নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

রিশাদ আহমেদ

রিশাদ আহমেদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

কাদের মোল­া

১৩ ই অক্টোবর, ২০২১ রাত ৯:২১


কাদের মোল­া


১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে ঢাকার মিরপুরের ¯হানীয় বাঙালীদের কাছে আব্দুল কাদের মোল­া কসাই হিসেবে পরিচিত ছিল।তখন ঢাকার এই অংশে মূলত বিহারী মুসলিমরা বসবাস করত,এরা ছিল মহান মুক্তিযুদ্ধের ঘোর বিরোধী পাশাপাশি পাকহানাদার বাহিনী এ এদের দেশীয় দোসরদের সহায়ক।
স্বাধিনতার পর এই এলাকায় রাজাকার,আলবদর,আলশামস এবং তাদের দেশীয় ও বিহারী সহযোগীদোসরদের বর্বতার স্বাক্ষী শিয়ালবাড়ী বধ্যভূমি আবিস্কৃত হয়।¯হানীয় জনসাধারনের জানায় আব্দুল কাদের মোল­া ও তার সঙ্গীরা মুক্তিযুদ্ধের সময় শিয়ালবাড়ী,রূপনগর এলাকা থেকে হাজারো মুক্তিকামী বাঙালী হত্যা করা হয়েছে। এখানে অতিউৎসাহী আব্দুল কাদের মোল­া পাকবাহিনীর হত্যাযজ্ঞ শুরুর বহু আগেই তার বাহিনীর হত্যা নির্যাতন শুরু করে।
৬ ই মার্চ ১৯৭১ মীরপুরের ৬ সম্বর সেকশানে সিরামিক ইন্ডাষ্ট্রিজ্এর গেটে আহূত ¯হানীয় বাঙ্গালীদের এক সভায় জয় বাংলা স্লোগান দেয়া হয়।প্রত্যক্ষদর্শী এম শহীদুর রহমান জানান,এতে ক্ষিপ্ত হয়ে কসাই বলে খ্যাত আব্দুল কাদের মোল­া এ তার সহযোগীরা খোলা তলোয়ার,রামদা,কৃপান ইত্যাদি নিয়ে ওই জনসভার নিরীহ বাঙালীদের উপর হিংস্র হায়েনার মতো ঝাপিয়ে পড়ে।ক্ষত বিক্ষত করে অনেককে।
মিরপুর ১ নম্বর সেকশানের বি ব্লকের বাসিন্দা এম ফিরোজ আলী জানান তার ১৮ বছর বয়স্ক ভাই পল­ব টুনটুনির মৃত্যুর জন্য আব্দুল কাদের মোল­া দায়ী। পল­ব ছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের একনিষ্ঠ অনুসারী। এটাই চক্ষুশূল হয় আব্দুল কাদের মোল­া ও তার দোসর রাজাকার বাহিনীর কাছে। ২৯ শে মার্চ আব্দুল কাদের মোল­া ও তার দোসররা পল­বকে ঢাকার অন্যএলাকা থেকে ধরে মীরপুরে নিয়ে আসে। তার হাতপা বেধেঁ টেনে হিচড়েঁ মীরপুরের একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে আনানেওয়া করে। ক্ষতবিক্ষত পল­বকে তারপর ¯হানীয় একটি ঈদগাহ মাঠের একটি গাছের সাথে বেধে রাখে। পরে ওইদিন ই আব্দুল কাদের মোল­ার সহযোগীরা পল­বের আঙ্গুল কেটে নেয়। এরপ্রায় এক সপ্তাহ পর ৫ ই এপ্রিল আব্দুল কাদের মোল­া তার সাঙ্গপাঙ্গদের পল­ কে গুলি করে মেরে ফেলার আদেশ দেয়।এভাবে তার লাশ আরো দুইদিন ঝুলিয়ে রাখা হয়। এই বর্বরতার মাধ্যমে আব্দুল কাদের মোল­া জানিয়ে দেয় যারা বঙ্গবন্ধু বা স্বাধিনতার পক্ষে কথা বলবে তাদের এই পরিনতি হবে বলে ফিরোজ আলী জানান।
