![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ওর ফেসবুক পাসওয়ার্ডটা আমি জোগাড় করেছি বেশ বুদ্ধি খাটিয়ে। কথায় কথায় একবার বলেছিল, “আমার ল্যাপটপের পাসওয়ার্ড আর ফেসবুকের পাসওয়ার্ড একই। সব একাউন্টই আমি এইটাতেই খুলছি।”
রাকিবের জানাযার ক’দিন পরে, আমার কাছে একটা ফোন এল। দিপু ভাই, ওর ডিপার্টমেন্টের বড় ভাই আর মেসের রুমমেট।
“হ্যাঁ, মীম? তোমার সাথে কথা আছে। একটু আসতে পারবা?”
কেউ বিশ্বাস করবে কি না, আমার বুকটা লাফিয়ে উঠেছিল। রাকিব তো মরেই গেছে, এখন ওর কোন খবর নিশ্চয়ই আরো খারাপ কিছু হতে পারে না। ভালো কিছুই হবে। আমি খেয়াল করলাম আমি ভাবতে শুরু করেছি রাকিব বুঝি বেঁচে আছে কোনভাবে! হয়তো সেদিন ও মরেই নি, বাইকটাতে ও ছিলই না, চেহারার অবস্থা তো… সবাই এখন ভুল বুঝতে পেরে…
আমি চোখমুখ বন্ধ করে বললাম, “জ্বী ভাইয়া। কখন?”
“কালকে সকালে? পারবা?”
“জ্বী ভাইয়া।“
“তাহলে তুমি শহরে এসে ফোন দিও। আমি থাকব, তোমাকে নিয়ে ক্যাম্পাসে যাবো।“
আমি আর কিচ্ছু জিগ্যেস করলাম না, স্বপ্নটা একটু দেরীতেই নাহয় ভাঙল! পরদিন যখন দেখা করলাম, দিপু ভাইকে দেখে মনে হল না যেটা ভেবেছিলাম… হতে পারে আমায় সারপ্রাইজ দিতে… ক্যাম্পাসে যাচ্ছিলাম আমরা। আমি ভয়েই কথা বলছি না, যদি এমন কোন কথা শুনে ফেলি যে সারপ্রাইজ আসলে নাই ই একদম।
রাকিবের ঘরে গেলাম আমরা। আরো কয়েকজন বড় ভাই আর আপু বসে ছিল। আমাকে দেখে একটা আপু উঠে এসে হাত ধরে খাটে বসাল।
“মিম, তুমি তো জানোই ওর ফ্যামিলি… “
আমি বুঝলাম রাকিবের পরিবারের রক্ষনশীলতার কথা বলছে। কিন্তু এখন আর এসবের কি দরকার? ও তো আর আমার সাথে লুকিয়ে দেখা করতে আসছে না!
দিপু ভাই বলল, “কালকে রাকিবের বাড়ি থেকে লোক আসবে। ওর জিনিসপত্র নিয়ে যাবে। আর, তারপর তো তোমার আর সুযোগ হবে না, আজকে যদি ওর জিনিসগুলো দেখে…যদি তোমার কিছু থেকে থাকে…”
আমি বাইরে তাকালাম।
“আচ্ছা, ওর ল্যাপটপে আমাদের কিছু কাপল ছবি থাকতে পারে। ওগুলো নিতে পারতাম যদি!”
দিপু ভাই বলল, “ওহ, সমস্যা নাই। ওর ল্যাপটপের পাসওয়ার্ড জানি।”
আমি পাসওয়ার্ডটা শুনে নিলাম। ওরা নিশ্চয় জানে না এইটাই ওর ফেসবুক পাসওয়ার্ড। একটা মানুষের ল্যাপটপ তার জগতের খবর দেয় অনেকখানি। নাহ! জামাই আমার ভদ্র ছেলে! কিচ্ছু উলটাপালটা কিছু নাই। আমাদের কাপল ছবিটার যে ফোল্ডার, সেটার নাম দেখে বড় ভাইদের সামনে লাল হয়ে গেলাম। গাধাটা…আই লাভ ইউ! আর ক’টা দিন বাঁচলে কী ক্ষতি হত তোর?
