নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

গবেষক, পাঠক ও লেখক -- Reader, Thinker And Writer। কালজয়ী- কালের অর্থ নির্দিষ্ট সময় বা Time। কালজয়ী অর্থ কোন নির্দিষ্ট সময়ে মানুষের মেধা, শ্রম, বুদ্ধি, আধ্যাত্মিকতা ও লেখনীর বিজয়। বিজয় হচ্ছে সবচেয়ে শক্তিশালী চিন্তার বিজয়।

*কালজয়ী*

সভ্যতার উৎকর্ষ শুরু মানুষের মেধা, শ্রম, বুদ্ধি, আধ্যাত্মিকতা ও লেখনীর মাধ্যমে। ক্রম উন্নয়নের ধারায় শিক্ষা-ক্ষেত্রে কলমের কালীর রং কখনো কালো, কখনওবা সাদা। প্রাথমিক যুগে আবক্ষ শক্ত ভিত্তিতে (ব্লাকবোর্ডে) লিখতে ব্যবহৃত হত সাদা চক যা এখনো বিদ্যমান। বর্তমানে সাদা বোর্ডে কালো মার্কার কলম ও কালো বোর্ডে সাদা মার্কার কলম। কি-বোর্ডে সাদা-কালো অক্ষর বাটন নব প্রযুক্তির অবদান। Believes in the ultimate potential of Human Mind……

*কালজয়ী* › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাংলাদেশের নির্বাচন ও সাম্রাজ্যবাদী ষড়যন্ত্র

১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ৮:৫৫

গুপ্তচরবৃত্তি করে যুক্তরাষ্ট্র যে বিশ্বাসহীনতার পরিচয় দিয়েছে তা সন্ত্রাসবিরোধী লড়াইয়ে ক্ষতি বয়ে আনতে পারে। ব্রাসেলসের বৈঠকে একথা বলেছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) নেতারা। আমেরিকার সন্ত্রাসবিরোধী লড়াইয়ে বিপুল অর্থায়ন করে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। এটা তারা আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী আধিপত্য প্রতিষ্ঠায় সহযোগী হিসেবে যেমন করে তেমনি এখানে তাদের রাজনৈতিক স্বার্থও রয়েছে। তারা আমেরিকার অনুগত হয়ে বিশ্বে রাজনৈতিক ভাবে মোড়লীপনা তথা সুশীল ভাষায় যাকে বলে মীমাংসাকারী হতে চায়। এর কিছু নমুনা দেখেছি মিসরে সাম্রাজ্যবাদী সমর্থনপুষ্ট পক্ষে তাদের অকালতিতে। তারা বিশ্বব্যাপী রাজনৈতিক আধিপত্য প্রতিষ্ঠার জন্য যে পরিমাণ প্রাকৃতিক সম্পদ, অর্থ ব্যয় করছে তা সারা বিশ্বের মানুষের জাগতিক সমস্যা সমাধানে অনেক অগ্রগতি সাধন করতে পারত। কিন্তু ঐ যে অন্তরে অন্যদেরকে পদানত করার নেশা। এ এক ভয়ংকর নেশা! কিন্তু মনে হচ্ছে যেন কিছুটা ধাক্কা লাগছে যখন সাধের মিত্র যুক্তরাষ্ট্র তাকেও পুরোটা বিশ্বাস করে না। তাই ইউরোপীয় ইউনিয়নের উপরেও তাদের নজরদারি, গোয়েন্দাগিরি করতে হয়। ফলে তাদের স্বার্থের সম্পর্কও মাঝে মাঝেই সংকটে নিপতিত হয়। ইউরোপীয় ইউনিয়নের এই ঘোষণা আদতে কোন শক্ত পদক্ষেপ নয়। কেননা বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচনে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র ও পাশ্চাত্যের মোড়লরা ইতিমধ্যে ব্যাপক দৌড়ঝাপ করছেন। ফলে এটা কোন আশংকার বিষয় না যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন সন্ত্রাসবিরোধী লড়াই থেকে নিজেদের গুটিয়ে নেবে। বরং মিত্র যুক্তরাষ্ট্রকে গোয়েন্দাগিরি না করার ব্যাপারে অনুরোধ করাই এখানে মূল উদ্দেশ্য বলে বিবেচিত। বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে ড্যান মজিনা, উইলিয়াম হানা থেকে পঙ্কজ শরণ ও পশ্চিমা কূটনীতিকরা খুবই চিন্তিত। এর কারণ কি? বিশ্বে একমাত্র পরাশক্তি আমেরিকা!!! ‘র রাষ্ট্রদূত মজিনাকে ভারতে নিয়ে গিয়ে বুঝানো; ২০০৮ সালে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে হিলারির দৌড়ঝাপ, চিন্তা-ভাবনা এসবই এখনো বাংলাদেশের ইসলামপন্থীদের প্রতিকুলে। ইসলামপন্থীদের ব্যাপার আজকে দেশের জনগণমুখী না হয়ে সাম্রাজ্যবাদমুখী হয়ে গেছে।



