নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জানতে চাই ও জানাতে চাই

নীল জোসনা

তোমার খাতার প্রথম পাতায় লিখে দিলাম আলপনা আমার ছবি কইবে কথা যেদিন আমি থাকবোনা ।

নীল জোসনা › বিস্তারিত পোস্টঃ

`` সুমি নামের মেয়েটি ``

২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ১২:২৯

শ্যামলা লম্বা মেয়েটি লাজুক দৃষ্টিতে মেঝের দিকে তাকিয়ে কি যেন ভাবছে ।

কী ভাবছে ও ?

সদ্য ফেলে আসা বাডির কথা নাকি ওর মায়ের কথা ?

বোধহয় নতুন জিবনের স্বপ্ন সাজাচ্ছে খোলা চোখে । ওকে দেখে কেউ বলতেই পারবেনা যে আধঘন্টা আগে সে বাডি থেকে পালিয়ে এসেছে । বড বড ডাগর চোখে মায়াবী চাহনি । কথা ও বলছে সাবলীল ভাবে । যেন কত বার এসেছে এই বাডিতে । আমি কিছুটা অবাক কিন্তু বাদলের কথা ভেবে বেশ খুশি হলাম । যাক এতদিনে ছেলেটার গতি হলো । নিজেরা সংসার গুছিয়ে নিবে ।

ঘর পালানো বিয়ে যেমন হয় আরকি তেমন ই হলো । সাদামাটা ভাবেই বিয়েটা মিটল । সুমির বাবা নেই । মা , খালা, নানী সবার খুব আদরের মেয়ে ।

প্রথমে নানী খালা রা গাইগুই করলেও শেষ মেষ মেনেই নিল । তাছাডা বাদল ছেলে হিসেবে ভালো । পরিশ্রমী, ভাল ইনকাম করে । গ্রামে জমা জমি ও একেবারে কম না ।

এভাবেই ভালো মন্দে দিন গুলো কাটছিল ।

বছর পেরোতেই কোল জুডে ছেলে এল । কখনও সখনও বেডাতে আসতো আমার কাছে । গল্প করতো , দিলখোলা হাসিতে ভরে যেত চারদিক । যাবার বেলা অনুরোধ করতো ও যে এসেছে সেটা যেন বাদল না জানে । আমি সন্দিহান মনে প্রশ্ন করতাম - কেন ? আমার কাছে এসেছ তাতে সমস্যা কি ?

না মানে আমি কোথাও বাইরে যাই এটা সুমনের বাপ পছন্দ করেনা ।

সুমি হেসে কথা লুকোবার চেষ্ঠা করে ।

দু বছর পর সুমির আরেকটা বাচ্চা হলো । দুদুটোকে সামলাতে হিমশিম খায় সে । এক বিকেলে ভয়ংকর ঘটনার খবর এল ।

সুমি গ্যাসের চুলার আগুনে পুডে গেছে । বাচ্চা টাকে ভাডাটিয়া র কোলে দিয়ে নিজে চুলার আগুনে সেক দিচ্ছিল । বাচ্চাটার বয়স চল্লিশ দিন ও পার হয়নি । পা ও পেট কোমড সেক দেবার জন্য চুলার কাছে দাডিয়েছিল । অসাবধানে গায়ে আগুন লেগে গেল । এঘর ওঘর দৌডাতে দৌডাতে পা থেকে বুক পর্যন্ত পুডে গেল ।

খবর টা শুনেই বুকের ভেতর হিম হয়ে গেল ।

ঢাকা মেডিক্যালের বার্ন ইউনিটে যখন ওকে দেখতে গেলাম খুব কষ্ট হচ্ছিল ওকে দেখে ।

সারা গায়ে ব্যান্ডেজ বাধা । ব্যাথায় কোকাচ্ছে । হা করে খেতে পারে না বলে স্ট্র দিয়ে লিকুইড খাবার বৃথা চেষ্ঠা করে যাচ্ছে । গিলতে পারছিল না । শুধু বলছে যত কষ্টই হোক না কেন আমি আমার বাচ্চা দুটোর জন্য বেচে থাকতে চাই ।

ওর সামনে আর দাডাতে পারছিলাম না । দৌডে চলে আসলাম । ওকে কি বলবো আমি ।



পনের দিন নরক জ্বালা ভোগ করে বিদায় নিল হতভাগী । সব ব্যাথা , কষ্ট , জ্বালা সব শেষ । সবাইকে নিস্তার দিয়ে পরপারে পাডি জমালো সুমি ।



