![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মানুষ কে ঘৃনা করার অপরাধে অতীতে কাউকে কখনো মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়নি। কিন্তু মানুষ কে ভালবাসার অপরাধে অতীতে অনেককেই হত্যা করা হয়েছে, ভবিষ্যতেও হয়তো হবে !!
আমাদের দেশে বিদ্যমান তিনটি আইনে ধর্ম অবমাননার অপরাধকে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে এবং এর সাজা বর্ণিত হয়েছে। ১৮৬০ সালের দ-বিধি, ১৮৯৮ সালের ফৌজদারি কার্যবিধি এবং ২০০৬ সালে প্রণীত তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনে ধর্ম অবমাননা সংক্রান্ত বিধান বলা আছে। উনবিংশ শতকে যখন দ-বিধি কিংবা ফৌজদারি কার্যবিধির মতো আইনগুলো প্রণয়ন হয়, তখন পৃথিবীতে কম্পিউটার ইন্টারনেটের প্রচলন হয়নি। এ কারণে সেসময়কার আইনগুলোতে বর্তমানের পরিবর্তিত পরিস্থিতির বহু কিছুই অন্তর্ভুক্ত হয়নি। বর্তমানে নতুন প্রজন্মের সমাজ এবং সামাজিক আচরণ অনলাইনে অভিবাসী হয়েছে। অনলাইনে ব্যক্তির আচরণ নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ সরকার ২০০৬ সালে প্রণয়ন করেছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন। আগের আইনগুলোতে ধর্ম অবমাননা সংক্রান্ত অপরাধের যে সাজা ছিল, নতুন আইনে সেই সাজাকে বৃদ্ধি করা হয়েছে বহুগুণ। আমাদের আইনে কোন কোন কাজকে ধর্ম অবমাননা বলা হয়েছে এবং এগুলোর সাজা কী, সেগুলো পর্যায়ক্রমে দেখে নেয়া যাক।
মসজিদ, মন্দির কিংবা ধর্মীয় স্থাপনা ভাঙা : দ-বিধির ২৯৫ ধারায় বলা আছে, যদি কোনো ব্যক্তি উপাসনালয় অথবা কোনো বিশেষ গোষ্ঠীর পবিত্র স্থাপনা ধ্বংস করে কিংবা এর সম্মান বিনষ্ট করে এবং তার এ কাজটিতে সংশ্লিষ্ট ধর্মটির অবমাননার উদ্দেশ্য থাকে অথবা কোনো নির্দিষ্ট গোষ্ঠী এ ধরনের কাজকে যদি তাদের ধর্মের প্রতি অবমাননা মনে করে, সে ক্ষেত্রে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে দুই বছর পর্যন্ত মেয়াদের কারাদ- অথবা অর্থদ- কিংবা উভয়দ-ে দ-িত করা যাবে।
ধর্মীয় অবমাননার উদ্দেশ্যে খোঁচাখুঁচিমূলক লেখা : দ-বিধির ২৯৫ক ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি স্বেচ্ছাপ্রণোদিত হয়ে বাংলাদেশের যে কোনো নাগরিকের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার অসদুদ্দেশ্যে লিখিত বা মৌখিক বক্তব্য দ্বারা কিংবা দৃশ্যমান অঙ্গভঙ্গি দ্বারা সংশ্লিষ্ট ধর্মটিকে বা কারো ধর্মীয় বিশ্বাসের প্রতি অবমাননা করে বা অবমাননার চেষ্টা করে, সে ক্ষেত্রে সেই ব্যক্তিকে দুই বছর পর্যন্ত মেয়াদের কারাদ- অথবা অর্থদ- কিংবা উভয়দ-ে দ-িত করা যেতে পারে। উল্লেখ্য, ১৮৬০ সালের মূল আইনে এ ধারাটি ছিল না। পরবর্তীতে ১৯২৭ সালে এক সংশোধনীর মাধ্যমে এ ধারাটি যুক্ত করা হয়।
