নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কমজান্তা দার্শনিক

কমজান্তা দার্শনিক › বিস্তারিত পোস্টঃ

ছোটগল্প: লাল্টু

০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ সকাল ৮:১৯

কুঁই কুঁই করে পিছে হঠে লাল্টু। রমিজ কসাইর লাঠির ঘা একেবারে কানের পাশ ঘেঁষে চলে যায়। ব্যার্থ লাল্টু জিভ বের করে বসে থাকে বাজারের এক কোণায়। আজকে তার কপাল খারাপ। এখনো সকালের নাস্তা জোটেনি কপালে। অথচ লাঞ্চটাইম হয়ে এল প্রায়। রমিজ কসাই আজ একটা খাসি কেটেছে। একেবারে তাগড়া খাসি। কেটেকুটে সে বসেই আছে কারো অপেক্ষায়। লাল্টুকে কাছেই ঘেঁষতে দিচ্ছে না। একটু ছিঁটেফোঁটা ওকে দিলে কী হয়? কিন্তু দেয় না। অথচ ক'দিন আগেও দিত। সবই কপাল।

অবশ্য কপাল তার একার না। গোটা দেশের মানুষেরই কপাল খারাপ। নইলে কী আর এমন যুদ্ধ বাঁধে? ভয়াবহ যুদ্ধ। শুধু মানুষ না, গরু-ছাগল এমনকী কুকুর-বিড়ালও রেহাই পাচ্ছে না হানাদারদের হাত থেকে। এইতো সেদিন, গত সপ্তায় ওরা আগুন দিল মন্নান মাস্টারের বাড়ীতে। লাল্টুর বন্ধু বুড়ো হুলোটা থাকতো ওবাড়িতে। নির্ঘাত জ্বলে কয়লা। বেচারা মনে হয় বুঝতেই পারেনি কখন কারা আগুন দিলো।

তবে লাল্টু বুঝেছে। ও তখন দহলিজে পড়ে ঝিমোচ্ছিল রাতের খাবার খাওয়ার পরে। রাতের খাবারটা সেদিন জমেছিল বেশ। বন্ধু হুলো-ই খবরটা দিয়েছিল- মন্নান মাস্টরের বাড়ী আজ মেহমান আসবে। খানার এন্তেজাম আছে। শুনেই চলে এসেছিল লাল্টু। যুদ্ধের বাজারে তার পেটে খরা যাচ্ছে। এমন এন্তেজাম তো পায়ে ঠেলা যায় না। হাঁড়টা- এঁটোটাই এখন রাজকীয় খাবার। কিন্তু এই যুদ্ধের বাজারে মেহমানটা কে?

গিয়েই প্রশ্নের উত্তর পেয়ে গিয়েছিল লাল্টু। ওরা মুক্তি। গায়ের গন্ধেই লাল্টু চিনে গিয়েছিল অনেককে। পূব পাড়ার সিদ্দিক, মইনু, জামাল; মুন্সি বাড়ীর নজরুল, জেলে পাড়ার কানু, মন্টু- আরো কত চেনা গন্ধ। ক'দিন আগেও বাজারে এরা হল্লা মাচাতো। বাগাডুলি খেলতো নজরুলের চা-বিড়ির টং দোকানটার সামনে। লাল্টু কাছে পিঠে থাকলে হয়তো ছুঁড়ে দিত একটা ভাঙা বিস্কিট নয়তো আধখাওয়া সিঙাড়া।আর বড় আওয়াজে রেডিও শুনতো। মেহেদী হাসানের গজল কিংবা মোহাম্মদ রাফির ফিল্মি গান। আহ্! কী দিন ছিল! লেজ নাড়তে নাড়তে ভাবে লাল্টু। কিন্তু লেজ নাড়ানো হঠাত থেমে যায় সেদিনের কথা মনে করে।

সেদিন পুরনো লোকজনকে দেখে খুশিই হয়েছিল লাল্টু। আর এঁটো-কুটোও ভালই পড়েছিল পেটে। খেয়ে দেয়ে সবাই একটু জিরোল। রেডিও শুনলো। তবে সেই আগের দিনের গান-টান নয়। কেমন যেন রক্ত গরম করা গান- রক্ত লাল, রক্ত লালা, রক্ত লাল। গানের তাল রাখতে গিয়েই একটু ঝিমিয়ে পড়েছিল। তখনই শুনল হুড়োহুড়ি। কারা যেন আসছে........

দু চারবার ঘেউ ঘেউ করে চেঁচিয়ে উঠল লাল্টু। কিন্তু ওরা কাছে আসতেই থেমে গেল সে- ভয়ে। ওরা মিলিটারি। ওদের হাতে আগুন-লাঠি। তাক করে ধরলেই যেন চমকে ওঠে বিদ্যুত, বাজ পড়ার মত দ্রিম দ্রিম আওয়াজ হয়। লাল্টু জানে। জানে মুক্তিরাও। তাই, লাল্টুর খেঁকানো শুনেই প্রস্তুত ওরা। দুপক্ষতেই আগুন-লাঠির লড়াই চলে। একসময় থেমে যায় সব। কখন কী হল, কে মারা পড়ল আর কে বাঁচলো- লাল্টু জানেনা। ও শুধু কোনমতে পিঠ বাঁচিয়ে পড়ে ছিল এক কোনায়। মুরগীর খোঁয়াড়টার পেছনে। মাঝে মাঝে আড়ে আড়ে তাকিয়েছিল সাবধানে। তখন শুধু দেখেছে মজু মোল্লাকে। হারমিটা ছিল মিলিটারিদের সাথে, ও-ই পথ দেখিয়ে এনেছে ওদের।

একসময় যখন সব থামলো, তখনই হটাত পিঠে আঁচটা টের পেল লাল্টু। গনগনে আগুনের আঁচ। বুঝল সব শেষ। পালয়ে বাজারে চলে এসেছিল সেদিন। তবে পরে, যখন বাজারে পৌঁছুল, তখন খুব অপরাধবোধ হলো তার। সে কি কিছুই করতে পারতো না ? তারতো আরেকটু সজাগ থাকা উচিত ছিল। কী হলো সবার? কী হলো মাস্টারের? হুলোর কী হলো?

