![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আনুমানিক ২০বছর আগের কথা । শীতের রাত চারিদিকে ঘন কুয়াশা । উচু গাছের পাতায় কুয়াশা জমা থাকা পানি গুলো নিচে ঝরে পড়ছে টপ টপ করে। রাতের চরম নিস্তাবতার মাঝে কিছু ঝি ঝি পোকার ডাক ছাড়া আর কিছুই কানে আসছে না। পশ্চিম দিকে মাথা রেখে মেঝেতে আমার মেজ চাচীকে শুয়ানো হয়েছে ।মাথা থেকে পা বরাবর একটা হাল্কা খয়েরি চাদর দিয়ে পুরো শরীর ঢেকে দেয়া ।মরা মানুষকে যেমন করে ঢেকে রাখে ।মেঝেতে পড়ে থাকা আমার চাচির বাম পাঁশে সাদা আলখেল্লা পরা এক হুজুর দু' হাঁটু ভাঁজ করে নামাজের ভংগিতে বসা । মাথায় লম্বা জিন্না টুপি । ভয়ানক লাল চোখ । মুখে হাসির লেশ মাত্র নেই । থেমে থেমে দু একটা কথা বলছে তাও আবার খুব চাপা স্বরে ।কালো মানুষের যদি সাদ দাঁত হয় তবে তা দেখতে আসলেই ভয়ানক লাগে ।আর উনি ভয়ানক কাজ করতেই এসেছেন । উনি ঝারফুক দিয়ে জীন তাড়ান। আমার চাচিকে নাকি জীনে আসর করছে । উনি উত্তম মাধ্যম দিয়ে আজ জীনকে ভাগাবেন । উনি আমার চাচীর বাম হাতের কনিষ্ঠ আঙ্গুলের অগ্রভাগে শক্ত করে একটা গিঁট দিলেন ।কেন তা ওই বয়সে আমার মাথায় আসেনি ।এর কারন জানতে পেরেছি আরও অনেক বছর পর । গিঁট দেয়ার কারন পরে বলছি । আমার জীবনে প্রথম দেখা একটা ঘটনা ছিল এটি ।
চাচীর কানের কাছে দীর্ঘক্ষণ অনেক সুরা পাঠ করলেন । তারপর বললেনঃ হাজির হ ।তোর নামকি ?কোন জবাব নেই ।নরেওনা চরেওনা ।বেশ কিছুক্ষন এই ভাবে জেরা করার পর হতাশ হয়ে জিনের উস্তাদ আমার চাচাকে বললেন, আচ্ছা জীনটা মনে হচ্ছে বোবা ।বোবা জীন হলে মেলা সমস্যা। চাচিরে বোবা জীনে ধরছে।মর জ্বালা !!! এই কথা শুনে চাচার মুখ খান শুইকা একদম আমচুর । তবে চাচা হুজুরকে বলল চাচিকে নাকি ওই জীন একদিন শাসিয়ে গেছে যে, কোন হুজুর ফুজুর যেন না ডাকে ।ডাকলে একদম জানে মারাফালাইব । এই কথা শুনে হুজুর আবার নরে চরে বসলো । তাহলে তো জীনের বোবা হবার কোন চান্সই নেই । হুজুর আবার একি প্রশ্ন করলেন তোর নামকি ? কই থাকস ? ব্যাটা জীন মুখে একদম কুলুপ এঁটে বসে আছে ।কি কমু যে তোরে , মাইয়া মানসের শরীরে ভর করছস নইলে তোরে পিডাইয়া তক্তা বানাইতাম । আমি মাইয়ার গায়ে হাত তুলিনা । শেষ মেষ খাঁটি সরিষার তেল আমার চাচীর চোখে দেবার সাথে সাথে আমার চাচি বলে উঠলোঃ কে... রে... আমার চোখে তেল দেয়? উহঃ চোখ জ্বলে গেল।আমার চাচীর কণ্ঠ দিয়েই কথা গুলো বের হচ্ছে কিন্তু কথার সুর একদম হিন্দি হোরর মুভির ভুতের মত ।উপস্থিত সবারই চোখ একদম ছানাবড়া ।পেশাব বন্ধ হবার উপক্রম । যাই হোক , জীনের নামটা ছিল ইউনুস নবী । থাকে আমার ঘরের পূর্ব পাঁশে একটা শিমুল গাছ আছে সে গাছে । যে শিমুল গাছের নিচে আমি অনেক বার মুত্র বিসর্জন করেছি । চাচীকে ধরার কারন নাপাক শরীরে তার ছায়ায় পা ফেলেছে কেন। যাইহোক আমার চাচী এখন অনেক ভাল আছেন। গত ছুটিতে যখন বাড়িতে গেলাম দেখলাম আমার মা'র সাথে কষে ঝগড়া করছেন ।তাতে মনে হল জীন চলে গেছে কিন্তু পাওয়ারটা চাচীরে দিয়ে গেছে ।
