নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আঁধারে লুকায়ে করি ভুলের শপথ।

নোঙ্গর ছেঁড়া

ধুলায় বিছানো হেথা চোরা গলির পথ

নোঙ্গর ছেঁড়া › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমার সাইকেলবেলা

৩০ শে ডিসেম্বর, ২০০৯ বিকাল ৪:২৫









ছোটবেলায় একটা সাইকেলের খুব শখ ছিল। বাবা অল্প বেতনের চাকুরী করতেন। ঢাকায় আমরা নতুন এসেছি। আমাদের মোহাম্মদপুরের বাসার আশেপাশে আমার বয়সী অনেক ছেলেমেয়ে-কেই দেখতাম দুই চাকার ছোট সাইকেল কি সুন্দর করে দাবড়িয়ে বেড়াচ্ছে। আমি স্বপ্নের ভেতরও সাইকেল চালাতাম। স্কুলে বসে বসে চিন্তা করতাম কবে আমার সাইকেল কেনা হবে। মা-কে খুব ভয় পেতাম, তাই আব্বুকে সুযোগ পেলেই বলতাম একটা সাইকেল কিনে দেওয়ার জন্য। আব্বু সব সময়ই বলতো কিনে দেব, এইতো সামনের রোজার ঈদের পর, স্কুলের ফাইনাল পরীক্ষার পর ....ইত্যাদি। মেজ চাচা আমাদের সাথে থাকতেন। একটু আদর পেলে গোপনে তাকেও বলতাম একটা সাইকেল কিনে দেওয়ার জন্য। এই ব্যাপারটায় একটা রিস্কও ছিল, মা জানতে পারলে চোখে সর্ষেফুল দেখা লাগতো। চাচা আশ্বাস দিতেন সামনে কি একটা বড় কাজ পাচ্ছেন, পেলেই একদিন লাল রং এর সাইকেল নিয়ে এসে নাকি আমাকে চমকে দেবেন। আমার সেই চমকানো কখনোই হয়নি।



আমার ছোটবেলায় মিরপুর রোড দিয়ে কি সুন্দর রিকশা চলতো! যদ্দুর মনে পড়ে ভি আই পি রোড বলে কিছু ছিল না। রিকশায় চড়ে আমাদের ছোট্ট পরিবার মোহাম্মদপুর থেকে টুক টুক করে নিউমার্কেটে যেতাম। সাইন্স ল্যাবরেটরী মোড়ে, পুলিশ বক্সের পেছনে ফেয়ার ওয়ে নামের সাইকেলের দোকানটার কাছে আসলে আমার মাথা ঘোরা শুরু হয়ে যেত। দেখতাম কি সুন্দর সব সাইকেলে সারি করে সাজানো আছে। আব্বু-কে দেখাতাম, বায়না ধরতাম। আমার কাছে ওই সাইকেলের দোকানটা ছিলো এক স্বর্গপুরীর মতো। দোকানটা এখনো আছে। এখন সাইন্স ল্যাবরেটরী দিয়ে আসা-যাওয়ার পথে দোকানটা দেখলে মাঝে মাঝে কান্না পায়।



আব্বু তার ইচ্ছা থাকা স্বত্ত্বেও আমাকে কখনো সাইকেল কিনে দেয়নি। তখন একটা ভালো সাইকেলের দাম ছিল প্রায় তিনহাজার। একবারে এতটাকা খরচ করা আমাদের সাধ্য এবং অভ্যেস দুয়েরই বাইরে ছিল। একবার ঠিক হলো টাকা জমিয়ে কিনবো। স্কুল ছুটির পর আচার-হজমি খাওয়ার জন্য প্রান ফেটে যেত, কিন্তু বহু কষ্টে নিজেকে সামাল দিতাম। ভাবতাম এই টাকা জমতে জমতে একদিন তিন হাজার টাকা হবে। যখন যা পেতাম মা-র কাছে এনে জড়ো করতাম। ঈদে সালামীর টাকা, তার সাথে মায়ের জমানো টাকা সব মিলিয়ে আড়াই হাজার টাকা হয়ে গিয়েছিল একবার। কিন্তু আমার কপাল মন্দ। এক সকালে আমাদের দুর সম্পর্কের এক আত্মীয় বাসায় এসে কান্নাকাটি জুড়লো। তার স্ত্রীর অসুখের কথা বলে টাকা ধার চাইলো। বাধ্য হয়ে আমার সাইকেলের জন্য জমানো টাকাটা তাকে এক মাসের জন্য ধার হিসাবে দেয়া হলো। কষ্টে আমার বুক ফেটে যাচ্ছিল সেদিন। আমাদের সেই আত্মীয়টি কখনোই আর সেই টাকা ফেরত দেয়নি।



