নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মন রে, কৃষিকাজ জানো না; এমন মানবজমিন রইল পতিত আবাদ করলে ফলত সোনা! রামপ্রসাদ সেন ([email protected])
অার মানুষের কাছে বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী স্বীকৃত হলেও অাসামের মানুষের কাছে তিনি সাক্ষাত দেবদূত । অাসামের স্বাধীকার অান্দোলনের জন্য সংগ্রাম করেছেন, তাদের অর্থনৈতিক ও সামাজিক মুক্তির জন্য লড়েছেন । তিনি দীর্ঘদিন এ দেশে বন্দি ছিলেন । বেলুচিস্তানের মানুষের কাছে যেমন অাকবর বোগতী, অামাদের কাছে যেমন বঙ্গবন্ধু; তেমনি অাসামবাসীর কাছে মহাপুরুষ অনুপ চেটিয়া । অাকবর বোগতীকে যে পরিণতি ভোগ করতে হয়েছে, অনুপ চেটিয়াকেও হয়ত একই পরিণতি ভোগ করতে হবে, পূর্ববঙ্গ স্বাধীন না হলে বঙ্গবন্ধুকেও হয়ত একই পরিণতি ভোগ করতে হতো । সম্প্রতি বন্দি চুক্তি প্রত্যর্পনের মাধ্যমে অনুপ চেটিয়াকে ভারতের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে । কাশিমপুর কারাগার থেকে বাংলাদেশে বন্দীত্ব জীবনের দুঃসহ কষ্ট-যন্ত্রণা, আসামের স্বাধীনতার প্রাসঙ্গিতা এবং উলফার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে অামাদের সময়. কম এর প্রতিবেদক মাছুম বিল্লাহর কাছে একটি চিঠি লিখেছিলেন বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন ইউনাইটেড লিবারেশন ফ্রন্ট অব আসামের সাধারণ সম্পাদক অনুপ চেটিয়া । গত বছর জানুয়ারিতে কারাগারের একটি মাধ্যমে ওই চিঠিটি এ প্রতিবেদকের কাছে আসে । কিন্তু চিঠিটি তিনি কাশিমপুর কারাগারে বসে লিখলেও কৌশলগত কারণে তিনি রাজশাহী লিখেছিলেন এবং রাজশাহী কারাগারে অবস্থানকালীন তারিখ উল্লেখ করেছিলেন । স্পষ্ট সেই চিঠির খন্ডাংশ নিয়ে ভারত ও বাংলাদেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে । কিন্তু সেই চিঠির পুরো অংশ এখনও সবার অজানা । অনুপ চেটিয়ার সুন্দর হাতের লেখার সেই আমাদের সময়ের পাঠকদের জন্য চিঠিটি পুরো অংশ তুলে ধরা হলোঃ
প্রিয় মাছুম,
শুভেচ্ছা গ্রহণ করিবেন। আপনার ইতিবাচক প্রচেষ্টার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি। নিরাপত্তা নামক কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে আপনার লোক আমার কাছে কাগজ দুটি পৌঁছে দিয়েছে। তার কাছে কৃতজ্ঞ। বিশ্বাস-অবিশ্বাসের কঠিন পরীক্ষার মধ্যে নিমজ্জিত হইয়া আমার ভবিষ্যৎ রাজনীতি, মুক্তি আদি বিষয় অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত থাকায় আপনার কিছু প্রশ্নের উত্তর অনিচ্ছাকৃতভাবেই সাবধানে দিতে হয়েছে। কিছু এড়াইয়া যাইতেছি। তার জন্য ভুল বুঝবেন না। মুক্ত হইয়া নিশ্চয় মনের ভাবনা বিলাক উজার করিব।
