল নিয়ে আনিকার সামনে বসলো৷পানি এগিয়ে দিয়ে বলল, "খারাপ স্বপ্ন এসেছিল, তাই না?"
আনিকা হালকা ভাবে মাথা নারালো। গ্লাস রেখে আনিকার সামনে দারিয়ে কপালে চুমু দিয়ে বলল, "সরি, আর এমনটা হবে না, আমি আছি৷" এলাহি এক হাতে আনিকার মাথায় এবং আরেক হাত চুলে বুলাতে লাগলো৷মনে মনে বলতে লাগলো, "এভাবে আর কতদিন আনিকার ঘুমে দুঃস্বপ্ন আসবে? কালই আব্বা-আম্মাকে নিয়ে আসবো।" ঘড়িতে সময় তখন রাত ৩.৩৮ মিনিট। কিছুক্ষণপর আনিকাকে জিজ্ঞেস করল, "ভাল লাগছে এখন?"
"খুবই খারাপ স্বপ্ন এসেছিল, হাত পা অবশ হয়ে যাচ্ছিল৷সাথে খুব পানির পিপাসা।" আনিকার কথা শুনে এলাহি বলল, "তোর সকল প্রয়োজনীয়তাকে আমি তোর পায়ের সামনে এনে দিবো। একটু সুযোগ আর সময় দে আমাকে।"
আনিকা চাপা কান্নায় এবং এলাহির গালে দু'হাত রেখে বলল, "তুই আছিস, আমার আর কিছু চাওয়ার নেই। এভাবেই আগলে রাখিস।"
এলাহিও নিজের চোখ মুছে নিয়ে বলল, "শুয়ে পর, আমি আছি এখানেই।" আনিকার দু'হাত ধরে বসে রইলো এলাহি, তাকিয়ে দেখছে মাসুম চেহারার ঘুমে তলিয়ে যাওয়াকে৷ কিছুক্ষণপর সেও ঘুমিয়ে গেল।

একইদিন
সন্ধ্যা ৬.৪০ মিনিট,
জামশেদের পর নতুন একজন ওসি এসেছেন থানায়। নাম শুভ সেন। বেশ মজার মানুষ৷এলাহি ফুলের দোকানের ঘটনা জানালো তাকে৷ উপস্থিত অনেকেই "রোমান্টিক পুলিশ" সহ অন্যান্য আরও উপাধিতে আখ্যায়িত করলেন৷তিনি সবাইকে থামিয়ে দিয়ে বললেন, "বিষয়টা একটু সিরিয়াস৷ দোকান বন্ধের পর তাকে এখানে নিয়া এসো, জিজ্ঞাসাবাদ করি?"

ঘড়িতে তখন রাত ৯টা, গাড়িতে ওসি শুভ, এলাহি এবং ফুলের দোকানের মালিক বসা৷তিনি জানালেন, "আপনাদের নামে বিগত এক সপ্তাহ ধরে চাঁদা নিচ্ছে কয়েকজন!" ওসি শুভ সমস্ত ঘটনা শুনলেন। আশ্বাস দিলেন আগামীকাল থেকে তারা সবাই জেলে থাকবে। এলাহি জিজ্ঞেস করলো, "সেদিন আমি গোলাপের তোড়া নিয়েছিলাম, আসল দাম কত ছিল।" তিনি বললেন, "যে দামই হোক স্যার, সেদিন ভয়ে নেই নি আর আজ সেটা আপনাকে আমার তরফ থেকে উপহার৷" সেই সাথে অনেক দোয়া করলেন তিনি৷ ওসি শুভ তাকে বাসার একটু আগেই নামিয়ে দিলেন৷
ঠিকই পরেরদিন পুলিশের দল সেই বাজারে গিয়ে ঘন্টা খানেকের মধ্যে ১২জন সিন্ডিকেট এবং চাঁদাবাজদের ধরে থানায় নিয়ে গেলেন। পরের এক সপ্তাহ গোপালপুর বাজারে একদম ঠাণ্ডা। দরদাম একেবারেই স্বাভাবিক।


১০ই মার্চ,
সকাল ৮:৩৫ মিনিট,
"সকাল সকাল তুমি আমাকে এটা দিচ্ছো? কিন্তু কেন?"
ওসি বকুল জিজ্ঞেস করলেন রাজীনকে। রাজীন বলল, "স্যার চাকরির এই পাঁচ বছরে আমি সন্তুষ্ট ছিলাম না। কিন্তু যেদিন এই থানায় আপনি এসেছেন, সেদিন থেকে আপনার সাথে কাজ করে আমি খুব গর্ববোধ করি৷কিন্তু স্যার চাকরিটা ছেড়ে দেয়াই জরুরি আমার।"
রাজীনের কথা শুনে বকুল জিজ্ঞেস করলেন, "তুমি বেশ কোয়ালিফাইড একজন পুলিশ৷কিন্তু বিনা কারণ জেনে আমি তোমাকে ছাড়বো না৷।"
উপায়ন্তর না পেয়ে রাজীন বলল, "স্যার আমার বিয়ে এবং তারা চায় না আমি এই চাকরি করি৷"
বকুল একটু হেসে বলল, "ডাউট? সততা আর ঈমানদারীর উপরে?" "নাহ স্যার, এই পোষাকের উপর! উনারা এলাকার থানায় ব্যাপক হেনস্ত হয়েছেন।"
এভাবে অনেক কথা হল বকুল এবং রাজীনের মাঝে। কিন্তু তিনি চিঠিটা ফিরিয়ে দিয়ে বললেন, "ঠিক আছে, যা তোমাকে বললাম, সেটা একটু ভেবে নিও। দুই সপ্তাহ চিন্তাভাবনা কর। তারপর আমি তোমার চিঠিতে সাইন করবো। এবার বাসায় যাও, রাতে আমাদের চেকপোস্টে ডিউটি আছে।"

