নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জোস্নার কানে কানে রৌদ্রের কথা বলছি

১ বছর হয়ে গেল পোস্ট, কমেন্ট ব্যান। উকে দেখা যাক

রৌদ্রনীল আহমেদ

অপ্রতিদ্বন্দ্বি, অতুলনীয়, অনন্য!

রৌদ্রনীল আহমেদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

রঙিন দিনের রঙিন ‘ছড়া’রা

১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১১:৩৯

সাহিত্যে ভালোলাগার প্রথম চরণটিই বোধহয় পড়ে ছড়াতে। ছড়ার মত আকর্ষনীয় জাদুকরী ক্ষমতা আর কিসে আছে জানি না। আমার পড়া কিছু (খুবই অল্প সংখ্যক) শিশু সাহিত্য (ছড়া) সংকলনের একটি চেষ্টা করলাম। নেহায়েতই ব্যক্তিগত ভালোলাগার আঙ্গিকে ছড়া দেয়া হল। মূলতঃ সামুতে ছড়াগুলো সংরক্ষণ করলাম, যারা পড়েছেন তারাও পড়বেন, যারা পড়ার জন্য খুঁজছিলেন তাদের চোখের সামনে রইল। নিয়মিত আপডেট করার ইচ্ছা আছে। আরও ইচ্ছা আচ্ছে এসব রঙিন ছড়ার ছড়াকারদের কিছুটা হলেও জানার ও পড়ার। হাতের কাছে যা পেয়েছি এলোমেলোভাবে সম্পূর্ণ, অসম্পূর্ণ, ভাঙ্গা-ভাঙ্গা মনে আছে, ভুলটুল যতটুকু সবই তুলে রাখা হল। এগুলোও সম্পূর্ণ ও শুদ্ধ করে পড়তে চাই।



পাঠকদের কাছে বিশেষভাবে অনুরোধ রইল ছড়ার অসম্পূর্ণ অংশ, ছড়াকারের নাম ইত্যাদি কমেন্টে রেখে যাবেন- আমি এবং আমরা আরও ছড়া পড়তে চাই। ছড়া বারবার পড়তে চাই। কমেন্ট করার সময় ছড়ার শিরোনাম, ছড়াকারের নাম ও সম্পূর্ণ ছড়া- পুরোটা একসাথে রাখবেন।



সুকুমার রায়-কে দিয়ে প্রথম প্রচেষ্টা। এছাড়া অন্য ছড়াকারদের ছড়াও সামান্য কিছু দিলাম। বই, স্মৃতি, ব্যক্তিগত সংগ্রহ, ইন্টারনেট, উইকি, ব্লগ কিছুই বাদ নেই- সব জায়গা থেকে হাত পেতে নিয়েছি। উল্লেখ্য, আমার প্রিয়/ ভালোলাগার ছড়াগুলোই এখানে রেখেছি। নিঃসন্দেহে সব রাখতে পারলে ভালো লাগত কিন্তু সেটা করছি না। বহু ছড়াকারের মজার সব ছড়ার বৈচিত্র্য রাখতে চাই।



সুকুমার রায় (১৮৮৭ - ১৯২৩) একজন বাঙালি শিশুসাহিত্যিক ও ভারতীয় সাহিত্যে "ননসেন্স্ রাইমের" প্রবর্তক। তিনি একাধারে লেখক, ছড়াকার, শিশুসাহিত্যিক, রম্যরচনাকার ও নাট্যকার। তিনি ছিলেন জনপ্রিয় শিশুসাহিত্যিক উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর সন্তান এবং তাঁর পুত্র খ্যাতিমান চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়। তাঁর লেখা কবিতার বইআবোল তাবোল, গল্প হযবরল, গল্প সংকলন পাগলা দাশু, এবং নাটক চলচ্চিত্তচঞ্চরী বিশ্বসাহিত্যে সর্বযুগের সেরা "ননসেন্স" ধরণের ব্যঙ্গাত্মক শিশুসাহিত্যের অন্যতম বলে মনে করা হয়, কেবল অ্যালিস ইন ওয়ান্ডারল্যান্ড (Alice in Wonderland) ইত্যাদি কয়েকটি মুষ্টিমেয় ক্লাসিক-ই যাদের সমকক্ষ। মৃত্যুর আশি বছর পরও তিনি বাংলা সাহিত্যের জনপ্রিয়তম শিশুসাহিত্যিকদের একজন। ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দে কালাজ্বরে (লেইশ্মানিয়াসিস) আক্রান্ত হয়ে মাত্র সাঁইত্রিশ বছর বয়সে সুকুমার রায় মৃত্যুবরণ করেন, সেই সময় এই রোগের কোনো চিকিৎসা ছিল না।

------

বুঝিয়ে বলা

সুকুমার রায়



ও শ্যামাদাস! আয়তো দেখি, বোস তো দেখি এখেনে,

সেই কথাটা বুঝিয়ে দেব পাঁচ মিনিটে, দেখে নে৷

জ্বর হয়েছে? মিথ্যে কথা! ওসব তোদের চালাকি—

এই যে বাবা চেঁচাচ্ছিলি, শুনতে পাইনি? কালা কি?

মামার ব্যামো? বদ্যি ডাকবি? ডাকিস না হয় বিকেলে

না হয় আমি বাৎলে দেব বাঁচবে মামা কি খেলে!

আজকে তোকে সেই কথাটা বোঝাবই বোঝাব—

না বুঝবি তো মগজে তোর গজাল মেরে গোঁজাব৷

কোন্ কথাটা? তাও ভুলেছিস্? ছেড়ে দিছিস্ হাওয়াতে?

কি বলছিলেম পরশু রাতে বিষ্টু বোসের দাওয়াতে?

ভুলিসনি তো বেশ করেছিস্, আবার শুনলে ক্ষেতি কি?

বড় যে তুই পালিয়ে বেড়াস্, মাড়াস্নে যে এদিক্ই!

বলছি দাঁড়া, ব্যস্ত কেন? বোস্ তাহলে নিচুতেই—

আজকালের এই ছোক্রাগুলোর তর্ সয়না কিছুতেই৷

আবার দেখ! বসলি কেন? বইগুলো আন্ নামিয়ে—

তুই থাক্তে মুটের বোঝা বইতে যাব আমি এ?

সাবধানে আন্, ধরছি দাঁড়া–সেই আমাকেই ঘামালি,

এই খেয়ছে! কোন্ আক্কেলে শব্দকোষটা নামালি?

ঢের হয়েছে! আয় দেখি তুই বোস্ তো দেখি এদিকে—

ওরে গোপাল গোটাকয়েক পান দিতে বল্ খেঁদিকে৷



বলছিলাম কি, বস্তুপিণ্ড সূক্ষ্ম হতে স্থূলেতে,

অর্থাৎ কিনা লাগ্ছে ঠেলা পঞ্চভূতের মূলেতে—

গোড়ায় তবে দেখতে হবে কোত্থেকে আর কি ক'রে,

রস জমে এই প্রপঞ্চময় বিশ্বতরুর শিকড়ে৷

অর্থাৎ কিনা, এই মনে কর্, রোদ পড়েছে ঘাসেতে,

এই মনে কর্, চাঁদের আলো পড়লো তারি পাশেতে—

আবার দেখ! এরই মধ্যে হাই তোলবার মানে কি?

আকাশপানে তাকাস্ খালি, যাচ্ছে কথা কানে কি?

কি বল্লি তুই? এ সব শুধু আবোল তাবোল বকুনি?

বুঝতে হলে মগজ লাগে, বলেছিলাম তখুনি৷

মগজভরা গোবর তোদের হচ্ছে ঘুঁটে শুকিয়ে,

যায় কি দেওয়া কোন কথা তার ভিতেরে ঢুকিয়ে?—

ও শ্যামাদাস! উঠলি কেন? কেবল যে চাস্ পালাতে!

না শুনবি তো মিথ্যে সবাই আসিস্ কেন জ্বালাতে?

তত্ত্বকথা যায় না কানে যতই মরি চেঁচিয়ে—

ইচ্ছে করে ডান্পিটেদের কান ম'লে দি পেঁচিয়ে৷



-------

সাহস

সুকুমার রায়



পুলিশ দেখে ডরাইনে আর, পালাইনে আর ভয়ে,

আরশুলা কি ফড়িং এলে থাকতে পারি সয়ে।

আধাঁর ঘরে ঢুকতে পারি এই সাহসের গুণে,

আর করে না বুক দুর্ দুর্ জুজুর নামটি শুনে।

রাত্তিরেতে একলা শুয়ে তাও ত থাকি কত,

মেঘ ডাকলে চেঁচাইনেকো আহাম্মুকের মত।

মামার বাড়ির কুকুর দুটোর বাঘের মত চোখ,

তাদের আমি খাবার খাওয়াই এমনি আমার রোখ্!

এম্নি আরো নানান দিকে সাহস আমার খেলে

সবাই বলে "খুব বাহাদুর" কিংবা "সাবাস ছেলে"।

কিন্তু তবু শীতকালেতে সকালবেলায় হেন

ঠান্ডা জলে নাইতে হ'লে কান্না আসে কেন?

সাহস টাহস সব যে তখন কোনখানে যায় উড়ে-

ষাড়ের মতন কন্ঠ ছেড়ে চেঁচাই বিকট সুরে!



------

বাবুরাম সাপুড়ে

সুকুমার রায়



বাবুরাম সাপুরে,

কোথা যাস্ বাপুরে?

আয় বাবা দেখে যা,

দুটো সাপ রেখে যা!

