নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

গবেষক, পাঠক ও লেখক -- Reader, Thinker And Writer। কালজয়ী- কালের অর্থ নির্দিষ্ট সময় বা Time। কালজয়ী অর্থ কোন নির্দিষ্ট সময়ে মানুষের মেধা, শ্রম, বুদ্ধি, আধ্যাত্মিকতা ও লেখনীর বিজয়। বিজয় হচ্ছে সবচেয়ে শক্তিশালী চিন্তার বিজয়।

*কালজয়ী*

সভ্যতার উৎকর্ষ শুরু মানুষের মেধা, শ্রম, বুদ্ধি, আধ্যাত্মিকতা ও লেখনীর মাধ্যমে। ক্রম উন্নয়নের ধারায় শিক্ষা-ক্ষেত্রে কলমের কালীর রং কখনো কালো, কখনওবা সাদা। প্রাথমিক যুগে আবক্ষ শক্ত ভিত্তিতে (ব্লাকবোর্ডে) লিখতে ব্যবহৃত হত সাদা চক যা এখনো বিদ্যমান। বর্তমানে সাদা বোর্ডে কালো মার্কার কলম ও কালো বোর্ডে সাদা মার্কার কলম। কি-বোর্ডে সাদা-কালো অক্ষর বাটন নব প্রযুক্তির অবদান। Believes in the ultimate potential of Human Mind……

*কালজয়ী* › বিস্তারিত পোস্টঃ

ড্যান মজিনার মাদ্রাসা ভ্রমন ও প্রাসঙ্গিক কিছু কথা

২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ৮:১২

মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান মজিনা ঝালকাঠির একটি মাদ্রাসা পরিদর্শন করেছেন। তিনি এমন এক সময় মাদ্রাসা ভ্রমন করলেন যখন দেশে জঙ্গিবাদ নিয়ে আলাপ-আলোচনা তুঙ্গে। মুসলিমদেরকে ঢালাওভাবে জঙ্গি হিসেবে তুলে ধরা হচ্ছে। বিশ্বব্যাপী তাদের উপর অব্যাহত দমন নিপীড়ন চলছে। মধ্য আফ্রিকা প্রজাতন্ত্রে মুসলিমদের গুলি করে মারা হচ্ছে। ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয়া হচ্ছে। মিয়ানমারে মুসলিমদের নাগরিকত্ব বাতিল করা হয়েছে। তাদের ঘরবাড়ি থেকে উচ্ছেদ করা হয়েছে। তাদের জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হচ্ছে। ভারতের কাশ্মীরে মুসলিমদের উপর পরিচালিত হত্যাযজ্ঞ কারও অজানা নয়। চেচনিয়াতে মুসলিম স্বাধীনতাকামীদের পাইকারি হারে হত্যা করেছে রাশিয়া। মার্শাল টিটো যেমন হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিলেন তৎকালীন যুগোস্লাভিয়ায়। বসনিয়া হার্জেগভিনাতেও মুসলিমদের উপর গনহত্যা হয়েছে। ইরাক-আফগানিস্তানের ড্রোনের হত্যার কাহিনী আপনারা নিশ্চয়ই জানেন। চিনের উইঘুর মুসলিমদের উপর চিনের দমনেতিহাস আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় ফলাও করে বেড়িয়েছে। ইতিহাসের সবচেয়ে বর্বরতম ও ন্যাক্কারজনক অধ্যায় হচ্ছে ফিলিস্তিনের নিরীহ নিপীড়িত মুসলিমদের হত্যার ইতিহাস। তাদের মানবাধিকার বলতে কোন কিছুই বিচার্য হিসেবে আসে না। মুসলমানদের আশ্রয়স্থল পাওয়া যাচ্ছে না। এমন এক সময় ড্যান মজিনার মাদ্রাসা ভ্রমন ব্যাপক প্রশ্নের উদ্রেক করেছে। তবে কি আমেরিকা ও মজিনা সাহেবরা মুসলমানদের হিতাকাঙ্ক্ষী হিসেবে আত্ম-প্রকাশ করলেন নাকি এর অন্যকোন কারন আছে ? মজিনারা স্বীয়স্বার্থসিদ্ধিতে মুসলিমদের ব্যবহার করতে চান কিনা সে প্রশ্নও রয়েছে।



একটু ইতিহাস ঘাঁটলে আমরা দেখি, পৃথিবী যখন ক্ষমতার আধিপত্যে সোভিয়েত ও মার্কিন ব্লকে বিভক্ত ছিল তখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার বিরুদ্ধে মুসলিমদের ব্যবহার করার চেষ্টা করেছে। এক্ষেত্রে তারা প্রোপাগান্ডা চালাত যে , বামপন্থীরা নাস্তিক-মুরতাদ ও ধর্মদ্রোহী। একাজে তারা দরবারী আলেমদের ব্যবহার করত। রাশিয়াও এবিষয়টা মোকাবেলা করতে না পেরে ভেঙ্গে যায়। কিন্তু পরিস্থিতি পাল্টে গিয়ে তা এখন ইসলাম ও মুসলিমদের উপর বর্তেছে। সেই সূত্রেই মজিনাদের মাদ্রাসা ভ্রমন আধিপত্যের নতুন নকশা তৈরি করছে একথা বললে ভুল হবে না। কেউ কেউ বলতে পারেন, যদি ইসলাম ও মুসলমানদের সাথে দ্বন্দ্বটা হয় তবে মাদ্রাসা ভ্রমন কেন? এরও কারন রয়েছে। আর তা হল, বাংলাদেশে যাতে কোন সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী আন্দোলন তৈরি না হয় তার জন্য পটভূমি তৈরি করা। কিছু দিন আগে কওমি মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষকেরা ধর্মীয় ইস্যু নিয়ে আন্দোলনের যে রুপ দেখিয়েছে তা আমেরিকার কাছে নতুন বার্তা দেয়। আর তা হল এই কওমি মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষকদের একটা শক্তি হিসেবে দেখছে আমেরিকা। শিক্ষাব্যবস্থার মাধ্যমে কওমি মাদ্রাসার ছাত্ররা আলাদা পাঠ্যক্রম পড়ে সামাজিক হচ্ছে। তাদের সমাজে একটা স্বচ্ছ অবস্থান আছে। আর তা হল তারা আল্লাহর প্রতি ভয় থেকে দুর্নীতিতে জড়িত হন না। অন্যায় কাজকে তারা তাদের জন্য হারাম বলে মনে করেন। ফলে মজিনাদের কাছে এটা আতংকের বিষয় যে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধি হিসেবে তাদের সমীহ না করলে বাংলাদেশে সাম্রাজ্যবাদবিরোধী আন্দোলন গড়ে উঠতে পারে। তাই আগে থেকেই সাম্রাজ্যবাদবিরোধীতার এই বীজকে নষ্ট করে দেওয়া তাদের নিজেদের জন্যই দরকারি।



