![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সভ্যতার উৎকর্ষ শুরু মানুষের মেধা, শ্রম, বুদ্ধি, আধ্যাত্মিকতা ও লেখনীর মাধ্যমে। ক্রম উন্নয়নের ধারায় শিক্ষা-ক্ষেত্রে কলমের কালীর রং কখনো কালো, কখনওবা সাদা। প্রাথমিক যুগে আবক্ষ শক্ত ভিত্তিতে (ব্লাকবোর্ডে) লিখতে ব্যবহৃত হত সাদা চক যা এখনো বিদ্যমান। বর্তমানে সাদা বোর্ডে কালো মার্কার কলম ও কালো বোর্ডে সাদা মার্কার কলম। কি-বোর্ডে সাদা-কালো অক্ষর বাটন নব প্রযুক্তির অবদান। Believes in the ultimate potential of Human Mind……
লেখাঃ ২৩ এপ্রিল, ২০১৬
শ্রম শোষণের ভীতে গড়া অট্টালিকার পাহাড়
তারই ধ্বসের নিচে রয় পড়ে রয় ভুখা নাঙ্গা শ্রমিকের হাড়
একবিংশ শতাব্দীতে এসে বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় মানবসৃষ্ট দুর্যোগ রানা প্লাজা ট্র্যাজেডি। আধুনিকতা, সম্প্রসারণবাদ উপনবেশিক জামানায় উন্নয়ন কাঠামোর প্রসারের নামে কায়েম করেছিল নির্ভরশীল উৎপাদন কাঠামো। মানবিকতা, শ্রমের বিষয় নিষ্ঠুর বিচারে নির্নিত হত ওয়ারলর্ড বা প্রভু শ্রেণীর কাছে। কেন্দ্র ও পেরিফেরির শ্রমিকেরা ক্ষণকালের দাস ব্যবস্থা থেকে নিক্ষিপ্ত হয়েছিল শ্রম শোষণের নবতর মরীচিকায়। উত্তর-আধুনিক উন্নয়ন কাঠামো, নব্যউদারবাদী নিয়ন্ত্রন ব্যবস্থা উপনিবেশিক জমানার ক্ষত সারাতে তো পারেই নি, বরং নতুন নতুন দুর্যোগ সৃষ্টির মাধ্যমে সভ্যতাকে বিপর্যস্ত করে চলেছে। নিয়ত পরিবর্তনশীল নবতর উৎপাদন ব্যবস্থা শ্রম শোষণের বিকারগ্রস্থ অবস্থা থেকে মুক্ত না হওয়ার দরুন ভ্রষ্ট পুঁজির নেশা মানবসৃষ্ট দুর্যোগের ভয়াবহ রুপ ধারন করছে। প্যারিসে ১৩০ মানুষের মৃত্যুতে যেখানে দুনিয়া জুড়ে পরিবর্তনের ডাক আসে; ভবন ধ্বসে প্রায় সাড়ে ১১ শত মানুষের মৃত্যু পারে না একটি ইনসাফ ও মর্যাদাপুর্ন উৎপাদন কাঠামো ও শ্রমিকের নায্য মুজুরি নিশ্চিত করতে। সভ্যতার হাজার বছরের ইতিহাসে এর চেয়ে বড় অসভ্যতামী আর কি হতে পারে? তারা শ্রমিক। তারা মানুষের মধ্যে সবচেয়ে কম মূল্যবান! তবে মূল্যবান কারা? নিষ্ঠুরতার মধ্য দিয়েও ভ্রষ্ট পুঁজি ও ত্রুটিপুর্ন উৎপাদন কাঠামোয় পরিবর্তনের সম্ভাবনা ফিকে হয়ে যায় যখন রাজনৈতিক কাঠামো স্থানীয় বনিকের ন্যায় সংস্থামুখী ও আগ্রাসী রাষ্ট্রের করুণার উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে।
প্রাক-আধুনিক সমাজ ব্যবস্থায় ভূমিদাসেরা শ্রমিকের ন্যায় ভূস্বামী বা সামন্তপ্রভুর জমিতে নিয়োজিত থাকার মধ্য দিয়ে একটি অমানবিক ও শোষণমূলক উৎপাদন কাঠামো বজায় রেখেছিল একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত। বর্তমান পুঁজিবাদী উৎপাদন কাঠামোয় শ্রমিক শোষিত, কৃষক শোষিত, শোষিত নিপীড়িত বঞ্চিত মানুষের প্রতিবাদের ভাষা। কারখানায় শ্রমিক শোষিত, অফিসে কর্মচারি শোষিত, ফুটপাতে নাগরিক পরিচয়হীন মানুষ অভুক্ত, ঘুমন্ত। ফুলবাড়ি, বাশখালি, তাজরিন, স্পেক্টার্ম, রানা প্লাজা একই আহুত কান্নার বাষ্পীয় বেদনায় রাশভারী হয় শ্রমিক সাধারনের ঘর। তবু টিকে থাকে অমানবিক ও শোষণমূলক উৎপাদন কাঠামো। শত শত শ্রমিকের লাশের উপর শ্রম শোষণের বিকার প্রলয় উল্লাসে আবার তার কর্মব্যস্ততা শুরু করে।
