নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মুজাহির রুমেন

আজ আমার মন ভাল নেই। সময় আর অসময়ের আধো আলো

রুেম৭৮৬

সত্য সমাগত অসত্য বিদুরিত সত্যের জয় হবেই

রুেম৭৮৬ › বিস্তারিত পোস্টঃ

জাল স্বপ্ন স্বপ্নের জাল

১৩ ই জানুয়ারি, ২০১০ রাত ৯:৫৭

কবি অনন্ত জাহিদ আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন চির অজানার দেশে। সেখানে এখন বসন্ত না গ্রীষ্ম বহমান আমরা জানিনা। অনেক জানতে ইচ্ছে করে ! কথা, চিন্তা আর চেতনায় সর্বদা স্বচ্ছ, সুচি-শুভ্র কবিকে আমরা হারিয়ে যে সঙ্কটে পড়েছি তা অপূরনীয়। কবিকে যারা দূর থেকে চিনতেন, তাদের কারো কারো মুখে শুনেছি ‘অনন্তের মৃত্যু এক নীরব প্রতিবাদ’। আমার লেখা সেই প্রতিবাদ প্রসঙ্গে।



কবি অনন্ত জাহিদ সমাজের বিদ্যমান সমস্যা নিয়ে গভীরভাবে ভাবতেন। কারো পোষাক খুলে নগ্ন দেহ দেখানো আর কারো একের পর এক পোষাক পড়ে রূপ পরিবর্তনের চেষ্টা- কবিবে ভাবনার গহীনে ঠেলে দিতো। নোংরা আর দুর্গন্ধময় পোষাকে স্বচ্ছতা আর শুভ্রতার বিজ্ঞাপণ কবির স্বপ্নে যে আঘাত করতো- তা ছিল অসহ্য ! সত্যকে চিৎকার করে বলার প্রবল ইচ্ছা নিয়েও খুঁজে পাননি সত্যকে। সত্যের ব্যাখ্যা যারা ঘোষণা করেন কবি গভীরভাবে চিনতেন তাদের। কবি চিনতেন স্বপ্ন চোরদের। যারা প্রতিবেশ দুষনীয় নাইলনের নিন্মœ মানের সুতোয় স্বপ্ন বুনে স্বর্ণ স্বপ্ন বলে বেচে দিতেন সাধারনের মাঝে। তবু খুঁজতেন প্রকৃত স্বর্ণ সুতোয় বোনা স্বপ্নের জাল। বারবারই হতাশ হয়েছেন। বহুবার জাল স্বপ্ন কিনে হাতাশার গহীনে ডুবেছেন। সাঁতার কেটেছেন কুলের খোঁজে।



কবির কাছের মানুষদের অনেকেই আন্তরিকতা, স্বচ্ছতা ও স্বপ্ন বোনার ব্যস্ততাকে নির্বুদ্ধিতা মনে করতেন। এক হাটে কিনতেন আরেক হাটে বেচতেন কবিকে। আবার মৌসুম বুঝে রাখি পণ্য হিসেবে কেউ কেউ মজুদ করার চেষ্টা যে করেননি- তা বলা যায়না। কবি সমাজের প্রতিটি স্তরের চিত্র বুঝে ফেলেছিলেন। শেষ সময়গুলো অনেক কাছ থেকে দেখে যা বুঝেছি তা হলো- নিজের মতো করে স্বপ্ন দ্রষ্টা হওয়ার চেষ্টায় মগ্ন ছিলেন। এ সময় কাছ থেকে যাদের দেখার সুযোগ হয়েছে তারা নিশ্চয়ই তার সেই গবেষণার খসড়া কপির দুয়েকটি দেখেছেন।



