নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অন্ধ ছেলে, বন্ধ ছেলে, জীবন আছে জানলায় পাথর কেটে পথ বানানো, তাই হয়েছে ব্যর্থ | মাথায় ক্যারা, ওদের ফেরা ...যতোই থাক রপ্ত নিজের গলা দুহাতে টিপে বরণ করা মৃত্যু...

রুফতি তাহসিন

রুফতি তাহসিন › বিস্তারিত পোস্টঃ

আরেকটি প্রেমের গল্প

১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৪:০৪

(প্রথমেই আমরা বলে নিচ্ছি এই ডায়রী কোনো খাতায় লেখা হয় নি, মানুষটার মানসিক অবস্থার কথা বলতেই এই ডায়রীর অবতারণা, মনে মনে ভাবা কথাগুলো লেখাই শ্রেয়। খাতায় লেখার সময় কয়েকপাতা জুড়ে বাংলায় দুইশ সাতচল্লিশ অবধি লিখেছিলাম, গল্পের জন্যে, টাইপ করতে ইচ্ছা করল ন.. গল্পে ওই ফাঁকটা থেকেই গেল )

জানুয়ারি ১০, ২০১০
……………………............

ইদানিং ও কথায় কথায় রেগে যায়। উফ! কি রাগ! একবার ফোন কেটে দিলে সপ্তাহখানেক ফোন ধরে না।
রোজ রাত্তিরে ওয়েটিং থাকে, ইচ্ছে করেই নিশ্চয়। আমাকে কষ্ট দিতে, মানে কষ্ট তো না, জেলাস ফিল করানোর জন্যে আরকি… জানিই তো! ওদিকে দেখা যাবে বোরিং কোন বান্ধবীর ফালতু গল্প শুনছে আর মনে মনে আমার কথা ভাবছে! পাগলী একটা!
অথচ, ওই ফোন কেটে আমারটা তো ধরবেই না, বরং ভোরের দিকে কথা বলা শেষ করে ফোন বন্ধ করে রেখে দেয় যাতে ঘুমের সময় না জ্বালাতে পারি। খারাপ একটা! ঠিকই তো আমার কথাই ভাবিস তখন! যাক, আমারও তো সারারাত ঘুম হয় নি। মেয়েটা আমার ঘুমের কথা ভেবেই ফোন বন্ধ করে রেখেছে নির্ঘাত! ইশ! আমার গার্লফ্রেন্ড দুনিয়ার সেরা।

জানুয়ারী ১২, ২০১০
........................

মাঝে মাঝে কষ্ট লাগে। আসলে তো লাগা উচিত না, সামলাতে পারি না মাঝে মধ্যে। নিজের উপর রাগ হয়। এত মীন মাইন্ডেড আমি! Worse case scenario ভাবতে এত ভাল লাগে! ভেবে ভেবে ব্যথা পাওয়া… আহা! কষ্ট পাওয়ার অনুভূতি সবচাইতে আনন্দের।
সবসময় বাস্তবকে মানতে গেলে যে আর বাঁচা যায় না!
মাঝে মাঝে এত বেশি সুখও হয়, এতটাও আমরা মানে আমি... যোগ্য না... আমাদের প্রথম দেখা! আমাকে হাত ধরতে দিল!! তাও... কেমন জানি, কি একটা নেই নেই লাগে। ফাঁকা ফাঁকা লাগে নিজের মধ্যে। পাগলী, তোমার সঙ্গে দিবানিদ্রা কাটাব জীবন! প্লিজ!

জানুয়ারী ১৩,২০১০
...........................

