![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
১
পর্দা ভেদ করে সকালের আলোটা গায়ে এসে লাগছে।ভোরের মিষ্টতার বদলে কিছুটা কড়া লাগতে শুরু করেছে রোদটা।যদিও কর্মচাঞ্চল্য শুরু হবার মত এমন কোন বেলা হয়নি।তবু আর বিছানায় থাকতে ইচ্ছে করছে না অদিতির।কাল রাতে খুব ভালো একটা ঘুম ও হয়নি।এই সকাল হতে মনে হচ্ছে সহস্র বছর সময় নিচ্ছে।আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতা বেশ ভালোভাবে টের পাচ্ছে অদিতি।মেয়ের ঘরের পাশ দিয়েই যাচ্ছিলেন শায়লা বেগম।এত সকাল মেয়েকে উঠতে দেখেই ঘরে ঢুকলেন তিনি।
-কিরে মা,এত তাড়াতাড়ি উঠলি যে?কোন কাজ আছে?
-না মা।
-তাহলে?শরীর খারাপ?
-বললাম তো কিছু হয়নি।
-বললেই হল?বলেই মেয়ের কপালে হাত রাখলেন তিনি।
-দেখলে তো জ্বর টর আসেনি।কেন যে তোমরা মায়েরা এমন করো!
-আগে মা হয়ে নে তারপর বুঝবি।বলেই উঠলেন শায়লা বেগম।বের হবার সময় চোখ পড়ে মেয়ের ঘরের দিকে।এত ভোরে মেয়েকে জেগে থাকতে দেখে আশেপাশেও খেয়াল করা হয়নি।এত আদরের মেয়েটা!
-কি রে?এত এলোমেলো কেন ঘরটা?
-কাল রাতে গুছাতে নিয়েছিলাম।
-কি যে করিস না।এইত সেদিন ও ঘর গোছালি।
-খুব ভালো করেছি।দরকার এ প্রতিদিন গোছাব।এখন যাওতো মা।আজ সবাই একসাথে নাস্তা করব।তুমি গিয়ে নাস্তা রেডি করো।বলেই হাসি দেয় অদিতি।
মেয়ের এমন আচরণে কিছুটা রাগ হতে নেন শায়লা বেগম।কিন্তু হাসিটা দেখার পর সব রাগই যেন কই চলে যায়!!
এমনিতে অদিতি খুব গোছালো মেয়ে।ছোট বেলা থেকেই নিজের ঘরটাকে গুছিয়ে রাখে সে।শেষ কবে মেয়ের ঘরটায় হাত দিয়েছিলেন শায়লা বেগম মনে নেই।তবে আজকের এলোমেলো অবস্থাটা ঠিক সেজন্য নয়।প্রায় রাতেই এই জিনিসগুলোতে চোখ বুলায় অদিতি।কত মায়া,কত স্বপ্ন লুকিয়ে আছে এগুলোর মাঝে তা শুধু অদিতিই জানে।আবীরের বিদেশ চলে যাবার পর থেকে ওর দেয়া উপহারগুলোর প্রতি ক্রমশ মায়া বেড়েছে অদিতির।সেই শুরু থেকে দেয়া কোন কিছুই ফেলে দেয়নি সে।ফেলে দেয়নি বললে ভুল হবে।ফেলতে পারেনি।প্রথম গোলাপের পাপড়ি থেকে এই জন্মদিনে বিদেশ থেকে পাঠানো কার্ড সবই যত্ন করে রেখেছে অদিতি।এসব দেখতে দেখতেই আনন্দে চোখে পানি চলে আসে ওর।অবশ্য আসারই কথা।পাঁচ বছর পর দেশে আসছে আবীর
।
আট বছর আগের এক বর্ষা বিকেলের কথা।বয়সটা প্রেমে পড়ার মত ছিল কিন্তু ভালোবাসার মত ছিল না।তবু অদিতির হাত ধরে ছেলেটা যখন কথাগুলো বলছিল অদিতিরও কেন জানি ভরসা করতে ইচ্ছে হল।সেই সময়ের বিশ্বাস আর বোঝাপড়াই সম্পর্কের ভীতটাকে গড়েছিল।অবশ্য এজন্য অনেক কিছুই করেছে দুজন।চাইলেই অদিতি আর আবীর এক ভার্সিটিতে পড়তে পারত।দূরত্বের বিষাদে নয় বরং সুখের রঙে রঙিন করতে পারত প্রতিটা মুহূর্ত।তবু ভবিষ্যতের কথা ভেবে স্কলারশিপে পড়তে যাওয়াকেই বেছে নেয় আবীর।সেদিনের ত্যাগ ওদের উপর অবিচার করেনি।এত দূরের সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে মান অভিমানগুলো ও খুব একটা বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। বরং পারিবারিক সম্মতিও দিয়েছে।আবীর এলেই এবার এত বছরের লুকোচুরি প্রেমটা সামাজিক মর্যাদা পাবে।
আবীরের কথা ভাবতেই ফোনটা বেজে উঠে অদিতির।
-হ্যালো?
