![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
(২০১৩ সালের জুলাই মাস।ভীষণ মন খারাপের এক বিকেলে প্রথম গল্প লিখতে বসি।এই গল্পের নায়ককে সেদিন আকাশের তারা বানিয়ে দিয়েছিলাম।পরে মনে হল এইটুকুন একটা জীবন।মারামারির কি দরকার!!থাকুক না বেঁচে)
১
:মামা ডানে সাইড করে নামিয়ে দাও তো।
মানিব্যাগের শেষ ১০০ টাকার নোটটা দেখে মন খারাপ হয়ে গেল শ্রাবণের।পকেটের যা অবস্থা রিক্সা না করে আসলেই পারত।অবশ্য মাঝে মাঝে শরীরটা এত খারাপ লাগে যে হেঁটে ফিরতে মন চায়না...
:১০০ টাকার ভাংতি হবে মামা?
:আমরা গরীব মানুষ।এত টাকার ভাংতি পামু কই?রাইতের বেলা প্রথম আপনার ক্ষেপটাই মারলাম।
বিরক্ত লাগছে শ্রাবণের।প্রয়োজনের সময় এদের কাছে কখনই ভাংতি পাওয়া যায় না।গলির মুখের মজিদ চাচার দোকান থেকে টাকার ঝামেলা মিটিয়ে খেতে ঢুকল সে।
:কই মামা কি আছে দাও।ক্ষুদায় পেটে আগুন জ্বলতেছে।
শ্রাবণের খাবার মেন্যু ওদের মুখস্থ।গত দেড় বছর ধরে এখানেই খায় সে।ভাত,ডাল এইত...মাঝে মধ্যে মাছ,মাংস খেয়ে স্বাদটা মনে করে নেয় আর কি!অভাব অনটনের কালো মেঘমুক্ত আকাশতো শ্রাবণের জন্য না...শ্রাবণের নিজস্বতাই তো কালো মেঘে...
:চাচা,মাসটাতো শেষের দিকে...
:অসুবিধা নাই বাবা।আর তোমার কিছু লাগলে বইলো।
:আপনি লিখে রাইখেন।আমি মাসের শুরুতেই...
:আরে কইলামতো সমস্যা নাই।তুমি যাও।
প্রতি মাসের শেষের দিকেই এই ব্যাপারটা ঘটে।অবশ্য শ্রাবণ তার কথাও রাখে।ক্লান্ত পরিশ্রান্ত মনে শ্রাবণ যাচ্ছে ঘরের দিকে।কে জানে,হয়ত ফ্রেশ না হয়েই আজ পাড়ি জমাবে ঘুমের রাজ্যে...
মধ্যবিত্ত তরুণ হিসেবে শহরে একা থাকাটা বেশ কষ্টের।নিজের পড়াশোনার খরচ,বাড়িতে পরিবারের খরচ...এদিক দিয়ে শ্রাবণ অবশ্য ভাগ্যবান।পরিবারের খরচ চালাবার চাপটা সেভাবে নেই।তবু সে যে বসে থাকে তা নয়।টিউশন,পত্রিকায় লেখালেখি করা...আয় উপার্জনের চেষ্টা করে সে।কয়েক জায়গায় চাকরির জন্য চেষ্টাও করছে।তবে ভাগ্যদেবী কি আর এত সহজে মধ্যবিত্তের জীবন রাঙাতে রাজি হয়?পরিশ্রমের রঙ তুলিতে শ্রাবণ ও ভাগ্যের ক্যানভাস রাঙাতে কার্পণ্য করেনা।ইদানিং পরিশ্রমটা ওর বেশিই হচ্ছে।তবু এত কষ্ট গায়ে লাগেনা ওর।ঘুমের মাঝে উঁকি দেয়া বৃষ্টির হাসিমুখটা সব কষ্ট ভুলিয়ে দেয় শ্রাবণের.....
