![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সত্য সমাগত অসত্য বিদুরিত সত্যের জয় হবেই
রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ধ্বংসের পাঁয়তারা
মুজাহিরুল হক রুমেন
রাষ্ট্রীয় তেল-গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলন কোম্পানি বাপেক্সের ঋণ এখন দুই হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। কম খরচে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনে যথেষ্ট দক্ষতার প্রমাণ দিলেও সরকাররের অপনীতি ও অপকৌশলের কারণে বাপেক্স আজ প্রায় দেউলিয়া। এ পরিস্থিতি থেকে প্রতিষ্ঠানটিকে উদ্ধারে রাষ্ট্রের স্পষ্টতই কোনো মাথাব্যথা নেই। বরং একে নিঃস্ব করতেই যেন সরকার পণ করেছে। দ্রুত গ্যাস তোলার নামে বিদেশি কোম্পানিকে কাজ দেওয়া, সাগরে অনুসন্ধান ও উত্তোলনে অনভিজ্ঞ এ অজুহাতে দূরে রাখা, সর্বশেষ প্রতিষ্ঠানটির জন্য সৃষ্ট তহবিল থেকে বঞ্চিত করে বাপেক্সকে বিলুপ্তির দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে।
আড়াই দশক আগে প্রতিষ্ঠার প্রায় শুরু থেকেই প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সংগ্রহ থেকে শুরু করে কাজের জন্য সরকারের কাছ থেকে তহবিল যোগাড়, প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে বাপেক্সকে নানা দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। এ অবস্থার কিছুটা পরিবর্তন আসে ২০০৯ সালে মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর। সরকার গঠনের প্রায় পর পরই তারা কূপ খননের জন্য রিগ কেনার উদ্যোগ নেয় এবং তিনটি রিগ কেনাও হয়। তাছাড়া একেকটি কাজের জন্য টাকা বরাদ্দ পেতে যে দীর্ঘ প্রক্রিয়া পার হতে হতো তাও নিরসনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এজন্য এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) ২০০৯ সালে ‘গ্যাস উন্নয়ন তহবিল’ গঠন করে এবং এ তহবিলে অর্থ যোগান দিতে বাণিজ্যিক ভোক্তা পর্যায়ে গ্যাসের দাম ১১ দশমিক ২২ শতাংশ বাড়ানো হয়। এ তহবিলের টাকা বাপেক্স এবং সিলেট গ্যাস ফিল্ড নামে আরেকটি রাষ্ট্রীয় কোম্পানি অফেরতযোগ্য অনুদান হিসেবে ব্যবহার করতে পারবে এ বিধান রেখে বিইআরসি গ্যাস উন্নয়ন তহবিল নীতিমালা প্রণয়ন করে। কিন্তু কমিশনের এ উদ্যোগ মুখ থুবড়ে পড়ে জ্বালানি মন্ত্রণালয়ে গিয়ে। মন্ত্রণালয় গ্যাস উন্নয়ন তহবিল নীতিমালাটি তিন বছর আটকে রাখে এবং ২০১২ সালে এসে নিজেই আরেকটি নীতিমালা তৈরি করে যা বাপেক্সকে নতুন সংকটে ফেলে দেয়।
