![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
উত্তপ্ত গরম, এমন গরম যে বাস যদি থেমে থাকে তাহলে শরীর ঘেমে একাকার অবস্থা! যতক্ষণ বাস চলে, ততক্ষণ আরাম। যাত্রীরা পারছে বাসের সমস্ত জানালা খুলে রেখে দিতে এবং প্রতিটা ফ্যানেই ঝুলে পরতে! বাস থেকে নেমেও অফিসে পৌছাতে ১০ থেকে ১৫ মিনিট লেগে যায়। রিক্সা নেয়া যায়, তবুও নেই না কারণ আসতে যেতে এমনই একশো টাকা লাগে আর এখানে রিক্সা নিলে আরও ৪০ টাকা! সময়ের চেয়ে আমার কাছে টাকাটাই মুখ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে! অত্যন্ত গরমে অফিসে পৌছে দেখি লিফট বন্ধ! কেয়ারটেকার কে কারণ জিজ্ঞেস করলাম উনি আরও উল্টো আমাকে শাসিয় দিলেন কেন আমি লেটে এসেছি! কারণ আজ নাকি লিফট তাড়াতাড়ি বন্ধ হবে! কি আজব রুলস এই ভবনের!
সিড়ি দিয়ে উঠে অফিসে পৌছে দেখি আমাদের রুমের ফ্যান নষ্ট হয়ে আছে! এদিকে এমডি স্যার কোনো এক বড় কর্মকর্তার সাথে কথা বলছেন যার জন্য এদিকটায় আসতে পারছেন না। আর অফিসে এইচ আর বলতে কেউ নেই। খুবই দুর্বিষহ অবস্থা চলছে আজ।
যাই হোক, এক ঘন্টার মত সময় লেগে গেল এসব ঠিকঠাক করতে। এরপর স্যার আমাকে এবং রনি ভাইকে ডেকে ব্যাংকে যেতে বললেন। আজ বেতন হবে সবার। অফিসে একাউন্টস ডিপার্টমেন্ট সম্পূর্ণ অপারেশনাল। যাই হোক ব্যাংকে গেলাম এবং ম্যানেজার স্যারকে জানালাম এবং তিনি তার স্পেশাল কোটায়(কমান্ড) আমাদের টাকা রেডি করতে বললেন। আমি একটা কল রিসিভ করতে বাইরে এলাম। কথা শেষে একজন ভদ্রলোকের কথাবার্তা শুনতে বললাম। তাকালাম উনার দিকে, পোশাকে বুঝলাম উনি অত বড় কোন পজিশনে নেই এবং কনফার্ম হলাম উনার ফোনের কথা-বার্তায়। উনি এক ব্যাংক কর্মকর্তাকে বললেন, "স্যার, অফিস আমাকে শুধুমাত্র দুইঘন্টা সময় দিয়েছে ব্যাংকের জন্য, অলরেডি তিন ঘন্টা পেরিয়ে গেছে! এই দেখেন বারবার বসের কল, শুধু গালি খাওয়াটাই বাকি, প্লিজ স্যার একটু জলদি করেন।" খেটে-খাওয়া মানুষের মত না লাগলেও উনার আহাজারি উনার অসহায়ত্বের প্রমাণ দিচ্ছে! ধীরে ধীরে বুঝতে পারলাম আমরা সবাই কম বেশি অসহায়! যাক সেসব কথা, ব্যাংক থেকে বের হয় রনি ভাই বললেন, "চলেন রিক্সায় যাই!"
আমি বললাম, "আমার কাছে টাকা নাই ভাই, আপনার স্যার বিল এলাউ করেন না তাই তার সময় খাই আমি!"
তিনি বললেন, "আমার পকেট থেকে যদি দুইটাকা ও অফিসের জন্য খরচ হয় তবে আমি বিল করে দিই আর এজন্যেই আপনার স্যার আমাকে কোথাও সহজে পাঠাতে চায় না!"
আমার প্রতি রনি ভাইয়ের কথা-বার্তায় অনেক পরিবর্তন এসেছে! প্রথম প্রথম উনাকে চায়ের দাওয়াত দিলে কিংবা দুপুরে বাহিরে খেতে বললে উনি না বলতেন এবং প্রয়োজন পরলে বিনা খেয়েই অফিস করতেন! কিন্তু এখন তিনি তা করেন না। অন্তত আমি থাকলে উনার হাসিমুখ থাকে অফিসে। অফিসে আমার দিনগুলো শুধু মাস শেষে বেতন নেয়ার মত চলছিল। রনি ভাই বললেন, "ভাই, আপনি এখানে আপনার সময় নষ্ট কইরেন না, টাকা মুখ্য কিন্তু সময়ের কাছে টাকার কোনো দাম নেই! স্কিল আপ করেন অথবা অন্য চাকরিতে চলে যান।"
উনার কথা শতভাগ সঠিক। আমি শুরু করলাম এপ্লাই করা। খুব বেছে বেছে কয়েকটি জবে এপ্লাই করতে শুরু করি। এমনি একদিন রনি ভাই এসে বললো, "ভাই আমি রিজাইন লেটার দিয়েছি!" আমি অনেকটা অবাক হয়ে বললাম, "হুট করে এমন ডিসিশন?"