‘আমি বাংলাদেশ সরকারের কাছে রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করার মূল কারণ ছিল রাজনৈতিক কৌশল। আমরা অবগত, ভারতকে অসন্তষ্ট করিয়া বাংলাদেশের যে দল বা জোটই সরকার গঠন করবে, তারা কখনো ভারতের বিরুদ্ধে যাইয়া আমাকে রাজনৈতিক আশ্রয় দিবেনা। ২০০৩ সালে বাংলাদেশ সরকার আমার রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন খারিজ করে দিয়েছিল। তখন আমরা পুন: বিবেচনার্থে সরকারের কাছে আবেদন করিয়া উচ্চ আদালতেও একটি রিট করিয়াছিলাম। উচ্চ আদালত আমাকে রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত নিরাপত্তা হেফাজতে রাখার রুল জারি করেছিল। এ পদক্ষেপ গ্রহণের মূল কারণ ছিল বাংলাদেশ সরকার যাতে আমাকে ভারতের কাছে হস্তান্তর করতে না পারে। ভারত অনেক চেষ্টা আরম্ভনী থেকে করিয়া আসছিল। কিন্তু বাংলাদেশের সরকার এবং জনগণের সযোগিতা আমাদের পক্ষে থাকায় তা সম্ভব হয়নি। ভারত সরকার ঘোষণা করেছিল প্রত্যর্পণ চুক্তি করিয়া আমাকে নিয়ে যাইবে। আমিও অপেক্ষা করিয়াছিলাম- দেখি তারা বন্দী প্রত্যর্পণ চুক্তি করিয়া আমাকে নিতে পারে কি না? ফেব্রুয়ারী’১৩ সালে দুই দেশের মধ্যে বন্দী প্রত্যর্পণ চুক্তি করিয়া তার আওতায় আমাকে নিতে পারেনি। ভারত সব চেষ্টা চালাইয়া অকৃতকার্য হওয়াতে আমি সিদ্ধান্ত নিলাম-এখন আমার প্রত্যর্পণের জন্য নিজ উদ্যোগ গ্রহনের উপযুক্ত সময়। সুদীর্ঘ ১৬ বছর বন্দীত্বে কাটাইলাম। আর কত দিন? এক অনিশ্চয়তার মধ্যে থাকা যায়? বিদেশি বন্দি হিসাবে ভারতকে অসন্তষ্ট করিয়া আমাকে বিগত দিনে মুক্তি দেয়নি ভবিষ্যতেও দিবেনা। আমার দল বর্তমান অসম ভারত সংকট অবসানের চেষ্টায় আছে। এ অবস্থায় অসমের পরিবেশ আমার জন্য অনুকূল হইবে- এ প্রত্যাশা করছি। তার যাওয়ার সিদ্ধান্ত। নিজ ইচ্ছায় যাচ্ছি এক প্লাস পয়েন্ট। অরবিন্দ রাজখোয়া বা পরেশ বরুয়া কোন পক্ষর সঙ্গেই আমার প্রত্যক্ষ যোগাযোগ নাই।
বাংলাদেশের কারাগারের কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে থাকিয়া যোগাযোগ রক্ষা করা সম্ভব নয়। অবশ্য অন্য কোন মাধ্যমে মাঝে মধ্যে বার্তা পাওয়া- তাকে অস্বীকার করা যায় না। সুদীর্ঘ দিনের বন্দিত্বের মধ্যে সত্য বলতে সাক্ষাতকারবিহীন
ভাবেই অতিবাহিত হচ্ছে। অন্য বিদেশি বন্দিদের সঙ্গে সাক্ষাতকারে বিশেষ প্রতিবন্ধকতা আমি দেখিনা। কিন্তু আমাদের ক্ষেত্রে কঠিন প্রতিবন্ধকতা কেন জানিনা। ২০১০ সালে আমি রাজশাহীতে অবস্থানকালে দেশ থেকে বড় ভাই, ভাবী এবং বন্ধুরা আসছিল। কিন্তু কেন জানিনা কর্তৃপক্ষ আমাকে সাক্ষাত করতে দেয়নি এবং এ সম্পর্কে আমাকে জানায়নি। পরে আমি জানতে পারি। যদিও মনের ক্ষোভে কর্তৃপক্ষকে জিজ্ঞাসা করিনি। করলে নিশ্চয় কোন কারণ তারা দেখাইত। কারণ জানিয়া লাভ কী? তার পরে ২০১১ সালের যতদূর সম্ভব জুন মাসের শেষ সপ্তাহে অনেক