বৃষ্টির সাথে শ্রাবণের পরিচয় বছর তিনেক আগে।একই ডিপার্টমেন্টে পড়লেও বসন্তের এক পড়ন্ত বিকেলে এক বইয়ের দোকানে বৃষ্টির মায়ায় প্রথম আটকা পড়ে শ্রাবণ।প্রথম দেখাতে ঠিক কি হয়েছে সে বুঝতে পারেনি।শুধু বুঝতে পেরেছিল হৃদস্পন্দন বেড়েছে...অন্য রকম অনুভূতির সৃষ্টি হয়েছে...তখনও সে বুঝতে পারেনি এই মায়াময়তা তাকে আটকে ফেলবে সারা জীবনের জন্য।
সেদিন গোধূলি লগনে একসাথে হাঁটছিল ওরা।বাতাসের দোলায় বৃষ্টির চুলগুলো শ্রাবণকে ছুয়ে যাচ্ছিল বারবার।শান্ত নীরব সন্ধায় বৃষ্টির হাসির শব্দটা কেন যেন হৃদয়ের গভীরে গিয়ে আঘাত করছিল।খুব ইচ্ছে করছিল বৃষ্টির হাতটা ধরে বলতে,
"বৃষ্টি,তোমার কাজল চোখের গভীরতায় আমি কতবার হারিয়েছি তুমি জানো কি?তোমার হাসির মাদকতায় আমি কতটা বিভোর তা কি জানো?তোমার ভাবনা আমাকে কত রাত জাগিয়ে রেখেছে জানো তুমি?মেয়ে,তোমার জন্য আমার এতসব অনুভূতি।এ অনুভূতির নাম কি জানা আছে তোমার?"
কিন্তু শ্রাবণ বলতে পারে না।কথাগুলো গলায় আটকে থাকে কাঁটার মত।বৃষ্টিকে হারিয়ে ফেলার ভয় ওকে ঘিরে রাখে সারাক্ষণ।দূর থেকে ভালোবেসে কষ্ট পেতে পারে সে তবু বৃষ্টির বন্ধুত্ব হারাতে পারবে না।শ্রাবণের মত ছেলেরা বন্ধু হতে পারে,প্রেমিক নয়।শ্রাবণের পূর্ণতা বৃষ্টিতে।কিন্তু বৃষ্টি তো শুধু শ্রাবণের নয়...সে গ্রীষ্ম,বসন্ত সবার...এসব ভাবনায় প্রতিবারই অনুভূতির কথাগুলো বলতে গিয়ে পিছে সরে আসে সে।মধ্যবিত্তদের সব অনুভূতি প্রকাশ করতে হয় না।কিছু অনুভূতি লুকিয়ে ফেলতে হয়।একান্ত অজান্তে,অগোচরে।
২
সন্ধ্যা থেকে নিজের ঘরটা ভালোভাবে দেখছে শ্রাবণ।কোনো কিছু বাদ যায়নি তো?দামি ইলেক্ট্রনিক্স ছাড়া সংসার শুরু করার মত সবই কিনেছে সে।ভালোবাসার টানে বৃষ্টির জন্য ভুবনটা সাজিয়েছে সাধ্যের সাত রঙ দিয়ে।দেয়ালে টাঙানো বৃষ্টির ছবিটার দিকে অপলক তাকিয়ে আছে সে।পকেট থেকে আংটিটা বের করে বৃষ্টিকে চিঠি লিখতে বসল সে।আংটির সাথে নীল খামের চিঠিটা দিবে বৃষ্টিকে।সৃষ্টিকর্তার উপহার অপূর্ব বাকশক্তিও কেন জানি অসহায় হয়ে পরে এই সাদার উপর কালো লেখার মায়াজালের কাছে...
হ্যাঁ।নিজের সাথে অনেক কথা বলে,হাজার ভাবনার খড়কাঠি পুড়িয়ে সিদ্ধান্তটা নিয়েছে শ্রাবণ।চাকরি করছে যে মাস ছয়েক হয়েছে।বেতন আহামরি না হলেও দুজনের চলার জন্য যথেষ্ট।ওর পূর্ণতার জন্য বৃষ্টিকে বলতেই হবে,যে করেই হোক বলতে হবে।না হলে নিজের অনুভূতির কাছেই অপরাধী হয়ে কাটাতে হবে সারাজীবন।
শ্রাবণ অপেক্ষা করছে বৃষ্টির জন্য।শরতের আজকের বিকেলের অপেক্ষার প্রহরটা যেন কাটতেই চায়না।বৃষ্টিকে দেখার প্রবল তৃষ্ণা নিয়ে পায়চারী করতে করতেই হঠাৎ এগিয়ে আসতে দেখল সেই শুভ্র পরীটাকে।তিন বছরের অতি চেনা।তবু...হৃদস্পন্দন বেড়েছে...অন্যরকম অনুভূতির সূচনা হয়েছে...বৃষ্টির হাসিমুখটা দেখে কথায় যেন হারিয়ে গেল শ্রাবণ।আজ বৃষ্টিকে অনেক অন্যরকম লাগছে।ওকি দিবে খামটা?সিদ্ধান্তের দোলাচলে ভাসতেই লাল রঙের কাজ করা একটা খাম এগিয়ে দিল বৃষ্টি।শ্রাবণের হাত কাঁপছে...যেন ধরতে গেলেই পড়ে যাবে খামটা...