যে সাপের চোখ্ নেই,

শিং নেই নোখ্ নেই,

ছোটে না কি হাঁটে না,

কাউকে যে কাটে না,

করে নাকো ফোঁস্ ফাঁস,

মারে নাকো ঢুঁশঢাঁশ,

নেই কোন উৎপাত,

খায় শুধু দুধ ভাত-

সেই সাপ জ্যান্ত

গোটা দুই আনত?

তেড়ে মেরে ডান্ডা

করে দেই ঠান্ডা।



------

ভয় পেয়োনা

সুকুমার রায়



ভয় পেয়ো না, ভয় পেয়ো না, তোমায় আমি মারব না—

সত্যি বলছি কুস্তি ক'রে তোমার সঙ্গে পারব না।

মনটা আমার বড্ড নরম, হাড়ে আমার রাগটি নেই,

তোমায় আমি চিবিয়ে খাব এমন আমার সাধ্যি নেই!

মাথায় আমার শিং দেখে ভাই ভয় পেয়েছ কতই না—

জানো না মোর মাথার ব্যারাম, কাউকে আমি গুঁতোই না?

এস এস গর্তে এস, বাস ক'রে যাও চারটি দিন,

আদর ক'রে শিকেয় তুলে রাখব তোমায় রাত্রিদিন।

হাতে আমার মুগুর আছে তাই কি হেথায় থাকবে না?

মুগুর আমার হাল্কা এমন মারলে তোমায় লাগবে না।

অভয় দিচ্ছি, শুনছ না যে? ধরব নাকি ঠ্যাং দুটা?

বসলে তোমার মুণ্ডু চেপে বুঝবে তখন কাণ্ডটা!

আমি আছি, গিন্নী আছেন, আছেন আমার নয় ছেলে—

সবাই মিলে কামড়ে দেব মিথ্যে অমন ভয় পেলে।



------

সৎপাত্র

সুকুমার রায়



শুনতে পেলাম পোস্তা গিয়ে—

তোমার নাকি মেয়ের বিয়ে ?

গঙ্গারামকে পাত্র পেলে ?

জানতে চাও সে কেমন ছেলে ?

মন্দ নয় সে পাত্র ভালো

রঙ যদিও বেজায় কালো ;

তার উপরে মুখের গঠন

অনেকটা ঠিক পেঁচার মতন ;

বিদ্যে বুদ্ধি ? বলছি মশাই—

ধন্যি ছেলের অধ্যবসায় !

উনিশটিবার ম্যাট্রিকে সে

ঘায়েল হয়ে থামল শেষে ।

বিষয় আশয় ? গরীব বেজায়—

কষ্টে–সৃষ্টে দিন চলে যায় ।



মানুষ তো নয় ভাইগুলো তার—

একটা পাগল একটা গোঁয়ার ;

আরেকটি সে তৈরী ছেলে,

জাল করে নোট গেছেন জেলে ।

কনিষ্ঠটি তবলা বাজায়

যাত্রাদলে পাঁচ টাকা পায় ।

গঙ্গারাম তো কেবল ভোগে

পিলের জ্বর আর পাণ্ডু রোগে ।

কিন্তু তারা উচ্চ ঘর,

কংসরাজের বংশধর !

শ্যাম লাহিড়ী বনগ্রামের

কি যেন হয় গঙ্গারামের ।—

যহোক, এবার পাত্র পেলে,

এমন কি আর মন্দ ছেলে ?



------

গোঁফচুরি

সুকুমার রায়



হেড আফিসের বড় বাবু লোকটি বড়ই শান্ত,

তার যে এমন মাথার ব্যামো কেউ কখনও জান্ত ?

দিব্যি ছিলেন খোস্মেজাজে চেয়ারখানি চেপে,

একলা ব'সে ঝিমঝিমিয়ে হঠাৎ গেলেন ক্ষেপে !

আঁৎকে উঠে হাত পা ছুঁড়ে চোখটি ক'রে গোল

হঠাৎ বলেন, "গেলুম গেলুম, আমায় ধ'রে তোল" ।

তাই শুনে কেউ বদ্যি ডাকে, কেউ বা হাঁকে পুলিশ,

কেউবা বলে, "কামড়ে দেবে সাবধানেতে তুলিস্।"

ব্যস্ত সবাই এদিক ওদিক কর্ছে ঘোরাঘুরি-

বাবু হাঁকেন, "ওরে আমার গোঁফ গিয়েছে চুরি" !

গোঁফ হারান ! আজব কথা ! তাও কি হয় সত্যি ?

গোঁফ জোড়া ত তেমনি আছে, কমেনি এক রত্তি ।

সবাই তারে বুঝিয়ে বলে, সাম্নে ধরে আয়না,

মোটেও গোঁফ হয়নি চুরি, কক্ষনো তা হয় না ।

রেগে আগুন তেলে বেগুন, তেড়ে বলেন তিনি,

"কারো কথার ধার ধারিনে, সব ব্যাটাকেই চিনি ।



------

ঠিকানা

সুকুমার রায়



আরে আরে জগমোহন- এস, এস, এস-

বলতে পার কোথায় থাকে আদ্যানাথের মেসো ?

আদ্যানাথের নাম শোননি ? খগেনকে তো চেনো ?

শ্যাম বাগ্চি খগেনেরই মামাশ্বশুর জেনো ।

শ্যামের জামাই কেষ্টমোহন, তার যে বাড়ীওলা-

(কি যেন নাম ভুলে গেছি), তারই মামার শালা ;

তারই পিশের খুড়তুতো ভাই আদ্যানাথের মেশো-

লক্ষ্মী দাদা, ঠিকানা তার একটু জেনে এসো ।



ঠিকানা চাও ? বলছি শোন ; আমড়াতলার মোড়ে

তিন-মুখো তিন রাস্তা গেছে তারি একটা ধ'রে,

চলবে সিধে নাকবরাবর ডানদিকে চোখ রেখে ;

চল্তে চল্তে দেখবে শেষে রাস্তা গেছে বেঁকে ।

দেখ্বে সেথায় ডাইনে বাঁয়ে পথ গিয়েছে কত ,

তারি ভিতর ঘুরবে খানিক গোলকধাঁধার মত ।

তারপরেতে হঠাৎ বেঁকে ডাইনে মোচড় মেরে,

ফিরবে আবার বাঁয়ের দিকে তিনটে গলি ছেড়ে ।

তবেই আবার পড়বে এসে আমড়াতলার মোড়ে-

তারপরে যাও ঝেথায় খুশী- জ্বালিও নাকো মোরে ।



------

বিজ্ঞান শিক্ষা

সুকুমার রায়



আয় তোর মুণ্ডুটা দেখি, আয় দেখি 'ফুটোস্কোপ' দিয়ে

দেখি কত ভেজালের মেকি আছে তোর মগজের ঘিয়ে ।

কোন্ দিকে বুদ্ধিটা খোলে, কোন্ দিকে থেকে যায় চাপা ;

কতখানি ভস্ ভস্ ঘিলু, কতখানি ঠক্ ঠকে কাঁপা ।

মন তোর কোন্ দেশে থাকে , কেন তুই ভুলে যাস্ কথা-

আয় দেখি কোন্ ফাঁক দিয়ে, মগজেতে ফুটো তর কোথা ।

টোল-খাওয়া ছাতাপড়া মাথা, ফাটামত মনে হয় যেন,

আয় দেখি বিশ্লেষ ক'রে- চোপ্ রও ভয় পাস্ কেন ?

কাৎ হ'য়ে কান ধ'রে দাঁড়া, জিভ্খানা উল্টিয়ে দেখা,

ভালো ক'রে বুঝে শুনে দেখি- বিজ্ঞানে যে রকম লেখা ।

মুণ্ডুতে 'ম্যাগনেট্' ফেলে, বাঁশ দিয়ে 'রিফ্লেক্ট্'

ইঁট দিয়ে 'ভেলসিটি' ক'ষে দেখি মাথা ঘোরে কি না ঘোরে ।



------

ডানপিটে

সুকুমার রায়



বাপ্রে কি ডানপিটে ছেলে !-

কোন্ দিন ফাঁসি যাবে নয় যাবে জেলে ।

একটা সে ভূত সেজে আঠা মেখে মুখে,

ঠাঁই ঠাঁই শিশি ভাঙে শ্লেট দিয়ে ঠুকে ।

অন্যটা হামা দিয়ে আলমারি চড়ে,

খাট থেকে রাগ ক'রে দুম্দাম্ পড়ে !

বাপ্রে কি ডানপিটে ছেলে !-

শিলনোড়া খেতে চায় দুধভাত ফেলে !

একটার দাঁত নেই, জিভ দিয়ে ঘষে,

এক মনে মোমবাতি দেশলাই চোষে !

আরজন ঘরময় নীল কালি গুলে,

কপ্ কপ্ মাছি ধ'রে মুখে দেয় তুলে !

বাপ্রে কি ডানপিটে ছেলে !-

খুন হত টম চাচা ওই রুটি খেলে !

সন্দেহে শুঁকে বুড়ো মুখে নাহি তোলে,

রেগে তাই দুই ভাই ফোঁস ফোঁস ফোলে !

নেড়াচুল খাড়া হয়ে রাঙা হয় রাগে,

বাপ্ বাপ্ ব'লে চাচা লাফ দিয়ে ভাগে ।



------

হাত গণনা

সুকুমার রায়



ও পাড়ার নন্দ গোঁসাই, আমাদের নন্দ খুড়ো,

স্বভাবেতে সরল সোজা অমায়িক শান্ত বুড়ো।

ছিল না তার অসুখবিসুখ, ছিল যে সে মনের সুখে,

দেখা যেত সদাই তারে হুঁকোহাতে হাস্যমুখে।

হঠাত্ কি তার খেয়াল হল, চল্ল সে তার হাত দেখাতে-

ফিরে এল শুকনো সরু, ঠকাঠক্ কাঁপছে দাঁতে!