একেকটা দিন যায় এবং আরাফাত খেয়াল করতে থাকে তানজিলের চুপচাপ থাকা। প্রয়োজন ছাড়া কথা বাড়তি কোনো কথা বলে না, রাগারাগি করে না। সারাদিন রুমে বন্দী, ছাদেও যায় না গাছগুলোয় পানি দিতে৷ মাঝে একবার জিজ্ঞেস করেছিল, "রাজীন কিছু জানিয়েছে?" মলিন উত্তরে তানজিল বলেছিল, "সেদিনের পর থেকে আর কথা হয় নি৷ চিন্তা কর না, আমি ঠিক আছি।"
আরাফাত ছাদে গেলেন গাছে পানি দিতে। কিন্তু কোন গাছে পানি দিতে হবে এটা তিনি জানেন না তাই সব গাছেই পানি দিলেন। মনে মনে ভাবছেন ভুল করে ফেলেন নি তো!
একদিন বাজারের ব্যাগ নিয়ে বাজারে গেলেন। ফিরে এলেন বাজারের ব্যাগ নিয়েই কিন্তু বাজার থেকে কিছু কিনলেন না! তানজিলের মা জিজ্ঞেস করলেন, "আরে তুমি বাজার না করেই সারাদিন শুধু বাজারের ব্যাগ নিয়েই ঘুরঘুর করছো?"
তিনি শান্তভাবে জিজ্ঞেস করলেন, "তানজি কই?" "ঘুমাচ্ছে।" ব্যাগটা টেবিলে রেখে চলে গেলেন তানজিলের রুমে৷ চেয়ার টেনে বসলেন। খেয়াল করলেন তানজিলের নিষ্পাপ মুখটা! মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন আর চোখ ভেজালেন কান্নায়! কিছুক্ষণ পর তানজিল টের পেল বাবা কাঁদছেন৷ উঠেই জিজ্ঞেস করলো, "কি হয়েছে আব্বু? কাঁদছো কেন? আম্মু, আব্বুর কি হইছে? কাঁদছে কেন?" তার মা ও এলেন কিন্তু কারণ বুঝতে পারছেন না! চোখ মুছে তিনি বললেন, "রাজীনকে বল চাকরি ছাড়তে হবে না৷ সে যেমন আছে তেমনটায় আমি রাজি। বল এবার আমরা সবাই যাবো বাকি দিন তারিখ ফাইনাল করতে। আর দেরি করবো না।" আরাফাতের কথা শুনে কেঁদে দিল তানজিল এবং তার মা! তানজিল ভেবে পাচ্ছে না কি হল হঠাৎ! আরাফাত বললেন, "গাছগুলোতে পানি দিয়ে আয়, আমি খুজেই পাই নি কোনটা তোর লাগানো গাছ!"
তানজিল ফোন নিয়ে ছাদে চলে গেল। আর দেরি সহ্য হচ্ছে না। অনেকদিন কেউ কারো কণ্ঠ শোনে নি৷ কিন্তু ওপাশে রিসিভ হচ্ছে না। মনে মনে বলেই যাচ্ছে, "কলটা ধরেন, কোথায় আপনি।" চারবার কল করেও কল ধরলো না৷

একইদিন,
কক্সবাজার
কাগজ কলম সামনে নিয়ে বসে আছে রাজীন৷ পূর্বের চিঠি ছিড়ে আবারও নতুনভাবে দরখাস্ত লিখতে বসেছে সে। মনে মনে বলছে, "যেকোনো কিছুর বিনিময়ে হলেও আমি তানজিলকে ছাড়বো না৷ বাকিটা আল্লাহ ভরসা।" রাজীন খেয়াল করলো কয়েকবার ফোনে ভাইব্রেট হল! দেখলো তানজিলের কল তাও চারবার! একটু দেরি করেই কলটা ব্যাক করলো রাজীন কিন্তু রিসিভ হতে আর দেরি হল না। ওপাশ থেকে কাঁদতে কাঁদতে বলল, "আমার জীবনে স্বাগতম আপনাকে।" রাজীন বলল, "কিন্তু আমি যে চাকরি এখনও ছাড়ি নি?"
"ছাড়তে হবে না। আব্বু শর্ত থেকে সরে এসেছে! আমরা যাবো আপনার মামা-মামীর কাছে। দিন তারিখ বলে দিয়েন৷" বলেই ফোন কেটে দিল তানজিল৷ খুশির কান্নায় দুজনই বসে পরলো!


এলাহি বিছানায় শুয়ে শুয়ে চোখ বন্ধ করে গান শুনছে, রোমান্টিক গান। আনিকা এসে বলল, "কি রে এত রোমান্টিক গান শুনছিস?" চোখ খুলে আনিকাকে জিজ্ঞেস করলো, "ডান্স করবি?"
আনিকা তার পেটের দিকে ঈশারা দিয়ে বলল, "The last dance!" "কি বললি?"
"আ.. বা..ম মানে টেম্পোরারি।" বলেই এলাহিকে টেনে উঠালো। ধীরে ধীরে এক পা এক করে আগাতে লাগলো তারা। এলাহি জিজ্ঞেস করলো, "আজকের দিন কি স্পেশাল নাকি?" আনিকা কানে কানে বলল, "তো এই ডান্স কি জন্য আজ?"
এলাহি হালকা হেসে বলল, "ঘরে জায়গা কমে গেছে না?" "তুই আমার মেয়েকে নিয়ে একদমই মজা করবি না।" এলাহি বলল, "তো মেয়ে তোর একার?"
কিছুক্ষণ নিরবতা চললো দুজনের!
"জানিস? আজকের রাতও স্পেশাল।" এলাহি কারণ জিজ্ঞেস করলে আনিকা জানালো, "কারণ আমার জীবনে আপনি এসেছেন। আপনার কারণে আমি মাঝে মাঝে চিনির বদলে লবণ ঢেলে দিই চায়ে! তারপর ভুলে যাই তারকারিতে লবণ দিয়েছি কিনা, মাঝে মাঝে স্বাদও ভুলে যাই!" এলাহি বলল, "আরে! এতকিছু হয় তোর সাথে?"
"হুম, তারপর সারাদিন আপনার কথা ভাবতে থাকি! কখন বাসায় ফিরবেন আর কখন আপনাকে প্রাণভরে দেখবো!" এলাহি একটু লজ্জা পেয়ে বলল, "ছেলে মানুষ আমি নাকি তুই? আমার ভাবনা তোর কাছে গেল কিভাবে?" "আহ হা শোন না, প্রতিদিনই ভালবাসি বলি তারপরও হাজারটা দিনের অপেক্ষা এবং সেই দিনটা আজ, শুভ জন্মদিন প্রিয়৷" এলাহির মনে পরলো আজ তার জন্মদিন! সে ভুলে যায় নি কিন্তু এটুকু সময়ে ভুলে গিয়েছিল! একটু অশ্রু তার চোখে চলে এল৷ আনিকা আবারও বলল, "দিনটা একবারই আসুক কিন্তু তুই সবসময়ই আসিস। আমাকে অতীত থেকে নিরাপদ রাখা, আমার কষ্ট ভুলিয়ে দেয়া, নতুন মর্যাদা দেয়া আরও কত কি... আমার ওয়াদা তোর কাছে, যেটুকু হায়াত আছে, সেটুকু আমি তোর সাথে কাটাতে চাই, যেখানেই থাকিস আর যে অবস্থায় থাকিস, আমি সবসময় তোর বাহুতেই থাকতে চাই।" একটুপর আনিকা আবারও জিজ্ঞেস করলো, "কিরে, কথা বলছিস না যে?" এলাহি কান্না চেপে বলল, "ভালবাসি তোকে, খুব।"
"মুখ দিয়ে বলতে হবে না, আমি প্রতিনিয়তই কানে শুনতে পাই, চোখে দেখতে পাই এবং হৃদয় দিয়ে বুঝতে পারি তুই আমাকে ভালবাসিস প্রিয়। আজ থেকে এনামেই ডাকবো, এটাই সেভ থাকবে ফোনে, প্রিয়!"