আব্দুল কাদের মোল­ার কৃতকর্র্মের আরেক প্রত্যক্ষদর্শী এম শহীদূর রহমান চৌধুরী জানান, মিরপুর ৬ নম্বর সেকশানের প্রথীতযশা মহিলা কবি মেহেরুন্নেছাকে কাদের মোল­া ও তার সহযোগীরা নির্মম ভাবে হথ্যা করে। এই বীভৎস দৃশ্য দেখে সিরাজ নামের ওই বাড়ির একজন সদস্য মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে,স্বাধিনতার ৩৮ বছর পরও তার অব¯হার পরিবর্তন হয়নি।
মিরপুরবাসী আরো অভিযোগ করেন মনিপুর, শেওড়াপাড়া, কাজীপাড়া এলাকায় আব্দুল কাদের মোল­া ও তাদের সহযোগী দোসর ও রাজাকাররা হাজারো বাঙালীকে নির্যাতন নিপীড়ন এ হত্যা করে মিরপুরের বিভিন্ন জায়গায় মাটি চাঁপা দিয়েছে।



একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেফতারকৃত জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল­াকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করেছে ট্রাইব্যুনাল। চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান শাহীনের নেতৃত্বে তিন সদস্যবিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ জনাকীর্ণ আদালতে পিনপতন নীরবতার মধ্যে এই ঐতিহাসিক আদেশ প্রদান করেছে। ট্রাইব্যুনালের অপর দু’সদস্য ছিলেন বিচারপতি মোঃ মজিবুর রহমান মিয়া ও জেলা জজ মোঃ শাহিনুর ইসলাম। ট্রাইব্যুনাল তার আদেশে বলে, চার্জ ৫ ও ৬ প্রমাণিত হওয়ায় তাকে যাবজ্জীবন কারাদ- দেয়া হয়েছে। ৪ নং অভিযোগটি প্রমাণিত না হওয়ায় এটি থেকে তাকে অব্যাহতি দেয়া হয়। অপরদিকে চার্জ ১, ২ ও ৩ অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় কাদের মোল­াকে ১৫ বছরের কারাদ- প্রদান করা হয়েছে। এই সাজাগুলো এক সঙ্গে চলবে। অর্থাৎ তাকে ৩০ বছর সাজা ভোগ করতে হবে। রায় ঘোষণার দিন থেকে এই সাজা কার্যকর হবে। মুক্তিযুদ্ধের সময় গণহত্যা, বুদ্ধিজীবী হত্যা, ছাত্র ও আইনজীবীসহ আরও অনেককে হত্যার মোট ৬টি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ গ্রহণ করে ট্রাইব্যুনাল। ৫টি অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় এই রায় দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল।
কাদের মোল­ার বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি। অপর পাঁচ অভিযোগের তিনটিতে সংশ্লিষ্টতা এবং দুটিতে প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ আদালতে প্রমাণিত হয়েছে। রায়ে কাদের মোল­ার বিরুদ্ধে ৬টি অভিযোগের মধ্যে ৫টিতে দোষী প্রমাণিত হয়েছেন। দুটিতে যাবজ্জীবন কারাদ-। তিনটিতে ১৫ বছরের করাদ- এবং একটি প্রমাণিত হয়নি। এর মধ্যে অভিযোগ ৫ ও ৬-এ কাদের মোল­াকে যাবজ্জীবন কারাদ- প্রদান করা হয়েছে। অভিযেগ ৫-এ রয়েছে মোল­ার নেতৃত্বে একাত্তরের ২৪ এপ্রিল তার সহযোগী আল-বদরবাহিনীর প্রায় ৫০ জন সদস্য নিয়ে