নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

Our sweetest songs are those that tell of saddest thought (Shelly).

রূপক বিধৌত সাধু

মন রে, কৃষিকাজ জানো না; এমন মানবজমিন রইলো পতিত আবাদ করলে ফলত সোনা! রামপ্রসাদ সেন ([email protected])

রূপক বিধৌত সাধু › বিস্তারিত পোস্টঃ

জীবন নদীর ঘাটে ঘাটে

১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:২০


প্রাইমরোজ পর্ব
সময়টা ছিল ঝঞ্চাবিক্ষুব্ধ। কী করবো, না করবো বুঝতে পারছিলাম না। সবকিছু ছেড়ে হয়ত বাড়ি চলে যেতে হতো। কারণ, এখানে চলার মতো সামর্থ্য ছিল না আমার। কয়েক জায়গায় সিভি দিয়েছিলাম, দুটো ইন্টারভিউও দিয়েছিলাম। দুঃখজনকভাবে কোন ডাক পাই নি।

হঠাৎই 'শাইনিং পাথ' থেকে ইসমাইল স্যার ফোন দিলেন। কুশলাদি জিজ্ঞেস করার পর জিজ্ঞেস করলেন, 'বর্তমানে কী করছেন?'
'কিছু না' বলতেই বললেন, 'শিমুল নামে আমার এক বন্ধু প্রাইমরোজ নামে একটা স্কুলে পড়ায়, ওখানে একটা পোস্ট খালি আছে। আপনি চাইলে দেখা করতে পারেন।'
এমতাবস্থায় খুব খুশি হলাম। বললাম, 'উনার মোবাইল নাম্বারটা দিন।'

ইসমাইল স্যার স্কুল এর অবস্থান বললেন, শিমুল স্যারের মোবাইল নাম্বারও দিলেন। শিমুল স্যারকে ফোন দিলাম। উনি পরদিন দশটায় স্কুলে যেতে বললেন।

পরদিন দশটার আগে আগে স্কুল এ গেলাম। 'শিমুল স্যার কোথায়?' জিজ্ঞেস করতেই একজন বললেন, 'উনি ক্লাসে আছেন।'

প্রধান শিক্ষক বসে ছিলেন। উনার সাথে পরিচিত হলাম। অমায়িক লোক। ১৭ বছর হলো স্কুলটা প্রতিষ্ঠা করেছেন। উনি চাকরি করতেন। তার অবর্তমানে আরেকজন প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেছেন। দূর থেকে স্কুল পরিচালনায় সমস্যা দেখা দেওয়ায় নিজেই এখন স্কুলে বসেছেন।

কিছুক্ষণ পর শিমুল স্যার এলেন। উনার সাথে বেতন সংক্রান্ত বিষয়াদি নিয়ে কথা হলো। বেতন কম। কিন্তু কিছু করার নেই। একেবারে ঝরে পড়ার চেয়ে কোনোমতে বেঁচে থাকাটাও কম কথা নয়। তাছাড়া এ ধরণের প্রতিষ্ঠানে বেতন তুলনামূলকভাবে কমই থাকে। সুপারিশ থাকায় আমাকে তাও অন্যদের চেয়ে বেশি বেতন দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলো, ৮ম এর চল্লিশ মিনিটের কোচিংও দেওয়া হলো।

সেপ্টেম্বর এর ২৪ তারিখ, ২০১৮ সাল। চাকরি শুরু করলাম 'প্রাইমরোজ' এ। সাধারণত আমি ইংরেজি পড়াই। ইংরেজি শিক্ষক থাকায় চলে যাওয়া শিক্ষকের ক্লাস করতে হবে আপাতত। এক মাসের জন্য ক্লাসের সময়সূচী পরিবর্তন করা হচ্ছে না। নভেম্বরে তো বার্ষিক পরীক্ষাই।

প্রথমে ক্লাস করতে গেলাম ৭ম শ্রেণিতে। মোটামুটি কুড়ি জন এর মতো শিক্ষার্থী। তারপর ৮ম শ্রেণিতে, তারপর আবার ৮ম শ্রেণি। পর্যায়ক্রমে ৬ষ্ঠ ও ৪র্থ শ্রেণিতে।