শুধালে সে কয় না কথা, আকাশেতে রয় সে চেয়ে,

মাঝে মাঝে শিউরে ওঠে, পড়ে জল চক্ষু বেয়ে।

শুনে লোক দৌড়ে এল, ছুটে এলেন বদ্যিমশাই,

সবাই বলে, `কাঁদছ কেন? কি হয়েছে নন্দগোঁসাই?'

খুড়ো বলে, `বলব কি আর, হাতে আমার পষ্ট লেখা

আমার ঘাড়ে আছেন শনি, ফাঁড়ায় ভরা আয়ুর রেখা।

এতদিন যায় নি জানা ফিরছি কত গ্রহের ফেরে-

হঠাত্ আমার প্রাণটা গেলে তখন আমায় রাখবে কে রে?

ষাটটা বছর পার হয়েছি বাপদাদাদের পুণ্যফলে-

ওরে তোদের নন্দখুড়ো এবার বুঝি পটোল তোলে।

কবে যে কি ঘটবে বিপদ কিছু হায় যায় না বলা-'

এই ব'লে সে উঠল কেঁদে ছেড়ে ভীষণ উচ্চ গলা।

দেখে এলাম আজ সকালে গিয়ে ওদের পাড়ার মুখো,

বুড়ো আছে নেই কো হাসি, হাতে তার নেই কো হুঁকো।



------

খাই খাই

সুকুমার রায়



খাই খাই কর কেন, এস বস আহারে-

খাওয়াব আজব খাওয়া, ভোজ কয় যাহারে ।

যত কিছু খাওয়া লেখে বাঙালির ভাষাতে,

জড় করে আনি সব, -থাক সেই আশাতে ।

ডাল ভাত তরকারি ফলমূল শস্য,

আমিষ ও নিরামিষ, চর্ব্য ও চোষ্য,

রুটি লুচি, ভাজাভুজি, টক ঝাল মিষ্টি,

ময়রা ও পাচকের যত কিছু সৃষ্টি,

আর যাহা খায় লোকে স্বদেশে ও বিদেশে-

খুঁজে পেতে আনি খেতে- নয় বড় সিধে সে !

জল খায়, দুধ খায়, খায় যত পানীয়,

জ্যাঠাছেলে বিড়ি খায়, কান ধরে টানিও ।

ফল বিনা চিঁড়ে দৈ, ফলাহার হয় তা,

জলযোগে জল খাওয়া শুধু জল নয় তা ।

ব্যাঙ খায় ফরাসিরা (খেতে নয় মন্দ) ,

বার্মার 'ঙাম্পি'তে বাপরে কি গন্ধ !

মাদ্রাজী ঝাল খেলে জ্বলে যায় কণ্ঠ,

জাপানেতে খায় নাকি ফড়িঙের ঘণ্ট !

আরশুলা মুখে দিয়ে সুখে খায় চীনারা,

কত কি যে খায় লোকে নাহি তার কিনারা ।

দেখে শুনে চেয়ে খাও, যেটা চায় রসনা ।

তা না হলে কলা খাও, চটো কেন বস না-

সবে হল খাওয়া শুরু, শোন শোন আরো খায়-

সুদ খায় মহাজনে, ঘুষ খায় দারোগায় ।

বাবু যান হাওয়া খেতে চড়ে জুড়ি-গাড়িতে,

খাসা দেখ 'খাপ্ খায়' চাপকানে দাড়িতে ।

তেলে জলে 'মিশ খায়', শুনেছ তা কেও কি ?

যুদ্ধে যে গুলি খায় গুলিখোর সেও কি ?

ডিঙি চড়ে স্রোতে প'ড়ে পাক খায় জেলেরা,

ভয় খেয়ে খাবি খায় পাঠশালে ছেলেরা ;

বেত খেয়ে কাঁদে কেউ, কেউ শুধু গালি খায়,

কেউ খেয়ে থতমত- তাও লিখি তালিকায় ।

ভিখারিটা তাড়া খায়, ভিখ্ নাহি পায় রে-

'দিন আনে দিন খায়' কত লোক হায় রে ।

হোঁচটের চোট খেয়ে খোকা ধরে কান্না,

মা বলেন চুমু খেয়ে, 'সেরে গেছে আর না ।'

ধমক বকুনি খেয়ে নয় যারা বাধ্য,

কিলচড় লাথি ঘুঁষি হয় তার খাদ্য ।

জুতো খায়, গুঁতো খায়, চাবুক যে খায় রে,

তবু যদি নুন খায়, সেও গুণ গায় রে ।

গরমে বাতাস খাই, শীতে খাই হিম্সিম্,

পিছলে আছাড় খেয়ে মাথা করে ঝিম্ঝিম্ ।

কত যে মোচড় খায় বেহালার কানটা,

কানমলা খেলে তবে খোলে তার গানটা ।

টোল খায় ঘটি বাটি, দোল খায় খোকারা,

ঘাবড়িয়ে ঘোল খায় পদে পদে বোকারা ।

আকাশেতে কাৎ হ'য়ে গোঁৎ খায় ঘুড়িটা,

পালোয়ান খায় দেখ ডিগবাজি কুড়িটা ।

ফুটবলে ঠেলা খাই, ভিড়ে খাই ধাক্কা,

কাশিতে প্রসাদ খেয়ে সাধু হই পাক্কা !

কথা শোন, মাথা খাও, রোদ্দুরে যেও না-

আর যাহা খাও বাপু বিষমটি খেও না ।

'ফেল্' ক'রে মুখ খেয়ে কেঁদেছিলে সেবারে,

আদা-নুন খেয়ে লাগো, পাশ কর এবারে ।

ভ্যাবাচ্যাকা খেও নাকো, যেয়ো নাকো ভড়কে,

খাওয়াদাওয়া শেষ হলে বসে খাও খড়্কে ।

এত খেয়ে তবু যদি নাহি ওঠে মনটা-

খাও তবে কচু পোড়া, খাও তবে ঘণ্টা ।



------

হিংসুটিদের গান

সুকুমার রায়



আমরা ভাল লক্ষ্মী সবাই, তোমরা ভারি বিশ্রী,

তোমরা খাবে নিমের পাঁচন, আমরা খাব মিশ্রী ।

আমরা পাব খেলনা পুতুল, আমরা পাব চম্চম্,

তোমরা ত তা পাচ্ছ না কেউ, পেলেও পাবে কম কম ।

আমরা শোব খাট্ পালঙে মায়ের কাছে ঘেঁষটে,

তোমরা শোবে অন্ধকারে একলা ভয়ে ভেস্তে ।

আমরা যাব জামতাড়াতে চড়ব কেমন ট্রেইনে,

চেঁচাও যদি "সঙ্গে নে যাও" বল্ব "কলা এই নে" !

আমরা ফিরি বুক ফুলিয়ে রঙিন জুতোয় মচ্মচ্,

তোমরা হাঁদা নোংরা ছিছি হ্যাংলা নাকে ফঁচ্ফঁচ্ ।

আমরা পরি রেশমি জরি, আমরা পরি গয়না,

তোমরা সেসব পাওনা ব'লে তাও তোমাদের সয় না ।

আমরা হব লাটমেজাজি, তোমরা হব কিপ্টে,

চাইবে যদি কিচ্ছু তখন ধরব গলা চিপ্টে ।



------

জীবনের হিসাব

সুকুমার রায়



বিদ্যেবোঝাই বাবুমশাই চড়ি সখের বোটে

মাঝিরে কন, "বলতে পারিস সূর্যি কেন ওঠে ?

চাঁদটা কেন বাড়ে কমে ? জোয়ার কেন আসে ?"

বৃদ্ধ মাঝি অবাক হয়ে ফ্যাল্ফেলিয়ে হাসে ।

বাবু বলেন, "সারা জনম মরলিরে তুই খাটি,

জ্ঞান বিনা তোর জীবনটা যে চারি আনাই মাটি ।

খানিক বাদে কহেন বাবু, "বলত দেখি ভেবে

নদীর ধারা কেম্নে আসে পাহাড় হতে নেবে ?

বল্ত কেন লবণপোরা সাগরভরা পানি?"

মাঝি সে কয়, "আরে মশাই, অত কি আর জানি ?"

বাবু বলেন, "এই বয়সে জানিসনেও তাকি ?

জীবনটা তোর নেহাৎ খেলো, অষ্ট আনাই ফাঁকি ।"

আবার ভেবে কহেন বাবু, "বলত ওরে বুড়ো,

কেন এমন নীল দেখা যায় আকাশের ঐ চুড়ো ?

বলত দেখি সূর্য চাঁদে গ্রহণ লাগে কেন ?"

বৃদ্ধ বলে, "আমায় কেন লজ্জা দেছেন হেন ?"

বাবু বলেন, "বলব কি আর, বলব তোরে কি তা,-

দেখছি এখন জীবনটা তোর বারো আনাই বৃথা ।"



খানিক বাদে ঝড় উঠেছে, ঢেউ উঠেছে ফুলে,

বাবু দেখেন নৌকাখানি ডুব্ল বুঝি দুলে ।

মাঝিরে কন, "একি আপদ ! ওরে ও ভাই মাঝি,

ডুব্ল নাকি নৌকা এবার ? মরব নাকি আজি ?"

মাঝি শুধায়, "সাঁতার জানো ?" মাথা নাড়েন বাবু,

মূর্খ মাঝি বলে, "মশাই, এখন কেমন কাবু ?