তিনি জানালেন হুট করে ডিসিশন নেন নি, অনেক আগে থেকেই চেষ্টায় ছিলেন বরং আজ আমাকে হুট করেই জানালেন। শেষে বললেন, "ভাই, ট্রেন স্টেশন থেকে অনেক দূরে চলে গেছে! আরও দূরে যাওয়ার আগে ট্রেন থেমে নেমে পরেন। যত দ্রুত নামবেন তত কম দেরি হবে!"
সকল ভুক্তভোগীদের মিলনায়তনের নাম অফিস। সবাই কোনো না কোনো ভাবে ভুক্তভোগী! এর এক সপ্তাহ পর তিনি বিদায় নেন। অফিসটায় এলেন নতুন এমপ্লয়ি। প্রথম দিন থেকেই শুরু করলেন বসকে তেল দেয়া। আমি পূর্বে বলেছিলাম, এই অফিসে আমরা সবাই কারও না কারো রেফারেন্সে এসেছি। যার ফলে অফিস কালচারে রয়েছে ব্যাপক তিক্ততা। শুধুমাত্র একটা বিষয় ছিল যেটা আমাদের সকলেরই ভাল লাগতো, সেটা হল এমডি স্যার কারো বেতন কাটতেন না, যেকোনো রকমের অনুপস্থিতিতে!
রোজার মাঝে একদিন ছুটির বিকেলে ইফতারের আগে, বন্ধুদের সাথে আড্ডায় বসে অফিস নিয়ে আলাপ করছিলাম সবাই। যে যার অফিস কালচার এবং কাজ নিয়ে কথা বলছিলাম। একমাত্র আমিই চুপচাপ বসে ছিলাম এবং সকলের কথার সাথে তাল মেলাচ্ছিলাম। কিন্তু ভিতরে ভিতরে অন্তর পুড়ে ছারখার হয়ে যাচ্ছে এমন অবস্থা! সবারই বেতন বাড়ছে, কিংবা জব সুইচ করে আরও ভাল পজিশনে যাচ্ছে। আমি হা হয়ে সেসব শুনছি। আমি তাদের সফলতায় মোটেও ঈর্ষান্বিত নই, আমার ভিতরটা শুধু বলছে কেন সেসব বুঝেও আমি এখনও চুপচাপ সেখানেই পরে আছি? যেই বন্ধুটা ক্লাসে কোনরকম পাশ করতেই হিমশিম খেত, তার অবস্থানও আমার চেয়ে ভাল! সেও আমাকে উপদেশ দিচ্ছে! রনি ভাই বলেছিল, "বেতন যার বেশি তার গুরুত্বও ততবেশি ভাই।" সেদিন ইফতার করে এক বন্ধুর কাছ থেকে বিশ ডলার ধার নিয়ে একটা কোর্স কিনলাম। সেদিন থেকেই শুরু করে দিলাম নিজেকে আরও দক্ষ করার। ঠিকমত পেরে উঠতে পারছিলাম না কারণ সময়ই পেতাম না। এরমধ্যে বেতন এবং ঈদ বোনাসের সময় এল। আমি মনে মনে খুশি কারণ প্রথমবারের মত একটু বেশি টাকা পাবো।
অফিসে ঢুকেই যেন ঈদ ঈদ আমেজ! কারণ আজ বেতন এবং বোনাস পাবো সবাই। ধীরে ধীরে সবাই একটা খাম নিয়ে হাসিখুশি বের হল। আমিও নিলাম কিন্তু খামটা আগের মতই পাতলা মনে হচ্ছে। বারান্দায় গিয়ে টাকা গুনে দেখি বোনাস নেই! বিকেলে একাউন্টটসে বিষয়টা জানালাম। তারা বললেন এমডি স্যারের সাথে কথা বলতে। আমি গেলাম এবং বিষয়টা জানালাম। তিনি বললেন, "তোমার চাকরির সময় কি ছয়মাস পার হয়েছে?"
"স্যার এই পাঁচ তারিখে শেষ হয়েছে। এবং ঈদ তো ২৪ তারিখে!" তিনি বললেন, "এই ঈদে বোনাস এপ্রুভ হয় নি, পরের ঈদে পাবে। আর তোমার রিপোর্টে আমি সন্তুষ্ট নই!"
বিলের পরিবর্তে বেতন কাটা হয় না এবং এরই সুবাদে আমি বোনাস পেলাম না! অফিসে একজনের আজই প্রোমোশন হয়েছে এবং ইনক্রিমেন্টে অনুযায়ী বোনাসও পেয়েছেন এবং আমার পরে আসা ইন্টার্ন উনাকেও স্যার বোনাস দিয়েছেন, শুধু আমি ছাড়া! উনার হিসেবে চাকরির বয়স ছয় মাস হয় নি তাই বোনাস পেলাম না।
রনি ভাইয়ের পরিবর্তে নতুন যিনি এসেছেন তিনি এসে বললেন, "ভাই আমরা সকলেই পিয়নদের অল্প কিছু টাকা বকসিস দিচ্ছি৷ আপনিও কিছু দেন৷"
মেজাজটা এতটাই খারাপ ছিল যে আমি সোজা বলে দিয়েছি, "এক পয়সাও দিবো না কাউকে, যান এখন।"
তিনি কি মনে করবেন বা করলেন আমি তাতে মোটেও মাথা ঘামালাম না। শুধু বাসায় ফেরার পথে বিখ্যাত কাচ্চি হাউস থেকে বাসার সবার জন্য বিরিয়ানি কিনে নিয়ে গেলাম। আর যাই হোক, এবার আর রিজাইন দেয়া বাদ যাবে না।
চলবে...
©somewhere in net ltd.