অনেকেই আমাকে এব্যাপারে সাম্প্রদায়িক বলে আক্রমন করতে চাইবেন। কিন্তু মানবাধিকারের প্রশ্ন কখনই সাম্প্রদায়িকতা দিয়ে বিচার করা যাবে না। মানুষের মৌলিক মানবাধিকারের প্রশ্ন বিচার করতে হবে তার সত্তা দ্বারা। আর তা হল, মানুষ মানুষের উপর স্বাভাবিকভাবেই কল্যানকামী। এই কল্যানের প্রশ্ন শুধুমাত্র অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার প্রশ্ন নয় তার কর্মপরিধির মুল্যায়নের সাথে সম্পর্কিত।

শিক্ষাখাতে বিশ্বব্যাংক ২৬.৫ কোটি ডলার ঋন দিচ্ছে। আমেরিকা বিশ্বব্যাংকের সবচেয়ে বেশি ঋনের যোগানদাতা। এ কারনে বিশ্বব্যাংকের উপর আমেরিকার যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে। তাই এ কথা নিঃসন্দেহে বলা যায়, আমাদের মত তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে বিশ্বব্যাংকের ঋন সাহায্য মানেই শিক্ষাব্যবস্থায় আমেরিকান আধিপত্য সুপ্রতিষ্ঠিত হওয়া। তারা চায় আমাদের তরুন প্রজন্ম মার্কিন দাসত্ব শৃঙ্খলে বন্দি হোক। এতে করে মেধাবী প্রজন্ম আমেরিকা সহ পাশ্চাত্যের দেশগুলোতে পাড়ি জমাবে। আর যারা বাকি থাকবে তারা মার্কিনিদের দাসত্বকে মেনে নিয়ে তেল, গ্যাস, বন্দর ব্যবহার ও ঘাঁটি স্থাপনের সুযোগ করে দিবে। এই হল শিক্ষা ব্যবস্থায় মার্কিনি সাহায্যের চাল। যা আমরা বুঝতে ব্যর্থ হচ্ছি বিধায় তারা আমাদের উপর জেকে বসছে। কখনো টিকফা চুক্তি হয়ে কখনো সন্ত্রাস দমন চুক্তি হয়ে, কখনবা মার্কিন রাষ্ট্রদূতদের সাধু হিসেবে প্রচার অভিযানের মাধ্যমে। তাদের কাজ হল ঋনের বিপরীতে শর্ত আরোপ করা। যার বোঝা বইবে জনগন। তাই আমাদের এ কথা ভুললে চলবে না যে, আম্রিকা তার আধিপত্য বিস্তারের জন্য যা করার তাই করবে। বিশ্বব্যাংককে দিয়ে পরামর্শ দেওয়াবে, ভারতকে ম্যানেজ করাবে, প্রয়োজনে অবরোধ আরোপ করবে। আর যা কিছু দরকার তার সবই করবে। অর্থাৎ কওমি মাদ্রাসায় ড্যান মজিনার ভ্রমন আর শিক্ষাব্যবস্থায় বিশ্বব্যাংকের ঋন একইসুত্রে গাঁথা। আর তা হল মার্কিন সাম্রাজ্যবাদীদের অনুগত ও পদলেহি দালাল তৈরি করা। আমেরিকা কখনই চায় না আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের বিরোধী কোন ছাত্র বের হোক। একইভাবে কওমিতেও তারা এমনটি চায়।



এক্ষেত্রে আমাদের করনীয় কি? আমরা যে কাজ করতে হবে তা হল, জনমত গঠন। মার্কিনিদের অন্যায় অপতৎপরতার বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহন করা। আর এখানে ব্যক্তি থেকে ব্যক্তি এবং ব্যক্তি থেকে সমাজ- এপ্রক্রিয়ায় যোগাযোগ কাজ চলতে পারে। পাশাপাশি আগ্রাসী রাষ্ট্র গুলোর সাথে জনসংযোগ হ্রাস করাতে পারি। যাতে করে ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার করা সম্ভব না হয়। নিপীড়িত রাষ্ট্র গুলোর সাথে আন্তঃন্সম্পর্ক বাড়াতে পারি। তখন আমরা বিশ্বে ইতিবাচক ভাবমূর্তি নিয়ে মাথা উঁচু করে দাড়াতে পারব।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.