![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সত্য সমাগত অসত্য বিদুরিত সত্যের জয় হবেই
৩ মে রাত দেড়টা। বড় ভাই দিপু হাসান ভাই বললেন, তুমি যদি সাভারে যাও, আমাকেও নিয়ে যেও। মনে হলো তিনি যেতে চাইছেন। ঢাকায় সে রাতে তেমন কোন ঘটনা না থাকায় কিছুটা তার আর কিছুটা নিজের ইচ্ছায় রওয়ানা হলাম, সাভারের পথে। এতোটা যানজটে পড়বো বুঝিনি। রাত তিনটার দিকে পৌছালাম সাভারে। তখন ভবন ধসের ঘটনায় নিহতদের স্বজনদের তেমন কেউ রাস্তায় ছিলনা। গার্মেন্টসের ধ্বংসস্তুপের বাইরে উদ্ধার কাজ চলছিল থেমে থেমে। ক্যামেরা ব্যক্তিত্ব শিবলি ধ্বংসস্তুপের খুব কাছাকাছি যেতে চাইলো। দুর্গন্ধকে অবজ্ঞা করে এগিয়ে যাচ্ছিলাম। সেনাবাহিনীর একজন এসে বললেন আর সামনে যাওয়া যাবেনা। অগত্যা থেমে গেলাম। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে বিকল্প পথ খুঁজছিলাম। ধ্বংস্তুপের পাশের ভবন হয়ে সিঁড়ি ভেঙ্গে উপরে উঠতে থাকলাম। গন্ধ আরো তীব্র হচ্ছে। দোতলায় ওঠার পর মনে হলো গন্ধে বাতাস ভারী হয়ে আছে। চারদিকে আলো খুব কম। আমি আর ক্যামেরা ব্যক্তিত্ব ছাড়া কেউ নেই। পা চলছিলনা। শিবলি ভাই বলছিল, ভাই ভয়ের কিছু নেই সবাইকেই একদিন মরতে হবে। নিশ্চিত হলাম তার অবস্থাও আমার মতোই। রেলিং ছাড়া সিঁড়ি দিয়ে তিনতলায় যখন উঠলাম, তখন মনে হচ্ছিল গন্ধে গলা তেতো হয়ে গেছে। পা বাড়াতেই দুই পাশে সাদা প্লাস্টির বস্তা দেখে কেবলই লাশ মনে হচ্ছে। চারতলায় ওঠার পর তখন ভয়ে পায়ের নিয়ন্ত্রণ নিজের বলে মনে হলোনা। পা কিছুটা বাতাসের উপর মনে হচ্ছিল। ক্রমেই আরো বেশি জড়োসড়ো হয়ে যাচ্ছিলাম। দুজনের দূরত্ব এক কদমের। তবু ভীষণ একা মনে হচ্ছিল। হাজার হাজার মানুষের আত্মা যেন আমার সামনে-পাশে, উপরে-নিচে। চোখে বারবার লাশ ভাসছিল। লম্বা বিল্ডিংয়ের অর্ধেকটা যেখানে শেষ, সেখানে একটা টিনের বেড়া। সেটা একটু সরিয়ে শিবলি চলে গেল, ওপাশে। এবার মনে হলো, আর ওপাশে যেতে পারলামনা। কোনমতে ওপাশে যেতেই খোলা আকাশ ও কয়েক দিকের আলো দেখে কিছুটা সাহস ফিরে পেলাম। ভবনটির একদম শেষ প্রান্তে ভারী যন্ত্রের ধীর লয়ে কাজ দেখলাম অনেক্ষণ ধরে। আবর্জনা টেনে যখন নামানো হচ্ছিল, তখন একেরপর এক কাপড়ের বান্ডেল বের হয়ে আসছিল। যথারীতি আর সব সাংবাদিকের মতোই একটি লাশের ছবি আসা করছিলাম; যা এইমাত্র আবিষ্কার হলো। এভাবে রাত চারটার সময় দিপু ভাইর ফোন পেয়ে নামতে শুরু করলাম। আবার সেই অবর্ণনীয় কিছু মুহূর্ত। সারা শরীরে যেন লাশের গন্ধ লেপ্টে আছে। মনের মধ্যে তখনো লাশ আর মৃতদের আত্মার উপস্থিতি, তা নিয়েই গাড়ীতে উঠে দ্রুত ঢাকার পথে ছুটছিলাম। অথচ আমি তাদের ভীষণ ভালবাসি।
©somewhere in net ltd.