বিইআরসি গ্যাস উন্নয়ন তহবিলের যে নীতিমালা করেছিল তা অনুমোদন পেলে তিনভাবে বাপেক্সের কাজে আসত – এক. বিনিয়োগের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটির নিজস্ব সামর্থ্য তৈরি হতো। দুই. বেশি বেশি কাজের মধ্য দিয়ে যে অভিজ্ঞতা অর্জিত হতো, তাতে দেশের বাইরে আন্তর্জাতিক দরপত্রে অংশগ্রহণের সামর্থ্যও তৈরি হতো। তিন. দেশের জ্বালানি ঘাটতি মোকাবিলায় কম খরচে বড় অবদান রাখতে পারত এটি। কিন্তু তা হয়নি কারণ বাপেক্সকে শুরু থেকেই দাবিয়ে রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে।
জ্বালানি মন্ত্রণালয় বিইআরসি-এর করা গ্যাস উন্নয়ন তহবিল নীতিমালা কেন আটকে দিয়েছে তার কোনো যৌক্তিক ব্যাখ্যা কিন্তু এখনও হাজির করতে পারেনি।
প্রাসঙ্গিক আরো একটি বিষয় হলো, বাপেক্সকে আন্তর্জাতিক কোম্পানিতে পরিণত করলে এটি দেশে তেল গ্যাস অনুসন্ধান-উত্তোলনের পাশাপাশি দেশের বাইরেও কাজ করতে পারত, কিন্তু এ পর্যন্ত কোনো সরকারই সে উদ্যোগ নেয়নি।
গ্যাস উন্নয়ন তহবিল প্রসঙ্গে ফিরে আসি। জ্বালানি মন্ত্রণালয় গ্যাস উন্নয়ন তহবিল নীতিমালায় প্রায় আমূল পরিবর্তন নিয়ে এসেছে। এর নাম পরিবর্তন করে ‘গ্যাস, পেট্রোলিয়াম ও খনিজ উন্নয়ন তহবিল নীতিমালা ২০১৫’ করা হচ্ছে। শুধু নাম বদল নয়, বদল এসেছে এর উদ্দেশ্যেও – এর অর্থ খরচের পরিধি বাড়ানো হয়েছে। আগে যেখানে শুধু গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনে তহবিলের টাকা খরচের সিদ্ধান্ত ছিল, এখন সেখানে এর টাকায় গ্যাস পাইপ লাইন BAPEX Logoস্থাপন, তরল প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি, কয়লা আমদানি ও উত্তোলন, বিভিন্ন সমীক্ষা পরিচালনা, এ খাতের সংশ্লিষ্টদের প্রশিক্ষণ ও এসব কাজে গাড়ি ভাড়া নেওয়ার খরচও এতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সংশ্লিষ্টদের যে কথাটি ভালভাবেই জানা আছে তা হলো, জ্বালানি খাতের কাজের জন্য সরকারি বাজেটের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সংস্থার ঋণ ও অনুদানের খাত থাকে। তবে কেন বাপেক্সের জন্য করা তহবিলের ভাগ অন্যদেরকেও দিতে হবে?
এবার ঋণ প্রসঙ্গ। বাপেক্সের দুই হাজার কোটি টাকার ঋণের জন্য প্রতিষ্ঠানটি নিজে দায়ী না সেটা স্পষ্ট। এর পেছনে মূলত আছে সরকার তথা জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের এক কিম্ভূত নীতি। আর তা হলো, প্রতি হাজার ঘনফুট গ্যাস উত্তোলনে বাপেক্সের যেখানে ব্যয় হয় ৬৫ টাকা সেখানে সরকার তা কেনে ২৫ টাকায়। অর্থাৎ প্রতি হাজার ঘনফুটে খরচের চেয়ে ৪০ টাকা কম দেওয়া হচ্ছে বাপেক্সকে। অথচ বিদেশি কোম্পানি প্রতি হাজার ঘনফুট গ্যাস বিক্রির জন্য সরকারের কাছে পাচ্ছে ২৪০ টাকা! উত্তোলিত গ্যাসের মূল্য নিয়ে এই খেলার কারণ কী সে ব্যাখ্যা কারো কাছে নেই। যে বিষয়টি এখানে পরিষ্কার তা হলো বাপেক্সকে স্বনির্ভর নয়, পঙ্গু বানাতেই জ্বালানি মন্ত্রণালয় নিজেই উঠেপড়ে লেগেছে।