শুক্রবার, ২রা এপ্রিল
রাজীনের মামা-মামীর সাথে দেখা করতে এসেছে তানজিলের পুরো পরিবার। মামী তানজিলকে বলল, "মা তুমি আমার পাশে বসো।" খুশি খুশি তানজিল বসে পরলো। আরাফাত বললেন, "ভাই-আপা, পূর্ববর্তী সাক্ষাতে বলা আমার কিছু শর্তের জন্য লজ্জিত এবং ক্ষমাপ্রার্থী।" মামা-মামী দুজনই বললেন, "এসব বলবেন না ভাই।" আরাফাত বললেন, "বাবা হিসেবে আজ আমি খুব খুশি৷ রাজীন, তুমি আমার এপাশে বসো।" রাজীন তার পাশে বসলো। তিনি রাজীনের হাত ধরে বললেন, "আমি খুবই ভাগ্যবান যে আমার মেয়ে তোমাকে পেয়েছে। তুমি যেমন আছো তেমনটাই থেকো।" তিনি রাজীনের মামাকে বলল, "ভাই-আপা, আমি আমার তানজিলের জন্য আপনাদের কাছে রাজীনকে চাচ্ছি। এবার আপনাদের মতামত জানতে চাই।" তানজিল আর রাজীন এবং এলাহি আর আনিকা একে অপরের দিকে মুচকি হেসে তাকালো!
রাজীনের মামা বলল, "আলহামদুলিল্লাহ, আমরাও আপনাদের প্রস্তাবে রাজি৷" আরাফাত রাজীনকে এবং মামী তানজিলকে আংটি পরিয়ে দিলেন।
এলাহি মিষ্টির প্যাকেট খুলে বলল, "আসেন সবাই খুশি শেয়ার করি আর মিষ্টিমুখ করি।"
বাসার বাইরে দারিয়ে আছে রাজীন এবং তানজিল। রাজীন বলল, "Congratulations, how do you feel about being Mrs Razeen?"
"যেমনটা আপনি অনুভব করছেন আপনার জীবনে আমি যুক্ত হওয়ায়!" আনিকা এবং এলাহি একটু কাঁশি দিয়ে এল। এলাহি বলল, "আরে তোর মামার বাড়ি তো বেশ বড়?" আনিকা বলল, "তোমাদের বিয়েতে আমাদের আশা হবে না। ছয় মাস আমার চলছে আর আপনাদের অনুষ্ঠান কম হলেও চার মাস?"
তানজিল বলল, "এমনটা হতেই দিব না। কি ঠিক না রাজীন?" "হ্যাঁ অবশ্যই, এলাহি তুই আমার ভাতিজাকে নিয়েই আসিস কিন্তু তখন সপরিবারে আসিস।"

বিকাল ৪:২৫ মিনিট,
আনিকা এবং তানজিল কিছু কেনাকাটা করতে বাজারে এসেছিল। এক ঘন্টার মত ঘুরাফেরা করেও কিছু কিনতে পারলো না তারা! তানজিল বলল, "এই গরমে আর কোনো দিন পেলে না কেনাকাটা করার? কিছু কেনা তো হল না উল্টা তৃষ্ণা লেগে গেল!"
"তাহলে চল কোনো রেস্টুরেন্টে বসি?" রেস্টুরেন্টের দিকে আগাতে থাকলো তারা৷ এমন সময় পিছন থেকে কেউ ডাকলো, "তানজিল? আসলেই তুই?"
তানজিল ঘুরে দেখলো মাইশা! কত বছর পর দেখা! তানজিল কিভাবে কথা শুরু করবে জানে না। মাইশা এসেই বলল, "ভাবি নি তোর দেখা পাবো! কোথায় ছিলি এতদিন?" তানজিল বলল, "আনিকা, পরিচয় করিয়ে দিই, স্কুল এবং কলেজে আমার বেস্ট ফ্রেন্ড মাইশা। আর মাইশা উনি আনিকা, আমার সবচেয়ে কাছের ফ্রেন্ড এবং বড় বোনের মত।" মাইশা কিছুটা অবাক হল তানজিলের কথা বলার ধরণ শুনে! তানজিলই জিজ্ঞেস করলো, "কেমন আছিস?" মাইশা কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলো। বলল, "কিছু বছর দেখা হয় নি কিন্তু এমন অচেনা তানজিল মনে হচ্ছে কেন আমার?" আনিকা তানজিলকে বলল, "তানজিল কেন তুই ফেলে আসা দিনের রাগ ক্ষোভ ওর উপর দেখাচ্ছিস? তাদের কোনো দোষ নেই।" তানজিল মাইশাকে বলল, "আমি তোর বাসায় গিয়েছিলাম, নতুন নম্বরও দিয়েছি কিন্তু তুই কোনো খবর নিস নি।"
"ফেলে আসা দিন, নতুন নম্বর কি বুঝাচ্ছিস আমার মাথায় আসছে না৷" আনিকা বললো, "সবই বুঝাচ্ছি, আসেন কোথাও বসি। তানজিল, আয়।"
মাইশার কথা প্রথমে তানজিল শুনলো৷ নিখোঁজ হওয়ার পর কি কি হয়েছে তাদের সাথে! তানজিল সেসব ঘটনা শেয়ার করলো না, এমনকি কাজলের ব্যাপারেও কিছু বললো না। শেষে মাইশা বলল, "আচ্ছা দোস্ত, আমি সরি তোর কাছে এবং বাসার তরফ থেকে। এখন বল কেমন আছিস? কি করছিস?"
"আমাকেও মাফ করে দিস। আর এখন আমি এনগেজড এবং তুই চিনবি তাকে। রাজীন, ওইযে তুই আর আমি কয়েকবার তার সাথে সৌজন্যে সাক্ষাৎ করেছিলাম?" এভাবে অনেক কথা তিনজনের মাঝে কিন্তু যা হল না সেটা হল কেনাকাটা!


প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে তানজিল প্রথমে রাজীনকে সুপ্রভাতের শুভেচ্ছা জানায়৷ দিন তারিখ সহকারে খাতায় লিখে রাখা ছোট ছোট লিখা রাজীনকে পাঠায় প্রতি সকালে একটা করে এবং টিক দিয়ে রাখে লেখায়। ভালবাসায় রঞ্জিত সেসব লেখা পড়েই রাজীন ফিরতি জবাব পাঠায়। মাঝে মাঝে অভিমান চলে দুজনের মাঝে কিন্তু এখন পর্যন্ত ঝগড়া হয় নি৷ তানজিল কয়েকবার ইচ্ছা করেই চেষ্টা করেছিল ঝগড়া করার কিন্তু রাজীন হেসে বলেছিল, "যা আপনি পারবেন না সেটা না করাই ভাল না?" ইচ্ছে করেই একটু আহ্লাদী হয়, মাঝে মাঝে আবেগী কিন্তু সবসময় প্রেমময় ভাব আদান-প্রদান হয় তাদের মাঝে৷ জীবনে কিছু পরিকল্পনা করে রেখেছে রাজীন সেসব শেয়ার করে তানজিলের সাথে৷ সেও নিজের ইচ্ছার কথা বলে। এভাবেই ধীরে ধীরে এগিয়ে আসতে থাকে বিয়ের দিন৷