পাকিস্তানী সেনাবহিনীর সহায়তায় আলুব্দী গ্রাম ঘিরে নির্বিচারে গুলি করে ৩৪৪ জনকে হত্যা করা হয়। মুক্তিযুদ্ধের সময় ২৪ এপ্রিল ফজরের নামাজ পরে পাকবাহিনী হেলিকপ্টারযোগে তুরাগ নদীর পাড়ে আলুব্দী গ্রামের পাশ্চিম পাশে অবতরণ করে। পূর্বদিকে হতে স্থানীয় আলবদর বাহিনীর নেতা আসামি আব্দুল কাদের মোল­া তার সহযোগী আলবদর বাহিনীর প্রায় ৫০ জন সদস্য ও কতিপয় অবাঙালী বিহারীদের সঙ্গে নিয়ে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর সদস্যদের সহায়তায় ও যোগসাজশে আলুব্দী গ্রামে ঘিরে ফেলে ও নিরীহ নিরস্ত্র মানুষের উপর নির্বিচারে গুলি চালায়। এতে বাসু মিয়া, জহিরুল হক ওরফে জোরা মোল­াসহ ৩৪৪ জনের অধিক লোককে হত্যা করা হয়।
চার্জ-৬ এ রয়েছে, আব্দুল কাদের মোল­া মুক্তিযুদ্ধের সময় তার আলবদর বাহিনী নিয়ে শহীদ হযরত আলীর লস্করের বাড়িতে ঢুকে মধ্যযুগীয় তা-ব চালায়। ঢাকার মিরপুরের ১২ নং সেকশনের কালাপানির ৫নং লাইনের ২১ নম্বর বাড়িতে এই তা-ব চালানো হয়। সেখানে আব্দুল কাদের মোল­ার নির্দেশে হয়রত আলী লস্করকে গুলি করে হত্যা করা হয়। তার স্ত্রী আমেনা ও দুই শিশু মেয়ে খোদেজা ও তাছলিমাকে জবাই করে হত্যা করা হয়। ছোট ছেলে বাবুু যার বয়স মাত্র ২ বছর তাকে মাটিতে আছড়িয়ে হত্যা করা হয় । দ্বিতীয় মেয়ে আমেনাকে (১১) পালাক্রমে ১২ জন মিলে ধর্ষণ করে।
তিন অভিযোগে ১৫ বছরের কারাদ- কাদের মোল­াকে তিনটি অভিযোগে ১৫ বছরের কারাদ- প্রদান করা হয়েছে।
চার্জ-১ আলবদর বাহিনীর নেতা আসামি আব্দুল কাদের মোল­া ও তার সহযোগী অবাঙালী বিহারীদের নিয়ে বাংলা কলেজের ছাত্র পল­বকে জোরপূর্বক ধরে এনে মিরপুর ১২ নম্বর থেকে ১ নম্বর এবং ১ নং শাহ আলী মাজার থেকে হাতে দড়ি বেঁধে টেনে পুনরায় মিরপুর ১২ নম্বর সেকশনে ঈদগাহ মাঠে নিয়ে এসে গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখে। পল­বের দেহ দুদিন ঝুলিয়ে রেখে তার সহযোগী আলবদর বাহিনীর সদস্য ও অবাঙালী বিহারী দ্বারা পল­বের আঙ্গুলগুলো কেটে ফেলে এবং ৫ এপ্রিল তার নির্দেশে ও উপস্থিতিতে তার প্রধান সহযোগী আলবদর আক্তার গু-া পল­বের বুকে পরপর ৫টি গুলি করে হত্যা করে।
চার্জ-২ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময় আলবদরবাহিনী নেতা আাসামি আব্দুল কাদের মোল­া তার সহযোগী আলবদর সদস্য ও অবাঙালী বিহারীদের নিয়ে মিরপুরের মহিলা কবি মেহেরুন্নেছাকে নির্মমভাবে হত্যা করে। এই হত্যাকাণ্ডের দৃশ্য দেখে বাড়ির সিরাজ নামক এক ব্যক্তি মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে।