চেষ্টা, দেন দরবার করিয়া আমার এক বন্ধু আসিয়া রাজশাহীতে প্রথম সাক্ষাত করে। তার কাজ থেকে অসমের, দলের অনেক খবর জানতে পারি ( সে অবশ্য দলের লোক নয়)। এর পরে ২০১২ সালের ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে দুই জন শুভাকাঙ্ক্ষী আমার সঙ্গে সাক্ষাত করিয়া অসমের বাস্তব পরিস্থিতি অবগত করে। তারা অবশ্য দলের সঙ্গে পূর্বে ছিল। এর বাদে বন্দীত্ব জীবনে কোন সাক্ষাতকার নেই।
অসমের জনগণের জন্য স্বাধীনতার প্রয়োজনীতা আছে তাকে দৃঢ়তার সহিত বিশ্বাস করিয়া সশস্ত্র সংগ্রামের প্রতি পূর্ণ আস্থা রাখিয়া আমরা অসমের স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছিলাম। এখানে কোন সন্দেহ-সংশয় অতীতে ছিলনা এবং বর্তমানেও নেই। ভিক্ষা করিয়া, অনুনয়-বিনয় করিয়া কোন প্রাপ্য বর্তমান যুগে আদায় করা যায়না। সে ক্ষেত্রে স্বাধীনতা অতি দুরুহ ব্যাপার। এ ক্ষেত্রে অনেক লম্বা লিখতে হয়- যা বর্তমান পরিপেক্ষিতে সম্ভব নয়। স্বাধীনতার সংগ্রাম দীর্ঘমেয়াদী হইয়া থাকে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রেই দেখেন- আরম্ভ সে ১৯৫২ সালের পরবর্তী থেকে। অবশ্য নয় মাস যুদ্ধ করিয়া দেশ স্বাধীন করা সম্ভব হয়েছে ভারতের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণের জন্য। বর্তমান যুগে স্বাধীনতা লাভের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক রাজনীতির সহযোগিতার প্রয়োজন থাকে। ৯/১১ ও পরবর্তীতে আমনিয়ন্ত্রক, স্বাধীনতা সংগ্রাম, সন্ত্রাসবাদ,সাম্রাজ্যবাদী ঔপনিবেশিকতাবাদীরা একাকার করিয়া জটিলতা সৃষ্টি করিয়াছে।
ঐতিহাসিকভাবেই অসম কখনো ভারত সাম্রাজ্যের অধীনে ছিলনা। ইতিহাসে অশোকের সাম্রাজ্য, মৌর্য্য সাম্রাজ্য বা মোগল সাম্রাজ্যর সময় সমগ্র ভারতবর্ষ অধীনে থাকলেও অসম কখনো সে সাম্রাজ্যের অধীনে ছিলনা। ব্রিটিশরা এক অবৈধ ‘ইয়ানদাবুু’ চুক্তির মধ্যে অসম দখল করিয়া নেয় ১৮২৬ সালের ২৪ ফেব্রয়ারি। এ চুক্তি হয়েছিল তৎকালীন বার্মার শাসনতন্ত্র এবং ব্রিটিশ রাজতন্ত্রের মধ্যে। অসমের কোন লোক স্বাক্ষর করেনি। অসমের ভাগ্য নির্ধারণ করার অধিকার বার্মার ছিল না। ব্রিটিশরা অসমকে ভারতের অন্তর্ভুক্ত করিয়া (সামিল) স্বাধীনতা প্রদানের সময় অসমের (অবিভক্ত অসম) কিছু লোক শ্বৈলডের দরবার হলে সভা আয়োজন করিয়া ভারতের অন্তর্ভুক্তির বিরুদ্ধাচরণ করিয়া ছিল। কিন্তু তাদের এ দাবি সংগঠিত ও জোরালো ছিলনা। মানুষ সব সময় নিজস্ব স্বকীয় স্বত্ত্বা বজায় রাখতে চায়। প্রত্যেক লোকের এ হইল জন্মগত অধিকার। ব্যক্তির অধিকার প্রতিষ্ঠায় জন্যই রাষ্ট্রযন্ত্রই প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করিয়া থাকে, জনগণের প্রতি বৈষম্য, শোষণ, দমন, লুন্ঠন করার কার্য