শুক্রবার, ১৫ই জুন
বেশ সুন্দর বিয়ের অনুষ্ঠান করেছেন দুই পরিবার৷সাধারণ এবং সাধ্যের মাঝে আয়োজন। পাশাপাশি বসা রাজীন এবং তানজিল। কয়েকজন পরিচিত এবং আত্মীয়-স্বজন উপস্থিত৷ বাসার সামনের খোলা মাঠে বিয়ের আয়োজন৷ রাজীন তানজিলকে বলল, "সরি, আপনাকে এরচেয়ে ভাল আয়োজন করতে পারি নি।" উত্তরে সে বলল, "যা করেছেন এরজন্যেই শুকরিয়া। জীবনের কিছু সাধ-আহ্লাদ পূরণ হলেই খুশি আমি! কিন্তু শোনেন, ছবি তোলায় কোনো ছাড় দিব না কাল। আজকের জন্য যা ছিল একটু কমই সেটা।"
রাজীন বলল, "আচ্ছা এই আপনি তাপনি ছাড়েন, তুমি এখন থেকে?" তানজিল বলল, "ওকে, তুমি?"
রাজীন হেসে দিল! মানুষজনের দিকে তাকাতেই তার চোখ আটকে গেল একজনের চেহারায়! মনে মনে প্রশ্ন, "উনি আজ এখানে!"
ধীরে ধীরে রাজীনের দিকে এগিয়ে আসলো। বসা থেকে রাজীন উঠে দারালো। তিনি বললেন, "Many many congratulations!" এই বলেই দুজন হ্যান্ডশেক করলেন। তানজিলের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, "তানজিল, ভাল আছো?" তানজিল রাজীনের দিকে তাকালো! রাজীন বলল, "ধন্যবাদ এবং ক্ষমাপ্রার্থী কারণ আপনাকে জানাতে পারি নি!"
তিনি বললেন, "তুমি ভুলে যেতে পারো কিন্তু আরাফাত সাহেব ভুলেন নি! উনি দাওয়াত করেছেন। বললেন কামাল সাহেব আপনাকে আসতেই হবে, সপরিবারে! কোনো বাহানা চলবে না।" তিনি আবারও বললেন, "তোমাদের বৈবাহিক জীবন সুন্দর কাটুক এবং যা ভয় ছিল সব মুছে যাক।" বলেই চলে গেলেন আরাফাত এবং অন্যান্যদের সাথে কথাবার্তা বলতে!


কয়েকমাস পূর্বে,
মার্চ ১৯, সকাল ১০টা
"আপনিই ডেকেছেন এখানে? আপনাকে তো চেনা চেনা লাগছে! মনে হচ্ছে কোথাও দেখেছি, থানায়?"
"জ্বি, ঠিক ধরেছেন, সাবেক ওসি কামাল। গোপালপুর থানা।" কামাল উত্তর দিলেন আরাফাতকে৷ তিনি বললেন, "ওই পোষাক আপনাকে অনেক কষ্ট দিয়েছে? বিশেষ করে আমার মত কিংবা জামশেদের মত?"
আরাফাত বললেন, "আপনি যদি এসব জিজ্ঞাসাবাদ করতে আমাকে ডেকে থাকেন তবে আমি কিছু বলবো না।" "আরাফাত সাহেব, সততা আপনাকে ডুবিয়ে দিবে যদি আপনি ছাড়া অন্যকেউ সত্যটা জানে! একটু বসেন, একটা খারাপ পুলিশের সাথে জড়িয়ে যাওয়া কিছু মানুষের ঘটনা আপনাকে জানাই। তো শোনেন, নিজেকে চিনতে না পারা এক অফিসার টাকা আর ক্ষমতার পিছে ঘুরছিল। একদিন অযোগ্যতা কাবিলিয়তকে গলা চেপে ধরে নিজের অবস্থান বুঝিয়ে দেয়! শুরু হয় যোগ্যতার একের পর এক হামলা! সহজেই হেরে যায় টাকা আর ক্ষমতা! এসবের মাঝেই একটা মেয়ে নিখোঁজ হয়!"
এবার আরাফাত তাকালেন কামালের দিকে! তিনি বললেন, "দুর্বল চিত্তের হৃদয়কেও মাঝে মাঝে প্রাচীর হয়ে রুখে দাড়াতে হয়, আর সেই প্রাচীর? আপনি!" আরও মনোযোগ দিলেন কামালের ঘটনায়। কামাল একে একে সব বললো। কিভাবে, কোথায় মেয়েটাকে তুলে নেয়া হল এবং বলল, "সেই মেয়েটার নাম তানজিল আর সেই পুলিশ আমি, রাস্তায় অজ্ঞান এবং আহত এলাহি!" কামাল খেয়াল করলেন আরাফাতের মনোযোগ আছে৷ তিনি আবারও বলতে লাগলেন। একটু একটু করে অশ্রু চোখে জমতে শুরু হল আরাফাতের। তিনি বললেন, "আর শুনবো না।"
"তাই? তাহলে কিভাবে বুঝবেন মেয়ের ভিতরটায় কেমন তুফান চলছে? বসেন।" কামাল আবারও শুরু করলেন বাকিটা বলা৷ আরাফাত কেঁদেই ফেলেছেন। শেষে কামাল বললেন, "এ অবস্থায় ছিল আপনার তানজিল! রাজীন এবং এলাহি তাদের উদ্ধার করে এনেছে। নিঃস্বার্থভাবে আগলে রেখেছিল তানজিলকে আপনাদের কাছে পৌছে দেবে বলে। রাজীনের যতটুকু তানজিলকে দরকার তারচেয়ে বেশি তানজিলের প্রয়োজন রাজীনকে। নিঃসন্দেহে আপনি আরও ভাল ছেলে পাবেন কিন্তু কেউই রাজীনের মত হবে না। এভাবেই এলাহি আনিকাকে পেয়েছে, তারা পুরানো বন্ধু আর আজ জীবনসঙ্গী! আপনার সাথেও চলছে যোগ্য, অযোগ্য এবং টাকার ত্রিমুখী ধাওয়া!" একটু শ্বাস নিয়ে কামাল আবারও বললেন, "বিপদ এখনও যায় নি! কারণ সেদিনের ওই ঘটনার তদন্ত অজানা কারণে বন্ধ আছে৷ ভবিষ্যতে কি হবে সেটা পরের চিন্তা কিন্তু রাজীন ব্যতীত অন্য কেউ তানজিলকে পেলে এবং পরবর্তীতে জানলে ব্যাপক সমস্যা হবে! আমি জানতাম না আপনাদের বিষয়টা, এলাহিকে কল করেছিলাম, রাজীনের খোঁজ নিলাম আর সে বললো আপনি রাজী নন! আমার মনে হল একটা মেহেরবানি রাজীন এবং এলাহি আমার উপর করেছে এবার আমার পালা। কোনোদিন সুযোগ এলে এলাহির ঋণও শোধ করে দিব। আমি লিখে দিতে পারি রাজীন চাকরি ছেড়ে দেবে তানজিলকে বাঁচানোর জন্য৷ এবার আপনার সিদ্ধান্ত।"
সমস্ত ঘটনা একবার শুনে ফেলেছে আরাফাত যা দ্বিতীয়বার চিন্তা করাও প্রচুর বেদনাদায়ক! তিনি কেঁদে কেঁদে বললেন, "আমি তানজিলের সামনে দাঁড়াবো কিভাবে? সে তো আমায় মাফ করবেই না! এ আমি কি করলাম ওদের সাথে!" কামাল পানি এগিয়ে দিয়ে বলল, "আপনি শক্ত হোন৷ আপনার একটা ডিসিশন, সবকিছু ঠিক করে দেবে।" কেঁদে চোখ লাল করে ফেলেছেন এবং বললেন, "হায় আল্লাহ আমি বাসায় যাবো কিভাবে এখন!" কামাল তাকে ধরে দাড় করালেন। ধীরে ধীরে নিজের গাড়িতে নিলেন।
"আরাফাত সাহেব, শান্ত হোন। চোখ মুছে নিন। তানজিল বা আপনার স্ত্রী, কেউই যেন না জানে আপনি সব জানেন! না হলে তানজিল ভেঙে পরবে।"
কামাল তাকে বাসায় পৌছে দিলেন। আরাফাত নামার সময় বললেন, "অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। যা কিছু করেছেন অল্প সময়ের মধ্যে।"
পা চলছে না তার। সিড়ি দিয়ে উঠতেই মনে হচ্ছে পাহাড়ে উঠছেন! মনে মনে বললেন, "আমায় তানজিল পর্যন্ত পৌছাতেই হবে।"