এখন মুল কথায় আসা যাক, আমরা জানি বা শুনেছি জীন আগুনের তৈরি ।যা পবিত্র কোরানে উল্লেখ করা আছে ।যেমনঃ সূরা আরাফ এর দুটি আয়াতে
وَلَقَدْ خَلَقْنَاكُمْ ثُمَّ صَوَّرْنَاكُمْ ثُمَّ قُلْنَا لِلْمَلآئِكَةِ اسْجُدُواْ لآدَمَ فَسَجَدُواْ إِلاَّ إِبْلِيسَ لَمْ يَكُن مِّنَ السَّاجِدِينَ (11
আর আমি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি, এরপর আকার-অবয়ব, তৈরী করেছি। অতঃপর আমি ফেরেশতাদেরকে বলছি-আদমকে সেজদা কর তখন সবাই সেজদা করেছে, কিন্তু ইবলীস সে সেজদাকারীদের অন্তর্ভূক্ত ছিল না।
It is We Who created you and gave you shape; then We bade the angels bow down to Adam, and they bowed down; not so Iblis; He refused to be of those who bow down.
قَالَ مَا مَنَعَكَ أَلاَّ تَسْجُدَ إِذْ أَمَرْتُكَ قَالَ أَنَاْ خَيْرٌ مِّنْهُ خَلَقْتَنِي مِن نَّارٍ وَخَلَقْتَهُ مِن طِينٍ (12
আল্লাহ বললেনঃ আমি যখন নির্দেশ দিয়েছি, তখন তোকে কিসে সেজদা করতে বারণ করল? সে বললঃ আমি তার চাইতে শ্রেষ্ট। আপনি আমাকে আগুন দ্বারা সৃষ্টি করেছেন এবং তাকে সৃষ্টি করেছেন মাটির দ্বারা।
((Allah)) said: "What prevented thee from bowing down when I commanded thee?" He said: "I am better than he: Thou didst create me from fire, and him from clay."
সুরা হিজর এর দুটি আয়াতে আছেঃ
وَلَقَدْ خَلَقْنَا الإِنسَانَ مِن صَلْصَالٍ مِّنْ حَمَإٍ مَّسْنُونٍ (26
আমি মানবকে পচা কর্দম থেকে তৈরী বিশুস্ক ঠনঠনে মাটি দ্বারা সৃষ্টি করেছি।
We created man from sounding clay, from mud moulded into shape;
وَالْجَآنَّ خَلَقْنَاهُ مِن قَبْلُ مِن نَّارِ السَّمُومِ (27
এবং জিনকে এর আগে লু এর আগুনের দ্বারা সৃজিত করেছি।
And the Jinn race, We had created before, from the fire of a scorching wind.
আয়াত গুলোতে স্পষ্ট ভাবে উল্লেখ আছে যে, জীন আগুনের তৈরি ।
আর আমরা এও জানি যে, আগুনের কোন ছায়া পরেনা । নিচের এই ছবিতে দেখুনঃ
অথচ উপরে উল্লেখিত জীনের জবান বন্দিতে জীন বলেছেঃ নাপাক শরীরে তার ছায়ায় উপর পা দেয়ার কারন সে একজন মানুষের উপর শাস্তি সরুপ ভর করেছে । তাহলে জীনদের কি ছায়া আছে ? তাহলে স্বাভাবিক যুক্তি মতে, যদি জীনদের ছায়া থাকে তবে আগুনের ছায়া থাকেনা কেন ?কারন কোরআনে উল্লেখ আছে জীন আগুনের তৈরি ।
আমার জানা মতে, কোরানের এমন কোন আয়াত নজরে পড়েনি যেখানে উল্লেখ আছে যে জীন মানুষের উপর আছর করে । আল্লাহ একটা আয়াতে জীনদের বিষয়ে মানুষকে বলেছেনঃ যে তারা (জীন জাতী ) তোমাদের দেখে কিন্তু তোমরা তাদের দেখতে পাওনা ।সেখানে একটা মানুষ তাদের অজানায় ছায়া (বিকল্প মতে যদি ছায়া থেকেই থাকে )পদদলিত করে সেখানে মানুষের দোষ কোথায় ?