ইতিহাস নিপীড়িতের কষ্টে ভরা নির্মম-নিষ্টুর। সমাজের ইতিহাস হল অতি অনুন্নত ও বর্বরতা থেকে উন্নত ও সভ্যতা উত্তীর্ন মনুষ্যদশা পর্যন্ত। যখন প্রকৃতি মানুষকে নিয়ন্ত্রন করত; মানুষ ছিল পরাধীন, নিপীড়িত, অত্যাচারিত। মানুষ উৎপাদন পদ্ধতি আবিষ্কার করে, কলাকৌশল দিয়ে সৃষ্টিশীলতা দিয়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে স্বাধীন সত্তারুপে। মানুষ সভ্যতার বিকাশে চেষ্টা প্রচেষ্টা দিয়ে প্রভূত উন্নয়ন সাধন করে। সেই মানুষই আবার অপরাপর মানুষকে পরাধীন করে, নিপীড়িত করে, শোষণের অমানবিক শিকারে পরিণত করে। সভ্যতার বিকাশ করতে গিয়ে উন্নয়নের নামে মানুষ অপরাপর মানুষকে দুর্দশা ও বঞ্চনার নিকৃষ্ট আঁধারে নিক্ষিপ্ত করার মধ্য দিয়ে নিজেকে অসভ্য প্রমানিত করে। সভ্যতা মানেই মানুষের ইতিবাচক পরিবর্তন; ইনসাফ ও মর্যাদাপুর্ন জীবনব্যবস্থা ও উন্নয়ন। কিন্তু মানুষ বন্য বা বর্বরদশাকে পরিত্যাগ করতে পারে নি। উন্নয়নের নামে, আধুনিকতার নামে বর্বরদশা শ্রম শোষণের বিকারগ্রস্থতা অতিক্রম করে হাজারো শ্রমিকের লাশের উপর দিয়ে। ত্রুটিপূর্ন উৎপাদন কাঠামো ভালগার পুঁজির সম্ভ্রমই রক্ষা করে চলেছে। ভ্রষ্টতা শ্রমিকের মৃত্যুদশা ক্ষণিকের যাত্রা বিরতিতে আবার নষ্টামিতেই ফিরে যায়।
শ্রমিকেরা এখনো দেশের চালিকা শক্তি। অথচ রাষ্ট্রের সেই চালিকা শক্তি শ্রমজীবী মানুষ আজ নির্যাতিত-নিপীড়িত শোষিত-বঞ্চিত ও পদদলিত। শ্রমজীবী মানুষরা আজ তাদের ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত। কৃষক-শ্রমিক ও মেহনতি মানুষকে শোষণ করে একটি মহল অবৈধ টাকার পাহাড় গড়ে তুলছে। ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল বাংলাদেশের ৪০ লক্ষ গার্মেন্টস শ্রমিকসহ শ্রমজীবী মানুষের জন্য এক ভয়াবহ শোক ও বেদনার দিন। সাভারে রানাপ্লাজা ভবন ধসে ১১৩৭ জন শ্রমিক মৃত্যুবরন করেন। ২৫০০ শ্রমিক আহত হয়, ৩০০ শ্রমিক নিখোঁজ হয়ে যায়। মালিকের অবহেলায় গার্মেন্টস শিল্পে সারা দুনিয়ায় এত বড় হত্যাযজ্ঞ আর হয়নি। রানা প্লাজার ঘটনায় নিহত ও আহতদের সবাই এখনো তাদের ক্ষতিপুরণ পায়নি। এখনো অনেক নিখোঁজ শ্রমিকের সন্ধান পায়নি তাদের স্বজনরা। কেন পাঁচতলা ভিত্তি আর ডোবার উপর রানা প্লাজা নির্মিত হল এবং কীভাবে তা ৯ তলা হলো? এসবের জন্য দায়ি কারা? তাদের কী শাস্তি হলো? এসব প্রশ্নের কোন উত্তর নেই। বাংলাদেশের শ্রমিকদের শ্রম যেমন সস্তা, জীবন তেমনি মূল্যহীন মালিক শ্রেণী ও রাষ্ট্রের কাছে।
প্রশাসনিক ব্যবস্থা ও স্থানীয় ভালগার রাজনৈতিক অবস্থা উৎপাদন কাঠামোর ত্রুটি সারিয়ে তুলতে পারেনি। পারে নি শ্রমিকের জন্য নিরাপদ কর্মপরিবেশ ও সুষ্টু বেতন কাঠামো নিশ্চিত করতে। কোন সন্ত্রাসী হামলা বা ভূমিকম্প রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির জন্ম না দিলেও সস্তা শ্রমের এই দেশে শ্রমিক উপেক্ষিত তার ন্যায্য পাওনা থেকে। রাস্তায় দাড়িয়ে মার খায় শ্রমিক। কোম্পানি মারে ছাঁটাই করে বেতন কম দিয়ে না দিয়ে। তবুও উৎপাদন কাঠামোর গুনগত পরিবর্তন হয় না। সভ্য প্রতিবাদের ভাষাও উপেক্ষিত। উপেক্ষিত শ্রমিক, উপেক্ষিত তার প্রতিবাদের ভাষা- এ এক সর্বনাশা খেলা। জীবন যেখানে দ্রোহের প্রতিশব্দ মৃত্যুই সেখানে শেষ কথা নয়। তবুও জীবন জাগে জীবনের প্রয়োজনে। প্রিয় মানুষগুলোর মুখে একমুঠো অন্ন, এক চিলতে হাসি তুলে দিতে শোষণের বিকারগ্রস্থতার মধ্যেই জীবন কর্মচঞ্চল হয়। তবু উপরতলার দিল কি দয়া হয় না।
০৭ ই এপ্রিল, ২০১৭ সকাল ৭:৩০
*কালজয়ী* বলেছেন: মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ.....
©somewhere in net ltd.
১|
০৬ ই এপ্রিল, ২০১৭ রাত ১১:৩২
চাঁদগাজী বলেছেন:
মানুষ প্রাণ দিয়েছিলেন ১৯৭১ সালে, কিন্তু ১৬ই ডিসেম্বর কমবুদ্ধিমান অদক্ষদের হাতে চলে গেছে দেশ।