শ্রাবণ হাঁটছে কাঁপা কাঁপা পায়ে।বৃষ্টির মুখটা অন্যরকম হয়ে ভাসছে ওর চোখের সামনে...শরতের আজকের এই বিকেলটা বড় বিষাদময়...নীরব...ঝিরঝির করে বৃষ্টি পড়ছে।ক্রমশ ভারী হচ্ছে বৃষ্টিটা।আসলেই...বৃষ্টি শুধু শ্রাবণের নয়...
৩
ছাদের উপর বৃষ্টির জন্য কেনা দোলনাটার পাশে রেলিঙের ধার ঘেঁষে দাঁড়াল শ্রাবণ।মুগ্ধ হয়ে আকাশ দেখছে সে।তারাগুলোকে অনেক আপন মনে হচ্ছে...অনেক আপন।এমন সময় ফোনটা বেজে উঠে শ্রাবণের।
-হ্যালো
-কিরে কি করছিস?
-কিছুনা।অফিসের কিছু কাজ করছিলাম।
মিথ্যে বলতে গিয়ে গলাটা ধরে আসে শ্রাবণের।ইচ্ছে করছিল চিৎকার করে বলতে তুই জানিস না এখন আমি কি করতে পারি।বৃষ্টি বুঝতে পারে ঠিকই।
-থাক।আর দেবদাস হতে হবে না।পার্বতী এসে গেছে নিচে নামো।
পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছে দুজন।শ্রাবণ এখনো ঘোর কাটিয়ে উঠতে পারছে না।বৃষ্টি বুঝতে পেরেছিল শ্রাবণ এমন কিছু একটা বলবে আজ।ভালোবাসাটা যে ওর মনেও লুকিয়ে ছিল এতদিন।তাই ইচ্ছে করেই একটা বিয়ের কার্ড নিয়ে এসেছে শ্রাবণকে চমকে দিতে।ছেলেটা এত বোকা।কার্ডটা একবার খুলেও দেখলনা।
-যদি ভালোইবাসতি তাহলে এত দেরী করলি কেন বলতে।অভিমানের স্বরে বলে উঠে বৃষ্টি।
-আমি হারাতে চাইনি।তোকে,তোর বন্ধুত্বকে।কিন্তু যখন বুঝলাম তোকে ছাড়া আসলেই আর পেরে উঠছিলামনা থাকতে তখনই তোকে বলার জন্য ছুটে গিয়েছি।
-এতদিনের অপেক্ষার ভালাবাসার সময়গুলো ফিরিয়ে দিবি আমায় বল?
-একবার হাতটা ধরেই দেখনা পাগলী।
বৃষ্টির চোখ ছলছল করছে।শ্রাবণের হাত ধরে হাঁটছে সে।সত্যিকারের ভালোবাসা হারায় না।মানুষ যতই দূরে সরতে চায়না কেন ভালোবাসা ঠিকই খুঁজে নেয় তার আপন আশ্রয়।জোছনা উঁকি দিচ্ছে।এমন দৃশ্য হাতছাড়া করার অধিকার প্রকৃতি তাকে দেয়নি...
১৭ ই মার্চ, ২০১৫ রাত ১০:৪০
রুবাইয়াৎ তন্ময় বলেছেন: ভালোবাসাটাকে নাহয় গল্পেই বন্দী করলাম!
২| ১৭ ই মার্চ, ২০১৫ রাত ১০:০৭
মনিরা সুলতানা বলেছেন: মিস্টি একটা ভালোবাসার গল্প ...
+++
১৭ ই মার্চ, ২০১৫ রাত ১০:৪০
রুবাইয়াৎ তন্ময় বলেছেন: ধন্যবাদ
©somewhere in net ltd.
১|
১৭ ই মার্চ, ২০১৫ রাত ৯:৪৫
দিশেহারা রাজপুত্র বলেছেন: চিরচেনা ভালোবাসার গল্প। বেশ রোমান্টিক।