চার্জ-৩ ২৯ মার্চ সাংবাদিক খন্দকার আবু তালেবকে আরামবাগ হতে তার নিজ বাড়ির অবস্থা দেখার জন্য আসেন। বাসার সব কিছু পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়ায় তিনি পুনরায় আরামবাগের উদ্দেশে রওনা দেয়ার জন্য মিরপুর ১০ নং বাসস্ট্যান্ডে গেলে স্থানীয় আলবদর বাহিনীর নেতা আসামি আব্দুল কাদের মোল­া তার সহযোগী আলবদরা বাহিনীর সদস্য ও অবাঙালী বিহারীদের নিয়ে বাসে ওঠার আগেই খন্দকার আবু তালেবকে ধরে রশি দিয়ে বেঁধে ফেলে। এরপর আসামি আব্দুর কাদের মোল­ার নিদর্ৃেশে ও উপস্থিতিতে তাকে জবাই করে হত্যা করে।
কাদের মোল­ার বিরুদ্ধে অভিযোগ ৪ প্রমাণিত হয়নি। এই অভিযোগটি হলো
চার্জ-৪ আব্দুল কাদের মোল­া তার সহযোগী বাহিনী আলবদর সদস্য ও পাকি সৈন্যদের নিয়ে হত্যাকা- ঘটিয়েছেন। একাত্তরের ২৫ নবেম্বর ভাওয়াল খানবাড়ি ও ঘাটারচর (শহীদনগর) এবং পার্শ¦বর্তী দুটি গ্রামে কাদের মোল­া তার সহযোগী আলবদর বাহিনীর সদস্যসহ পাকিস্তানী বাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে নিরস্ত্র মানুষের ওপর নির্বিচারে গুলি চালিয়ে ১১ জনকে হত্যা করে। হত্যাকা-ের পর স্থানীয় বাড়িঘড়ে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়।
একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াত নেতা আবদুল কাদের মোল­াকে মৃত্যুদ- দিয়েছে সুপ্রীমকোর্ট। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২-এর দেয়া যাবজ্জীবন দন্ডাদেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের দায়ের করা আপীল আবেদন মঞ্জুর করে মৃত্যুদন্ডের এ আদেশ দেন সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগ। একই সঙ্গে ট্রাইব্যুনালের সাজা বাতিল করে কাদের মোল­াকে খালাস দেয়ার আর্জি জানিয়ে আসামিপক্ষের দায়ের করা আপীল আবেদনটি খারিজ করে দিয়েছে সুপ্রীমকোর্ট। সংখ্যাগরিষ্ঠের ভিত্তিতে আদালত এ রায় প্রদান করে। এ রায়ের মধ্য দিয়ে মানবতাবিরোধী কোন মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হলো সুপ্রীমকোর্টে।
গত ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল­াকে দোষী সাব্যস্ত করে যাবজ্জীবন কারাদ-াদেশ দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যনাল-২। ট্রাইব্যুনাল তাঁকে ৫টি অপরাধে দায়ী করলেও সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসির দ-াদেশ না দেয়ায় এবং একটি অপরাধের অভিযোগ থেকে খালাস দেয়ায় সাজা বাড়ানোর লক্ষ্যে এ রায়ের বিরুদ্ধে গত ৩ মার্চ আপীল করেন প্রসিকিউশন। আর ৪ মার্চ অভিযোগ থেকে খালাসের আবেদন জানিয়ে আপীল করেন আবদুল কাদের মোল­া।