নামাজ, পূজা ইত্যাদিতে বাধা দেয়া : দ-বিধির ২৯৬ ধারায় বলা আছে, ধর্মীয় উপাসনা কিংবা ধর্মীয় উৎসবে আইনগতভাবে অংশ নেয়া কোনো গোষ্ঠীকে যদি কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে বাধা প্রদান করে, তাহলে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে এক বছর পর্যন্ত মেয়াদের কারাদ- অথবা অর্থদ- কিংবা উভয়দ-ে দ-িত করা যেতে পারে।
কবর ধ্বংস করা, শেষকৃত্যে বাধা দেয়া : দ-বিধির ২৯৭ ধারায় বলা হয়েছে, যদি কেউ কোনো ব্যক্তির ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার উদ্দেশ্যে কিংবা সেই ব্যক্তির ধর্মকে অবমাননার উদ্দেশ্যে অথবা কোনো ব্যক্তির ধর্মীয় অনুভূতি আঘাতপ্রাপ্ত হতে পারে বা কারো ধর্মের অবমাননা হতে পারে_ সেটি জানা সত্ত্বেও কোনো ধর্মীয় উপাসনালয় কিংবা কোনো ধর্মের সমাধিস্থলে কিংবা কোনো ধর্মের শেষকৃত্যের স্থানে অনধিকার প্রবেশ করে অথবা শেষকৃত্যে অংশ নেয়া মানুষের ওপর কোনো বাধা প্রদান করে, সে ক্ষেত্রে অভিযুক্ত ব্যক্তি বা ব্যক্তিদের এক বছর পর্যন্ত কারাদ- অথবা অর্থদ- কিংবা উভয়দ-ে দ-িত করা যাবে।
ধর্ম অবমাননাকর আওয়াজ, অঙ্গভঙ্গি ইত্যাদির সাজা : দ-বিধির ২৯৮ ধারা অনুসারে, যদি কোনো ব্যক্তি বা ব্যক্তিরা কারো ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার উদ্দেশ্য থেকে কোনো শব্দ উচ্চারণ করে বা কাউকে শুনিয়ে ধর্ম অবমাননাকর কোনো আওয়াজ করে অথবা তাকে দেখিয়ে অবমাননকর কোনো অঙ্গভঙ্গি করে কিংবা তার দৃষ্টির মধ্যে অবমাননাকর কোনো কিছু স্থাপন করে, সে ক্ষেত্রে অভিযুক্ত ব্যক্তি বা ব্যক্তিদের এক বছর পর্যন্ত কারাদ- অথবা অর্থদ- কিংবা উভয়দ-ে দ-িত করা যাবে।
ধর্মীয় বিদ্বেষে উস্কানি দিলে পত্রিকা বাজেয়াপ্ত করার বিধান : ১৮৯৮ সালের ফৌজদারি কার্যবিধির ৯৯ ধারায় বলা হয়েছে, কোনো সংবাদপত্র যদি রাষ্ট্রবিরোধী কোনো কিছু বা এমন কিছু প্রকাশ করে যা নাগরিকদের মধ্যে শত্রুতা ও ঘৃণা তৈরিতে উস্কানি দেয় কিংবা ধর্মীয় বিশ্বাসে আঘাত হানে, সে ক্ষেত্রে সরকার ইচ্ছা করলে ওই সংবাদপত্রের সংশ্লিষ্ট কপিগুলো বাজেয়াপ্ত করতে পারে। তবে সরকারি এ আদেশের বিরুদ্ধে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি ইচ্ছা করলে হাইকোর্ট বিভাগে আবেদন করতে পারবেন।
অনলাইনে ধর্ম অবমাননার সাজা : ২০০৬ সালে প্রণীত তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় ইলেক্ট্রনিক ফরমে মিথ্যা, অশ্লীল অথবা মানহানিকর তথ্য প্রকাশ সংক্রান্ত অপরাধ ও তার দ- বলা হয়েছে। উলি্লখিত ধারা অনুসারে, কোনো ব্যক্তি যদি ইচ্ছাকৃতভাবে ওয়েবসাইটে বা অন্য কোনো ইলেক্ট্রনিক বিন্যাসে এমন কিছু প্রকাশ বা সম্প্রচার করে, যা মিথ্যা ও অশ্লীল বা সংশ্লিষ্ট অবস্থা বিবেচনায় কেউ পড়লে, দেখলে বা শুনলে নীতিভ্রষ্ট বা অসৎ হতে উদ্বুদ্ধ হতে পারে অথবা যার দ্বারা মানহানি