![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
"বুচ্ছেন, এই সামারে ক্যাবট ট্রেইল যাব।" আমাকে না, অন্য কাউকে বলছিলেন শিপু ভাই।
কোনো একটা ফ্যামিলি গ্যাদারিং । পটলাক-টটলাক টাইপ ব্যাপার। তো যথারীতি আমি বসে আছি কোণার চেয়ারটায়। একহাতের কবজি ডুবিয়ে রেখেছি রেজালার ডেকচিতে। অন্য হাতে ফোনের স্ক্রিন কচলাচ্চি। এমন নিদারূন ব্যাস্ততায় অন্য কারো কথা কানে যাওয়ার কথা না। তারপরেও গেল। কারণ উড়ণচন্ডি হওয়ার কারণে ট্রেইল, ট্যুর, ট্রাকিং, ট্রিপ- এইসব ট-বর্গীয় শব্দ মাথায় আপলোড করা আছে। রেডারে এর কোনো একটা ধরতে পারলেই হলো- পুঁট পুঁট পুঁট করে টাইমবম্বের মত সিগনাল দিতে শুরু করে।
যথারীতি শুরু হলো সিগনাল। ধীরেসুস্থে তাকালাম শিপু ভাইয়ের দিকে। এরপরে ঊনাদের আলাপের মাঝখানে গলিয়ে দিলাম বামহাতটা।
"কয়দিনের ট্যুর? থাকবেন নাকি ক্যাবট ট্রেইল? শুনসি ব্যাপক জায়গা!"
"হুম! সেইরকম জায়গা! যাবেন নাকি আপনি?" উৎসাহে লাফিয়ে উঠেন শিপু ভাই। হাতের বাটি থেকে ছলকে পড়া ঝোলে কার্পেট মাখামাখি হতে পারতো। কিন্তু একবাটি গরুর মাংস এমন ছেঁচেপুছে খেয়েছেন- কী বলব! তাই এ'বেলা ঝোলের ঝামেলা থেকে রক্ষা।
সেইখান থেকেই শুরু। এরপরে কোথায় যাব, কোথায় থামব, কোথায় ছবি উঠব আর কোথায় থাকবো- গোটা এন্তেজাম একহাতেই সামলেছেন শিপু ভাই। সুতরাং একদিন কুয়াশমাখা ভোরে শুরু হয়ে গেল আমার যাত্রা।
রোডট্রিপ আগেও দিয়েছি।টানা হাজার বারশো মাইল জাস্ট বাঁহাতের চুটকি। কিন্তু এখন ঘটনা অন্যরকম। আমরা এখন দুই দ্বিগুণে চার হয়েছি। ন্যাদাগ্যাদার বয়স মাত্র চার মাস। যদিও দেড়মাস বয়স থেকেই ওদের টুকটাক ট্রেনিং চলছে- কিন্তু এতো লম্বা ট্রিপ এই প্রথম। রওনা দেয়ার আগে গোসল করিয়ে ওদের মাথা ঠান্ডা করা হলো। তারপরে একবোতল ফর্মূলা খাইয়ে পেট ঠান্ডা। বেলের শরবত খাওয়ার ব্যাবস্থা থাকলে সেটাও একপেট খাইয়ে দিতাম। আপাতত দেখা যাক এই টোটকা কতক্ষণ কাজ করে।
টিমহর্টনের যাত্রাবিরতিতে সবাই একসাথ হলাম। এরপরে রেলগাড়ির বগির মত একগাড়ির পেছনে আরেকগাড়ী- এভাবে মুসাফিরদলের যাত্রা শুরু হলো।আবহাওয়া যতোটা নাইস থাকবে ভেবেছিলাম অতোটা নয়। গুগল সবসময় সত্য বলে না। কখনো কখনো মস্করা করে বাংলাদেশের আবহাওয়া অফিসের মত।
এলাকার নাম কেপ ব্রেটন। সেইখানেই এই ২৯৮ কিলোমিটার লম্বা ট্রেইল। ডানপাশে পাহাড়। বাম পাশে উত্তাল আটলান্টিক। কখনো কখনো পাহাড় টপকে ঢুকে পড়া এক চিলতে হারবার। এইসব হারবারে আবার অতো ঢেউ নেই। হামবড়া ভাব নেই। মুখচোরা নতুন জামাই'র মত লাজুক মেজাজ। লেকের পানির মতো টলটলা শান্ত পানি। সেখানেই লোকজন কায়াকিং করছে। অবশ্য আরো খানিক পেরুতে একটা সত্যিকারের লেকও আছে।হাতের ডানে পড়ে। লেক আইন্স্লি। মাথা খারাপ করা সুন্দর। মাথা এতোটাই খারাপ হলো- রেলগাড়ীর লাইন ভেঙে লেকের অন্যপাশটাও ঘুরে এলাম। এই দেশে তো আর মার্শাল ল জারি নেই যে নিয়ম ভাঙলেই গুলি! নিয়মকে না বললেই হাতুড়ির কিল!