উভয় পক্ষের আপীল দায়েরের পর ১ এপ্রিল দুটি আপীলের ওপরই শুনানি শুরু হয়। আপীল দুটি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার বনাম আবদুল কাদের মোল­া নামে কার্যতালিকায় আসে। দুটি আপীল আবেদনের ওপর দীর্ঘ ৩৯ কর্মদিবস শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে রাষ্ট্রপক্ষ ১৪ কর্মদিবস শুনানি করে এবং আসামিপক্ষ ১৯ কর্মদিবস শুনানি করে। বাকি ৬ কর্মদিবস সুপ্রীমকোর্টের নিযুক্ত সাত এ্যামিকাস কিউরি (আদালত বন্ধু) দুটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নে বক্তব্য উপস্থাপন করেন। ট্রাইব্যুনাল থেকে রায় ঘোষণার পর করা ১৯৭৩ সালের আইনের সংশোধনী কাদের মোল­ার মামলার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য কি না এবং কাস্টমারি ইন্টারন্যাশনাল ল’ (প্রথাগত আন্তর্জাতিক আইন) মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে কি না, এ দুই গুরুত্বপূর্ণ আইনী প্রশ্নে আদালতকে সহায়তা করতে গত ২০ জুন সাতজন বিশিষ্ট আইনজীবীকে এ্যামিকাস কিউরি হিসেবে নিয়োগ দেয় সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগ। এরা হলেন, ব্যারিস্টার রফিক-উল-হক, টিএইচ খান, ব্যারিস্টার এম আমির-উল-ইসলাম, সাবেক এ্যাটর্নি জেনারেল মাহমুদুল ইসলাম, এএফ হাসান আরিফ, ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ ও ব্যারিস্টার আজমালুল হোসেন কিউসি। তাদের কাছে দুটি বিষয়ের ওপর আইনগত ব্যাখ্যা জানতে চায় সুপ্রীমকোর্ট। এর মধ্যে একটি হচ্ছে কাস্টমারি ইন্টারন্যাশনাল ল’ এর আওতায় এই মামলা পড়বে কি না এবং দ্বিতীয়টি হলো আপীলের সমান সুযোগ রেখে গত ১৭ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালস আইনে যে সংশোধনী আনা হয়েছে এবং ২০০৯ সালের ১৪ জুলাই থেকে তার যে ভুতাপেক্ষ কার্যকারিতা দেখানো হয়েছে, সেটি কাদের মোল­ার মামলার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে কি না?
উলে­খ্য, কাদের মোল­ার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায়ের পর মানবতাবিরোধী অপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে শাহবাগে আন্দোলন শুরু করে তরুণ প্রজন্ম। গড়ে তোলে গণজাগরণ মঞ্চ। তরুণ প্রজন্মের আন্দোলনের ফলে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালস আইন সংশোধন করতে বাধ্য হয় সরকার। গত ১৭ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইন (সংশোধন) বিল, ২০১৩ জাতীয় সংসদে পাস হয়। সংশোধিত আইনে রায়ের বিরুদ্ধে উভয় পক্ষের আপীল করার সমান বিধান রাখা হয়েছে। সংশোধিত আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইন ১৯৭৩-এর বিধান অনুসারে রায় ঘোষণার এক মাস অর্থাৎ ৩০ দিনের মধ্যে রায়ের বিরুদ্ধে আপীল করার বিধান রয়েছে। অন্যদিকে আইন অনুযায়ী ৬০ দিনের মধ্যে আপীল নিষ্পত্তির নির্দেশনাও রয়েছে।