কবির মৃত্যুর পর মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েছেন জীবনের একটা সময় কাছে থাকা প্রায় সবাই। মৃত্যুর পর কাজ ও যোগ্যতার স্বীকৃতি ; বক্তার পর বক্তা থাপ্পর মেরে টেবিল ভেঙ্গে ফেলার সংস্কৃতি বাংলা সাহিত্যের অনেক পুরনো চিত্র। কিন্তু বড় বড় মিথ্যার বোঝা মাথায় চাপানোর ইতিহাস এই প্রথম দেখলাম। অনন্তের মৃত্যুর পর যারা নীরব প্রতিবাদের কথা বলছেন তাদের কাছে প্রশ্ন, কবির লাশ যখন ঝোলানো, কাছের মানুষরা চারপাশ থেকে একটু হাত-পা নারানোর দৃশ্য দেখার প্রত্যাশায় অপলক তাকিয়ে, তখন বাইরে এসে শুনলাম এক রাজনৈতিক ব্যক্তির চরম মিথ্যাচার। যে ব্যক্তি অনন্তের আপনার চেয়ে আপন একজনকে কিছুদিন আগে রক্তাক্ত করেছেন। সেই ঘটনার ছোপ ছোপ রক্ত অনন্তের বুক চিড়লে নিশ্চয়ই দেখা যেত ! ওই ব্যক্তি নিশ্চয়ই অনন্তের ঘরে গিয়েছিলেন। কবি অনন্ত মৃত। কোন কথার প্রতিবাদ করতে পারবেননা তা সে নিশ্চিত হয়েই অনন্তের বরাতে বিভিন্ন প্রশ্নের অজুহাতে বিশাল রাজনৈতিক বক্তৃতা দিয়ে দিলেন।



পত্রিকার পাতায় আর আলোচনার টেবিলে সমাজের উঁচু স্থানে থাকা, যারা তার আদর্শের মানুষ, তাদের ভাষ্য জানতে কবিপ্রেমিকরা অনেকেই অপেক্ষায় ছিলেন। জেনেছেনও। সে ভাষ্য আর কবিপ্রেমিকদের প্রতিক্রিয়া দেখে আফগানিস্তান যুদ্ধের কথা খুব মনে পড়লো। যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে প্রতিদিন সাধারন মানুষ গভীর মনযোগে বিবিসি সংবাদ শুনতো। ফেরার পথে ‘সব মিথ্যা কথা’ বলতে বলতে বাড়ি ফিরতো। এখানে সেই ঘটনার পূনরাবৃত্তি দেখলাম। কবিকে নিয়ে যেসব নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি তারা তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন তার জবাব বক্তার কানে পৌছাতে না পারলেও প্রতিবাদ ঠিকই তারা করেছেন। প্রশ্ন হলো কবি যদি মৃত্যুকে প্রতিবাদের ভাষা হিসেবে নিয়েই থাকে, তাহলে তার মৃত্যুর পর যা ঘটেছে সে ফিরে আসতে পারলে তাকে আরও কতোবার আত্মহত্যা করতে হতো ?



কিন্তু এমনতো হওয়ার কথা ছিলনা। মানুষ ভুল করবে। অন্যায় করবে। একটি ঘটনার মধ্য থেকে প্রাপ্ত শিক্ষায় নিজেদের নতুন করে গঠন করার চেষ্টা থাকবে। ভুলত্রুটি শোধরে নতুন সমাজ গঠনের অঙ্গীকার করবে। যাকে হারিয়েছে তাকে, তার কাজকে লালন করবে অতি যতনে। কিন্তু তা না হয়ে এ কী হচ্ছে? লাশের উপর দাড়িয়ে এ কেমন কবিতা লেখা? অনন্তের জীবনাদর্শ আমাদের তো স্বর্ণে বোনা স্বপ্ন দেখাতে পারে ! তবে আমরা কেন হাল ধরার দায়িত্ব নিয়ে নদীকে খাল বানানোর চেষ্টায় আর খালকে করছি ড্রেন? অনন্তের আত্মা এ মিথ্যাচারের প্রতিবাদ না করলেও নিজের সামনে যেদিন পড়বেন সুশীল সমাজের এই কর্তারা তখন কী জবাব দেবেন নিজেকে? জীবনের ছোট ছোট ভুলকে অন্যায় আর নিজ নিজ অন্যায়কে যারা গোপন করে সুমিষ্ট করে এমনি উপস্থাপন করেছেন- তাদেরকে স্পষ্টভাবে চিনে ফেলেছেন সুচি শুভ্র এই কবির জীবন ও কর্মপ্রেমিকরা।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.