আমি খুব খারাপ। কত কষ্ট দিই ওকে। আচ্ছা, আমিও কিন্তু পাই। যাক। রাত্তিরে ফোনে কথা বলছিলাম, ওর সাথে। মিনিট পাঁচের কিন্নরী কন্ঠ- বছরখানেকের এনার্জি! ওর ফোন এল। এতদিন আমি ওয়েটিং পেতাম, আজকে আরেকজন পাচ্ছে! মজা! মানে কি! আমি আমার সাথে আরেকজনের তুলনা করছি! ছিঃ আমি ওকে সন্দেহ করি?
"একটা ফ্রেন্ড ফোন দিসে। রাখো তো। কথা শেষ করে কলব্যাক করব। বাই।"
ইশ! বেচারি। ও ফোন রাখার পর হঠাত মনে হল এ জন্মে আর ওর কথা শোনা হবে না! কখন যে ব্যাক করবে...করবে না, করবে না... আমি জানি

ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০১৫
..............................

কবিতা ভাল্লাগতো। হেঁহেঁ। বিনয় মজুমদার, ভাল্লাগে! উনি তো কবিতা শুনতেই চান না, কি যে করি! পাগলী একটা! কি যে মজা আশিকি টু মার্কা হিন্দি ছিনেমাতে কে জানে! সারাদিন ভাল্লাগে কিভাবে বুঝি না। খারাপ একটা। পাগলী, তোমার সঙ্গে নাইট্যশালা জীবন? কাটাব না? হা হাহাহা...

জানুয়ারী ১৫,২০১০
................................................


"যে যাহারে ভালবাসে রে বন্ধু
ব্যবহারে যায় চেনা রে যায় জানা"
আহা! শাহানা বাজপেয়ী শুনব? একটা ছেলে মনের আঙ্গিনাতে ধীরপায়ে... আরে ধুর ধুর...
সবুরে মেওয়া ফলে। ও নিশ্চয়ই আমাকে ভালবাসে। আমারই তো সে!
হাস্যকর। সামান্য মেসেজের উত্তর দেয় নাই দেখে এতটাও... ধুর! প্রথমদিককার কথা ভাব। আগের আইডিটা হ্যাকড হয়ে যাবার পর ঐ যে আইডি খুলল, ওর প্রথম তিন ফ্রেন্ডের মধ্যে আমি একজন। আহ! সারাদিন অনলাইনে থাকি। কখন তোমার আসবে টেলিফোন? যখনই আসতে, মেসেজ দেয়াই থাকত, পড়তে, উত্তর দিতে। অন্যকিছু করার সুযোগই পেতে না, দিতাম না। অবশ্য, আমার উত্তর দিতে মিনিটের দেরি হলে দশটা মেসেজ দিত। অভিমান করে! সেই বুক ভরা লাগা অনুভূতি! তুলনা নাই।
সবকিছু কেমন যেন বদলে গেল কয়দিনে। রাগ করেছে? না তো। রাগ করলে তো বলে রাগ করেছে। স্বাভাবিক। এটাই তো বেশি খারাপ। কেমন যেন পাত্তা না দেওয়া ভাব, অনলাইনে আসে, থাকে। আমি লম্বা মেসেজ দিই। দশ মিনিট পরে খুলে দেখে। খুব ছোট্ট গা ছাড়া উত্তর।
অবশ্য, উত্তর পাওয়ার আশা করাটাই ইদানিং কেমন যেন উচ্চাভিলাষ মনে হয়, ছোট উত্তরেই অনেক ভাল্লাগে । অনেক। অবশ্য, নিজেকে খুব তুচ্ছ লাগে। ব্যপার নাহ। আবার, ব্যপারও! এতটাও ব্যপার যে, রাগ করে মেসেজ দেয়া বন্ধ করে দিলাম। রাগ? ঠিক রাগ না। অধিকার থাকলে তবে না রাগ। কেমন করে যেন বুঝে গেছি রাগ করার অধিকার আমার নেই।

জানুয়ারী ২৩,২০১০
..........................................