সায়নী দিদি বলল, “শোনো, আমরা ভাবছি, ওর কোন জিনিস তুমি নাও। সবকিছুই তো ওর বাড়ির লোকেই পাবে, কিছু একটা তোমার থাক।“
আমি খুব লোভী মানুষ, না করার মত শক্তি পেলাম না। কতদিন ওর হাতে দেখেছি! আমি ধরে কত ছবি তুলেছি!ওর ভাঙাচোরা মোবাইলটা নিয়ে আমি বাড়ি চলে এলাম।
এই বেয়াদপ ছেলে, তুই জানিস রাস্তায় হাঁটতে বেরুলে অবধি…হঠাত খেয়াল করি কখন জানি তোর কাছে চিঠি লিখতে শুরু করেছি! ইতি, আমি। তোকে বকি, মেলা ঝগড়া করি। সবসময় আমি জিতি। আল্লাহ তোকে কেড়ে নিয়ে গেল, আমার থেকে নিতে পারল? বল? মনে আছে, সেদিন… ওই যে বৃষ্টি হচ্ছিল… আমি জোর করে ভিজলাম তোর সাথে, তোকে ভিজালাম? তুই তো… হেহে! হ্যাচ্চো করে হেঁচে বেশ লজ্জায় পড়ে গেলি। প্রেমিকার সামনে এইভাবে এত্ত সহজে ঠান্ডা লাগালে লজ্জা লাগে না মানুষের! আমি তো কাঁপতে কাঁপতে হাসছিলাম!
জানিস, সেদিন খুব ইচ্ছা হচ্ছিল তোর নাক ঝেড়ে দিই নিজের হাতে। লোকজন ছিল তো রাস্তায়… দিই নি আর। খোদার কসম, আর একবার সুযোগ পাই! দিবি না তো! জানি। ভালবাসি। তোকে। তোমায়।
আমার সাথে দেখা করতে আসছিলে তুমি। হাবীব ভাইয়া তোমায় লিফট দিল। তুমি আমাকে ফোন দিয়ে বললে, আমার আসতে আর দশ মিনিট। রাব্বি গেল তোমার কাছে, একটু দাঁড়াও।
পরে জেনেছি তুমি মিথ্যে বলেছিলে। তুমি দশ মিনিটে আসোনি।
রাব্বি ভাই এল। তার একটু পরেই ফোন এল ওনার। কি ভীষণ মুখ হয়েছিল ভাইয়ার! আমার কান্না পাচ্ছিল, কেন জানি না। আমার দিকে তাকাচ্ছিল কিভাবে যেন। ফোন রেখে অপরাধীর মত বলল তুমি নাকি এক্সিডেন্ট করেছ। পেছনে যে ছিল সে নাকি মরে গেছে।
রাব্বি ভাই আমাকে বলল, তুমি নিশ্চয় বেঁচে যাবে। তোমার সব ঠিক হয়ে যাবে। আল্লাহকে ডাকতে বলেছিল। আমি ডেকেওছিলাম, জানো? আমি কাঁদিনি, আমার আর কান্না পায়নি। আমি আল্লাহকে ডাকছিলাম। খুব। শেষ কতদিন হয়ে গেল আমাদের দেখা হয় নি। কিছুদিন দেখা না হলেই কেমন পাগল পাগল লাগে! আমি স্বীকার করি না…মানে…করতাম না, তোমার স্বীকারোক্তি আমার খুব ভালো লাগত! নিজেকে খুব বড় মনে হত। কতদিন কত কঠিন কথা বলতেও দেখা করেছি, তোমার মুখ দেখে বলতে পারিনি। রাগ করা যায় তোকে দেখলে? আমি নিশ্চিত জানি, তোমার মাথাটা যখন ওই শক্ত রাস্তায় লাগছিল তুমি মনে মনে আরেকবার আমাকে দেখতে চেয়েছিলে, না? আমিও খুব চাই, জানো? অন্তত আরেকবার…আরেকবার তোমার আঙ্গুলগুলো ধরব।
আমরা ছুটলাম মেডিকেলে। পেছনের জন তো মরেই গেছে, অন্যজনকে এম্বুলেন্সে পাঠানো হয়েছে। হায়রে! আমি নিশ্চিতই ছিলাম তুমি আসছ, তোমাকে দেখব! সাথে আরো কিছু ভাইয়া এসেছিল ফোন টোন পেয়ে। যখন গাড়ি এল, আর অচেনা একটা মুখের খুব খারাপভাবে নষ্ট হওয়া শরীর দেখলাম, কেউ কেউ মুখে হাত দিল, হঠাত করে সহজ অংক কষে ফেললাম মাথায়। তুমি পেছনে ছিলে রাকিব? তোমাকেই পেছনে থাকতে হল! আমার ভালবাসা যে শেষ হয়নি এখনো?