নিকৃষ্টভাবে প্রমাণিত হয় তখনই রাষ্টের প্রতি জনগণের মনে ঘৃণা, অনাস্থা, ক্ষোভ প্রশমিত হয়। আপনাদের বাংলাদেশের ইতিহাসের প্রতি লক্ষ্য রাখুন। পশ্চিম পাকিস্তানিরা পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালীদের প্রতি কী আচরণ বৈষম্য সৃষ্টি করেছিল। ৭১’র পরবর্তী বাঙালী জনগণের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক অবস্থার সহিত বর্তমানের তুলনা করলেই অসমের স্বাধীনতা দাবীর যুক্তিসঙ্গতা অনুভব করিতে পারিবেন।
আপনি প্রশ্ন করেছেন বাংলাদেশে উলফার কোন লগ্নি আছে কি না ? ভারত সরকার বিশেষ করিয়া বাংলাদেশে উলফার হাজার কোটি টাকার লগ্নি আছে-এমন অপপ্রচার আরম্ভনী থেকে করিয়া আসিতেছে। বিগত নব্বই দশকের প্রথম পর্যায়ে তারা প্রচার করিয়াছিল ঢাকার সোনার গাঁ হোটেল উলফার লগ্নি আছে। আমার মনে হয় বাংলাদেশের জনগণ অবগত সোনারগাঁ হোটেলের প্রকৃত লগ্নীকারী কে? এ অপপ্রচার গ্রহণযোগ্য না হওয়াতে পরবর্তীতে অপপ্রচার করে ঢাকার আশেপাশে মুরগী ফার্ম, গার্মেন্টস ফ্যাক্টরীতে উলফার লগ্নি আছে। তার কোন সত্যতাও প্রমাণিত হয়নি, যার ফলে পরবর্তীতে ঢাকা, সিলেট, চট্রগ্রাম আদি স্থানের কিছু আবাসিক হোটেলে উলফার লগ্নি আছে এ অপপ্রচার করে। বাংলাদেশে প্রচার মাধ্যম এবং সরকারী গোয়েন্দা বাহিনী অনুসন্ধান করিয়া তার কোন সত্যতা খুঁজে পায়নি। প্রকৃত সত্য হলো, বাংলাদেশে উলফার কোন লগ্নি ছিলনা এবং নেই। এখানে উল্লেখ করতে চাই-মাঝখানে প্রচার মাধ্যমে ঢাকার এক শিল্পপতির সঙ্গে পারিবারিক ও ব্যবসায়িক সম্পর্ক আমার আছে তেমন প্রচার হয়েছিল। আমি স্পষ্ট করতে চাই-আমার সঙ্গে কোন পারিবারিক সম্পর্কিত কোন লোক বাংলাদেশে নেই এবং কোন লোকের সঙ্গে ব্যবসায়ীক সম্পর্কও নেই। অসমের জনমত বিপ্লবের বিরুদ্ধে যাতে যায় তার জন্যই এ অপপ্রচার। অসমে হাজার কোটি টাকা সংগ্রহ করার মতন পুজিঁপতি, শিল্পপতি ধনী লোক নেই।
১৯৯৭ সালের ২১ ডিসেম্বর আমার গ্রেফতারের সময় পরিবার, একটি সাত বছর ছয় মাস বয়সের পুত্র এবং একটি ২ বছর ৬ মাস বয়সী কন্যা সন্তান আমার সঙ্গে ছিল। আমি পরিবারকে নিজ জন্মভূমিতে চলিয়া যাইতে বলেছিলাম। কিন্তু অতি পতিভক্ত, আজীবন সংগ্রামের দুখ-কষ্টের সমভাগী হইতে মানসিকভাবে দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ আমার পত্নী আমাকে বাংলাদেশের কারাগারে আবদ্ধ রাখিয়া নিজ জন্মভূমিতে যাইতে অনিচ্ছুক ছিল। সত্য বলতে ২০০৮ সাল পর্যন্ত তাদের বার্তা মাঝে মধ্যে কিছু বাংলাদেশী সহানুভূতিশীল, হৃদয় দরদী, মহৎ লোক মারফত বার্তা পাইয়া থাকতাম। ২০০৮ সালের প্রথম ভাগে আমি শেষ পত্র পত্নী এবং কন্যা সন্তান থেকে পেয়েছিলাম। সন্তানের পত্র পাইয়া সে দিন আমি রাত্রে শোয়ার সময় অনেক কান্দছিলাম। কন্যা সন্তান সেদিন