বাঁচলে শেষে আমার কথা হিসেব করো পিছে,

তোমার দেখি জীবনখানা ষোল আনাই মিছে ।"



------

বাবু

সুকুমার রায়



অতি খাসা মিহি সূতি

ফিনফিনে জামা ধুতি,

চরণে লপেটা জুতি জরিদার ।

এ হাতে সোনার ঘড়ি,

ও হাতে বাঁকান ছড়ি,

আতরের ছড়াছড়ি চারিধার ।

চক্চকে চুল ছাঁটা

তায় তোফা টেরিকাটা-

সোনার চশমা আঁটা নাসিকায় ।

ঠোঁট দুটি এঁকে বেঁকে

ধোঁয়া ছাড়ে থেকে থেকে,

হালচাল দেখে দেখে হাসি পায় ।

ঘোষেদের ছোট মেয়ে

পিক্ ফেলে পান খেয়ে,

নিচু পানে নাহি চায় হায়রে ।

সেই পিক থ্যাপ ক'রে

লেগেছে চাদর ভরে

দেখে বাবু কেঁদে মরে যায়রে ।

ওদিকে ছ্যাকরাগাড়ি

ছুটে চলে তাড়াতাড়ি

ছিট্কিয়ে কাঁড়ি কাঁড়ি ঘোলাজল ।

সহসা সে জল লাগে

জামার পিছন বাগে,

বাবু করে মহারাগে কোলাহল ।।



------

মন্ডা ক্লাবের কয়েকটি আমন্ত্রণপত্র

সুকুমার রায়



এক.

সম্পাদক বেয়াকুব

কোথা যে দিয়েছে ডুব-

এদিকেতে হায় হায়

ক্লাবটি তো যায় যায়।



তাই বলি সোমবারে

মদগৃহে গড়পারে

দিলে সবে পদধূলি

ক্লাবটিরে ঠেলে তুলি।



রকমারি পুঁথি কত

নিজ নিজ রুচিমত

আনিবেন সাথে সবে

কিছু কিছু পাঠ হবে



করযোড়ে বারবার

নিবেদিছে সুকুমার।

দুই.

কেউ বলেছে খাবো খাবো,

কেউ বলেছে খাই

সবাই মিলে গোল তুলেছে-

আমি তো আর নাই।



ছোটকু বলে, রইনু চুপে

ক'মাস ধরে কাহিল রূপে!

জংলি বলে "রামছাগলের

মাংস খেতে চাই।"



যতই বলি "সবুর কর" -

কেউ শোনে না কালা,

জীবন বলে কোমর বেধে,

কোথায় লুচির থালা?



খোদন বলে রেগেমেগে

ভীষণ রোষে বিষম লেগে-

বিষ্যুতে কাল গড়পারেতে

হাজির যেন পাই।



তিন

শনিবার ১৭ ই

সাড়ে পাঁচ বেলা,

গড়পারে হৈ হৈ

সরবতী মেলা।



অতএব ঘড়ি ধরে

সাবকাশ হয়ে

আসিবেন দয়া করে

হাসিমুখে লয়ে।



সরবৎ সদালাপ

সঙ্গীত - ভীতি

ফাঁকি দিলে নাহি মাপ,

জেনে রাখ-ইতি।



চার

আমি,অর্থাৎ সেক্রেটারি,

মাসতিনেক কলকেতা ছাড়ি

যেই গিয়েছি অন্য দেশে

অমনি কি সব গেছে ফেঁসে।



বদলে গেছে ক্লাবের হাওয়া,

কাজের মধ্যে কেবল খাওয়া!

চিন্তা নেইক গভীর বিষয়

আমার প্রাণে এসব কি সয়?



এখন থেকে সম্ঝে রাখ

এ সমস্ত চলবে নাকো,

আমি আবার এইছি ঘুরে

তান ধরেছি সাবেক সুরে।



শুনবে এস সুপ্রবন্ধ

গিরিজার বিবেকানন্দ,

মঙ্গলবার আমার বাসায়।

(আর থেক না ভোজের আশায়)

------

পণ্ডশ্রম

শামসুর রহমান



এই নিয়েছে ঐ নিল যাঃ! কান নিয়েছে চিলে,

চিলের পিছে মরছি ঘুরে আমরা সবাই মিলে।

কানের খোঁজে ছুটছি মাঠে, কাটছি সাঁতার বিলে,

আকাশ থেকে চিলটাকে আজ ফেলব পেড়ে ঢিলে।



দিন-দুপুরে জ্যান্ত আহা, কানটা গেল উড়ে,

কান না পেলে চার দেয়ালে মরব মাথা খুঁড়ে।

কান গেলে আর মুখের পাড়ায় থাকল কি-হে বল?

কানের শোকে আজকে সবাই মিটিং করি চল।



যাচ্ছে, গেল সবই গেল, জাত মেরেছে চিলে,

পাঁজি চিলের ভূত ছাড়াব লাথি-জুতো কিলে।

সুধী সমাজ! শুনুন বলি, এই রেখেছি বাজি,

যে-জন সাধের কান নিয়েছে জান নেব তার আজই।



মিটিং হল ফিটিং হল, কান মেলে না তবু,

ডানে-বাঁয়ে ছুটে বেড়াই মেলান যদি প্রভু!

ছটতে দেখে ছোট ছেলে বলল, কেন মিছে

কানের খোঁজে মরছ ঘুরে সোনার চিলের পিছে?



নেইকো খালে, নেইকো বিলে, নেইকো মাঠে গাছে;

কান যেখানে ছিল আগে সেখানটাতেই আছে।

ঠিক বলেছে, চিল তবে কি নয়কো কানের যম?

বৃথাই মাথার ঘাম ফেলেছি, পণ্ড হল শ্রম।



------

কাজের ছেলে

যোগিন্দ্রনাথ সরকার



দাদখানি চাল, মুসুরির ডাল, চিনি-পাতা দৈ,

দু’টা পাকা বেল, সরিষার তেল, ডিমভরা কৈ।

পথে হেঁটে চলি, মনে মনে বলি, পাছে হয় ভুল;

ভুল যদি হয়, মা তবে নিশ্চয়, ছিঁড়ে দেবে চুল।



দাদখানি চাল, মুসুরির ডাল, চিনি-পাতা দৈ,

দু’টা পাকা বেল, সরিষার তেল, ডিমভরা কৈ।



বাহবা বাহবা – ভোলা ভুতো হাবা খেলিছে তো বেশ!

দেখিব খেলাতে, কে হারে কে জেতে, কেনা হলে শেষ।

দাদখানি চাল, মুসুরির ডাল, চিনি-পাতা দৈ,

ডিম-ভরা বেল, দু’টা পাকা তেল, সরিষার কৈ।



ওই তো ওখানে ঘুরি ধরে টানে, ঘোষদের ননী;

আমি যদি পাই, তা হলে উড়াই আকাশে এখনি!

দাদখানি তেল, ডিম-ভরা বেল, দুটা পাকা দৈ,

সরিষার চাল, চিনি-পাতা ডাল, মুসুরির কৈ!



এসেছি দোকানে-কিনি এই খানে, যত কিছু পাই;

মা যাহা বলেছে, ঠিক মনে আছে, তাতে ভুল নাই!

দাদখানি বেল, মুসুরির তেল, সরিষার কৈ,

চিনি-পাতা চাল, দুটা পাকা ডাল, ডিম ভরা দৈ।



---------

নন্দলাল

দ্বিজেন্দ্রলাল রায়



নন্দলাল তো একদা একটা করিল ভীষণ পণ -

স্বদেশের তরে, যা করেই হোক, রাখিবেই সে জীবন।

সকলে বলিল, 'আ-হা-হা কর কি, কর কি, নন্দলাল?'

নন্দ বলিল, 'বসিয়া বসিয়া রহিব কি চিরকাল?

আমি না করিলে কে করিবে আর উদ্ধার এই দেশ?'

তখন সকলে বলিল- 'বাহবা বাহবা বাহবা বেশ।'



নন্দর ভাই কলেরায় মরে, দেখিবে তারে কেবা!

সকলে বলিল, 'যাও না নন্দ, করো না ভায়ের সেবা'

নন্দ বলিল, ভায়ের জন্য জীবনটা যদি দিই-

না হয় দিলাম, -কিন্তু অভাগা দেশের হইবে কি?

বাঁচাটা আমার অতি দরকার, ভেবে দেখি চারিদিক'

তখন সকলে বলিল- 'হাঁ হাঁ হাঁ, তা বটে, তা বটে, ঠিক।'



নন্দ একদা হঠাৎ একটা কাগজ করিল বাহির,

গালি দিয়া সবে গদ্যে, পদ্যে বিদ্যা করিল জাহির;

পড়িল ধন্য দেশের জন্য নন্দ খাটিয়া খুন;

লেখে যত তার দ্বিগুণ ঘুমায়, খায় তার দশ গুণ;

খাইতে ধরিল লুচি ও ছোকা ও সন্দেশ থাল থাল,

তখন সকলে বলিল- 'বাহবা বাহবা, বাহবা নন্দলাল।'



নন্দ একদা কাগজেতে এক সাহেবকে দেয় গালি;

সাহেব আসিয়া গলাটি তাহার টিপিয়া ধরিল খালি;

নন্দ বলিল, 'আ-হা-হা! কর কি, কর কি! ছাড় না ছাই,

কি হবে দেশের, গলাটিপুনিতে আমি যদি মারা যাই?

বলো কি' বিঘৎ নাকে দিব খত যা বলো করিব তাহা।'

তখন সকলে বলিল – 'বাহবা বাহবা বাহবা বাহা!'