সব ক্লাসেই মোটামুটি বাংলা পড়াতে হতো। ৮ম ও ৪র্থ তে সাথে তথ্য ও বিজ্ঞান।

৮ম শ্রেণিতে শিক্ষার্থী ১০ জন এর মতো। নিয়মিত পাঁচ-ছ জন। পাঁচ-ছ জনের দু'জন বাদে সবাই ক্লাসে অমনোযোগী। এদের পড়াতে কী যে কষ্ট করতে হলো! বিরক্তিতে মেহেদী নামের একজনকে খুব মারধরও করলাম। আরিয়ান নামের একজন ক্লাসটা অতিষ্ঠ করে রাখত। রোমান নামের একজন ছিল; সেও ছিল অস্থির টাইপ।
মিতু, শামিম ছিল ভদ্রগোছের। হাবিবা আর অন্তরা ছাত্রী হিসেবে ভালোই ছিল, কিন্তু এদের ভদ্রতার বালাই ছিল না।

৬ষ্ঠ শ্রেণিতে প্রায় ১৪ জন এর মতো শিক্ষার্থী ছিল। এদের মধ্যে মিতু, রিফা, তামান্না, প্রিয়াঙ্কা, জান্নাত, সাজ্জাদ, সুদীপ, রোপম এর কথা মনে পড়ছে। পড়ালেখা এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে এরা প্রায় সবাই ভালো ছিল।

৪র্থ শ্রেণিতে পড়ানো একটু কষ্টকর ছিল। শিক্ষার্থী বেশি থাকায় খুব হৈ-হুল্লা হতো। তাছাড়া এদের ক্লাসটা শেষে হওয়ায় কে কার আগে বেরোবে সেই প্রতিযোগিতায় লিপ্ত থাকত। এই ক্লাসের কয়েকজনের নাম মনে পড়ছে। এরা হলোঃ সিয়াম, জিহাদ, মোস্তাকিম, নিলয়, জুহান, ইভা, জিমিয়া, তন্নি, ফাতিমা ও তৃষা।

৫ম শ্রেণিতে কম ক্লাস নিয়েছি। এ ক্লাসের সবাই প্রায় মেধাবী ছিল। তার স্বাক্ষরও রেখেছে। এ বছর ২৯ জনের ১৮ জনই এ+ পেয়েছে। বাকিদের নাম্বার প্লাসের কাছাকাছি। এখানে কয়েকজনের নাম বলছি। এরা হলোঃ নবনীতা রায় পাপড়ি, পুষ্পি, এ্যানি ও অপর্ণা।

৮ম শ্রেণির রেজাল্ট খুব একটা ভালো হয় নি। তবে সবাই পাশ করেছে। ফেলের ছাত্ররা পাশ করাই বড় কথা- এটাই আপাতত সান্ত্বনা।

ডিসেম্বরে ক্লাস পরীক্ষা সব শেষ হয়ে যাওয়ায় স্কুলটা আমার কাছে বিরানভূমি মনে হলো। এমনিতে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত, শিক্ষার্থী কম; তার ওপর স্কুলের বয়োজ্যেষ্ঠ কয়েকজন শিক্ষক 'গাজীপুর পাইলট' নামে একটা স্কুল শুরু করলেন। 'প্রাইমরোজ' এর শিক্ষার্থী কমে যাওয়ার তীব্র আশঙ্কা দেখা দিল।

'শাইনিং পাথ' এ অনেক শিক্ষার্থী ছিল। এখানে এত কম শিক্ষার্থীর মাঝে মন টিকল না। প্রধান শিক্ষককে জানিয়ে দিলাম, 'আমি আর এখানে থাকছি না।'
উনি আরও কিছুদিন থাকতে অনুরোধ করলেন। আমি অপারগতা প্রকাশ করলাম।

আরও দু'য়েক জায়গায় কথা হয়েছিলো। কোন এক জায়গায় ঢুকে যাবো বলে মনস্থির করে ফেলেছিলাম। ডিসেম্বরের শেষদিন পর্যন্তও জানতাম না অবশ্য কোথায় ঢুকবো। তবে 'নজরুল বিদ্যানিকেতন ও হাইস্কুল' নামে একটা প্রতিষ্ঠানে মোটামুটি পাকা কথা হয়েছিলো।