লিখেছিল-‘‘বাবা তুমি দেখতে কেমন? অনেকই বলে আমি দেখতে তোমার মতন হয়েছি’’। সুদীর্ঘ ১৬টি বছর পরিবার সন্তানদের সাথে আমার সাক্ষাৎ হয়নি। সন্তানদেরকে দেখলে আমি চিনবনা এবং তারাও আমাকে চিনতে পারবেনা। আমার এক কপি ছবি পাঠানোর কোন সুযোগ নেই। এ বিশ্বে সুদীর্ঘদিন নিজ সন্তান, পরিবারকে সাক্ষাৎকারবিহীন ভাবে বর্তমান সময়ে কোন উপায় আছে কী নেই আমার জ্ঞাত নয়। কিন্তু আমি তাদের মুখ না দেখিয়া ১৬টি বছর আছি। তাদের থেকে কাছে থেকেই যেন অন্য জগতে আছি-এ সাক্ষাতকার বিহীন মানসিক কি যন্ত্রণা, বেদনা তা বুঝানোর আমার কাছে ভাষ্য নেই। অসম থেকে লোক আসার সময় তাদেরকে আমার পরিবার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করিয়াছিলাম। তাদের থেকে জানতে পারি আমার পরিবার, সন্তানরা অসমে যায়নি এবং তারা কোথায় জানেনা। সত্যি আমি তাদের জন্য চিন্তিত হইয়া আছি। আমি একজন সংগ্রামী হইয়া আমার পরিবার-সন্তানদের জন্য বিশেষ চিন্তা করিয়া, তাদের ভবিষ্যত গড়ার জন্য কোন ব্যাংক-ব্যালেন্স বা সম্পদের পাহাড় গড়িনি। আমি ভবিষ্যতেও জনগণের কল্যাণের জন্য কাজ করিয়া যাইবার আশা রাখি। নিজের সম্পদ গড়ার কোন উচ্চাকাংখা নেই। যাই হউক, বর্তমান পরিবারটি কোথায় আমি জানিনা। ধরিয়া নিচ্ছি তারা জন্মভূমিতে ফিরে যায়নি যখন বাংলাদেশের কোন বস্তি বা আনাচে-কানাচে কষ্টকর, দুর্বিসহ জীবন অতিবাহিত করিতেছে। তারা কিভাবে জীবন ধারণ করিতেছে আমি জানিনা। এ সন্ধিক্ষণে আপনাদের প্রচার মাধ্যমের দ্বারা বাংলাদেশের দয়ালু জনগনের প্রতি আহব্বান জানাব-আমার পরিবারটিকে আপনারা পাইলে মানবিকতার খাতিরে একটু সহানুভুতিপূর্বক সহযোগিতায় আগাইয়া তাদেরকে জীবিত থাকতে সাহায্য করিবেন। আমি বিশ্বাস রাখি, বাংলাদেশের সরকার বা জনগণ এ বিপদগ্রস্ত পরিবারটিকে কাছে পাইলে রক্ষা বা উদ্ধার করার জন্য আগাইয়া আসবে। এ অনুরোধ আমি জানাইব। ধরবেন বর্তমান পরিবারটি আপনাদের সাহায্যপ্রার্থী।
আমার জীবনের মূল্যবান ১৬টি বছর বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে বন্দীত্ব অবস্থায় কাটাইতেছি। সে পরিপেক্ষিতে আমি বাংলাদেশ আমার দ্বিতীয় (ঘর) বাসা বলিতে পারি। এ সময় বাংলাদেশি লোককে অতি কাছ থেকে বুঝার, উপলব্দি করার চেষ্টা করিতেছি। সত্য বলতে বাংলাদেশি লোক অত্যন্ত সহানুভূতিশীল, অতিথি পরায়ণ। দয়ালু এবং মানুষের বিপদের সময় সাহায্য করিতে বিচলিত হয়না। আমার সুদীর্ঘ দিনের বন্দীত্ব অবস্থায় কোন দেখা সাক্ষাত ছিলনা-পূর্বে বলেছি। বন্দীত্বে শ্রেণির মর্যাদা দেওয়াতে আওয়ামিলিগ সরকারকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাব। না হইলে জীবন ধারণ অনেক কষ্টকর হইত। এ সময়ে কারা কর্তৃপক্ষ আমাদের প্রতি সহানুভূতিপূর্বক যে সহযোগিতা করেছে, তার জন্য