নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

গবেষক, পাঠক ও লেখক -- Reader, Thinker And Writer। কালজয়ী- কালের অর্থ নির্দিষ্ট সময় বা Time। কালজয়ী অর্থ কোন নির্দিষ্ট সময়ে মানুষের মেধা, শ্রম, বুদ্ধি, আধ্যাত্মিকতা ও লেখনীর বিজয়। বিজয় হচ্ছে সবচেয়ে শক্তিশালী চিন্তার বিজয়।

*কালজয়ী*

সভ্যতার উৎকর্ষ শুরু মানুষের মেধা, শ্রম, বুদ্ধি, আধ্যাত্মিকতা ও লেখনীর মাধ্যমে। ক্রম উন্নয়নের ধারায় শিক্ষা-ক্ষেত্রে কলমের কালীর রং কখনো কালো, কখনওবা সাদা। প্রাথমিক যুগে আবক্ষ শক্ত ভিত্তিতে (ব্লাকবোর্ডে) লিখতে ব্যবহৃত হত সাদা চক যা এখনো বিদ্যমান। বর্তমানে সাদা বোর্ডে কালো মার্কার কলম ও কালো বোর্ডে সাদা মার্কার কলম। কি-বোর্ডে সাদা-কালো অক্ষর বাটন নব প্রযুক্তির অবদান। Believes in the ultimate potential of Human Mind……

*কালজয়ী* › বিস্তারিত পোস্টঃ

ফিলিস্তিন ও মধ্যপ্রাচ্য নিয়ে ট্রাম্পের Deal Of The Century\' র অন্তর্নিহিত রহস্য!!

০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০২০ দুপুর ১:০৯

ট্রাম্পের প্রস্তাবনাঃ
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সম্প্রতি Deal Of The Century বা ' শতাব্দী চুক্তি ' ঘোষণা করেছেন। ঘোষণায় তিনি শান্তি, উন্নতি এবং ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনিদের জন্য উজ্জ্বল ভবিষ্যতের প্রস্তাবনা দিয়েছেন। তিনি বলেন, আমার লক্ষ্য হচ্ছে উভয় পক্ষের জন্য উইন - উইন সুযোগ উপস্থাপন করা। ফিলিস্তিনের সামনে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের সুযোগ উত্থাপন করা। হামাসের ক্ষতিকর তৎপরতা বন্ধ করা। ফিলিস্তিনের নিকট থেকে জুইস স্টেটের স্বীকৃতি নিশ্চিত করা। এই চুক্তি ফিলিস্তিনিদের জন্য স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র অর্জনের এক ঐতিহাসিক সুযোগ। বিগত ৭০ বছরের স্বল্প অগ্রগতিতে এই চুক্তি তাদের জন্য হতে পারে শেষ সুযোগ। হোয়াইট হাউসে এক ঘোষণায় তিনি এও বলেন, সবাই জানে আমি ইসরায়েলের জন্য অনেক কিছু করেছি। জেরুজালেমে মার্কিন দূতাবাস স্থাপন, গোলান হাইটসের (আরবদের নিকট থেকে ইসরায়েল যুদ্ধের মাধ্যমে দখল করে) স্বীকৃতি প্রদান এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইরানের সাথে পারমাণবিক চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসা। তিনি বলেন, ফিলিস্তিনিদের টাকা নেই। তাদের যা দরকার তা হচ্ছে টাকা। আমরা তাদের অর্থনৈতিকভাবে সাহায্য করতে চাই।

ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়া:

ইসরায়েলের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ট্রাম্পের প্রস্তাবনার সম্পর্কে বলেন, Deal Of The Century হচ্ছে এই শতাব্দীর অন্যতম সুযোগ। আমি নিশ্চয়তা দিচ্ছি ইসরায়েল এই সুযোগ হাতছাড়া করবে না। এছাড়া ট্রাম্প শতাব্দী পরিকল্পনা নিয়ে নেতানিয়াহুর প্রধান রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী ইসরায়েলের কেন্দ্রীয় ডান নীল ও সাদা দলের নেতা বেনি গ্র্যান্টজ এর সাথে আলোচনা করেন। বেনি গ্র্যান্টজ কে আগামী এপ্রিলের নির্বাচনে ইসরায়েলের সম্ভাব্য প্রধানমন্ত্রী মনে করা হচ্ছে। বেনি গ্র্যান্টজ বলেন, "আমি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এর সাথে এক গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যতিক্রমধর্মী আলোচনা করেছি। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প হচ্ছেন ইসরায়েলের সত্যিকারের সাহসী ও প্রমানিত বন্ধু। আমরা ইসরায়েলের ভবিষ্যত্ ও নিরাপত্তা নিয়ে আলোচনা করেছি।" ফিলিস্তিনে অবৈধ বসতিতে বসবাসরত ইহুদীরা ঐতিহাসিক প্যালেস্টাইন রাষ্ট্রের বিষয়ে বিশ্বাস করেন না। তারা দ্বি রাষ্ট্র সমাধানের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া জানান।

