নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ধোঁয়াশা

লেখার চেয়ে পড়ায় আগ্রহী। ধার্মিক, পরমতসহিষ্ণু।

রওশন জমির

লেখার চেয়ে পড়ায় আগ্রহী। পরমত-সহিষ্ণু, শালীন ও ধর্ম-পরায়ণ।

রওশন জমির › বিস্তারিত পোস্টঃ

বৈশাখি ফতোয়া!

১৯ শে এপ্রিল, ২০১৫ বিকাল ৫:০৯



ক। পহেলা বৈশাখের উৎপত্তিটা আসলে কোথায়? এর উদ্ভব কি হিন্দুর হাতে, না মুসলিমের হাতে? এর উদ্ভাবনটা ছিল ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে, না জীবন-বাস্তবতার নিরিখে? এই সব কিছু না জেনেই ধর্মের ফেরিওয়ালারা এ-নিয়ে হিন্দুয়ানি হিন্দুয়ানি বলে চিৎকার করছে। ভাগাড়ের কাকের চেয়েও এদের চিৎকার ধ্বনি বেশ তীব্র!

সম্রাট আকবর যদি এর উদ্ভাবক হয়ে থাকেন, তা যে কারণেই হোক, এর কৃতিত্বের দাবিদার মুসলিমরা। কিন্তু আত্মরতিতে ক্লান্ত মুসলিম-সমাজের এ-নিয়ে ভাবার অবকাশ নেই। কারণ, ইতিহাসের সদর রাস্তা ছেড়ে এরা তথাকথিত ধর্মান্ধতার (?) আশ্রয়েই প্রশান্তি খুঁজে পায়। তাই তাদের উদ্ভাবিত বর্ষ-প্রথা এখন বেহাত হচ্ছে। এই ব্যর্থতাকে ঢাকার জন্য ফতোয়ার জিগির তুলছে। যদিও ফতোয়ার প্রভাব সমাজে খুব একটা নেই।

খ। সামন্ত-ব্যবস্থার অনেক প্রথা-ই পুঁজির গ্রাসে আপন চরিত্র হারাতে বসেছে। এই মুসলিমদের ঈদের কথা-ই ধরা যাক। ঈদ যখন আসে, তখন আমরা কতজন আসলে একে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায়ের অন্যতম মাধ্যম হিসাবে গ্রহণ করি? হ্যাঁ, নতুন পোশাক ও হরেক রকম খাবার-দাবারের ব্যাপারে কারোই বিতৃষ্ণা থাকে না। অথচ ইতিহাস ঘাটলে, রাসুলের হাদিসের ভাষ্য খুঁজলে সহজেই চোখে পড়বে, শুকরিয়া আদায়ের উচ্চতর স্তর হল এই ঈদ উৎসব! অর্থাৎ ঈদ আসে, ঈদ যায়, কিন্তু ইসলামের শিক্ষা আমরা তোড়াই কেয়ার করি। এ-নিয়ে আমাদের কোনো প্রশ্ন জাগে না। প্রশ্ন জাগে, ধর্মকেন্দ্রিক নয়, রাষ্ট্রকেন্দ্রিক উদ্ভাবিত একটি সার্বজনীন উৎসবের ব্যাপারে!

গ। এখন ঈদও পুঁজির কবলে পড়ে এর মূল শিক্ষা হারাতে বসেছে। হিন্দুদের পুঁজাও। বৎসরের সূচনায় সার্বজনীন উৎসব বাংলা নববর্ষও পুঁজির স্রোতে পড়ে ভেসে যাচ্ছে। এই স্রোতে সকল মানুষই হারিয়ে যাবে। ধর্ম এখানে কোনো বাধাই তৈরি করতে পারবে না। ইসলাম ধর্মের ভেতরে অবশ্য সেই শক্তি ও ক্ষমতা ছিল। দুঃখজনক হল, ধর্মের ফেরিওয়ালারা সে বিষয়ে অজ্ঞ। এ জন্যই আজ এ অবস্থা। এরা ধর্ম গেল, ধর্ম গেল রব তুললেও মানুষ নীরবে পুঁজির কোলেই গড়িয়ে পড়ে, এর বাঁধনে জড়িয়ে পড়ে। কারণ, পুঁজি মানুষকে আকৃষ্ট করার নানা পন্থা অবলম্বন করে। পুঁজি কেন এবং কীভাবে মানুষকে টেনে নেয়, এর খোঁজ এরা নেয় না; বোঝেও না। আর তাই এরা পাল্টা স্রোত বা বাঁধ তৈরি করতে ভাষণভাবে অক্ষম। আর পৃথিবীতে অক্ষমরাই হঠকারী রকমের কাজ করে মানুষের মনে বিরক্তি উৎপাদন করে থাকে অহরহ।

ঘ। বাংলাদেশে যেই দিন পহেলা বৈশাখ পালন করা হয়, হিন্দুরা সেই দিন চৈত্র-সংক্রান্তি পালন করে। হিন্দু পঞ্জিকা মতে এরা এর পরের দিন পহেলা বৈশাখ পালন করে। তাহলে দেখা গেল, বাংলাদেশে যে পহেলা বৈশাখ পালন করা হয়, এর সঙ্গে অন্তত হিন্দু ধর্মের কোনো সংযোগ নেই। ১৪ তারিখে বাংলাদেশে পহেলা বৈশাখ পালিত হলেও কলাকাতর হিন্দুরা তা পালন করে ১৫ এপ্রিল। তবুও ফেরিওয়ালাদের চিৎকারে কান জ্বালাপালা!