-কে অদিতি?কেমন আছো?
-ভাল।তুমি?কোথায় এখন?
-এইত আমি প্লেনে উঠবো একটু পরে।তাই তোমাকে জানিয়ে রাখলাম।
-ইশ!যদি রকেটে করে চলে আসতে পারতে!সময়তা কেন যে এত দীর্ঘ হয়।
-আরেকটু ধৈর্য ধরুন ম্যাডাম।এরকম একটা রাজপুত্রের জন্য কিছুটা অপেক্ষা তো করাই যায়।
-তাই না?ফাজিল।বলেই হেসে উঠে অদিতি।
মেয়েটার হাসি এত সুন্দর কেন জানেনা আবীর।হাসি যে শুধু দেখার না শোনার ও ব্যাপার টা অদিতিকে না দেখলে বুঝতেই পারতনা সে।
-আচ্ছা এখন রাখি কেমন।তুমি কিন্তু রেডি হয়ে ঠিক ঠাক এয়ারপোর্ট চলে এসো।
-আচ্ছা।সাবধানে থেকো।রাখি।
মনের মধ্যে আনন্দের উচ্ছলতা খেলে যায় অদিতির।
২
অদিতি বসে আছে ড্রইং রুমে।হাতে মেহেদি দিচ্ছে।আবীর মেহেদি দেয়াটা খুব একটা পছন্দ করত না।একবার ঈদের পর একসাথে বের হয় দুজন।মেহেদি রাঙা একটা হাত যে এত সুন্দর হতে পারে ভাবতে পারেনি আবীর।আসলে পছন্দের মানুষটার সবই হয়ত সুন্দর।সেই থেকে উৎসব পার্বণ ছাড়াও মেহেদি লাগাত অদিতি।এজন্য বন্ধুদের থেকেও কম জ্বালাতন সহ্য করেনি।কিন্তু তাতে কি এসে যায়!ভালোবাসার মত অনুভূতির কাছে এসব তো তুচ্ছ!!ভালোবাসা যে শুধু মনের কথা শোনে,বাহিরের কিছুই মানতে চায়না!
বসে বসে আপাতত টিভি দেখা ছাড়া কাজ নেই অদিতির।চ্যানেল চেঞ্জ করারও উপায় নেই এখন।নানা কাজের চাপে টিভিটা ওভাবে দেখা হয়না এখন।সবগুলো অ্যাডই নতুন লাগছে।হঠাৎ ব্রেকিং নিউজ লেখা উঠে স্ক্রল হতে থাকলো..."লন্ডন থেকে ঢাকাগামী বিমানটি রানওয়ে থেকে ছিটকে পড়েছে।এখন পর্যন্ত হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।তবে কয়েকজনেরর অবস্থা আশঙ্কাজনক।"
অদিতির চোখটা ঝাপসা হয়ে আসছে।কিছুই বুঝে উঠতে পারছেনা সে।কেমন একটা দম বন্ধ ভাব অনুভব হচ্ছে।নিজেকে সামলে নেবার চেষ্টা করে সিএনএন,বিবিসি সব জায়গায় দেখল।একই নিউজ দেখাচ্ছে।মেহেদির লাল যেন হৃদয়ের রক্তক্ষরণ হয়ে ফুটে উঠছে।কাঁদার জন্যও শক্তি পাচ্ছেনা মেয়েটা।ক্রমেই বোধহীন শরীরটা পড়ে যায় সোফার উপর।
৩
কেবিন নং ৫১২।বাইরে অদিতির বাবা মা সবাই আছে।একটু আগেই আইসিইউ থেকে কেবিনে আনা হয়েছে ওকে।আধাঘণ্টা যাবত ওর বিছানার সামনে একটা ছেলে বসে আছে।আস্তে আস্তে চোখ মেলছে অদিতি।কি নিষ্পাপ একটা চেহারা।সামনের হালকা পাতলা গড়নের ছেলেটাকে বেশ পরিচিত মনে হচ্ছে।অসুস্থতায় থেকে কোন ভুল হচ্ছে না তো?পরম মমতায় অদিতির মাথায় হাত রাখল ছেলেটা।বেশ কোমল গলায় বলে উঠল
-কেমন লাগছে এখন?
