![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সত্য সমাগত অসত্য বিদুরিত সত্যের জয় হবেই
কবি অনন্ত জাহিদ যেখানে আছেন সেখানে এখন বসন্ত না গ্রীষ্ম বহমান জানা নেই। কথা, চিন্তা আর চেতনায় সর্বদা স্বচ্ছ, সুচি-শুভ্র কবিকে আমরা হারিয়ে যে সঙ্কটে পড়েছি তা অপূরনীয়। কবির সাথে অনেকটা সময় যাদের এক সাথে কেটেছে, তাদের কারো কারো মুখে শুনেছি অনন্তের মৃত্যু এক নীরব প্রতিবাদ। প্রশ্ন সেই সেই প্রতিবাদ নিয়েই।
কবি অনন্ত জাহিদ সমাজের বিদ্যমান সমস্যা নিয়ে গভীরভাবে ভাবতেন। কারো পোষাক খুলে নগ্ন দেহ দেখানো আর কারো একের পর এক পোষাক পড়ে রূপ পরিবর্তনের চেষ্টা- কবিবে ভাবনার গহীনে ঠেলে দিতো। নোংরা আর দুর্গন্ধময় পোষাকে স্বচ্ছতা আর শুভ্রতার বিজ্ঞাপণ কবির স্বপ্নে যে আঘাত করতো- তা ছিল কবির সহ্য শক্তির বাইরে। সত্যকে চিৎকার করে বলার প্রবল ইচ্ছা নিয়েও খুঁজে পাননি সত্যকে। সত্যের ব্যাখ্যা যারা ঘোষণা করেন কবি গভীরভাবে চিনতেন তাদের। কবি চিনতেন স্বপ্ন চোরদের। যারা প্রতিবেশ দুষনীয় নাইলনের নিন্ম মানের সুতোয় স্বপ্ন বুনে স্বর্ণ স্বপ্ন বলে বেচে দিতেন সাধারনের মাঝে।
তবু কবি খুঁজতেন প্রকৃত স্বর্ণ সুতোয় বোনা স্বপ্নের জাল। বারবারই হতাশ হয়েছেন। বহুবার জাল স্বপ্ন কিনে হাতাশার গহীনে ডুবেছেন। সাঁতার কেটেছেন কুলের খোঁজে।
কবির কাছের মানুষদের অনেকেই তাঁর আন্তরিকতা, স্বচ্ছতা ও স্বপ্ন বোনার ব্যস্ততার সরল দৃষ্টিভঙ্গিকে সময়ের চেয়ে পিছিয়ে থাকা হিসেবেই মনে করতেন। কবিকে এক হাটে কিনতেন, আরেক হাটে বেচতেন। আবার মৌসুম বুঝে রাখি পণ্য হিসেবে কেউ কেউ মজুদ করার চেষ্টা যে করেননি- তা বলা যায়না।
কবি সমাজের প্রতিটি স্তরে আলাদা আলাদা রঙে আর আলাদা পটে আঁকা চিত্রের গভীরতা বুঝতেন। যা তাকে তাড়িত করতো সর্বদা। বন্ধুজনের আঘাতের পর আঘাত সয়ে নিজের মতো করে স্বপ্ন দ্রষ্টা হওয়ার চেষ্টায় মগ্ন ছিলেন। কবির জীবনের শেষ কয়টা বছর কাছ থেকে যাদের দেখার সুযোগ হয়েছে তারা নিশ্চয়ই তাঁর সেই গবেষণার খসড়া কপির দুয়েকটি দেখেছেন।
কবি চলে যাওয়ার পরপর কয়েকটি মিথ্যাচার আজও ব্যথিত করে তাদের, যারা কবিকে বুঝতেন ও ভালবাসতেন। কিন্তু কেন এ মিথ্যাচার। একটা দৃশ্য এখনও চোখের ওপর ভাসছে- কবির লাশ তখনও ঝোলানো। বাইরে এসে শুনলাম এক রাজনৈতিক নেতা গল্প বলছে কবির সাথে তার সম্পর্ক নিয়ে। নেতা বললেন- অনন্ত প্রায়ই জানতে চাইতেন, রাজনীতির খুটিনাটি। তারপর ওই নেতা এক বিশাল গল্প পেতে বসলেন, নিজেকে সেই গল্পের নায়ক হিসেবে।