তাদের সবার কাছে আমরা কৃতজ্ঞ। বাংলাদেশি সহবন্দীরা প্রতিক্ষণে আমাদের প্রতি যা সহায়-সহযোগিতা, অতিথি পরায়ণতা, বন্ধুত্বসুলভ আচার-আচরণ করিয়াছে তার ফলে আমরা যে বিদেশের কারাগারে বন্দী আছি কখনো অনুভব হয়নি। বাংলাদেশের সরকার, কারা কর্তৃপক্ষ ও জনগণের কাছ থেকে যা আদর-যত্ন, ভালবাসা, আন্তরিকতাপূর্ন আচরণ, সাহায্য সহযোগিতা পেয়েছি তা আজীবন স্বরণ থাকবে। এ সহযোগিতা মানুষ হইয়া আমি যদি ভুলে যাই তবে আমি অমানুষ হইতে হইবে। আমি সুযোগ, সুবিধা পাইলে অবশ্য ভবিষ্যতে বাংলাদেশে আসিয়া জনগণের আন্তরিকতাপূর্ণ ভালবাসার মূল্য দিয়ার চেষ্টা করব। কিন্তু কথা হইল ভারত সরকার আমাকে পাসপোর্ট দিবে কি-না এ নিয়ে আমার পূর্ণ মাত্রায় সন্দেহ আছে। যদি দেয় ভবিষ্যতে অবশ্য বাংলাদেশে আসব। কিছু করতে না পারলেও অন্তত: সাক্ষাতে ধন্যবাদ জানাব। ইতি- অনুপ চেতিয়া ২/৭/১৩, রাজশাহী।
২| ১৪ ই নভেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:১৩
চাঁদগাজী বলেছেন:
খালেদার সময়, তারেক জিয়াকে টাকা দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকে ভুল করেছিল অনুপ চেটিয়া; তারা না বুঝে বাংলাদেশ মিলিটারীর সাহায্য নিয়েছিল; তাদের দরকার ছিল, নিজেদের ভুল স্বীকার করে ভারত সরকারের কাছে আত্মসমর্পণ করা
৩| ১৪ ই নভেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:২০
গেম চেঞ্জার বলেছেন: আন্তরিক ধন্যবাদ। পোস্টটি একটি দলিল হয়ে থাকবে আসামের অধিবাসীদের জন্য।
১৪ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:০০
রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: কাঙ্ক্ষিত জয় হোক আসামবাসীর ।
৪| ১৪ ই নভেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:২৯
আরণ্যক রাখাল বলেছেন: ১৫ আগষ্ট শোক দিবস পালন করা হত আসামে, এজন্যও অনেককে জীবন দিতে হয়েছে| আসামের উপর অত্যাচার নিয়ে সমরেশ মজুমদারের উপন্যাস পড়েছিলাম একটা| নাম রক্তাক্ত পথ|
অনুপ চেটিয়ার ব্যাপারে বেশি কিছু জানি না, জানিনা এখনকার আসামের অবস্থা কেমন| তবে চিঠিটা হৃদয়স্পর্শী| স্বাধীনতার জন্য কত জনকে যে এভাবে বন্দীত্ব, মৃত্য বরণ করতে হবে কে জানে
১৪ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:৫৯
রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: নিপীড়িত আসামবাসীর জয় হোক ।
৫| ১৪ ই নভেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:০৪
বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: হে স্বাধীনতা! তুমি কত কষ্টের পর দেখা দাও!
কত বুক ভঅঙ্গা বেদনা, জীবন আর আত্মদানের পর তোমার পরশ মেলে!
কে জানে? এ জীভনে না ঐ জীবনে!!!
তবু স্বাধীনতার জন্য প্রান কোরবান!
তোমাকে সবাই কত ভালবাসে তুমি কি তা বোঝ?
