নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কমজান্তা দার্শনিক

কমজান্তা দার্শনিক › বিস্তারিত পোস্টঃ

বান্দরবান ১

২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৫ ভোর ৫:৫১

বান্দরবান মুভ করলাম সাতানব্বইতে। ১৯৯৭। মধ্য জুলাই।

ফার্ণিচারভর্তি ট্রাকের পেছনে পাতা সোফায় বসে নাবাবের মতো বান্দরবান যাচ্ছি। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রোডে দোহাজারী ব্রীজ। ব্রীজটার নিচে হলো বান্দরবান থেক বয়ে আসা এক পাহাড়ি নদী। স্থানীয়রা বলে শঙ্খনদ। তখহনো জানিনা এই নদীতার সাথেই হবে আমার আজন্ম মিতালি।

নদীর পরে খানিকটা সবুজ পেরেুলেই কেরানিহাট । এরপর বামে ঘুরতে হয়। এটাই বান্দরবাানের রাস্তা। আমাদের আমলে কাজল বাবুর পূরবী আর আর অন্য কোন বাবুর পূর্বণিই ছিল বান্দরবান যাবার দুইমাত্র ভরসা। চট্টগ্রাম টু বান্দরবান ৩০ টাকা,ভাড়া।

কেরানীহাট থেকে বামে ঘুরার সাথেই ভেসে আসে ঠাণ্ডা বাতাস। দূরে, মেঘের আঁধারে দেখা যায় চিম্বুক এলাকার সব পর্বতসারি। একটু এগুলে পরেই বাইতুল ইজ্জত। ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব খান — আমাদের হানিয়া মীরের দাদাঠাকুর নাকি এই এলাকায় পাকিস্তান রাইফেলসের ট্রেনিং সেন্টার বানাতে এসে এই নাম রেখে গিয়েছিলেন । রোমান্টিক নাম (ফ্যাক্ট চেক করা হয়নি)।

এইখানে এখটা সিনেমা হল আছে। স্থানিয় একশ গ্রামের ছেলেপেলের চরম কাংখিত ডেটিং স্পট। এলাকার লোকের রোষ থাকলেও উর্দিওয়ালাদের সাথে বাইচালি করার সাহস পায় না।

এখানেই মাটিতে ঢেউয়ের খেলা শুরু হয়। এরপর একটা নদী। তারপর বাজালিয়া ।

আমরা বান্দরবানে আস্তানা গড়ার কিছুদিন আগেই দক্ষিণ চট্টগ্রামে হয়ে গেছে ভয়াবহ এক বন্যা। প্রতি দশ-বারো বছরে এই এলাকায় এইরকম একটা স্পেশাল বন্যা হয় - দুকূলভাসানো বন্যা। পাহাড় থেকে হঠাৎ হড়কা বাণ এসে ভাসিয়ে দেয় গোটা এলাকা-

এলাকা মানে দক্ষিণ চট্টগ্রামে। পটিয়া, সাতকানিয়া, কক্সবাজার এই অঞ্চল। একেকটা বন্যা আগের সব বন্যার রেকর্ড ভেঙে দেয়; রেখে যায় স্মৃতি জাগানো কিছু পরিবর্তন। সরকারের পরিকল্পনাহীনতার কিছু চিহ্ন। সাতানব্বই'র সেই বন্যার স্মৃতিসৌধ হলো সেই বাজালিয়া ব্রিজ।

বন্যায় সিমেন্টের পার্মানেন্ট ব্রিজটা ভেঙে যাওয়ায় একটা ছোট্ট বেইলি ব্রিজ হয়েছিল সাময়িকভাবে । সেই সাময়িক ব্রীজ পরের বিশ বছর বান্দরবানকে মেইনল্যান্ডের সাথে বেঁধে রাখার একমাত্র সেতু হয়ে ছিল. যুদ্ধবিদ্ধস্ত এলকার সেতুর মত সেই বেইলি ব্রিজ।

বাজালিয়ার পর প্রথমে হলুদিয়া বাজার —আমরা বলি অলইদ্দ্যা বাজার।- রাস্তার এক পাশে সাতকানিয়া, এক পাশে বান্দরবান। আগে এখানে দিনে দুপুরে ডাকাতি হত। বনরুপা পাড়ার কমলকে এখানেই ডাকাতেরা গুলি করে মেরেছিল। এরপর একটা পাহাড়ি বাঁক পেরুলেই নদী। তারপর একটা বাজার।নাম সুয়ালক বাজার।