অনলাইনে পড়ে থাকি, ওর ওয়ালে পড়ে থাকি, ওর ইনবক্সে পড়ে থাকি- মেসেজ দিই না। প্রত্যেকটা মুহূর্ত, প্রথমদিকে সহ্য করা খুব কষ্ট, পরে, এটা তো অস্বিকার করার নাই যে মেসেজ না দিলে (পাওয়ার আশা ছেড়ে দিলেও) খারাপ লাগে, অবশ্য খারাপ লাগে শব্দটা কমজোরি। অনেক কম।
কান্না পেলে ভাল হত। পায় না। কষ্ট বেরনোর তো দরকার। বেরয় না। রাতের পর রাত কাটে ওকে অনেক রাত অবধি অনলাইন দেখতে দেখতে। তারপর ও চলে গেলে পুরনো মেসেজগুলো পড়ে রাত কাটিয়ে দিই। না ঘুমানো অভ্যাস হয়ে গেলে ঘুম আসা কষ্টকর। মেসেজ দিই না। রাগ, অভিমান থেকে না দিলে ঘন্টাখানেক না দিয়ে থাকতে পারতাম না, হঠাত যেন বড় হয়ে গেছি, আমার যে ওকে দরকার নাই বুঝে শুধু শুধু বিরক্ত করার তো মানে নাই।

জানুয়ারী ২৮, ২০১০
...........................

ওর পাঠানো শেষ মেসেজটা "hmm..."।
বড় একটা মেসেজ দিছিলাম লজ্জাঘেন্নার মাথা খেয়ে। সিন করার সাথে সাথে এটা লিখেছিল। নিশ্চয়ই মেসেজটা পড়েই নি! আমার বুক নিংড়ানো কথা, ও পড়ল না! আগ্রহই পেল না!

জানুয়ারী 31,2010
………………………………….

ওর শেষ মেসেজটা… তাতেই বোঝা যায় আমার জন্যে ওর টান আছেই.... তা নইলে একটা এম এর জায়গায় দুটো এম দিতে যাবে কেন? আর ডট চিহ্নগুলোরও তো দরকার ছিল না। মেয়েটা আমাকে ভালোই বাসে। একটা মেসেজ পাঠাই, সব ঠিক হয়ে যাবে। আর যে পারি না!

ফেব্রুয়ারী ১৮, ২০১৫
...............................................

আচ্ছা, আমি কি বেশিই ভালো? না বেশি খারাপ? বুঝি না! এখন, এতকিছুর পরে, ওর ভালবাসা নিয়ে তো আমার সন্দেহ থাকা উচিত না। অথচ প্রায়ই আমার সন্দেহ হয়! ওর বন্ধু টন্ধু যখন আসে, সন্দেহ হয়, বিনা কারণে সন্দেহ হয়। সন্দেহ নিয়ে বাঁচা খুব কষ্ট। হেঁ হেঁ! কি ছাই ভাবি আজকাল! ও আজ আমার বউ। আমার আর কী লাগবে? কিচ্ছু না। এত ভালোবাসে ও আমাকে!

ফেব্রুয়ারী ১৫, ২০১০
.................................

গতকালকে ভালবাসা দিবস ছিল। দেখা করবে বলেছিল। আমিও না... আজকাল এতটা আশা করা ছেড়ে দিয়েছিলাম! এত বড় একটা দিনে ও আমার সাথে ঘুরবে! সবাই দেখবে আমাদের! এর চাইতে বড় সুখ আর কী হয়? অংক কি কঠিন!
অবশ্য, আমি একদমই এটা ডিজারভ করি না বলব কেন? কেউ না দেখুক, তাতে তো সব মিথ্যে হয়ে যায় না। কষ্ট তো কম পাই নি, একটূও সুখ তো পেতেই পারি!
হিশেব করে দেখলাম, এখন অবধি... আচ্ছা, আমি যোগ্য হব কেন? ও এত সুন্দরী, এত বড়লোকের মেয়ে...আমি তো...। দেখা হল না। আমি ইদানিং...ওকে নিয়ে নানান হিশাব করি মনে মনে... এছাড়া আর কিচ্ছু ভাবি না? ছি ছি। ওহ আচ্ছা, তারপর... আমারই দোষ। জানি না কি দোষ, কিন্তু নিশ্চয়ই আমার দোষ। রাস্তায় একবার ওকে দেখলাম, ওই ছেলেটার সাথে, অন্য একটা ছেলে, ও আমি নই... খুব লজ্জার ব্যপার। আমি কোনমতে চোখ নামিয়ে চলে এলাম। দুজনেই দুজনকে না দেখার ভান করে পাশ কাটালে লজ্জাটা কম হয় যদিও, কিন্তু কিছু একটা হয়ে যায় ভেতরে, না?
আমারই দোষ। মিথ্যে বলব না, আমার কেমন জানি সন্দেহই হয়েছিল যখন সকালে আর ফোন ধরল না, সব ঠিকঠাক অথচ...। আমার বেরুবার কোন দরকার ছিল না। দেখতে ইচ্ছা করছিল। খুব। মনে হচ্ছিল, আজ, ও আমার সাথে না হাঁটল, আর কারো সাথে তো হাঁটছে। যদি দেখা পাই! এবং দেখা পেলাম।