নন্দ বাড়ির হ'ত না বাহির, কোথা কি ঘটে কি জানি;

চড়িত না গাড়ি, কি জানি কখন উল্টায় গাড়িখানি,

নৌকা ফি-সন ডুবিছে ভীষণ, রেলে 'কলিসন' হয়;

হাঁটতে সর্প, কুকুর আর গাড়ি-চাপা পড়া ভয়,

তাই শুয়ে শুয়ে, কষ্টে বাঁচিয়ে রহিল নন্দলাল

সকলে বলিল- 'ভ্যালা রে নন্দ, বেঁচে থাক্ চিরকাল।'



------

না ঘুমানোর দল

আল মাহমুদ



নারকেলের ঐ লম্বা মাথায় হঠাৎ দেখি কাল

ডাবের মতো চাদঁ উঠেছে ঠান্ডা ও গোলগাল ।

ছিটকিনিটা আস্তে খুলে পেরিয়ে এলেম ঘর

ঘুমন্ত এই মস্ত শহর করছিলো থরথর ।

মিনারটাকে দেখছি যেন দাড়িয়ে আছেন কেউ,

পাথরঘাটার গির্জেটা কি লাল পাথরের ঢেউ ?

চৌকিদারের হাক শুনে যেই মোড় ফিরেছি বায় –

কোত্থেকে এক উটকো পাহাড় ডাক দিল আয় আয় ।

পাহাড়টাকে হাত বুলিয়ে লাল দিঘীটার পাড়

এগিয়ে দেখি জোনাকিদের বসেছে দরবার ।

আমায় দেখে কলকলিয়ে দীঘির কালো জল

বললো, এসো, আমরা সবাই না ঘুমানোর দল-

পকেট থেকে খুলো তোমার পদ্য লেখার ভাজঁ

রক্তজবার ঝোপের কাছে কাব্য হবে আজ ।

দীঘির কথায় উঠলো হেসে ফুল পাখিদের সব

কাব্য হবে, কাব্য হবে- জুড়লো কলরব ।

কী আর করি পকেট থেকে খুলে ছড়ার বই

পাখির কাছে, ফুলের কাছে মনের কথা কই ।



------

রূপকথা

আহসান হাবীব



খেলাঘর পাতা আছে এই এখানে,

স্বপ্নের ঝিকিমিকি আঁকা যেখানে।

এখানে রাতের ছায়া ঘুমের নগর,

চোখের পাতায় ঘুম ঝরে ঝরঝর।

এইখানে খেলাঘর পাতা আমাদের,

আকাশের নীল রং ছাউনিতে এর।

পরীদের ডানা দিয়ে তৈরি দেয়াল,

প্রজাপতি রং মাখা জানালার জাল।

তারা ঝিকিমিকি পথ ঘুমের দেশের,

এইখানে খেলাঘর পাতা আমাদের।

ছোট বোন পারুলের হাতে রেখে হাত,

সাতভাই চম্পার কেটে যায় রাত।

কখনও ঘোড়ায় চড়ে হাতে নিয়ে তীর,

ঘুরে আসি সেই দেশ চম্পাবতীর।

এই খানে আমাদের মানা কিছু নাই,

নিজেদের খুশি মত কাহিনী বানাই।



------

বনভোজন

গোলাম মোস্তফা



নুরু, পুশি, আয়েশা, শফি সবাই এসেছে

আম বাগিচার তলায় যেন তারা হেসেছে।

রাঁধুনিদের শখের রাঁধার পড়ে গেছ ধুম,

বোশেখ মাসের এই দুপুরে নাইকো কারো ঘুম।



বাপ মা তাদের ঘুমিয়ে আছে এই সুবিধা পেয়ে,

বনভোজনে মিলেছে আজ দুষ্টু কটি মেয়ে।

বসে গেছে সবাই আজি বিপুল আয়োজনে,

ব্যস্ত সবাই আজকে তারা ভোজের নিমন্ত্রণে।



কেউবা বসে হলদি বাটে কেউবা রাঁধে ভাত,

কেউবা বলে দুত্তুরি ছাই পুড়েই গেল হাত।

বিনা আগুন দিয়েই তাদের হচ্ছে যদিও রাঁধা,

তবু সবার দুই চোখেতে ধোঁয়া লেগেই কাঁদা।



কোর্মা পোলাও কেউবা রাঁধে, কেউবা চাখে নুন,

অকারণে বারে বারে হেসেই বা কেউ খুন।

রান্না তাদের শেষ হল যেই, গিন্নী হল নুরু,

এক লাইনে সবাই বসে করলে খাওয়া শুরু।



ধূলোবালির কোর্মা-পোলাও আর সে কাদার পিঠে,

মিছিমিছি খেয়া সবাই, বলে- বেজায় মিঠে।

এমন সময় হঠাৎ আমি যেই পড়েছি এসে,

পালিয়ে গেল দুষ্টুরা সব খিলখিলিয়ে হেসে।



------

কাজের লোক

নবকৃষ্ণ ভট্টাচার্য



মৌমাছি, মৌমাছি

কোথা যাও নাচি নাচি

দাঁড়াও না একবার ভাই।



ওই ফুল ফোটে বনে

যাই মধু আহরণে

দাঁড়াবার সময় তো নাই।

ছোট পাখি, ছোট পাখি

কিচিমিচি ডাকি ডাকি

কোথা যাও বলে যাও শুনি।



এখন না কব কথা

আনিয়াছি তৃণলতা

আপনার বাসা আগে বুনি।



পিপীলিকা, পিপীলিকা

দলবল ছাড়ি একা

কোথা যাও, যাও ভাই বলি।



শীতের সঞ্চয় চাই

খাদ্য খুঁজিতেছি তাই

ছয় পায়ে পিল পিল চলি।



------

হাঁটি হাঁটি পা পা

এখলাসউদ্দিন আহমদ



এক পা যেতে

তিন পা টলে

দুই পা যেতে ঝুপ ।

তিন পা যেতে

এক পা টলে

পাঁচ পা যেতেই চুপ !

ছয় পা যেতে

আর টলে না

কেবল হাঁটাহাটি !

তেলের শিশি

উলটে ফেলে

ঘরসংসার মাটি ।

হাঁটি হাঁটি পা পা

যেখানে খুশি সেখানে যা



------

মামার বাড়ি

জসীমউদদীন



আয় ছেলেরা আয় মেয়েরা ফুল তুলিতে যাই

ফুলের মালা গলায় দিয়ে মামার বাড়ি যাই

ঝড়ের দিনে মামার দেশে আম কুড়াতে সুখ

পাকা জামের মধুর রসে রঙীন করি মুখ।



------

সবার সুখে

জসীম উদ্দিন



সবার সুখে হাসব আমি

কাঁদব সবার দুখে,

নিজের খাবার বিলিয়ে দেব

অনাহারীর মুখে।



আমার বাড়ির ফুল-বাগিচা,

ফুল সকলের হবে,

আমার ঘরে মাটির প্রদীপ

আলোক দিবে সবে।



আমার বাড়ি বাজবে বাঁশি,

সবার বাড়ির সুর,

আমার বাড়ি সবার বাড়ি

রইবে না'ক দুর।



------

কবর

জসীম উদদীন

এইখানে তোর দাদির কবর ডালিম-গাছের তলে,

তিরিশ বছর ভিজায়ে রেখেছি দুই নয়নের জলে।

এতটুকু তারে ঘরে এনেছিনু সোনার মত মুখ,

পুতুলের বিয়ে ভেঙে গেল বলে কেঁদে ভাসাইত বুক।

এখানে ওখানে ঘুরিয়া ফিরিতে ভেবে হইতাম সারা

সারা বাড়ি ভরি এত সোনা মোর ছড়াইয়া দিল কারা।

সোনালি ঊষার সোনামুখ তার আমার নয়নে ভরি

লাঙল লইয়া ক্ষেতে ছুটিতাম গাঁয়ের ও-পথ ধরি।

যাইবার কালে ফিরে ফিরে তারে দেখে লইতাম কত

এ-কথা লইয়া ভাবী-সাব মোরে তামাশা করিত শত।

এমনি করিয়া জানি না কখন জীবনের সাথে মিশে

ছোট-খাটো তার হাসি-ব্যথা মাঝে হারা হয়ে গেনু দিশে।

বাপের বাড়িতে যাইবার কালে কহিত ধরিয়া পা

”আমারে দেখিতে যাইও কিন্তু, উজান-তলীর গাঁ।”

শাপলার হাটে তরমুজ বেচি দু-পয়সা করি দেড়ী,

পুঁতির মালার একছড়া নিতে কখনও হত না দেরি।

দেড় পয়সার তামাক এবং মাজন লইয়া গাঁটে,

সন্ধ্যাবেলায় ছুটে যাইতাম শ্বশুরবাড়ির বাটে!

হেসো না-হেসো না- শোন দাদু, সেই তামাক মাজন পেয়ে

দাদী যে তোমার কত খুশি হত দেখতিস যদি চেয়ে!

নথ নেড়ে নেড়ে কহিত হাসিয়া, ”এতদিন পরে এলে,

পথ পানে চেয়ে আমি যে হেথায় কেদে মরি আঁখিজলে”।

আমারে ছাড়িয়া এত ব্যথা যার কেমন করিয়া হায়,

কবর দেশেতে ঘুমায়ে রয়েছে নিঝঝুম নিরালায়!