ফিলিস্তিন ও আরবদের প্রতিক্রিয়া:

ট্রাম্পের Deal Of The Century' প্রস্তাবনা অনুষ্ঠানে ফিলিস্তিন কিংবা আরব বিশ্বের কোন গুরুত্বপূর্ণ নেতা উপস্থিত ছিলেন না। ইসরায়েলের প্রতিবেশী মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর কোন সম্মতি ছিল না। ফিলিস্তিনের রাজনৈতিক নেতারা এই শতাব্দী চুক্তিকে অসলো চুক্তি ও ইহুদী ফিলিস্তিন শান্তি চুক্তির জন্য ক্ষতিকর হিসেবে চিহ্নিত করেন। ফিলিস্তিনের অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস ট্রাম্পের চুক্তি প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি বলেন, "জেরুজালেম শহর বিক্রির জন্য নয়, আমাদের অধিকার বিক্রির জন্য নয়। তোমাদের (ইহুদীদের) ষড়যন্ত্রের চুক্তি পাশ হবে না।"

.সহস্রাধিক গাজাবাসী এই চুক্তির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেন। লেবানন ও মিসরে ট্রাম্পের শতাব্দী চুক্তির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেছে। আরব লীগ বলেছে, This is not a peace, this is scandal and fraud of the century.

ফিলিস্তিনের ইসলামী প্রতিরোধ শক্তি ও ইরানের অবস্থান:

ফিলিস্তিনের ইসলামিক জিহাদ নেতা কাদের হাবিব বলেন, ফিলিস্তিনিরা ট্রাম্পের চুক্তির ষড়যন্ত্রে এক ইঞ্চি ভূমির উপর অধিকার ত্যাগ করবে না। তিনি দাবি করেন, “জেরুজালেম ইসলামিক শহর। এর ভূমি, নদী থেকে সমুদ্র ফিলিস্তিনিদের। "Deal of The Century" অবশ্যই ব্যর্থ হবে। আমরা অধিকার আদায়ে প্রতিরোধ অব্যাহত রাখব। কখনোই অবৈধ দখলদার ট্রাম্প রেজিমের কাছে আত্মসমর্পণ করব না”।

ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস Deal Of The Century" এর বিরুদ্ধে আট দফা প্রস্তাব দিয়েছে। তারা জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের এই তৎপরতার বিরুদ্ধে। হামাস বলেছে, হাইফা, জাফফা ও আক্রে থেকে জ্যায়নিস্ত অবৈধ বসতি স্থাপনকারীদের বিরুদ্ধে লড়াই অব্যাহত রাখবে।

ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের কুদস ফোর্স লেবাননের হিজবুল্লাহর পাশাপাশি ফিলিস্তিনের ইসলামী প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের সাথেও কাজ করছে। কুদস ফোর্স Deal Of The Century" এর সমালোচনা করেন ও যারা ইহুদী দখলদারদের বিরুদ্ধে লড়াই করছে তাদেরকে প্যালেস্টাইনি বন্ধু বলে সম্বোধন করে। আরব দেশ থেকে যারা ট্রাম্পের শতাব্দী পরিকল্পনার সহযোগী হয়েছে তাদেরকে বিশ্বাসঘাতক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। তেহরান প্যালেস্টাইন ও প্রতিবেশী দেশগুলোতে ট্রাম্পের শতাব্দী পরিকল্পনার বিরুদ্ধে সমর্থন বৃদ্ধির চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। ইরানের প্রেসিডেন্ট রুহানি "Deal Of The Century" কে বলেন, "Foolish Attempt and Most Despicable Plan of The Century".

বিশ্লেষণ:
ট্রাম্পের তথাকথিত শতাব্দী প্রস্তাবনা চুক্তি আসলে কোন চুক্তি নয়। কেননা চুক্তির জন্য প্রধানত দুইটি ভিন্ন পক্ষের সম্মতি প্রয়োজন হয়। এই চুক্তির মানে হল ফিলিস্তিনিদের সব অধিকার ত্যাগ করা। ইসরায়েল কতৃক অবৈধ ভাবে দখলকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের দাবি ত্যাগ করা। চুক্তি ঘোষণার অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ট্রাম্পের অনুগত সেনাবাহিনীর অফিসার, জুইশ আমেরিকান কমিউনিটির ঊর্ধ্বতন নেতৃবৃন্দ এবং ওয়াশিংটনের প্ৰ- ইসরায়েলি ইহুদী লবি ও বেশসংখ্যক ইহুদীদের পবিত্র ভূমির দাবিকারী ইহুদী ধর্মযাজক। চুক্তিটা হয়ে পড়েছে এক পাক্ষিক। কেননা ফিলিস্তিনের গাজাবাসী এই চুক্তিকে প্রত্যাখ্যান করেছে। তারা মনে করছে এই চুক্তি সমর্থন করা ফিলিস্তিনের জন্য লজ্জাজনক। ট্রাম্পের লজিক তারা গ্রহণ করছে না।