'প্রাইমরোজ' ছাড়ার পেছনে আরও কারণ ছিল। বেতন কম হওয়ায় এখানে থাকতে হলে টিউশনির ওপর নির্ভর করতে হতো। এটা আমার পক্ষে সম্ভব ছিল না। আর সবসময় ইংরেজি পড়ানোতে অভ্যস্ত; এখানে ইংরেজি শিক্ষক থাকায় আমার কাছে মনে হয়েছিলো আমি না থাকলেও চলবে।

স্কুলটা এমনিতেই প্রচন্ড ধাক্কা খেয়েছে, তার ওপর আমি চলে আসায় প্রধান শিক্ষক খুব মনঃক্ষুণ্ণ হয়েছিলেন। আমার পরিচিত একজনকে বলেছিলেন, 'উনি যদি ভালো কোথাও যেতেন, তাহলে তো সমস্যা ছিল না; উনি তো আরেকটা স্কুলেই ঢুকেছেন।'

আমি জানি না উনি কোথা থেকে জেনেছেন আমি আরেকটা স্কুলে ঢুকেছি। আমি উনাকে বলেছিলাম অন্য একটা ভালো চাকরিতে ঢুকবো হয়ত। পরিশ্রম বেশি হওয়ায় আর ঢোকার চেষ্টা করি নি। উনি হয়ত ভেবেছেন, আমি উনাকে মিথ্যে বলেছি। ভাবাটাও দোষের কিছু নয়; এ প্রতিষ্ঠানের পুরনো দু'জন শিক্ষিকা উনার সাথে প্রতারণা করে অন্য স্কুলে ঢুকেছেন।

ঠিক প্রতারণা হয়ত বলা যাবে না। এখানে সুবিধে করতে পারেন নি, অন্যত্র তো যাবেনই। আমি খুব বিস্মিত হয়েছিলাম এটা জেনে যে, আমার বেতন একটু বেশি ধরায় উনারা ঈর্ষান্বিত হয়েছিলেন; হওয়ারই কথা অবশ্য। আমি উড়ে এসে জুড়ে বসে বেতনে বেশি ভাগ বসাচ্ছি আর উনার বছরের পর বছর থেকে কম বেতনে চাকরি করবেন?

১ জানুয়ারি ছিল বার্ষিক পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের তারিখ আর বই উৎসব। আর ঐ দিনই ছিল 'প্রাইমরোজ' এ আমার ৩ মাস চাকরির শেষদিন।

৫ মাঘ ১৪২৫ বঙ্গাব্দ
গাজীপুর।

মন্তব্য ১৮ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১৮) মন্তব্য লিখুন

১| ১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ৮:৪২

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: হুম!

প্রাইভেট স্কুল গুলো এভাবেই চলে! এক স্কুলের শিক্ষক অভিজ্ঞ হলেই নতুন স্কুল খুলে বসে।
জীবন যুদ্ধের কড়চা আরেকটু মশলা মেশালে হয়ে যাবে দারুন সাহিত্য কর্ম।
সাধু দার জন্য অফুরান শুভেচ্ছা আর শুভকামনা


১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ৮:৫৮

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: শুভেচ্ছা আপনাকেও। ভালো থাকবেন।

২| ১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ৯:০৭

রাজীব নুর বলেছেন: অনেকদিন পর আপনার পোষ্ট দেখে ভালো লাগলো।

১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ৯:১১

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: কিছু লিখতে ইচ্ছে হয় না। মনের জোর কমে গেছে।

৩| ১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ৯:০৯

আহমেদ জী এস বলেছেন: রূপক বিধৌত সাধু,




যে ভাবে জীবন নদীর ঘাটে ঘাটের কথা বললেন তাতে মনে হলো, বেশ অস্থির আপনি। কোনও এক জায়গাতে থিতু হবার মেজাজ নেই । আগেও এমন ঘটনা ঘটিয়েছেন। এক জায়গাতে লেগে থাকুন, শেষে ফল দিতে পারে।
শুভ কামনায়।

১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ৯:১৫

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: মনটাকে স্থির রাখাটাই কঠিন। ঠিকমতো কিছু হচ্ছে না যে!

