নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি একজন ব্যর্থ মানুষ।ব্যর্থতার মাঝেই সফলতাকে খুঁজি।

ফেক রুধির

ফেক রুধির › বিস্তারিত পোস্টঃ

অতঃপর মৃত্যু

১১ ই জুন, ২০১৫ রাত ৮:২১

অনেক দিন হল রুধির এর মন খারাপ।জীবনের অনেক গুলো বসন্ত পার করলেও সুখ নামক শব্দটা টা তার জীবনে অচেনাই রয়ে গেছে।ছোট বেলায় মা-বাবা কে হারিয়েছে বন্যার কবলে পড়ে।দাদার কাছে থেকে বড় হলেও দাদা মারা যাওয়ার পর কিছু দিন চাচার কাছে থেকেছে।সম্পত্তির কারণে চাচাও বের করে দিয়েছে।এখন সে রাজধানীর পার্কের বেঞ্চের বাসিন্দা।পার্কের গাছ, কাক আর কুকুর তার নিত্ত সঙ্গী।
দাদা বেচে থাকা কালীন এইচ এস সি টা পাশ করেছে।এরপর আর পড়া শুনা হয়ে উঠেনি।একটা চায়ের দোকানে কাজ করে কোন রকমে খাওয়ার খরচ চলে রুধিরের।গল্প করবার মত কেউ নেই।চা দোকানের মালিক দুলাল মিয়ার সাথেই সুযোগ পেলে মাঝে মাঝে কথা হয়।আর বাকিটা সময় পার্কের কুকুর আর গাছের সাথেই কথা বলে দিন কেটে যায় রুধিরের।আর প্রতিদিন স্বপ্ন দেখে একদিন তার মুক্তি হবেই।একটা ভালো চাকরি হবে।এরপর একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বে।অনেক বড় হবে।
এভাবেই কাটছিল রুধির এর দিন।কিন্তু হঠাৎ করেই স্বপ্নের নাগাল পেয়ে যাবে রুধির ভাবতেই পারেনি।অন্যান্য দিনের মতোই রুধির সেদিন চা এর দোকান থেকে ফিরে পার্কের বেঞ্চে বসে একটা লোম ওঠা কুকুরের সাথে কথা বলছিল।
- জানিস আমার না কথা বলার কোন মানুষ নাই।
- ঘাউ।
- কতো কষ্ট আমার।
- ঘাউ।
- জানিস একদিন আমার এই কষ্টের দিন শেষ হবে।
- উউ উ ঘাউ।
এ ভাবেই চলছিল রুধির আর কালো কুকুরের কথোপকথন।হঠাৎ করেই একজন আগুন্তক আসলো।
- ভাই আপনার সাথে কি কথা বলা যাবে?
- জি বলেন!
- আপনি কি এখানেই থাকেন?
- হুম, ক্যান?
- না এমনি জিজ্ঞাসা করলাম।একা একা কথা বলছেন তো।প্রথমে তো পাগল ভাবছিলাম।পড়ে আপনার কথা শুনে মনে হইল ভালো মানুষ।
- হুম প্রথম প্রথম সবাই ভাবে।
- আমি কি বসতে পারি?
- অবশ্যই।
- আমার নাম রাজ্জাক।আমার যখন জন্ম তখন রাজ্জাক আর ববিতার একটা ছবি বের হয়।আমার সিনেমা পাগল বাবা তাই এই নাম রাখছে।
- ও আচ্ছা।
- আপনার নাম কি ভাই।?
- আমার নাম রুধির।
- ও সুন্দর নাম।ভাইজান বোধ করি পড়া-লিখা জানা লোক?
- হুম।
- ও!ভাই আপনার সাথে আজ রাত টা থাকতে পারি?
- কেন?
- না মানে ভাই, চাচার বাসায় গেছিলাম।চাচা তার শালির বিয়েতে গেছে ফরিদপুর।তাই বাসায় তালা।যদি কিছু মনে না করেন।তাইলে আপনার সাথে রাত টা থেকে সকালে কুমিল্লা চলে যাব।