অথচ মৃত্যুর কিছু দিন আগেই কবির চোখের সামনে সেই নেতা এমন একজনকে চরম অপদস্ত করেছেন, যে কিনা কবির সবচেয়ে কাছের মানুষদের একজন। অনন্তের আমন্ত্রণেই যে ভোলায় এসেছিলেন। যে ঘটনা কবিকে নিজ শহরে অস্তিত্ব সংকটে ফেলেছিল। সেই নেতাই বানিয়ে নিলেন নিজের মতো এক গল্প। গল্পের শেষ লাইন ছিল এরকম- 'অনন্ত বড় বেশি ভালবাসতো আমাকে'।
কবির দিনের অধিকাংশ কাটতো সৃষ্টির প্রয়াসে। আড্ডার এক বড় অংশ জুড়েও থাকতো শিল্পকর্ম, গান আর কবিতা। কিন্তু অনন্তের মৃত্যুর পর আরো কয়েকটি ঘটনা দেখলাম। পুরো বিষয়টা রীতিমতো মিথ্যাচারের উৎসবে পরিনত হয়েছিল। বন্ধুজন, কাছের মানুষ অনেককেই দেখেছি সেই উৎসবে ঝান্ডা ওড়াতে।
কবি অনন্ত মৃত। কোন কথার প্রতিবাদ করতে পারবেননা তা নিশ্চিত হয়েই অনন্তের বরাতে যে যার মতো করে নায়ক বনে গেলেন।
জীবদ্দশায় কবি যাকে অত্যন্ত শ্রদ্ধা করতেন, গুরু মানতেন; সেই ব্যক্তিটিও জরির চকচকে পোষাক বানালেন মিথ্যাচারে পূর্ণ করে। অনন্তের চরিত্রকে কালিমায় ঢেকে দিলেই যেন কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌছে যাবেন। লাশের পোষাক নিয়ে টানাটানি করা সেই লেখাটি ছাপাও হয়েছিল একটি জাতীয় দৈনিকে।
পত্রিকার পাতায় আর আলোচনার টেবিলে সমাজের উঁচু স্থানে থাকা, যারা তার আদর্শের মানুষ, তাদের ভাষ্য জানতে কবির কবিতার স্বজনেরা অপেক্ষায় ছিলেন। জেনেছেনও। কবিকে নিয়ে যেসব নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি তারা তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন তার জবাব বক্তার কানে পৌছাতে না পারলেও প্রতিবাদ ঠিকই তারা করেছেন। প্রশ্ন হলো কবি যদি মৃত্যুকে প্রতিবাদের ভাষা হিসেবে নিয়েই থাকে, তাহলে তার মৃত্যুর পর যা ঘটেছে, সে ফিরে এলে আরও কতোবারই না তাঁকে আত্মহত্যা করতে হতো?
কিন্তু এমনতো হওয়ার কথা ছিলনা। মানুষ ভুল করবে। একটি ঘটনার মধ্য থেকে প্রাপ্ত শিক্ষায় নিজেদের নতুন করে গঠন করার চেষ্টা থাকবে। ভুলত্রুটি শোধরে নতুন সমাজ গঠনের অঙ্গীকার করবে। যাকে হারিয়েছে তাঁর কাজকে লালন করবে অতি যতনে। কিন্তু তার বদলে শুচি-শুভ্র এক কাব্যিক মানুষের লাশের উপর দাঁড়িয়ে এ কেমন কবিতা লেখা। অনন্তের জীবনাদর্শ তো স্বর্ণে বোনা স্বপ্ন দেখাতে পারে। হতে পারে সংকীর্ণ আর জ্বরাজীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বেরিয়ে আসার অন্যতম বাহন।
তাঁর অসংখ্য সৃষ্টির মধ্যে অন্যতম গান- কিছু নেই জীবনের মতো একটি সুষ্ঠু সুন্দর সমাজেরই রূপ। যে সমাজ সুন্দরকে সুন্দর বলে গ্রহন করে আর দুর্দিনে পাশে দাড়ানোর প্রেরণা যোগাতে পারে। অশুভ কুট-কৌশলকে দূরে ঠেলে দিয়ে সবুজায়ন করতে পারে কেবলই হৃদ্যতায়।
মুজাহিরুল হক রুমেন
[email protected]
©somewhere in net ltd.