সুয়ালকেই শুরুয়াত, মানে বান্দরবানের শুরু মুলত এখানেই। পাহাড়গুলো এখন একটু বড় হতে শুরু করেছে। গাড়িটা খানিকটা হাঁপিয়ে যায় রাস্তা পেরুতে। যাত্রি নামা উঠা হয়। বাসের যাত্রীদের চেহারা পালটে যায়; পালটে যায় ভাষা, পোষাক, লাগেজ কিংবা তামুক খাওয়ার কায়দা। তারপরে রাস্তা চলে গেছে টানা পাঁচ কিলোমিটার । দেবদারুর গাছের মত সোজাসরল। এরপরেই রেইচা। রেইচায় আছে একটি ছোট বাজার। তারপরেই আর্মি ক্যাম্প।

এখানে এলেই চেক করা হয় বাড়ি কোথায়, বাপের নাম কি —এইসব, জাস্ট মামুলি চেকিংয়ের জন্যই। বান্দরবান কেন যেন খুব অনিরাপত্তায় ঢাকা। তখনো শান্তি চুক্তি হয় নি। আমার বেশ লাগে সেই উঁচুতে বাঁধা বেড়ার চৌকিগুলো; সেবার ওয়েস্টার্ন গল্পের সেই বেড়ার চৌকির কথা মনে পড়ে যায়। কিংবা দরিয়া নগরের জসিমের মারামারিস সেই লাস্ট সিন - আইন হাতে তুলে নেবার আগেই যেখানে পুলিশ চলে আসে।

আমার নানারা নাকি পাশের এলাকার জমিদার ছিলেন — যেইটা এখনকার দিনেও চকরিয়া-নাইক্ষ্যংছড়ি নামে পরিচিত। তাই নানা কাজে এই এলাকাতেই আসেন। প্রতইবেশীদের জমিদারিতে। জমিদারিটি তখন বোমাং রাজাদের দখলে; খাজনা-খারিজ তাদের নামেই। সেইখানে নাকি একটা খেদা হয়েছিল।

রেইচায় আমার নানা এসেছিলেন হাতির খেদা দেখতে। অনেককাল আগে — ১৯৪০ বা এর আশেপাশের সময়। হাতির খেদা পড়েছিল তখন রেইচাতে । মোটামুটি গাছের লগ দিয়ে একটা বড় জায়গা ঘিরে ফেলা হত; পরে একটা জায়গা দরজার মতো খোলা রাখা হতো — বিশাল দরজা মাথার উপরে ঝুলানো থাকতো। আশেপাশে কলাগাছ, পাহাড় আর বিশাল জঙ্গল। এইখানেই হাতির পাল ঘুরে বেড়াত নিজের মনে। তাদের ভাঁড়ার ঘর আর আড্ডাবাজি এখানেই — অতর্কিতে ঢাকঢোল পিটিয়ে হাতিকে বিরক্ত করে খেদায় ঢুকানো হতো; এরপর খেলা শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হতো। হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালার মতো ঢাকিরা সব পালিয়ে যেত। এরপর দুম করে পড়ে যেত লগের সেই ভারী দরোজা। হাতীরা তখন বন্দী ছলনায়। বেরোনোর জায়গা খুঁজে, এক পর্যায়ে তার ক্লান্ত হয়ে পড়ত,,,, টানা বেশ কিছুদিন না খাইয়ে তাদের ট্রেইন করা হত — ধীরে ধীরে খেদায় আনা হত, নানা কৌশল শেখানো হত। এনিওয়ে, ধান ভাানতে শিবের গীত।

এরপর রেইচার বিশাল উত্থান পেরুলেই মেঘলা — একটা ওভাররেটেড লেক আছে এখানে। আমরা পশুপাখীর চিড়িয়াখানার গেট দিয়ে চুরি করে ঢুকতাম টিকেট ছাড়াই — আরে, এলাকার ছেলেদেরও টিকেট লাগে নাকি? আমরা এখানে পেয়ারা চুরি করে খেতাম। তবে আমাদের আমলে ছিল অন্য জিনিস। সুনসান-শান্ত লেক । পর্যটক নেই বল্লেই চলে নতুন যখন ঝুলন্ত ব্রিজ হল, আমি আর লালন খুশিতে, ঘোরতে , ঠেলায় মেঘলা এসে গামছা পরে লাফ দিতাম এই লেকের জলে। আহা- এখনো ছবির মতো মনে আছে। যায় দিন ভালো, আসে দিন খারাপ — মেঘলা এখন বদলে গেছে। যাক, সেগুলো পরে বলব।