এসব সাত-পাঁচ ভাবতে ভাবতেই একটু নেতিয়ে পড়েছিল হুলো। হঠাত একটা পরিচিত গন্ধে নড়েচড়ে বসে। মাথা তুলে ইতিঊতি তাকায়। তখনই চোখে পড়ে লোকটাকে। মজু মোল্লা। হারামি রাজাকারটা। শালা কুকুরের চেয়েও অধম। নিজের অজান্তেই গায়ের রোম দাঁড়িয়ে যায় লাল্টুর। রাগে গর্ গর্ করতে ঠাকে সে।

মজু মোল্লা বাজারে ঢুকে সোজা চলে আসে কসাইর দোকানে।
ওকে দেখে ত্যালত্যালা হাসি দেয় রমিজ কসাই, "আপনে আয়সেন? আমিতো ভাবলাম ভুইলে গ্যালেন নাকি! নাইলে আমিই দিয়ে আসতাম।"
রমিইজ্জ্যার এই ত্যালত্যালা হাসি দেখে রাগ আরো বাড়ে লাল্টুর। কিন্তু মজু তাতে মজে গেছে। বলে, "তোমারে জোবান দিসি মিয়া! না আইসা পারি। আর মেজর সাব বলসে আজ ফূর্তির দিন। ভালো-মন্দ খাওন দরকার। তিনারা এক বসাতেই তো একটা খাসী খাইয়া ফেলেন। বুঝো না। পান্জাবী আদমি।" বলতে বলতে পানের পিক ফেলে হারামজাদা। মুখে তার খুশির রোশনাই। "খবর পাইসোতো মিয়া! দুইটা মুক্তি শ্যাষ! বাকিগুলাও পলাইসে! বেইমাণ মন্নান মাস্টার গাদ্দারি করসে দ্যাশের লগে। দিসি পুরা গুষ্টিসুদ্ধা পুড়াইয়া।"

চুপ করে শোনে রমিজ কসাই। কিছু বলে না। বলবেই বা কী? কিসের যুদ্ধ, কীসের কী, এইসব সে বুঝতে চায় না। কোনমতে দুইবেলা খেতে পেলেই সে খুশি। চুপচাপ মাংস বস্তায় ভরে ওজন করতে থাকে সে। তাতে কথা থামে না মজুর। সে বলতে থাকে "আমারো খারাপ লাগসিলো! হাজার হোক এক গেরামের মানুষ। কিন্তু, সবার আগে দ্যাশ। কি কও মিয়া?" এরপর কুঁতকুঁতে চোখে আশেপাশে তাকায় সে। বোঝার চেষ্টা করে লোকজন সব শুনলো কীনা। এইসব কথা সবার শোনা দরকার। নইলে ওরা ভয় পাবে না। তখনই চোখ পড়ে লাল্টুর উপর। ওর ভাবভংগি বোধহয় সুবিধার লাগে না মজুর। তাই বলে "কুত্তাডা খাওন-দাওন পায়না নাকি? ক্যামন ন্যাতাইয়া গেসে। দাওতো। এইদিকে একটা গোশতের টুকরা দাও। " বলে এক টুকরো মাংস তুলে নেয় মজু মোল্লা।

মজুকে মাংসের টুকরো তুলতে দেখে লেজটা ডানে বামে নাড়ে লাল্টু।
মজুও সামনের দিকে এগোয় আসে মাংস হাতে।
লাল্টুর মুখে লালা।
মজু ছুঁড়ে দেয় মাংসটা।
একই সময়ে লাফ দেয় লাল্টু।
তবে মাংসের দিকে নয়।
ওর লক্ষ্য মজুর ঘাড়ের দিকে।

সেদিনের পর লাল্টুকে আর কেউ বাজারে দেখেনি। তবে মজু মোল্লার ছিন্নভিন্ন দেহটা বাজারে পড়ে ছিল বেশ ক'দিন। দুর থেকে ওটা দেখতেই লোকজন বাজারে ভীড় জমাতো। আর থুতু ছিটিয়ে নোংরা করতো চারপাশ।




মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২০ শে জুন, ২০১৮ সকাল ১১:৪৭

রাজীব নুর বলেছেন: অন্য ভাষায় মন্তব্য করলাম-

おはようございます!
今朝の根室は朝6時の気温9.6度・・・曇天のスタートです。
数年前に痛めた左足首捻挫が痛み出し湿布中で、朝活ウォーキングできずにおります。孫の運動会で綱引きに参加したのも悪かったかも(笑)70代参加は私くらいでたから・・・
さて、昨夜のW杯コロンビア戦2対1の勝利で4年前の雪辱果たしましたね。サムライジャパン初戦突破何よりでした。
それでは今日も元気で行きましょう。

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.