- আপনার বাড়ি কুমিল্লা নাকি?
- হ। কেন?
- আমার গ্রাম ও তো কুমিল্লা!
- কোন গ্রাম?
- গোল্লাই,চান্দিনা।
- অরে আল্লাহ্‌!!আমার বাড়িও তো দেবীদ্বারে।ছোট আলমপুর।
- আমার কাকার বাড়িও তো ওখানেই।ছোট আলমপুর কোন পাড়ায় বাড়ি?
- উত্তর পাড়া।উত্তর পাড়া একটা জামে মসজিদ আছে না তার পশ্চিম পার্শে।
- ও।রহমত মিয়া রে চেনেন?আমার কাকা।
- আরে রহমত কাকা!কতো ভালো মানুষ আছিলেন।ডাকাতির প্রতিবাদ করতে গিয়ে নিজেই মারা পড়লো।আহহা রে।
- হ কাকা কতো আদর করত আমারে।
এরপর শুরু হল দুজনের নিজেদের জীবনের গল্প বলা।রাজ্জাক।জমিজমা বিক্রি করে চাকরির টাকা জমা দিয়েছিল ঢাকার এক দূর সম্পর্কের চাচার কাছে।ঢাকা আসার পর চাচা কে আর খুঁজে পাচ্ছে না সে।মোবাইল বন্ধ।যা টাকা ছিল ৫ দিন খাওয়া থাকা তেই শেষ।জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় অনার্স মাস্টার্স করে এখন সে চাকরির অপেক্ষায়।চাচা তাকে চাকরি দেবার নাম করে নিয়ে এসেছিল ঢাকায়।কিন্তু এখন তিনি লাপাত্তা।
সকাল বেলা দুলাল মিয়া এসে রুধির কে দোকানে না দেখে পার্কে গেলো।
- ওই রুধির ওঠ!এত সকাল হল ওঠস নাই ঘুম থেকে।
- চাচা আজ অনেক রাতে ঘুমাই ছিলাম তো তাই।
- আরে রাজ্জাক কই?
- কে রাজ্জাক! কোন রাজ্জাক?
- আমার সাথেই তো ঘুমাইছিল।কই গেলো?
- কি আবোল তাবল বলিস।একা থাকতে থাকতে তোর মাথাটা গেছে।
- না আমার সাথেই ছিল কাল রাতে।
- আচ্ছা বাদ দে এখন চল দোকানে যাই।
খুব ভোড়েই রাজ্জাক তার সেই চাচার খোঁজে বের হয়েছে।পেয়েও গেছে।রাজ্জাক যখন তার দূরসম্পর্কের চাচার বাসার সামনে যায় তখন তার চাচা সকালের হাঁটার জন্য বের হচ্ছিলো।রাজ্জাককে চোখের সামনে দেখে ভুত দেখার মতো চমকে উঠল কবির সাহেব।নিজেকে সামলে নিয়ে বলল
- কিরে রাজ্জাক কখন আসলি?
- এইতো চাচা ৬ দিন হয়।
- ৬ দিন!?ছিলি কই?
- জি মানে চাচা হটেলে রুম নিয়া।কাল রাতে অবশ্য পার্কে আছিলাম।টাকা নাই!
- ও।
- মানে চাচা আপনে তো ছিলেন না।
- হ! আমি একটু ফরিদপুর গেছিলাম।শালির বিয়া।আমি বড় জামাই তো কি রা করমু বল।যাইতে চাই নাই।দায়িত্ব কি আর করব।
- জি চাচা।আমার চাকরির কিছু খোঁজ পাইলেন কি?
- হুম তোর তো চাকরি ঠিক করে ফেলছি।মালয়েশিয়া।
- মালয়েশিয়া!!
- হ!টাকা পয়সা নিয়া চিন্তা করিস না সব জহির দিব।তুই চাকরি করে সব ফেরত দিবি।অল্প অল্প করে দিলেই হইব।
- পাসপোর্ট?
