নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ধোঁয়াশা

লেখার চেয়ে পড়ায় আগ্রহী। ধার্মিক, পরমতসহিষ্ণু।

রওশন জমির

লেখার চেয়ে পড়ায় আগ্রহী। পরমত-সহিষ্ণু, শালীন ও ধর্ম-পরায়ণ।

রওশন জমির › বিস্তারিত পোস্টঃ

কওমি মাদরাসা: সম্ভাবনার অপার খনি

১৯ শে মে, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৪২



সরকার পরিচালিত ধর্মনিরপেক্ষ সাধারণ শিক্ষা-ব্যবস্থা এবং ধর্মাশ্রিত মাদরাসা-শিক্ষার বাইরেও বাংলাদেশে দুটি শিক্ষা ব্যবস্থা বিদ্যমান। একটি হল বিত্তবানের ইংলিশ মিডিয়াম, অপরটি হল তুলনামূলক বিত্তহীন-নিম্নবিত্ত বা কদাচিৎ মধ্যবিত্তের পরকালনির্ভর কওমি মাদরাসা।



সুদীর্ঘকাল তথা মুসলিম শাসনামলে এ মাদরাসা-শিক্ষাই মুসলিম সমাজের একমাত্র শিক্ষার বাহন ও মাধ্যম ছিল। তখন শিক্ষিত বলতে শুধু এ ধারা থেকে পাঠ-নেওয়া মানুষদেরই বোঝানো হত। যদিও কারো কারো মতে, তখনকার ধর্মভিত্তিক সিলেবাসে জাগতিক ও প্রয়োজনীয় অনেক বিষয়ও অন্তর্ভুক্ত ছিল, যা এখন নেই।



ব্রিটিশ শাসনের সময় নানা অবহেলা-অবিশ্বাস আর কূটচালের কারণে উপমহাদেশে মাদরাসা-শিক্ষা নতুন মাত্রা লাভ করে। ব্রিটিশ-বিতাড়নের পরও এ মাদরাসার ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকে, ক্ষেত্রবিশেষে গতিলাভ করে। এর পরিচালনা, অর্থায়ন ও চিন্তা-চেতনায় পরিবর্তন এলেও যেহেতু শুরু থেকেই তা জনতার অনুদান নির্ভর, তাই এর নাম কওমি তথা জাতীয় মাদরাসা বা শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান; আর এ জন্যই একে সব সময় স্বকীয়তা বজায় রেখে চলতে হয়। কোনো শাসক বা গোষ্ঠীর সরল রেখায় একে লীন হলে চলে না।



পুঁজিবাদের করাল গ্রাসে এখন মানুষ বিনে পয়সায় হাসে না, কাঁদেও না। কিন্তু কওমি মাদরাসায় এখনো কোনো শিক্ষা-বিনিময় নেওয়া হয় না। তাই একান্ত গরিব মানুষজন সহজেই এর দ্বারস্থ হতে পারে। এর শিক্ষা-উপকরণ বিনা মূল্যে বা সুলভ মূল্যে প্রদান করা হয় বিধায় বিত্তহীন বা স্বল্পবিত্তের লোকজনও এতে স্বস্তি পান। অবশ্য ইদানিং কোনো কোনো ছাত্রের নিকট থেকে, পিতার উপার্জন অনুসারে, সুনির্দিষ্ট পরিমাণে ফি নেওয়া হয়। তা আবার প্রয়োজনের তুলনায় নিতান্ত কম। যাই হোক, সন্তানকে ধার্মিক হিসাবে গড়ে তোলার লক্ষ্যেই, কারো কারো মতে, ন্যূনতম শিক্ষিত বানানোর উদ্দেশ্যে এখানে পাঠানো হয়।



কওমি মাদরাসার সিলেবাস একান্ত ধর্মনির্ভর বিষয়-আশয়। জগৎ-বিষয় সম্পর্কে যে-কোনো রকমের ধারনা ও শিক্ষা তাদেরকে প্রায়োগিক জীবন থেকেই অর্জন করতে হয়। এ জন্যই উচ্চাভিলষী কল্পনা তাদেরকে কখনো তাড়া করে না, গ্রাস করার তো প্রশ্নই আসে না। তারা যে কোনো জায়গায় যে কোনো অবস্থাতে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারে। এ বিষয়ে তাদের ধৈর্য-ক্ষমতা ও উপযোগিতা অসাধারণ।



