নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

এই যে আছি ....থাকবো না তো.....সময় হলে সঙ্গে যাবার....কেউ যাবে কি? কেউ যাবে না.....কেউ যাবে না-....।আমি তো নই কারো চেনা।

রৌদ্র নীল

রৌদ্র নীল › বিস্তারিত পোস্টঃ

১৪৫৩- ফাতিহ সুলতানের কনস্ট্যান্টিনোপল জয় ও ইসলাম বনাম ক্রিশ্চিয়ানিটি

৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ৩:০৯



পর্ব-৬

খ্রিস্টীয় জগতের ইতিহাসের সবচেয়ে আজব ও নির্মম ঘটনা হলো চতুর্থ ক্রুসেড। ক্রুসেডারদের মূল লক্ষ্য ছিল মিশরের আয়ুবীদের আক্রমণ করে জেরুসালেম দখল করা। কিন্তু তাদের কাছে পর্যাপ্ত পরিমাণে যুদ্ধচালানোর অর্থ ছিল না। তাই তারা সিদ্ধান্ত নেয় অপর একটি ক্যাথলিক শহর "জারা" আক্রমণ করবে। কিন্তু পোপ তৃতীয় ইনোসেন্ট তাদেরকে নিষেধ করে ও ধর্মচ্যুতির ভয় দেখায়। এর ফলে ক্রুসেডাররা সিদ্ধান্ত নেয় "ভুল পথে চালিত" গোঁড়া খ্রিস্টানদের শহর কনস্টান্টিনোপলে আক্রমণ চালাবে।

আসলে ধর্মের নামে পুরোটাই ছিল ভাওতাবাজি। একদিকে কনস্ট্যান্টিনোপলের অঢেল সম্পদের হাতছানি অপরদিকে বাইজেন্টাইনের ক্ষমতা থেকে বঞ্চিত রাজপুত্র এলেক্সিওসের সাথে চুক্তি। চুক্তির বিষয় ছিল তারা এলেক্সিওসকে ক্ষমতায় বসাবে, বিনিময়ে এলেক্সিওস তাদেরকে প্রচুর অর্থ দিবেন। অভিযানের নেতৃত্বে ছিলেন এনরিকো দানডোলো। এনরিকো অন্ধ ছিলেন, পাশাপাশি তার বয়স ছিল আশি বছর। কিন্তু স্বভাবে ছিলেন খুবই ধূর্ত প্রকৃতির। তারা এলেক্সিওসকে ক্ষমতায় বসায় ঠিকই কিন্তু স্থানীয় জনগণের বিদ্রোহের মুখে এলেক্সিওসকে নেমে যেতে হয়। ফলশ্রুতিতে কথামত ধনসম্পদ না পাওয়াতে ক্রুসেডাররা এলেক্সিওসকে খুন করে। এরপর শুরু হয় ইতিহাসের জঘন্যতম হত্যা আর লুটপাট। শহরের বড় অংশ আগুনে জ্বলতে থাকে।

ফরাসী নাইট জেফ্রি ডি ভিলারহাদুইন বলেছেন, “ফ্রান্সের তিনটি বড় নগরীর থেকে বেশি বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল” । নগরীর মহান শিল্প সেন্ট সোফিয়া অপবিত্র ও লুণ্ঠন করা হয়েছিল: "তারা চার্চে ঘোড়া এবং খচ্চর নিয়ে এসেছিল,"

ঐতিহাসিক নিকেটাস লিখেছেন, "খোদাই করা রৌপ্য ও সোনার জিনিসপত্র, পাথরে বাঁধাই স্মৃতিচিহ্ন, সিংহাসন, মিম্বার, দরজা এসব থেকে মূল্যবান রত্ন খুলে নিয়েছিল। আসবাবপত্র ভাঙচুর করছিল। গির্জার মধ্যেই যুদ্ধ করছিল, রক্ত, পচা গন্ধ ও বাহনকারী প্রাণীর বর্জ্যে চার্চ অপবিত্র হয়ে গিয়েছিল । "