৪| ১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ৯:৩৫

প্রামানিক বলেছেন: ধৈর্য ধরতে হবে অস্থির হলে চলবে না, কারণ চাহিদা মত চাকরি পাওয়া বর্তমানে খুবই দুষ্কর।

১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ১০:২৮

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: যথার্থই বলেছেন।

৫| ১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ৯:৪১

পদাতিক চৌধুরি বলেছেন: প্রিয় দাদা,
প্রাইম রোজে আপনার কর্মজীবনের সূচনাকাল সম্পর্কিত বৃত্তান্ত জেনে আনন্দ পেলাম। কি সুন্দর ভাবে বিভিন্ন শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের নাম এখনো মনে রেখেছেন। তবে বেসরকারি স্কুল গুলির ফুটবল খেলা দল দলের মতোই টিচার কেনাবেচার ঘটনাটি অমানবিক দৃষ্টিকটু মনে হলেও ভুক্তভোগীরাই জানেন এছাড়া তাদের যে বিকল্প কোন রাস্তা থাকে না। পোস্ট এর শেষ অংশে আপনি তেমনই এক করুণ চিত্র তুলে ধরেছেন। আগেও জেনেছি আপনি ইংরেজির শিক্ষক। মত বিরুদ্ধ বাংলা বা তথ্য বিজ্ঞান পড়ানোর সঙ্গে সমঝোতা করেও যে বেশিদিন থাকা যায় না ; সঙ্গে আর্থিক দুশ্চিন্তা তো থাকেই। যে কারণে আপনার পক্ষেও টিকে থাকা সম্ভব হয়ে ওঠেনি।

আগামীতে নিশ্চয়ই আমরা আপনার প্রাইম রোজের পরবর্তী জীবনের অভিজ্ঞতার সঙ্গে পরিচিত হব।


অফুরান শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা জানবেন।


১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ১০:৩৩

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসা জানবেন।

৬| ১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ১১:০৮

নীলপরি বলেছেন: একটানা পড়লাম । খুব সাবলীল লাগলো ।
++
শুভকামনা

১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ১১:৩৬

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: শুভেচ্ছা নিরন্তর।

৭| ১৯ শে জানুয়ারি, ২০১৯ দুপুর ১২:৪৫

নজসু বলেছেন:




কিন্ডার গার্টেন স্কুলগুলোর হিসেব আলাদা।
এজাতীয় স্কুলের ফলাফল সর্বদা ভালো হয়ে থাকে।
অথচ, শিক্ষকদের সন্মানী কম। (সব স্কুলে নয়)
যাদের একেবারেই কিছু করার থাকে না, তারাই সাধারনত কেজি স্কুলে চাকুরী নেন।
অনেকে এটাকে সময় পার করা বলে থাকেন। পরে, ভালো কোন জায়গায় চাকুরী হলে ঐ ছোট চাকুরী বাদ দেন।
তখন ঐ কেজি স্কুলকে সমস্যার সম্মুক্ষীণ হতে হয়।

সন্মানী বাড়ালে উভয়পক্ষ সন্তুষ্ট থাকবে।

১৯ শে জানুয়ারি, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:২১

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: ঠিকই বলেছেন।

৮| ১৯ শে জানুয়ারি, ২০১৯ বিকাল ৩:০১

অপু দ্যা গ্রেট বলেছেন:



আপনি গাজীপুর থাকেন ।

আরে আমার বাসাও তো ওখানেই ।

ভাল ই হলো ।

আপনার ফেসবুক আইডি টি দিন ।

১৯ শে জানুয়ারি, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:২৪

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: /rupakbidhoutsadhu

৯| ১৯ শে জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ১০:০৭

রাকু হাসান বলেছেন:

এখন কেমন আছেন ? কেমন যাচ্ছে শিক্ষকতা

২০ শে জানুয়ারি, ২০১৯ সকাল ৭:৫৩

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: ভালো থাকার আপ্রাণ চেষ্টা করছি কিন্তু কিছু ঠিকমতো হচ্ছে না।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.