কওমি ব্যবস্থার পাঠ-পরিক্রমা যেহেতু একান্ত ধর্মসংশ্লিষ্ট, তাই ধর্মনির্দেশিত এবং সাক্ষাৎ উস্তাদের মুখ থেকে শোনা ও ব্যাখ্যাগত বিষয়ের প্রতি তাদের দারুণ আস্থা। এ আস্থা-সূত্রেই তাদের জীবন পরিচালিত হয়। উস্তাদের নিকট থেকে যে মূল্যবোধ ও শিক্ষা তারা অর্জন করেন, ধারন করেন, তা আমৃত্যু চর্চা করার চেষ্টা করেন। যদি কখনো বিচ্যুতি ঘটে এবং কেউ তা ধরিয়ে দিলে, অন্য ধারায় শিক্ষিত মানুষজনের মতো গোঁ ধরে বসে থাকেন না বা নিজের পক্ষে অপযুক্তি দাঁড় করানোর চেষ্টা করেন না। বরং বিনীতভাবে তা স্বীকার করেন এবং নিজেকে শুধরে নেন।



যেহেতু তাদের জীবন কষ্টে-সৃষ্টে অতিবাহিত হয়, তাই পরবর্তী জীবনকেও বিত্তহীনভাবে কাটিয়ে দেবার এক ধরনের মানসিক প্রস্তুতি থাকে। যদি বাংলাদেশের সকল ধরনের শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানের পড়–য়াদের মন-মানসিকতাই তাদের মতো স্বল্পতুষ্ট হত, তাহলে দেশে অন্য রকম স্বর্গীয় পরিবেশ তৈরি হত। বটে, কওমি মাদরাসায়ও বৈষয়িক উন্নতির পক্ষে। কিন্তু বিলাসী ভোগের পক্ষে নয়, তারা বরং ত্যাগেরই পক্ষে।



সব চেয়ে বড় কথা হল সারা পৃথিবীতে এখন চলছে পুঁজিবাদের সংক্রমণ। সদর থেকে অন্দর- এ সংক্রমণ কোথায় নেই? কিন্তু এই দরিদ্র মানুষগুলো অভাব-অনটনের যন্ত্রণা সহ্য করেও ধর্মনির্দেশিত ‘জুহদ’ ও ‘তাকওয়া’ তথা খোদা-ভীতি ও আত্মত্যাগের পথই অনুসরণ করে চলেন। পুঁজি এখানে এখনো দাঁত-নখ বসাতে পারে নি। তবে এর প্রভাব নানাভাবে ঢুকার পথ খুঁজছে।



দেশের মফস্বল বা তৃণমূল পর্যায়ে মসজিদ মাদরাসায় কওমির ছেলেরাই ধর্মের সেবায় অধিক নিয়োজিত। সাধারণ জনতার ওপর তাদের ব্যাপক প্রভাব। তাদের পেশি শক্তি নেই বটে, কিন্তু আত্মার জোর অনেক। আর এ জন্যই সাধারণ জনতার কাছে তাদের আসন পাকাপোক্ত।



অন্যান্য ধারায় শিক্ষিত মানুষজনের অনুসারী সবাই শহুরে এবং সংখ্যায় কম। গ্রামে তাদের অনুসারী নেই বললেই চলে। অথচ কওমি মাদরাসায় শিক্ষিত লোকদের অনুসারী যেমন গ্রামে আছে, তেমনই শহরেও আছে। আর শত টানাপোড়েনেও ওরাই যেহেতু ধর্মের প্রতিনিধিত্ব করে, নানা আনুষ্ঠানিকতায় নেতৃত্ব দেয়, তাই তাদের অনুসারী কমবে না।