আগে শুরুর দিকের কথা বলি।

বান্দরবানের প্রথম স্বাগতিক এলাকার নাম মেঘলা। এখানেই স্থানীয় সরকারের অফিস। এর পরে যৌথখামার; এই এলাকার কানাপাড়া এবং দাঁতভাঙাপাড়া বেশ বিখ্যাত ছিল এককালে। পরিসংখ্যান বিভাগের জনসংখ্যা জরিপের খাতায় এই এলাকায় নাকি অবিবাহিত যুবতী-তরুণীর সংখ্যা শতকরা হিসেবে বেশ বেশি ছিল। সেইটাই নাকি যাত রহস্যের কারণ।

এরপরেই এলোমেলো পাহাড় ভেঙে নামলে সোজা বান্দরবান। আমার স্বপ্নের শহর। আমার প্রাণের শহর। আমাদের প্রাণের মদীনাকে বলা হয় মদীনাতুল মুনাওয়ারাহ — মানে আলোকিত শহর। আহা, আমার বান্দরবান, আমার মুনাওয়ারাহ। কৈশোর বিকাশের দিনে, যখন পৃথিবী বুঝতে শুরু করেছিলাম, সেই তুমুল তেরো বছর বয়সে, বান্দরবান ছিল আমার শহর। আমাদের শহর। আমাকে আলো দেবার শহর, আমার আলোয় আলোকিত হবার শহর।

এর আগে ছিলাম নোয়াখালিতে। পুষ্টিহীন তরুণীর মতো নোয়াখালীর সমতল ছেড়ে সবুজ যৈবতী বান্দরবান যাওয়া আমার কাছে ছিল যেন বাস্তবের ক্যাকোফোনি ছেড়ে হ্যাগার্ডের গল্পের মত কল্পনার এক রাজ্যে ঢুকে যাওয়া। স্বর্গের ড্রইংরুমে ঢুকে পড়ার মতো অদ্ভুত এক ব্যাপার। চোখ বন্ধ করলেই আমরা যেমন বিভ্রমের মতো কোনো এক গোপন আস্তানায় পৌঁছে যাই, তেমনই একটা ব্যাপার।

নোয়াখালী আমার অপ্রেমের শহর তা নয়; পার্থক্য শুধু লাইফ-স্টেজে। নোয়াখালীর আলাপ অন্য কোনো চাঁদে হবে সোনা।

বান্দরবান গিয়ে ভর্তি হলাম স্কুলে — বান্দরবান সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে। আমার আগের স্কুলে একটা কাহিনী ছিল। নোয়াখালি জিলা স্কুলে আমি ক্লাস নাইনে ছিলাম, বাণিজ্যে। বাবা চাইলেন আমার বিজ্ঞানী হওয়া উচিত; তাই আবার ক্লাস এইটে রাখার সিদ্ধান্ত নিলেন।

একদিন ডাক পড়ল সন্তোষ হেডমাস্টারের রুমে। স্যারজি নানান রকম ইন্টারভিউ নিলেন। টপাটপ সব টপকে গেলেও আটকে গেলাম শেষ প্রশ্নে। স্যার জিজ্ঞেস করলেন: এ আর বি যোগ করলে কী হয়?

উত্তরটা আমি জানতাম। কারণ আমাদের নোয়াখালি জিলা স্কুলের ওয়াশরুমে গোলাপি চক দিয়ে লেখা ছিল কথাটা — আমার বন্ধু সুলাইমান লিখেছিল: এ যোগ বি, মানে “আনোয়ার যোগ বৃষ্টি, আমাদের গার্লস স্কুলের বৃষ্টি”। স্যারকে ডিটেলে বলব কী না দ্বিধা করছিলাম। পাশ থেকে নাসির আংকেল বাতলালেল “এরটা বীজগণিতের জিনিস বাবু, সিম্পল।” তখনই হাসতে হাসতে আমি উত্তর বলে দিলাম। ভর্তি হয়ে গেলাম। ওভারথিংকিং আসলেই আমার মাতঃা খাবে। (আচ্ছা, ফেনীর ছেলে, কৃষিবিদ নাসিরউদ্দীন — ১৯৯৭ সালে বান্দরবানে ছিলেন; এই লোক এখন কোথায় কেমন আছেন?)

