নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

স্বাধীন দেশের স্বাধীন নাগরিক

আমি নষ্ট করেছি সময়, এখন সময় নষ্ট করছে আমায়

ফিলিংস

মানুষ কে ঘৃনা করার অপরাধে অতীতে কাউকে কখনো মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়নি। কিন্তু মানুষ কে ভালবাসার অপরাধে অতীতে অনেককেই হত্যা করা হয়েছে, ভবিষ্যতেও হয়তো হবে !!

ফিলিংস › বিস্তারিত পোস্টঃ

লাশ দাফনেও ঘুষ বাণিজ্য

০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সকাল ১০:০৮



মৃত্যুর পর প্রিয়জনকে বিদায় জানানো হয় শোক আর চোখের পানিতে। দাফনে থাকে শোকাতুর পরিবেশ। কিন্তু এই লাশ দাফন কার্যটাও কারও কারও জন্য ব্যবসা। উপরি আদায়ের উপলক্ষ। রাজধানীতে সিটি করপোরেশনের নিয়ন্ত্রণাধীন কবরস্থানগুলোতে লাশ দাফনে ঘাটে ঘাটে দিতে হয় টাকা। ৬ মাস আগে সিটি করপোরেশন দক্ষিণের সাবেক প্রশাসক এমন কয়েকটি অভিযোগ তদন্তের জন্য একটি কমিটি গঠন করেন স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে প্রধান করে। সেই কমিটির তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশিত হলেও তাতে কাউকে দায়ী করা হয়নি। তবে গত কয়েক দিন আজিমপুর ও মিরপুর কবরস্থান ঘুরে পাওয়া গেছে অবৈধভাবে অর্থ আদায়ের তথ্য। সরজমিন আজিমপুর কবরস্থানে ঘুরে দেখা যায়, ৩৪, কোতোয়ালি রোড থেকে শাহানার (৫৫) লাশ দাফনের জন্য আনা হয় কবরস্থানে। সঙ্গে ছিলেন তার আত্মীয় মোজাম্মেল হক। তিনি চোখ মুছতে মুছতে বলেন, জাকির নামে গোরখোদক তার কাছ থেকে ৩০০০ টাকা নিয়েছে। এর মধ্যে ২০০০ টাকা নিয়েছে কবরের সাইড ওয়াল ও ঘাস কিনে সাজানো ও সুন্দর করার জন্য। তবে স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, লাশের আত্মীয়-স্বজনদের কাছ থেকে টাকা নেয়ার এটা একটা কৌশল। ওই টাকা থেকে কিছু খরচ করে কবরে ঘাস কিনে লাগানো হয়, আবার না-ও হয়। বাকি টাকা বখশিসের খাতায় যায়। ১০১/বি, গোপীবাগ বিক্রমপুর ভিলার আসলাম সিকদার জানান, তার ভাই নূরুল ইসলাম মারা গেলে তাকে দাফন করতে তারা আজিমপুর কবরস্থানে নিয়ে যান। তাদের কাছ থেকে ৩০০০ টাকা রাখা হয়। তবে কে বা কারা এ টাকা নিয়েছেন তাদের নাম পরিচয় জানেন না তিনি। তবে তারা ওই কবরস্থানেই কাজ করেন বলে জানান। বলেন, এখানে ঘাটে ঘাটে টাকা দিতে হয়। আজিমপুর কবরস্থানে বড়, মধ্যম ও ছোট মিলিয়ে তিন ধরনের কবর রয়েছে। কবর দিতে লাশপ্রতি সর্বমোট ১ হাজার টাকা লাগার কথা। এর মধ্যে অফিস ফি দিতে হয় ২০ টাকা। বাঁশ ও চাটাইসহ যারা কবর খোদাই করেন তাদেরকে দিতে হয় বাকি টাকা। সিনিয়র মহরার মিজানুর রহমান বলেন, ১লা জুলাই থেকে ১২ই জুলাই শনিবার বিকাল ৫টা পর্যন্ত ২৫০ জনের লাশ দাফন হয় আজিমপুরে। তিনি বলেন, কবর বিক্রি বন্ধ রয়েছে। সাধারণ কবর এক থেকে দেড় বছর পর্যন্ত সংরক্ষণ করা হয়। গত ৩রা জুলাই জুরাইন কবরস্থান থেকে তিনি এখানে যোগ দিয়েছেন। তাই এখানকার অনেক বিষয় তিনি জানেন না। অফিস সহকারী নুরুল হুদা জানান, মাস ছয়েক আগে সিটি করপোরেশন দক্ষিণের সাবেক প্রশাসক নজরুল ইসলাম এসব অভিযোগ তদন্তের জন্য একটি কমিটি গঠন করেন স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে প্রধান করে। সেই কমিটি তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ করলেও তাতে কাউকে দায়ী করা হয়নি। আজিমপুর কবরস্থানের আশপাশের লোকজন বলেন, সর্ষের ভিতর ভূত থাকলে সেই তদন্ত কমিটির রিপোর্ট প্রকাশিত হলেও তাতে সমস্যা কোথায়? ঠিকাদার নাসির উদ্দিন রাজা দাবি করেন, আজিমপুর কবরস্থানে আগে আরও অনিয়ম ছিল। নেশাখোরদের আড্ডা ছিল। এখন অনেক কমে গেছে। তিনি বলেন, অনেক সময় আমাকে বোবা হয়ে থাকতে হয়। উপায় নেই। তদন্ত কমিটি আমাকেও জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। রাজা বলেন, তার লোকজন এসব অভিযোগের সঙ্গে জড়িত নয়। অন্য কেউ থাকলেও থাকতে পারে। আজিমপুর কবরস্থানে দু’টি লাশের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে দেখা গেছে, লাশপ্রতি গড়ে ২ হাজার টাকা বেশি নেয়া হয়েছে। গত মাসে সেখানে দাফন হয় ৬শ’টি লাশ। এ হিসাবে লাশপ্রতি ১ হাজার টাকা বেশি নিলে এক মাসেই ৬ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে চক্রটি। তবে টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেন আজিমপুর কবরস্থানের কর্মচারীরা। তারা বলেন, খুশি হয়ে যে যা দেন তাই তারা নেন। সিটি করপোরেশনের ১ জন ইমাম, ২ জন মহরার, ৬ জন ড্রেসার, ৮ জন দারোয়ান কাজ করেন আজিমপুর কবরস্থানে। পাশাপাশি ঠিকাদারের ৩৪ জন কর্মচারী রয়েছে সেখানে।