ফেব্রুয়ারী ১৬, ২০১০
.................................
আমি ক্লান্ত। সারাদিন বসে থাকি। কিচ্ছু ভাবি না। কি করি?

ফেব্রুয়ারী ১৭,২০১০
..............................
উনি ফোন দিয়েছিলেন। সরি বললেন। এককথায় মাফ করে দিলাম। জানি, কিছুই ঠিক হবার নয়। তাও। দুঃখ যদি না পাবো, দুঃখ আমার ঘুচবে কিসে?

মার্চ ২৫, ২০১০
..................
সেই একই গল্পের পুনঃ পুনঃ অভিনয়। আমি ক্লান্ত হতে হতে আজকাল আর ক্লান্ত হই না, মরতে মরতে মরণও আর আমাকে ছোঁয় না।

মে ১৫, ২০১০
.....................
কথা বন্ধ। ফোন ধরে না, সবসময় নাকি পাশে বাড়ির কেউ না কেউ থাকে। আর রাত্তির তিনটায় নাকি মামার সাথে কথা বলে! মেয়েগুলো এত বোকা কেন?

জানুয়ারী ২৫, ২০১২
...........................
ওকে ভুলব কেন? তাহলে তো নিজেকেই ভুলতে হয়! এই বছর পাশ করে বেরিয়ে যাচ্ছে সবাই। ও ও। ওর সাথে যাকে দেখেছিলাম, সে ই ওর প্রেমিক... খোঁজ নিয়েছিলাম একটূ। আমাদের ইউনিতেই পড়ে, ফিল্ম স্টাডিজ। খারাপ ছাত্র।
আমি কম্পিউটার সায়েন্স। আমি বেরুতে পারব না। সমস্যা না। বাবা মা নাই, ব্যাংকে বহু টাকা রেখে গেছেন পিতৃদেব, পৈত্রিক বড় বাড়ি আছে... চলে যাবে। আমার ভয় কী!

মার্চ ১৭, ২০১২
........................
যাক, অন্তত একদিন তো সত্যি কথা বলল আমাকে! হ্যাঁ, ও মেনে নিল ও আরেকজনকে ভালোবাসে, আমাকে নয়।ঐ সেই ফিল্ম স্টাডিজকে। আমাকে 'পছন্দ' করে। আমি নাকি খুব ভালো ছেলে, আমি নাকি আরো ভালো কিছু 'ডিজারভ' করি।
আমি প্রথম যেটা বলতে চাইলাম, "চুপ থাক মাগি"
এরপর বলতে চাইলাম, "তোমাকে ছাড়া মরে যাবো।"
কিছুই বললাম না।
এতদিন পর হঠাত ফোন দেয়ার কারণ?
আমি খুব ভালো ছেলে তো, আমাকে বন্ধু চায়। অনেক কথা বলার আছে। রাজি না হয়ে উপায় কী? অনেক কথা বলার আছে!