এ সমস্ত কারণেই কওমি মাদরাসা-ব্যবস্থা অপার সম্ভাবনার আধার। এরা সংগঠিত হয়ে যে কোনো দিকে ঝুঁকে পড়লে, ধাবিত হলে টাল সামলানো কঠিন হবে। কিন্তু একান্ত ধর্মের বাইরে তারা মনোযোগ নিবদ্ধ করে না। কারণ, ধর্মের বাইরে অন্য কোনো বিষয়ে তাদের আগ্রহ নেই। সে শিক্ষাটাও তাদের দেওয়া হয় না। উপরন্তু জনতার অনুদান নির্ভর প্রতিষ্ঠানে জনতার বিরাগভাজন হওয়ার ঝুঁকি প্রবল। তাই এরা নির্জঞ্ঝাট জীবনযাপন করতে অধিক আগ্রহী।



সকল কওমি মাদরসা-ই আবাসিক। এর অধকাংশ শিক্ষকও আবাসিক। ছাত্রদের চব্বিশ ঘণ্টার একটা সুনির্ধারিত রুটিন থাকে, এই রুটিনমাফিক সবাইকে চলতে হয়। যদি এর শিক্ষকগণ এই চব্বিশ ঘণ্টার রুটিনকে জগতের চাহিদা ও ধর্মীয় নির্দেশনা অনুসারে আরো বিন্যস্ত ও বিস্তৃত করেন, ছাত্রদের দক্ষতা-যোগ্যতা যে কোনো চ্যালেঞ্জের মোকাবেলা করতে সক্ষম হবে। অর্থাৎ ধর্মের মূল শিক্ষার সঙ্গে সঙ্গে জাগতিক চাহিদার বিষয়গুলো রপ্ত করার এখানে যে অবারিত সুযোগ রয়েছে, তা অন্য কোথাও নেই। কিন্তু একে ব্যবহারের করার মানসিকতা তৈরি হলেই সুফল ফলবে।



আবার যেহেতু আবাসিক, তাই ছাত্রদেরকে অভিন্ন মানসিকতায় গড়ে তোলার ব্যাপারে সফল হওয়ার সম্ভাবনা শতভাগ। কওমি মাদরাসার ছেলেদের ধর্মীয় দরদের ব্যাপারে কারোই কোনো আপত্তি থাকার কথা নয়। কিন্তু সমস্যা হল, তাদের মানসিক চাহিদা পূরণের বা দাবি পূরণের যে উপায় বা প্রক্রিয়া, তা যুগসংশ্লিষ্ট নয়। তাই বিষয়ের সঙ্গে সঙ্গে তাদেরকে যুগচাহিদার বিষয়েও সচেতন করতে হবে, প্রশিক্ষণ দিতে হবে।



ইসলাম ধর্ম বা কওমি ঘরানার শ্রেষ্ঠত্ব কিন্তু মৌখিক উচ্চারণের মাঝেই সীমাবদ্ধ রাখলে হবে না। কথা দিয়ে মানুষের বা কোনো সম্প্রদায়ের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণিত হয় না, তা হয় প্রায়োগিক জীবনে আচরণের নিরিখে। নিজের মতামত ও ব্যাখ্যা অন্যের উপর চাপিয়ে দেওয়ার মাঝে শক্তির প্রকাশ ঘটতে পারে, শ্রেষ্ঠত্বের নয়। আবার ইসলাম ধর্ম কিন্তু অপরাপর সকল ধর্মের অস্তিত্বকে অস্বীকার করে না। বরং সবগুলোর অস্তিত্ব ও অধিকারকে স্বীকার করে। সুতরাং গোলকায়িত বিশ্বে শুধু নিজের স্পর্ধাধর্মী উপস্থিতিই শেষ কথা নয়, পরমত ও পরধর্ম-সহিষ্ণুতাও একটি বড় শর্ত। এ সব বিষয়-আশয় নিয়ে কওমি মাদরাসা যদি সামনে এগিয়ে যায়, তার সামনে কোনো বাধা তৈরি হওয়ার কথা নয়।