বরং আল্লাহ্ কিছু জিনকে সুলাইমান (আঃ) এর জন্য বশিভুত করে দিয়েছিলেন। যারা সুলাইমান( আঃ) আদেশে ভাস্কর্য ,প্রাসাদ চৌবাচ্চা নির্মাণ করে দিত ।
হাতের কনিষ্ঠ আঙ্গুলে অগ্রভাগে গিঁট দেয়ার বিষয়টা এখন বলি । ধরেন আপনার পরিবারে কেউ আপনাকে বুজতে পারছেনা । আপনার কিছু ছোট ছোট ভুলকে সবাই অন্য চোখে দেখছে । সবাই আপনাকে এড়িয়ে চলছে । বাড়ীর মানুস থেকে শুরু করে মহল্লার মানুষেরা পর্যন্ত ।বাচ্চারা আপনাকে দেখে ভয়ে দূরে সরে যাচ্ছে ।একটা মানুষকেও আপনি বুঝাতে পারলেন না যে আপনি ঠিক আছেন । এছাড়া তাবিজ ,পানি পড়া দিয়ে আপনাকে অর্ধেক পাগল করে তুলেছে ।এবং আপনি এও শুনেছেন যে, এক হুজুর এনে আপনাকে মারধর করে আপনার উপর থেকে জীন সরাবে । তখন আপনি কি করবেন? নিচ্চয় সুজক খুজবেন বাড়ি থেকে পালানোর ।যদি আপনি লোকচক্ষুর অন্তরালে পালাতে সক্ষম হন তবে মহল্লার সবাই যেনে যাবে জে,আপ্নার উপর সত্যিই জিনের আসর আছে।জিন আপনাকে গায়েব করে তাদের দেশে নিয়ে গিয়েছিল। আর যদি আপনি নিজে একটু সুবর করেন যে দেখি এরা কি করে। তখন এসব হুজুর ফুজুর যেদিন আপনার ট্রিটমেন্ট করার অজুহাতে আপনার কনিষ্ঠ আঙ্গুলের অগ্রভাগে কষে গিঁট দিয়ে বলবেঃ বল তোর নাম কি ?ম্রিত্তুসম অসহনীয় বাথা সহকারে আপনি বলতে বাধ্য হবেন আমার নাম জদু,মদু,সদু । কোথায় থাকিস ? বেল তলা ,জামতলা, শিমুলতলা মুখে যা আসবে বলে বাঁচতে চাইবেন ।আসলে মানুষকে এই বিভ্রম থেকে স্বাভাবিক পর্যায়ে নিয়ে আসতে এই শাস্তির কৌশল দেয়া হয় বাস আর কিছু নয়। আসলে জীন ভুতের আছর জাতীয় বিষয় আসলে এক প্রকার মানুষিক রোগ ।মানুষের অবচেতন মনের বিলাপ ।কিছু কিছু মানুষ গভীর রাতে চোখ বন্ধ করে হাটে তাও আবার নিখুত ভাবে ।একাকিত্তে একজন মানুষ দীর্ঘদিন দিন জাপন করতে করতে কিছুটা মানুষিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে ।সাধারণত এই বাপার গুলো গ্রামে বেশি দেখা যায় ।একটা উড়তি বয়সের মেয়ে (টিন এজ) যে যুবতি আর কিশোরীর ঠিক মাঝামাঝি সময়টা অতিবাহিত করে । সেই কিশোরী তার কিশোরী মনোভাব নিয়ে একটা উচু পেয়ারা গাছে উঠে বসতেই পারে কারন সে তার জিবনের দীর্ঘ দিন এই কার্যক্রম করে এসেছে ।তার মধ্যে যুবতী আচরনের আত্মপ্রকাশ ঘটাতে একটু সময় লাগাটায় স্বাভাবিক । কিন্তু গ্রামের মূর্খ মানুষেরা এই সব আচরণকেই জীনের আছর বলে তকমা দিয়ে দেয় । একটা সুস্থ মানুষকে যদি দিনের পর দিন পাগল বলা হয় তবে সুস্থ মানুষ পাগল হতে বাধ্য ।জীন মানুষকে আছর করবে কোন দুঃখে । মানুষের সাথে কি তার শত্রুতা ?কারো সাথে হিংসা ,বিদ্বেষ , শত্রুতা হয় নারী ,গাড়ি, বাড়ি আর টাকা পয়সা নিয়ে ।এদের সাথে তো আমাদের এই নিয়ে কোন কাড়া কাড়ি মারা মারি নেই । নাকি আল্লাহ্ আদমকে জীনদের উপর মর্যাদা দিয়েছে বলে জিনেরা মানুষের উপর সেই আক্রোশ এখনো পুষে রেখেছে ?যদি তাই হয় কিন্তু এর দলিল কই ??
©somewhere in net ltd.