বিয়ের অনুষ্ঠানে কামালকে দেখা মাত্রই এগিয়ে এসে জড়িয়ে ধরলেন আরাফাত। কুশলাদি বিনিময় হল বেশ হাসি মুখে! "আপনি এসেছেন এতে আমি খুবই খুশি হয়েছি! আবারও ধন্যবাদ আপনাকে।"
কামাল কিছুক্ষণ কথা বললেন দুজনের পরিবারের সাথে। এলাহি এসে বলল, "কামাল স্যার, আসেন এদিকে, থানার অনেকেই এসেছে আজ!" কামাল সেখানে গিয়ে দেখে বকুল শাহ! কামাল আর সামনে গেল না! বকুল সামনে এসে বলল, "কেমন আছিস?" কামাল কোনো উত্তর করলো না! তিনি আবারও বললেন, "একাডেমি থেকেই বলে আসছিলাম আমরা দুইজন ন্যায়ের পথে হাটি! কিন্তু তুই তো তুই!" এবার কামাল বললেন, "ন্যায়ই আজ আমাকে এখানে এনেছে!" পুরানো দুই বন্ধু একে অপরের সাথে কোলাকুলি করে নিল। অনেক কথা হল নিজেদের মাঝে। পরিচয় হল একে অপরের ছেলে-মেয়েদের সাথে। রাজীন মনে মনে ধরে নিয়েছে তাদের বিয়েতে কামাল নিশ্চিত কিছু অবদান রেখেছে এবং সেটা সত্যিটা বলেই৷ তাদের পুনর্মিলন দেখে নিজেই নিজেকে বলল, "এখন আমি কিভাবে আংকেলের সামনে দাড়াই!"

পরেরদিন,
"শুভ সকাল। পথচলার প্রথম সকালে আমিই তোমাকে প্রথম শুভেচ্ছা জানালাম।" পাশ থেকে একটা ফুল ছিড়ে তানজিলকে দিয়ে বলল রাজীন। রাজীনের হাতে হাত রেখে বলল, "এর আগে আমি তোমাকে প্রথমে শুভেচ্ছা জানাতাম তাই এবার তোমাকে সুযোগ দেয়া৷" রাজীন হেসে দিল। তানজিল বললো, "হায়! তোমার হাসিতে যদি সময়কে থামিয়ে দিতে পারতাম!!!"
রাজীন বলল, "ঠিক আছে এখন উঠে পর, আমাদের অনেক কাজ, ওপাশে আজ তোমার মা বাবা আর শ্বশুর শ্বাশুড়ি অপেক্ষা করছেন এখন থেকেই।
খাবার টেবিলে একসাথে আসলো তানজিল এবং রাজীন। মামা তাদের দেখেই বলল, "স্বাগতম বউমা, বসে পর একসাথে৷" মামী বললেন, "তুমি এসেছো এটা নিয়ে আমার ছেলে-মেয়েরা বেশ খুশি।" তানজিল জিজ্ঞেস করলো, "তাই বুঝি?" একাদশ শ্রেণিতে পড়া শিউলি বলল, "হ্যা ভাবি, রাজীন ভাইয়া তো একবার বের হলে আর আসে না কিন্তু আপনাকে এখানেই থাকতে হবে। ছোট ছেলে তারেক বলল, "আমিও বিয়ে করবো!" সবাই অট্টহাসি দিয়ে উঠল তারেকের কথা শুনে! তানজিল শিউলিকে বলল, "শোন শিউলি, আমাকে আপনি করে ডাকবে না, তুমি করে ডাকবে। ঠিক আছে?"

বাবার বাসায় এসে তানজিল বলল, "ছাদে যাবে? চল কিছু কথা বলি?" ঘড়িতে সময়ে দেখে নিল রাজীন আর বললো, "রাত ১০টা বাজে এখন! এত রাতে ছাদে?" "গল্প করতে ইচ্ছা করছে যে!" রাজীন বলল, "আমার কানে কানে বল, কেউ শুনবে না। লো ভয়েস।" গল্প শুরু হল দুজনের মাঝে। মনের আরও ইচ্ছা একে অপরকে জানালো৷ রাজীন বলল, "তোমার কাছ থেকে কিছু চাই আমি।" তানজিল বলল, "জান হাজির আমার জানের জন্য!" "তুমি জানো আমার ন্যাচার। একটু গম্ভীর, আনরোমান্টিক আর ওই প্র্যাক্টিকাল। আমি এসব থেকে বের হয়ে আসতে চাই৷ তোমার তরফ থেকে চাই সাপোর্ট, ধৈর্য্য আর ভরসা৷"
"যেটা তুমি সবসময়ই পাবে।" তানজিল বলল।
"এবং আরেকটা কথা, তুমি জানো আমার পদবি অনেক ছোট এবং আমার বেতন তার চেয়েও কম..." রাজীনকে থামিয়ে দিয়ে তানজিল বলল, "আমার যা জানার আমি জেনেছি৷ আমারও তোমার কাছে চাওয়া কেয়ার, সাপোর্ট৷ আর একটা চাওয়া!"
"হ্যা বল।" তানজিল বলল, "যেমনটা তুমি পূর্বে ছিলে, কেয়ার ফ্রি বা ভবিষ্যত নিয়ে ভাবতে না কিন্তু এখন তোমাকে কেয়ারফুল এবং বুঝে প্রতি কদম ফেলতে হবে। এখন তোমার জীবনে তানজিল জড়িয়ে আছে। সে তোমাকে ফুল সাপোর্ট দিবে। ভাবতে হবে ভবিষ্যৎ নিয়ে। কিন্তু এমন কিছু করবে না যেটায় আমি তোমাকে হারিয়ে ফেলি!"
"আমি বুঝি তোমাকে তানজিল, এব্যাপারে একজনের সাথে পরামর্শ করতে হবে। তানজিল জিজ্ঞেস করলো, "কে মামা?"
"না, বকুল স্যার। যেই থানায় আছি সেখানের ওসি। নীতিবান, নিষ্ঠাবান এবং সৎ ব্যক্তি। বিয়েতে দেখেছিলে, পরিচয় করিয়েছিলাম। পরবর্তী ট্রান্সফারের আগেই উনার সাথে পরামর্শ করতে হবে।"
তানজিল রাজীনের বুকে মাথা রেখে বলল, "ছুটি শেষ কবে?" "পরশু।" তানজিল বলল, "কত তাড়াতাড়িই শেষ হয়ে গেল একয়টা দিন! আবার ফিরবে কবে?"
"No idea! এক মাস, দুই মাস বা তারও বেশি বা পরের সপ্তাহ!"


