নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি একজন ব্যর্থ মানুষ।ব্যর্থতার মাঝেই সফলতাকে খুঁজি।

ফেক রুধির

ফেক রুধির › বিস্তারিত পোস্টঃ

\\\\\\"নির্মম\\\\\\"

১৫ ই মে, ২০১৫ রাত ১১:৩২

শেষ বিকেল।চারিদিক ভরে গেছে আবছা অন্ধকারে।শহুরে এলাকা।কিন্তু রাস্তার ল্যাম্প পোস্টে আলো জ্বলেনি এখনো।রুধির হাঁটছে আপন মনে।একের পর এক প্রাইভেট-কার পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছে।এই জনাকীর্ণ শহরে মানুষের ছুটে চলা,ব্যস্ততা ধীরে ধীরে কমতে শুরু করেছে।ঘর্ম-ক্লান্ত শরীর নিয়ে সবাই এখন ফিরে চলেছে ঘড়ের দিকে।দূরে কোথাও কিছু কাক কা! কা! রব তুলে চলে গেলো।শহরের ফুটপাত গুলো ইদানীং খুব নোংরা করে ফেলছে মানুষ জন।হাটার ফাঁকে ফাঁকে স্থানে স্থানে প্রকৃতির ডাকে সারা দিতেও ভোলেনা।এতে অবশ্য সমস্যা যাদের স্থায়ী নিবাস নাই।ফুটপাতই যাদের নিবাস।সারাদিন হয়তো ফেরি করে চা,সিগারেট,পান বিক্রি করে অথবা ভিক্ষা করে জীবন যাপন করে একটু গা এলিয়ে দেবার জায়গা বের করতেই যখন দেখে তীব্র গন্ধ নাকে লাগছে!খারাপ লাগারই কথা।ভালো জায়গার জন্য ঝগড়া করে নিরুপায় হয়ে অনেক সময় গন্ধকে সয়ে নিয়েই শুয়ে পরতে হয় অনেককে!ফুটপাতে।হাঁটতে হাঁটতে কখন যে গণভবন অতিক্রম করে সহরাওয়ার্দি হাসপাতাল এর সামনে চলে এসেছে টেরই পায়নি রুধির।ফুট ওভার ব্রিজ এর উপর উঠে এক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে ছুটে চলা গাড়ি গুলোর দিকে।পেছনের লাল আলো গুলোর দিকে অনেক্ষন তাকিয়ে থাকলে চোখ ধাঁধিয়ে যায়।ভ্রম হয়।আবছা হয়ে আসে সবকিছু।রুধিরের কাছেও তেমন লাগছে।তবুও দৃষ্টি ফেরাতে ইচ্ছে হচ্ছে না।এর মাঝেই নিজেকে ভুলে থাকতে ভালো লাগছে তার।ঢাকা শহরে হাসপাতাল গুলোর পাশে একধরনের দোকান বসানোর রীতি আছে।মৃত ব্যক্তির জন্য সরংজামদি পাওয়া যায়।তারই একটা দোকানের পাশে এসে দাঁড়ালো রুধির।দোকানের নাম আখেরি বিদায় স্টোর।রুধির অবাক হয়ে লক্ষ্য করলো দোকানটার দেয়ালে লাগানো একটা সিনেমার পোস্টার।সিনেমার নাম “মোস্ট ওয়েলকাম”

