নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মন রে, কৃষিকাজ জানো না; এমন মানবজমিন রইল পতিত আবাদ করলে ফলত সোনা! রামপ্রসাদ সেন ([email protected])
আমার দাদির ঝগড়াঝাঁটির স্বভাব ছিল কিংবদন্তিতুল্য। মা-চাচিদের কাছ থেকে শোনা কষ্ট করে রান্নাবান্না করলেও তারা নাকি নিজে থেকে কখনও মাছ-মাংস পাতে তুলে খেতে পারতেন না। দাদি বেছে বেছে দিতেন কে কী খাবে।
আমার মা আর এক চাচি দিনের অনেকটা সময় ঢেঁকিতে ধান ভানতেন। সংসারের যত কাজ আছে, সব করতেন। বিনিময়ে জুটত একটু ভাত। খুব কম সময়ই তারা পেট পুরে খেতে পারতেন।
মা যখন নানার বাড়ি যেতেন, গলা দিয়ে নাকি তার ভাত নামত না! গলার নলি ছোটো হয়ে গিয়েছিল। বড়ো মামিরা হা-হুতাশ করতেন আর বলতেন, আর যাওয়ার দরকার নেই। মা অবশ্য দুয়েকদিন থেকে তারপর স্বামীর বাড়ি চলে আসতেন। নানা তাদের এলাকায় আলাদা বাড়ি করে দেওয়ার প্রস্তাব দিলেও মা নাকচ করে দিতেন। বাঙালি নারী বলে কথা। শত কষ্ট হলেও স্বামীর বাড়িকে সবসময় নিজের বাড়ি মনে করেছেন।
দাদির কিছু স্বভাব আমার ছোটো বোনও পেয়েছে। দু’জনই চরম মাত্রার ঝগড়াটে। আমার বাবা তাকে ‘মানির মা’ বলে ডাকেন। এ নামে আমার দাদিও পরিচিত ছিলেন।
ছোটো বোনের সাথে বাবার সম্পর্কটা ঠিক বাপ-মেয়ে না বলে দা-কুমড়োর মতো বলা যায়। ঝগড়াঝাঁটি দু’জনের নিত্যদিনের কাজ-কারবার। বাবার কোনো কাজ তার পছন্দ না, তার কোনো কাজ আবার বাবার পছন্দ না। একজন অপরজনের পেছনে সারাক্ষণই আঠার মতো লেগে থাকে।
একদিন ঘরের পেছনে গিয়ে দেখি আমাদের ছোট্ট বাছুরকে বাবা আদর করছেন। আর হপ্পু হপ্পু করে ডাকছেন। বোনের ডাক নাম হ্যাপি। বাবা হপ্পু নামে ডাকেন। এখন বাবা বাছুরকেও হপ্পু হপ্পু করে ডাকছেন। ছোটো বোন উঠোন থেকে শুনে দৌড়ে গেল সেখানে। আর যায় কোথায়? দু’জনের মধ্যে যুদ্ধ বেঁধে গেল।
বোন যে সবসময় শুধু ঝগড়াঝাঁটি করত, ব্যাপারটা কিন্তু তা না। বাবার নাওয়া-খাওয়া, কাপড়-চোপর ধোয়া, দাড়ি-গোঁফ পরিষ্কার করাসহ সব কাজ সে-ই করত। এতকিছু করার পরও হুটহাট তার সাথে বাবার গ্যাঞ্জাম লাগলে সে মাঝেমধ্যে দুঃখ করে বলত, একটা বেঈমান পালি।
হোঁচট খেয়ে পড়ে গিয়ে দাদির কোমর ভেঙে গেছে। তিনি এখন শয্যাশায়ী। সবাই পর্যায়ক্রমে তার দেখাশোনা করে। আগের মতো গায়ে-কণ্ঠে জোর নেই তার। শুয়ে-বসে দিন কাটে। এদিকে ছোটো বোনের বিয়ে হয়েছে কয়েকবছর হলো। চাকরিও করে সে। অনেক ব্যস্ত। তাও সপ্তাহান্তে আমাদের বাড়িতে আসে। এসে ওর প্রথম কাজ হলো ঘরদোর পরিষ্কার করা। আগেও যেমন করত। অন্য কেউ পরিষ্কার করলেও ওর মনমতো হয় না। ও এসে আর সব বাদ দিয়ে এ কাজেই নেমে পড়ে। ওর খাওয়ারও তাড়া নেই।
বাবা এখন আর আগের মতো কথাবার্তা বলতে পারেন না। এটা-সেটা জিগ্যেস করলে শুধু উত্তর দেন। নিজে থেকে তেমন কিছু বলতে পারেন না। তবে মাঝেমধ্যে একাই কাঁদেন, একাই হেসে ওঠেন।
ছোটো বোন এখনও এসে আগের মতোই বাবার দাড়ি-গোঁফ পরিষ্কার করে দেয়। নাওয়া-খাওয়াসহ সব কাজই করে। শুধু আগের সেই ঝগড়াঝাঁটি আর হয় না। আমি আর মা তাদের দু’জনের আগের কাণ্ডকারখানাগুলো মিস করি।
০৩ রা মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৩৯
রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: এখনকার যুগে অনেক শাশুড়ি-ছেলের বৌ নিজেদের আধিপত্য বিস্তার নিয়েই ব্যস্ত থাকে। কেউ কাউকে ছাড় দিতে প্রস্তুত না। শাশুড়ি যে আচরণ পেয়ে এসেছেন বউয়ের সাথে তেমন করেন, বউ যা করেন পরবর্তীকালে শাশুড়ি হয়ে তাই পান। এমনই চলছে।
২| ০৩ রা মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৩৫
সোনাগাজী বলেছেন:
ছোটবোনের স্বামীও চাকুরী করে?