কলামিস্ট ফরহাদ মজহার তার লেখায় বি.এন.পিকে ইসলামপন্থীদের রক্ষা করার ব্যাপারে যে দিকগুলো মোকাবেলা করা ও এর ভিত্তিতে লড়াই অব্যাহত রাখার ব্যাপারে পরামর্শ দিয়েছেন তা মানলে বি.এন.পি অন্তত ক্ষমতার প্রশ্নে ইতিবাচক ফললাভ করতে পারত। কিন্তু ইসলামপন্থীরা কি শুধুই পরগাছা হয়ে থাকবে নাকি স্বাধীনভাবে জনমুখী রাজনীতির মাধ্যমে ইসলামের কল্যাণকর ধারণা জনগণের সামনে উন্মোচন করবে তার উপর নির্ভর করছে এদেশে সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী আন্দোলন কতটা সফল হবে। তাই ইসলামপন্থীদেরকে তথাকথিত ভারত-মার্কিন বলয় থেকে বের হয়ে জনগণের পাশে শক্তভাবে দাঁড়ানোর বিকল্প তাদের কাছে নেই। এদেশের সাধারণ মানুষ বিদেশী তাঁবেদারি, আগ্রাসন, শোষণ, জুলুমের বিরোধী। কিন্তু তারা কোন ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালনকারী চিন্তা, মতাদর্শ ও পথ পাওয়ার ক্ষেত্রে অনেক পিছিয়ে আছে। আর এই সুযোগেই ভারত-মার্কিনি বলয়ের রাজনীতি তাদেরকে দুঃশাসনে নিপতিত করছে। সন্ত্রাসবিরোধী আধিপত্যবাদী কৌশল তেমনি একটি কৌশল। এটা অতীতে সাম্রাজ্যবাদীদের গৃহীত বিভিন্ন রাজনৈতিক আধিপত্যের ফর্মুলাগুলোর মধ্যে বর্তমানে চলমান একটি প্রকল্প যা কিনা শুরু হয়েছে ২০০১ সালের প্রশ্নবিদ্ধ টুইন টাওয়ার হামলার জুজুর ভেতর দিয়ে। তাই সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধ একাট্টা কোন বিষয় না। এটা সাম্রাজ্যবাদী আমেরিকার রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক যুদ্ধে সফলতার মাত্রাকে উন্নীত করার ক্ষেত্রে হাতিয়ার হিসেবে কাজ করে মাত্র। এই হাতিয়ার যখন কাজ করে না তখন তারা ভিন্ন নামে প্রবেশের চেষ্টা চালায়। তবে এর আগে লক্ষ্য স্থানে বিশৃঙ্খল পরিবেশ তৈরি জরুরী হয়ে দাড়ায়। যাতে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে নিজেকে উক্ত স্থানে গ্রহণযোগ্য করে তোলা যায়। এব্যাপারে অগ্রগতি মানেই হাতিয়ার হিসেবে সন্ত্রাসদমন প্রকল্পে অগ্রগতি শুরু। তাই সন্ত্রাসদমন প্রকল্পের সফলতার জন্য আরও অনেক চেষ্টা প্রচেষ্টা আমেরিকার নিজ স্বার্থেই দরকার হয়ে পড়ে।