এখনো আমার খিদে পায়, চোখ আপনাতে বন্ধ হয়ে আসে। স্বপ্নে দেখলাম তুমি মরে গেছো! ঘুম থেকে উঠে মনে পড়ল, তুমি মরেই গেছো। একটাও মেসেজ দাওনি। এও কি সম্ভব তুমি বেঁচে থাকলে! সেদিন তোমার জানাজা। আমি কাউকে কিচ্ছু না বলে চলে গেলাম। কেউ তো চেনে না, পাড়ার কোন ছেলে তোমার…তোমার লাশের কাছে বসে ছিল। ভেবেছিলাম দেখব না। তুমি খুব সুন্দর দেখতে। তোমাকে দেখলে আমি রাগতে পারি না। ধরতে ইচ্ছা করে। সেই তোমার নষ্ট হয়ে যাওয়া মুখ দেখাটা কি উচিত হবে? আমি দেখলাম। তোমার ভালোটা যেমন আমার, খারাপটাও আমার। আমার। আমি আবার দেখলাম। আর সহ্য হল না। ছুটে বেরিয়ে এলাম। মরাবাড়ীর ভদ্রতা ভেঙ্গে। কেউ খেয়াল বোধহয় করেনি। কে আর কাকে দেখবে বলো?
আমি নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারছিলাম না। হাঁটু ভেঙ্গে বসে পড়লাম। হঠাত দেখি আমি সব ভুলে কাঁদতে শুরু করেছি। খুব কাঁদছি। তোমার উপর রাগ হচ্ছিল খুব। ভাবছিলাম এমন কিছু করি যাতে তুমি কষ্ট পাও! কি যে অসহায় লাগছিল! সেদিন যদি আমার স্রষ্টা থাকত ওখানে সবাই ওকে দেখে বলত কি পাষাণ রে লোকটা!
এমন সময় একটা আঁশটে গন্ধ শাড়ি পরা এক মহিলা এগিয়ে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরল ওর বুকের মধ্যে। একটাও কথা বলল না। তুমি ভাবতে পারো এর থেকে সুখ আর কি হয়? কতটা একা আর কতটা মানুষের কাছ আমার একই সাথে তখন দরকার ছিল… তোমার কবর হয়ে গেল। কিচ্ছু ঘটল না। তুমি হঠাৎ বেচে উঠলে না।
আমি আশা করেছিলাম। কত্ত পাগল না আমি?
ফিরে আসবার সময় আমার হাতের চুড়ি ভেঙ্গে গেছিল। একটা অটোর সাথে ধাক্কা লেগে। ঠিক যেমন হিন্দুরা বিধবা হলে শাখা ভেঙ্গে ফেলে! এই চুড়ির জোড়াটা তুমি দিয়েছিলে রাকিব। আমি অবাক হয়ে ভাবছিলাম, তোমার কবর হবার দিন আমি চুড়ি পরে সেজে গেছি! মনে পড়ল, কাল রাতে তো আমি কাপড় বদলাই নি, চুড়ি খুলিনি। সেই দেখা করার ড্রেস পরেই তোমাকে দেখে এলাম! বাহ! ভদ্রলোকের এক কথা!
“এই বেয়াদপ!”
আমি তোমাকে মেসেজ দিলাম।
“এই!”
“এই ছেলে!”
“রাগ করেছ?”
“সরি! কি করলাম তাই জানি না, তাও সরি! তুই কথা বল ছেলে। আমার ভাল্লাগছে না।“
“প্লিজ!”
“আই লাভ ইউ বললাম তো!”
কোন উত্তর নাই। আরো জেদ চেপে যেতে লাগল আমার। মনে হতে থাকল মেসেজের পরে মেসেজ দিতে থাকলে একসময় বুঝি তুমি ঘুম থেকে উঠে উত্তর দেবে! অন্তত একটা সীন লেখা উঠলে? আমি সারাজীবন তোমার কেনা গোলাম হয়ে থাকব, বিশ্বাস করো।
আমি তোমার পাসওয়ার্ড জানি রাকিব। লগইন করলাম অন্য ব্রাউসার দিয়ে। ইশ! কত্ত মানুষ তোমায় মেসেজ দিয়েছে। ছেলে, তোমার পাসওয়ার্ড আমার কাছে, তোমার সব কুকীর্তি দেখব। হেহেহা! আর কয়টা মেয়ের সাথে টাংকি মারো, হুম? একদম লাশ ফেলে দিব শালার!