অক্টোবর ১০,
দুপুর ২টা,
"অনেক অনেক অভিনন্দন আপনাকে, আপনি ফুটফুটে এক কন্যা সন্তানের পিতা হয়েছেন। মা এবং মেয়ে দুজনই সুস্থ আছেন। পাঁচ দশ মিনিটের ভিতরে আপনি দেখতে পাবেন৷" একজন নার্স এলাহিকে বললেন৷ কান্না এবং অশ্রুভেজা চোখ এলাহিকে কথা বলতে দিচ্ছে না! উপস্থিত আছেন এলাহির মা-বাবা। এলাহি জড়িয়ে ধরলেন তাদের। বাচ্চাকে দেখার অপেক্ষা আর সহ্য হচ্ছে কারো! কিছু সময় পরই তাদের ভিতরে যেতে বলা হল। এলাহি তার মা-বাবাকে বাচ্চার কাছে আগে পাঠালো। বেডের পাশে এসে আনিকার হাত ধরে তাতে কম্পিত ঠোটের স্পর্শ ও অশ্রুসিক্ত চোখে এলাহির জিজ্ঞাসা, "কেমন আছিস?" উত্তরটা শোনা হল না এলাহির কিন্তু আনিকার চোখের ভাষা সে ঠিকই বুঝতে পেরেছে! মনে মনে সে বলল, "এমন সাপোর্ট আর ভালবেসে আগলে রাখার জন্য আবারও ধন্যবাদ! শুকরিয়া মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে যিনি এলাহির মত দায়িত্বশীল স্বামী নসিবে রেখেছেন।" এলাহির মা বললেন, "এলাহি, মেয়েকে দেখ, কি সুন্দর হয়েছে! মাশাআল্লাহ! বাচ্চার কানে আজান দে।"
এলাহির বাবা তার নাতনিকে কোলে নিলেন। এলাহি শুরু করলো অশ্রুসিক্ত চোখে আজান দেয়া। শোকরানায় এভাবে ডুবে ছিল এলাহি কয়েকবার কণ্ঠ কেঁপে উঠেছিল। আযান শেষে এলাহি চোখ মুছে মেয়েকে কোলে তুলে নিল! বড় বড় স্বচ্ছ সুন্দর চোখ! লাল ঠোট এবং ছোট ছোট হাত পা! এলাহি যতবারই তাকায় ততবারই কেঁদে ফেলে! আবারও চোখ মুছে নিল। মা-বাবাকে জিজ্ঞেস করলো, "নাম কি রেখেছো?" বাবা বললেন, "আমার বউমা, আনিকা হামিদ যে নাম ভেবেছে সেনামেই আমরা খুশি, মরিয়ম হামিদ ইলা!"
"মাশাআল্লাহ, খুব সুন্দর নাম! এলাহি ভাই, আমার কোলেও দিন।" তানজিল বললো। এলাহি তানজিলের কোলে মরিয়মকে দিয়ে বলল, "আপনারা সবাই একটু অপেক্ষা করেন, আমি মিষ্টি আনছি!" এলাহি চলে গেল।
আনিকা ধীর আওয়াজে জিজ্ঞেস করলো, "তানজিল, পুরোনো কিছু মনে পরে? সেসব দিন? ভয়ে পাস এখন?" তানজিল হাসি মুখে বলল, "একদমই না, এমনকি এখনও না! রাজীন একটু কম কাছে থাকে তবে আমার সেসব দিন আর মনে আসে না।"

ডিসেম্বর ২১,
বিকাল ৫টা,
আজ সারাদিনে রোদের দেখা নেই। ঠাণ্ডা আজই বেশি চেপে বসেছে! বাসায় ঢুকতেই আনিকা ঘড়ি দেখে বলল, "আজ একেবারে কাটায় কাটায় কিভাবে আসলি?" এলাহি জিজ্ঞেস করলো, "আগে বল মা আর বাবা কোথায়?" আব্বু মাগরিব পড়েই আসবেন আর আম্মু মাত্রই পাশের বাসায় গেছেন৷" "আর আমার প্রিন্সেস?" "ঘুম!" ছোট শব্দে উত্তর! "আর তুই কি করিস?" আনিকা ভ্রু কুঁচকে বলল, "তোর বকবকানি শুনি!"
"আ.. আচ্ছা" এই বলেই দরজাটা চাপিয়ে দিয়ে আনিকার হাত ধরে নাচতে শুরু করলো। অপ্রস্তুত আনিকা বলল, "আরে আরে! কি করছিস? ছাড়, যেকোনো সময় আম্মু দেখে ফেলবে! ছাড়!" এলাহি বললো, "মানুষের জীবনে সুখ অল্প সময়ের! এই সময়টুকুও যদি বলিস ছেড়ে দিতে তাহলে কি হলো?"
"আচ্ছা ঠিক আছে তুই অন্তত এটা তো বল এত খুশি কেন আজ তুই?" আনিকার গালে একটু ঠেসেই চুমু দিয়ে বলল, "যা আগে চা বানা সবার জন্য, মা আসুক একসাথেই বলি! কারণ এরপর তোর হাতে মারও খেতে হবে!" গুনগুনিয়ে ভিতরে চলে গেল এলাহি! আনিকা মনে মনে বলল, "আরে আজব! কি এমন হল যে এত খুশি আজ!"

সন্ধ্যা ছয়টা,
তানজিল চা নিয়ে শিউলিকে বলল, "আসবো শিউলি? চা রেডি!" বই রেখে সে বলল, "আরে ভাবি, এভাবে জিজ্ঞেস করার কি দরকার?"
"বাসার সবাই খুব ভাল, আর সবচেয়ে বেশি ভাল তুমি! এজন্যেই এলাম গল্প করতে।" তানজিল খুশি মনে কথা বললেও শিউলি মলিন ভাবে বসে আছে। সে জিজ্ঞেস করলো, "কোনো সমস্যা শিউলি? মুড অফ মনে হচ্ছে কেন?" আবারও মলিন ভাবে বলল, "ভাবি, আমি কি তোমাকে বিশ্বাস করতে পারি?" তানজিল একটু মনোযোগ দিল। সে বলল, "শুধু বিশ্বাস না, তোমার যেকোনো সমস্যা আমি জাদু দিয়ে সমাধান করে দিব। বল কি হয়েছে?"
"ভাবি, তোমাকে কেউ প্রপোজ করছে?" তানজিল হেসে ফেললো। "হ্যা, তোমার ভাই!"
"না না ভাবি, এসব না। তুমি স্কুল কিংবা কলেজে পড়াকালীন।" তানজিল এবার থেমে গেল! কত চেহারা সুরত সামনে এল আর গেল! একজন তো বিশ্বাস বুনে দিয়েছিল যে জীবনের চেয়ে বেশি ভালবাসবে কিন্তু জীবনটাই তো উপড়ে দিয়ে চলে গেল! তানজিল হাসিমুখে বলল, "হ্যা পেয়েছি, প্রায় ১৫-২০টা!! স্কুল, কলেজ এবং এলাকা মিলে!" শিউলি বলল, "ভাবি এমন একজনকে আমিও পছন্দ করি কিন্তু সে ইদানীং...." সমস্ত ঘটনাই সে বললো৷ তানজিল বুঝেছে ধীরে ধীরে শিউলি সে পথেই যাচ্ছে! শিউলির মাথায় হাত রেখে বলল, "কিছু কিছু ভুল খুব বড় ক্ষতি করে দিয়ে যায়, তুমি ভাবতেও পারবা না এত বিশাল ক্ষতি! তুমি মাথা থেকে সেই ছেলেকে সম্পূর্ণরুপে ঝেরে ফেলে দাও! Trust me, life is so beautiful that you can't even imagine! আমি তোমাকে সম্পূর্ণ সাপোর্ট দিব কিন্তু তুমি এসবে যাবা না। কথা দাও!"
বিভ্রান্তিতে থাকা শিউলি কি করবে বুঝতে পারছে না৷ তানজিল আবারও বলল, "একটা কাজ কর, ওকে বল তুমি বিয়ে করবে তাকে, বিশ্বাস কর সে তোমার থেকে দূরে সরে আসবে, নানান বাহানা সামনে আনবে৷ তার ঈরাদা তুমি পরিষ্কার বুঝতে পারবে৷ সে শুধু সুযোগ খুঁজছে, বিশ্বাস কর।"