গলাটা তো খুব পরিচিত।আরে এতো আবীরই।নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছেনা অদিতি।সেই ঘোরের মধ্যে থেকেই বলল
-কিছুটা ভাল।কিন্তু তুমি?আমি স্বপ্ন দেখছিনা তো?
-না।সত্যিই আমি আবীর।তোমাকে সারপ্রাইজ দেয়ার জন্য ইচ্ছে করেই আমার ফ্লাইট এর তারিখ একদিন পিছিয়ে বলেছিলাম।
-তাহলে তখন যে ফোন দিয়ে বললে প্লেনে উঠছ?
-আমি মিথ্যে কিছু বলিনি কিন্তু।দুবাই এ ট্রানজিট ছিল।তখনই ফোন দেই তোমাকে।
অদিতি কিছু বলতে পারছেনা আর।নিজেকে সবচেয়ে ভাগ্যবতী মনে হচ্ছে আজ।দুজনই নীরবে দুজনের দিকে তাকিয়ে আছে।এতদিনের চোখের তৃষ্ণাটা মেটাতে কেউই কোন কার্পণ্য করছেনা।
আকাশ উজাড় করে জোছনা উঠেছে।একটা স্বপ্ন পূরণের গল্প দেখছে সে।সব স্বপ্নের শুরুটা এমনই হয়।কিন্তু শেষটা কেন জানি বদলে যায়।সেই স্বপ্নগুলোর যাত্রা আবীরের মত ফ্লাইট চেঞ্জ করে না।কত রকমের দুর্ঘটনায় মানুষগুলো হারিয়ে যায়।সারা জীবনের নীরব কান্না হয়ে থাকে কারো জীবনে।কিন্তু স্বপ্নগুলো হারায় না।মাঝ নদী বা আকাশের সাদা মেঘে স্বপ্নগুলো ভেসে বেড়ায়।আশীর্বাদ করে যায় নতুন স্বপ্নসারথিদের।আবার গড়ে উঠে নতুন কোন রোদ বৃষ্টির গল্প,জলজোছনার কাব্য।
০২ রা মে, ২০১৫ রাত ৯:৪৮
রুবাইয়াৎ তন্ময় বলেছেন: ধন্যবাদ শেষ টানার জন্য উপসংহারটা ব্যবহার করলাম আরকি।
২| ০২ রা মে, ২০১৫ রাত ৯:৪১
মো: তাছলিমূল হক বলেছেন: চমৎকার ছোট মিষ্টি গল্প। বর্তমানে প্লেন একসিডেন্টর মহারত চলছে।আইডিয়া টা সম্ভাবত ঐ খান থেকে নেওয়া।
০২ রা মে, ২০১৫ রাত ৯:৪৯
রুবাইয়াৎ তন্ময় বলেছেন: ধন্যবাদ।প্লেনসহ আজকাল আসলে নানা দুর্ঘটনাই হচ্ছে।সেখান থেকেই লিখা।
৩| ০২ রা মে, ২০১৫ রাত ৯:৪৩
অবনি মণি বলেছেন: অনেক ভালোলাগা !
০২ রা মে, ২০১৫ রাত ৯:৫০
রুবাইয়াৎ তন্ময় বলেছেন: ধন্যবাদ গল্পটা পড়ার জন্য
৪| ০২ রা মে, ২০১৫ রাত ১০:৪৭
দিশেহারা রাজপুত্র বলেছেন: ভালো লাগা।
©somewhere in net ltd.
১|
০২ রা মে, ২০১৫ রাত ৯:৪০
আরণ্যক রাখাল বলেছেন: বেশ লাগল গল্পটা । উপসংহারটার দরকার ছিলনা