প্রথম দিনে ক্লাস পড়ল দোতলায়। দরজা থেক গোটা ক্লাস স্ক্যান করে মাঝের সারির পেছনের সিটে গিয়ে বসলাম। দুইটা নিরীহ চেহারার ছেলে ছিল দেখে মনে হয়েছিলো তাদের পাশে বসা নিরাপদ। বসে পড়লাম। সেটা ছিল তাহের স্যারের ক্লাস।

পেছনের দিকে বসার কিছু বাড়তি সুবিধা আছে — গুজগুজ, ফুসফুস করা যায়। পেছহনে বসার সুবিধা নিয়ে আমরা আলাপ শুরু করলাম —
– নাম কী তোমার? (জিজ্ঞেস করলো গোমড়ামুখে দুষ্টু হাসি লুকানো ছেলেটা, পরে যার নাম জেনেছিলাম রাজীন বড়ুয়া।আমাদের ফারস্টবয়, এখন নামকরা সার্জন।)
– আমার নাম রুমী। তোমার?
– আমি রাজীব। পাশেরটার নাম মনি।
– নতুন আসছ? তোমার বাপ কী করে? (মনি জিজ্ঞেস করল। সেই আমলে এইটা জরুরি প্রশ্ন; সোশ্যাল স্ট্যাটাস-চেক করা; ক্লাসে ম্যান্ডেটরি না হলেও এর একটা বড় ভূমিকা ছিল।)

বাপের সরকারি চাকরি জানার পর জানলাম ওদেরও দুজনের বাপের সরকারি চাকরি। তারপর সুধালো, রোল কত ছিল আগের স্কুলে? (এইটাও স্ট্যাটাস-চেক প্রশ্ন।) বান্দরবানে এসে আমার রোল ৫৬; স্বপন মার্মার ৫৭। আমরা দুজনই আগস্ট মাসে ভর্তি হওয়া দুই নতুন ছাত্র। আগের স্কুলে আমার সত্যকারের রোল ছিল ২৭; কিন্তু বখে যাবার আগে, তার আগের ক্লাসে ছিল ছয়। স্ট্যাটাস ইমেজ রাখতে হলে হালকা মিথ্যা বলা যায় - ২৭ বলে লোয়ার স্টfাসে নামার মানে হয় না- তাই বল্লাম আমার রোল ছয় ..। এইসব ফটকামিতে মনে হয় তেমন বেশি গুনাহ হবে না। আল্লাহ নিশ্চয়ই সবজান্তা। ছয় শুনে সবাই প্রীত হলো।

ওরা জানত না আমি খাঁটি চাটগাঁইয়া;জিজ্ঞেসই করেনি। অথচ চাঁটগাঁইয়া আমার মাতৃভাষা। শুনলাম মনিকে রাজীব জনান্তিকে বলল, “ইতারে ডেহি বুজা ন যায়,,, সুদানির ফুয়া তলে তলে জাউরগা আসে… ” শুনে আমার মন ভাল হয়ে গেল। বুঝে যাই এদের সাথে আমার জমবে। এরাও আরেক গ্রুপ জাউরগা ফুয়া। Birds of same feather flock together. (Proud to say, আজকে আটাশ বছর পরেও সাদাত আমার প্রতিদিনের আলাপের সঙ্গী। কথা না হলেও প্রতিদিন রিল্‌স আদান-প্রদান হয়।)

পরবর্তীতে জানলাম, ক্লাসে আছে রোবোকপ — যার হাঁটাচলা অবিকল রোবোকপের মতো। পিচ্চি দেখতে একটা ছেলে আছে নাম- জলি মং — একেবারে অমায়িক, কিন্তু ধাইন্যা মরিচের ঝাল বেশী- রোল তইন। আর আচে জেতি — ক্লাসে সবচেয়ে পরিপূর্ণ একটা স্টুডেন্ট। সোনার টুকরা ছেলে, যেমন মেধায় তেমন কথায়। জেতি জাতে মার্মা, কিন্তু বাংলা বলে তৌকির আহমেদের মতো। রাজীব বড়ুয়া — তখন বোধহয় ক্লাসে সেকেন্ড বয়; জলি মং থার্ড। আর কার রোল মনে নেই। পরের বছর আমার রোল ওদের পেছনে এসে থামে, তাই মনে আছে।