গ্রামে গেলে ফুফাদের বড় বড় হিরো সাইকেলগুলো চালাতাম। নাগাল পেতাম না বলে গ্রামের ছেলেদের কাছ থেকে সাইকেলের সিটে না বসে চালানোর একটা মজার কায়দা শিখেছিলাম। গ্রামের রাস্তা দিয়ে গড় গড়িয়ে চলে যেতাম যখন যেখানে খুশি। পড়ে গেলেও পরোয়া নেই কিছু। ঢাকায় ফিরে আসার সময় দাদা-দাদী, চাচা-চাচী, ফুফু কারো জন্য তেমন খারাপ না লাগলেও কষ্ট হতো সাইকেলের জন্য।



আমার শৈশব কেটেছে সাইকেল বিহীন, সাইকেলের স্বপ্ন দেখে। ধীরে ধীরে বড় হই। কাস এইটে পড়ি। আমার জীবনে এরই মধ্যে অনেক কিছুই ঘটে গেছে। আমি আর সাইকেলের জন্য কারো কাছে বায়না ধরি না। মুখ লুকিয়ে চলি। মাথা নিচু করে রাস্তা হাঁটি। আমার নিজস্ব একটা জগত তখন তৈরি হচ্ছিল আমার ভেতর। আমার ছোট চাচা (আমার চেয়ে বছর দুয়েকের বড়) গ্রামে একটা ছোট লাল রংএর হিরো সাইকেলে কিনেছিল, সেকেন্ড হ্যান্ড। খবর পেলাম ওটা নাকি নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। আব্বু মহা উৎসাহে ওটা বাসের ছাদে করে ঢাকায় নিয়ে আসার ব্যবস্থা করলেন। আমি দীর্ঘশ্বাস ছাড়ি। সাইকেল এল। মিস্ত্রিকে দিয়ে ঠিক করানো হলো। আমি পেলাম আমার জীবনের প্রথম এবং শেষ সাইকেল।

প্রথম দিন আমার নিজের সাইকেলে চড়ে কান্না পাচ্ছিল। আমি তাজমহল রোড ধরে, রেসিনেন্সিয়াল মডেল স্কুলের পাশ দিয়ে যাচ্ছি- আমার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে টপ টপ করে। এখনো জানিনা কেন কেঁদেছি সেদিন।



তারপর থেকে সেই সাইকেল নিয়েই আমি স্কুলে যাতায়াত করতাম। আমি তখন ধানমন্ডি বয়েজ স্কুলে পড়ি। বন্ধুরা আমার সাইকেল নিয়ে আমাকে প্রায়ই ক্ষেপাতো। বলতো- গেরাইম্মা সাইকেল..। ম্যাট্রিকের আগ পর্যন্ত আমি সাইকেল ছাড়িনি। আমার বন্ধুরা যখন রেসিং সাইকেল নিয়ে স্কুলে আসতো, তখনো না। স্কুলের গ্যারেজে বন্ধুদের চকচকে দামী সাইকেলের পাশে আমার থার্ড হ্যান্ড ভাঙ্গাচোড়া হিরো সাইকেলটা যত্ন করে বাঁধা থাকতো আমার পরম স্নেহে।

ওই সাইকেলটা ছিল আমার জন্য বিশেষ কিছু।

ওটা ছিল আমার অনেক অপেক্ষার সম্পদ।

আমার না পাওয়ার কষ্ট মাখা শৈশব।















(ছবি দুটি নেট থেকে পাওয়া)

মন্তব্য ২৫ টি রেটিং +৭/-০

মন্তব্য (২৫) মন্তব্য লিখুন

১| ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০০৯ বিকাল ৪:৪৭

রেফিন বলেছেন: আপনার সাইকেল প্রীতিটা পুরাপুরি আমার সাথে মিলে গেছে। আমার এখনো স্পষ্ট মনে আছে, সেই সময় একটা সাইকেলের জন্য কি না করেছি। আব্বু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ার পরে ও, কোন এক বিচিত্র কারনে সাইকেল কিনে দিচ্ছিল না। পরে অবশ্য সেই কারনটা উদ্ধার করেছি - স্রেফ ভালবাসা। আমি যদি সাইকেল নিয়ে মেইন রোডে গিয়ে কোন এক্সিডেন্ট করি। এই ভয়েই....। পরে (যখন আরো একটু বড় হয়েছি) অবশ্য সাইকেল কিনে দেয়া হয়েছে। ১টা না, ৪টা সাইকেল কেনা হয়েছে, এই পর্যন্ত।
হা হা হা ......