ট্রাইব্যুনালের রায় অনুসারে কাদের মোল­ার বিরুদ্ধে গণহত্যা, বুদ্ধিজীবী হত্যা, ছাত্র ও আইনজীবীসহ আরও অনেককে হত্যার মোট ৬টি সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ৫টি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছিল। আপীল বিভাগের রায়ে ৬টি অভিযোগের প্রত্যেকটি প্রমাণিত হয়েছে বলা হয়েছে। এর মধ্যে প্রমাণিত প্রথম অভিযোগ হচ্ছে, একাত্তরের ৫ এপ্রিল মিরপুর বাঙলা কলেজের ছাত্র পল­বকে গুলি করে হত্যার নির্দেশ দেন কাদের মোল­া। দ্বিতীয় অভিযোগ হচ্ছে, একাত্তরের ২৭ মার্চ কাদের মোল­া সহযোগীদের নিয়ে কবি মেহেরুননিসা, তাঁর মা এবং দুই ভাইকে মিরপুর ৬ নম্বর সেকশনের বাসায় গিয়ে হত্যা করেন। প্রমাণিত তৃতীয় অভিযোগে বলা হয়েছে, একাত্তরের ২৯ মার্চ বিকেলে সাংবাদিক খন্দকার আবু তালেবকে আরামবাগ থেকে কাদের মোল­া ও তাঁর সহযোগীরা জল­াদখানা পাম্প হাউসে নিয়ে জবাই করেন। এ তিন অপরাধের প্রত্যেকটিতে কাদের মোল­ার বিরুদ্ধে ১৫ বছর করে কারাদ-াদেশ দেয়া হয় ট্রাইব্যুনালে। আপীল বিভাগ ট্রাইব্যুনালের এ সাজা বহাল রেখেছে। পঞ্চম অভিযোগ অনুসারে, একাত্তরের ২৪ এপ্রিল পাকিস্তানী সেনা ও অবাঙালী রাজাকারদের সঙ্গে কাদের মোল­া মিরপুরের আলোকদী (আলুব্দী) গ্রামে হামলা চালান। ওই ঘটনায় ৩৪৪ জনের বেশি শহীদ হন। ষষ্ঠ অভিযোগে বলা হয়েছে, একাত্তরের ২৬ মার্চ কাদের মোল­া, তাঁর সহযোগী এবং পাকিস্তানী সেনারা মিরপুরের ১২ নম্বর সেকশনে হযরত আলী লস্করের বাসায় যান। কাদের মোল­ার নির্দেশে হযরত, তাঁর স্ত্রী, দুই মেয়ে এবং দুই বছরের এক ছেলেকে হত্যা করা হয়। ধর্ষণের শিকার হয় শহীদ হযরত আলী লস্করের এক মেয়ে। এ দুই অপরাধের প্রত্যেকটিতে কাদের মোল­াকে যাবজ্জীবন কারাদ- দেয় ট্রাইব্যুনাল। আর আপীল বিভাগ শেষ অপরাধে সাজা বাড়িয়ে ফাঁসির আদেশ দেয় এবং পঞ্চম অভিযোগে যাবজ্জীবন কারাদ- বহাল রাখে।
ট্রাইব্যুনালের রায়ে বলা হয়েছিল, ঘটনা ঘটলেও কেরানীগঞ্জের ঘাটারচর গণহত্যার সঙ্গে কাদের মোল­ার সংশ্লিষ্টতা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে পারেনি রাষ্ট্রপক্ষ। এটা ছিল কাদের মোল­ার বিরুদ্ধে চতুর্থ অভিযোগ। এ অপরাধের দায়ও প্রমাণিত হয়েছে বলে উলে­খ করে কাদের মোল­াকে খালাসের আদেশ বাতিল করে যাবজ্জীবন কারাদ-াদেশ দিয়েছে আপীল বিভাগ। এ অভিযোগ অনুসারে, ২৫ নবেম্বর কাদের মোল­া ও ৬০-৭০ জন রাজাকার কেরানীগঞ্জ থানার ভাওয়াল খানবাড়ি এবং ঘাটারচরে (শহীদনগর) শতাধিক নিরস্ত্র গ্রামবাসীকে হত্যা করেন।