২. শুরু থেকে কোণঠাসা বাপেক্স
বাপেক্সের সৃষ্টি ১৯৮৯ সালে। পাকিস্তান আমলে ১৯৬২ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত অয়েল এন্ড গ্যাস ডেভেলাপমেন্ট কোম্পানি – ওজিডিসি নামের সরকারি প্রতিষ্ঠান তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের কাজ করত। স্বাধীনতার পর ওজিডিসির জনবল ও যন্ত্রপাতি নিয়ে ‘তৈল সন্ধানী’ নামে একটি কোম্পানি করা হয়। সত্তর দশকের মাঝামাঝি সময়ে ‘তৈল সন্ধানী’কে বিলুপ্ত করে পেট্রোবাংলা অনুসন্ধানের দায়িত্ব নেয়। পেট্রোবাংলার এক্সপ্লোরেশন ডিরেক্টরেট নামের অংশটি অনুসন্ধানের কাজ করত। ১৯৮৯ সালে এক্সপ্লোরেশন ডিরেক্টরেট বন্ধ করে দিয়ে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য সরকার বাপেক্স নামে আলাদা একটি কোম্পানি গঠন করে।
নতুন প্রতিষ্ঠান গড়া হলো কিন্তু তা চলবে কী দিয়ে তার কোনো সুষ্ঠু পরিকল্পনা করা হলো না। প্রতিষ্ঠানের আয়ের উৎস কী হবে তারও কোনো স্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়া হলো না। ফলে এটি দ্রুত একটি নিষ্ক্রিয় প্রতিষ্ঠানে পরিণত হলো। বাপেক্সের আয়, স্থায়ী খরচ, অনুসন্ধান ও খনন খরচ এসব আর্থিক দিকের সবই পড়ে গেল চরম অনিশ্চয়তায়। তার ওপর দীর্ঘসূত্রতা আরেক বিরাট বাধা হয়ে এল কারণ একেকটা কাজের বরাদ্দ পেতে প্রতিষ্ঠানটিকে অহেতুক লম্বা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হতো। এসব জটিলতার মধ্যে পড়ে অনেক দক্ষ কর্মী বাপেক্স থেকে বেরিয়ে যান।
একটি আধুনিক রিগ কেনার সময় যে লালফিতার দৌরাত্ম্যে পড়েছিল প্রতিষ্ঠানটি সেটি আর সব ক্ষেত্রে হয়রানির একটা নমুনা মাত্র:
গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলন আরো দক্ষভাবে করার জন্য ১৯৯৮ সালে বাপেক্স একটি আধুনিক রিগের জন্য আবেদন করে এবং তা বাপেক্স বোর্ড অনুমোদনও করে।
পরের বছর অর্থাৎ ১৯৯৯ সালে পেট্রোবাংলা বোর্ডেরও অনুমোদন পাওয়া গেল, একই বছরে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের অনুমোদনও হলো।
কিন্তু সেটা জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি একনেকে পাশ হতে লেগে গেল আরো চার বছর। একনেক ২০০৩ সালে এসে অনুমোদন দিল।
একনেকে ৮১ কোটি টাকা অনুমোদিত হলেও ততদিনে রিগের আন্তর্জাতিক বাজার দর অনেক বেড়ে গেছে। রিগ কেনার দরপত্রে অংশ নেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সর্বনিম্ন যে দরদাতা, তারও প্রস্তাবকৃত দর দেখা গেল একনেক অনুমোদিত বাজেটের ৩১ শতাংশ বেশি, অর্থাৎ ১০৬ কোটি টাকা।