বর্তমানে ফিলিস্তিনের জমি জবরদখল করছে ইসরায়েলের ইহুদী প্রশাসন। ফলে ফিলিস্তিনের বিভিন্ন অংশের মধ্যে সরাসরি কোন যোগাযোগের পথ নেই। ইসরায়েলি বসতি ও রাস্তার মাধ্যমে ফিলিস্তিনিদের যোগাযোগের পথ ছিন্ন। ফিলিস্তিনিদের রাজনৈতিক অধিকারের স্বীকৃতি নেই। ভৌগলিক বিভিন্ন অসম্ভব পরিস্থিতি বিদ্যমান সেখানে। একটা স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্য দরকার সার্বভৌম নিয়ন্ত্রণ সক্ষমতা। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে ফিলিস্তিনি অঞ্চলে কার্যত কোন সার্বভৌম নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। ফলে ট্রাম্পের স্বাধীন ফিলিস্তিনের প্রস্তাব আদতে একধরনের রাজনৈতিক ছলনা।

ট্রাম্পের শতাব্দী চুক্তি প্রস্তাবনায় প্রধানত প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু প্রশাসনিক ভাবে উপস্থিত। এই দুই নেতার বিরুদ্ধে স্ব স্ব দেশে দুর্নীতি, ক্ষমতা অপব্যাবহার ও ইম্পিচমেন্টের তৎপরতা চলছে। ট্রাম্পের বিরুদ্ধে সিনেটে চলছে ইম্পিচমেন্টের প্রস্তুতি। আর নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে ঘুষ, প্রতারণা ও একগাদা দুর্নীতির সম্পৃক্ততার অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে।

ট্রাম্পের রাজনৈতিক প্রস্তাবনায় ইসরায়েলের মধ্যে সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে রাজনৈতিক ঐক্য লক্ষনীয়। ফিলিস্তিন ও আরবদের প্রশ্নে ইহুদীদের রাজনৈতিক ভেদাভেদ ঘুচে গেছে। ইহুদী কোন পক্ষই এই চুক্তির সমালোচনা করেনি। ফিলিস্তিন ও আরব মুসলিম নেতাদের অনুপস্থিতি মূলত এটাই প্রমাণ করে যে, এই চুক্তিতে ইসরায়েল নিঃসন্দেহে লাভবান হবে। ইসরায়েলি নেতাদের চুক্তির পক্ষে উৎসাহী বক্তব্যের প্রভাব পড়বে নতুন নতুন ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড জোরপূর্বক ইহুদী প্রশাসন কর্তৃক ইসরায়েলের অন্তর্ভুক্ত করনে যা নেতানিয়াহু সরকার বর্তমানে চলমান রেখেছে। ফলে ট্রাম্পের চুক্তি প্রস্তাবের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, নতুন নতুন ইহুদী বসতি স্থাপনের মাধ্যমে পুরো পশ্চিম তীর ইসরায়েলের অন্তর্ভুক্তকরণ ও পবিত্র জেরুজালেম শহর পুরোটা দখল করে ইসরায়েলের রাজধানী ঘোষণা।

দুই রাষ্ট্র সমাধানের কোন বিষয় ট্রাম্পের শতাব্দী পরিকল্পনার মুখ্য উদ্দেশ্য নয়। মূলত সমগ্র ফিলিস্তিন ভূখণ্ডে ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা ও জেরুজালেম কে ইসরায়েলের অবিভক্ত রাজধানী হিসেবে ইহুদীদের হাতে তুলে দেওয়াই ট্রাম্পের উদ্দেশ্য। এছাড়া ট্রাম্পের রাজনৈতিক উপদেষ্টা (মেয়ের জামাই) একজন ইহুদী। ফলে ট্রাম্প মূলত ইহুদীদের জন্য মুসলিমদের বিরুদ্ধে লড়ছেন যা তার শতাব্দী পরিকল্পনার ঘোষণার দিন দেওয়া বক্তব্যে স্পষ্ট।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৪:০৩

রাজীব নুর বলেছেন: ট্রাম্পকে কি বাংলাদেশে কিছু দিনের জন্য দাওয়াত দিয়ে আনা যায় না?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.