এর আগে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কাদের মোল­াকে যাবজ্জীবন কারাদ- দেয়ার সাড়ে ৫ মাসেরও বেশি সময় পর গত ২৩ জুলাই রাষ্ট্রপক্ষের সমাপনী বক্তব্য উপস্থাপনের মধ্য দিয়ে সুপ্রীমকোর্টে এ মামলার আপীল শুনানি শেষ হয়। পরে প্রধান বিচারপতি মোঃ মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের আপীল বেঞ্চ উভয় পক্ষের দায়ের করা আপীল দুটি সিএভি (রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ) রাখেন। ওই সময় আদেশে আদালত বলে, রায় ঘোষণার আগের দিন আপীল দুটি কার্যতালিকায় আসবে। ওই আদেশের হিসেবেই সোমবার এ আপীল দুটি সুপ্রীমকোর্টের কার্যতালিকায় আসে।
কাদের মোল­ার বিরুদ্ধে থাকা ছয়টি অভিযোগের মধ্যে ষষ্ঠ অভিযোগে কাদের মোল­াকে মৃত্যুদ- দিয়েছে সুপ্রীমকোর্ট। এ অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল তাঁকে যাবজ্জীবন কারাদ- দিয়েছিল। ষষ্ঠ অভিযোগে বলা হয়েছে, একাত্তরের ২৬ মার্চ কাদের মোল­া, তাঁর সহযোগী এবং পাকিস্তানী সেনারা মিরপুরের ১২ নম্বর সেকশনে হযরত আলী লস্করের বাসায় যান। কাদের মোল­ার নির্দেশে হযরত, তাঁর স্ত্রী, দুই মেয়ে এবং দুই বছরের এক ছেলেকে হত্যা করা হয়। ধর্ষণের শিকার হন শহীদ হযরত আলী লস্করের এক মেয়ে। হজরত আলী লস্করের আরেক মেয়ে ঘটনার প্রত্যক্ষ্যদর্শী মোমেনা বেগম কাদের মোল­ার বিরুদ্ধে আদালতে সাক্ষী দেন। তাঁর সাক্ষ্যটি ক্যামেরা ট্রায়ালের মাধ্যমে হয়। মোমেনা বেগমের সাক্ষ্যের বিষয়ে আপীল শুনানিতে এ্যাটর্নি জেনারেল বলেছিলেন, মোমেনা বেগমের সাক্ষ্য বিশ্বাস করা প্রয়োজন ছিল। কারণ, তাঁর জবানবন্দীতে উঠে এসেছে কাদের মোল­ার অপরাধের হিংস্রতা। এ হিংস্র অপরাধে কাদের মোল­ার মৃত্যুদ- ছাড়া অন্য কিছু হতে পারে না।
সংক্ষিপ্ত রায়ে আদালত বলে, ‘বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক দায়ের করা ২০১৩ সালের দায়েরকৃত ক্রিমিনাল আপীল নম্বর-২৪ সর্বসম্মতভাবে গ্রহণযোগ্যবলে বিবেচিত হয়েছে। সংখ্যাগরিষ্ঠের ভিত্তিতে এই আপীল গৃহীত হয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২-এর দেয়া চার নম্বর অভিযোগ সম্পর্কিত খালাসের নির্দেশ সংখ্যাগরিষ্ঠ কর্তৃক প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। ওই অভিযোগে বিবাদীকে দোষী সাব্যস্ত করে যাবজ্জীবন কারাদ-ে দ-িত করা হলো। অভিযোগ ৬-এর বরাবরে ৪:১-এর সংখ্যাগরিষ্ঠের ভিত্তিতে তাঁকে মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদ-াদেশ প্রদান করা হলো। আবদুল কাদের মোল­া কর্তৃক দায়ের করা ২০১৩ সালের ক্রিমিনাল আপীল নং-৫ সর্বসম্মতভাবে খারিজ করা হলো। অভিযোগ-৬-এর বরাবরে দ- প্রদান সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয়েছে। ১, ২, ৩ ও ৫নং অভিযোগে ৪:১ সংখ্যাগরিষ্ঠের ভিত্তিতে দ- বহাল রাখা হলো।’

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.