৩০ শে ডিসেম্বর, ২০০৯ বিকাল ৪:৫২

নোঙ্গর ছেঁড়া বলেছেন: আপ্নি ভাগ্যবান। আপ্নাকে অভিনন্দন।
হা হা..

২| ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০০৯ বিকাল ৪:৫০

সাদাকালোরঙিন বলেছেন: আমি ক্লাস ফাইভে বৃত্তি পেলে আব্বা-আম্মা প্রমিজ মতো একটা সাইকেল কিনে দেয় । সাইকেলটা ছিল যতদূর মনে পড়ে এ্যাভোন সাইকেল। আমি আবার বাঁহাতি ছিলাম বলে সাইকেল চালাতাম ডান পাশ দিয়ে ( ছবির ছেলেটা যেভাবে রডের মধ্যদিয়ে পা ঢুকিয়ে দিয়ে চালাচ্ছে ঠিক তার উল্টো করে ) ।

অনেকেই ডান পাশ দিয়ে সাইকেল চালানো দেখে খুব অবাক হতো। :D

৩০ শে ডিসেম্বর, ২০০৯ বিকাল ৪:৫৩

নোঙ্গর ছেঁড়া বলেছেন: এই ভাবে সাইকেল চালানোটা ছিল একটা বিরাট মজা। যারা চালায় নাই, তারা বুঝবে না।...;)

৩| ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০০৯ বিকাল ৪:৫১

স্বাগত. বলেছেন:
এক্কে বারে আমার কাহিনী. :(( :(( :(( :((

৩০ শে ডিসেম্বর, ২০০৯ বিকাল ৪:৫৬

নোঙ্গর ছেঁড়া বলেছেন: কান্দো ক্যান ভাইডি?

৪| ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০০৯ বিকাল ৫:০৩

জাহিদ পারভেজ বলেছেন: কত শত অপেক্ষার পর একটা পুরাতন সাইকেল পেয়ে কি যে আনন্দ ছিল আমাদের তা ভাষায় প্রকাশ করার নয়,কিন্তু আজকাল কার বাচ্চারা নুতন গাড়ি পেলেও এমন আনন্দ পাই না। কারণ প্রপ্তির সহজ লভ্যতার.।
এখন বাচ্চারা কিছু একটা চাইলেই বাবা মা টাকা পয়সা কথা চিন্তা না করে, চুরি বাটপারি যে ভাবেই হোক বাচ্চাদের সখ আহলাদ পুরন করাই ব্যস্হ হয়ে পড়ে।
আপনার ছোটবেলার স্মৃতিকথা পড়ে ভাল লাগলো।

৩০ শে ডিসেম্বর, ২০০৯ বিকাল ৫:০৭

নোঙ্গর ছেঁড়া বলেছেন: আপ্নার সংগে অনেকটা একমত।
ধন্যবাদ।

৫| ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০০৯ বিকাল ৫:০৬

হযরত মামুন আব্দুল্লাহ্ বলেছেন: প্রিয়তে যোগ করে রাখলাম। পড়ে পড়ে মন্তব্য করবো। (আমারও একটা সাইকেলবেলা ছিল বলে)...

৩০ শে ডিসেম্বর, ২০০৯ বিকাল ৫:১৪

নোঙ্গর ছেঁড়া বলেছেন: ধন্য হয়ে গেলাম, ভাইডি। আপ্নার্লিগা দুইরহম ধইন্যা....নেন

৬| ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০০৯ বিকাল ৫:০৯

নক্ষত্র জ্যোতি বলেছেন: আমার বেলাতে সাইকেল পাওয়া হয়নি, :(

৩০ শে ডিসেম্বর, ২০০৯ বিকাল ৫:১৫

নোঙ্গর ছেঁড়া বলেছেন: দুঃখ পাইলাম রে ...