বাংলাদেশের ব্যাপারে আমেরিকার আকাঙ্ক্ষায় আধিপত্য ভিন্ন উদ্দেশ্য নগণ্য। ঠিক যেমনটা রয়েছে ভারতের। ফলে দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতিতে ভারত কখনোই তার আধিপত্য প্রতিষ্ঠার নেশা ছাড়বে না। তার মধ্যেও সাম্রাজ্যবাদী চরিত্র থাকায় সেও নিজেকে পরাশক্তি হিসেবে দেখতে চায়। আবার আমেরিকাও চায় না বাংলাদেশের উপর তার নিয়ন্ত্রণ দুর্বল হয়ে যাক। বর্তমান বির্বাচন এবিষয়টাকে প্রমাণ করে। ফলে ভারত-মার্কিন তৎপরতা বাংলাদেশের নির্বাচনে এক শক্তিশালী সাম্রাজ্যবাদী প্রভাব তৈরি করার দিকেই আগাচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশে ভারতের প্রভাব আমেরিকার তুলনায় অগ্রে অবস্থান করে। এর ঐতিহাসিক কারণে রয়েছে শেখ মুজিব ও তার পরিবারের নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের পরে মুজিবের মুক্তির ব্যাপারে ভারতের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপ মুজিব পরিবারের কাছে ভারতকে আস্থাশীল করে। এছাড়া সপরিবারে মুজিব হত্যার পরে তার কন্যা শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দান বর্তমান রাজনৈতিক দল আওয়ামী লিগকে ভারতের কাছে বন্ধুত্বের পরিবর্তে নতজানু করতে আঞ্জাম দেয়। আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের বড় রাজনৈতিক দলগুলোর একটি হওয়ায় বাংলাদেশের উপর ভারতের সুস্পষ্ট প্রভাব রয়েছে। তাই বাংলাদেশের ব্যাপারে আধিপত্যের প্রশ্নে মার্কিনিদের ভারতের সাথে আলাপের প্রয়োজনকে সামনে নিয়ে আসে। এই আলাপ আলোচনা এই অঞ্চলে আধিপত্য প্রতিষ্ঠার সাথে সম্পৃক্ত। ভারত ও আমেরিকা উভয়ই চায় এই অঞ্চলে তার রাজনৈতিক আধিপত্য সুনিশ্চিত করতে। আবার ভারত আঞ্চলিক আধিপত্যের ব্যাপারে আম্রিকার তাঁবেদারি করতে চায় না। কিন্তু সে পরাশক্তির মর্যাদা অর্জনের খায়েশে আমেরিকার বিশ্বব্যাপী আধিপত্য প্রতিষ্ঠার প্রকল্পে নিজেকে আঞ্চলিক মিত্র হিসেবে সম্পৃক্ত করতে চায়। বাংলাদেশের উপর তার কতৃত্বপুর্ন নিয়ন্ত্রণ তাই সাম্রাজ্যবাদী আকাঙ্ক্ষা ব্যাস্তবায়নে আবশ্যক হয়ে পড়ে। এক্ষেত্রে সন্ত্রাসবিরোধী নামের আধিপত্যবাদী প্রকল্পে তার সম্পৃক্ত হতে কোন বাঁধা থাকে না। তাই আমেরিকা ভারতকে সন্ত্রাসবিরোধী প্রকল্পে আঞ্চলিক প্রতিনিধি হিসেবে চাইতেই পারে; যেহেতু উভয়ের চরিত্র একই। আর তা হল রাজনৈতিক আধিপত্য প্রতিষ্ঠার ভিত্তিতে অর্থনৈতিক স্বার্থ নিশ্চিত করতে সাংস্কৃতিক উপাদান আঞ্জাম দেওয়া। কিন্তু বাংলাদেশের জনগণ ও শাসকবর্গ তা কিভাবে নেয় সেটার উপর নির্ভর করে বাংলাদেশে ভারত-মার্কিন প্রভাব কতটা মাত্রা পরিগ্রহ করবে। বাংলাদেশের জনগণ একদা পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত ছিল। রাষ্ট্র হিসেবে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ব্রিটিশদের ইন্ধনে হিন্দু-মুসলিম তিক্ত পরিস্থিতি তৈরি করার কারনেই। আর একারণে পাকিস্তানের বাংলাদেশ অংশে ভারত প্রশ্নে সুখকর অনুভুতি বিদ্যমান ছিল না। বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্মে এই ভারতই আবার যে চেষ্টা-প্রচেষ্টা গ্রহণ করে তার কারণে পুর্ব পরিস্থিতি পরিবর্তিত হবার সুযোগ পায়। তাই যে অর্থে ভারত বিরোধিতা চলে আসছিল তার পুরোপুরি বিলুপ্তি ঘটেছে তাও বলা যায় না। ফলে পরস্পর বিরোধী ধারনার সমূহ শক্তি বাংলাদেশে বিদ্যমান। তাই আম্রিকান আধিপত্য একাট্টাভাবে এখানে জয়যুক্ত হতে বাঁধা পায়। বাংলাদেশের উপর আধিপত্যে ভারতের সহযোগিতার প্রশ্ন সামনে আনতে হয়। আর আম্রিকাও ভারতকে বাদ দিয়ে আধিপত্যের প্রশ্নে সফল হবার চিন্তা করতে পারে না। তাই ভারতকে বিভিন্ন ব্যাপারে ম্যানেজ করতে বিভিন্ন কূটনীতিকদের ছুটে যেতে হয় ভারতে। তখন বাংলাদেশের নির্বাচনে উভয়মুখী তৎপরতা রাজনৈতিক দলগুলোর উপর প্রভাব ফেলে। আর এটা সম্ভব হয় দলগুলোর দৃষ্টিভঙ্গীর জনবিচ্ছিন্নতা থেকেই। ভারত-মার্কিন বলয়াভূত হবার কারণে জনগণের আকাঙ্ক্ষা প্রত্যাখ্যাত হওয়াকেই তরান্বিত করে। ভারতের জনগণও তাদের আকাঙ্ক্ষা থেকে একইভাবে উপেক্ষিত থাকে। দাসত্ববিরোধী প্রচারণায় নিয়োজিত অস্ট্রেলিয়ার প্রতিষ্ঠান ওয়ার্ক ফ্রি ফাউন্ডেশনের (২০১৩) মতে, বর্তমান বিশ্বে প্রায় তিন কোটি মানুষ দাসত্বের জীবন কাটাচ্ছে এবং তাদের অর্ধেকই ভারতে রয়েছে। ভারতে ক্ষুধা, দারিদ্রে আত্মহত্যার হারও কম নয়। তবুও চাঁদে যাওয়ার প্রকল্পে ভাঁটা পড়ে না। নতুন নতুন ক্ষেপণাস্ত্রের উন্নয়নে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ব্যয় হ্রাস পায় না। শুধুমাত্র পরাশক্তি নামধারী আধিপত্য নিশ্চিত করায় সাধারণের প্রশ্ন উপেক্ষিত থেকে যায়। সন্ত্রাসবিরোধী নামের নতুন নতুন প্রকল্পে অংশগ্রহণ তখন আধিপত্যের প্রয়োজন হিসেবেই দেখা দেয়। ফলে বাংলাদেশের নির্বাচনে ভারতের প্রভাব বিস্তারের প্রশ্ন সাম্রাজ্যবাদিতার মাপকাঠিতে মার্কিন জোটের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়ে ওঠে।