ঘটে, আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটে বা ঘটার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়, রাষ্ট্র ও ব্যক্তির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয় বা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে বা করতে পারে বা এ ধরনের তথ্যাদির মাধ্যমে কোনো ব্যক্তি বা সংগঠনের বিরুদ্ধে উস্কানি প্রদান করা হয়, তাহলে তার এ কাজ হবে একটি অপরাধ। কোনো ব্যক্তি এ অপরাধ করলে অনধিক দশ বছর কারাদ-ে এবং অনধিক এক কোটি টাকা অর্থদ-ে দ-িত হবে।
৬৯ ধারা অনুসারে, সাব-ইন্সপেক্টর পদমর্যাদার নিচে নন, এরকম কোনো পুলিশ কর্মকর্তার লিখিত রিপোর্ট এবং নিয়ন্ত্রক বা ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোনো কর্মকর্তার পূর্ব অনুমোদন ছাড়া বিশেষ ট্রাইব্যুনাল কোনো অপরাধ বিচারের জন্য গ্রহণ করবেন না।
৭৭ ধারা অনুসারে, তথ্যপ্রযুক্তি আইনের অধীন কোনো অপরাধ সংঘটিত হলে যে কম্পিউটার, কম্পিউটার সিস্টেম, ফ্লপি, কমপ্যাক্ট ডিস্ক (সিডি), টেপ ড্রাইভ বা অন্য কোনো আনুষঙ্গিক কম্পিউটার উপকরণ বা বস্তু সম্পর্কে বা সহযোগে সেই অপরাধ সংঘটিত হয়েছে সেগুলো ওই অপরাধের বিচারকারী আদালতের আদেশানুসারে বাজেয়াপ্তযোগ্য হবে। তবে যদি আদালত এই মর্মে সন্তুষ্ট হয় যে, যে ব্যক্তির দখল বা নিয়ন্ত্রণে ওই কম্পিউটার, কম্পিউটার সিস্টেম, ফ্লপি ডিক্স, কমপ্যাক্ট ডিস্ক বা অন্য কোনো আনুষঙ্গিক কম্পিউটার উপকরণ পাওয়া গেছে তিনি এ আইনের কোনো বিধান লঙ্ঘনের জন্য বা অপরাধ সংঘটনের জন্য দায়ী নন, তাহলে ওই কম্পিউটার, কম্পিউটার সিস্টেম, ফ্লপি ডিস্ক, কমপ্যাক্ট ডিক্স, টেপ ড্রাইভ বা অন্য কোনো আনুষঙ্গিক কম্পিউটার উপকরণ বাজেয়াপ্তযোগ্য হবে না। তবে এ আইনের অধীনে সাধারণ ফৌজদারি আদালতে বিচার হবে না। সরকারকে এ উদ্দেশ্যে বিশেষ সাইবার ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে হবে। আইনের ৬৮ ধারা অনুসারে, একজন দায়রা জজ বা অতিরিক্ত দায়রা জজকে সরকার সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক হিসেবে নিয়োগ দিয়ে এ ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে পারে। কিন্তু এখন পর্যন্ত এ ধরনের ট্রাইব্যুনাল গঠিত না হওয়ায় বাংলাদেশে তথ্য ও প্রযুক্তি আইনে বিচার সম্ভব নয়।
ধর্মের ভুল ব্যাখ্যা সম্পর্কে জনগণকে অবহিত করা অপরাধ নয় : কোনো ব্যক্তি, সংবাদপত্র বা প্রতিষ্ঠান যদি সাধারণ মুসলমানদের ধর্মের ভুল ব্যাখ্যা সম্পর্কে সচেতন করার উদ্দেশ্যে কোনো বক্তব্য দেয় বা কিছু প্রকাশ করে, সে ক্ষেত্রে সেটিকে ধর্ম অবমাননা বলে চালিয়ে দেয়া যাবে না এবং আদালতে এ ধরনের কোনো মামলা গ্রহণযোগ্যও হবে না। শামসুদ্দিন আহমেদ বনাম রাষ্ট্র ৫২ ডিএলআর-এর মামলায় আদালত এ প্রসঙ্গে স্পষ্ট রায় প্রদান করেছেন
Click This Link
©somewhere in net ltd.