এ অবস্থায় দরপত্র বাতিল করে বাজেট পুনর্মূল্যায়নের প্রক্রিয়া শুরু হলো। প্রথম সংশোধিত বাজেট, যেটা ছিল ১৪২ কোটি টাকার, আবার একনেকে অনুমোদিত হতেই ২০০৬ সাল পার হয়ে গেল।
রিগের দাম আবারও বেড়ে গেল এবং যথারীতি এবারেও দরপত্র আহ্বান করা সম্ভব হলো না।
এভাবে আরো কয়েকবার দরপত্র আহবান ও বাতিল করে অবশেষে পঞ্চমবারে ২৫৬ কোটি টাকার সংশোধিত বাজেটসহ ২০০৮ সালের নভেম্বরে দরপত্র আহবান করা হয় এবং
২০০৯ সালের জানুয়ারিতে একটি চীনা কোম্পানির সাথে চুক্তি সম্পাদিত হয়।
যাই হোক, এসবের মধ্যেও কাজ এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে গেছেন প্রতিষ্ঠানটির কর্মীরা। ১৯৯৫ সালে বাপেক্সের প্রথম গ্যাসক্ষেত্রটি আবিষ্কার হয় ভোলার শাহবাজপুরে। কিন্তু সেই পুরানো জটিলতার কবলে পড়ে ২০০৯ সালে এসে তা উৎপাদনের মুখ দেখে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সালদা নদী গ্যাসক্ষেত্রটিও আবিষ্কার করে বাপেক্স। প্রতিষ্ঠানটি ২০০ সালে এ ক্ষেত্র থেকে গ্যাস উৎপাদনের দায়িত্ব পায়। কিন্তু ওদিকে পুরো নব্বই দশক জুড়ে দেশের স্থলভাগের গ্যাস ব্লকগুলো একের পর এক বিদেশি কোম্পানিদের হাতে তুলে দেওয়া হয়।
২০০১ সালে বাপেক্স পাবনার মোবারকপুরে গ্যাস অনুসন্ধানের আরেকটি প্রকল্পটি হাতে নেয়। ওই বছর বাপেক্স বোর্ড মোবারকপুর প্রকল্প অনুমোদন করে পেট্রোবাংলায় পাঠায়, পেট্রোবাংলা এবং জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ বিভাগও একই বছরে অনুমোদন করে। তারপরও নানা জটিলতায় শেষ পর্যন্ত মোবারকপুরে কাজ শুরু হয় গত বছর অর্থাৎ ২০১৪ সালের ২২ আগস্ট। বর্তমানে সেখানে অনুসন্ধান কূপ খননের কাজ চলছে। অর্থাৎ এ প্রকল্পটি হাতে নেওয়ার পর সেখানে অনুসন্ধান কূপ খননে যেতে তাকে অপেক্ষা করতে হয়েছে ১৪টা বছর।
বাপেক্সের এই জটিল ইতিহাস থেকে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, প্রতিষ্ঠানটি যাতে কাজ না পায় সেজন্য সরকার নিজেই নানা পরিস্থিতি তৈরি করেছে। জটিলতা তৈরি করে প্রতিষ্ঠানটির চলার পথ কণ্টকাকীর্ণ করা হয়েছে। অথচ স্থলভাগে কূপ খননের কাজে সরকারি মালিকানার এই প্রতিষ্ঠানটির দক্ষতার ওপর আস্থাবান বিশেষজ্ঞদের দাবি ছিল স্থলভাগে কোনো কাজ বিদেশি কোম্পানিকে দেওয়া যাবে না। কিন্তু তারপরও ‘বিদ্যুৎ ও জ্বালানি দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) বিল ২০১০’ আইনের দায়মুক্তির অধীনে বিনা টেন্ডারে রাশিয়ার কোম্পানি গ্যাজপ্রমকে স্থলভাগের দশটি কূপ খননের কাজ দেওয়া হয়। কূপগুলো