- ও নিয়া চিন্তা করিস না।তোর ছবি তো আমার কাছেই আছে।তুই আমর ভাতিজা।তোর পাসপোর্ট আমি করে দিব।তুই বাড়ি গিয়া যোগাড় পত্তর কর।সামনে মাসে দেখা করিস।
এক মাস পর।রুধির আর রাজ্জাক একসাথে চট্টগ্রাম এর চর বাকলিয়া তে অবস্থান করে ভাগ্য ফেরানোর আশায় মালয়েশিয়া যাবার জন্য অপেক্ষা করছে।
- কি রে রুধির অমন মন মড়া হয়ে বসে আছস কেন?
- না রে আমার দেশ,মানুষ,পার্ক এর জীব,এত পরিচিত দের ছেড়ে যাইতে খুব কষ্ট লাগতেছে।
- হ রে আমার ও।কতো দিন যে মা কে দেখব না।বাবা তো সেই কবেই মরে গেছে।দেখা তো হবে না।মা কেমন করে যে থাকবে।আমি মা র জন্য প্রথম বেতন পেলেই সুন্দর একটা গলার চেন পাঠাবো।
খুব ভোরে দালালরা ওদের নিয়ে একটা নৌকায় তুলল।উদ্দেশ্য কর্ণফুলী নদী দিয়ে ইছানগর যাওয়া।সেখান থেকে চর লাক্সিয়া হয়ে দৌলতপুর,সেখান থেকে বাথুয়া।সেখান থেকে নিদাগার পারা হয়ে সোজা কক্সবাজার হাইওয়েতে।সেখান থেকে ভাগ ভাগ হয়ে ৩০ জন সোজা চলে যাবে বড় মহেশ খালি।সেখান থেকেই রাতের আধারে যাত্রা হবে স্বপ্নের মালয়েশিয়ায়।এতক্ষণ দালাল দের মুখে এই রাস্তার প্লান শুনে মন খারাপ হলেও যখন মালয়েশিয়া নামটা শুনল সবাই।সবার চোখ চঞ্চল হয়ে উঠল।
প্রায় দুই মাস হয়ে গেলো ছেলের কোন খবর না পেয়ে পাগল প্রায় রাজ্জাক এর মা।একে অকে জিজ্ঞাসা করে ও কোন হদিস না পেয়ে চলে গেলো ঢাকায় সেই কবির সাহেব এর বাসায়।
- আমার বাজানের কোন খোঁজ জানেন?
- হ!তোমার পোলা ভালো আছে।এই তো দুই সপ্তাহ আগেই কথা হল।
- আমার পোলার লগে একটু কথা বলায়ে দিবেন?
- ও তো এখন কাজে গেছে,কাজ থেকে ফিরুক আমি ফোন করে বলব নে যে তুমি কথা বলবা।এখন যাও গা ওই রুমে গিয়া শুয়ে রেস্ট নেও।
- আচ্ছা!
কিছুক্ষন পরের ঘটনা।টেলিভিশনে প্রচার হচ্ছে থাই উপকুলে গণকবর পাবার খবর।
রাজ্জাক এর মা ও তাকিয়ে সেই খবরের লাশ গুলোর দিকে ভিডিও তে রাজ্জাক এর লাশ ও দেখা গেছে.....

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২২ শে জুন, ২০১৫ রাত ১০:৫০

প্রামানিক বলেছেন: ভাল লাগল। ধন্যবাদ

২৩ শে জুন, ২০১৫ রাত ১০:৩৬

ফেক রুধির বলেছেন: আপনাকে ও ধন্যবাদ।

২| ২৩ শে জুন, ২০১৫ রাত ১০:৫৮

এএইচ ছোটন বলেছেন: আপনার লেখায় কিছু প্রাণ আছে। জীবিত থাকার মত!!

২৩ শে জুন, ২০১৫ রাত ১১:১০

ফেক রুধির বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই।জানিনা প্রাণ আছে কিনা? তবে উপ্লধ্যি টুকুই তুলে ধরবার চেষ্টা করি।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.