তারা রাজা কনস্টান্টাইনের সময় থেকেই হিপোড্রোমে দাঁড়িয়ে থাকা চারটি ব্রোঞ্জের ঘোড়া সহ, দামি মূর্তি, স্মৃতিচিহ্ন মূল্যবান জিনিসপত্র সব কিছু লুট করে। ভেনিসিয়রা এগুলো নিয়ে গিয়ে নিজেদের সেন্ট মার্কের গির্জাটিকে সাজায়। কনস্ট্যান্টিনোপলকে ধোঁয়া আর ধ্বংসস্তূপের নগরীতে পরিণত করে। শহরটি এক যুদ্ধতেই সাধারণ নগরীতে পরিণত হয়। পরের ষাট বছর ধরে শহরটি "কনস্টান্টিনোপলের লাতিন সাম্রাজ্য" হয়ে ওঠে। ইতালির উপনবিশগুলির একটিতে পরিনত হয়। শহরের বেশিরভাগ মানুষ গ্রীসে পালিয়ে যায়। এবং বাইজেন্টাইনরা পালিয়ে গিয়ে আনাতোলিয়ার নিকাইয়াতে আরেকটি রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করে। এসময় তারা তুর্কী আক্রমণ ঠেকাতে সফল ছিল। ১২৬১ সালে তারা যখন আবার কনস্টান্টিনোপল দখল করে, তারা দেখে,তখন শহরের অবকাঠামো ভেঙে পড়েছে এবং খুব কম এলাকার উপরেই এর নিয়ন্ত্রণ আছে।

তারা শহরকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নিতে এবং পশ্চিমের খ্রিস্টানদের সাথে সম্পর্কোন্নয়ের চেষ্টা করতে লাগল। ফলাফল হলো যেটা, তুর্কী মুসলমিদের সাথে তাদের দুরত্ব বাড়তে লাগলো। এবং পরবর্তীতে এর চরম মূল্য দিতে হয়।

কনস্ট্যান্টিনোপল ধ্বংসের দুবছর পর মঙ্গোলিয়াতে তেমুচিন নামে এক যোদ্ধা সব যাযাবরদের একসাথে করে একটি আর্মি গঠন করে। ইতিহাসে এই তেমুচিনই পরবর্তীতে "চেঙ্গিস খান" (সারাবিশ্বের রাজা) নাম ধারণ করে।

লম্বা চুলবিশিষ্ট আর আকাশের উপাসক মঙ্গোলরা ভয়ানক হিংস্রতার সাথে ইসলামী বিশ্বে অবতীর্ণ হয়। তাদের অত্যাচারে পারস্যের অবস্থা খারাপ হয়ে যায়।লোকজন সব পালিয়ে পশ্চিম আনাতোলিয়ার দিকে আসতে থাকে। মহাদেশটি হয়ে পড়ে বিভিন্ন জাতির মিশ্রণের গলিত পাত্র: গ্রীক, তুর্কি, ইরানি, আর্মেনিয়ান, আফগানি, জর্জিয়ান। ১২৪৩ সালে যখন মঙ্গোলরা সেলজুকদের পরাজিত করে তখন আনাতোলিয়া ভেঙে একটি ছোট রাজ্যে হয়ে পড়ে। বিচরণকারী তুর্কি উপজাতিদের পাড়ি জমানোর জন্য পশ্চিমে যাওয়ার কোথাও জায়গা ছিল না। এসময় জিহাদের জন্য তেমন কোনও কাফের প্রতিবেশী ছিল না।

তারা বাইজেন্টাইন উপকূলীয় অঞ্চলে অভিযান চালাত, ভাগ্য ভালো হলে সমুদ্রের কিছু জায়গা দখল করত। অথবা নিজেদের মধ্যে লড়াই করত। আনাতোলিয়া হয়ে পড়ে এক বিশৃঙ্খল এলাকা। সূফিবাদ আর গোঁড়া সুন্নি মিলে এক নতুন আদর্শ সৃষ্টি হয়। গাজী রীতিতে জিহাদের সন্ধানে তুর্কিরা ছুটতে থাকে নতুন কোন রাজ্যে।

