নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি নির্বাক শ্রোতা

রোষানল

রোষানল › বিস্তারিত পোস্টঃ

কিছু ভালোবাসা আসে শুধুই কষ্ট দিতে

১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সকাল ১০:৪৮

আমি যে ঘরে থাকি সেই ঘরের দক্ষিণ পশ্চিম কর্নারে একটা জানালা আছে । তাই সকালে ঘুম থেকে উঠেও সূর্য উদয় দেখার সৌভাগ্য হয়না।সকালের মুক্তা ছড়ানো আলো আমার কাছে এখন সপ্নের মতই মনে হয়। কুয়াশার মত কাল আভা দেখা ছাড়া আমার কপালে আর কিছু জোটেনা । অস্তগামী সূর্যকে দেখে যে মনের দুঃখগুলো ঘুচাব সে আশায়ও গুড়ে বালি । জানালার আশে পাশের বড় বড় অট্টালিকা ঢেকে দিয়েছে আমার দৃষ্টির সীমা ।আজ সকালেই এক পশলা বৃষ্টি হয়ে গেছে । জানালা দিয়ে ঠাণ্ডা বাতাস আসছে ।ব্যাপারটা কেমন জানি অসহ্য লাগছে । কিন্তু এক সময় এই বৃষ্টির জন্য অনেক প্রতীক্ষায় থাকতাম । আকাশে কাল মেঘ খুঁজতাম । টিভির সংবাদ এ আবহাওয়া বার্তা মনোযোগ দিয়ে শুনতাম ।আগামীকাল বৃষ্টি হবে কি হবেনা জানার জন্য ।কি পাগলই না ছিলাম ।কিছু কিছু ভালোবাসা মানুষের জীবনে আসেই শুধু কষ্ট দিতে ।এই যে আমার বন্ধু সৈকতের কথায় বলি । সৈকত একটা শপিং মলে জব করত । বেশি ভাগ বড় বড় শপিং মলের এল জি ফ্লোরে থাকে সুপার মার্কেট । বাজার সদায় করার সব দোকানপাট যাকে বলে ।সেই শপিং মলে একটি মেয়েকে সে প্রায় দেখত । মেয়েটি তার ফামেলির সাথে প্রতিদিন বাজারে আসতো । প্রথমে চোখা চখি তার পরে মুচকি হাসা হাসি শেষ মেষ ইশারা দিয়ে তাদের মধ্য ভাবভালবাসার প্রথম সুত্রপাত হয় ।লাজুক লাজুক ভারি মিষ্টি দেখতে। টানাটানা চোখ ।মাথার চুল গুলো সাদা হিজাবে ঢাকা। একদিন সুজক বুঝে সাহশ করে সৈকত মেয়েটিকে একটা কাগজে তার মোবাইল নাম্বার লিখে দেয় ।

এপর সপ্তাহ পার হয়ে যায় কিন্তু ওপাশ থেকে কোন সাড়া আসেনা ।এই সপ্তাহ খানিকের মধ্যেও মেয়েটি দু তিন দিন মার্কেটে এসেছিল। কিন্তু কোন সাড়া দেয়নি এমন কি চোখা চখিও না । যেন সে তাকে চেনেই না ।সৈকত মনে মনে ভাবে আগেই ভাল ছিল অন্তত চোখাচোখি তো হত। নাম্বার দেয়াতে মনে হয় আমাকে খারাপ ছেলে ভাবছে ।আসলে মেয়েদের রিয়াকশন হয় খুব ধীরে ধীরে । বুক ভরা বেদনা নিয়ে সৈকতের দিন যেন আর পার হচ্ছিলনা ।কারন সে তাকে মন প্রান দিয়ে ভালোবেসে ফেলেছিল ।একদিন রাত বারটায় তার কাছে একটা মিস কল আসে ।রাতে রুমমেটদের ঘুমের ব্যাঘাত হবে ভেবে সে আর কল ব্যাক না করেই ঘুমিয়ে পরে । পরেরদিন সকালে সৈকত ওই নাম্বারে এস এম এস দেয়। হু আর ইউ ? মেয়েটি অগোছালো ইংরেজিতে তাকে বুঝানোর চেষ্টা করে যে, সে ওই মেয়ে যাকে সে মোবাইল নাম্বার দিয়েছিল । সৈকত খুশিতে আত্মহারা ।মনে আকা তার ভালবাসার ছবিতে এখন রঙ লাগতে শুরু করেছে ।মেয়েটি মারাত্মক সুন্দরি ।জন্মস্থান ইরাকে । লেখা পড়া করেছে সিরিয়ায়।মাথায় সাদা হিজাব।মেকাপে আটা ময়দা সুজির কোন বালায় নেই ।খুব সাধারন কিন্তু অপরূপ ।দেখলে মনে হয় ইরাকের কহেকাপ থেকে আসা কোন এক পরি । ।আমেরিকা ইরাক যুদ্ধের সময় তারা সপরিবারে মালেশিয়াতে চলে আসে ।তিন বোন দুই ভাই এর মাঝে সে দ্বিতীয় নাম টাও ভারি মিষ্টি সামার। ভাই সবার বড় একটু রাগি । যার তিন বোন অপরূপ সুন্দরি সেই ভাইদের রাগি না হয়ে উপায় কি।