আখেরি বিদায় স্টোর এর গায়ে মোস্ট ওয়েলকাম সিনেমার পোস্টারটা কেমন যেন বেমানান রূপে মানিয়ে গেছে।সেটাই রুধির এর মনে অসস্থি জাগাচ্ছে।একটু আগে কয়েকটা লোক হাসপাতালের ভেতরে একটা লোককে পাজকলা করে নিয়ে গেলো।বোধয় এক্সিডেন্ট করেছে।আনমনা হয়ে স্মৃতির পাতায় থাকা এক্সিডেন্টের কথা ভাবছে সে।তার শৈশবের শহর খুব একটা বড় নয়।তবুও সেখানে ভয়ংকর হয়ে দেখা দিল এক দানব।বালির ট্রাক।এক এর পর এক মানুষ মেরেই চলেছে।তবুও থামানো যাচ্ছে না।কদিন আগেও একটা বাড়ির দেয়াল ভেঙ্গে ঢুকে পড়েছিল ঘড়ের ভেতরে।পাঁচ বছরের একটা বাচ্চা মারা গেলো।এর কিছুদিন পর আজিজুল হক কলেজ এর এক মেধাবী ছাত্র ও মারা গেলো।পুলিশ কে জানানোর পরও থামছে না এই দানব।কারন ক্ষমতাসীনদের নির্দেশে চলে এই ট্রাক,চাকরি হারাবার ভয়ে পুলিশ নির্বিকার।একের পর এক অদক্ষ চালকের হাতে বালির ট্রাক তুলে দিচ্ছে মালিক পক্ষ।মালিক পক্ষের অঢেল টাকা।তারপরও ভালো ড্রাইভার না নিয়ে,টাকা কম লাগবে বলে বালি তোলা শ্রমিক এর হাতে তুলে দেয় ট্রাকের চাবি।আর এক এর পর এক প্রাণ নিতে থাকে।মনে এতটুকু ব্যথা হয়না তাতে!!এইযে ঢাকা শহরে নগরায়ন এর প্রভাবে এত বালি আসে সেগুলো যে কত গুলো মৃত মানুষের সাক্ষী হয়ে আসে জীবিতদের সুখের নীড় গড়বার জন্য তা কি মানুষ ভেবে দেখে একবারও?নিজেকে এই প্রশ্ন টা করে থেমে যায় রুধির….।

সকাল টা অনেক সুন্দর ছিল।ভোরবেলা ফজর এর নামাজ আদায় করে।বাসায় ফিরে তৈরি হয়ে বাবার সাথে সাইকেলে চরে স্কুলে যাচ্ছিল রুধির।রুধিরের গ্রাম থেকে স্কুল বেশ দূরেই...
চিন্তায় ছেদ পড়লো হঠাৎ কাঁধে একটা হাতের স্পর্শ পেয়ে।শিরদাঁড়া বেয়ে একটা শীতল স্রোত নেমে গেলো রুধিরের।এই অচেনা শহরে কে তার কাঁধে হাত রাখতে পারে ভেবে পাচ্ছেনা।পেছন ঘুরে চমকে উঠলো সে।
কে?
বাবা!
কেমন আছিস রুধির?
ভালো বাবা।তুমি কেমন আছ?
তোকে ছাড়া ভালো কীভাবে থাকি বল?কতদিন তোকে দেখিনা।আয় তো তোকে একটু বুকে নিয়ে আদর করি।মাথার চুলে হাত বোলাতে বোলাতে বাবা বলতে থাকে তোর অনেক কষ্ট না রে রুধির?কি করব বল তোকে যে একটু সাহায্য করব সে সামর্থ্য টুকু যে আমার নেই।সেই কবেই তা হারিয়েছি।
বাবা!আসলে সবই তোমার নিয়তি আর আমার ভাগ্য।আমি এখন আর কষ্টে নেই বাবা এইতো কতদিন পর তোমাকে পেয়েছি।আমাকে তোমার বুকে আগলে রেখেছ।আমার সব কষ্ট শেষ হয়ে গেছে।
তুই তো অনেক গুছিয়ে কথা বলা শিখে গেছিস।ঠিক তোর মার মতো।
আচ্ছা বাবা,কষ্ট কি সব সময় দুখের সৃষ্টি করে?নাকি দুখের কারণে কষ্টের সৃষ্টি?
দুঃখের কারণেই হয়তো হবে।তুই তো দেখি দার্শনিক কথা-বার্তা শিখে ফেলেছিস!!তোর মা বলতো তুই এক সময় দার্শনিক হবি।তুই পড়ালেখা করেছিস কোন বিষয় নিয়ে?
দর্শন নিয়ে বাবা।
যাক তোর মা এর আশা পূরণ হয়েছে।
আচ্ছা বাবা!জীবনের অর্থ কি?
তোর কাছে কি মনে হয় জীবনের অর্থ সম্পর্কে?
আমার কাছে মনে হয় জীবনের কোন অর্থই নেই।অর্থ শূন্য একটা বিষয়।
না রে,জীবনের অবশ্যই অর্থ আছে।অর্থ না থাকলে আল্লাহ্‌ কখনই আমাদের সৃষ্টি করতেন না।আর টিকে থাকার জন্য এত সুন্দর আবহ তৈরি করতেন না।একটু ভেবে দ্যাখ পৃথিবীর প্রত্যেকটি জীব কিম্বা জড় মানুষের জন্যই আল্লাহ্‌ সৃষ্টি করেছেন।শুধু শুধুই তো আর মানুষকে আশরাফুল মখলুকাত বলেন নাই।আমাদের আশা-যাওয়ার মাঝেই যাকিছু অর্জন তাই জীবনের অর্থ।
ওহ আচ্ছা বাবা!