ঙ। অশালীনতা, বেলেল্লাপনা কোনো কালে, কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। পহেলা বৈশাখের উৎসবকে এই সব ফেরিওয়ালারা বেলেল্লাপনার দিন বলে অভিহিত করে এর থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানায়। ওদের কথা হল, এই সমস্ত বেলেল্লাপনার জন্যই ধর্ষণ হয়! ধর্ষণের মনস্তত্বটা আসলে ভিন্ন জায়গায়, ভিন্ন মানসিকতায়। কারণ, প্রবল পর্দা-প্রথার মাঝেও এবং খোদ রাসুলের যুগেও জিনা হয়েছে। বোরকাপরা নারীও সৌদি আরবে ধর্ষণের শিকার হয়। আবার বিজু-বৈসাবি ইত্যাদি পাহাড়ি উৎসবে কখনো কোনো ধর্ষণের ঘটনা ঘটে নি। তাই ধর্ষণকে শুধু উৎসবের সঙ্গে জুড়ে দিয়ে চিৎকার করাটা অযৌক্তিক!

চ। বৈশাখে যে শাড়ি পরা হয়, কপালে টিপ পরা হয়, এগুলো নিয়েও কারো কারো আপত্তি। তাদের মতে, এগুলো হিন্দুয়ানি রীতি। যে কোনো সমাজবাহিত রীতি ধর্মসম্পৃক্ত হতেই পারে। কিন্তু এ যদি মূল ধর্মের অংশ না হয়, তাহলে এ নিয়ে এলার্জি প্রদর্শনের বোধ হয় খুব একটা প্রয়োজন নেই। রাসুলের হাদিসে যে সাদৃশ্যের ব্যাপারে নিরুৎসাহিত বা নিষিদ্ধ করা হয়েছে, তা ধর্মীয় প্রতীককেন্দ্রিক। অর্থাৎ যা অন্য ধর্মের প্রতীক, সে বিষয়ে কেউ অনুসরণ করতে পারবে না। শাড়িকে কিন্তু হিন্দু ধর্মের প্রতীক বলা যাবে না, যেমন সেলোয়ার কামিজকেও মুসলমানি পোশাক বলা যাবে না। এগুলো হল দেশকালগত কৃষ্টি। একই সঙ্গে নারীদের কপালে গোল টিপ পরাও হিন্দু ধর্মের আচার-প্রথার অংশ নয়। হ্যাঁ, সিঁথি বরাবর লম্বা লাল দাগটি ধর্মবিশ্বাস বা ধর্মাচারের অন্তর্ভুক্ত। এটা কোনো মুসলিম নারী করে না।

ছ। মানুষের প্রবৃত্তিটাই ভোগোন্মত্ততার বিশাল আকর। তাই কখনো সচেতনভাবে, কখনো অবচেতনভাবে ধর্ম থেকে দূরে সরে যেতে পারে। পুঁজির তোড়ে ভোগবাদিতার জোয়ারে ভেসে যেতে পারে। কিন্তু তখন ফতোয়ার সঙ্গীন নিয়ে খাড়া হলে মানুষ দৌড়ে পালাবে। তখন সঙ্গীন নয়, প্রয়োজন ভেতর থেকে উপচে-ওঠা দরদের। দূরদর্শী আলেম ও গুণীদের উচিত হবে, নেতিবাচক তড়িৎ কোনো মন্তব্য না করে গঠনমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করা। শুধু মাত্র এভাবেই সাধারণ মানুষকে ধর্মের দিকে আকৃষ্ট করা যেতে পারে। নিজ বিদ্যা-বুদ্ধি ও চরিত্র দিয়ে কাউকে আকর্ষণ করতে না পারলে শুষ্ক নীতিবাক্য কোনো কাজে আসে না। প্রবাদ আছে, শুকনো কথায় চিড়ে ভিজে না। তাই দরদি আলেমকে তরল বাক্য দিয়েই মানুষের মনজয় করার চেষ্টা করতে হবে।


পুনশ্চ:- বোম্বাই চানাচুর সবারই প্রিয়। বোম্বাই জিলাপিও। কোনো এক মাওলানার মুখ থেকে শুনেছি, আগের দিনে হজে যাওয়ার সময় হাজী সাহেবরা বোম্বাইতে গিয়ে জাহাজে উঠতেন। কেউ কেউ বাঙাল মুলুক থেকে বোম্বাই পৌঁছানোর আগেই হজের জাহাজ মক্কার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যেত। তখন এই জাহাজই ছিল শেষ ভরসা। জাহাজ-ফেল-করা বাঙালরা সে-বছর আর মক্কায় যেতে পারতেন না। কিন্তু যেহেতু হজের নিয়তে বাড়ি ছেড়েছেন, তাই বাড়ি ফেরার পরে তাদেরও হাজী বলা হত। শুধু হাজী নয়; বরং বোম্বাই হাজী অর্থাৎ এরা মূল গন্তব্যে না পৌঁছাতে পারলেও হাজী নাম ধারন করেছেন। তারা আবার সমাজের নানা বিষয়ে খুঁত ধরতেন। সেই রকমভাবে এখন, বোধহয়, সমাজে ব্যাপক হারে বোম্বাই মুফতি তৈরি হচ্ছেন। আর তাই এতো ফতোয়ার ঝনঝনানি!

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.