সৈকত আর সামারের প্রেম এখন তুঙ্গে ।সারা রাত জেগে কথা হয় দুজনের।কিছু সপ্ন আজ তাদের দুটি মনে ছুটাছুটি করতে শুরু করেছে। মেয়েটিকে কিছু বাংলা কথা শিখিয়ে দিয়েছে সৈকত। যেমনঃ আমি তোমাকে ভালবাসি,জান, এইসব । একটা বিদেশী মেয়ের মুখে বাংলায় ভালবাসি শুনতে ব্যাপক লাগে।দুজনের প্রেম এত গভিরে চলে গেছে যে রুমমেটরাও জেলাসি ভাব দেখাতে শুরু করেছে ।কোন কোন বন্ধু সৈকতকে বলেছেঃ তুই ব্যাটা আর প্রেম করার মেয়ে পেলিনা।তাই বলে ইরাকের মেয়ে, বোম খেয়ে মারা পড়বি কথাটা মিলিয়ে নিস। তাদের এই জেলাসি সৈকত গায়ে মাখেনা বরং খুব ইঞ্জয় করে। কারন ছেলেদের মুখে জেলাসি ভাবটা দেখার মত একটা জিনিস ।

সামার আর সৈকতের সামনা সামনি কথার বলার কোনই চাঞ্চ নেই। কারন মা,আর রাগি ভাইয়ের চোখের আড়াল হবার মত কোনই সুজক নেই ।যা কথা হয় শুধুই ফোনে । কিন্তু ভালবাসা এমন এক নেশা যে দুজন দুজনকে শুধুই কাছে পেতে চায়।মা ,বাবা আর ভাই ছাড়া তাদের রিলেশনের বিষয়টা তার সব বোনেরাই জানে।সামারের বড় বোন তাকে খুব সাপোর্ট করে ।সৈকত তার বড় বোনের সাথেও কথা বলেছে একবার।কিন্তু ওই কথা বলা আর না বলা একই কথা। পুরা আরবিতে কথা বলে। ইয়েস নো ভেরি গুড বোঝে কিনা সন্দেহ । কিন্তু সামার খুব ভাল ইংরেজি বলতে পারে।একদিন সন্ধ্যা বেলা সামারকে অবাক করে দিয়ে সৈকত সামারের বাড়ি গিয়ে দেখা করে ।সামার লজ্জা আর আবেগে পাগলের মত সৈকতকে বুকে জরিয়ে ধরে। দুই হৃদয়ের কম্পন এক হয়ে যায় ।

কথায় আছে যে ভালবাসা দ্রুত আসে সে ভালবাসা দ্রুতই চলে যায় । দু বছর সামারের সাথে কোন যোগাযোগ ছিলনা। ফোন নাম্বার বন্ধ। সপিং মলেও আর আসেনা। বারিতেও তালা। অল্প অল্প করে সৈকত ভুলতে চেষ্টা করছিল সেই সৃতি গুলকে। দুদিন আগে সৈকত।জানতে পেরেছে যে, সামার এখন কানাডায় থাকে । অন্য আরেকটা ফেসবুক আইডি থেকে সামার তাকে এস এম এস করেছে এতদিন পর।লিখেছেঃ সে এ ক' বছরে তাকে এক মুহুরতের জন্যও মন থেকে মুছে ফেলতে পারেনি ।তার বড় ভাই এবং তার মা তার ফোন চেক করে তাদের রিলেশনের ব্যাপারে সব জানতে পারে এবং তাকে মার ধরও করে । মোবাইল কেড়ে নেই। ঘড়ের বাইরে যাওয়ার বাপারে নিষেধ আরোপ করে । সৈকতের নাম্বারটা শুধুই নাকি ওই ফোনেই ছিল । তাই সব যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় । তরি ঘড়ি তার ফামেলি কানাডা যাবার সিদ্ধান্ত নেয়।কানাডায় ফ্লাইট হবার একদিন আগে সে একবার সৈকতকে খুজতে মার্কেটে এসেছিল।কিন্তু সে জানতে পারে যে সৈকতের বদলি হয়েছে অন্য খানে।এখন সে কানাডায় পড়া লেখার পাশা পাশি একটা কসমেটিকস এর দোকানে পার্ট টাইম জব করছে । সামার সৈকতকে বলেছেঃ সে যদি তাকে না পায় তবে জিবনে আর কাউকে বিয়ে করবেনা।সেই তার জিবনে প্রথম পরুষ আর প্রথম ভালবাসা।

মালেশিয়া আর কানাডার দুরুত্ত যেমন অনেক তেমনি সময়ের ব্যাবধান ও অসিম। সামার যখন কানাডায় জেগে জেগে সৈকত কে নিয়ে ভাবে তখন মালয়েশিয়াই সৈকত গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন । দুরুত্ত, সময়, ভালোবাসা এই তিনটায় আজ তাদের দুজনের ভালবাসার অন্তরায়।
এরপরে আর কোন এস এম এস আসেনি...হয়ত আবার আসবে হয়ত আর কোনদিনই আসবেনা...

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.