![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দুই বছর আগে এমনই এক সকালে শেষ কথা না বলেই চলে গিয়েছিল সঞ্জীব ভৌমিক । সঞ্জীব ছিলো আমার ,আমাদের অনেকের খুব কাছের স্বজন ,প্রিয়জন ।
দেখতে দেখতে দুই বছর হয়ে গেল সঞ্জীব আমাদের মাঝে নেই। একজন চলে গেলেও জগত সংসার তার নিজের নিয়মেই চলছে। কিন্তু রয়ে গেছে তাঁর অনেক স্মৃতি ।সারা বছর হয়ত আমরা কেউ তাকে মনে করিনি ।কিন্তু এদিনে তার শেষ কর্মস্থল একাত্তুর টেলিভিশনের অনেক সহকর্মীই তাকে স্মরণ করছেন। তার একসময়ের কর্মস্থল একুশে টিভি তাকে মনে করবেও না । তারা শুধু নিতেই জানে ,দিতে জানে না !
জানি একদিন আমিও এখানে থাকব না । তখন আমাকেও কেউ মনে করবে না। এইটাই হয়তো নিয়ম ।
সঞ্জীব ,তুই আমার স্মরণে আছিস ।
স্মরনে আছিস তোর প্রিয় দেশজুড়ের সহকর্মীদের কাছেও ।
মনে আছে তুই আর আমি একইদিনে একুশে টেলিভিশনে যোগ দিয়েছিলাম । তুই বসতি ৬ তলায় , আমি ৭ তলায় । প্রতিদিন দেখা হত ৮ তলায় প্যানেলে , ৯ তলায় স্টুডিওতে ।কখনো সখনো ১০তলার ক্যান্টিনে। ব্যস্ততার মাঝে কথা হত কম। কখনো তুই ৭তলায় এ্লেই আমরা বারান্দায় সিগারেট খেতে যেতাম। কিন্তু সন্ধ্যা হলেই আমাদের অবধারিত দেখা হত চাম্পু গলিতে । সিগারেট আর চায়ের আড্ডায় অনেক কথাই হত !
মনে পড়ে বাংলাদেশের প্রথম স্টুডিও ফোনো লাইভ কনসার্টে আমরা একসাথে কাজ করেছিলাম । কনসার্টের আগের দিন বিকেলে মিটিং এ কত উত্তেজনা ।সেই উত্তেজনায় পরের দিন ঈদের সকালে সফলভাবে আমরা কনসার্ট শেষ করেছিলাম ।
কে জানতো বাংলাদেশের প্রথম স্টুডিও ফোনো লাইভ কনসার্টটি আমাদেরকেও ইতিহাসের সাক্ষী করে ফেলবে !
সঞ্জীব, আজ তোকে খুব মিস করছি । সকাল থেকে শুধুই ঘুরে ফিরে কেন যেন তোর কথাই বেশী মনে পড়ছে ।
মনে পড়ে ২০১৩ সালের আজকের এই সকালটি ছিলো আমাদের জন্য খুব কস্টের ।
সেদিন সকালে লিফটে উঠার সময় শতরূপার সাথে দেখা। তার কাছে প্রথম খবরটা শুনে মন খারাপ হয়ে গিয়েছিলো ।
ঠিক কিছুক্ষনপর শৈবাল ভাইয়ের ফোন ।
- সঞ্জীব নেই ।
ফোনের এ প্রান্তে আমি চুপ করে ছিলাম কিছু সময় ।
বিশ্বাস হচ্ছিল না সদা হাসি খুশি এই কর্মঠ ,প্রতিভাবান মানুষটি নেই। আমার দুচোখ জুড়ে জলের ধারা সেদিন কোন বাঁধ মানেনি ।
মনে পড়ে আমি ইউরোপ থেকে আসার পরের দিন রাতে একুশে টিভির নীচে শেষ দেখা হয়েছিলো সঞ্জীবের সাথে।
অর্থাৎ সঞ্জীবের মৃত্যুর ২দিন আগে ।
রাত তখন প্রায় ১১টা বাজে । চাম্পুগলিতে এসেই বললো ,তোর সাথে কথা আছে ।চা খেয়ে বলছি ।
কিন্তু আমার টকশো থাকায় তাড়াহুড়ো ছিলো ।
বলেছিলাম , লম্বা কথা হলে কাল বলিস।চা খেয়ে আমি উঠবো ।
আমার এই ছটফটানি দেখে সঞ্জীব কথাটি আর বলেনি।
পরে বলবো বলে চা খেয়ে সিগারেট ধরিয়েছিল ।
যাবার সময় শুধুই বলেছিলো, তুই কি একবারে চলে যাবি ?
এর উত্তর তখনো আমার জানা ছিলো না । তাই আমি কিছু বলতেও পারিনি । নিরবে হাত মিলিয়ে লিফটের দিকে এগিয়ে যাই । সঞ্জীবও চলে যায় বাসার দিকে ।
তার দুইদিন পর তুই নিজেই না ফেরার দেশে চলে গেলি ।
আজও ভাবি, তুই সেইদিন আর কি বলতে চেয়েছিলি ?
সেই কথা আর শোনা হল না। আফসোস আর কখনো শোনাও হবে না ।
দাদা ,যেখানে আছিস, ভালো থাকিস ।
©somewhere in net ltd.