হচ্ছে বাপেক্সের মালিকানাধীন বেগমগঞ্জ, শাহাবাজপুর, শ্রীকাইল, সেমুতাং ও সুন্দলপুর কূপ এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ড কোম্পানি লিমেটেড (বিজিএফসিএল)-এর মালিকানাধীন তিতাস গ্যাসক্ষেত্রের চারটি, এবং সিলেট গ্যাস ফিল্ড লিমিটেড (এসজিএফএল)-এর মালিকানাধীন রশিদপুরের একটি কূপ। গ্যাজপ্রমকে দিয়ে প্রতিটি কূপ খনন করা হয়েছে প্রায় ১৬০ কোটি টাকায় অথচ বাপেক্সের একেকটি কূপ খননে খরচ হয় ৭০ থেকে ৮০ কোটি টাকা। অতিরিক্ত টাকায় বিদেশি কোম্পানিকে দিয়ে কাজ দিয়ে সেই টাকার ঋণের দায়ও চাপিয়ে দেয়া হয়েছে বাপেক্সের কাঁধে।
৩. গ্যাস উন্নয়ন তহবিল থেকে বঞ্চিত বাপেক্স
বাপেক্সকে কোণঠাসা করার এত মতলব আর তৎপরতার মধ্যে এ খাত সম্পর্কে ওয়াকিবহাল দেশপ্রেমিক মহলটি গ্যাস উন্নয়ন তহবিলকে রেগুলেটরি কমিশনের একটি ভাল উদ্যোগ হিসেবে বিবেচনা করেছেন।
আগেই বলা হয়েছে, গ্যাস উন্নয়ন তহবিলের আদি উদ্দেশ্য ছিল অনুদান হিসাবে বাপেক্স এবং সিলেট গ্যাস ফিল্ড নামের আরেক সরকারি কোম্পানিকে এ তহবিল ব্যবহারের সুযোগ দেওয়া। বিইআরসি সেভাবেই নীতিমালা ও নিয়মকানুন করেছিল। এ নীতিমালা অনুযায়ী বিভিন্ন উৎস থেকে এ তহবিলে বছরে এক হাজার কোটির বেশি টাকা জমা হওয়ার কথা ছিল। সেখান থেকে বাপেক্স টাকা নিয়ে নিজের কাজে বিনিয়োগ করতে পারবে এরকম নিয়ম করা হয়েছিল। কিন্তু বিইআরসির সে নীতিমালা ও নিয়ম পুরোপুরি বাতিল করে দিয়ে জ্বালানি মন্ত্রণালয় এখন নতুন নিয়ম করেছে যার আওতায় বাপেক্সকে এ তহবিলের টাকা সুদসহ ঋণ আকারে নিতে হবে।
নতুন নীতিমালা অনুযায়ী এ তহবিলের নাম ‘গ্যাস, পেট্রোলিয়াম ও খনিজ উন্নয়ন তহবিল’। এ সংক্রান্ত নতুন খসড়া নীতি অনুযায়ী তহবিলের অর্থ সংগ্রহের উৎস বাড়ানো হয়েছে। এতে বলা হচ্ছে, তেল বিপণন প্রতিষ্ঠানগুলোকে এখন থেকে লাভের এক শতাংশ তহবিলে জমা দিতে হবে। বিপিসির তিনটি জ্বালানি তেল বিপণন কোম্পানি পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা বছরে গড়ে ৭০০ কোটি টাকা লাভ করে। নতুন খসড়া নীতি অনুযায়ী এখন থেকে পদ্মা, মেঘনা ও যমুনার লভ্যাংশের এক শতাংশ হিসাবে গড়ে বছরে সাত কোটি টাকা এ তহবিলে জমা হবে। এর সাথে ভোক্তা পর্যায়ে গ্যাসের দাম বাড়ানোর একটি অংশ, গ্যাসের দাম বাড়ানোর পর যে অর্থ পেট্রোবাংলা পায় তার একটি অংশ, উন্নয়ন সহযোগীদের অনুদান এবং সরকার বা অন্য কোনো উৎস থেকে দেওয়া অর্থও এ তহবিলে জমা পড়বে। তহবিলটির মেয়াদ হবে গেজেট প্রকাশ পরবর্তী ১৫ বছর।