মার্চ ২০, ২০১২
...........................
আচ্ছা, গল্প উপন্যাসে যে থাকে না... ত্রিকোণ প্রেমের অবহেলিত... সে নায়িকার বন্ধু হয়, নানান ভাবে সাহায্য করে ওদের প্রেমকে, সব কথা ওকে শেয়ার করে ওরা। আমি না এতটা ভালো হতে পারছি না, ও যতবার ওর প্রেমিকের কথা বলছে ভেতরে পুড়ে যাচ্ছে যেন! ওরা পালিয়ে বিয়ে করবে। দুজনের বাড়ি থেকেই মানবে না। ওদের একটা সুখের সংসার হবে। আমার হবে না।


ডিসেম্বর ০১, ২০১৩
........................

আমি.. বাড়িতে বসে থাকি। গল্পের বই পড়ি, সিনেমা দেখি, ভাত খাই। হেহ... একটু আধটু খারাপ হতে শুরু করছি, ইদানিং পার্কে গেলে টেলে, আড়ালে ছোট বাচ্চা টাচ্চা... টাকা চাইতে আসে... আমি অনেক টাকা দেখিয়ে বলি মারতে দিলে টাকা দেব। প্রায় সবাইই রাজি হয়ে যায়, আমি ইচ্ছামতো মারি। একগাদা টাকা দিয়ে চলে আসি। বাচ্চাগুলো না... কাঁদে না একদম। কিসের এত দুঃখ এদের?
একবার ভাবলাম, অভদ্র ভাষায় যাকে বলে বেশ্যাখানা... সেইখানে ঘুরে আসি। পরে আর যাই নি। মানসিক এনার্জি ছিল না তখন আর।
এই যখন অবস্থা, তখন আবার ওর খবর পেলাম। ফিল্ম স্টাডিজ ওকে ছেড়ে গেছে, বাড়িতে ওকে ত্যাজ্য করেছে।
জানুয়ারির পয়লা তারিখে আমাদের বিয়ে হল।

ফেব্রুয়ারী ০১, ২০১৪
..............................

আমার তো আর চাকরী বাকরী করা লাগে না, সারাদিন বাড়িতে বসা। বৌটাও বাড়িতেই থাকে। বেশ একটা উৎসব উৎসব ভাব। ওর মন টন খারাপ থাকবে ভেবেছিলাম, পরে দেখি নাহ... আমাকে বেশ পছন্দই করছে। কেনইবা করবে না? বেচারি রাঁধতে পারে না, কাজের বুয়া রাঁধে। সেদিন ও মন খারাপ করে বলছিল, "আমাকে বিয়ে করে তোমার কত ক্ষতি হল, আমি তো কিছুই পারি না!"

ফেব্রুয়ারী ১০,২০১৫
.................................

ওর বন্ধু রা সব খবর নিতে আসে, আমার কেউ আসে না। ইশ, আমার কোন বন্ধু নাই! আমি ইন্ট্রোভারট, ওর বন্ধুদেরও আমার ভালো লাগে না খুব একটা।

ফেব্রুয়ারী ২৫,২০১৫
..............................
ওর বন্ধুরা এলে আমি রিডিং রুমে চলে আসি। ওরা পাশের ঘরে বসে গল্প করে। ব্যপারটা বোধহয় আর গল্প করা নেই। সেদিন ওর মোনিং এর শব্দ পেলাম, আমি বই ধরে ছিলাম হাতে। উঠে দেখতে যাওয়ার ইচ্ছাটাকে খুব কষ্টে চেপে বইয়ের মধ্যে আরো করে ঘাড় গুঁজলাম। Ignorance is blessing! কান বন্ধ করার উপায় নেই তো, গান ছাড়তে পারলে হত... খারাপ দেখায় যে!

মার্চ ০১,২০১৫
.....................
রোজ কেউ না কেউ আসে। আমি বই হাতে পাশের ঘরে চলে যাই। পরে, ওকে ছুঁতে ইচ্ছা করে, তবুও করে... কিন্তু ওর কথা ভেবেই ছুঁই না। আজকাল আর তত খারাপ লাগে না, গান বাজাতেও ইচ্ছা করে না। সেদিন পর্দার আড়াল থেকে দেখলাম। ও আমাকে দেখেছিল বোধহয়, না দেখার ভান করার অভ্যাস তো আমাদের আছেই!