ঠিকাদারের নিয়ন্ত্রণে মিরপুর কবরস্থান: গত রোববার সরজমিন মিরপুর কবরস্থান ঘুরে দেখা গেছে ঠিকাদারের অধীনে প্রায় ৩০-৩৫ জন লোক কবর খোদাইয়ের কাজ করেন। অফিস কর্তৃক নির্ধারিত বেতন তাদের লাশপ্রতি ৭০ টাকা। তা-ও আবার ঠিকাদার নিয়ে যায় বলে খোদাইয়ের কাজে নিয়োজিত কর্মচারী নূরুল আমিন, শাহ আলম ও মালেকের অভিযোগ। যখন তারা কবর খোদাই করেন একসঙ্গে ৪ জন কাজ করেন। ৩শ’ টাকা খেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত বখশিস পান তারা। তবে আলাদা করে তাদেরকে কেউ এ টাকা দেয় না। দুলাল নামে এক কর্মচারীর কাছে দেয়া হয়। দুলাল জানায়, অফিস ফি ৫শ’ টাকা, কবর খোদাই ও বাঁশ-চাটাই-বেড়াসহ অন্যান্য খরচ ৩০০০-৪০০০ টাকা পর্যন্ত তারা নেয়। তবে লাশপ্রতি সর্বমোট খরচ হয় ১৫০০ টাকা। বাকি টাকা থেকে লাশপ্রতি গড়ে ৫শ’ থেকে ১ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয় মহরার ও ম্যানেজার। মিরপুরে প্রতিদিন ৪ থেকে ৭টি লাশ দাফন হয়।

একটি কবর সংরক্ষণের জন্য দুলালকে প্রতি মাসে ৪ হাজার টাকা দেয় এক পরিবার। ওই টাকা থেকে কাউকে ভাগ দেয় না সে। দু’বছর ধরে মিরপুর কবরস্থানের ইজারাদার হিসেবে কাজ করছে শাহাজাতপুর ট্রেডিং করপোরেশন। এর ম্যানেজার আবুল খায়ের বলেন, গত বছর ডিসেম্বর থেকে লাশ দাফন ফি ২০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫শ’ টাকা করা হয়েছে। বাঁশ ও চাটাইয়ের জন্য আলাদা টাকা। সব মিলিয়ে হাজারখানেক টাকা খরচ হয় লাশ দাফনে। এর কয়েক ঘণ্টা আগে সাংবাদিক পরিচয় না দিয়ে সরেজমিন কবরস্থানে একটি লাশ দাফনের রেট জানতে চাইলে আবুল খায়ের বলেন, অফিস ফি ৫শ’ টাকা, কবর খোঁড়া, বাঁশ, চাটাইয়ের জন্য আরও ১৫০০ টাকা, সব মিলিয়ে ৩ হাজার টাকা দিতে হবে। পাশাপাশি বখশিস তো রয়েছেই। তবে এ বখশিসকে তারা ঘুষ হিসেবে স্বীকার করতে নারাজ। এ প্রশ্নে মিরপুর কবরস্থানের ইজারাদার শাহাজাতপুর ট্রেডিং করপোরেশনের মালিক আবদুল মালেক বলেন, আমি বেশি টাকা নেই না। ম্যানেজার নেয় কিনা আমার জানা নেই।-মানবজমিন

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.