হাতজোড় করে দোয়া মাঙ- দাদু, ‘আয় খোদা দয়াময়,

আমার দাদীর তরেতে যেন গো ভেস্ত নসিব হয়।’

তারপর এই শূন্য জীবনে কত কাটিয়াছি পাড়ি

যেখানে যাহার জড়ায়ে ধরেছি সেই চলে গেছে ছাড়ি।

শত কাফনের শত কবরের অঙ্ক হৃদয়ে আঁকি,

গণিয় গণিয়া ভুল করে গণি সারা দিনরাত জাগি।

এই মোর হাতে কোদাল ধরিয়া কঠিন মাটির তলে,

গাড়িয়া দিয়াছি কত সোনামুখ নাওয়ায়ে চোখের জলে।

মাটিরে আমি যে বড় ভালবাসি, মাটিতে মিশায়ে বুক,

আয়- আয় দাদু, গলাগলি ধরি- কেঁদে যদি হয় সুখ।

এইখানে তোর বাপজি ঘুমায়, এইখানে তোর মা,

কাঁদছিস তুই? কী করিব দাদু! পরাণ যে মানে না।

সেই ফাল্গুনে বাপ তোর আসি কহিল আমারে ডাকি,

‘বা-জান, আমার শরীর আজিকে কী যে করে থাকি থাকি।’

ঘরের মেঝেতে সপটি বিছায়ে কহিলাম, ” বাছা শোও”

সেই শোয়া তার শেষ শোয়া হবে তাহা কি জানিত কেউ?

গোরের কাফনে সাজায়ে তাহারে চলিলাম যবে বয়ে,

তুমি যে কহিলা, ‘বা-জানরে মোর কোথা যাও দাদু লয়ে?’

তোমার কথার উত্তর দিতে কথা থেমে গেল মুখে,

সারা দুনিয়ার যত ভাষা আছে কেঁদে ফিরে গেল দুখে!

তোমার বাপের লাঙল-জোয়াল দু-হাতে জড়ায়ে ধরি,

তোমার মায়ে যে কতই কাঁদিত সারা দিনমান ভরি।

গাছের পাতারা সেই বেদনায় বুনো পথে যেত ঝরে,

ফাল্গুনী হাওয়া কাঁদিয়া উঠিত শূন্য-মাঠখানি ভরে।

পথ দিয়া যেতে গেঁয়ে পথিকেরা মুছিয়া যাইত চোখ,

চরণে তাদের কাঁদিয়া উঠিত গাছের পাতার শোক।

আথালে দুইটি জোয়ান বলদ সারা মাঠ পানে চাহি,

হাম্বা রবেতে বুক ফাটাইত নয়নের জলে নাহি।

গলাটি তাদের জড়ায়ে ধরিয়া কাঁদিত তোমার মা,

চোখের জলের গহিন সায়রে ডুবায়ে সকল গা।

উদাসিনী সেই পল্লী-বালার নয়নের জল বুঝি,

কবর দেশের আন্ধার ঘরে পথ পেয়েছিল খুঁজি।

তাই জীবনের প্রথম বেলায় ডাকিয়া আনিল সাঁঝ,

হায় অভাগিনী আপনি পরিল মরণ-বিষের তাজ।

মরিবার কালে তোরে কাছে ডেকে কহিল, ‘বাছারে যাই,

‘বড় ব্যথা র’ল, দুনিয়াতে তোর মা বলিতে কেহ নাই;

দুলাল আমার, জাদুরে আমার, লক্ষী আমার ওরে,

কত ব্যথা মোর আমি জানি বাছা ছাড়িয়া যাইতে তোরে।’

ফোঁটায় ফোঁটায় দুইটি গণ্ড ভিজায়ে নয়ন-জলে,

কী জানি আশিস করে গেল তোরে মরণ-ব্যথার ছলে।

ক্ষণপরে মোরে ডাকিয়া কহিল, ‘আমার কবর গায়

স্বামীর মাথার মাথালখানিরে ঝুলাইয়া দিও বায়।’

সেই সে মাথাল পচিয়া গলিয়া মিশেছে মাটির সনে,

পরাণের ব্যথা মরে নাকো সে যে কেঁদে ওঠে ক্ষণে ক্ষণে।

জোড়মানিকেরা ঘুমায়ে রয়েছে এই খানে তরু-ছায়,

গাছের শাখারা স্নেহের মায়ায় লুটায়ে পড়েছে পায়।

জোনাকি মেয়েরা সারারাত জাগি জ্বালাইয়া দেয় আলো,

ঝিঁঝিঁরা বাজায় ঘুমের নূপুর কত যেন বেসে ভালো।

হাতজোড় করে দোয়া মাঙ দাদু, ‘রহমান খোদা! আয়;

ভেস্ত নসিব করিও আজিকে আমার বাপ ও মায়!’

এই খানে তোর বু-জির কবর, পরীর মতন মেয়ে,

বিয়ে দিয়েছিনু কাজিদের বাড়ি বুনিয়াদি ঘর পেয়ে।

এত আদরেরর বু-জিরে তাহারা ভালোবাসিত না মোটে,

হাতেতে যদিও না মারিত তারে শত যে মারিত ঠোঁটে।

খবরের পর খবর পাঠাত, ‘দাদু যেন কাল এসে

দু-দিনের তরে নিয়ে যায় মোরে বাপের বাড়ির দেশে।’

শ্বশুর তাহার কসাই চামার, চাহে কি ছাড়িয়া দিতে,

অনেক কহিয়া সেবার তাহারে আনিলাম এক শীতে।

সেই সোনামুখ মলিন হয়েছে ফোটে না সেথায় হাসি,

কালো দুটি চোখে রহিয়া রহিয়া অশ্রু উঠিছে ভাসি।

বাপের মায়ের কবরে বসিয়া কাঁদিয়া কাটাত দিন,

কে জানিত হায়, তাহারও পরাণে বাজিবে মরণ-বীণ!

কী জানি পচানো জ্বরেতে ধরিল আর উঠিল না ফিরে,

এইখানে তারে কবর দিয়েছি দেখে যাও দাদু! ধীরে!

ব্যথাতুরা সেই হতভাগিনীরে কেউ বাসে নাই ভালো,

কবরে তাহার জড়ায়ে রয়েছে বুনো ঘাসগুলি কালো।

বনের ঘুঘুরা উহু-উহু করি কেঁদে মরে রাতদিন,

পাতায় পাতায় কেঁপে উঠে যেন তারি বেদনার বীণ।

হাতজোড়া করি দোয়া মাঙ দাদু, ‘আয় খোদা! দয়াময়!

আমার বু-জির তরেতে যেন গো ভেস্ত নাজেল হয়!’

হেথায় ঘুমায়ে তোর ছোট ফুপু, সাত বছরেরর মেয়ে,

রামধনু বুঝি নেমে এসেছিল ভেস্তের দ্বার বেয়ে।

ছোট বয়সেই মায়েরে হারায়ে কী জানি ভাবিত সদা,

অতটুকু বুকে লুকাইয়াছিল কে জানিত কত ব্যথা!

ফুলের মতোন মুখখানি তার দেখিতাম যবে চেয়ে,

তোমার দাদীর ছবিখানি মোর হৃদয়ে উঠিত ছেয়ে।

বুকেতে তাহারে জড়ায়ে ধরিয়া কেঁদে হইতাম সারা,

রঙিন সাঁঝেরে ধুয়ে মুছে দিত মোদের চোখের ধারা।

একদিন গেনু গজনার হাটে তাহারে রাখিয়া ঘরে,

ফিরে এসে দেখি সোনার প্রতিমা লুটায়ে পথের ‘পরে।

সেই সোনামুখ গোলগাল হাত সকলি তেমন আছে,

কী জানি সাপের দংশন পেয়ে মা আমার চলে গেছে।

আপন হস্তে সোনার প্রতিমা কবরে দিলাম গাড়ি,

দাদু! ধর- ধর- বুক ফেটে যায়, আর বুঝি নাহি পারি।

এইখানে এই কবরের পাশে আরও কাছে আয় দাদু,

কথা কস নাকো, জাগিয়া উঠিবে ঘুম-ভোলা মোর যাদু।

আস্তে আস্তে খুঁড়ে দেখ দেখি কঠিন মাটির তলে,

দীন দুনিয়ার ভেস্ত আমার ঘুমায় কিসের ছলে!

ওই দুর বনে সন্ধ্যা নামিছে ঘন আবীরের রাগে,

অমনি করিয়া লুটায়ে পড়িতে বড় সাধ আজ জাগে।

মজিদ হইতে আযান হাঁকিছে বড় সকরুণ সুর,

মোর জীবনের রোজকেয়ামত ভাবিতেছি কত দূর।

জোড়হাতে দাদু মোনাজাত কর, ‘আয় খোদা! রহমান!

ভেস্ত নসিব করিও সকল মৃত্যু-ব্যথিত-প্রাণ।



-----------

নিমন্ত্রণ

জসীমউদদীন



তুমি যাবে ভাই - যাবে মোর সাথে, আমাদের ছোট গাঁয়,

গাছের ছায়ায় লতায় পাতায় উদাসী বনের বায়;

মায়া মমতায় জড়াজড়ি করি

মোর গেহখানি রহিয়াছে ভরি,

মায়ের বুকেতে, বোনের আদরে, ভাইয়ের স্নেহের ছায়,

তুমি যাবে ভাই - যাবে মোর সাথে, আমাদের ছোট গাঁয়,



ছোট গাঁওখানি - ছোট নদী চলে, তারি একপাশ দিয়া,

কালো জল তার মাজিয়াছে কেবা কাকের চক্ষু নিয়া;

ঘাটের কিনারে আছে বাঁধা তরী

পারের খবর টানাটানি করি;

বিনাসুতি মালা গাথিছে নিতুই এপার ওপার দিয়া;

বাঁকা ফাঁদ পেতে টানিয়া আনিছে দুইটি তটের হিয়া।



তুমি যাবে ভাই - যাবে মোর সাথে, ছোট সে কাজল গাঁয়,

গলাগলি ধরি কলা বন; যেন ঘিরিয়া রয়েছে তায়।

সরু পথ খানি সুতায় বাঁধিয়া

দূর পথিকেরে আনিছে টানিয়া,

বনের হাওয়ায়, গাছের ছায়ায়, ধরিয়া রাখিবে তায়,

বুকখানি তার ভরে দেবে বুঝি, মায়া আর মমতায়!