কিন্তু তখন কেবলমাত্র একটি ছোট্ট রাজ্য আর তার মালিক ওসমানীয় উপজাতি উত্তর-পশ্চিমে আনাতোলিয়ার বাইজানটিয়ামের খ্রিস্টানদের বিরুদ্ধে লড়ছিল। এই লোকগুলির আসল উৎস কেউ জানে না, যাদের এখন আমরা অটোমান বলি। এরা ১২৮০ সালের কাছাকাছি সময়ে বেনামে ঘুরে বেড়ানো তুর্কিদের মধ্যে থেকে আবির্ভূত হয়েছিল। তারা তাঁবুতে বাস করত। তারা ছিল নিরক্ষর যোদ্ধাদের একটি জাত, যারা ঘোড়ায় চড়েই রাজ্য শাসন করত। তারা স্বাক্ষরটা পর্যন্ত করত টিপসই দিয়ে। যাদের সম্পর্কে খুব একটা জানা যায় না।

জনশ্রুতিতে বলা হয় যে ওসমানীয় খেলাফতের প্রবর্তক ওসমান সবসময় মহৎ কাজে উৎসাহী ছিলেন। এক রাতে ওসমান ঘুমিয়েছিলেন। তখন তিনি একটি স্বপ্ন দেখেন, সেই স্বপ্নই জন্ম দেয় এক শক্তিশালী জাতির যারা প্রায় ৬৫০ বছর, অর্ধেকেরও বেশি পৃথিবী শাসন করে।

(চলবে)

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ সকাল ১০:২১

শোভন শামস বলেছেন: তথ্য বহুল, লিখে যান

৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ দুপুর ১:১৫

রৌদ্র নীল বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই

২| ৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ দুপুর ১২:১৬

হাসান কালবৈশাখী বলেছেন:
এখানে ধর্মপ্রচার বা ইসলামের মাহাত্য নেই।
এটা 'জোড় যার মুল্লুক তার' আমলের দখল বাজি।
দলবল ভারি করে নগর দখল করে কচুকাটা। আর লুন্ঠনের মাল ভাগাভাগি। দুদিনের রাজত্ব।

এখানে ইসলাম নেই। কারন সেনাপতি সালাউদ্দিন মত বীর যোদ্ধাদের এখন আর মুসলিম বলে স্বীকৃতি দেয় না বর্তমান তুর্কিরা।
কারন ওনারা ছিলেন কুর্দি বংশভুত।

৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ দুপুর ১:১২

রৌদ্র নীল বলেছেন: হাসান ভাই সেটাই। সবাই বলে গেছে তারাই স্রষ্টার অ্যাম্বাসেডর। তারপর আক্রমণ যুদ্ধ। সাধারণ জনগণ ছিল সবসময় শুধু প্রাণ বাঁচানোর ধান্দায়।

৩| ৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ দুপুর ১:৩২

রাজীব নুর বলেছেন: সুন্দর পোষ্ট।

০২ রা অক্টোবর, ২০২০ সকাল ১০:১০

রৌদ্র নীল বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই

৪| ৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ বিকাল ৫:৫২

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: আমার তো মনে হয় আগে যুদ্ধ এখনকার সময়ের চেয়ে বেশী হত। ক্রুসেড তো মনে হয় কয়েক শতক ধরে চলেছে। তবে এখনকার যুদ্ধে মারনাস্ত্রগুলি অত্যন্ত ভয়ংকর। ফলে সহজেই বহুলোক হতাহত হয়। এর পরের পর্বে মনে হয় অটোম্যানদের নিয়ে লিখবেন যাদের কথা বলছেন যে এদের উৎস খুঁজে পাওয়া দুষ্কর ছিল শুরুতে।

০২ রা অক্টোবর, ২০২০ সকাল ১০:১৩

রৌদ্র নীল বলেছেন: সত্যি কথা। এখন আরকি ঢাল তলেয়ার নিয়ে নামে না। কথায় কথায় বাণিজ্যিক যুদ্ধ। তবে শিয়া আর সুন্নী যুদ্ধই কিন্তু সিরিয়াকে শেষ করে দিছে। ফিলিস্তিন ও পরোক্ষ ভাবে শিয়াও সুন্নী সমস্যার কারণে সমাধান থেকে অনেক দূরে চলে গেছে।

৫| ৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৩১

জাহিদ হাসান বলেছেন: পৃথিবীতে আর কোন ক্রুসেডার ও জিহাদী দেখতে যাই না।

ক্রুসেড ও জিহাদের বদলে ভালোবাসা দিয়ে বিশ্ব জয়ের মিশন নিতে হবে।

০২ রা অক্টোবর, ২০২০ সকাল ১০:১৪

রৌদ্র নীল বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.