নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

যা মনে আসে তাই লিখি।

স্বর্ণবন্ধন

একজন শখের লেখক। তাই সাহিত্যগত কোন ভুল ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

স্বর্ণবন্ধন › বিস্তারিত পোস্টঃ

মহামারীর নিত্যবয়ান

০৯ ই এপ্রিল, ২০২০ ভোর ৪:০৬

লকডাউন দরকার কি দরকার না, চলছে কি চলছেনা, তাই নিয়ে বিস্তর আলোচনা চলছে টকশোতে, ফেজবুকের নিউজফিডে পাড়ার ঝগড়ার মতো গরল উগরে দিচ্ছে একদল লোক। এতো কিছু ভেবে পেটে টান পড়া লোকদের সম্ভবত চলেনা। আমার মতো মধ্যবিত্তও মানুষ গুলোও তাই করোনার দিনে খেটে খাওয়া মানুষ বনে গিয়েছে। সকাল ছয়টায় লম্বা রাস্তা হেঁটে পার হবার পরিকল্পনা মাথায় রেখে বের হলাম রাস্তায়। পিছনে সম্ভবত কয়েক জোড়া চোখ ছলছল করে তাকিয়ে ছিল, আমি পিছন ফিরলাম না। বাসা থেকে একটু দূরেই মূল সড়ক। নিশ্চয়ই জীবনানন্দের হেমন্তের মাঠের মতো সুনসান হবে এই ভেবে মাস্কের ভিতরে একটা বুকভরা শ্বাস নিয়ে তাকালাম! কিন্তু একি, রাস্তায় সারি সারি রিকশা ভ্যান চলছে, তাদের সর্বোচ্চ গতিতে; সিটি বাসের দিনে যে সুযোগ তারা পায়না। সত্যি বলতে তার ভালোই লাগল, অন্তত যেতে কষ্ট হবেনা ভেবে। একটা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের মাইক্রোবাস পাঠানোর কথা। নির্ধারিত জায়গায় দাঁড়ালাম। কিন্তু সে একা নয়, এখানে সম্ভবত আরো অনেককে পিক করার কথা, মেলার মতো জমাট বাঁধতে সময় লাগলোনা বেশিক্ষণ। মানুষকে দেখে এতো ভয় কখনো আগে লাগেনি, আজ যেমন লাগল। ক্রমশ বাড়তে থাকা ভিড় থেকে পিছিয়ে দাঁড়ালাম। মানুষকে দেখে ভয় লাগছে কেন জানি। তবে কি আগামী দিন গুলোতে সব পাল্টে যাবে, মানুষ ভয় পাবে মানুষকে, অনেক মানুষের উপস্থিতি আর মানুষকে সঙ্ঘের সাহস যোগাবেনা। এই অদৃশ্য ভাইরাস সম্ভবত মানুষের সামজিকতার শরীরের স্থায়ী ছাপ রেখে যাবে। সময় পার হয়ে যাচ্ছে, ধুর। বাসটা আসছেনা। পাশে দাঁড়িয়ে থাকা একজন ধীরে ধীরে আমার দিকে এগিয়ে আসছে, তার চোখ আমার বুকের উপর ঝোলানো আইডেন্টিটি কার্ডটার দিকে, সম্ভবত কৌতূহল বশত। একহাত দূরত্বের মধ্যে আসতেই শরীর গুলিয়ে উঠল, আমি লাফ দিয়ে সরে গেলাম আরো পিছনে। বেচারা ভড়কে গেলো পুরোদমে, হয়তো গল্প জমানো টাইপের লোক, গল্প জমানোর ধান্দায় ছিল। লজ্জায় মাথা নীচু করে সরে গেলো দ্রুত। কি জানি উনারও হয়তো মনে পড়ল টিভিতে, ফেসবুকে প্রচারিত সতর্কবার্তা, আমাদের নতুন শেখা টার্ম সোশ্যাল ডিসটেন্স। উনাদের গাড়িটা কিছুক্ষণ পর চলে এলো, জড়ো হওয়া মানুষগুলো কি সুশৃঙ্খল ভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, সবার মধ্যে কমপক্ষে এক-দুই ফুট দূরত্ব। তার মানে আচরণগত বদল এসেছে; হতে পারে সাময়িক পরিস্থিতি সাপেক্ষে, তবুও চোখে অদ্ভুত ঠেকল! এরই মধ্যে আরেকটা লোক আমার পাশেই এসে দাঁড়িয়েছে, মাস্কটা টেনে নাকের কাছে তোলা, মুখটা অদ্ভুতভাবে বের করা। পাশে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর থুতু ফেলতে লাগলেন। আচ্ছা ব্যাপার তো! এই জাতির সবার কি এসকেরিস লাম্ব্রিকয়েডস এর ইনফেকশন নাকি। এই টাইপের গুড়া কৃমি হলে অকারণে বেশি বেশি থুতু আসে। ভাবার বা তার সাথে লাগার মতো অবস্থায় আমি নেই এখন। এক লাফে সেখান থেকেও সরে গেলাম। এখন মনে হচ্ছে ঢাকার রাস্তায় প্রতি ইঞ্চিতে বোধ হয় থুতু ছিটানো আছে। রাস্তায় ময়লার লেইয়ার দেখেতো মনে হচ্ছেনা সিটি করপোরেশনে কিছু ছিটিয়েছে আর ছিটালেও সেটা এখন কার্যকর আছে। নির্ধারিত বাসটা আসেছে না অথবা পার হয়ে গিয়েছে। অনেক গুলো ফাঁকা সিএনজি একটু আগেই পার হয়ে গেলো। অপেক্ষা করলে হয়তো পাবো, কিন্তু পা দুটো এমন অদ্ভুতভাবে শিরশির করছে। মানুষের শরীরের আলাদা অংশ ভিন্নভাবে ভয় পায় নাকি, আমার পা দুটো মনে হয় ভয় পেয়েছে। একটা রিকশা থামালাম। এদের বেশি কিছু বলতেই হয়না এখন, শহরের যেকোন জায়গায় যেতে রাজী থাকে। উঠে পড়লাম। রিকশাচালকের বয়স বেশি নয়, বিশ থেকে ত্রিশের মাঝে। মাস্কের আড়ালে ঢাকা মুখ দেখে আন্দাজ করা সহজ নয়। রিকশাটা মনে হয় উড়েই চলল। একটা মোড়ে কয়েকটা পুলিশ দাড়িয়ে। তাকিয়ে দেখলেও এগিয়ে আসলোনা। রিকশাটা সংসদ ভবনের প্রশস্ত রাস্তায় গড়্গড় করে এগিয়ে চলল। আরো খানিকটা আগানোর পর হঠাত রিকশাচালক দিলখোলা গলায় বলে উঠলো-‘দয়ালের খেলা দেখলেন স্যার? যে রাস্তার রাজা আছিলো পাজেরো! সব হাওয়া! এখন রাস্তার রাজা হইলো রিকশা!' জিজ্ঞাসা করলাম বাড়ি কই। সদরঘাটের দিকে! আপনার কষ্ট হয়না? একটু চুপ করে থেকে বলল-‘স্যার পেটে টান পড়লে সদরঘাট থেকে আমিনবাজার প্যাডেল মারা কোন ব্যাপার না!’

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই এপ্রিল, ২০২০ সকাল ১০:৩৬

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: এই যুগে সর্বস্তরের মানুষ এত অসহায় বোধ করবে তা কারো কল্পনায়ও ছিল না।

২| ০৯ ই এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ১:৪৪

রাজীব নুর বলেছেন: ভালো লিখেছেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.