এপ্রিল ১২, ২০১৫
..................

আমি সত্যি নিজেও বুঝি নি আমি এত খারাপ। আরে খারাপ কিসের! সব কিছুই হিসাবের জিনিস। টাকা নিবা, যা চাই দিবা। সহজ হিসাব।
বলছিলাম আমার বেশ্যাবাড়ি যাওয়ার কথা। আর সবাই যে জন্যে যায় তার থেকেও খারাপ কারণেই গেলাম। সহজ কথা, অল্প টাকার বিনিময়ে এত কম সময়ে মানুষ দাস কোথায় পাবো? প্রেম করলে... পাওয়া যায়, তবে তার জন্যে তো সময় লাগবে। এত সময় দেব কেন? আর সবাই তো আর একরকম প্রেম করে না। শুধু টাকার জন্যে এত কষ্ট আর কে নিবে? অনেক টাকার স্পেশাল বউনি করেছিলাম, যা খুশি করতে পারি। এরা তো সেক্সের কষ্টে অভ্যস্ত, যতরকম করে কষ্ট দেয়া যায়... আহা! খুব শান্তিতে সময় গেল। মানুষকে কষ্ট দেবার চাইতে বড় সুখ হয় না। এরপর টাকা দিয়ে চলে যাব, এই মাগিও দেখি কাঁদে না! শালার জীবন!

বাড়িতে আসার পর বুঝলাম আমার চেহারায় লেখা রয়েছে সবকিছু। আমার বৌ আমাকে তীক্ষ্ণ চোখে দেখল, কিছু বলল না। বলার মুখ আছে ওর? আচ্ছা, ও কি জানে যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তাম তখনই ওর ফেসবুক আইডি হ্যাক করেছিলাম? দেখতাম ওর আর ওর প্রেমিকের... আচ্ছা থাক। ওর এখন যে আইডি সেটাতে ঢোকা তো আরো সহজ, এখন একই বাড়িতে থাকি আমরা। একই বিছানায় ঘুমাই!

এপ্রিল ২৯,২০১৫
..............................

আমি মোটামুটি নিয়মিত হয়ে গেছি ওইখানে। মেয়েগুলো নাকি আমার নামে নালিশও করে দালালের কাছে , কিন্তু কাস্টোমার লক্ষী। আমার খুব ভালো লাগে ওদের আঁচড়ে কামড়ে মারধর করতে, মানসিকভাবে যত অপমান করা যায় ততই মজা। ইশ! মেয়েগুলো বয়স কম আর সুন্দরী হলে শান্তি বেশি, ওদের একটু অহংকার থাকে, অহংকার ভেঙ্গে যখন ওদের কুত্তার মত... ওরা খুব কষ্ট পায়। হেহ!
বৌ যে আমার পেছনে লোক লাগিয়েছে টের পেলাম। ওর সন্দেহ হবারই কথা, যে আমি সারাদিন ঘরে পড়ে থাকতাম সেই আমি যদি চোখেমুখে বন্য জানোয়ার নিয়ে ঘরে ফিরি সন্দেহ হবে বৈকি! কিন্তু ও তো জানে যে আমি সব জানি ওর, তবে কোন মুখে? নাকি ভাবছে ওকে মারার প্ল্যান করছি! সাবধানে থাকতে চায়! হে হে!

মে ০২, ২০১৫
...........................