তোর মা কেমন আছে রে?কতদিন তাকে দেখিনা।মা নেই বাবা গতকাল ক্যান্সার এর সাথে যুদ্ধ করে হেরে গেছে বাবা।আমাকে ফাঁকি দিয়ে চলে গেছে।সবাই আমাকে ফাঁকি দিয়ে চলে যায় কেন বাবা?
আমি তো আছি।তোর বাবা!
আবার ভাবনার জগতে চলে গেলো রুধির।সেদিন সকালেও স্কুলে বাবার সাথে সাইকেলে করে যাচ্ছিল।থানা মোরে এসে রেইল ঘুমটি পড়েছে।সকাল ৯টা বাজে ঠিক মনে আছে।ট্রেন এর হুইসেল শোনা যাচ্ছে।হঠাৎ একটা বালি বোঝাই ট্রাক এসে মেরে দিল রুধিরদের সাইকেলের পাশের রিক্সায়।তীব্র ধাক্কায় রুধিরের বাবা ছিটকে পড়ে গেলো রেইল লাইন এর উপর।কিছু বুঝে ওঠার আগেই ট্রেনে কাটা পড়ে মারা গেলো রুধির এর বাবা...
হঠাৎ করেই বাস্তবে ফিরে এলো রুধির।আশে পাশে তাকালো।কাউকে দেখতে পেলো না।শুধু দেখল একটা লোম ওঠা কুকুর রুধির এর দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।হাঁটতে হাঁটতে কখন যে বি,এন,পি বাজারের বট গাছটার নিচে এসে বসেছে নিজেও জানে না।মহাম্মাদপুর – আদাবর এ একটা রুম নিয়ে থাকতো মা-ছেলে।কয়েক মাসের ভাড়া বাকী পড়ে আছে।মা এর সেবা করতে গিয়ে চাকরি হারিয়েছে।জমি-জমা বিক্রি করে মা এর চিকিৎসা করিয়েছে।কি করবে ভেবে উঠতে পারছে না।
হঠাৎ করেই গোলা-গুলি শুরু হোল।নিরাপদ জায়গায় যাবার আগেই একটা বুলেট এসে লাগলো রুধিরের মাথায়।কিছু মগজ ছিটকে গিয়ে রাস্তায় পড়লো।পরদিন দৈনিক পত্রিকার প্রধান শিরোনাম-
“পুলিশ এর গুলিতে শীর্ষ সন্ত্রাসী নিহত”

রুধির এর লাশ খাটিয়ায় করে নিয়ে যাচ্ছে কিছু মানুষ।তারা কেউ রুধির এর পরিচিত নয়।তারা কেউ জানেনা রুধির এর আসল পরিচয়।শুধু জানে সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিতি পাওয়া নকল পরিচয়।

{বিদ্রঃএটি শুধুই গল্প।সকল চরিত্র এবং ভাবনা কাল্পনিক।সমাজে ঘটে যাওয়া কিছু সত্য কে অলংকৃত করা হয়েছে।নিজেদের সচেতন হবার জন্যই।কাউকে হীন করা আমার উদ্দেশ্য নয়।প্রত্যেকেই প্রত্যেকের পেশায় সন্মানিত।}

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ১৬ ই মে, ২০১৫ রাত ১:৪০

কালান্তরের অশ্বারোহী বলেছেন: X( X( X(

১৬ ই মে, ২০১৫ রাত ৮:৪৮

ফেক রুধির বলেছেন: @কালান্তরের অশ্বারোহী ভাই আমার উপর রেগে যাবার কারণটা কি জানতে পারি?? আমার লিখায় ট্রুটি থাকলে ভুল শুধ্রাবার জন্য পরামর্শ দিলে খুশি হব । :|

২| ১৮ ই মে, ২০১৫ দুপুর ২:২৭

কালান্তরের অশ্বারোহী বলেছেন: আরে ভাই, একটা জলজ্যান্ত ছেলে এইভাবে মারা গেলো , আর আমি রাগবো না? একদিন তো আমিও মারা যেতে পারি তাই না??

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.