আধিপত্য প্রতিষ্ঠার সাম্রাজ্যবাদী মাধ্যম হিসেবে সন্ত্রাসবিরোধী প্রকল্প ব্যাপক প্রশ্নের সম্মুখীন হলেও বাংলাদেশের দলগুলোর কাছে এখনো তা আগ্রহ উদ্দীপনা সৃষ্টিকারী একটি বিষয়। আর শাসকবর্গের কাছে তা বিরোধী পক্ষকে দমনের হাতিয়ার হিসেবেই ব্যবহৃত হয়ে এসেছে। ফলে জনগণ একে নতুন করে কিছু দেখছে না। সে পুরনো কার্যাবলিরই পুনঃসংঘটন। কিন্তু জনগণ বিগত শাসন থেকে সরে আসতে চাইলে অবশ্যই তার মূল্যায়নের উপর নির্ভর করবে কে পরবর্তিতে বাংলাদেশের শাসনযন্ত্রে অধিষ্ঠিত হবে। এব্যাপারে একটি দল এগিয়ে থাকলেও তার ভারত-মার্কিন বলয় ভেদের সক্ষমতার উপর তাদের ভাগ্য নির্ভর করছে। এক্ষেত্রে তোষামোদকারীদেরকে প্রশ্রয় না দেওয়াই তাদের জন্য মঙ্গল বলেই মনে হচ্ছে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.