০৩ রা মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৪০
রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: একটা ব্যবসা শুরু করেছিল। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কয়েকমাস হলো একটা চাকরিতে ঢুকেছে।
৩| ০৩ রা মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:১৩
Snowflake বলেছেন: যদিও তখনকার মানুষ গুলো লজিক্যাল ছিল না কিন্তু তাদের ভেতরে মায়া মমতায় ভরপুর ছিল । শাসনের আড়ালে সেটা হয়তো দেখা যেত না। এখনকার মানুষের মধ্যে ওই মায়মমতা নেই। লেখাটি পড়ে নিজের দাদীর কথা মনে পড়লো।তিনি ছিলেন খুব ভাবগাম্ভীর্য পূর্ণ একজন নারী এবং ন্যায়ের ব্যাপারে আপোষহীন। আমার মনে হয় ওনারা ওইরকম ছিলেন বলেই আমরা মানুষ হতে পেরেছি। ধন্যবাদ ,আপনার লেখাটা খুব ভালো লাগলো।
০৩ রা মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:১৭
রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: তখনকার শাশুড়িরা ভাবগাম্ভীর্যপূর্ণ হওয়ায় শক্ত হাতে বড়ো সংসার ধরে রাখতে পারতেন। এখন তো সব একক পরিবার ছেলেমেয়েরা সুস্থ পরিবেশ পায় না।
৪| ০৩ রা মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:১৪
শায়মা বলেছেন: ছোটবোনের কান্ডকীর্তি শুনে মজা লাগলো ভাইয়া।
আর দাদীটা মনে হচ্ছে মহা পাঁজী মানুষ ছিলেন!
০৩ রা মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:২০
রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: মজার ব্যাপার হলো আমি আর আমার সবচেয়ে বড়োবোন সবসময় দাদির পছন্দের ছিলাম। আমাদের দু'জনের সামনে তিনি সবসময় ভালো থাকতেন। শয্যাশায়ী হওয়ার আগ পর্যন্ত সবাইকে কমবেশি জ্বালিয়েছেন।
৫| ০৩ রা মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:২১
শায়মা বলেছেন: নাতীদের কাছে এই পাঁজী দাদীরা ভালোই থাকেন। সব জ্বালাতন আর হিংসামী থাকে বৌদের সাথে।
০৩ রা মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:২৫
রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: আমার মা আর আরেক চাচী সহজ-সরল মানুষ ছিলেন। প্রতিবাদ করতে পারতেন না। তবে অন্য চাচীরা, যারা অনেক পরে এসেছেন তারা কিন্তু ছেড়ে দিতেন না।
৬| ০৩ রা মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:২২
সোনাগাজী বলেছেন:
কিসের ব্যবসা করতো?