অবুঝ বাচ্চা গুলো বুঝতেই পারলো না কি হয়ে গেল । বড বাচ্চাটা কিছুদিন কান্নাকাটি করতো আর ছোট টা তো দুধের শিশু ।



সময় গডিয়ে দিন বছরে পরিনত হয় । জীবনের তাগিদে বাদল আবার বিয়ে করে ।

নিয়ম করে প্রতিবছর সুমির মৃত্যু বার্ষিকী পালন করে । প্যান্ডেল করে তেহারি রান্না করে মিসকিন খাওয়ায় ।

মিলাদের মোনাযাতে বাদল যখন চোখের পানি ফেলে তখন আমার ভেতরে এক অন্য আমি চিৎকার করে বলে উঠে ভন্ড, ভন্ড, ভন্ড ।

সুমি মরে গিয়ে বেচে গেছে । তোর ভন্ডামি তাকে দেখতে হচ্ছে না । কারনে অকারনে মার খেয়ে নীল হতে হচ্ছেনা ওকে । বেল্ট এর বাডি খেয়ে দাগ লুকোতে হয় না আর । শরীর এর এমন সব জায়গায় মারের দাগ যা কাউকে দেখানোও যায় না সেগুলো সঃহ্য করতে হয় না ওকে । বড বাচা বেচে গেছে সে । বউ বাপের বাডি গেলে খালি ঘরে দুদিনের ভাডা করা মেয়ে মানুষ এর কথা এখন আর সুমিকে লুকোতে হয় না ।

খালি কষ্ট লাগে ওর বাচ্চা দুটোর জন্য । ভীষন ভীষন কষ্ট ।

সত্য সব সময় সুন্দর হয় না । অপ্রিয় সত্য গুলো না জানলেই ভালো হতো । এতটা খারাপ লাগতো না । মেয়েটা মারা যাবার কয়েকদিন আগেই এসেছিল । কোন এক বিয়েতে বেডাতে যাবে বলে আমার কাছে এক সেট গয়না নিতে । বলে ভাবি খালি হাত গলা দেখে আমার মামাতো খালাতো বোনেরা বলবে তোর স্বামী এত কামাই করে অথচ বউকে এক সেট গয়না দেয়নি । স্বামী অন্যর কাছে যাতে ছোট না হয় সেজন্য কি চিন্তা ।

মেয়েটা কাউকেই কিছু বলতে পারেনি । ঘর পালিয়ে বিয়ে করেছিল বলে মা খালার কাছে নিজের বেদনা প্রকাশ করতে পারেনি । তার উপর বাবা নেই । একটা কিছু হলে কোথায় গিয়ে দাডাবে ।

শশুড বাডির কথা নাই বা বললাম । বাদলের অপকর্ম নিয়ে সুমির মুখ খোলার উপায় ছিল না ।



কিছু বললেই মারধর । যেন মুখ বুজে থাকতে পারলে থাক না পারলে যাও ।

সেজন্যই মনে হয় ও যেন মরে গিয়েই বেচে গেছে ।

প্রতিদিন তিল তিল করে মরার চাইতে একবার মরা অনেক সুখের ।

শরীরের পোডা ক্ষত গুলো যে কষ্ট দিয়েছে তার চাইতে বুকের ভেতর জ্বলতে থাকা আগুন ওকে অনেক বেশি কষ্ট দিয়েছে ।



ভালো থেকো সুমি ভালো থেকো ।যেখানেই থাক খুব ভালো থেকো ।

মন্তব্য ১৭ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১৭) মন্তব্য লিখুন

১| ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৩৪

নীল ভোমরা বলেছেন:
গল্প...নাকি সত্যি?!......ট্র্যাজেডি!
গল্প পড়ে মনটা খারাপ হয়ে গেল। খুবই সাদা-মাটা উপস্থাপনা!.... তবু্ও কাহিনীর মূল উপজীব্য অনুধাবনে অসুবিধা হয়নি।

২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ৮:৩১

নীল জোসনা বলেছেন: গল্প নয় । হতভাগীর করূণ কাহিনী ।

ঘটনার শৈল্পিক উপস্থাপনা শেখার জন্য আপনার ব্লগে নিয়মিত ক্লাস করতে যাচ্ছি তো ! ! !

২| ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ৮:৪২

মাহবুবুল আজাদ বলেছেন: বেদনাদায়ক। কেমন জানি লাগে এই সব গল্প পড়লে। কারো ভাগ্য যেনো এমন না হয়।

২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ৮:৫১

নীল জোসনা বলেছেন:
আমাদের সমাজে নারীর অবস্থানটাই এমন জা্যগায় যে পরিস্থিতি অনুযায়ী সঠিক কাজ টাও সবসময় করা যায় না ।

৩| ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ৮:২৭

নীল ভোমরা বলেছেন: ''ঘটনার শৈল্পিক উপস্থাপনা শেখার জন্য আপনার ব্লগে নিয়মিত ক্লাস করতে যাচ্ছি তো ! ! !''....তাই?!.....ঝানতামনা! কিন্তু আপনি আমার লাস্ট পোস্ট-টা পড়েন-ই নাই!





আপনি নিরাপদ হলে প্রথম কমেন্ট-টা নিশ্চয়ই আপমার পোস্টেই করবেন?!...... :-B


শুভকামনা রইল!

৪| ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ৯:১৯

নীল ভোমরা বলেছেন: অপনি সর্বশেষ গত ২৩/২ তারিখ রাত ২২:৫৭:৫৬ টায় আমার ব্লগ পেজে ঢুঁ মেরেছেন! তবে হ্যাঁ..... রেকর্ড বলছে আপনি আমার লাস্ট পোস্টটা হয়তো পড়েছেন!


ভাল থাকুন.....শুভকামন!

২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ১০:০৮

নীল জোসনা বলেছেন: শুধু রেকর্ড নয় আমিও বলছি আপনার লাস্ট পোষ্ট পড়া হয়েছে ।

মাঝে মাঝে আপনার পুরোনো পোষ্ট ওপাজল গুলো দেখি ।

আপনার গল্প পড়ার পর বাবু ভাইকে খুব দেখতে ইচ্ছে করে । ওনার একটা ছবি পোস্ট করবেন কি? যদি অসুবিধা না থাকে ।

হ্যা , পাজল গুলো ও মিলাতে চেষ্ঠা করি । কিছু কিছু পারি কিন্তু কমেন্ট তো করতে পারি না ।



৫| ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ৯:২৪

নীল ভোমরা বলেছেন:

ওহ্....ভাল কথা....ড-এ শুন্য ড়-টা কিভাবে লিখেতে হয় একটু কষ্ট করে শিখে নিন।

আমি আছি আপনার সাথে...নিঃস্বার্থভাবে!...শুভকামনা!

২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ১০:১৭

নীল জোসনা বলেছেন:
" ড় " শিখে নিলাম । আসলে এ- কার দেবার পর ড় এর . ে এর সংগে লেগে যায় ।

ভালো থাকবেন ।

৬| ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ৯:৫৯

নীল ভোমরা বলেছেন: কি হলো?......কমেন্টের রিপ্লাই মুছে দিলেন কেন?!

২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ১০:২০

নীল জোসনা বলেছেন: পড়া নিয়া লেখার অসুবিধায় ছিলাম বলে ।




মনে হচ্ছে আবার নার্সারী ক্লাসে ভর্তি হই ।

৭| ১১ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ৮:৩০

দালাল০০৭০০৭ বলেছেন:

১১ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ১০:০০

নীল জোসনা বলেছেন:

আপনার প্রোপিক টা দারুন । স্বাগতম ।

৮| ১১ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ১০:০১

দালাল০০৭০০৭ বলেছেন: ও তাই নাকি আপু

১২ ই মার্চ, ২০১৪ সকাল ৮:২৪

নীল জোসনা বলেছেন:
হ্যা, তাই । প্রোপিক এর সংগে নিকটা তো মিল মতো হলো না ভাইয়া ।

৯| ১৭ ই মার্চ, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:১১

অর্থনীতিবিদ বলেছেন: ঘর থেকে পালিয়ে বিয়ে করার পরিণতি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মেয়েদের জন্য সুখের হয় না। ব্যতিক্রমও আছে। তবে দুর্ভাগ্য যে সুমির ক্ষেত্রে সেই ব্যতিক্রমটা ঘটল না। বেচারী আসলেই মরে গিয়ে বেঁচে গেছে।

১৭ ই মার্চ, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৩১

নীল জোসনা বলেছেন: ভাগ্য দেবী সকলের প্রতি সহায় হন না ।

আপনাকে স্বাগতম ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.