মরিয়মের ঘুম ভেঙেছে! এলাহি তাকে কোলে নিয়ে বসে আছে। আনিকা বলল, "এবার তো আমাদের জানাও!"
"হ্যা, মা বাবা এবং আনিকা, আমি কয়েকমাস আগে প্রমোশনের জন্য পরীক্ষা দিয়েছিলাম এবং ভাল খবর হচ্ছে আমি প্রমোশন পেয়েছি!" সবাই শুকরিয়া আদায় করলেন এবং মুবারকবাদ জানালেন এলাহিকে৷ এলাহি আবারও বলল, "আল্লাহর রহমতে আমি এখন এএসআই! এবার আসি আরেকটা কথায়, পদোন্নতির সাথে আমার ট্রান্সফারও হয়েছে!" মা বললেন, "বাবা তুই তোদের ভবিষ্যতের জন্য ভাল হয় কর।" এলাহি আনিকার দিকে তাকালো। মলিন মুখে একটা শব্দও বলছে না সে! একটু চাপা স্বরে বলল, "আমি রান্নাঘরে গেলাম।" চায়ের কাপগুলো নিয়ে চলে গেল আনিকা৷ মা জিজ্ঞেস করলেন, "আনিকা কিছু বললো না যে?" এলাহি বলল, "তুমি মরিয়মকে নাও আমি দেখছি!"
এলাহি রান্নাঘরে গিয়ে আনিকাকে পেল না! বারান্দায় এসে দেখে অঝোরে কাঁদছে! বিপরীতমুখী হয়ে দারিয়ে বলল, "আমাকে কি নারাজ মুখে বিদায় দিবি?" সে একটু করে চোখ মুছে নিচ্ছে! এলাহি তাকে সামনে দার করিয়ে বলল, "দেখ আমাকে, তাকা৷ কথা বলবি না আমার সাথে?" খুব কষ্টে আনিকা বলল, "তুই আমার গালে ঠোট ছোঁয়ালি কি আমাকে রেখে দূরে যাওয়ার জন্য? কি ভেবে এত আনন্দ তোর? দূরে যা, কথা বলিস না!" এলাহি একটু হেসে বলল, "আমি বলছি বদলি করছে কিন্তু কোথায় করছে এটা কি বলছি?" "মানে?"
চোখ জোড়ার অশ্রু মুছে দিয়ে বলল, "পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে। পাশের জেলায়! সবচেয়ে ইজি যাতায়াত, ট্রেন আছে। আর কাঁদিস না, তোর দুঃখ আমি নিয়েছি না?" চুপচাপ দারিয়ে আনিকার দিকে তাকিয়ে আছে এলাহি। জিজ্ঞেস করলো, "খুব ভালবাসিস আমায়, তাই না?" আনিকা কোনো উত্তর করছে না। এলাহির হাতে হাত রেখে নজর নামিয়ে দারিয়ে আছে৷ মুচকি হেসে এলাহি বলল, "মুখ দিয়ে বলতে হবে না, আমিও প্রতিনিয়তই কানে শুনতে পাই, চোখে দেখতে পাই এবং হৃদয় দিয়ে বুঝতে পারি তুই আমাকে ভালবাসিস প্রিয়!"

রুমে এসেই এলাহির মা বললেন, "আরে পাগল মেয়ে আমার, আমরা আছি না তোমার সাথে? ভয় কিসের?" কোনো ভয় নেই এটাই তো বড় ভয়! ভয় থাকলে সচেতন এবং আগাম প্রস্তুতি রাখা যায়! নির্ভয়েই হঠাৎ যত বিপদ আসে!



৬ বছর পূর্বে,

১২ই জুন,
রাত ১১টা
বৃষ্টিস্নাত রাত, চারপাশে গার্ড এবং নির্জন এক বাগান বাড়িতে অবস্থান নিয়েছেন কয়েকজন৷ খুবই গুরত্বপূর্ণ মিটিং চলছে তাই দরজার সামনে চারজন গার্ড দারিয়ে আছে। ভিতরে আছেন একজন এমপি!
"তো এরাই ওই এলাকা দখল করে আছে?"
"জ্বি হ্যা। এদেরকে সড়ানোর ব্যবস্থা কি?"
এমপি একজনকে ডেকে বললেন, "কেসটা নে আর টাকাগুলো গুনে আয়।" তারপর আবারও বললেন, "তালুকদার সাহেব, আপনার দুই ভাই নিজেদের ম্যান-পাওয়ারেই তো একে সরাতে পারেন?"
পাশে বসা হাওলাদার বললেন, "ভেজাল তো বাধায় কর্মীরা, তাই আমরা চাই মহাসড়কের দুই পাশ আমরা ভাই ভাই ভাগ করে রাজত্ব চালাবো৷ এত বড় এলাকা বারীর কন্ট্রোল থেকে সরাতে মিনিস্ট্রি পাওয়ার লাগবে।"
এমপি বললেন, "বুদ্ধিমান বিচার! তো আমার ফায়দা কি? যে টাকা দিলেন এটা পুড়িয়ে ফেললে এর আর কোন দাম নেই। এমন কিছু দেন যা আমি কাজে লাগাতে পারবো।" দুইভাই একসাথে বলে উঠলো, "সাপোর্ট!" হাওলাদার বললেন, "এলাকার এবং আমাদের! বারী আপনাকে যা সাপোর্ট দেয় তারচেয়েও বেশি!"
তালুকদার বললেন, "আপনার পাশে বসা ওসি জামশেদকে ওই থানায় ট্রান্সফার ইস্যু করে দেন। আর ওখানের ওসি কামালকে পুলিশের খাতা থেকেই বাদ দেয়া আমাদের হাতে ছেড়ে দিন৷"
হাওলাদার বললেন, "কামাল এবং বারীর মাঝে ফাটল ধরানো আমার কাছে ছেলেখেলার মতই৷ এতে আমরা নিজেও কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হব! তবে আংশিক ক্ষতিকে জলাঞ্জলি দিয়ে বৃহৎ মুনাফাকেই বেশি প্রাধান্য দিই আমি।"
এমপি বললেন, "আর এই প্ল্যানে যদি ১৯-২০ হয়ে যায়? ধরে নেন কেউ ছিটকে যায়?"
হাওলাদার বললেন, "ওপাশে বসা আইন কি জন্য আছে? মামলা আর মরার ভয়ে আম জনতা সবই করবে।" তালুকদার জামশেদকে বললেন, "ফাইল দুটো দিন।" তিনি আবারও বললেন, "এই ছেলদের ওই থানায় লাগবে। রাজীন মুবাশ্বির এবং এলাহি হামিদ।দুজন স্টাফ কম আছে সেখানে। সৎ এবং মেধাবী। এরা দিয়াশলাইয়ের কাঠির মত, আগুন জ্বালবে আর জ্বলবে কামাল এবং বারী!"
এমপি বললেন, "একটা কথা আপনাদের জানিয়ে দিই, আমার নাম যেন কোনোক্ষেত্রেই বা কোনোভাবেই বাইরে না আসে। আশাকরি বুদ্ধিমানের জন্য ঈশারা যথেষ্ট। আপনাদের কাজ হয়ে যাবে।"