আমরা থাকতাম রহিম চৌধুরীর বিল্ডিংয়ে — দোতলায়। মেম্বারপাড়ায় ঢোকার মুখে প্রথম বাড়ি; সার্কিট হাউসের ঠিক নিচে। আমার সব মনে আছে। প্রিয়তমার স্পর্শের মতো তরতাজা করে মনে আছে। রহিম চৌধুররির বিল্ডিং বাংলাদেশের অষ্টমাশ্চর্য হওয়ার দাবীদার,
এই বাড়িটা অদ্ভুত — অন্তত তখন ছিল। তিনতলা বাড়ি, কিন্তু কোনো সিঁড়ি নেই। রাস্তা থেকেই হেঁটে প্রতিটা ফ্লোরে যাওয়া যায়। পাড়ায় একমাত্র এই বাসাই সেবছরের বন্যায় ডুবে নি।

বাসার পাশেই ছিল মাহবুব কমিশনারের বাড়ি; মনে হয় উড়োজাহাজ-মার্কা মাহবুব।এলাকায় আরেকটা ছিল হাতী মাহবুব,,,, তবে উড়োজাহাজ মাবুবের ছেলে মামুনছিল আমার ক্লাসমেট, আবার সেই সময়ের বেস্ট ফ্রেন্ড। মামুনদের বাড়ির পেছনেই নিজামদের বাড়ি।

আমরা বলতাম নিজাম বলি। নিজামরা চার ভাই, তিন বোন। এক ভাই অবশ্য মারা গেছে — নাম কী ছিল মনে নেই; মনে হয় শাহ আলম। কিন্তু ডাক নাম ছিল জাম্বুরা।

ছেলের কোনো এক রোগ হয়েছিল নাকি কুকুরে কামড়েছিল; সংক্রমণ হয়ে অবস্থা খারাপ হয়েছিল। বান্দরবানে তখন হয়তো ভালো চিকিৎসা ছিল না। কবিরাজ বলল ছেলের নাম পাল্টে রাখতে হবে যমরাজকে ফাঁকি দিতে, সেই সূত্রেই নাম রাখা হয় জাম্বুরা। টেম্পরারি নাম। কিন্তু নাম বদলে গেলেও ফাঁকি দেয়া গেল না — তিন দিন বেঁচেছিল জাম্বুরা; কিন্তু সেই তিনদিনের নামই স্থায়ী হয়ে গিয়েছিল বুড়ো-বুড়ির বাকী জীবনে। সারাদিনে একেকজন আরেকজনকে “জাম্‌বুরার মা” কিংবা “জাম্বুরার বাপ” বলে সম্বোধন করতো — ডাকে, ভালবাসায়, প্রয়োজনে, বিরক্তিতে, ক্ষোভে, আদরে, অভিমানে, অভিসম্পাতে — এই নানাবিধ কারণে তাদের প্রায় বিশ বছর আগে মারা যাওয়া বড় ছেলে হয়ে উঠতো স্মৃতির হাতিয়ার। প্রতিদিন ফিরে আসতো অদ্ভূত সেই মেলানকলিক নাম নিয়ে । জাম্বুরা। অদ্ভূত — কীভাবে একজন মানুষ দুনিয়ায় না থেকেও থেকে যাওয়া মানুষের প্রতিদিনের জীবনে বর্তমান হয়ে থাকতে পারে?

খুব ক্যান্ডিডভাবে বললে, তেমন একটা ‘বর্তমান’ হবার অবচেতন লোভ আমারও আছে। মন চায় , থেকে যাই মানুষের গল্পের টেবিলে ক্ষুধাজাগানো অ্যাপিটাইজারের মতো — বিলাসী অপ্রয়োজনে।

তার পরে, হে পাঠক, আপনি কেমন আছেন? দিনকাল কেমন যাচ্ছে? আমাকে কি কখনো মনে পড়ে আপনার গল্পের টেবিলে?

* বয়স চল্লিশ হয়েছে আরো বছর দেড়েক আগে, নানান রকম রেজল্যুশন ছিল। কোনটাই রাখা হয় নি। একটা রেজল্যুশন ছিল জীবনটাকে একবার ফিরে দেখা। স্মৃতি রোমন্থন। একেবারে যেমনতেমনভাবে । আজকে সেটাই শুরু করলাম, নাম "চল্লিশ পেরেুলে চালশে"। সেম সস্তাগদ্য ঢঙেই। আজকে গেল প্রথম কিস্তি। আশা করি গোটা গল্পটাই বলব। খানিক রেখে ঢেকে, খানিক খোলামনে।

আমার সাথে আপনার বিশেষ কোন স্মৃতি মনে করিয়ে দেয়ার অনুরোধ রইলো- পরবর্তী কোন লেখায় যাতে এড করতে পারি।

#চল্লিশ_পেরেুলে_চালশে প্রথম কিস্তি
#সস্তাগদ্য
#জাফর_সাদেক_রুমী

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.