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ১৯ শে মে, ২০১৩ রাত ৮:২০

শোয়েব আদনান বলেছেন: সহজ কথাটা অনেক প্যাচায়া বললেন। সোজা কথা হলো, কওমী মাদ্রাসার আধুনীকায়ন করতে হবে। যদি কোন হুজুর বা ব্যাক্তি এতে বাধা দেয় তারে ব্রাশ ফায়ারে মাইরা ফেলা উচিত। কারন লাখ লাখ কোমল মতি শিশুদের গন্ড-মূর্খ বানানোর অধিকার এই দেশের কারোরই নাই। শুধু কোরআন চোখ বুইঝা মুখস্ত করলে আর উর্দু ভাষা শিখলেই আলেম হওয়া যায় না। এসব শিশুদের কোরআন ও হাদিসের পাশাপাশি সব শিক্ষাই অল্প অল্প কইরা শিখাইতে হবে।

২০ শে মে, ২০১৩ সকাল ৮:৪২

রওশন জমির বলেছেন: সালাম।

সহমত।

ধন্যবাদ।

২| ১৯ শে মে, ২০১৩ রাত ৮:২৭

মনোজ মুকুট বলেছেন: লেখাটি ভাল লেগেছে। অসহায় কুলহারা কওমী শিক্ষার্থীদের জীন, দর্শন এবং অবস্থার প্রতি আপনার দরদ উপলব্ধি করছি। এর সম্ভাবনা অপার নিঃসন্দেহে। কিন্তু আমাদের ব্যর্থতা সেই সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে পারিনি বা পারছি না। উপরন্তু তাদেরকে আজ রাজনীতির গুটি বানাচ্ছি। তাদের চিন্তার পশ্চাদপদতা নিয়ে আমরা হাঁক-ডাক দিয়ে মরি। কিন্তু কেউ সেই পশ্চাদপদতার গর্ত থেকে তাদেরকে টেনে তুলবার কথাও ভাবি না। এটি আমাকে মর্মাহত করে।

২০ শে মে, ২০১৩ সকাল ৮:৪৫

রওশন জমির বলেছেন: পিছিয়ে পড়া মানুষদের জন্য কল্যাণমূলক ভাবনাটুকু অব্যাহত থাকলে মুক্তির উপায় অবশ্যই বের হবে। মানুষের জন্য আপনার সহানুভূতি মুক্তির দ্বার খুলে দিক, এই কামনা।

ধন্যবাদ।

৩| ১৯ শে মে, ২০১৩ রাত ৮:২৯

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: নিজের মতামত ও ব্যাখ্যা অন্যের উপর চাপিয়ে দেওয়ার মাঝে শক্তির প্রকাশ ঘটতে পারে, শ্রেষ্ঠত্বের নয়। আবার ইসলাম ধর্ম কিন্তু অপরাপর সকল ধর্মের অস্তিত্বকে অস্বীকার করে না। বরং সবগুলোর অস্তিত্ব ও অধিকারকে স্বীকার করে। সুতরাং গোলকায়িত বিশ্বে শুধু নিজের স্পর্ধাধর্মী উপস্থিতিই শেষ কথা নয়, পরমত ও পরধর্ম-সহিষ্ণুতাও একটি বড় শর্ত। এ সব বিষয়-আশয় নিয়ে কওমি মাদরাসা যদি সামনে এগিয়ে যায়, তার সামনে কোনো বাধা তৈরি হওয়ার কথা নয়।

++

২০ শে মে, ২০১৩ সকাল ৮:৪৫

রওশন জমির বলেছেন: ধন্যবাদ

৪| ১৯ শে মে, ২০১৩ রাত ৮:২৯

মনোজ মুকুট বলেছেন: * 'জীন' নয় ‌'জীবন' হবে

২০ শে মে, ২০১৩ সকাল ৮:৪৭

রওশন জমির বলেছেন: ভুল ধরিয়ে দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ। আসলেও স্ক্রিনে বসে এক ধাপে নির্ভুল রাখাটা আমার জন্য কষ্ট হয়ে যায়। তবু চেষ্টা করতে তো বাধা নেই!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.