ও কেঁদে ফেলল। ঝরঝর করে। অনেকদিন পর আমাকে জড়িয়ে ধরল। আজ শ্যাম্পু করেনি। চুলে গন্ধ নেই।
বলল, “আমি খারাপ আমি জানি, তুমি আমার দেবতা, তুমি কেন এইসব করবে? বলো?”
আমার কিছুক্ষণ লাগল কথাটার ধাক্কা সামলাতে। হাজার হই, মানুষ তো!
আবার বলে কি না, “আমি হাজার খারাপ হই, তুমি শুধু আমার। আর কারো সাথে... “
হে হে! কি মজা! পাশার দান যে উলটে গেছে বড়ো! আমি আলতো করে ওকে ছাড়িয়ে নিলাম। আমি ওকে ভালবাসি এখনো। এইমাত্র মনে হচ্ছে আমার জন্যে ও ও কষ্ট পায়। তাহলে কষ্ট দেব না? নইলে ভালবাসা কিসের?
আমি হেসে বললাম, “সেই অধিকার তোমার আছে?”
ও চুপ করে বেরিয়ে গেল ঘর থেকে।

মে ০৯,২০১৫
..............................
ম্যাডামের দলবল আসা বন্ধ হয়ে গেছে, আমার বান্ধবীরা বাড়িতে আসা ধরেছে যেই। টাকা কিছু বেশি লাগছে বটে, শান্তিটা কিছু কম নয়। পর্দায় নড়াচড়া দেখতে পাচ্ছি যে ইদানিং! আমরা এমন ভাব করি যেন ব্যপারটা দুজনেই জানিই না! রাতে ও আবার একটু কাছে আসতে চায়, নিজে নিজে রান্নাও শিখতে শুরু করছে! আমি তো সবই দেখছি কিছু না দেখার মত করে।

জুন ২০১৫
.................................
নাহ। আমি কোন হেলদোল দেখালাম না, দেখাতে পারলাম না। কিছুটা অপমানই করছি মনে হয়, যখন রান্না করে আনে আর আমি খেয়ে বলি বাজে খেতে... বেচারীর মুখ কালো হয়ে যায়। কিছুদিন পর ও হাল ছেড়ে দিল। আবার ওর বন্ধু আসা শুরু হল। আমি আবারও পর্দার আড়ালে বই নিয়ে বসে গেলাম। তবে আমার বান্ধবী আসাতে ব্যত্যয় হল না। দুদিন পরে ওর বন্ধু আসা বন্ধ হল। এরমধ্যে আমার কিছু বান্ধবী কান্নাকাটি করে চলে যায়, মানে কেউ কেউ কান্না আটকাতে পারে না আরকি। সেদিন দেখি, আমার বৌটা এক যেতে যেতে ক্রন্দনরত বান্ধবীকে ডেকে নিয়ে গেল ঘরে। ভাবলাম কান পাতি। পরে আর গেলাম না। সেদিন বৌকে খুব গম্ভীর দেখা গেল। আমি ওকে না দেখে বেশিক্ষণ থাকতে পারি না, ও জানে, সেদিন একদম নিজের ঘরে দরজা বন্ধ করে রইল।
রাতে ও ই পারল না! হে হে! এসে বলে, কথা আছে।
আমি তো জানিই কি কথা, বললাম, “আমি যদি ওদের কষ্ট না দিয়ে আদর করে ভালবাসতাম, খুশি হতে?”
ও বলল, “তুমি বাইরের কাউকে কষ্ট দেবে কেন? আমি আছি, আমার জন্যে তুমি কষ্ট পেয়েছ। আমাকে কষ্ট দাও। আমি রাজি।“
আমি বললাম, “বাই এনি চান্স তুমি আমাকে ভালবাসো না তো?”
“বাসি। না বেসে উপায় কী?”

হাহা! শান্তি! যাক! তুমিও তাহলে অধরা নও! তোমার থেকে তো আমার আর কিছু পাওয়ার নাই। তুমিও তো আর দশজনের মতই তাহলে... আমাকে ভালবাসে! হেহ হে!
আমি হাসিমুখে বললাম, “জগতের সবটাই পাওয়া হল আমার, কালকে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাবে। তোমাকে আর আমার দরকার নেই।“

(প্রথম অংশ সমাপ্ত)

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.