তুমি যাবে ভাই যাবে মোর সাথে - নরম ঘাসের পাতে

চম্বন রাখি অধরখানিতে মেজে লয়ো নিরালাতে।

তেলাকুচা-লতা গলায় পরিয়া

মেঠো ফুলে নিও আঁচল ভরিয়া,

হেথায় সেথায় ভাব করো তুমি বুনো পাখিদের সাথে,

তোমার গায়ের রংখানি তুমি দেখিবে তাদের পাতে।



তুমি যদি যাও আমাদের গাঁয়ে, তোমারে সঙ্গে করি

নদীর ওপারে চলে যাই তবে লইয়া ঘাটের তরী।

মাঠের যত না রাখাল ডাকিয়া

তোর সনে দেই মিতালী করিয়া

ঢেলা কুড়িইয়া গড়ি ইমারত সারা দিনমান ধরি,

সত্যিকারের নগর ভুলিয়া নকল নগর গড়ি।



তুমি যদি যাও - দেখিবে সেখানে মটর লতার সনে,

সীম আর সীম - হাত বাড়াইলে মুঠি ভরে সেই খানে।

তুমি যদি যাও সে - সব কুড়ায়ে

নাড়ার আগুনে পোড়ায়ে পোড়ায়ে,

খাব আর যত গেঁঢো - চাষীদের ডাকিয়া নিমন্ত্রণে,

হাসিয়া হাসিয়া মুঠি মুঠি তাহা বিলাইব দুইজনে।



তুমি যদি যাও - শালুক কুড়ায়ে, খুব - খুব বড় করে,

এমন একটি গাঁথিব মালা যা দেখনি কাহারো করে,

কারেও দেব না, তুমি যদি চাও

আচ্ছা না হয় দিয়ে দেব তাও,

মালাটিরে তুমি রাখিও কিন্তু শক্ত করিয়া ধরে,

ও পাড়াব সব দুষ্ট ছেলেরা নিতে পারে জোর করে;



সন্ধ্যা হইলে ঘরে ফিরে যাব, মা যদি বকিতে চায়,

মতলব কিছু আঁটিব যাহাতে খুশী তারে করা যায়!

লাল আলোয়ানে ঘুঁটে কুড়াইয়া

বেঁধে নিয়ে যাব মাথায় করিয়া

এত ঘুষ পেয়ে যদি বা তাহার মন না উঠিতে চায়,

বলিব - কালিকে মটরের শাক এনে দেব বহু তায়।



খুব ভোর ক’রে উঠিতে হইবে, সূয্যি উঠারও আগে,

কারেও ক’বি না, দেখিস্ পায়ের শব্দে কেহ না জাগে

রেল সড়কের ছোট খাদ ভরে

ডানকিনে মাছ কিলবিল করে;

কাদার বাঁধন গাঁথি মাঝামাঝি জল সেঁচে আগে ভাগে

সব মাছগুলো কুড়ায়ে আনিব কাহারো জানার আগে।



ভর দুপুরেতে এক রাশ কাঁদা আর এক রাশ মাছ,

কাপড়ে জড়ায়ে ফিরিয়া আসিব আপন বাড়ির কাছ।

ওরে মুখ-পোড়া ওরে রে বাঁদর।

গালি-ভরা মার অমনি আদর,

কতদিন আমি শুনি নারে ভাই আমার মায়ের পাছ;

যাবি তুই ভাই, আমাদের গাঁয়ে যেথা ঘন কালো গাছ।



যাবি তুই ভাই, যাবি মোর সাথে আমাদের ছোট গাঁয়।

ঘন কালো বন - মায়া মমতায় বেঁধেছে বনের বায়।

গাছের ছায়ায় বনের লতায়

মোর শিশুকাল লুকায়েছে হায়!

আজি সে-সব সরায়ে সরায়ে খুজিয়া লইব তায়,

যাবি তুই ভাই, যাবি মোর সাথে আমাদের ছোট গায়।



তোরে নিয়ে যাব আমাদের গাঁয়ে ঘন-পল্লব তলে

লুকায়ে থাকিস্, খুজে যেন কেহ পায় না কোনই বলে।

মেঠো কোন ফুল কুড়াইতে যেয়ে,

হারাইয়া যাস্ পথ নাহি পেয়ে;

অলস দেহটি মাটিতে বিছায়ে ঘুমাস সন্ধ্যা হলে,

সারা গাঁও আমি খুজিয়া ফিরিব তোরি নাম বলে বলে-



ছুটি

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর



মেঘেরে কোলে রোদ হেসেছে

বাদল গেছে টুটি,

আজ আমাদের ছুটি ও ভাই

আজ আমাদের ছুটি।

কী করি আজ ভেবে না পাই

পথ হারিয়ে কোন বনে যাই,

কোন মাঠে যে ছুটে বেড়াই

সকল ছেলে জুটি,

আজ আমাদের ছুটি ও ভাই

আজ আমাদের ছুটি।



-----------

আমাদের ছোট নদী

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর



আমাদের ছোটো নদী চলে বাঁকে বাঁকে

বৈশাখ মাসে তার হাঁটু জল থাকে।

পার হয়ে যায় গোরু, পার হয় গাড়ি,

দুই ধার উঁচু তার, ঢালু তার পাড়ি।



চিক্ চিক্ করে বালি, কোথা নাই কাদা,

একধারে কাশবন ফুলে ফুলে সাদা।

কিচিমিচি করে সেথা শালিকের ঝাঁক,

রাতে ওঠে থেকে থেকে শেয়ালের হাঁক।



আর-পারে আমবন তালবন চলে,

গাঁয়ের বামুন পাড়া তারি ছায়াতলে।

তীরে তীরে ছেলে মেয়ে নাইবার কালে

গামছায় জল ভরি গায়ে তারা ঢালে।



সকালে বিকালে কভু নাওয়া হলে পরে

আঁচল ছাঁকিয়া তারা ছোটো মাছ ধরে।

বালি দিয়ে মাজে থালা, ঘটিগুলি মাজে,

বধূরা কাপড় কেচে যায় গৃহকাজে।



আষাঢ়ে বাদল নামে, নদী ভর ভর

মাতিয়া ছুটিয়া চলে ধারা খরতর।

মহাবেগে কলকল কোলাহল ওঠে,

ঘোলা জলে পাকগুলি ঘুরে ঘুরে ছোটে।

দুই কূলে বনে বনে পড়ে যায় সাড়া,

বরষার উৎসবে জেগে ওঠে পাড়া।।



-----------

বীরপুরুষ

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর



মনে করো যেন বিদেশ ঘুরে

মাকে নিয়ে যাচ্ছি অনেক দূরে ।

তুমি যাচ্ছ পালকিতে মা চড়ে

দরজা দুটো একটুকু ফাঁক করে,

আমি যাচ্ছি রাঙা ঘোড়ার ’পরে

টগবগিয়ে তোমার পাশে পাশে ।

রাস্তা থেকে ঘোড়ার খুরে খুরে

রাঙা ধুলোয় মেঘ উড়িয়ে আসে ।



সন্ধে হল,সূর্য নামে পাটে

এলেম যেন জোড়াদিঘির মাঠে ।

ধূ ধূ করে যে দিক পানে চাই

কোনোখানে জনমানব নাই,

তুমি যেন আপনমনে তাই

ভয় পেয়েছ; ভাবছ, এলেম কোথা?

আমি বলছি, ‘ভয় পেয়ো না মা গো,

ঐ দেখা যায় মরা নদীর সোঁতা ।’



চোরকাঁটাতে মাঠ রয়েছে ঢেকে,

মাঝখানেতে পথ গিয়েছে বেঁকে ।

গোরু বাছুর নেইকো কোনোখানে,

সন্ধে হতেই গেছে গাঁয়ের পানে,

আমরা কোথায় যাচ্ছি কে তা জানে,

অন্ধকারে দেখা যায় না ভালো ।

তুমি যেন বললে আমায় ডেকে,

‘দিঘির ধারে ঐ যে কিসের আলো!’

এমন সময় 'হারে রে রে রে রে’

ঐ যে কারা আসতেছে ডাক ছেড়ে ।

তুমি ভয়ে পালকিতে এক কোণে

ঠাকুর দেবতা স্মরণ করছ মনে,

বেয়ারাগুলো পাশের কাঁটাবনে

পালকি ছেড়ে কাঁপছে থরোথরো।

আমি যেন তোমায় বলছি ডেকে,

‘আমি আছি, ভয় কেন মা কর।’



হাতে লাঠি, মাথায় ঝাঁকড়া চুল

কানে তাদের গোঁজা জবার ফুল ।

আমি বলি, ‘দাঁড়া, খবরদার!