০৩ রা মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:২৬
রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: কাপড়ের দোকান।
৭| ০৩ রা মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৪৭
সোনাগাজী বলেছেন:
উনার কাপড়ের দোকান থাকাকালীন আপনি যদি মেয়েদের পোশাক তৈরি করে বিক্রয় করতেন, ২ জনেরই ভালো হতো।
০৩ রা মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৫৯
রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: দোকান একদম চলেনি। মূলধন ছিল না তেমন। মাল কম ছিল। তাছাড়া ওই এলাকায় অনেক গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি, অনেক দোকান। টিকে থাকা চ্যালেঞ্জিং ছিল।
৮| ০৩ রা মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৫৮
জ্যাক স্মিথ বলেছেন: সাধারণত বাপ-ছেলের দ্বৈরথ হয়, বিশেষ করে বড় ছেলের সাথে কিন্তু বাপ-মেয়ের দ্বৈরথের কথা খুব একটা শুনিনি।
গ্রাম-বাংলায় সংসার জীবনে অনেক কিছুই ঘটে সবই জীবনেরই অংশ।
০৩ রা মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:০১
রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: আমার সাথে বাবার একটা দূরত্ব ছিল। আমি যা বলি তাই, বাবা যা বলেন তাই। কোনো জবাবদিহিতা নেই। তবে ছোটোবোনের বেলায় ঠিক তার উল্টো।
৯| ০৩ রা মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:০০
কামাল১৮ বলেছেন: প্রথমে মনে করিছিলাম গল্প।পরে বুঝতে পারলাম গল্প না সত্যি।আমার এই সব অভিক্ষতা নাই।দাদাদাদী ছিলো না চাচা জেঠা ছিলো না।তবে ভাই বোন ছিলাম অনেক।বসন্ত রোগে অর্ধেক করে দেয় দুই দিনে।
০৩ রা মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:০৩
রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: মা-বাবাকে নিয়ে কোনো স্মৃতি মনে পড়ে?
১০| ০৩ রা মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৩৪
কামাল১৮ বলেছেন: মা এখনো বেঁচে আছে।বাবা মারা গেছে ২০০৩ সালে।তাদের নিয়ে হাজারো স্মৃতি।
০৩ রা মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৫
রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: পারলে ছোটো করে একটা-দুটো দিতে পারেন।
১১| ০৩ রা মার্চ, ২০২৪ রাত ১০:০৩
ইফতেখার ভূইয়া বলেছেন: সংসারটা আজিব মায়ার বাঁধন, এর চেয়ে বেশী কিছু নয়। একজন একজন করে পালাক্রমে চলে যাওয়ার গল্পটাও বেশ বিষাদময়। বার বার মনে পড়ে এটাতো ক'দিনের খেলাঘর মাত্র। ধন্যবাদ।
০৩ রা মার্চ, ২০২৪ রাত ১০:১২
রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: এর মাঝেও মানুষ যখন বিবাদে জড়ায়, তখন খুব হতাশ লাগে।
১২| ০৩ রা মার্চ, ২০২৪ রাত ১০:২১
কামাল১৮ বলেছেন: দুই দিন আগে টেলিফোন করেছিলাম মাকে।মা বললো কে।আমি বললাম,আমি তোমার ছেলে।মা চিনতে পারলো না।স্মৃতি শক্তি নষ্ট হয়ে গেছে।
০৩ রা মার্চ, ২০২৪ রাত ১০:৩৫
রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: বয়স কত উনার?
১৩| ০৪ ঠা মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬
মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন:
আহা কি স্মৃতিময় দিন পার করেছেন, ধন্যবাদ শেয়ার করার জন্য।
০৪ ঠা মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৫৩
রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: শুভেচ্ছা জানবেন।
১৪| ০৪ ঠা মার্চ, ২০২৪ সকাল ১১:০৬
রাজীব নুর বলেছেন: আপনার লেখা পড়ে আমার দাদীর কথা মনে পড়ে গেলো।
দাদির কথা আমি লিখব।
০৪ ঠা মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৫৩
রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: লিখুন।
©somewhere in net ltd.
১| ০৩ রা মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৩১
লাইলী আরজুমান খানম লায়লা বলেছেন: আগের দিনের শাশুড়ীরা এমনটাই করতো। আমার বোনের ননাশ এর স্বামী মেজর ছিল। অথচ তার বৌকে তার মা সব কাজ করাতেন, এমনকি মসলা বাটতে গেলেই পিড়িটাও নিয়ে যেত----। যাইহোক তারপরও সেইসময় পরিবার প্রথা ভালো ছিল। মাঝে মাঝে ঝগড়া ছাড়াও একে অপরের সাথে মিল ছিল। এখনতো তাও নেই ---পরিবার প্রথাটা নড়বড়ে হয়ে যাচ্ছে। এখনকার যুগ হলো ছেলের বউদের যুগ। ঘরে এসেই স্বামী ছাড়া অন্য সবাইকে শত্রুু ভাবে--দুই একজন অবশ্য ব্যতিক্রম মানে ভালো।