নতুন নীতিমালার খসড়ায় আরো বলা হচ্ছে, জ্বালানি খাত সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান বাপেক্স, বিপিসি, জিএসবি, হাইড্রোকার্বন ইউনিট, বিপিআই, বিএমডি’র সক্ষমতা সৃষ্টি এবং মানবসম্পদ উন্নয়নে নীতিমালা সংশোধন জরুরি হয়ে পড়েছে। গ্যাস, পেট্রোলিয়াম ও খনিজ উন্নয়ন তহবিল নামে একটি পৃথক হিসাব খুলবে পেট্রোবাংলা। গ্যাস বিতরণ, কয়লা ও কঠিন শিলা বিপণন কোম্পানির আদায়কৃত অর্থের নির্দিষ্ট পরিমাণ প্রতি ১৫ দিন পর পর এই তহবিলে স্থানান্তর করতে হবে। সরকারের শুল্ক এবং মূল্য সংযোজন করের ওপর আদায়কৃত অতিরিক্ত টাকা অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্দের মাধ্যমে এ তহবিলে জমা হতে হবে। এছাড়া ব্যাংক সুদ এবং বিপিসির সকল বিপণন কোম্পানির লভ্যাংশও নতুন এ তহবিলে জমা হবে।
যাই হোক, নতুন খসড়া নীতিতে বলা হয়েছে প্রস্তাবিত ‘গ্যাস, পেট্রোলিয়াম ও খনিজ উন্নয়ন তহবিল’ থেকে গ্যাস খাত উন্নয়নের জন্য টাকা অনুদান আকারে নয়, ঋণ হিসাবে নেওয়া যাবে। আরো বলা হচ্ছে, ঋণের যে সুদ পাওয়া যাবে তা আবার তহবিলে যোগ হবে। এ তহবিলের বিনিয়োগে কোনো প্রকল্প লাভজনক হলে ১৪ কিস্তিতে দুই ভাগ সার্ভিস চার্জসহ দশ বছরের মধ্যে সমুদয় অর্থ ফেরত দিতে হবে।
প্রশ্নটা ঘুরেফিরে সেই একই, ৬৫ টাকায় গ্যাস উত্তোলন করে ২৫ টাকায় বিক্রি করলে বাপেক্স কীভাবে সেই ঋণ শোধ করবে? সুতরাং ‘গ্যাস উন্নয়ন তহবিল’ বা ‘গ্যাস, পেট্রোলিয়াম ও খনিজ উন্নয়ন তহবিল’, নাম যাই হোক না কেন, রাষ্ট্রগঠিত এ তহবিল থেকে আরেক রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বাপেক্সকে দূরে রাখার একটা মতলব যে আছেই সে গন্ধটা খুব স্পষ্ট।
দেশের স্বার্থ সম্পর্কে ন্যূনতম উদ্বেগ আছে এমন মানুষের কাছে এটা পানির মতো পরিষ্কার যে, বাপেক্স শক্তিশালী হলে দেশের মানুষেরই উপকার। কম খরচে গ্যাস অনুসন্ধান ও উৎপাদন করা গেলে তার সুফল ভোক্তা পর্যায়ে ছড়িয়ে দিতে পারবে সরকার। রাষ্ট্র তার নিজের গড়া প্রতিষ্ঠান কেন নিজের হাতে ধ্বংস করছে, কেন পঙ্গু ও দেউলিয়া বানাচ্ছে সেটি অবশ্যই খতিয়ে দেখতে হবে। হাজার বাধা ঠেলে নিজের সামর্থ্য ও দক্ষতা প্রমাণ করেছে বাপেক্স যা বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষেত্রে খুব বেশি যে ঘটেছে তা নয়। কিন্তু জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের তেলেসমাতি বন্ধ না হলে অচিরেই একটি মৃত প্রতিষ্ঠানে পরিণত হবে এটি। আর তার জন্য দায়ী থাকবে রাষ্ট্র নিজে।
http://www.policy-adda.net
©somewhere in net ltd.
১|
২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১:৩৫
ঢাকাবাসী বলেছেন: টাকাটা কোথায় যায় সবাই জানে, বলার সাহস নেই আমাদের। উপদেস্টাটি কোথায় আজকাল?