এক পা আগে আসিস যদি আর -

এই চেয়ে দেখ আমার তলোয়ার,

টুকরো করে দেব তোদের সেরে ।’

শুনে তারা লম্ফ দিয়ে উঠে

চেঁচিয়ে উঠল, ‘হারে রে রে রে রে।’



তুমি বললে, ‘যাস না খোকা ওরে’

আমি বলি, ‘দেখো না চুপ করে।’

ছুটিয়ে ঘোড়া গেলেম তাদের মাঝে,

ঢাল তলোয়ার ঝন্ঝনিয়ে বাজে

কী ভয়ানক লড়াই হল মা যে,

শুনে তোমার গায়ে দেবে কাঁটা।

কত লোক যে পালিয়ে গেল ভয়ে,

কত লোকের মাথা পড়ল কাটা।



এত লোকের সঙ্গে লড়াই করে

ভাবছ খোকা গেলই বুঝি মরে।

আমি তখন রক্ত মেখে ঘেমে

বলছি এসে, ‘লড়াই গেছে থেমে’,

তুমি শুনে পালকি থেকে নেমে

চুমো খেয়ে নিচ্ছ আমায় কোলে -

বলছ, ‘ভাগ্যে খোকা সঙ্গে ছিল!

কী দুর্দশাই হত তা না হলে।’



রোজ কত কী ঘটে যাহা তাহা –

এমন কেন সত্যি হয় না আহা।

ঠিক যেন এক গল্প হত তবে,

শুনত যারা অবাক হত সবে,

দাদা বলত, ‘কেমন করে হবে,

খোকার গায়ে এত কি জোর আছে।’

পাড়ার লোকে বলত সবাই শুনে,

‘ভাগ্যে খোকা ছিল মায়ের কাছে।’



-----------

কানা বগীর ছা

খান মুহাম্মদ মইনুদ্দীন



ঐ দেখা যায় তাল গাছ

ঐ আমাদের গাঁ।

ঐ খানেতে বাস করে

কানা বগীর ছা।



ও বগী তুই খাস কি?

পানতা ভাত চাস কি?

পানতা আমি খাই না

পুঁটি মাছ পাই না



একটা যদি পাই

অমনি ধরে গাপুস গুপুস খাই।



-----------

পংক্তিমালা

মদন মোহন তর্কালঙ্কার



পাখী-সব করে রব, রাতি পোহাইল।

কাননে কুসুমকলি, সকলি ফুটিল।।

রাখাল গরুর পাল, ল'য়ে যায় মাঠে।

শিশুগণ দেয় মন নিজ নিজ পাঠে।।

ফুটিল মালতী ফুল, সৌরভ ছুটিল।

পরিমল লোভে অলি, আসিয়া জুটিল।।

গগনে উঠিল রবি, লোহিত বরণ।

আলোক পাইয়া লোক, পুলকিত মন।।

শীতল বাতাস বয়, জুড়ায় শরীর।

পাতায় পাতায় পড়ে, নিশির শিশির।।

উঠ শিশু মুখ ধোও, পর নিজ বেশ।

আপন পাঠেতে মন, করহ নিবেশ।।



-----------

আপনারে বড় বলে বড় সেই নয়

লোকে যারে বড় বলে বড় সেই হয়

বড় হওয়া সংসারেতে কঠিন ব্যাপার

সংসারে সে বড় হয় বড় গুণ যার

গুণেতে হইলে বড় বড় বলে সবে

বড় যদি হতে চাও ছোট হও তবে।



-----------

আয় বৃষ্টি ঝেঁপে

ধান দিব মেপে।

লেবুর পাতা করমচা

যা বৃষ্টি ঝরে যা।

-----------

বৃষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর

নদে এলো বান,

শিব ঠাকুরের বিয়ে হবে

তিন কন্যা দান।

এক কন্যা রাধেন বাড়েন

এক কন্যায় খান,

আরেক কন্যা না খেয়ে

বাপের বাড়ি যান।



-----------

বাক বাকুম পায়রা

মাথায় দিয়ে তায়রা

বৌ সাজবে কালকি

চড়বে সোনার পালকি



বাটা ভরে পান দিবো

গাল ভরে খেয়ো,

খোকার চোখে ঘুম নাই

ঘুম দিয়ে যেয়ো।





-----------

ছেলে ঘুমালো পাতা জুড়ালো

বর্গী এলো দেশে

বুলবুলিতে ধান খেয়েছে

খাজনা দিবো কিসে?



-----------

আয় আয় চাঁদ মামা

টিপ দিয়ে যা,

চাঁদের কপালে চাঁদ

টিপ দিয়ে যা।

মাছ কাঁটলে মুড়ো দিব,

ধান ভাংলে কুড়ো দিব,

কালো গরুর দুধ দিব,

দুধ খাবার বাটি দিব

চাঁদের কপালে চাঁদ

টিপ দিয়ে যা।



-----------

ঢোল ঢোল ঢুলোনি

রাঙ্গা মাথায় চিরুনি

বর আসবে এখনি

নিয়ে যাবে তখনি।



খেঁজুর পাতা হলদি

মেঘ নাম জলদি,

এক বিড়া পান

ঝুমঝুমাইয়া নাম।



-----------

আয়রে পাখী লেজ ঝোলা

খোকন নিয়ে কর খেলা

খাবি দাবি কলকলাবি

খোকনরে মোর ঘুম পাড়াবি।



-----------

-----------

তালগাছ

এক পায়ে দাঁড়িয়ে

সব গাছ ছাড়িয়ে

উঁকি মারে আকাশে।



মনে সাধ,

কালো মেঘ ফুঁড়ে যায়

একেবারে উড়ে যায়;

কোথা পাবে পাখা সে?



তাই তো সে

ঠিক তার মাথাতে

গোল গোল পাতাতে

ইচ্ছাটি মেলে' তার,--



মনে মনে

ভাবে, বুঝি ডানা এই,

উড়ে যেতে মানা নেই

বাসাখানি ফেলে তার।



সারাদিন

ঝরঝর থত্থর

কাঁপে পাতা-পত্তর,

ওড়ে যেন ভাবে ও,



মনে মনে

আকাশেতে বেড়িয়ে

তারাদের এড়িয়ে

যেন কোথা যাবে ও।



তার পরে

হাওয়া যেই নেমে যায়,

পাতা-কাঁপা থেমে যায়,

ফেরে তার মনটি



যেই ভাবে,

মা যে হয় মাটি তার

ভালো লাগে আরবার

পৃথিবীর কোণটি।

----------



ঘুম পাড়ানি মাসি-পিসি

মোদের বাড়ি এসো,

খাট নাই পালং নাই

খোকার চোখে বসো।



-----------



আম পাতা জোড়া-জোড়া

মারবো চাবুক চড়বো ঘোড়া

ওরে বুবু সরে দাঁড়া

আসছে আমার পাগলা ঘোড়া

পাগলা ঘোড়া ক্ষেপেছে

চাবুক ছুঁড়ে মেরেছে।



-----------

নোটন নোটন পায়রাগুলি

ঝোটন বেঁধেছে

ওপারেতে ছেলেমেয়ে

নাইতে নেমেছে।

দুই ধারে দুই রুই কাতলা

ভেসে উঠেছে

কে দেখেছে কে দেখেছে

দাদা দেখেছে

দাদার হাতে কলম ছিল

ছুঁড়ে মেরেছে

উঃ বড্ড লেগেছে।



-----------

বাক্ বাক্ কুম পায়রা

মাথায় দিয়ে টায়রা

বউ সাজবে কাল কি?

চড়বে সোনার পালকি?



পালকি চলে ভিন গাঁ-

ছয় বেহারার তিন পা।

পায়রা ডাকে বাকুম বাক্

তিন বেহারার মাথায় টাক।



বাক্ বাকুম কুম্ বাক্ বাকুম

ছয় বেহারার নামলো ঘুম।

থামলো তাদের হুকুম হাঁক

পায়রা ডাকে বাকুম্ বাক্।



ছয় বেহারা হুমড়ি খায়

পায়রা উড়ে কোথায় যায়?



-----------

ট্রেন চলেছে

শামসুর রাহমান



ঝক ঝক ঝক ট্রেন চলেছে

রাত দুপুরে অই..

ট্রেন চলেছে ট্রেন চলছে

ট্রেনের বাড়ি কই?..

একটু জিরোয়, ফের ছুটে যায়,

মাঠ পেরুলেই বন..

পুলের ওপর বাজনা বাজে

ঝনঝনাঝন ঝন..

দেশ-বিদেশে বেড়ায় ঘুরে

নাইকো ঘোরার শেষ..

ইচ্ছে হলেই বাজায় বাঁশি,

দিন কেটে যায় বেশ..

থামবে হঠাৎ মজার গাড়ি

একটু কেঁশে খক..

আমায় নিয়ে ছুটবে আবার

ঝকঝকাঝক ঝক.

-----------



গোল করোনা

সুফিয়া কামাল



গোল করোনা গোল করোনা ছোটন ঘুমায় খাটে

এই ঘুমকে কিনতে হলো নওয়াব বাড়ির হাটে।

সোনা নয় রূপা নয় দিলাম মোতির মালা

তাই তো ছোটন ঘুমিয়ে আছে ঘর করে উজালা

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১১:৪৫

বিষাদ সজল বলেছেন: ভাল সংগ্রহ ।
ধণ্যবাদ ।

২| ১৯ শে জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ৯:১৯

মাসুম আহমদ ১৪ বলেছেন: নাইস কালেকশন -

৩| ১৯ শে জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১১:২৬

আহসান জামান বলেছেন:
চমৎকার, প্রিয়তে সারাক্ষণ।

৪| ১৯ শে জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১১:২৮

ইনকগনিটো বলেছেন: অনেকদিন পর আবার পড়লাম। খুব ভালো লাগলো।

৫| ১৯ শে জানুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ১:২৯

তন্ময় ফেরদৌস বলেছেন: ++++++++++++++

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.