তোমার একটা পুরনো ছবি দেখলাম। ফটো কারটেসী আমার নামে। তোমার তাকানো দেখেই বলে দিতে পারব কবেকার ছবি এটা। ওই যে, যেদিন তোমার ঠোঁটের সিগারেটটা টান দিয়ে নিয়ে আমি খেয়ে কাশতে লাগলাম আর তুমি বললে, “ছেড়ে দে মা, আর তোর সামনে বিড়ি খাবো না!”
আমি বলেছিলাম, “বিয়ের পরও?”
তুমি হ্যাঁ বলতে আমি বলেছিলাম, “তখন যে এক সেকেন্ডও আড়াল হতে দেবো না? খাবি কখন? বাথরুমে? পকেট চেক করে বাথরুমে ঢোকার টিকিট পাবেন।“
তুমি বলেছিলে,”বিয়ে করব! বিয়ে করব! এখুনি!!”
ছেলে, তুই জানিস বুকে কত বড় ঢেউ হয় তুই এরকম বললে?
সেইদিন তুমি পানি খেতে গিয়ে গলা ভিজিয়ে ফেলেছিলে। আমি বলেছিলাম, “খুব যে মেসে থাকো? বোতলে পানিও খাইতে পারো না!”
এর পরদিন আবার গলা ভেজালে, আমি বললাম, “জানতাম!”
পরদিন যখন আবার পানি খেতে যাচ্ছিলে আমি তো অপেক্ষাই করছিলাম। এবং তুমি আবার ভিজলে! আচ্ছা ছেলে, তুই আমাকে বোকা বানিয়ে ইচ্ছা করে ফেলিস নি তো?
আচ্ছা, তুমি এত বোকা হয়ে জন্মেছিলে কেন? সেই যে নৌকা চড়ার কথাটা, মনে আছে? আমি একটু খালি দেখতে গেছি পানিতে পা ভেজাতে কেমন লাগে, জুতা খুলতে ভুলে গেছি, মনে করায়ে দিবি না? একটা ঢেউ এল আর এক পাটি জুতা খুলে গেল। আর তুমি সাহেব মুখ কাঁচুমাচু করে জিগ্যেস করলে লাফ দেবে কিনা! ওমা! আমি দাও বলতেই তুই লাফ দিয়ে দিলি! আগের দেখা করার দিন মাত্র বৃষ্টিতে ভিজে ঠান্ডা লাগায়ে নিয়ে গেলি, আবার! আমি চেঁচিয়ে উঠতে বললাম। আর আপনি জুতা না পেয়েই বীরের মতন আমার সামনে উঠে হাসি দিলেন! আর আমি তোমাকে আরো বেশি ভালোবেসে ফেললাম।
এই ছেলে, এই বোকা ছেলে! তুই কই? তোকে দরকার তো! আমি এত বুদ্ধি নিয়ে কার কাছে যাবো? কার হাজারটা বোকামী ধরতে ধরতে আরো বেশি করে ভালোবেসে ফেলব? তোকে ছাড়া যে চিনি না কাউকে!
“এই ছেলে! এই, একবার রিপ্লাই দে।“
“রিপ্লাই দেয়া লাগবে না, খালি দেখ একবার।”
“যা খুশি কর! ভালবাসি, ভালবাসি।“
২| ২৬ শে অক্টোবর, ২০১৬ সকাল ৭:৫৭
রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: কষ্টের!
৩| ২৬ শে অক্টোবর, ২০১৬ সকাল ৯:১৭
রক্তিম দিগন্ত বলেছেন:
গল্পটা কষ্টের। একটূ আলাদা ধাঁচের। তবে মাঝের দিকটা একটু অগোছালো লেগেছে।।
তারপরও, +
৪| ২৬ শে অক্টোবর, ২০১৬ সকাল ৯:৫৫
মার্কো পোলো বলেছেন:
হৃদয় বিদারক। কষ্ট লাগলো। গল্পটা অনেক ভালো হয়েছে।
৫| ২৭ শে অক্টোবর, ২০১৬ রাত ১০:২৬
কালীদাস বলেছেন: গুড ক্যারি অন
©somewhere in net ltd.
১|
২৬ শে অক্টোবর, ২০১৬ রাত ১২:৩১
রাতুল_শাহ বলেছেন: শিরোনামটা দেখে পড়তে লাগলাম
অনেক সুন্দর............
প্রতিটা কথা অনেক ভালো লেগেছে, হৃদয় ছুয়েঁ গেছে।