সাগরের ঢেউয়ের আওয়াজ যে কারও মনকে প্রশান্তি দেয়। ক্লান্তিকে নিমেষেই গায়েব করে দেয়! যেখানে রাজীন দারিয়ে আছে সেখানে চর হয়ে আছে অথচ তার দুইপাশে কিছুটা পরেই হাটুপানি!
"তো এভাবেই আমাদের ভাগ্য ঘুরিয়ে দিয়ে নিজেদের ঈশ্বর ভাবা শুরু করেছিল তারা!" এলাহি বললো।
"আমরা সেসময় ব্যবহার হয়েছি৷ আসলে ভুল, ব্যবহার তো আরো আগে থেকেই হয়েছি৷ বোধশক্তি লোপ পেয়েছিল৷ প্ল্যানে ১৯-২০ না ১০-২০ হয়েছে তাদের যার জন্য একে অপরের জীবনের পিছে ছুটছে! তারা ভুলেই গেল একজন আছেন যিনি সকল কলকাঠি নাড়েন!" কামাল বললেন৷ "ভোট কেন্দ্রে হামলা তাহলে ভাই-ভাই মিলে করেছে! যাই করুক, ফায়েদা আমার হয়েছে কিন্তু অপূরণীয় ক্ষতিও হয়েছে! স্যার!"
"আহ রাজীন এখনও স্যার কি জন্য ডাকো? আমি এখন ছোট খাটো চাকরি করে বউ বাচ্চা নিয়ে বেশ আরামেই দিন কাটাচ্ছি৷ স্যার শব্দটা গালি মনে হয়৷" কামাল বললেন।
"আচ্ছা, কামাল সাহেব? হ্যাঁ ঠিক আছে! যা বলছিলাম, দুর্গম এলাকার থানাগুলোয় ট্রান্সফার করার কারণে ট্যাকটিক্স এবং এনডিউরেন্স ট্রেনিং আমার হয়ে গেছে। সামনে প্রমোশন পরীক্ষা। ইউনিট চেঞ্জ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি, দেখি হয় কিনা।" একটুপর এলাহি এসে বলল, "স্যার, আমি ব্যক্তিগতভাবে আপনাকে স্যালুট জানাতে চাই! প্লিজ!" রাজীনও তাই বললো। দুজনই সালাম জানালো! এলাহি বলল, "আপনি আমাদের চারজনের জন্য যা করেছেন সেসব ভুলে যাওয়ার মত নয়৷ সেসকল প্রমাণাদি এবং আপনার চৌকস মেধায় যা যা করেছেন তার জন্য চির কৃতজ্ঞ। আমি প্রতিদিনই ভয়ে থাকতাম, এই বুঝি আনিকা আমার থেকে দূরে সরে গেল!" রাজীন বললো, "আমি নিশ্চিত স্যার আপনিই আরাফাত সাহেবকে সত্যটা জানিয়ে আমার তানজিলকে বাঁচিয়েছেন। আমি কখনই বলতে পারতাম না!"
তারা দুজন কামালকে জড়িয়ে ধরলো আর কামাল বললেন, "বারীকে পেলে আমিও ধন্যবাদ জানাবো!"
হেসে উঠলো তিনজন। কামাল বললেন, "এএসআই এলাহি, এবার তোমার প্রোমোশন এবং পিতা হওয়ার ট্রিট দাও আমাদের! চল কোনো এক হোটেলে? নিরিবিলি কিংবা এখানের ধানসিঁড়ি?"

তারা সবাই জুতা হাতে নিয়ে হাটা দিল রাস্তার দিকে। খোশগল্প আর হাসাহাসিতে মেতে আছে সবাই। রোলারকোস্টারের মতন জীবনে কে ই বা জানবে সামনে আর কি আসবে জীবনে! তিন ক্ষমতাধর রাজনীতিবিদ এখন নিজেরাই নিজেদের শত্রুতে পরিণত হয়েছে! যেকোনো সময় হয়তো কেসটা আবারও চালু হতে পারে! বিপদ যায় না, বিপদ অপেক্ষা করে সঠিক সময়ের। আজ না হয় কাল সাবেক ওসি জামশেদকে কয়েক বছরের জন্য জেলে পাঠানো হবে! নিষ্ঠাবান সাহসী অফিসার বকুল শাহ অপেক্ষা করছেন তার ১২তম ট্রান্সফার লেটারের! কম বেতনের নতুন চাকরিতে কামাল তার ছোট ছোট অভাবগুলো কষ্ট করে পূরণ করছে৷ যেই তালিকা তিনি বানিয়েছিলেন, তাদের মধ্যে কিছু পরিবারকে তিনি রাতের আধারে একটা চিঠিসহ কিছু নগদ অর্থ দিয়েছেন। নিজেদের আরও স্বাবলম্বী করার চেষ্টায় তানজিলকে পুরোপুরি সাপোর্ট দিয়ে যাচ্ছে দুই পরিবার! এবং তানজিল পেরেছে শিউলিকে বিপদ থেকে ফিরিয়ে আনতে। এদিকে মেয়ে মরিয়মের সাথে হেসে খেলেই সময় যাচ্ছে আনিকার। বাচ্চাদের আওয়াজের কোনো তুলনা হয় না! তাদের হাত-পা ছোড়াছুড়ি, মুখের ভিতরে সবকটা আঙুল ঢুকিয়ে রাখাসহ আরও নানান কিছু আনিকা এবং এলাহি একসাথে বসে দেখে। আনিকা এখনও এলাহির সামনে ভালবাসার প্রতিযোগিতায় হেরে যায়! তানজিলকে ছাড়া ঘর খালিখালি লাগলেও আরাফাত উল্লাহ এবং শান্তা নাজনীন জানেন তানজিল আছে এবং হারিয়ে যাবে না৷


--- ধন্যবাদ | ভুল-ভ্রান্তি ক্ষমা করবেন ---

--- সমাপ্তি ---

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা জানুয়ারি, ২০২৫ দুপুর ১:১২

রাজীব নুর বলেছেন: শেষ পর্বটা অনেক বড় হয়ে গেছে।

০১ লা জানুয়ারি, ২০২৫ রাত ১০:৪৪

দর্পণের প্রতিবিম্ব বলেছেন: এজন্যেই একটু বিস্তারিত লিখলাম। পড়ার জন্য এবং মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ আপনাকে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.