৭| ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০০৯ বিকাল ৫:১২

লবঙ্গ বলেছেন: সাইকেলের কথা অার কি বলবো ছোটবেলায় একটা নতুন জামার জন্য কত অপেক্ষা কত অাশা করে থাকতাম ।বছরে শুধু একবার ঈদের সময়ই তা পেতাম।এখন অালমারি ভর্তি নতুন ( জামাকাপড় কিন্তু ছোটবেলার নতুন জামা পরার সেই অানন্দ খুঁজে পাই না।:(( :(( :#

৩০ শে ডিসেম্বর, ২০০৯ বিকাল ৫:১৬

নোঙ্গর ছেঁড়া বলেছেন: :(( :(( :((

৮| ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০০৯ বিকাল ৫:১৫

পুরাতন বলেছেন: অনেক আবেগ মাখা সাইকেল চারণ :)
আমি যখন ৪-৫ বছর, আব্বু একটা ৩ চাকা ওয়ালা সাইকেল কিনে দিয়েছিল। চালানোর চেয়ে ঐটাকে উল্টো করে খেলতেই আমার বেশী ভালো লাগতো :P
দুই চাকার সাইকেল আজ পর্যন্ত চালাতে পারিনা :-*

৩০ শে ডিসেম্বর, ২০০৯ বিকাল ৫:১৮

নোঙ্গর ছেঁড়া বলেছেন: এইডা কি কইলা ওস্তাদ। উল্টা করে............. হা হা ম গে
;)..... =p~ =p~ =p~ =p~ =p~ =p~ ;) ;)

৯| ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০০৯ রাত ৮:০৮

নতুন রাজা বলেছেন: আমার না পাওয়ার কষ্ট মাখা শৈশব... মনটা খুব খারাপ করে দিলেন ভাই...

ভালো থাকবেন...

৩১ শে ডিসেম্বর, ২০০৯ দুপুর ১২:২৪

নোঙ্গর ছেঁড়া বলেছেন: বুখে আয় রে ভাইডি, এট্টু কান্দি....

১০| ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০০৯ রাত ৮:৩০

হাসান মাহবুব বলেছেন: আমার দুইটা সাইকেল ছিলো। মফস্বঃল শহরে সাইকেল চালায়া মজাই আলাদা। ঢাকায় রাস্তাঘাট একটু ফাঁকা থাকলে আমি হয়তোবা সাইকেলে কৈরাই চলাফেলা করতাম। সাইকেল আমি সেইরকম ভালা পাই (দীর্ঘশ্বাস)

৩১ শে ডিসেম্বর, ২০০৯ দুপুর ১২:৪৩

নোঙ্গর ছেঁড়া বলেছেন: ঢাকায় সাইকেল চালাইতেও হেব্বি মজা।
চালায়া দেইখ্যেন একদিন.... ;)
সাইকেল মার্কার জয় হোক....খিক্ খিক্

১১| ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০০৯ রাত ৮:৫৪

বড় বিলাই বলেছেন: খুব আবেগ ভরা একটা লেখা। ভালো লাগল।

ছোটবেলায় ৩ চাকার সাইকেল চালানোর স্মৃতি নেই, তবে প্রমাণ হিসেবে একটা ছবি আছে আম্মার কাছে। ২ চাকার সাইকেল স্বপ্নে মাঝে-মধ্যে চালাই।

৩১ শে ডিসেম্বর, ২০০৯ দুপুর ১২:৫২

নোঙ্গর ছেঁড়া বলেছেন: বাগ্মামা, কেমুন আসইন?

১২| ৩১ শে ডিসেম্বর, ২০০৯ রাত ৩:৫২

এস আই সাব্বির বলেছেন: ইশশশ!!!!! ছোটকালের আফসোস টা আবার বাড়াইয়া দিলেন। ছোটকালে একটা সাইকেলের খুব শখ ছিল। বন্ধুবান্ধবের প্রায় সবারই সাইকেল ছিল তাই দেখে আমার ও একটা সাইকেলের শখ ছিল। বন্ধুবান্ধবের থেকে ধার করে সাইকেল চালাইতাম। আমার বাপ মায়ের ধারণা সাইকেল কিন্না দিলেই এক্সিডেন্ট করমু, তাই আর সাইকেল কিন্না দেয় নাই। তখন মাঝে মাঝে মনে হইত আমার কাছে যদি টাকা থাকতো তাইলে একটা সাইকেল কিনতে পারতাম। তখন টাকা ছিল না কিন্তু সাইকেল কিনার শখ ছিল। আর এখন সাইকেল কিনার টাকা আছে কিন্তু সাইকেল কিনার শখটা আর নাই।

৩১ শে ডিসেম্বর, ২০০৯ দুপুর ১২:৫৫

নোঙ্গর ছেঁড়া বলেছেন: :)

১৩| ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ সকাল ৭:৪০

পুরোনো চিঠি বলেছেন: অনবদ্য.!
অসাধারণ!
অনেক স্মৃতি মনে পড়ে গেলো

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.