খুবই সংবেদনশীল চিঠি। হৃদয়ের গভীর থেকে উৎসরিত এক স্বাধীনতাকামী আত্মার আর্তনাদ! কষ্ট!
"২০০৮ সালের প্রথম ভাগে আমি শেষ পত্র পত্নী এবং কন্যা সন্তান থেকে পেয়েছিলাম। সন্তানের পত্র পাইয়া সে দিন আমি রাত্রে শোয়ার সময় অনেক কান্দছিলাম। কন্যা সন্তান সেদিন লিখেছিল-‘‘বাবা তুমি দেখতে কেমন? অনেকই বলে আমি দেখতে তোমার মতন হয়েছি’’। সুদীর্ঘ ১৬টি বছর পরিবার সন্তানদের সাথে আমার সাক্ষাৎ হয়নি। সন্তানদেরকে দেখলে আমি চিনবনা এবং তারাও আমাকে চিনতে পারবেনা। আমার এক কপি ছবি পাঠানোর কোন সুযোগ নেই। এ বিশ্বে সুদীর্ঘদিন নিজ সন্তান, পরিবারকে সাক্ষাৎকারবিহীন ভাবে বর্তমান সময়ে কোন উপায় আছে কী নেই আমার জ্ঞাত নয়। কিন্তু আমি তাদের মুখ না দেখিয়া ১৬টি বছর আছি। তাদের থেকে কাছে থেকেই যেন অন্য জগতে আছি-এ সাক্ষাতকার বিহীন মানসিক কি যন্ত্রণা, বেদনা তা বুঝানোর আমার কাছে ভাষ্য নেই। অসম থেকে লোক আসার সময় তাদেরকে আমার পরিবার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করিয়াছিলাম। তাদের থেকে জানতে পারি আমার পরিবার, সন্তানরা অসমে যায়নি এবং তারা কোথায় জানেনা। সত্যি আমি তাদের জন্য চিন্তিত হইয়া আছি। আমি একজন সংগ্রামী হইয়া আমার পরিবার-সন্তানদের জন্য বিশেষ চিন্তা করিয়া, তাদের ভবিষ্যত গড়ার জন্য কোন ব্যাংক-ব্যালেন্স বা সম্পদের পাহাড় গড়িনি। আমি ভবিষ্যতেও জনগণের কল্যাণের জন্য কাজ করিয়া যাইবার আশা রাখি। নিজের সম্পদ গড়ার কোন উচ্চাকাংখা নেই। "
এ অংশটুকু পড়ার সময় হৃদয় মন চোখ সব কেমন ভারাক্রান্ত হয়ে গেল! মাত্র ৬ মাস সবাইকে ছেড়ে দূরে ছিলাম। তাই যে কি পরিমাণ কষ্ট অনুভব করেছি- তা দিয়ে কি এক স্বাধীনতাকামী পিতার ১৬ বছররে কষ্ট অনুভব করা যায়? যায় না। শুধূ ঝাপসা একটু ঝলক -তাতেই যেন হৃদয় ভিজে আসে।
ধন্যবাদ। চমৎকার একটা বিষয় শেয়ার করায়।+++++++++++++++++++++++++++++
১৪ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:৫৭
রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: এমনই কত ত্যাগ তিতিক্ষার বিনিময়েই জোটে স্বাধীনতা, আবার কত জাতিকে পরাধীন থাকতে হয় । শুভেচ্ছা রইলো ।
৬| ১৪ ই নভেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:১২
রুদ্রছায়া বলেছেন: মুক্তিসংগ্রামের পথে চলা প্রতিটা জাতী স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষার মূল্য বুঝতে পারে।
১৪ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:৫৩
রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: যথার্থই বলেছেন ।
৭| ১৪ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ৮:২২
চাঁদগাজী বলেছেন:
আসামের স্বাধীনতা চাওয়ার কোন কারন নেই; নতুন সমস্যা হতো।
১৪ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:৫২
রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: বিভিন্ন রাজ্যগুলোর মধ্যে বৈষম্য প্রবল । কোথাও উন্নত, কোথাও অনুন্নত । তারা হয়ত বৈষম্য থেকে মুক্তি চায় ।
৮| ১৪ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ৮:৩৪
বিচার মানি তালগাছ আমার বলেছেন: কোন পাগলে এত বড় ইন্ডিয়ারে ছাড়তে চায়। এবার ছিটমহল বিনিময়ে দেখা গেছে ভারতে অবস্থানরত বাংলাদেশী ছিটমহলের কেউ বাংলাদেশে আসতে চায় না। সবাই ভারতেই থাকতে চায়
১৪ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:৪৯
রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: অর্থনৈতিক বৈষম্য থেকেই কিন্তু স্বাধীনতার ব্যাপারটা আসে ।
৯| ১৫ ই নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ৮:৪৩
কি করি আজ ভেবে না পাই বলেছেন: আহহহ............কেমন যেনো শুন্যতা অনুভব করছি।
আহারে প্রাণের স্বাধীনতা !!!