লেকের অন্য পাশটাও চমৎকার। আঁকাবাঁকা পাহাড়ের খাঁজে খাঁজে মেঘ লুকিয়ে আছে। মেঘের ঘোমটা পরে আইন্স্লি লেক। ঘোমটার ফাঁক গলে চোখ বেশীদুর যায় না। তারপরেও নতুন বরের মতো আমাদের অপচেষ্টা- আরেকটু দেখার। দয়া করে মাঝে মাঝে মুখ তুলে রূপ দেখালেন মিস আইস্লি। লেক ছাড়ইয়ে রাস্তা এগিয়েছে কোন সূদুরের পার। একবার ডানে, একবার বামে। একবার উঠে, একবার নামে। এই উঠানামায় আমাদের যখন একেবারে স্ট্রবেরী ঝাঁকানো মিল্কশেক হবার জোগাড় তখনই পোঁছালাম স্কাইলাইন ট্রেইলের মুখে।
কানাডা দিবসের লম্বা উইকেন্ড। তারপরেও তেমন ভীড় নেই। একপাশে গাড়ী পার্ক করে স্ট্রলার সেট করতেই দেখি আশেপাশে কেউ নেই। যদ্দুর পৌঁছেছে, ওদের দেখতে দূরবীন লাগবে। আমরাও তাড়াতাড়ি দৌড়ুতে শুরু করলাম। ছ' কিলোমিটার রাস্তা- আসা যাওয়া বারো। স্ট্রলার ঠেলে যাওয়া তো আর যা'- তা' কথা না। আমাদের এক হালি জনসংখ্যার পরিবার নিয়ে দৌড় লাগালাম স্কাইলাইনের দিকে। সূর্য ডোবার আগেই ফিরতে হবে যে!
কীভাবে বারো কিলোমিটার হাঁটা হলো, মশার কামড় আড় মশা খাওয়া হলো, মুজ দেখেছইলাম কি দেখিনি, সাগরে ডুব দিয়ে থাকা তিমি মাছেরা লেজ ঝাপটিয়েছিলো কী ঝাপটায়নি- সে এক বিশাল ইতিহাস। এরপরে আছে পাথরভাঙা ঢেউয়ের গল্প, পাথর কুড়িয়ে পাটা-পুতা বানানোর গল্প, রোজা-রিহামের প্রথম সাগর ছোঁয়ার গল্প, দূর থেকে দূর্গেশনন্দিনীর দূর্গ টাইপের হোটেল দেখার গল্প, কিংবা স্বর্গের ড্রইংরুমের মতো সাগরপাড়ের সেই কটেজের গল্প। অনেক লম্বা কাহিনী! অতো লম্বা ক্যাচালের টাইম আজ নেই। ন্যাদাগ্যাদার ডায়াপার পাল্টানোর সময় হয়েছে। পরে কখনো সময় হলে শোনাবো সেইসব গল্প। আপাতত ক'টা ছবি দইলাম-সেটা দেখেই দিল ঠান্ডা রাখতে পারেন। গুড নাইট!
©somewhere in net ltd.