চাঁদগাজী বলেছেন:
অনুপ চেটিয়ার মানসিক সমস্যা আছে, আসাম ভারতের সাথে ক্রমেই ভালো করছিলো।
নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা বলে দাবী করেন অথচ আরেক মুক্তিযোদ্ধার প্রতি নূন্যতম শ্রদ্ধাবোধ নেই আপনার...........কেউ সাধ করে জীবনের এতগুলো বছর পরিবার পরিজনের সাথে সাক্ষাতবিহীন কারাগারের চার দেয়ালে বন্দী হয়ে কাটায়না।তিনি চাইলেই ভারত সরকারের সাথে আপোষ করে বিলাসী জীবন যাপন করতে পারতেন।একে বলে প্রকৃত বীর,প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা।আর মাত্র ন'মাসে স্বাধীন হওয়ায় আমাদের গুলা হয়েছে বিকৃত মুক্তিযোদ্ধা।আফসোস।
চমৎকার এই পোষ্টের জন্য লেখককে হৃদয়ের অন্ত:স্থল থেকে ধন্যবাদ।
২৯ শে নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১:২৪
রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: শুভেচ্ছা ।
১০| ১৫ ই নভেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:১৭
কিরমানী লিটন বলেছেন: ভুল বললেন গাজী ভাই, এটা আপনার চেতনার সাথে যায় কি?ভাববার অনুরোধ রইলো... এই চীর সংগ্রামী বীরের প্রতি শ্রদ্ধা রইলো, অনেক ধন্যবাদ প্রিয় সাধু'দাকে রিদিয় ছুঁয়ে যাওয়া ইতিহাসের দলিল,তার পুরো চিঠিটা প্রকাশের জন্য,অনেক শুভকামনা আপনার জন্য ...
২৯ শে নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১:২৪
রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: ধন্যবাদ ।
১১| ১৮ ই নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:৩৯
আরজু পনি বলেছেন:
শেয়ার করার জন্যে ধন্যবাদ, সাধু ।
সংবাদ পত্রে অনুপ চেটিয়া নাম পড়ে আর কারো কথা ভাবছিলাম ।
এখানে তার স্ত্রীর অংশটুকু পড়ে একজন খুব ভালো জীবন সঙ্গিনীর দেখা পেলাম যেনো যে সুখে দুঃখে সর্বঅবস্থায় পাশে থাকে ।
অথচ আমাদের এতো চাহিদা সামাল দিতে না পারলেই বর খারাপ হয়ে যাচ্ছে...কী মানসিকতা আমাদের !
২৯ শে নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১:২৬
রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: যথার্থই বলেছেন । ধন্যবাদ ।
১২| ২২ শে নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৪:৫৭
৮৩১আবীর১৯৮৩ বলেছেন: অনুপ চেটিয়ার সেই পরিবারের কোন খোজ কি আপনি জানেন ? জানলে জানাবেন সাধ্যমত সাহায্য করার ইচ্ছা করছি।
২৯ শে নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১:২৭
রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: খবর পাওয়া যায়নি । চেষ্টা করছি । ধন্যবাদ ।
©somewhere in net ltd.
১| ১৪ ই নভেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:১০
চাঁদগাজী বলেছেন:
অনুপ চেটিয়ার মানসিক সমস্যা আছে, আসাম ভারতের সাথে ক্রমেই ভালো করছিলো।